গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি? গর্ভাবস্থায় বাটার খাওয়ার উপকারিতা জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে যোগ করুন বিটরুট
- গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে বিটরুটের রস
- গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতার জন্য আপনি বিটরুটের রস কিভাবে খাবেন
- গর্ভাবস্থায় বিটরুটের প্রস্তাবিত ডোজ
- গর্ভাবস্থায় বাটার খাওয়ার উপকারিতা
- বিটরুটের রসের পুষ্টিগুণ
- বিটরুটের দাম কত
- বিট রুট পাউডারের দাম কত
- গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কয়টা বিটরুট খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সঠিক সময়
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি
- লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুট হল একটি মূল জাতীয় সবজি। আমাদের দেশে বর্তমানে বিটরুট দিনকে দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিটরুটের পুষ্টিগুণ এতটাই বেশি যে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্যও এই সবজির চাহিদাও ব্যাপক। তাছাড়া বিটরুট খনিজ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় আপনার ক্রমবর্ধমান গর্ভের ভ্রুনকে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রদান করে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নিই গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া আপনার শরীরের জন্য কতখানি উপকারী হতে পারে--
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা
- আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় একটি প্রচলিত সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের শরীরে ফোলা ফোলা ভাব হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন বিটরুট। কেননা বিটরুটে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার।
- যা আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে এবং কষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় আপনার নিয়মিত পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে এই বিটরুট।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ গর্ভাবস্থায় আপনার ওজন কমানো এবং সঠিক ওজন ধরে রাখার জন্য আপনার ডায়েটের খাদ্য তালিকায় কাঁচা বিটরুট অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
- আয়রনের ঘাটতি দূর করঃ বিটরুটে আয়রন থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের ক্লান্তি এবং দুর্বলতার ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। আবার যারা নিরামিষ ভোজী রয়েছেন তাদের জন্য আয়রনের একটি দুর্দান্ত উৎস হতে পারে এই বিটরুট।
- আপনার নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করেঃ বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকার কারণে এটি আপনার গর্ভের ভ্রুনের স্নায়বিক ত্রুটি এবং বিকাশ জনিত সমস্যা গুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফলে বিটরুট আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের সঠিক বিকাশ এবং বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এটি আবার আপনার ভ্রুনের মেরুদন্ডের উন্নতিতেও সহায়তা করে।
- প্রি-ইক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি কমায়ঃ বিটরুট গর্ভকালীন সময়ে আপনার রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। যার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে প্রি-ই ক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করেঃ বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে এটি গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে আপনি অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
- অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতেঃ বিটরুটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি নিয়মিত বিটরুট খান তাহলে এই এন্টি অক্সিডেন্ট গুলো আপনার অনাক্রম্যতার উন্নতি ঘটায় এবং এর ফলে আপনি গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে খুব সহজেই রক্ষা পেতে পারেন।
- বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণেঃ গর্ভাবস্থায় আপনার ইলেকট্রোলাইটে ভারসাম্য আনতে এবং বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে বিটরুট ভোজন করা উচিত। কেননা বিটরুটে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম। এগুলি আবার গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে ।
- অস্টিওপোরোসিস এর ঝুঁকি হ্রাস করেঃ অস্টিওপোরোসিস হল এমন একটি অবস্থা যা গর্ভাবস্থায় আপনার হাড় কে দুর্বল এবং ভঙ্গুর করে দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় অস্টিওপোরোসিস থেকে রেহাই পেতে আপনি বিটরুট খেতেই পারেন। কেননা বিটরুটের মধ্যে রয়েছে সিলিকা এবং ক্যালসিয়াম যা আপনার হাড় এবং দাঁতকে শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের প্রদাহ রোধ করেঃ বিটরুটের মধ্যে রয়েছে বিটেন নামক একপ্রকার প্রদাহ বিরোধী এজেন্ট। ফলে গর্ভাবস্থায় আপনি যদি বিটরুট খান তাহলে এই বিটেন নামক এজেন্ট আপনার জয়েন্ট বা সন্ধিগুলিতে প্রদাহ, ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ বিটরুট কম গ্লাইসেমিক যুক্ত খাদ্য হওয়ার কারণে এটি গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে এবং রক্তের মধ্যে শোষিত হতে অনেক বেশি সময় নেয়। যার ফলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে থাকে বিটরুট খেলে।
- স্বাস্থ্যকর যকৃত উন্নীতকরণেঃ বিটরুটে রয়েছে বিটা সায়ানিন। যা আপনার যকৃত এবং রক্তকে বিষমুক্ত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আপনার দেহ থেকে ফ্যাটি এসিড এবং বিষাক্ত পদার্থ গুলিকে অপসারণ করে আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।
- ভিটামিন সি সরবরাহেঃ বিটরুটে বিদ্যমান ভিটামিন সি আপনার আয়রন শোষণে সহায়তা করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পথ তৈরি করতেও সাহায্য করে।
- ভ্রুনের জন্মগত ত্রুটি দূরীকরণেঃ বিটরুটে ফলিক এসিড থাকার কারণে এটি আপনার গর্ভের ভ্রূণের বিকাশকে যেমন প্ররোচিত করে, তেমনি পিঠের মেরুদন্ডের সর্বোচ্চ বিকাশ সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে স্পাইনা বিফিডার মত জন্মগত ত্রুটিগুলো প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
সম্মানিত পাঠক, গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আর এই পুষ্টিহীনতা দূর করতে আপনি নিয়মিত গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেতে পারেন। এতেই আপনার শরীরের পুষ্টিহীনতা দূর হবে, দুর্বলতার ঝুঁকি কমে যাবে এবং শরীরের ক্লান্তি ভাবও অনেকটাই দূর হবে। তাছাড়া গর্ভবতী মা এবং তার ভ্রূণের সুস্থতার জন্য গর্ভাবস্থায় আপনার নিয়মিত বিটরুট খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে যোগ করুন বিটরুট
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। গর্ভাবস্থায় প্রাতঃকালীন অসুস্থতা এবং আপনার বমি বমি ভাব একবার কেটে গেলে আপনি আপনার ডায়েটে অন্যান্য সবজির সাথে বিটরুট যুক্ত করতে পারেন। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় আপনি বিটরুট কিভাবে খাবেন সে বিষয়ে আলোচনা করা যাক--
আরো পড়ুনঃ কেওড়া ফলের ১০ কার্যকরী উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
চা হিসেবে বিটরুট
বিটরুটের চায়ের সব থেকে উপকারী দিক হলো এর মধ্যে বলদায়ক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং কোনরকম ক্যাফিন থাকেনা। এই বিটরুটের চা আপনি কিভাবে তৈরি রবেন চলুন তা জানিয়ে দিচ্ছি--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পানির পরিমাণ- ১/৪ কাপ
- বিটের পরিমাণ- সুক্ষভাবে কাটা ৪টি
- মধুর পরিমাণ- এক দুই কাপ এবং
- লেবুর রসের পরিমাণ- ২ টি লেবু।
প্রস্তুত প্রণালী:
বিটরুটের চা তৈরি করতে প্রথমে আপনি একটি পরিষ্কার পাত্র নিন। এরপর উক্ত পাত্রে ভালো কর পানি ফুটিয়ে নিয়ে তার সাথে বিট, লেবুর রস এবং মধু যোগ করুন। অতঃপর উপকরণগুলিকে একসাথে ভালো মতো ফুটিয়ে নিন। ব্যাস, ফুটানো হয়ে গেলে চুলা নিভিয়ে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য স্থির ভাবে মিশ্রণটিকে রেখে দিন। অতঃপর মিশ্রণটিকে ছেঁকে নিয়ে চায়ের মত পরিবেশন করুন।
বিটরুট গুঁড়ো হিসেবে:
বিট খাওয়ার আরেকটি সহজ উপায় হলো বিটরুট চূর্ণ করে মিহি পাউডার করে সেটি আপনি পানি অথবা রসের সাথে মিশিয়েও সেবন করতে পারেন। তাহলে চলুন বিট রুট পাউডার হিসেবে কিভাবে খেতে পারবেন সে পদ্ধতিটি আপনাকে জানিয়ে দিই--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- বিটরুট- ১টি
