ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলো আমরা অনেকেই জানিনা। আবার কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি তা জানতেও অনেক সময় আমরা বেশ উদগ্রীব হয়ে থাকি।
ব্রয়লার-মুরগির-ডিমের-ক্ষতিকর-দিক-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
আপনি যদি ব্রয়লারের ডিম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক এবং দেশী নাকি ব্রয়লার কোনটির ডিমে পুষ্টি বেশি থাকে তা সহজ ভাষায় জেনে নিতে চান তাহলে আজকের পোস্টটি অবশ্যই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ  ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক

ব্রয়লার মুরগির ডিম চেনার উপায়

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক জানার আগে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে ব্রয়লার মুরগির ডিম চেনার উপায় সম্পর্কে। কারন, অনেকেই আছেন যারা ফার্মের এবং দেশি মুরগির ডিম চিনতে পারেন না। এই মুরগির ডিম সচরাচর সাদা এবং বাদামি এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণ ধারণা মতে, সাদা পালক ও সাদা বা হালকা রঙের কানের লতি বিশিষ্ট মুরগি সাদা ডিম পাড়ে।
আর বাদামি পালক আর লাল কানের লতি বিশিষ্ট মুরগি বাদামি ডিম পাড়ে। যদিও এটি নিঃসন্দেহে ভাবে বলা কঠিন কারণ অনেক লেঘোর্ন জাতের মুরগিও সাদা সহ বিভিন্ন রঙের হয় কিন্তু তারা সবাই সাদা ডিম পাড়ে। ফলে যারা ব্রয়লার মুরগির ডিম চিনতে পারেন না তাদের জন্য ডিম চেনার সহজ একটি উপায় হলো, ডিম কেনার সময় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে পোলট্রি মুরগির ডিমের রং

অন্যান্য মুরগির ডিমের থেকে একটু আলাদা হয়ে থাকে। বাদামী রং এর ডিমের ওপর হালকা লালচে রং থাকে এবং সাদা রঙের ডিম পুরোটাই ধবধবে সাদা হয়। আপনারা যারা স্বাস্থ্য সচেতন আছেন তারা অনেকেই এই ডিম কিনতে গিয়ে বাদামি নাকি সাদাটা কিনবেন এই নিয়ে অনেক সময় নানান বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। তবে আমাদের দেশে বাদামি রঙের পোল্ট্রি মুরগি ডিমের চাহিদা সবথেকে বেশি।

ফার্মের মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক জানার আগে আপনাকে জানিয়ে দেব এই ডিমের পুষ্টি সম্পর্কে। একটি ডিমের গড় ওজন সাধারণত ৬০ গ্রাম হয়ে থাকে। একটি ডিমের সাদা অংশের ১১ ভাগ এবং কুসুমের 12 ভাগই হল প্রোটিন। ডিম নিঃসন্দেহ ভাবে পুষ্টিকর এটি প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ফার্মের ডিম নিয়ে বর্তমানে আমাদের অনেকের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে।
অনেকে আবার মনে করেন ফার্মের ডিম খেলে হয়তো দেহের ক্ষতি হবে। কিন্তু এর চিত্র বাস্তবে একেবারেই উল্টো। বরং  ফার্মের হাঁস মুরগির বিজ্ঞানসম্মত রক্ষণাবেক্ষণ হয় বলে এদের ডিমের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এবং দামেও বেশ কম। তাহলে চলুন জেনে নিই একটি ফার্মের মুরগির ডিমে পুষ্টি উপাদান কি কি থাকে-
  • পানি- ৬৫%
  • শর্করা- এক পারসেন্ট
  • রিবোফ্লাভিন- ০.২৬ মি. গ্রাম
  • আরজিনিন- ০.৭৬ গ্রাম
  • মিথিওনিন- ০.৮৩০ গ্রাম
  • আমিষ- ১২%
  • ফসফরাস- ১৮৭ মি গ্রাম
  • ভিটামিন ডি- ৯২৫ আই ইউ
  • ভিটামিন এ- ১০১৫ আই ইউ
  • লিও সিন- ০.৯৫ গ্রাম
  • ভিটামিন ই- ১.৮ মিলিগ্রাম
  • লাইসিন- ০.৭৮ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম- ৪৮ মিলিগ্রাম
  • কলিন ৫৩২ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাট- ১১%
  • আইসোলিউসিন- ০.৮০ গ্রাম
  • মিনারেল- ১১%
  • হিস্টাডিন - 0.91 গ্রাম
সুতরাং ডিম নিঃসন্দেহে একটি উচ্চ খাদ্যমূল্য সম্পূর্ণ খাদ্য। ভিটামিন সি ছাড়া অন্য সকল ভিটামিন রয়েছে এই ডিমে।

