বেল পাতার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়ুন
বেল পাতার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? বেল পাতার রস খেলে কি হয়? জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাকে পড়ে নিতে হবে।
আজকে আমাদের আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন বেল পাতার নাবা রকম অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে। সাথে আরো জানতে পারবেন বেলপাতা কিভাবে খেতে হয়, বেল পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় এবং বেলপাতা সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য।
পোস্ট সূচিপত্র: বেল পাতার অপকারিতা
বেল পাতার উপকারিতা সমূহ
বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। বেলপাতায় রয়েছে একগুচ্ছ উপকারী উপাদান। নিয়মিত বেলপাতার সেবন করলে একাধিক জটিল রোগের মরণ হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব। তাই তো ডাক্তাররা অনেক সময় নিয়মিত বেলপাতা সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নিয়মিত বেলপাতা খেলে আপনার স্বাস্থ্যের হাল হকিমত বদলে যাবে এটা বলাই বাহুল্য। সুতরাং চলুন আর দেরি না করে বেল পাতার উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিন----
আরো পড়ুনঃ তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- আপনার ইমিউনিটিকে চাঙ্গা করবেঃ বেলপাতা আপনার শরীরের ইমিউনিটি শক্তিকে চাঙ্গা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। আর আপনি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার ফাঁদ এড়াতে চাইলে আপনার শরীরের ইমিউনিটিকে শক্তিকে চাঙ্গা করে তুলতে হবে। কারণ, বেল পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে।
- তাই আপনারা যারা প্রায়শই জ্বর, সর্দি, কাশি এ সমস্ত সংক্রামক রোগের খপ্পরে পড়েন, তারা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে বেলপাতা পানি দিয়ে গিলে খেতে পারেন তাহলে এতেই আপনার উপকার মিলবে।
- পেটের সমস্যা দূর করেঃ আপনার যদি গ্যাস, এসিডিটি এবং বদহজমের মতো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন সকালে এক থেকে দুইটি টাটকা বেলপাতা পানি দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নেবেন। এতে আপনার পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কারণ, বেল পাতায় রয়েছে অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার হজম ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
- হাটকে সুরক্ষিত রাখতেঃ আপনি যদি আপনার হার্টকে সুস্থ সবল রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে আপনাকে বেলপাতা খেতেই হবে। কারণ, বেল পাতার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলি আপনার ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী। আর এই দুটি সমস্যাকে আপনি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তাহলে সুস্থ থাকবে আপনার হৃদপিণ্ড।
- শুধু তাই নয়, নিয়মিত বেলপাতা সেবনের ফলে আপনি হার্ট অ্যাটাক এবং এরিডোমিয়া মত জটিল অসুখের হাত থেকেও রেহাই পেতে পারেন।
- আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখেঃ প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর অনবরত ঘামতে থাকে এবং অস্বস্তি অনুভব হয়। এই ঘাম থেকে আপনি যদি রেহাই পেতে চান এবং আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখতে চান তাহলে আপনি প্রতিদিন সকালে উঠে ১-২ টা বেলপাতা চিবিয়ে খেয়ে নেবেন। এতেই আপনার শরীর ঠান্ডা থাকবে।
- এই বেল পাতা সেবনের ফলে আপনি গরমে বেরোলেও আপনার খুব একটা অস্বস্তি বোধ হবে না। তাই এই গরমে নিজের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে প্রতিনিয়ত বেলপাতা সেবন করুন।
- সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ বেল পাতার মধ্যে কিছু এন্টিবায়োটিক উপাদান থাকার কারণে এটি খুব সহজে আপনার ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পাশাপাশি আপনারা যারা সুগার প্রতিরোধ করতে চাইছেন তারাও নিয়মিত বেলপাতা সেবন করতে পারেন। ডায়াবেটিসের রোগীরা নিয়মিত বেলপাতা খেলে উপকার পাবেন। এছাড়াও বেলপাতা আপনার পাকস্থলী সংক্রান্ত সকল সমস্যা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের শর্করার মাত্রা কে ঠিক রাখেঃ বেল পাতায় রয়েছে প্যান্টিনস এবং মারমেলোসিন নামক এক অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। বিজ্ঞানীদের মতে এই উপাদান গুলো আপনার শরীরে শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- ঘামের দুর্গন্ধ দূর করেঃ এই গরমে বাইরে বেরোলেই আমাদের শরীরে প্রচন্ড ঘামের সৃষ্টি হয়। আবার অনেকের একটু ঘামলেই সেই ঘাম থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। আপনার শরীর থেকেও যদি ঘামের দুর্গন্ধ বের হয় তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে পারেন বেল পাতায়। আপনি গোসলের সময়
- সেদ্ধ করা বেল পাতার রস যদি গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করেন তাহলে আপনার শরীর থেকে ঘামের যে দুর্গন্ধ বের হয় সেই প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়াও, নিয়মিত বেল পাতার রস খেলেও ঘাম থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধ দূর হয়।
- তারুণ্যকে ধরে রাখতে সাহায্য করেঃ আপনারা অনেকেই আছেন যাদের অল্প বয়সেই তারুণ্য হারিয়ে যায়। আবার অনেকে অল্প বয়সে মুটিয়ে যান। আপনি যদি আপনার শরীরের বয়সের তারুণ্যকে ধরে রাখতে চান তাহলে নিয়মিত বেলপাতা সেবন করুন। আপনি যদি পরপর তিন দিন সকালে খালি পেটে বেল পাতার রস খান তাহলে বেলের মতো এর পাতাও আপনার শরীরে যেমন শীতলতা প্রদান করবে তেমনি আপনার শরীরও রোগ বালাই মুক্ত থাকবে।
- জন্ডিস রোগের মহা ঔষধঃ আপনি যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে মধু ও গোলমরিচের সঙ্গে বেল পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার জন্ডিস দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
- ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবেঃ যুগ যুগ ধরে ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে বেলপাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাধারণত শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে আপনি সেই ক্ষতস্থানে বেল পাতার রস লাগাল। এতে আপনার ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যাবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্লীহা রোগের ক্ষেত্রেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্লীহা রোগের ক্ষেত্রে বেলপাতা এক জাদুকরী ভূমিকা পালন করে। আপনাদের যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা রয়েছে এবং দীর্ঘদিন যাবত এ রোগে ভুগছেন তারা যদি প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ বেল পাতার রস খালি পেটে খেতে পারেন এতে আপনার কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- মাথার চুল গজাতে বেল পাতার ভূমিকাঃ যাদের মাথায় টাকের সমস্যা রয়েছে বা অল্প বয়সে চুল ঝরে গেছে বা জন্মগতভাবে মাথায় চুল কম তারা নিয়মিত বেল পাতার রস মাথায় লাগানোর মাধ্যমে আপনার মাথার চুল বৃদ্ধি করতে পারেন। কারণ, বেল পাতার রস মাথায় চুল গজাতে সাহায্য করে।
- যৌবনের উদ্দীপনা কমাতেঃ যৌবনের উদ্দীপনা কমাতে বেলপাতা দারুন কাজ করে। অনেকেই আছেন যারা ব্রহ্মচারী হতে গিয়ে যৌবনের উদ্দীপনাকে সংবরণ করতে চান। কিন্তু পারেন না। যারা যৌবনের উদ্দীপনাকে সংবরণ করতে পারেন না তারা যদি নিয়মিত বেল পাতার রস খান তাহলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। শুধু তাই নয়, নিয়মিত ভাবে বেল পাতার রস সেবনের মাধ্যমে যৌবনের উদ্দীপনা অনেকটাই কমে ফেলা সম্ভব।
- শরীরের জয়েন্টের ব্যথা দূরীকরণেঃ অনেক সময় কোথাও দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে গিয়ে অথবা দাঁড়িয়ে থাকলে আমাদের হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। এই ব্যথা দূর করতে আপনি যদি রাতের বেলা বেলের পাতা গরম করে সেই ব্যথার স্থানে সেক দিতে পারেন তাহলে এই ব্যথা অনেকটাই সেরে যাবে।
- এলার্জিজনিত সমস্যা সমাধানেঃ আপনার শরীরে যদি এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এই বেল পাতার রস সেবন করে আপনি অ্যালার্জি থেকে নিস্তার পেতে পারেন।
সম্মানিত পাঠক, বেল পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আশা করবো উপকারিতা গুলো আপনি শুধু জেনেই ক্ষান্ত হবেন না বরং আপনার দৈনন্দিন জীবনে বেল পাতার এই উপকারিতা গুলোকে কাজে লাগাবেন।
