গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় বিস্তারিত জানুন
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় আমরা অনেকেই জানিনা। ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান?। তাহলে বলব আজকে আমাদের আর্টিকেলটি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালো করে পড়ে নিন।
কারণ, আজকে আমরা গর্ভকালীন সময়ে এবং ওজন কমাতে আপনি কোন নিয়মে চিয়া সিড খাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সাথে আরো জানতে পারবেন চিয়া সিড বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয়
- গর্ভকালীন সময়ে আপনি কিভাবে চিয়া সিড বীজ খাবেন
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ আপনার কেন খাওয়া প্রয়োজন
- চিয়া সিড বীজের পুষ্টিগুণ সমূহ
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড বীজ খাওয়ার ঝুঁকি
- ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- চিয়া সিড বীজ খাওয়ার নিয়ম
- চিয়া সিডের উপকারিতা এবং অপকারিতা সমূহ
- চিয়া সিড বীজ আসলে কি
- বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- চিয়া সিডের দাম কত এবং কোথায় পাওয়া যায়
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় সম্পর্কে আমার মন্তব্য
গর্ভকালীন সময়ে আপনি কিভাবে চিয়া সিড বীজ খাবেন
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় আমাদের অনেকেরই অজানা। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন খাবারের সাথে পরিমাণ মতো চিয়া সিড বীজ খান তাহলে আপনার শরীর স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে, তেমনি আপনার শরীরকে নানা রকম রোগ বালাই থেকে দূরে রাখবে এই চিয়া সিড বীজ। এবার চলুন আপনি গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ কিভাবে, কোন নিয়মে খাবেন তা জেনে নেওয়া যাক -
- প্রথমেই বলি, আপনি যদি গর্ভাবস্থায় দিনে ১-২ টেবিল চামচ চিয়া সিড বীজ এক কাপ পানিতে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পানিসহ খেলে বেশ উপকার পাবেন।
- আবার আপনি এক গ্লাস জলের মধ্যে কিছুটা চিয়া সিড বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে সেই চিয়া সিড বীজের জল পরের দিন সকালে পান করতে পারেন।
- আপনি গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ কাঁচাও চিবিয়ে খেতে পারেন। চিয়া সিড বীজ যেহেতু পচনশীল নয় এবং দীর্ঘদিন আপনি ঘরে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। সে হিসেবে এগুলো হালকা জল খাবার হিসেবে খাওয়ার জন্যও বেশ উপযোগী।
- আবার আপনি বিভিন্ন ধরনের স্যান্ডউইচ এর মধ্যে এই চিয়া সিড বীজ যোগ করেও খেতে পারেন। চিয়া বীজের স্যান্ডউইচ তৈরি করার জন্য আপনি পাউরুটির দুটি স্লাইস নিয়ে তার একটির মধ্যে কিছু কুচি শসা, লেটুস পাতা এবং টমেটোর দুটি স্লাইস রেখে আপনার প্রিয় কিছু তার ওপর ছিটিয়ে দিয়ে টপিং করে পাউরুটির অপর স্লাইস দিয়ে সেটিকে ঢেকে দিন । ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার চিয়া বীজের স্যান্ডউইচ।
- চিয়া সিড বীজের যেহেতু নিজস্ব কোন স্বাদ নেই। তাই এই চিয়া বীজগুলোকে আপনি আপনার খাবার সালাদের সাথেও যোগ করে খেতে পারেন।
- প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিড বীজে প্রায় ২০ গ্রাম পরিমাণ মতো প্রোটিন থাকে অর্থাৎ এক চামচে প্রায় ৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। ফলে চিয়া সিড বীজে থাকা ক্যালসিয়াম এবং আয়রন গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।
- আপনি আপনার সকালের নাস্তা, ডেজার্ট, স্মুদি অথবা সালাদের সাথে মিশিয়েও এই চিয়া সিড বীজ খেতে পারেন।
- মায়েদের সন্তানের জন্য বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ ক্যালোরি শক্তির প্রয়োজন হয় যা আপনি এই চিয়া সিড বীজ থেকে পেতে পারেন। চিয়া সিড বীজ আপনার বুকের দুধে ডিএইচএ কন্টেন্ট বাড়াতে সাহায্য করে। যা আপনার শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজন।
- প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া সিড বীজ ১৩৮ ক্যালোরি সরবরাহ করে। আর তাই প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ক্যালরি পেতে চাইলে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড বীজ যোগ করতে পারেন।