ব্রয়লারের লাল ডিম নাকি সাদা ডিমের উপকারিতা বেশি

ব্রয়লার মুরগির ডিম খাওয়ার  ক্ষতিকর দিক তেমন একটা নেই বললেই চলে। আমরা অনেকেই ভাবি লাল ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি আবার কেউ কেউ ভাবেন সাদা ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি। এক্ষেত্রে আপনাকে বলে রাখি ডিমের রং নির্ভর করে সাধারণত মুরগির জাত এবং জিনের ওপর। আর মুরগির খোসার রং বাদামী অথবা সাদা হয় মূলত মুরগির জরায়ুর মধ্যে থাকা শেল গ্ল্যান্ডের কারণে।
ব্রয়লার-মুরগির-ডিমের-ক্ষতিকর-দিক-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
মুরগির দেহে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে যা থেকেই ডিমের রং তৈরি হয়। আবার ডিমের রঙ সাদা হলে তাতে কোন রং যোগ হয় না। লাল নাকি সাদা ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পুষ্টি সৈয়দ তাসলিম হাসিম চৌধুরী এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ শাকিলা ফারুক বলেন ডিমের রঙের সঙ্গে পুষ্টিগুণের কোন তারতম্য হয় না।

আবার নিউইয়র্ককে কর্মরত একদল গবেষকদের মতে লাল ডিমে অমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সামান্য বেশি রয়েছে কিন্তু এবং এটা এতটাই সামান্য যে তাতে খুব একটা তারতম্য হয় না অন্য ডিমের সাথে। তাই ডিমের রং নয় বরং মুরগিকে যে ফিড খাওয়ানো হয় নির্ভর করে ডিমের পুষ্টিগুণ। তবে পুষ্টিবিদদের মতে যে ডিমের রং যত গাঢ় হয়

সেই ডিমে ভিটামিন এ, ক্যারোটিন এবং খনিজ উপাদানের মাত্রা তত বেশি থাকে।ফলে ওই ডিম খেতে তত বেশি স্বাদযুক্ত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডিমের স্বাদ এবং পুষ্টি নির্ভর করে ডিমের খাদ্যের ওপর এবং কি ধরনের পরিবেশে একটি মুরগি বেড়ে ওঠে সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুষ্টির দিক থেকে লাল এবং সাদা ডিমের বিশেষ কোন পার্থক্য নেই বললেই চলে।