প্রস্তুত প্রণালী:
- প্রথমেই আপনি বিটরুট পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং সেটিকে পাতলা পাতলা স্লাইস করে কেটে নিন।
- এবার স্লাইস করা বিটরুটের টুকরো গুলিকে আপনাকে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এর জন্য আপনি পাতলা নেটের মশারির কাঁটা অংশ দিয়ে ঢেকে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। আবার গ্যাসের চুলা কমিয়ে তার উপর একটা পাত্র রেখেও শুকিয়ে নিতে পারেন।
- পরিপূর্ণভাবে শুকিয়ে গেলে বিদ্যুতের স্লাইডগুলোকে আপনি একটি ব্লেন্ডারে গুড়ো করে নিন।
- ব্যাস বিটরুটের গুঁড়ো তৈরি হয়ে গেলে সেগুলি আপনি একটি বইয়াম এ বা পরিষ্কার পাত্রের মধ্যে ভালো করে সংরক্ষণ করুন। খেয়াল রাখবেন বয়ামের মধ্যে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে।
সম্মানিত পাঠক, গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে আপনার দ্বিতীয় ত্রিমাসিকে বিটরুট খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার আপনার সন্তান প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী জটিলতা অনেকটাই সহজ হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে বিটরুটের রস
একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে বিটরুটের রস খাওয়া স্বাস্থ্যর পক্ষে ভীষণই উপকারী। কারণ, বিটরুটে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা আপনার গর্ভের শিশুর পুষ্টি যোগায় এবং সুস্থ কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। এছাড়াও বিটরুটের রস হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে উন্নীত করে যা ভ্রুনকে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
আরো পরুনঃ গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আপনি যদি প্রতিদিন বিটরুটের রস পান করেন সে ক্ষেত্রে আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যেতে পারে। আবার আপনি যদি গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন, সেক্ষেত্রে বিটরুটের রস পান করে উপকার পেতে পারেন। কারণ, আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে।
বিটরুটের রস থেকে সর্বাধিক উপকার পেতে আপনি গর্ভাবস্থার প্রথম মাস থেকে বিটরুটের রস পান করতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারের সাথেও বিটরুটের রস যোগ করতে পারেন এবং ভালো ফলাফল পেতে আপনি সকালে খালি পেটেও বিটরুটের রস পান করতে পারেন।তাছাড়া গর্ভাবস্থার এই সময় বাটার খাওয়ার উপকারিতাও কিন্তু কম নয়।
গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতার জন্য আপনি বিটরুটের রস কিভাবে খাবেন
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এই সময় সকলেরই কম বেশি রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দেয়। আপনি যদি এই রক্তাল্পতা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চান, তাহলে বিটরুটের রস হতে পারে আপনার জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প পদ্ধতি।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে বিটের রস আপনি কিভাবে তৈরি করে খাবেন? তাহলে জেনে নিন আপনি বিটগুলো প্রথমে ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে ব্লেন্ডারে ভালো মত ব্লেন্ড করে নিন।শুধু বিটরুটের রস খেতে যদি আপনি খেতে না পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার পছন্দমত লেবু বা কমলার রস এর সাথে যোগ করেও খেতে পারেন।
তবে একটি কথা আপনার যদি বিশেষ কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে অথবা নির্দিষ্ট ঔষধ সেবন করেন সেক্ষেত্রে বিটরুট সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। কেননা বিটরুটে এমন কিছু যৌগ থাকতে পারে যা আপনার ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে। এতে করে শারীরিক নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বিটরুটের প্রস্তাবিত ডোজ
