রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত জানুন
রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য কি? জানতে চান! রাজশাহী সিল্ক কাপড়ের দাম কত? জানতে হলে আর্টিকেলটি চটজলদি একবার পড়ে নিন। আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে রাজশাহী সিল্ক কাপড়ের বৈশিষ্ট্য এবং সিল্ক কাপড়ের দাম সম্পর্কে।
সাথে আরো আলোচনা করবো আপনি আসল সিল্ক কাপড় কিভাবে চিনবেন সে উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সুচিপত্রঃ রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য
রেশম আবিষ্কারের ইতিকথা
রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য জানার আগে আপনাকে জানাবো রেশমের কিছু ইতিকথা। রেশম হলো একটি সূক্ষ্ম মসৃণ উপাদান যা কোকুন নামক নরম প্রতিরক্ষামূলক শ্বাস থেকে উৎপন্ন হয়। এটি মূলত তুত রেশম কীট দ্বারা তৈরি হয়। চীনে প্রথম ৩৫০০ খ্রিস্টাব্দে রেশম সুতা আবিষ্কৃত হয় এবং তৎকালীন রাজপ্রাসাদের নারীদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল রেশম বা সিল্কের বুনন।
কথিত আছে, প্রায় তিন হাজার খ্রিস্টপূর্বে চীনের শাসক সম্রাট হুয়াং তাইয়ের এর স্ত্রী সম্রাজ্ঞী সাইলিং শি তিনি যখন তার স্বামীর বাগানে পাইচারি করছিলেন ঠিক তখনি তিনি অবলোকন করলেন যে বাগানের বেশ কিছু তুত গাছ ধ্বংস করছে কিছু রেশম কিট। এটি দেখে তিনি বেশ বিচলিত হয়ে কয়েকটি কোকুন নিজে সংগ্রহ করে রাখেন এবং পরক্ষণেই তিনি একটু বিশ্রাম নিতে বসেছিলেন।
বিশ্রামরত অবস্থায় তিনি যখন চায়ের কাপে চুমুক দেন ঠিক তখন তার সংগ্রহকৃত কোকুন গুলোর মধ্যে একটি গরম চায়ের মধ্যে পতিত হয় এবং সাথে সাথে কোকুন টি হতে একটি সুক্ষ সুতার উন্মোচন হতে শুরু করে। এটি দেখে পরবর্তীতে তিনি তার পতীকে তুত বাগানে রেশম কিট পালনের জন্য রাজি করান এবং কোকুন থেকে ফাইবারগুলিকে একটি একক থ্রিডি আঁকার জন্য বিশেষ ধরনের একটি রিল তৈরি করেন যাতে সেগুলি কাপড়ে বোনার মতো উপযোগী হয়।
সেই থেকেই চীনে রেশম শিল্পের সূত্রপাত ঘটে। রেশম গুটি থেকে সুতা তৈরির এই পদ্ধতি হাজার বছর তারা গোপন রেখেছিল। তৎকালীন চীনে রেশম কিট ফ্রেমিং শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল এবং শুধুমাত্র রাজপ্রাসাদের রানীরা সিল্কের এই পোশাক পাওয়ার অধিকারী ছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে নিয়মগুলি শিথিল করা হয় এবং সর্বনিম্ন গোত্রের মানুষজনও রেশম বস্ত্র পরিধান করতে পারত। তৎকালীন চীনে রেশম এতটাই মূল্যবান ছিল যে এটি মুদ্রার একক হিসেবেও ব্যবহারিত হতো।
শুধু তাই নয় শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও দেওয়া হতো এই রেশমে। বহু শত বছর ধরে বিশ্বের একমাত্র রেশম উৎপাদনকারী দেশ ছিল চীন। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কাঁচা রেশমের উৎপাদন ও গুণগতমান উন্নত করে জাপানের রেশম উৎপাদন পুনরুদ্ধার করা হয় এবং 1970 সাল পর্যন্ত জাপান ছিল বিশ্বের বৃহত্তর কাঁচা রেশম উৎপাদনকারী এবং রেশম এর প্রধান রপ্তানিকারক। বর্তমানে সাম্প্রতিক দশক গুলিতে বিশ্বে প্রায় ই ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন রেশম উৎপাদিত হয় এবং এর দুই তৃতীয়াংশই কেবল চীনে হয়।