বেল পাতার রস খেলে কি হয়
বেল পাতার রস খেলে কি হতে পারে জানেন কি? আমরা প্রায় সকলেই কমবেশি বেলগাছ চিনি। বেলের উপকারিতা সম্পর্কেও আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানি। কিন্তু বেল পাতার রসে উপকারিতা বা অপকারিতা গুলো কি কি সেটি আমাদের অনেকেরই অজানা। আবার আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থেকেই যায়, বেল পাতার রস খেলে শরীরে কোন সমস্যা হয় নাকি শরীরের উপকার হয়। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে বেল পাতার রস খেলে আপনার শরীরে কি কি সে সম্পর্কে জেনে নিন-
- বেল পাতার রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি আপনার স্কার্ভি রোগের জন্য বেশ উপকারী। তাই আপনার যদি স্কার্ভি রোগ থেকে থাকে তাহলে আপনি নিয়ম অনুযায়ী বেল পাতার রস খেতে পারেন। কারণ, স্কার্ভি রোগ নিরাময়ে বেলপাতা রস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
- বেল পাতার রস আপনার শরীরের ইনসুলিন ও গ্লুকোজের লেভেলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যা একজন ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য বিশেষ উপকারী। যেহেতু বেল পাতার রস ইনসুলিন ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম বিধায় এটি ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম। ফলে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেল পাতার রস পান করা অত্যন্ত উপকারী। এর ফলে আপনি অনাকাঙ্ক্ষিত ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।
- বেল পাতায় ভিটামিন সি থাকার কারণে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়।
- আপনার শিশুর স্মরণশক্তি বাড়াতে চাইলে আপনি বেল পাতার রস খাওয়াতে পারেন।
- আপনি বেল পাতার রস, মধু এবং গোলমরিচের গুঁড়ো একসঙ্গে যদি মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার জন্ডিসের সকল সমস্যা দূর হবে।
- এছাড়া বেল পাতার রস রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয়
বেল পাতার রস খেলে কি হয় তা আপনি ইতিপূর্বেই জেনেছেন। বেল পাতার রসের যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারি দিকও রয়েছে। তবে উপকারী তুলনায় বেল পাতার রসের অপকারী দিক খুবই নগণ্য। চলুন বেল পাতা রস খেলে আপনার কি ক্ষতি হতে পারে সেটি জেনে নেওয়া যাক -
- বেল পাতার রস আপনার যৌন শক্তিকে কমিয়ে ফেলতে পারে। অর্থাৎ আপনি টানা কয়েকদিন যদি বেল পাতার রস পান করেন তাহলে আপনার যৌন শক্তি আপনা আপনি কমে যাবে এবং এটি ফিরে আনতেও অনেকটাই দেরি হবে।
- মাত্র অতিরিক্ত বেল পাতার রস খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে নানান রকমের রোগ দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত বেল পাতার রস খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে আপনার শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বেল পাতার ফেসপ্যাক আপনি কিভাবে তৈরি করবেন
বেল পাতার রস খেলে কি হয় খানিক আগেই তা জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, বেল পাতার ফেসপ্যাকও আমাদের ত্বকের জন্যও ভীষণই উপকারী। আপনি যদি বেল পাতার ফেসপ্যাক ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বকের রোদে পোড়া দাগ, ব্রনের দাগ, মেছতার দাগ, ত্বকের রেশ এবং বয়সের ছাপ দূর হবে । সেই সাথে বেল পাতার ফেসপ্যাক আপনার ত্বককে টানটান ও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। এবার চলুন আপনি বেল পাতার ফেসপ্যাক আপনি কিভাবে বানাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন---
বেল পাতার ফেসপ্যাক বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- মধুর পরিমাণ- ২-৩ চা চামচ
- লেবুর রসের পরিমাণ- ১ চা চামচ
- পরিষ্কার বেলপাতা- ৫-৬ টা এবং
- হলুদ- ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী:
- আপনি প্রথমে পাঁচ থেকে ছয়টি বেলপাতা সংগ্রহ করুন। বেল পাতার সংগ্রহ হয়ে গেলে তারপরে পাতাগুলো পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এরপর পরিষ্কার করা বেলপাতা আপনি পাটায় বেটে ভালো করে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে এই পেস্টের মধ্যে আপনি ১ চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ হলুদ এবং ২-৩ চা চামচ পরিমাণ মধু দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটি মিশিয়ে নিন।