সম্মানিত পাঠক, চিয়া সিড বীজ প্রোটিনের একটি স্বাস্থ্যকর উৎস। বিধায় আপনার গর্ভকালীন সময়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হতে পারে। আপনার গর্ভকালীন সময়ে আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে চিয়া সিড খান তাহলে আপনার ভ্রুনের কোষ সমূহ এবং অঙ্গানুগুলির বিকাশ এবং বৃদ্ধি ঘটবে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ আপনার কেন খাওয়া প্রয়োজন
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। শুধু তাই নয়, আপনার গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ খাওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন ডায়েটিশিয়ানরাও। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে আপনি কেন গর্ভাবস্থায় এই চিয়া সিড বীজ খাবেন। তো চলুন গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড বীজ কেন খাবেন সে কারণগুলো জেনে নেয়া যাক---
- গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মহিলাদের হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এই চিয়া সিড বীজ আপনার হজম শক্তিকে বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ পরিমাণে। সেই সাথে আপনার পাকস্থলীর সমস্যাও দূর করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় অনেকেই রক্তশূন্যতায় ভুগতে থাকেন। আপনার এই রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে পারে চিয়া সিড বীজ। কারণ, চিয়া সিড বীজে আয়রনের আধিক্য থাকায় এটি আপনার শরীরের লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং অ্যানিমিয়া থেকেও আপনাকে রক্ষা করবে।
- মাত্র দুই চা চামচ চিয়া সিড বীজে রয়েছে ৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। যা আপনার শিশুর হাড় এবং দাঁত শক্ত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।
- আপনার শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে এই চিয়া সিড বীজ। যা আপনার গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।
- চিয়া সিড বীজ খেলে পেট ভর্তি হয়ে যাওয়ার উদ্রেক হয় ,যার ফলে এটি আপনাকে অপরিমিত ভোজন থেকেও বিরত রাখতে সাহায্য করবে।
চিয়া সিড বীজের পুষ্টিগুণ সমূহ
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নানাবিধ নিয়ম জানার পর এবার নিশ্চয়ই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এটি একটি শক্তিশালী পুষ্টি প্যাক যা ফাইবার অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন, এন্টি অক্সিডেন্ট সহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন, আয়রন এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। তাহলে চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিড বীজে আনুমানিক পুষ্টিগুণ কত হতে পারে তা জেনে নি ----
- কার্বোহাইড্রেট- ৪২ গ্রাম
- ক্যালোরি- ৪৮৬ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন- ১৬.৫ গ্রাম
- ফাইবার- ৩৪.৪ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম- ৬৩১ মিলিগ্রাম
- আইরন- ৭.৭ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম- ৩৩৫ মি. গ্রাম
- ফসফরাস- ৪৮০ মি. গ্রাম
- ভিটামিন বি-৩ (নিয়াসিন)- ৮.৮ মি. গ্রাম
- ভিটামিন বি-১ ( থায়ামিন)- ০.৬২ মি. গ্রাম
- পটাশিয়াম- ৪০৭ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম- ১৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি- ১.৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ- ৫৪ আই ইউ
- মোট ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থ- ৩০.৭ গ্রাম এবং
- জিংকের পরিমাণ- ৪.৬ গ্রাম