বাংলাদেশে রেশম শিল্পের যাত্রা
বাংলাদেশে রেশম শিল্পের যাত্রা ঘটে কিভাবে। বাংলায় ১৩০০ শতাব্দীর শুরু থেকে দীর্ঘদিন যাবত প্রায় চার ধরনের রেশম তৈরি হয়ে আসছিল। এই চার ধরনের রেশম হলো মালবেরি, মুগা, এন্ডি এবং তসর। মালবেরি রেশম তৈরি হয় বোম্বিক্স বর্গের রেশম পোকার গুটি থেকে যে পোকা সাধারণত তুত গাছের পাতা খায়। এন্ডি তৈরি হয় ফিলোসোমিয়া বর্গের রেশম গুটি থেকে যা ক্যাস্টর গাছের পাতা খায়।
মুগা তৈরী হয় অ্যান্থেরিয়া এস মেন বর্গের রেশম গুটি থেকে যা কুল, তেজপাতা এবং কর্পূরের পাতা খায় এবং তসর এনথেরি বর্গের রেশম গুটি থেকে যারা ওক গাছের পাতা খায়। এই চার ধরনের রেশম এর মধ্যে মালবেরি রেশম সর্বাধিক মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত। শতকের শুরুতে যখন রেশমের উৎপাদন শুরু হয় তখন এটি রেশন গাঙ্গেয় সিল্ক নামে পরিচিত ছিল।
বাংলায় ইলেকশনের উৎপাদন এত বেশি পরিমাণ হত যে তা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করার পরেও বাইরে রপ্তানি করা হতো। তবে এক্ষেত্রে বাংলার সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে দেখা যায়,গ্রাম পল্লীর গৃহস্থরা হাড়খাটুনি পরিশ্রম করে রেশম উৎপাদনের প্রথম তিনটি পর্যায় অর্থাৎ তুত গাছ চাষ, রেশম গুটি প্রতিপালন এবং সুতা কাটা সম্পূর্ণ করত।
পরবর্তীতে সেই সুতা শহরের দক্ষ তাঁতীদের নিকট রেশম বস্ত্র তৈরির জন্য বিক্রি করা হতো। বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের আগমন ঘটে সর্বপ্রথম এই সিল্কের হাত ধরেই। ফলশ্রুতিতে বাংলার বস্ত্রশিল্পের উপর ইউরোপীয় বণিক কোম্পানিগুলো ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে এবং বাংলার পোশাক শিল্পকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে রেশম উৎপাদনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের তেমন কোন আগ্রহ ছিল না তবে পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ রেশম শিল্পের উন্নয়নকল্পে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে সরকারি অর্থায়নে রাজশাহী সিল্ক ফ্যাক্টরি চালু করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রেশম উন্নয়নের জন্য সুসংঘবদ্ধ নীতি গ্রহণ করা হয় এবং সিল্ক খাতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে সেরিকালচার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।
রাজশাহীতে সিল্কের বিকাশ
রাজশাহী সিল্ক শাড়ীর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে সিল্কের বিকাশ কবে থেকে জানেন কি? ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বাংলার সিংহভাগ রেশমপ্রধান অঞ্চল চলে যায় ভারতের অংশে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রেশমের উৎপাদন প্রসার ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়। পরবর্তীকালে একাত্তরের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নতুন করে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে রেশম শিল্প।
