কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে চান? খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি আজ থেকেই লেবু খাওয়া শুরু করে দিবেন। তাছাড়া গরম ভাতের সাথে এক টুকরো লেবু খেতে কে না পছন্দ করে বলুন তো!
সম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা আলোচনার বিষয়বস্তু হল কাগজি লেবুর উপকারী ও অপকারী দিক এবং খালি পেটে কাগজি লেবু খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা। সাথে আরো আলোচনা করব কাগজি লেবুর পুষ্টিগুণ এবং সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন এবার মুল আলোচনায় আসা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাগজি লেবুর উপকারিতা
- কাগজি লেবুর অপকারিতা সমূহ
- কাগজি লেবুর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
- রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- কাগজি লেবু সংরক্ষণের উপায়
- কাগজি লেবুর নানাবিধ ব্যবহার
- কাগজি লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা
- খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- পাতি লেবুর কিছু উপকারী পানীয় ও ও আচার তৈরি
- কাগজি লেবুর কিছু ঔষধি গুনাগুন
- ওজন কমাতে লেবু পানি কিভাবে কাজ করে
- লেবুর কয়েকটি জাতের নাম
- ত্বকের যত্নে লেবু পাতার ব্যবহার
- লেখকের মন্তব্য
কাগজি লেবুর উপকারিতা
কাগজি লেবু পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইটোক্যামিক্যাল সমৃদ্ধ একটি ফল হওয়ায় এটি আমাদের দেহের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স কে রক্ষা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই কাগজি লেবুর রয়েছে অনেক গুনাগুন এবং উপকারিতা যা আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে প্রথমেই জেনে নিই এই লেবুর উপকারী দিক গুলো সম্পর্কে--
আরো পড়ুন: সজনে ডাটার উপকারিতা ও অপকারিতা
- হার্ট কে সুরক্ষিত রাখতেঃ আপনি যদি আপনার হার্ট কে সুরক্ষিত রাখতে চান, তাহলে আপনাকে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। আমরা কমবেশি সকলেই জানি ভিটামিন সি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দ্বিগুণ পরিমাণ বৃদ্ধি করে। একটি মাঝারি সাইজের কাগজি লেবুতে থাকে প্রায় 44 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
- সুতরাং আপনি যদি নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে হার্ট অ্যাটাক এর মত বড় কোন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে এটি স্ট্রোকের বিরুদ্ধেও লড়াই করে এবং আপনার শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল হিসেবে কাজ করে কোষের ক্ষতি হওয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
- কোলেস্টেরলের লেভেল কমাতেঃ কাগজি লেবুতে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে। তাছাড়া লেবু আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের এল,ডি,এল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের এইচ,ডি,এল বাড়াতেও সাহায্য করে। আর তাই আপনি যদি নিয়মিত কাগজি লেবু খান তাতে আপনার কোলেস্টেরলের লেভেল ঠিকঠাক থাকবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেঃ লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে সহায়তা করে করে। যাদের শরীরে ফ্যাট বেশি রয়েছে তাদের বেশি করে লেবু পানি পান করা প্রয়োজন। এতে করে আপনার শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হওয়ার সাথে সাথে আপনার ওজনও কমে যাবে।
- কিডনির পাথর দূরীকরণেঃ কাগজি লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড যা আপনার কিডনির পাথরকে ভেঙ্গে দেয় এবং তা মুত্র নালীর মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি লেবুর শরবত খান তাহলে বেশি উপকার পাবেন।