সুতরাং গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ সেবন করা অনেকটাই নিরাপদ এবং এটি আপনার সুস্থ প্রসব হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এই চিয়া সিড বীজের মধ্যে যে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে তা একটি সুস্থ স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য অপরিহার্য।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় জেনেছেন। চিয়া সিড বীজ গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিতে সমৃদ্ধ একটি সুপারফুড। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ খাওয়াকে বেশ নিরাপদ বলেই মনে করা হয়। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় আপনি চিয়া সিড বীজ কিভাবে খেলে কি কি উপকার পাবেন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক ---
চিয়া সিড বীজ আপনার পাচনতন্ত্রকে উন্নত করতে পারে
গর্ভাবস্থা আপনার পাচন তন্ত্র কে অনেক সময় নষ্ট করে দিতে পারে। যার ফলে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য সহ এরকম আরো অনেক জটিল জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি ফাইবার সমৃদ্ধ এই চিয়া সিড বীজ খান তাহলে এটি আপনার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতাকে বেশ উন্নত করতে পারে। বলে রাখি, ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড বীজে প্রায় চার গ্রাম ফাইবার থাকে যা প্রস্তাবিত দৈনিক মূল্যের প্রায় ৩২ শতাংশ।
লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করণে চিয়া সিড
অনেক সময়ই গর্ভাবস্থায় আপনার হাত-পা এতটাই ঠান্ডা হয়ে যায়, যে আপনাকে ঘরের ভিতরেও গ্লাভস এবং মোজা পরে থাকতে হয়। কখনো কখনোও বা আপনি স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি ক্লান্তি বোধ করেন এই সময়। এর একমাত্র কারণ আপনার শরীরে আয়রনের অভাব হতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা গর্ভাবস্থার সাথে যুক্ত একটি সাধারণ জটিলতা।
এটি খুব স্বাভাবিক কারণ, গর্ভাবস্থার আগে আপনার শরীর শুধুমাত্র আপনার জন্য আয়রন সরবরাহ করতো কিন্তু এটি এখন আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তান উভয়ের জন্যই আয়রন সরবরাহ করবে। কিন্তু সমস্যা হল অনেক গর্ভবতী মহিলা পর্যাপ্ত পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হন।
যার ফলে আপনার শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার শরীরের এই রক্তাল্পতা দূর করতে পারে একমাত্র সিয়া সিড বীজ। প্রতি দুই টেবিল চামচ সিয়া সিড বীজে ২ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে যা আপনার দৈনিক মূল্যের ১১ শতাংশ। তাহলে আপনি নিজেই ভাবুন চিয়া সিড কতটা উপকারি এই সময়।
আপনাকে ক্ষুধা মুক্ত থাকতে সাহায্য করে সিয়া সিড বীজ
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্ষুধার অবস্থা আপনাকে শিকারির মতো ক্ষুধার্ত করে তুলতে পারে। মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত খাওয়া শুধু আপনার স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং এতে আপনার অতিরিক্ত পাউন্ড বৃদ্ধিও হতে পারে। এর মানে কিন্তু এই নয় যে আপনাকে এবং আপনার গর্ভের শিশুকে ক্ষুদার্থ থাকতে হবে। আর তাই গর্ভকালীন সময়ে প্রোটিন হতে পারে আপনার সেরা বন্ধু।
অর্থাৎ আপনি যত বেশি পরিমাণ প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন আপনি ঠিক ততটাই কম ক্ষুধার্ত অনুভব করবেন। তাই সম্ভব হলে আপনার খাবার তালিকায় কিছু চিয়া সিড বীজ যোগ করুন। এটি আপনার ক্ষুধার্ত ভাবকে দূর করবে এবং শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন যোগাবে।
চিয়া সিড বীজ আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থার হরমোন আপনার শরীরের রক্তে গ্লুকোজ তৈরি করতে পারে। যা আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এড়াতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটি কখনোই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ, রক্তের শর্করা আপনার এবং আপনার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য কে প্রভাবিত করতে পারে। এক্ষেত্রে চিয়া সিড বীজের ফাইবার শুধুমাত্র যে কোষ্ঠকাঠিন্যই প্রতিরোধ করবে তা নয় বরং এটি রক্তে চিনি শোষণের হারকে কমিয়ে দিয়ে রক্তের শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতেও অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।
গর্ভাবস্থায় আপনাকে অতিরিক্ত শক্তি দিতে পারে চিয়া বীজ