বাংলার রেশম শিল্পকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠা করা হয় রেশম গবেষণা ও প্রতিষ্ঠা কেন্দ্র। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে সেরিকালচার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সেরিকালচার বোর্ডের অধীনে রাজশাহী সিল্ক ফ্যাক্টরি কে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৭৮ সালে গঠিত হয় রেশম বোর্ড ফলে গতি পায় রেশম শিল্প।
প্রথমদিকে মাত্র আটটি জেলার মধ্যে রেশম শিল্পের কার্যক্রম সীমিত থাকলেও নব্বই দশক পরে ৪০টি জেলায় রেশম বোর্ডের কার্যক্রম কে সম্প্রসারণ করা হয়। রেশম উৎপাদনের স্বর্ণযুগ মূলত এই সময়টিই এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মোঃ সদর আল এর হাত ধরে রাজশাহীতে নতুন করে যাত্রা শুরু করে রেশম শিল্প।
রেশম চাষ পদ্ধতি
রেশন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অনেক কৌতুহল আছে। অনেকেই জানেন না রেশম চাষ করা হয় কিভাবে। তাহলে চলুন জেনে জেনে নেই কিভাবে রেশম চাষ করা হয়। রেশম চাষ বেশ জটিল এবং শ্রমপেক্ষ প্রক্রিয়া। রেশম তৈরি করা হয় সাধারণত রেশমের গুটি থেকে। তুত গাছের পাতা এদের প্রধান খাদ্য। রেশম চাষ থেকে শুরু করে কাপড় তৈরি পর্যন্ত তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়।
তিনটি পর্যায়ের প্রথমটি হল তুত গাছ চাষ করা, দ্বিতীয়টি হল রেশম পোকা প্রতিপালন করা এবং তৃতীয়টি হলো বস্ত্র তৈরির জন্য রেশম গুটির সুতা পৃথক করা। রেশম গুটি আসলে রেশম মথের শুয়োপোকা। ডিম থেকে জন্মানো রেশম কিট গুটিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর্যায় শেষ করে রেশম মদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রেশম গুটি বা কোকুন দেখতে অনেকটাই কবুতরের ডিমের মতো।
এদিকে স্ত্রী মথ তখন কাল চক্র পুনরায় শুরু করার জন্য ডিম পাড়তে শুরু করে। গুটিবদ্ধ অবস্থায় রেশম পিউপা বা কিটগুলোকে মেরে ফেলে সেগুলোকে সিদ্ধ করে সুতা ছাড়ানো হয় এবং গোটানো হয় এবং এই সুতাকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন বস্ত্র তৈরির জন্য নানান ভাবে তৈরি করা হয়। রেশম গুটি কে আবার কোকুনও বলা হয়ে থাকে।
এর ভেতরে ৫০০ মিটারেরও বেশি লম্বা একটি সুতা বিন্যস্ত থাকে। কোকুন তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় তিন দিনের মতো। পরবর্তীতে ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে গুটির ভেতর শুককীট পিউপায় পরিণত হয়। পিউপায় পরিণত হওয়ার পূর্বেই গরম জলে কোকুন সেদ্ধ করা হয় ফলে ভেতরের পোকাটি মারা যায়। পরবর্তীতে এই কোকুন থেকেই রেশম সুতা সংগ্রহ করা হয়। তবে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় কারণ পিুউপা যদি মথে পরিণত হয়ে গুটির প্রান্ত দিয়ে ছিদ্র করে বেরিয়ে আসে তাতে সুতার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয় এবং সুতার যে গুণগত মান সেটাও কমে যায়।
সাধারণত ছয়টি গুটির সুতা একত্রিত করে একটি ঋণ বা নানু হয়। যারা সিল্ক তৈরি করে থাকেন তাদের মধ্যে আবার রেশমের বিভিন্ন ধরনের নামের প্রচলন আছে যেমন গুটি মেলার বাঁশের চালন কে বলা হয় চন্দ্রোকি, গুটির সুপ্তকালীন অবস্থাকে বলা হয় বিজন, রেশম গুটি পালনকারীকে বোসনি এবং রেশম গুটিকে পোলু বলা হয়ে থাকে।
রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি
রাজশাহী সিল্ক শাড়ি নারীদের নান্দনিক পোশাকের মধ্যে শাড়ি অন্যতম। এই শাড়ির চাহিদা থাকে বছরজুড়ে সেটা হোক পহেলা বৈশাখ ঈদ পূজা পার্বণ যে কোন উৎসবে। আবার বাঙ্গালী নারীর শাড়ি পছন্দের তালিকায় থাকে বিভিন্ন রকমের শাড়ি যেমন জামদানি, ঢাকাই, বেনারসি, রাজশাহী সিল্ক শাড়ি, কাতান শাড়ি, পাবনার শাড়ি প্রভৃতি।
তবে এতসব শাড়ির মধ্যে সিল্ক শাড়ির ঐতিহ্য সুনাম এবং ব্যবহারের দিক থেকে আরামদায়িকতা এই সব দিক থেকে বিবেচনা করলে রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আবার শীত বলুন অথবা গরম বলুন যে কোন ঋতুতেই রাজশাহী সিল্ক শাড়ি পরিধানযোগ্য এবং আরামদায়ক। রাজশাহী অঞ্চলে অত্যধিক রেশম চাষ হওয়ার কারণে রাজশাহীর নামানুসারে রাজশাহী সিল্কের নামকরণ করা হয়। রাজশাহী সিল্কের সব থেকে বড় শোরুম হল সপুরা।
রাজশাহী সিল্ক শাড়িতে শুধু বিখ্যাত তা কিন্তু নয় বরং সপুরা সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেশ সুপরিচিত এবং ঐতিহ্যবাহী কারণ বাংলাদেশে রেশম শিল্পের মোট পাঁচটি শোরুম রয়েছে যার মধ্যে দুটি শোরুম ঢাকাতে একটি চট্টগ্রামে এবং একটি রাজশাহীতে। রাজশাহীতে সপুরা সিল্ক শোরুমের নিচেই তাদের মূল কারখানায় এবং এই কারখানা থেকেই সারা বাংলাদেশে সিল্ক কাপড় তাঁরা সরবরাহ করে থাকে। রাজশাহীর অত্যন্ত জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী শাড়ি হল গরদ শাড়ি।
গরদ শাড়ি কেবলমাত্র রাজশাহীতেই পাওয়া যায়। গরুদ শাড়ির জামিন সাধারণত রেশমের স্বাভাবিক রঙ্গের হয় এবং লাল বা সবুজ আবার কখনো সোনালী জড়ির কাজ করা হয়ে থাকে। গরদ শাড়ির পাড় যে রঙেরই হোক না কেন শাড়ির জামিন উজ্জ্বল হয়ে থাকে। রাজশাহীর আরেকটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি হলো মসলিন সিল্ক। এর জনপ্রিয়তাও বেশ তুঙ্গে।
রাজশাহীতে উৎপাদিত সিল্কের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হল বলাকা সিল্ক। বলাকা সিল্কের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি হ্যান্ডলুম কাপড় যা কখনোই মেশিনে বুনন করা যায় না। এর বুনন কাজ বেশ শক্ত ও ভরাট হওয়াযর কারণে বলাকা সিল্ক পাতলা ও হালকা হওয়া সত্ত্বেও ট্রান্সপারেন্ট হয়না। সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
সিল্ক কাপড় চেনার উপায়
রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। সাধারণত সিল্কের ওজন যত বেশি হয় তার গুণগত মান ঠিক ততটাই ভালো হয় তবে আজকাল বাজারে সিল্ক কাপড়ের সাথে পলেইস্টার মিশিয়ে কাপড়ের ওজন বাড়ানো হচ্ছে। আপনি যদি আসল সিল্ক কাপড় চিনতে না পারেন তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে আসল সিল্ক কাপড় চেনা যায়।
- সিল্কের কাপড় চেনার সব থেকে সহজ উপায় হলো শাড়ির ছোট্ট এক কোন আগুনের শিখার উপর ধরুন অথবা শাড়ি থেকে একটি সুতা বের করে নিয়ে সেটি আগুনের শিখার উপর ধরুন। পোড়ানোর সময় যদি পোড়া চুলের মতো বা রেশম পোকার মত গন্ধ বের হয় তাহলে বুঝবেন এটি আসল সিল্ক আর যদি পলিইস্টার হয় তবে প্লাস্টিক বেরিয়ে আসে এবং হাতের সাথে আঠার মত লেগে থাকে।