- অ্যানিমিয়া দূরীকরণঃ যাদের অ্যানিমিয়ার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য একটি উপকারী খাবার হল এই কাগজি লেবু। ভিটামিন সি উদ্ভিজ্জ উৎসের আয়রনসমৃদ্ধ খাবার শোষণে বেশ ভূমিকা রাখে। আর তাই লেবুর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা কমাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- হজমের সমস্যা দূর করতেঃ লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক এসিড যা আপনার পেটের বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে আপনার হজমের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। আবার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টইনাইলের নানান সমস্যা যেমন- পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, খাবার হজম না হওয়া, খাবার দেরিতে হজম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করে দেয় এই কাগজি লেবু।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত এই কাগজি লেবু খান তাহলে ভালো ফল পাবেন। আবার বাসায় হঠাৎ করে কারো ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে লেবু পানি খেলেও খুব তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায় । সুতরাং উচ্চ রক্তচাপ আপনি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে নিয়মিত কাগজি লেবু খান।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেঃ যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা কাগজি লেবু বা লেবু পানি খেতে পারেন। কারণ লেবু বা লেবুর শরবত আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা লেবু পানি খেলেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- পিরিয়ডের ব্যথা প্রশমিত করতেঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে লেবু চা ভীষণ উপকারী। তবে শুধু লেবু চা খেলেই হবে না, এর সাথে আপনাকে আরো কিছু উপাদান যোগ করতে হবে যেমন- দারুচিনি, আদা, তেজপাতা এবং লবঙ্গ। সুতরাং পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে আপনি লেবু চা খেতেই পারেন।
- শরীরের ক্ষত সারাতেঃ আপনার শরীরে যদি কোথাও কেটে যায় অথবা অপারেশনের ক্ষত থেকে থাকে এমন পরিস্থিতিতে আপনি নিয়মিত লেবু খেলে তা দ্রুত সেরে যাবে। কারণ, লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি যা আপনার ক্ষতস্থানকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
- শরীরে এনার্জির সঞ্চার করেঃ গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে অনেক সময় আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। গরমের দিনে এই পানি শূন্যতা রোধ করতে আপনি খেতে পারেন লেবু পানি যা আপনার শরীরের জন্য ভীষণ কার্যকরী। কারণ, লেবুতে বিদ্যমান সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম আপনার শরীরে লবণের ঘাটতি মেটাতে এবং পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখে ও দেহের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- ফুসফুস কে সুরক্ষিত রাখেঃ নিয়মিত কাগজি লেবু খেলে এটি আপনার শরীরের চর্বি ও লিপিডের মাত্রা কে কমাতে সাহায্য করে যা আপনার ফুসফুসের জন্যও ভালো। মনে রাখবেন, ওজন বেশি হওয়ার কারণে আপনার ফুসফুসের কার্যকারিতাও কিন্তু কমে যায়। তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলেও আপনার নিয়মিত লেবু খাওয়া উচিত।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ আপনি যদি নিয়মিত লেবু খান তাহলে আপনি ক্যান্সার নামক মরণব্যাধি থেকেও রক্ষা পেতে পারেন। কারণ, লেবুতে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে মা বোনদের স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই লেবু বিশেষভাবে কার্যকরী।
- লিভারের সুরক্ষিত রাখতেঃ নিয়মিত লেবু খেলে এটি আপনার লিভারকেও সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। কারণ, লেবুতে বিদ্যমান অ্যাসিড আপনার দেহের টক্সিক পদার্থ দূর করে দেয়। এর সাথে সাথে লিভারের দূষিত পদার্থ বের করে দিতেও সাহায্য করে।
- গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেঃ লেবুর রস শুধুমাত্র গর্ভবতী মায়ের জন্যই উপকারী তা নয় বরং এটি আপনার এবং আপনার গর্ভের ভ্রুনের জন্য বেশ উপকারী। কারণ, লেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফসফরাস শিশুর হাড় ,মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