- ব্যাস মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে তারপর এটি আপনার ত্বকে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে আপনি হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে আপনি যদি বেল পাতার ফেসপ্যাক তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার ত্বকের টান পড়া মেছতার দাগ, ব্রণের দাগ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন
বেল পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
বেল পাতার অপকারিতা এড়াতে আপনাকে নিয়ম মেনে বেল পাতা খেতে হবে। উপকারিতা গুলো যদি আপনি পেতে চান তাহলে, আপনাকে জানতে হবে বেল পাতা কখন কোন সময় খেতে হবে। আপনি যদি সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে বেলপাতা খেতে পারেন তাহলে এর উপকারিতা গুলো অবশ্যই পাবেন। এবার চলুন তাহলে জেনে নিই আপনি বেলপাতা কোন নিয়মে খাবেন-
- প্রথমতঃ আপনি যদি বেলপাতা কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে বেশি উপকার পাবেন। অনেকেই আছেন যারা বেলপাতা সিদ্ধ বা রান্না করে খান। এতে করে বেল পাতার গুনাগুন অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেল পাতার পরিপূর্ণ উপকার পেতে আপনি সিদ্ধ না করে অবশ্যই কাঁচা চিবিয়ে খাবেন।
- দ্বিতীয়তঃ অনেকে আবার বেল পাতার শরবত বানিয়ে খেতে পছন্দ করেন। আপনি যদি রোজ সকালে বেল পাতার এক গ্লাস শরবত খান তাহলে সেটি আপনার শরীরে ম্যাজিকের মত কাজ করবে। বেল পাতার এই শরবত তৈরি করার জন্য আপনি প্রথমে বেল পাতা নিয়ে সেটি পাটায় বেটে বা ব্লেন্ডারে মিক্সিং করে পাতার রস টুকু বের করে নিবেন।
- অতঃপর, স্বাদ বৃদ্ধির জন্য আপনি এই রসের মধ্যে দুইটা চামচ মধু এবং লেবুর রস মিশিয়েও খেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে এর সাথে বরফখন্ড ও যোগ করতে পারেন। আপনি যদি নিয়ম করে এই শরবতটি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীর হবে চাঙ্গা এবং শরীরের এনার্জি দ্বিগুণ পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
- তৃতীয়ত: আপনি যদি বেল পাতার শরবত খেতে পছন্দ না করেন তাহলে বেলপাতা ভর্তা করেও খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখি বেল পাতায় সিদ্ধ করার ফলে এর গুনাগুন খানিকটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন বেলপাতা কাঁচা খেতে।
বেল পাতা খাওয়ার সঠিক সময়
বেল পাতার অপকারিতা আমরা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। বেল পাতা খাওয়ারও একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আপনি যদি বেল পাতার উপকারিতা গুলো ঠিকঠাক মতো পেতে চান তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট সময় মেনেই বেলপাতা খেতে হবে। বেল পাতা খাওয়ার সবথেকে উপযুক্ত সময় হলো সকালবেলা।
সকালে আপনি খালি পেটে বেল পাতা খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে কোন কিছু খাবার আগেই খালি পেটে কাঁচা বেলপাতা চিবিয়ে খেয়ে নিবেন। এতে আপনার পেট ভালো থাকবে সেই সাথে আপনার হজম শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। হাজারো পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বেলপাতা। আর এই পুষ্টিগুণ গুলো পরিপূর্ণরূপে পেতে আপনি অবশ্যই সকালে খালি পেটে বেলপাতা খাবেন।
বেল পাতার পুষ্টিগুণ
বেল পাতার এত সব অপকারিতা ও উপকারিতা জানার পর এবার নিশ্চয়ই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান। বেল গাছের পাতা থেকে শুরু করে ফল শিকড় সব কিছুরই ভেষজ উপকারী দিক রয়েছে। এই বেল পাতার রস খেলে আপনারা লিভারের বিভিন্ন সমস্যা এবং লিভার সিরোসিস থেকে অনায়াসেই মুক্তি পেতে পারেন। এবার চলুন বেল পাতায় কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা জেনে নিন--
- ক্যালসিয়াম
- ফাইবার
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি১ এবং
- ভিটামিন বি৬
বেল পাতার অপকারিতা