ব্রয়লার মুরগির ডিমের উপকারিতা

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক আহামরি কিছু নেই। আমরা যে সমস্ত জিনিস খাই তার প্রত্যেকটিতেই যেমন উপকারিতা থাকে, তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিকও থাকে। তবে ডিমের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর থেকে উপকারী দিকটাই বেশি থাকে।তাহলে চলুন ব্রয়লার মুরগির ডিমের উপকারিতা গুলো কি কি জেনে নিন-
  • সাধারণত দেশি মুরগির থেকে ব্রয়লার মুরগির ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। কারণ বয়লার মুরগিকে যে খাবারগুলো খাওয়ানো হয় সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, শামুকের গুড়া, খোল, লবণ ,শুটকি মাছের গুঁড়া ,গম, ভুট্টা, ভুষি সহ বিভিন্ন রকম খাদ্যের সংমিশ্রণ। স্বাভাবিকভাবে বয়লার মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি
  • বয়লার মুরগির ডিমের সাদা অংশে অত্যধিক পরিমাণে জৈব আমিষ থাকে। আর কুসুমের অংশে অধিক পরিমাণে লৌহ ভিটামিন সহ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো বজায় থাকে।
  • আবার এন্টিঅক্সিডেন্টসহ ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো ব্রয়লার মুরগির ডিমে বিদ্যমান রয়েছে।
  • ব্রয়লার মুরগিকে যেহেতু মানসম্মান এর খাবার দেওয়া হয় যার ফলে দেশি মুরগির থেকে বয়লার মুরগির ডিমে পুষ্টি তুলনামূলকভাবে বেশি।
  • এই বয়লার মুরগির ডিমে রয়েছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ যা আপনার শিশুর দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • ব্রয়লার মুরগির ডিমের কুসুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি। আর এই ভিটামিন ডি আপনার দেহের হাড়কে শক্তিশালী ও মজবুত করে। ফলে হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনি ব্রয়লার মুরগির ডিম খেতেই পারেন।
  • ফার্ম এর মুরগির ডিমের কুসুম কিছুটা হালকা হয় তার কারণ এই ডিমে সরাসরি ভিটামিন 'এ' এর উপস্থিতি রয়েছে। ফার্মের মুরগির জন্য অনেক সময় বাজারে ভিটামিনের সাথে ভিটামিন এ ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যায়। যার ফলে সরাসরি ভিটামিন খাওয়ানোর ফলে ফার্মের মুরগির ডিমে ভিটামিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
  • আবার ক্যালরির বিষয়ে বিবেচনা করলে একটি দেশি মুরগির ডিমের থেকে ফার্মের মুরগির ডিমে ক্যালরি বেশি থাকে। কারণ দেশি মুরগির ডিমে সচরাচর ক্যালোরি থাকে ৫০ মিলিগ্রাম অন্যদিকে একটি ফার্মের মুরগির ডিমে ক্যালরি থাকে ৭০ গ্রাম। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ফার্মের মুরগির ডিম এগিয়ে পুষ্টিগুণের দিক থেকে।
  • ব্রয়লার মুরগির ডিমের মধ্যে এমন কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যেগুলো যে কোন বয়সের মানুষের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি ব্রয়লার মুরগির ডিম খান অথবা দেশি মুরগির ডিম খান প্রত্যেকটি ডিমেই কিন্তু কম বেশি সমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেহেতু দেশি মুরগির ডিম ব্রয়লার মুরগির ডিমের থেকে তুলনামূলকভাবে ছোট হয় তাই ব্রয়লার মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণের পরিমাণটাও সামান্য বেশি হতেই পারে।

ব্রয়লার মুরগির ডিম কোথায় পাবেন

ব্রয়লার মুরগির ডিমের অপকারীতা এবং উপকারিতা ইতিমধ্যেই জেনেছেন। অনেকেই আছেন যারা ব্রয়লার মুরগির ডিম খেতেই বেশি পছন্দ করেন কিন্তু খুঁজে পান না। তাই আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ব্রয়লার মুরগির ডিম পাওয়া যায় কোথায়। চলুন জেনে নি ন ব্রয়লার মুরগির ডিম কোথায় পাওয়া যায়--
  • যে এলাকায় ব্রয়লার মুরগী পালন করা হয় সাধারণত সেই এলাকায় ব্রয়লার মুরগির ডিম বেশি পাওয়া যায়।কারণ এগুলোতে ফার্ম আকারে অনেকগুলো মুরগি একসাথে পালন করা হয়।
  • আবার ফার্ম থেকে ব্রয়লার মুরগির ডিম সংগ্রহ করেও সারাদেশে বাজারজাত করে বিক্রি করা হয়ে থাকে। তাই বাজারে যে সমস্ত দোকানে ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি করা হয় সেসব দোকান থেকেও আপনি ব্রয়লার মুরগির ডিম সংগ্রহ করতে পারেন।
  • আপনি একান্তই যদি ব্রয়লার মুরগির ডিম খুঁজে না পান তাহলে বলে রাখি এখন বর্তমান যুগ অনলাইনের যুগ। আপনি ঘরে বসে বিভিন্ন সোশ্যাল প্লাটফর্ম বা অনলাইনে অর্ডার করে ব্রয়লার মুরগির ডিম পেতে পারেন।