- ( পি এইচ) Ph ব্যালেন্স রক্ষা করতেঃ লেবু পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইটোকেমিক্যাল সমৃদ্ধ একটি ফল হওয়ায় এটি আপনার দেহের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স কে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- সিজনাল সমস্যা সমাধানেঃ অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অনেকেরই ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, সর্দি লেগেই থাকে। সিজনাল এই জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা, কাশি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সাহায্য করে লেবু পানি। শুধু তাই নয়, লেবু পানি আমাদের স্কার্ভি প্রতিরোধ করে এবং নার্ভ সিস্টেমকেও সচল রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করতেঃ অনেক সময় অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসে। এমতাবস্থায় আপনি যদি পানিতে একটি কাগজি লেবু চিপে তার রস সামান্য লবন মিশিয়ে শরবত করে খান। তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই আপনার শরীর চাঙ্গা এবং সতেজ হয়ে উঠবে। এই শরবতের সাথে আপনি এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলেও আরো ভালো ফল পাবেন।
- ত্বকের যত্নে লেবুর রসঃ মুখের ব্রণের সমস্যায় আমরা কম বেশি সকলেই ভুগি। মুখে এই ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে লেবুর রস । লেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন সি যা আপনার ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। সুতরাং ত্বকের জন্য লেবু একটি উপকারী উপাদান। আপনার ত্বকের কোলাজেন বাড়িয়ে স্টেচ মার্ক কমাতে সাহায্য করে এই লেবুর রস।
- পিত্তের সমস্যা দূর করেঃ পিত্ত প্রকোপ থেকে যে সমস্ত রোগ হয় তার সব থেকে ভালো ঔষধ হলো পাতি লেবু বা কাগজি লেবু। আপনি যদি এক গ্লাস জলে একটি লেবুর রস নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার পিত্তের প্রদাহ অনেকটাই সেরে যাবে। তাছাড়া প্রতিদিন লেবুর রস চিনি মিশিয়ে শরবত করে খেলে রক্তপিত্ত রোগ সেরে যায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণেঃ আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন ভোরবেলা খালি পেটে এক গ্লাস পাতি লেবুর রস খান। এতে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হবে। কারণ ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ লেবু পানি পান করলে এটি আপনার পাচনতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে। আপনি সকালে না খেতে পারলে আগের রাতে গরম বা ঠান্ডা জলেও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ অনেক সময় রসুন পেঁয়াজ বা মাছের মত তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ বের হয় । প্রতিদিন খাবারের পরে এবং সকালে প্রথমে এক গ্লাস লেবু পানি পান করে আপনি আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ খুব সহজেই এড়াতে পারেন। তাছাড়া লেবু আপনার লালা গ্রন্থি কে উদ্দীপিত করে। যার ফলে মুখগহবর শুষ্ক হয় না ও ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
- যকৃত এবং বৃক্কের জন্য উপকারীঃ লেবুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার বিভিন্ন অঙ্গের স্বাস্থ্য উন্নত করে আপনার শরীরে কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে যকৃতের আঘাত এবং বৃক্কের পাথর জমা রোধ করে।
সম্মানিত পাঠক, আয়ুর্বেদিক মতে কাগজি লেবু কাশি, কফ, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের গ্যাস, বমি ভাব, তৃষ্ণা, অম্লপিত্ত সারাতেও বেশ কার্যকরী। তাছাড়া আপনি যদি নিয়মিত কাগজি লেবু খান তাহলে এটি আপনার মুখের রুচি বাড়াতেও সাহায্য করবে।
কাগজি লেবুর অপকারিতা সমূহ
কাগজি লেবুর যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারি দিকও রয়েছে। তবে এর অপকারিতা গুলো খুবই নগণ্য যা না বললেই না। তাহলে চলুন জেনে নিন অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে--
- আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত লেবু খান তাহলে আপনার এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে আপনার বমি বমি ভাব এমনকি বমিও হতে পারে।
- আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে।
- মাত্রতিরিক্ত লেবুর শরবত পান করলে অনেক সময় আপনার শরীর দুর্বলও হয়ে যেতে পারে ।সুতরাং নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণ লেবুআর শরবত পান করা উচিত।