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া যদিও উপকারী। তবুও এটি পরিমিত মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট ডোজ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় প্রায় প্রতিদিন এক কাপ বিটরুটে রস পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিটরুটে রয়েছে ভিটামিন বি৯ এবং ফলিক এসিড। যা আপনার ব্রণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিটরুটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং
ফাইবার যা আপনার পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে দেয়, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আপনি বিটরুট থেকে ভালো উপকার পেতে এটিকে তাজা অবস্থায় এবং বিভিন্ন খাবারে যেমন- সালাদের সাথেত বা সতেজ রস হিসেবে পান করতে পারেন। এতে ভাল উপকার পাবেন।
গর্ভাবস্থায় বাটার খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বাটার খাওয়ারও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন গর্ভকালীন সময়ে বাটার খাওয়া স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এ কথা একেবারেই ভুল। গর্ভাবস্থায় পিনাট বাটার খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। এবার চলুন পিনাট বাটারের উপকারিতা জানার আগে এর পুস্তীগুণ সম্পর্কে জেনে নিন।
দুই টেবিল চামচ পিনাট বাটারের পুষ্টি উৎপাদন গুলো হল ---
- ক্যালোরি-১৯০
- প্রোটিন-৮ গ্রাম
- ফ্যাট- ১৬ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট- ৩ গ্রাম এবং
- ফাইবার- ৩ গ্রাম।
তাছাড়া চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে গর্ভাবস্থায় পিনাট বাটার খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এছাড়াও পিনাট বাটারে রয়েছে আর্টিগ্রাম উদ্ভিদ ভিত্তিক প্রোটিন। যা গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার ভ্রুনের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এছাড়া পিনাট বাটার একটি হাই ফ্যাট ফুড
ও মনোসেচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ ফুড যা আপনার হাটকে সুরক্ষিত রাখে। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি পিনার বাটার খান তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা তো দূর হবেই। সেই সাথে ডায়াবেটিসের সমস্যাও হবে না। কারণ, পিনার বাটারে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
বিটরুটের রসের পুষ্টিগুণ
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা অনেক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিটরুটের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ এবং পুষ্টি উপাদান। ফলে গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকরা বিটরুট খাওয়ার পরামর্শ দেন। তাহলে চলুন প্রতি ১০০ মিলিমিটার বিটরুটের রসের পুষ্টি উপাদান কত তা জেনে নিন--
প্রতি ১০০ মিলিমিটার বিট রুটের রসে রয়েছেঃ
- শক্তি-৩৮ কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট-৮.৭৫ গ্রাম
- চিনি-৮.৭৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম-১৭ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন-০.৪২ মিলিগ্রাম
- আইরন-0.75 মিলিগ্রাম
- ফসফরাস- ১৭ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম- ২৪২ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম- ৫৪ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম- ১৭ মিলিগ্রাম এবং
- ভিটামিন সি ২.৫ মিলিগ্রাম।
বিটরুটের দাম কত ২০২৪
বিটরুটের দাম আমাদের অনেকেরই অজানা। কারণ, আমাদের দেশে এখনো সচরাচর সব জায়গয় বিটরুট পাওয়া যায় না। যার ফলে স্থানভেদে এর দামও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে যারা বিটরুট চাষ করছেন আপনি যদি তাদের থেকে বিটরুট নিতে পারেন তাহলে অনেকটাই কম দামে পাবেন। যারা বিটরুট চাষ করে তাদের থেকে বিটরুট ক্রয় করলে আপনি ২০০-২৫০ টাকা কেজি দামে পেয়ে যাবেন।
আবার বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মও বিটরুট বিক্রি করে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি দারাজ থেকে বিটরুট ক্রয় করেন তাহলে প্রতি কেজি দাম পড়বে ৩৮০ টাকা করে। এছাড়াও আপনি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরেও বিটরুট কিনতে পারবেন। আশা করছি আপনি এখন বিটরুটের দাম সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা পেয়ে গেছেন।
বিট রুট পাউডারের দাম কত