ব্রয়লার মুরগির ডিমে কি এলার্জি আছে

ব্রয়লার মুরগির ডিম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক জানার আগে জেনে নিন এই ডিমে এলার্জি আছে কিনা । ফার্মের মুরগির ডিম খেলে কি এলার্জি হয়? এই নিয়ে আপনাদের মনে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আপনাকে বলে রাখি ফার্মের মুরগির ডিমে এলার্জি একেবারে নাই বললেই চলে। আর এলার্জির রোগটা এমনই এটি ক্ষেত্র বিশেষে একেকজনের একেক খাবারে হয়ে থাকে।

সে হিসেবে ফার্মের মুরগির ডিমে অতিরিক্ত এলার্জি আছে কিনা সেটি বোঝার জন্য আপনাকে ফার্মের মুরগির ডিম অবশ্যই খেতে হবে। খাওয়ার পরে যদি অ্যালার্জির কোন লক্ষণ আপনার শরীরে পরিলক্ষিত হয় তাহলে বুঝবেন তাতে অ্যালার্জি আছে। আর যদি কোন লক্ষণ আপনার শরীরে না বুঝতে পারেন তাহলে বুঝতে হবে ফার্মের ডিমে কোন এলার্জি নেই।

কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি

ব্রয়লার নাকি দেশী কোন মুরগির ডিমে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে তা অনেকেই জানতে চান। প্রোটিনের সব থেকে ভালো উৎস হলো ডিম। আর তাই ডিম খাওয়ার সময় আমাদের মনে অনেকেরই ভাবনা আসে কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি সবচেয়ে বেশি হয়। অনেকে আবার ভাবেন দেশি মুরগির ডিমের কুসুম বেশি লাল তাই দেশি মুরগির ডিমে হয়তোবা পুষ্টি বেশি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই উল্টো।
ব্রয়লার-মুরগির-ডিমের-ক্ষতিকর-দিক-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
কারণ, ফার্মের মুরগিকে খাওয়ানো হয় মানসম্মত বিভিন্ন খাবারের মিশ্রণ যেমন খইল, ভুষি, ভুট্টা, ফিড ইত্যাদি। আবার কখনো কখনো ফার্মের মুরগির জন্য বাজারে বিভিন্ন ভিটামিনের সাথে ভিটামিন এ ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যায়। আর তাই সরাসরি ভিটামিন খাওয়ানোর ফলে ফার্মের মুরগির ডিম কিছুটা হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।

সেইসাথে এই ডিমে ভিটামিনের পরিমাণও বেশি থাকে অন্যান্য মুরগি থেকে। আবার আপনি যদি ক্যালরির বিষয় বিবেচনা করেন সে ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে ফার্মের মুরগির ডিম। কারণ একটি দেশি মুরগির ডিমে রয়েছে ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালরি অন্যদিকে একটি ফার্মের মুরগির ডিম রয়েছে 70 গ্রাম ক্যালরি। যেগুলো গৃহপালিত মুরগি সেগুলো রোদে বেশি থাকার কারণে