- আপনি যদি শরীরের ওজন কমানোর জন্য একটানা কয়েক মাস লেবুর শরবত খান তাহলে আপনার শরীরে পুষ্টি গুণের অভাব দেখা দিতে পারে।
- লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে লেবু খান তাহলে এই সাইট্রিক এসিডের কারণে আপনার মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষ গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- লেবুর রস প্রচন্ড অম্লধর্মী। তাই কখনো আপনি সরাসরি লেবুর রস আপনার ত্বকে লাগাবেন না। এতে করে আপনার ত্বক পুড়ে যেতে পারে বা ত্বকে জ্বালার সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে লেবুর রস সবসময় জল বা তেল ব্যবহার করে তরল করে নেওয়া বাঞ্ছনীয় ত্বকে ব্যবহার করার আগে।
- অনেক সময় পরিমাণে লেবুর রস খাওয়ার ফলে দাওয়াত টক হয়ে যায়। এতে আপনার দাঁতের বাইরের স্তরগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত লেবুর রস খাওয়ার ফলে অনেক সময় আপনার মাইগ্রেনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- অধিক পরিমাণে লেবুর রস খেলে আপনার বদহজম হতে পারে।আবার ডায়রিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- যাদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল তাদের লেবুর রস সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা এতে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবংলাল লাল ভাব হতে পারে ।
- ভিটামিন সি রক্তে আয়রন সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। এবার আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ লেবু পানি খান সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেড়ে যায়। যা রক্তে অধিক পরিমাণ আয়রন সংরক্ষণ করে এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
- অনেকের এলার্জি সমস্যা রয়েছে। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা লেবু পানি সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কেননা লেবুতে যে এলার্জি রয়েছে সেটি আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনা। পরে লেবু খেয়ে রোদে বের হলে স্কিনে লাল রেশ বা কালো ছোপও দেখা দেয়। যাকে আমরা ভুল করে সানবার্ন বলে থাকি।
- ডাক্তারি পরিভাষায় এই সানবার্ন কে বলে সাইটোফোটোডার্মাটাইটিস। সাধারণত লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক এসিডের সাথে সূর্যালোকের বিক্রিয়ায় এই সমস্যা দেখা যায় । এছাড়াও অতিরিক্ত লেবুর রস সেবনের ফলে আপনার স্কিন ক্যান্সারের মতোও সমস্যা হতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে আপনার হাঁপানির সমস্যা হতে পারে এবং লেবু হাঁপানির লক্ষণগুলিকে বাড়াতে সাহায্য করে।
- অধিক পরিমাণে লেবু খাওয়ার ফলে কিডনিতে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় । তাই পরিমিত পরিমাণে লেবু ব্যবহার করুন।
প্রতিটি উপাদানেরই ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। তাই আপনি যদি পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় লেবুর রস সেবন করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার উপকারের থেকে ক্ষতিকর দিকগুলোই দেখা দিতে পারে। আর তাই লেবুর উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে ব্যবহারের পূর্বে স্বাস্থ্য সচেতনতা হিসেবে অবশ্যই আপনার জন্য লেবু খাওয়ার উপযুক্ত পরিমাণ নির্ধারণ করে নিন।
কাগজি লেবুর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, কাগজি লেবুতে বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান থাকলেও আমাদের দৈনিক চাহিদার উল্লেখযোগ্য শতাংশ শুধুমাত্র লেবু দিয়ে পূরণ করা কখনোই সম্ভব নয়। এবার চলুন প্রতি 100 গ্রাম কাগজি লেবুতে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাগজি লেবুতে রয়েছে-
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
খাদ্য শক্তি | ২৯ কিলো ক্যালরি |
শর্করা | ২.৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৯.৩২ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.১ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৩গ্রাম |