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি বিটরুট পাউডারও খেতে পারেন। কাঁচা বিটরুট থেকে বিটরুট পাউডারের দাম তুলনামূলক ভাবে খানিকটা বেশি হয়। কেননা বিটরুট পাউডার তৈরির জন্য অনেকগুলো বিটরুট একসাথে রোদে শুকিয়ে পাউডার তৈরি করা হয়। যারা কাঁচা বিটরুট খেতে পারেন না তারা খুব সহজেই বিটরুট পাউডার খেতে পারেন।
এবার চলুন পাউডারের দাম কত তা আপনাকে জানিয়ে দিই। সাধারণত ২৫০ গ্রাম বিটরুট পাউডার আপনি ৪০০-৪৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন। তবে কেউ কেউ আবার ১০০ গ্রাম বিটরুট পাউডারের দাম ৩০০ টাকা নিয়ে থাকে। বিটরুট পাউডারের দাম যেমনই হোক না কেন বর্তমান বাজারে বিটরুট পাউডারের চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কয়টা বিটরুট খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেয়ে এর উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমানে বিটরুট খেতে হবে। যদিও গর্ভাবস্থায় বিটরুটের প্রচুর পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা রয়েছে, তার পরেও কোন কিছু মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। বিটরুটের ক্ষেত্রেও তাই পরিমিত খাওয়াটাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে। গর্ভাবস্থায় আপনি দিনে ১-২ টি বিটরুট রস করে, সালাড হিসেবে বা সবজি হিসেবে রান্না করেও খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সঠিক সময়
গর্ভাবস্থায় বাটার খাওয়ার উপকারিতা তো জানলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ারও একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আর সময় মেনে বিটরুট খেলে এর থেকে সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিটরুট যেহেতু ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উৎপাদনে ভরপুর,
সেহেতু চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার ওপর বেশি জোর দেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রাতরাশের জন্য বিট দিয়ে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। আবার আপনি আপনার দুপুরের খাবারের সাথে সালাদ হিসেবে বা সবজি হিসেবে রান্না করেও বিট খেতে পারেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় বাটার খাওয়ার উপকারিতা আপনি আজকের আলোচনায় জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন বিটরুটের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় খাওয়ার ক্ষেত্রে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও পরিলক্ষিত হয়। তাহলে গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি চলুন সেগুলো জেনে নিন-
- বিটের মধ্যে রয়েছে বিটেন নামক একপ্রকার উপাদান। যার ফলে আপনার বমি বমি ভাব, গা গুলানো, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য সমস্যা গুলি হতে পারে।
- অতিরিক্ত বিট খাওয়ার ফলে বিটুরিয়া নামক এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে যা আপনার প্রস্রাব এবং মলের বর্ণ লাল বর্ণে রূপান্তরিত করে ফেলতে পারে।
- বিটরুটে রয়েছে অক্সালেট। এই অক্সালেট আপনার কিডনি স্টোন বা বৃক্কে পাথরের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
- আপনি যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মাত্রায় বিটরুটের রস সেবন করেন তাহলে সাময়িকভাবে আপনার গলার ভোকাল কর্ডে বা স্বরযন্ত্রে প্যারালাইসিস হতে পারে।
- বিটরুটে বিদ্যমান নাইট্রেট উপাদান যা আপনার গর্ভকালীন সময়ে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বিটরুট খাওয়ার ফলে যেমন একজন গর্ভবতী মায়ের যেমন শারীরিক ক্লান্তি দূর হয়, তেমনি দুর্বলতার ঝুঁকিও কমে যায়। শুধু তাই নয়, আপনি যদি কাঁচা বিটরুট না খেয়ে বিটরুট পাউডার খান তাহলেও আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব দূর হবে। সুতরাং প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বিটরুট গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্য তালিকায় একটি দুর্দান্ত সংযোজন হতে পারে।
আরেকটি কথা না বললেই না, যদিও গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী তা বলে এটি অত্যধিক পরিমাণেও সেবন করাও একদমই উচিত নয়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই রকম আরো তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url