এইসব মুরগির ডিমে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি বেশি থাকে। আবার অন্যদিকে খামারে ভালো ফিড খাওয়ানোর জন্য ফার্মের মুরগির ডিমের পুষ্টিও অনেক বেশি হয় এসব গৃহপালিত মুরগির ডিমের চাইতেও। এছাড়াও ভিটামিন ডি সহ ১১ ধরনের ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান বেশি থাকার কারণে একটি পুষ্টিগুণের দিক থেকে দেশি মুরগির চেয়ে ফার্মের ডিম এগিয়ে।

ফার্মের মুরগির মাংসের ক্ষতিকর দিক

ফার্মের মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক জানবেন। তার আগে আপনাকে জানাবো ব্রয়লার মুরগির মাংসের অপকারিতা সম্পর্কে। ব্রয়লার মুরগির মাংস খেতে খুব সুস্বাদু এবং নরম প্রকৃতির। আবার দামেও অনেকটা সস্তা। যার ফলে আমরা সহজেই সাধ্যের মধ্যে কিনে খেতে পারি। এই ব্রয়লার মুরগী কে আবার গরিবের আমিষও বলা হয়ে থাকে।

একটি ব্রয়লার মুরগী সাধারণত ৩০-৩৫ দিনের মধ্যেই দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের হয় এবং ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করে দেয়া হয় পোল্ট্রি বাজারে। মাংস খাওয়ার জন্যই মূলত এদেরকে বড় করা হয়। তাই এই ধরনের মুরগির মাংস খেলে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ফার্মের মুরগির মাংসের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি হতে পারে
  • প্রথমেই বলি ব্রয়লার মুরগিকে অত্যধিক পরিমাণে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয় যা মানুষের ব্রেনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। আর তাই ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে আপনার নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও হতে পারে।
  • প্রতিনিয়ত ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে আপনার শরীরের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব কমে যায়, এই বয়লার মুরগিতে থাকা এন্টিবায়োটিকের প্রভাবের কারণে।
  • ব্রয়লার মুরগিকে খুব তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যব্যান করার জন্য সিনথেটিক হরমোন দেওয়া হয় যা একজন মানুষের স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতার ব্যাঘাত ঘটায়।
  • ব্রয়লার মুরগি রান্না করার সময়ে রান্নার তাপমাত্রা বেশি রাখতে হয় যা কারসিনোজেনিক নামক এক প্রকার পদার্থ সৃষ্টি করে। এটি আপনার শরীরে ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে।
  • ব্রয়লার মুরগিতে ক্যালোরি থাকে প্রচুর পরিমাণে কিন্তু সে হিসেবে ফাইবার থাকে খুবই কম। যে কারণে অতিরিক্ত ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে আপনার শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই বেড়ে যাবে।
  • যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ব্রয়লার মুরগি অভিশাপ স্বরূপ। কারণ আপনি অতিরিক্ত ব্রয়লার মুরগী খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
  • ব্রয়লার মুরগিতে কোলাই ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ 67% যা থেকে আপনার ফুড পয়জিং এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • একটি ২৫০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসের টুকরায় ৮৭.৫ মাইক্রগ্রাম আর ৬০ গ্রাম মাংসের টুকরায় 21.88 মাইক্রগ্রাম ক্রোমিয়াম থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবে মুরগির মাংস রান্না করলে এই ক্রোমিয়াম কে বিনষ্ট করা সম্ভব নয় যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। কারণ ক্রোমিয়ামের তাপ সহনীয় মাত্রা ২৯০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড কিন্তু আমরা সাধারণত রান্না করি ১০০ থেকে দেড়শ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে।
  • ফলে এই ক্রোমিয়াম রান্নায় বিনষ্ট হয় না এবং সেই মাংস খেলে ক্রোমিয়াম সরাসরি আপনার শরীরে প্রবেশ করে আপনার দেহের কিডনি লিভারকে অকেজো করে দিতে পারে।
তবে সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ এবং মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রেও জনসাস্থ্যের তেমন কোন ঝুঁকি নেই। আবার উৎস নির্বিশেষে ব্রয়লারের মাংসের সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রার থেকে অনেক কম পরিমাণ এন্টিবায়োটিক এবং ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশ রয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক

ব্রয়লার মুরগীকে অত্যধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর ফলে এই মুরগির ডিমের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তাহলে তাহলে চলুন এই মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলো কি তা দেখে নেয়া যাক
  • যাদের শরীরে এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ব্রয়লার মুরগির ডিম খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত। কারণ আপনার এলার্জির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • আপনি যদি প্রতিদিন অত্যধিক পরিমাণে ব্রয়লার মুরগির ডিম খেতে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং চর্বি জাতির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে অস্বাভাবিকভাবে।
  • ব্রয়লার মুরগির ডিমের কুসুম দেশি মুরগির ডিমের কুসুমের থেকে হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। যার ফলে এই ডিমের স্বাদ দেশি মুরগি থেকে তুলনামূলকভাবে কম। যার জন্য অনেকেই এই ডিম খেতে পারেন না।
  • একটি দেশি মুরগির ডিমে যে পুষ্টিগুণ থাকে ব্রয়লার মুরগির ডিমে তার থেকে বেশি পুষ্টিগুণ থাকে। আর এই অত্যধিক পুষ্টির কারণে আপনার শরীরে নানা রকম ক্ষতিসাধন হতে পারে।
  • ব্রয়লার মুরগির ডিম উৎপাদনকারী মুরগী গুলো একসাথে অনেকগুলো একটি ফার্মে অবস্থান করে। ফলে অনেক ধরনের জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে এই ফার্মে। কোনভাবে এই ব্যাকটেরিয়া যদি ডিমের মধ্যে ঢুকে যায় তাহলে সেটি আমাদের শরীরের জন্য সেটি আরো ক্ষতিকর হবে।
তবে আপনার শরীরে যদি বিশেষ ধরনের কোন সমস্যা না থেকে থাকে তাহলে আপনি ব্রয়লার মুরগির ডিম খেতেই পারেন।

ফার্মের মুরগির ডিমের দাম

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক ইতিমধ্যেই আপনি আজকের আলোচনা থেকে জেনে গেছেন।সারা দেশে প্রচন্ড দাবদাহের কারণে খামারীদের মুরগি মারা যাওয়ায় বর্তমানে বাজারে মুরগি এবং ডিমের সরবরাহ অনেকটাই কমেছে। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম অন্যান্য মুরগির ডিমের থেকে তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম হয়ে থাকে। স্থানভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের দামে 
 
কিছুটা তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে ফার্মের মুরগির ডিমের বাজার মূল্য প্রতি ডজন ১৪৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কখনো কখনো এর দামে কিছুটা কম বেশিও হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি কথা আপনাকে বলে রাখি, ব্রয়লার মুরগির যেহেতু সাদা এবং বাদামী দুই রঙের ডিম রয়েছে। তাই বাজারে বাদামী রঙের ডিমের চাহিদা সাদা ডিমের থেকে সব সময় বেশি হয়ে থাকে।

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমার মন্তব্য

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। এই ডিমের যে ক্ষতিকর দিক রয়েছে তা আমাদের সকলের স্বাস্থ্য বিবেচনায় খুবই নগণ্য। আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় যে সমস্ত খাবার খাই তার প্রত্যেকটির কোনো না কোনো উপকারী দিক এবং ক্ষতিকর দিক রয়েছে। 

সুতরাং আমাদের ভালো-মন্দ দুটি দিক বিবেচনা করেই প্রত্যেকটি খাবার খেতে হবে। ডিম যেহেতু প্রোটিনের ভান্ডার, আর তাই আপনার দেহের পুষ্টি ঘাটতি মিটিয়ে ফেলতে চাইলে আজ থেকে প্রতিদিন আপনার খাবার পাত এ যোগ করুন একটি ডিম। এই রকম আরো তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url