থায়ামিন | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ২.৮ গ্রাম |
নিয়াসিন | ০.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৫ | ০.১৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.০৮ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ১১ মাইক্রো গ্রাম |
ভিটামিন এ | ১ মাইক্রো গ্রাম |
ভিতামিন ই | ০.১৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৫৩ মিলিগ্রাম |
কোলিন | ৫.১ মিলিগ্রাম |
বিটা ক্যালোটিন | ৩ মাইক্রোগ্রাম |
আয়রন | ০.৬ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৬ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১৩৮ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২ মিলিগ্রাম |
ম্যাঙ্গানিজ | ০.০৩ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.০৬ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৬ মিলিগ্রাম |
ফ্যাটি | ০.০৩৯ গ্রাম |
ক্যালোরি | ২৯ গ্রাম |
রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
এতক্ষণ আমরা কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এবার চলুন রাতে গরম পানিতে লেবু জল খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন --
- ইমিউনি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতেঃ লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করতে পারে। তাই আপনি আপনার ইমিউনি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে রাতে হালকা কুসুম গরম জলে এক গ্লাস লেবু পানি খেতে পারেন।
- বিপাক ক্রিয়া উন্নত করতেঃ রাতের বেলা হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু পানি পান করলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য এবং সাধারণ হজমের সমস্যাও দূর হতে পারে। তাছাড়া রাতের বেলা লেবু পানি পান করলে তা আপনার পাচন প্রক্রিয়াকে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে লেবু পানি খাওয়ার ফলে আপনার ঘুমের সময় যেকোনো হজমের সমস্যা থেকেও আপনি রেহাই পেতে পারেন।
- ত্বকের যত্নে লেবু পানিঃ লেবুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রী রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি যা শরীরে কোলাজিন তৈরি করে এবং আপনার ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
- গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত ভিটামিন সি খাওয়ার ফলে মানুষের ত্বকে তারুণ্য বজায় থাকে এবং বলিরেখা কমে যায়। তাই আপনি যদি আপনার ত্বককে সতেজ এবং সুন্দর রাখতে চান তাহলে রাতের বেলা হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর পানি খেতেই পারেন।
- লেবু পানি বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেঃ রাতে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন প্রদাহ যেমন- ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। আর তাই রাতের বেলা লেবু পানি খাওয়া শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।
- লেবু পানি মানসিক স্ট্রেস বা চাপ কমাতে সাহায্য করেঃ অনেক সময় বিভিন্ন রকম মানসিক চিন্তার কারণে আপনার অনিদ্রার মতো সমস্যা হতে পারে। এই অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে রাতে ঘুমানোর আগে আপনি যদি লেবু পানি পান করেন তাহলে আপনার মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে এবং সেই সাথে আপনার ঘুমও ভালো হবে।
- গলা ব্যথা প্রশমিত করতেঃ অনেকের রাতের বেলা গলা ব্যথা বেড়ে যায় এবং এই ব্যাথার কারণে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এক্ষেত্রে আমি বলব লেবু পানি আপনার গলা ব্যাথার জন্য হতে পারে একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে লেবু পানির সাথে আপনি যদি সামান্য আদা এবং মধু মিশিয়ে পান করেন তাহলে বেশ ভালো ফলাফল পাবেন।
- লেবু পানি দাঁত এবং হাড় মেরামতে সাহায্য করেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে, হাড়ে ব্যথার উদ্রেগ হয় এবং হাড় দুর্বল হয়ে যায়। লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার দাঁত এবং হাড়কে মজবুত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে উষ্ণ গরম পানিতে লেবুর রস পান করা উচিত।