- সিল্ক যত হালকা হবে এর নমনীয়তা এবং সূক্ষ্মতা স্বভাবিক ভাবেই বেশি হবে। আপনি যদি আপনার আঙ্গুলের রিং এর মধ্য দিয়ে সিল্ক কাপড় পাস করাতে পারেন তাহলে বুঝবেন সিল্ক আসল আর আটকে গেলে বুঝবেন তা আসল সিল্ক নয়।
- সিল্ক কাপড় বেশ নরম হয় কিন্তু পলেস্টার কাপুর ততটা নরম হয় না।
- অন্য কাপড়ের তুলনায় স্বাভাবিকভাবে সিল্কের কাপড়ের উজ্জ্বলতা বেশি থাকে এবং এটি প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বল থাকবে।
- সিল্কের কাপড় খুব সহজেই পানি শোষণ করে নিতে পারে। কাপড় কেনার সময় আপনি কয়েকক ফোটা পানি ছিটিয়েও যাচাই করে দেখে নিতে পারেন এটি আসল সিল্ক কিনা।
- সিল্কের কাপড়ের সাথে অন্য কাপড় ঘষা দিলে সামান্য কুঁচকে যায় কিন্তু কৃত্রিম ফিলাপ কাপড় কখনোই কুঁচকে যায় না।
- আপনি যখন সিল্ক ফেব্রিক আইরন করবেন তখন এটি খুব সহজে আয়রন হয়ে যাবে কিন্তু এটি যদি পলিস্টার ফেব্রিক এর মত সিল্ক ফেব্রিক ছাড়া অন্য ফ্যাব্রিক হয় তবে সহজে আইরন হবে না।
সম্মানিত পাঠক, রাজশাহী সিল্ক শাড়ির উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্য এবং পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই আসল সিল্ক শাড়ি যাচাই করে নিতে পারেন। এতে করে আপনি প্রতারিত হবেন না।
হাফ সিল্ক শাড়ি চেনার উপায়
রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য জেনেছেন। আমরা অনেকেই আসল সিল্ক শাড়ি চিনতে না পেরে হাফ সিল্ক শাড়ি বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসি। তাই চলুন হাফ সিল্ক শাড়ি আপনি সহজেই কিভাবে চিনবেন তা জেনে নিই। প্রথমেই বলি ,যেসব শাড়িতে সিল্ক সুতা ও সুতি সুতা মিক্স করে বানানো হয় সেটি হল হাফ সিল্ক শাড়ি।
হাফ সিল্ক সুতা চেনার একমাত্র উপায় হল রেশম সুতা বা সুতি সুতা পোড়ালে আগুন জ্বলবে এবং পোড়ার পরে খানিকটা ছাই এর মত অংশবিশেষ পাওয়া যাবে। কিন্তু হাফ সিল্ক শাড়িতে আগুন ধরলে সুতা পানির মত গলে যাবে এবং আগুনে পোড়া শেষে ছাই এর মত কোন অংশবিশেষ পাওয়া যাবে না। এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করে আপনারা খুব সহজেই হাফ সিল্ক শাড়ি চিনে নিতে পারবেন।
রাজশাহী সিল্ক কাপড়ের দাম
রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বেশ কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। সিল্ক কাপড়ের সঠিক দাম না জানার কারণে আমরা অনেক সময় দোকানের সাথে দর কষাকষির মধ্যে পড়ে যাই। অনেকে আবার রীতিমতো কাপড় কিনতে ঠকেও যান। সিল্ক শাড়ি অথবা কাপড় কেনার পূর্বে কাপড়ের দাম সম্পর্কে আপনার অবশ্যই সঠিক ধারনা থাকা উচিত। চলুন এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক রাজশাহী সিল্কের কাপড়ের দরদাম কেমন।
সিল্ক ভেদে কাপড়ের দাম নানারকম হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য শাড়ির তুলনায় সিল্ক শাড়ির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। সিল্কের একটি শাড়ির দাম শুরু হয় ২০০০- ৩০০০ টাকায়। আপনি যদি ভালো মানসম্মত সিল্ক শাড়ি কিনতে চান তাহলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।আবার বাহারি রং ও কারুকার্যে সাজানো সিল্কের শাড়ি ৩ থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যেও আপনি নিতে পারেন।