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরে অতিরিক্ত শক্তি থাকা একান্ত প্রয়োজন। আপনি একজন চাকুরিজীবী মা "হন অথবা অন্য বাচ্চাদের দেখাশোনা করছেন এমন একজন মা আপনার শক্তির মাত্রা অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত শক্তির উৎসাহ প্রদান করতে পারে এই চিয়া সিড। কারণ চর্বির একটি স্বাস্থ্যকর উৎস হল চিয়া সিড।
ওমেগা-৩ এর সবথেকে ভালো উৎস হলো চিয়া সিড
চিয়া সিডে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিড গুলো সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমাতে ,উদ্বেগ বা বিষন্নতা কমাতে বেশ সাহায্য করে এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু অমেগা-৩ আপনার অনাগত শিশুর সুস্থ মস্তিষ্কের বিকাশকে উৎসাহিত করতে পারে এবং আপনার সুস্থ গর্ভধারনকেও উৎসাহিত করতে পারে এটা কি আপনি জানেন? হয়তো জানেন না। আবার ওমেগা-৩ এর উৎস হিসেবে আপনি ঝিনুক ,সার্ডিন এবং চিংড়ির মতো আরও কম পারদের মাছগুলো খাওয়া শুরু করতে পারেন।
এক্ষেত্রে বলে রাখি ,অনেকে গর্ভাবস্থায় মাছ খেতে পারেন না কারণ মাছ খেলে বমি বমি ভাবের সৃষ্টি হয়। তাই যারা মাছ খেতে পারেন না তাদের জন্য অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড একটি দুর্দান্ত উৎস এবং তারা বিকল্প হিসেবে এই ছোট শক্তি শালী চিয়া সিড বীজগুলো খেতে পারেন। চিয়া সিড বীজের ১আউনসে প্রায় ৫ গ্রাম ওমেগা থ্রি থাকে।
ক্যালসিয়াম
শিশুর হাড় ও দাঁতের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। প্রতি এক টেবিল চামচ চিয়া সিড বীজে প্রায় ৭৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে যা আপনার শিশুর হাড় এবং দাঁতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চিযা বীজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
জিংক সেলেনিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর মত অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান যেগুলি আপনার এবং আপনার গর্ভের শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি গর্ভকালীন সময়ে এতটাই অপরিহার্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত সকল ঝুঁকি যেমন, ভ্রুণের দুর্বল বৃদ্ধি, একজিমা, ক্যান্সার ডায়াবেটিস হৃদরোগ প্রভৃতি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে
গবেষকদের ভাষ্যমতে চিয়া সিডে সেলমন মাছের থেকে প্রায় আট গুণ বেশি অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এই ফ্যাটি এসিড একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
প্রোটিনের চাহিদা
পুষ্টিবিদদের মতে জিএসসিডে মুরগির ডিমের থেকে তিনগুণ বেশি উচ্চমাত্রার প্রোটিন রয়েছে। যা আপনার এবং আপনার অনাগত শিশুর জন্য বেশ উপকারী ।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সহায়তা করে
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে এই কষ্টকাঠিন্য থেকে আপনি নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- চিয়া বীজগুলো খেতে পারেন। এটি আপনার পাচন প্রক্রিয়াকে রাখবে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর। তাছাড়া আপনি যদি নিয়ম করে চিয়া সিড সেবন করেন তাহলে নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধির উন্নতি ঘটবে। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য হেমারয়াডস বা অর্শের মতো জটিলতা গুলো দূর হয়ে যাবে।
আপনার ভ্রুনের বিকাশ ও বৃদ্ধিতে
চিয়া সিড প্রোটিনের একটি স্বাস্থ্যকর উৎস হওয়ার কারণে গর্ভকালীন সময়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। গর্ভকালীন সময়ে অনেক মায়েদের ক্ষুধার প্রবণতা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি বাদাম, মাংস এবং চিয়া বীজের মত কিছু প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন তাহলে সেটি আপনার গর্ভের ভ্রূণের বিকাশ বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।
বুকের দুধ বৃদ্ধিতে চিয়া সিডের ভূমিকা