- লেবু পানি ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ আপনি যদি সাধারণ ক্যালোটি যুক্ত পানীয় পান করেন তবে সেগুলি লেবুর পানি দিয়ে আপনি খেতে পারেন। এতে করে আপনি আপনার অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন বৃদ্ধি এড়াতে পারবেন। এছাড়া আপনি যদি নিয়ম করে নিয়মিত রাতে ঘুমের আগে কুসুম গরম পানিতে লেবু পানি খান তাহলে আপনার ওজন অনেকাংশেই কমে যাবে।
- লেবু পানি সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করেঃ রাতে ঘুমানোর আগে লেবু পানি পান করলে এটি আপনার শরীরে বেশি ভিটামিন সি প্রদান করবে এবং আপনি ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য বিভিন্ন সংক্রমণ মূলক ঝুঁকি থেকে রেহাই পাবেন।
- লেবু পানি পটাশিয়ামের মাত্রা কে বাড়াতে সাহায্য করেঃ পটাশিয়ামের সর্বোত্তম উৎস হলো লেবু। এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি আপনার হার্টকে সুস্থ সবল রাখতেও সাহায্য করে। আর তাই রাতে ঘুমানোর আগে গরম পানিতে লেবু খেলে শরীরের পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকে।
- লেবু পানি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তিও কমে যায়। দৃষ্টিশক্তির এই সমস্যা দূর করতে আপনি প্রতিদিন রাতের বেলা হালকা বা উষ্ণ গরম পানিতে লেবুর রস দিয়ে তা পান করুন । এতে ভালো ফল পাবেন। তাছাড়া লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি আপনার চোখকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস রোধ করতেও সহায়তা করে।
- লেবু পানি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করেঃ ডিহাইড্রেশনের ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন পেশীর ক্ষতি, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি রোগ হতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম পানিতে লেবু শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে।
তাহলে সম্মানিত পাঠক, রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানতে পেরেছেন আশা রাখছি।
কাগজি লেবু সংরক্ষণের উপায়
কাগজি লেবুর এতসব উপকারিতা জানার পর আপনি নিশ্চয়ই এবার লেবু সংরক্ষণের কথা ভাবছেন। আপনি যদি কাগজি লেবু সংরক্ষণ করতে চান তাহলে আপনাকে কিছু নিয়ম অবলম্বন করতে হবে। এবার চলুন আপনি কিভাবে কাগজে লেবু সংরক্ষণ করতে পারবেন সে উপায় সম্পর্কে জেনে নি--
- কাগজি লেবু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই সব থেকে ভালো লেবু অর্থাৎ পচা, ফাটা, নরম লেবু যেন না হয় এমন লেবু নির্বাচন করতে হবে। আবার লেবুর গায়ে কোন বাদামী দাগ থাকলে সেটিও পরিহার করবেন।
- সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় আপনি ৫ থেকে ৭ দিন কাগজি লেবু সংরক্ষণ করতে পারবেন।
- তবে লেবু সংরক্ষণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রেফ্রিজারেটরে রাখা। রেফ্রিজারেটরে লেবু এক সপ্তাহ পর্যন্ত বেশ সতেজ এবং টাটকা থাকে।
- তবে আপনি যদি দীর্ঘদিন যেমন এক মাস ধরে লেবু সংরক্ষণ করতে চান সে ক্ষেত্রে "জিপ টপ" ব্যাগে লেবু আবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে পারেন। 'জিপ-টপ' ব্যাগে লেবু সংরক্ষণ করে রাখলে এটি শুকিয়ে যায় না এবং প্রায় ১ মাসের মত সতেজ থাকে।
- আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য লেবু সংরক্ষণ করতে চাইলে আপনি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়িয়ে রাখতে পারেন।
- আপনি একটি বয়ামে পানি ভর্তি করে তাতে লেবু রেখে দিন। বোয়ামটি পানিসহ ফ্রিজে রাখুন এতে অনেক দিন পর্যন্ত লেবু তাজা থাকবে।
- অনেক সময় অর্ধেক লেবু ব্যবহার করার পর বাকি অর্ধেক থেকেই যায়। এই বাকি অর্ধেক লেবু আপনি যদি সংরক্ষণ করতে চান তাহলে খাবার রেপ করার করার প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- আপনি তাজা লেবুর রসও ফ্রিজে কয়েকদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য লেবুর রস সংরক্ষণ করতে চাইলে বরফের কিউব ট্রেতে রস ঢেলে তা জমিয়ে নিন। ব্যাস, হিমায়িত হয়ে গেলে সেটি ট্রে থেকে বের করে মুখ বন্ধ বাটিতে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন।