আবার কিছু কিছু শাড়ি রয়েছে যার দাম লাখ টাকার উপরে। অনেকে আবার সিল্কের থ্রি পিস কিনে থাকেন। আপনি যদি থ্রি পিস নিতে চান তাহলে 2000 থেকে 2500 টাকার মধ্যে গুণগত মানসম্পন্ন থ্রি পিস পেয়ে যাবেন। কেউ কেউ আবার গজ হিসেবে কাপড় কিনতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। গজ হিসেবে সিল্কের কাপড় সাধারণত ২০০ টাকা দিয়ে শুরু হয়।
মনে রাখবেন আপনি যত কোয়ালিটি সম্পন্ন শাড়ি নিবেন শাড়ির কোয়ালিটি হিসেবে দামটাও ঠিক ততটাই বেশি হবে। রাজশাহীতে সিল্কের বেশ কয়েকটি শোরুম রয়েছে। কেউ যদি আসল সিল্ক শাড়ি নিতে চান তাহলে এইসব শোরুম থেকে খুব সহজেই কিনে নিতে পারবেন রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক শাড়ি।
রাজশাহী সিল্কের বর্তমান অবস্থা
রাজশাহী সিল্ক শাড়ির নানান বৈশিষ্ট্য জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই সিল্কের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। মূলত রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকা কে বলা হয় সিল্কের এলাকা। রাজশাহীতে সপুরা সিল্ক ছাড়াও রয়েছে আমিনা সিল্ক, ঊষা সিল্ক সহ বেশ কিছু শোরুম। বেসিক শিল্প এলাকার মঠ পুকুরের পাশে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে সপুরা সিল্কের প্রধান কার্যালয়।
বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে রাজশাহীর সিল্কের সুনাম ছাড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। ২০২১ সালে এপ্রিল মাসে রাজশাহীর সিল্ক জিআই পণ্য হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করেছে। বর্তমানে রাজশাহী রেশম কারখানাতে মাসে এক টন সুতা উৎপাদিত হচ্ছে। এতে বলতে গেলে মাসে ২০০ গজ কাপড় তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে রাজশাহী সিল্কের সাথে প্রায় ১০ হাজার কর্মচারী এবং কর্মকর্তাগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে।
রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমার মন্তব্য
সম্মানিত পাঠক, আপনি এখন নিশ্চয়ই রাজশাহী সিল্ক শাড়ির বৈশিষ্ট্য , সিল্ক শাড়ি কিভাবে চিনবেন সিল্ক শাড়ির দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সিল্কের প্রসঙ্গ আসলেই চলে আসে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্কের কথা। দিনকে দিন রাজশাহী সিল্ক শাড়ির এই জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।রেশম শুধু রাজশাহীরই নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশের ঐতিহ্য।
তাই রেশম শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের সকলেরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। রাজশাহী সিল্ক শাড়ি সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। তাতে তাঁরা রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে।ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url