বেলপাতা আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি মানব দেহের জন্য এর কিছু অপকারী দিকও রয়েছে। কোন কিছু মাত্রাতিরিক্ত খেলে সেটি আমাদের শরীরে উপকারের পরিবর্তে বরং ক্ষতি টেনে আনে। বেল পাতার যে সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে চলুন সেগুলো আপনাকে জানিয়ে দেই--
- আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত বেলপাতা খান তাহলে এটি আপনার শারীরিক শক্তিকে কমিয়ে দিতে পারে।
- আপনি যদি টানা কয়েক সপ্তাহ বেলপাতার রস খান তাহলে আপনার যৌন শক্তি কমে যেতে পারে। তবে সপ্তাহে আপনি যদি একদিন খান তাহলে এর তেমন কোন প্রভাব পড়বে না আপনার শরীরে।
- অতিরিক্ত বেল পাতা খেলে আপনার শরীরে বিভিন্ন রকম রোগ বালাই বাসা বাঁধতে পারে। সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
সম্মানিত পাঠক, বেল পাতার অপকারিতা গুলো সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। তবে আপনি যদি নিয়ম মেনে প্রতিনিয়ত বেল পাতা সেবন করেন তাতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
বেল পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
বেল পাতার অপকারিতা ও উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। বেলের পাতা আমাদের রূপচর্চার কাজে একটি উপকারী উপাদান। বেল পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আপনার ত্বকের ভেতর থেকে ব্রণ কে ভালো করতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণ দূর করার জন্য আপনারা অনেক কিছুই ব্যবহার করেন।
কিন্তু তাতে কোন কিছুতেই কোন কাজ হয় না। তাই আজ আমি আপনাদের বেলপাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার একটি উপায় জানিয়ে দিব। এতে সাত দিনের মধ্যে আপনার ব্রণ অনেকটাই কমে যাবে আশা রাখছি। তাহলে চলুন আপনি আপনার ত্বকের ব্রণ দূর করতে বেলপাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন তা জেনে নিন---
- প্রথমেই আপনি পাঁচ থেকে আটটি বেলের পাতা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন অথবা পাতায় বেটে নিন
- অতঃপর সেখান থেকে ২ চামচ বেলের পাতা হাফ চামচ পরিমাণ মধু এবং ১ চামচ নিমের পাতা বাটা সকল উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
- ব্যাস মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে আপনার মুখে যেখানে ব্রণের সমস্যা রয়েছে সেখানে ভালো করে লাগিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগানোর পরে আপনি ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
- ৩০ মিনিট পরে সাধারণ তাপমাত্রার ঠান্ডা পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। আর যদি শীতকাল হয় সেক্ষেত্রে আপনি কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলবেন।
সতর্কতা::
- এই প্যাকটি তৈরি করে আপনি ৩ দিন পর্যন্ত নরমাল ফ্রিজে রেখেও ব্যবহার করতে পারবেন।
এতক্ষণ আমি আপনাদের সাথে বেলপাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার যে প্যাকটির কথা আলোচনা করলাম সেটি আপনারা অবশ্যই প্রতিদিন একবার করে আপনার ত্বকে লাগাবেন টানা ১০ দিন ধরে। এভাবে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করতে থাকুন এবং দেখবেন আপনার ত্বকের ব্রণ ম্যাজিক এর মত দূর হয়ে যাবে।
বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
বেল পাতার অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। বেলের পুষ্টিগণ সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই জানি। কিন্তু এর পাতারও যে পুষ্টিগুণ রয়েছে সেটি আমাদের অনেকেরই জানা ছিল না। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে বেল পাতায় রয়েছে অত্যন্ত উপকারী কিছু উপাদান। ফলে নিয়মিত বেলপাতা সেবনের মাধ্যমে আপনি জটিল অসুখের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
সুতরাং আর কাল বিলম্ব না করে আপনি বেল পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিন এবং নিয়মিত বেলপাতা সেবন করতে শুরু করুন। এতে হলফ করে বলতে পারি আপনার স্বাস্থ্যের হাল ফিরবেই ফিরবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এইরকম আরো তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে প্রতিনিয়ত চোখ রাখুন আমাদের পিন
পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে। আর্টিকেলটি এতক্ষণ
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url