গর্ভাবস্থার পরে স্তন্যদানকারী মায়েদের বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত 500 ক্যালোরি প্রয়োজন পড়ে। আর এই চিয়া সিড ক্যালরির একটি ভালো উৎস কারণ প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া সিড বীজে ১৩৮ ক্যালোরি থাকে। সুতরাং স্বাস্থ্যকর উপায়ে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য মায়েদের ডায়েট চাটে চিয়া বীজ যোগ করা যেতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড বীজ খাওয়ার ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড বীজ কোন নিয়মে খাবেন তা এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। কিন্তু প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। তবে চিয়া সিড এর উপকারিতা থেকে অপকারিতা নেই বললেই চলে। তারপরেও গর্ভাবস্থায় চিয়াসির বীজ খাওয়ার সময় আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তাহলে চলুন চিয়া সিডের উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন---
- চিয়া সিড বীজ অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক একটি খাবার। এটি একটি উচ্চমাত্রার আশ যুক্ত বা ফাইবার যুক্ত বীজ। আর এক্ষেত্রে বলে রাখি, আপনি যদি অতিরিক্ত ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত না হন তবে সেক্ষেত্রে খুব বেশি পরিমাণে চিয়া সিড বীজ খেলে আপনার ডায়রিয়া এমনকি পেটে অস্বস্তি হতে পারে ।
- অনেক সময় চিয়া সিড বীজ খেলে শরীরে এলার্জির উদ্রেক হতে পারে। এই এলার্জির ফলে আপনার জিব্বা বা ঠোঁটে সুরসুরি বা চুলকানির মত সৃষ্টি হতে পারে। তাই আপনি এই চিয়া বীজ একবার খেয়ে দেখবেন আপনার শরীরে এলার্জির কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা। যদি আপনার শরীরে এলার্জির সন্দেহ হয় চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে তাহলে খাওয়া বন্ধ করে দিন।
- চিয়া সিড বীজের সম্ভবত তেমন কোন ঝুঁকি নেই তবে একটি ঝুঁকি রয়েছে। আপনি যদি প্রথমবার চিয়া সিড বীজ খান তাহলে আপনি দ্রুত ফুলে যেতে পারেন। কারণ, এরা জল শোষণ করতে পারে এবং তাদের আয়তন ১০ গুন বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার এক চামচ চিয়া সিড বীজ খাওয়ার পর সাথে সাথে জল খেলে সেটি
- আপনার খাদ্যনালীতে ফুলে যাবে এবং এতে করে আপনার শারীরিক অস্বস্তি হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি চিয়া সিড বীজ খাবারের ওপর ছিটিয়ে খাবেন অথবা বীজগুলোকে জলে ভিজিয়ে একটি পানীয় তৈরি করে তৈরি করে সেটি পান করতে পারেন।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য চিয়া সিড বীজকে নিরাপদ বলেই মনে করা হয়, তারপরেও আপনি আপনার ডায়েটে যদি যোগ করতে চান তাহলে একজন গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই সেটি যোগ করবেন। মনে করুন, আপনি ইতিমধ্যে আপনার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ গ্রহণ করছেন।
- আবার আপনি আলাদাভাবে যদি চিয়া সিড বীজ খান সেক্ষেত্রে আপনার ঔষধের সাথে চিয়া সিড বীজের একটি মিথস্ক্রিয়া হতে পারে যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
- অতিরিক্ত চিয়া সিড বীজ খাওয়ার ফলে এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের প্রবণতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে চিয়া সিড বীজ খাওয়াটাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে।
সম্মানিত পাঠক, যদিও চিয়া সিড বীজ খুব একটা ক্ষতিকর না ,তারপরেও বলে রাখি গর্ভবতী মায়েরা এবং স্তন্যদায়ী মায়েরা চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে চিয়া সিড বীজের জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে ওজন কমে। কারণ চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং প্রোটিন। এতে ক্যালোরি নেই বললেই চলে। এতক্ষণ আমরা চিয়া সিড বীজের পুষ্টিগুণ উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম, আসুন এবার জেনে নেই ওজন কমাতে চিয়া সিড বীজ কিভাবে খেতে হয় সে সম্পর্কে---
- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চিয়া সিড বীজ খেলেই যে খুব দ্রুত আপনার ওজন কমে যাবে তা কিন্তু নয়। বরং এই চিয়া বীজ যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে এটা অনেকক্ষণ আপনার পেটকে পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং আপনার ক্ষুধা কে দীর্ঘক্ষণ দমন করতে পারে। যার ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- চিয়া সিডে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা আপনার পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া চিয়া সিড আপনার মানসিক বিষণ্ণতা কমাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে। আর এই মানসিক বিষন্নতা কম থাকলে আপনার শরীরও থাকবে সুস্থ।
- আপনি সকালের নাস্তার সাথে দুধ, দই এবং মিউজলির সঙ্গেও মিশিয়ে চিয়া সিড খেতে পারেন। আবার ওটসের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন।
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা চিয়া সিড নিয়মিত খেলে অন্যদের তুলনায় ওজন অনেক দ্রুত কমে যায়।
- আপনি এক গ্লাস জলে এক চা চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখুন সারারাত ধরে, অতঃপর সকালে উঠে খালি পেটে চিয়া সিডসহ সেই জল পান করুন। আবার আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করলে এতে সামান্য গরম জল এবং লেবুর রস মিশিয়েও নিতে পারেন।
- আপনি যদি চিয়া সিড বীজ পানিতে ভিজিয়ে খেতে না পারেন তাহলে চিয়া সিডের বীজকে গুড়ো করে ময়দা বানিয়ে অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আপনি দুধ, মধু ও চিয়া সিড একসাথে মিশিয়ে পুডিং বানিয়েও খেতে পারেন। আবার এক চা চামচ ভিজিয়ে রাখা চিয়া সীড আপনি মধুর সাথে মিশিয়ে ডেজার্ট হিসেবেও খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের ওজন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- আপনি নারিকেলের পানির সাথে দুই থেকে তিন টেবিল চামচ চিয়া সীড মিশিয়ে জুস বানিয়েও খেতে পারেন।
যেহেতু চিয়া সিড বীজের নিজস্ব কোন স্বাদ বা গন্ধ নেই তাই আপনি যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে এই চিয়া সিড খেতে পারেন। ওজন কমানোর সহায়ক হিসেবে চিয়া বীজের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বাড়লেও এ বিষয়ে বলার মত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখনো পর্যন্ত নেই। তবে বেশ কিছু গবেষণায় জানা গেছে চিয়া সিডের পাশাপাশি কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে ওজন কিছুটা কম থাকে।
চিয়া সিড বীজ খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম তো জানলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন বিভিন্ন দেশের চিয়া সিড খাওয়ার নানা রকম নিয়ম রয়েছে। চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ৩০ মিনিট আপনি জলে ভিজিয়ে রাখবেন। তো চলুন আপনি স্বাভাবিক ভাবে চিয়া বীজ কিভাবে খাবেন সেই নিয়ম জেনে নিন---
- চিয়া পুডিং এর সাথে : আপনি চিয়া পুডিং তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ দুধের সাথে মধু বা ম্যাপেল সিরাপ ও চিয়া সিড মিশিয়ে নিন। এতে আপনি ভ্যানিলা নির্যাস বা কোকো পাউডার ও মেশাতে পারেন। মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে তার উপরে আপনার পছন্দমত ফল বাদাম ছড়িয়ে দিন এবং আট ঘন্টা রেফরিজেরেটরে রেখে তবেই খাবেন।
- স্মুদির সাথে : আপনি যেকোনো রকম স্মুদিতে চিয়া সিড মিশিয়ে খেতেই পারেন ।
- বেকিং এর সাথে : রুটি বা প্যানকেক তৈরিতে আপনি চিয়া সিড ব্যবহার করতে পারেন।
- জ্যাম তৈরি করে : একটি পাত্রে আপনি আপনার পছন্দমত ফল মধু এবং চিয়া সিড মিশিয়ে একটি জ্যাম তৈরি করুন এবং সকালে ব্রেকফাস্টের রুটির সাথে বা ব্রেডের সাথে আপনি জ্যাম উপভোগ করুন।
- এনার্জি বল : আপনি বাদাম, ওটস, চিয়াসিড, শুকনো ফল ছাড়াও আরো অন্যান্য উপাদান আপনার পছন্দমত মিশিয়ে একটি এনার্জি বল তৈরি করুন। এটি আপনি আপনার ইচ্ছামত যে কোন সময় খেতে পারবেন।
তো এভাবেও আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড বীজ যোগ করে নিতে পারেন।
চিয়া সিড এর উপকারিতা এবং অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় আপনাকে আমরা খানিক আগেই জানিয়ে দিয়েছি। এবার জানাবো চিয়া বীজের উপকারি ও অপকারি দিক সম্পর্কে। উপকারি এই বীজেরও কিছু অপকারিতা রয়েছে। তো চলুন এবার পর্যায়ক্রমে জেনে আসি চিয়া সিডের উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো। যা হয়তোবা আপনি নিজেও জানেন না।
উপকারিতা
- ওজন নিয়ন্ত্রণে চিয়া সিডের উপকারিতা অনবদ্য। চিয়া সিড এর দ্রবণীয় ফাইবার যা আপনার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে যার ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- আপনার পরিপাকতন্ত্রকে হাইড্রেট রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর হজমের জন্য সঠিক হাইড্রেশন অপরিহার্য। আপনি যদি হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে দিনে দুবার জল দুধ বা যে কোন তরলে ভিজিয়ে চিয়া সিড খান। এতে করে দেখবেন আপনার হজমের সমস্যা অনেকটাই দূরীভূত হয়ে গেছে।
- চিয়া সিড দ্রবণীয় ফাইবার জল শোষণ করে এবং পরিপাকতন্ত্রের জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে যা মলকে নরম হতে সাহায্য করে এবং আপনাকে কষ্টকাঠিন্যর মত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
- হার্টের সুস্থতায় চিয়া সিডের উপকারিতা রয়েছে । চিয়া সিডে বিদ্যমান অমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও চিয়া সিডের ভূমিকা অনবদ্য। এই বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ডায়বেটিসের পক্ষে ভীষণই উপকারী।
- ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস টা আপনার হাড় মজবুত এবং শক্ত করে।
- আপনার শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এই চিয়া সিড বীজ।
- আপনার ত্বক চুল ও নখকে সুন্দর রাখে এই চিয়া সিড বীজ।
- শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে দেয়।
- চিয়া সিড নিয়মিত খেলে এটি আপনার হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করবে ।
- চিয়া সিড গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
- সিলিয়াক রোগে ভুগছেন তাদের জন্য চিয়া সিড বীজ হতে পারে একটি উপাদেয় খাবার। কারর, চিয়া সিট বীজ প্রাকৃতিকভাবে গুলটেন মুক্ত হওয়ায় সিলেট রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের ডায়েটে সংযোজন করতে পারেন এই চিয়া সিড বীজ।
অপকারিতা সমূহ
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা আপনাকে হজমে সাহায্য করতে পারে এবং নিয়মিত মলত্যাগেও সহায়তা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখি পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া ছাড়া প্রচুর পরিমাণে চিয়া সিড খেলে আপনার গ্যাসের বা অম্বলের সমস্যা হতে পারে।
- কেউ যদি চিয়া সিড খাওয়ার আগে ভিজে না রেখে শুধুমাত্র শুকনো চিয়া সিড বীজ খেয়ে ফেলেন সে ক্ষেত্রে খাদ্যনালী থেকে লালারস শোষণ করে নিতে পারে এবং আপনার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে। সুতরাং ঝুঁকি এড়াতে আপনি সর্বদা চিয়া সিড ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন খাওয়ার আগে।
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে আপনার ত্বকে ফুসকুড়ি চুলকানি এমনকি এনাফিলাক্সিস এর মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- যারা ডাইভার্টিকোলাইটিস বা ইরিটেবল এর মত পরিপাক জনিত রোগে ভুগছেন তারা চিয়া সিড থেকে দূরে থাকবেন।
চিয়া সিড বীজ আসলে কি
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় তো জানলেন। কিন্তু এই চিয়া বীজ আসলে কি জানেন কি? সালভিয়া হিস্পানিকা উদ্ভিদের বীজের নাম হল চিয়া সিড বা চিয়া বীজ। এই অতি উপকারী বীজটির আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকাতে। এটি পুদিনা পরিবারের একটি ছোট গাছ যা মরুভূমিতে সাধারণত দেখা যায়। আবার মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে এই চিয়া সিড।
অ্যাজটেক শব্দ চিয়ান থেকে আগত এই চিয়া নামটি যার অর্থ হল তৈলাক্ত। বীজ সাদা, কালো বর্ণের এবং এই বীজ দেখতে খানিকটা তিলের মতো এবং আকারে খুব ছোট সাইজের হয়। বলে রাখি অনেকেই তো তোমাকে ভুল করে চিয়াসলিড মনে করেন। কিন্তু চিয়া সিড এর চেয়ে সাইজে বেশ ছোট এবং এর ইংরেজি নাম basil seed।
বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার যেমন কিছু নিয়ম রয়েছে, তেমনি বাচ্চাদের এই বীজ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আপনি একটু সতর্কতা অবলম্বন করবেন। কারণ, এটি শুকনো খেলে গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই আপনি বাচ্চাদের এটি খাবারের সাথে অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। তবে এক বছর বা তার কম বয়সী বাচ্চাদের না খাওয়ানোই উত্তম। আপনি আপনার বাচ্চাকে আধা চা চামচ থেকে সর্বোচ্চ এক চা চামচ পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়াতে পারবেন।
আবার আপনি ইচ্ছা করলে চিয়া সিড ব্লেন্ডার মেশিন দিয়ে একেবারে গুঁড়ো করে যেকোনো তরল জাতীয় বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে মিশিয়েও আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারবেন। বলে রাখি, যেসব বাচ্চাদের বয়স এক থেকে দশ বছর তাদেরকে সর্বোচ্চ এক চা চামচ পরিমাণ চিয়া সিট আপনি নিশ্চিন্তে খাওয়াতে পারবেন। সুপার ফুড হিসেবে খেত এই চিয়া সিড বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের জন্য বিশেষ উপকারী।
চিয়া সিডের দাম কত এবং কোথায় পাওয়া যায়
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড নিয়ম করে খাবেন। যা আপনার এবং আপবের গর্ভস্থ ভ্রুনের জন্য উপকারী হবে। আমাদের দেশে বাজারে সাধারণত দুই ধরনের চিয়া সিড বীজ পাওয়া যায় একটি কালো এবং আরেকটি সাদা বর্ণের। চিয়া সিডের দাম নির্ভর করে এর প্যাকেটের আকার এবং ব্র্যান্ডের উপরে। সাধারণত মেক্সিকো, গুয়াতি মালা,
বলিভিয়া থেকে আসা ইয়াসিনের দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে। আবার চীন ও ভারত থেকে আসা চিয়া সিড বীজের দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়। মনে রাখবেন দেশী ব্র্যান্ডের চিয়া বীজের দাম সব সময় কম হয় অন্যান্য ব্রান্ডের থেকে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক চিয়া সিডের দরদাম কেমন হতে পারে
- কালো চিয়া সিড - সাধারণত ৫০০ গ্রামের চিয়া সিড প্যাকেটের দাম প্রায় ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং এক কেজির প্যাকেটের দাম পড়ে 1500 থেকে 2200 টাকা।
- সাদা চিয়া সিড- সাদা বর্ণের চেয়া সিট ৫০০ গ্রামের প্যাকেটের দাম পড়ে প্রায় ৩০০ থেকে ১৩০০ টাকা এবং এক কেজির প্যাকেটের দাম ৬৭০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
দেশি ব্রান্ডের চিয়া বীজের দাম
- দেশি ব্যান্ডের কালো চিয়া সিড ৫০০ গ্রামের প্যাকেট এর দাম ২৫০ থেকে ১২০০ টাকা এবং এক কেজির প্যাকেট এর দাম পড়ে ৫০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত।
- আবার দেশী ব্র্যান্ডের সাদা চিয়া সিড বীজের ৫০০ গ্রামের প্যাকেটের দাম প্রায় ৩০০ থেকে ১৩০০ টাকা এবং এক কেজি প্যাকেটের দাম পড়ে ৭০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
ব্র্যান্ড অনুযায়ী Natures on, Healthy way, এবং pran উল্লেখযোগ্য। এখন বর্তমানে অনলাইনের যুগে আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করে এই বীজ কিনতে পারেন। অনলাইনে কেনা চিয়া সিড বীজের দরদাম সামান্য কম হতে পারে। তবে এর ডেলিভারি খরচটা আবার বেশি পড়ে যায়। তাছাড়া আপনি বিভিন্ন সুপার শপ, ফলের দোকান, বড় কোন মুদিখানার দোকান থেকেও এই চিয়া সিড বীজ ক্রয় করতে পরেন।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় সম্পর্কে আমার মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় আশা করছি আমাদের আর্টিকেল পড়ে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর বর্তমানে সুপার ফুড হিসেবে সকলের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই চিয়া সিড বীজ। আর তাই গর্ভাবস্থায় আপনি এবং আপনার গর্ভের ভ্রূণের সুস্বাস্থ্যের জন্য আজ থেকেই আপনার পাতে খাবারের সাথে নির্দ্বিধায় এই চিয়া সিড বীজ যোগ করতে পারেন।
যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার এবং আপনার গর্ভের ভ্রুনের জন্য ভীষণ উপকারী হবে। তবে আপনি মনে রাখবেন, কোন খাদ্য উপাদানই আপনার স্বাস্থ্যগত সমস্যার একক সমাধান নয়, তাই আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে সঠিক খাদ্যাভাসের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুমের। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url