আরেকটি কথা, দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য আপনি অন্য ফল বা সবজির সাথে লেবু মিলিয়ে রাখবেন না। আলাদা ভাবে সংরক্ষণ করবেন। এতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত লেবু সতেজ এবং টাটকা থাকবে।
কাগজি লেবুর নানাবিধ ব্যবহার
কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। যেগুলি ছাড়াও এর আরো বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে যা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না। এবার চলুন কাগজি লেবুর আরো কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিই -
- আপনি গ্রিন টি বা লিকার লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
- লেবু দিয়ে আপনি আচার তৈরি করেও খেতে পারেন।
- আপনি সালাদের সাথে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
- লেবুর রস লেবু পানি বা লেবুর শরবত তৈরি করেও আপনি খেতে পারেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
- ত্বকে ব্রনের দাগ দূর করতে লেবুর রসের ভূমিকা অনবদ্য।
- আপনার মাথার খুশকি দূর করতে মাথার ত্বকে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
- জামা কাপড়ে অনেক সময় দাগ লেগে গেলে তার উঠতে চায় না। সেক্ষেত্রে আপনি যদি লেবুর রস ব্যবহার করেন তাহলে সেটি খুব সহজে উঠে যায়।
- আপনি আপনার বাড়ির রেফ্রিজারেটর বা মাইক্রো ওভেন পরিষ্কার করার সময় লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন।
- রান্নাঘর খাবার টেবিল এবং স্টোভে তেলের তেলচিটে দাগ অনেক সময় পরিষ্কার হতে চায় না। এই তেলচিটে দাগ দূর করতে আপনি অর্ধেক পরিমাণ লেবু এবং লবণ নিয়ে তৈলাক্ত স্থানে কিছুক্ষণ ঘষে নিবেন এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলবেন।
- তরকারি বা মাছ-মাংস কাটার চপিং বোর্ড পরিষ্কার করতেও আপনি লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার ঘরে যদি চিনি কাকুড়ে হয় তাহলে লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন।
- ঝকঝকে সাদা দাঁত কে না চায় বলুন? আপনি যদি আপনার দাঁত কে ঝকঝকে সাদা করতে চান তাহলে সামান্য লেবুর রস লবণ এবং বেকিং সোডা নিয়ে আপনি দাঁতে কিছুক্ষণ ঘষতে থাকুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার দাঁত আরো সাদা হয়ে উঠবে।
- লেবু দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় আমাদের অনেকেরই অজানা। আপনি কি লেবু দিয়ে আপনার ঘরের মশা তাড়াতে চান? তাহলে এক টুকরো লেবুতে কয়েকটি লবঙ্গ দানা গুঁজে দিন। এরপর এটি ঘরে রেখে দিলেই চলবে এর সুগন্ধে মশা পালিয়ে যাবে।
- ঘরের দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি লেবু ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আপনি এটি রোজমেরি বা ভ্যানিলার সাথেও মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি আপনার ঘরকে দীর্ঘক্ষণ সুবাসিত রাখতে সাহায্য করবে।
- আপেল কাটার পর তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাদামি রঙের হয়ে যায়। তাই আপেল কাটার পর আপনি যদি তাতে সামান্য লেবুর রস মাখিয়ে দেন তাহলে বহুক্ষণ আপেল আর বাদামী রঙের হবে না।
- রান্নার পর সাদা সবজির রং আপনি যদি সাদা রাখতে চান তাহলে রান্নার আগে সবজির ওপর সামান্য লেবুর রস ছিটিয়ে দিন। এতে রান্নার পরও সবজির রং ঠিক সাদাই থাকবে।
- পিতল ও তামার পাত্র পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও লেবুর রস বেশ কার্যকর। এই ধরনের পাত্র পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে প্রথমে লেবুর টুকরা দিয়ে ভালোভাবে ঘষে নেবেন। এরপর গরম পানিতে ধুয়ে ফেলবেন। ধোয়ার পর দেখবেন পিতল ও তামার পাত্র গুলো একদম নতুনের মত চকচক করবে।
- অনেক সময় বাজার থেকে ফল ,শাকসবজি কিনে আনলেও তাতে পোকা থাকার সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি ফল বা শাকসবজি থেকে পোকা দূর করতে চান তাহলে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মেশানো পানির মধ্যে ফল এবং শাকসবজি গুলোকে ভিজিয়ে রাখুন। এতে পোকা থাকলেও তা মরে পানিতে ভেসে উঠবে।
- ভাত রান্না করার সময় চাল সিদ্ধ হওয়ার আগে ফুটন্ত পানিতে আপনি এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিন। এতে আপনার ভাত হবে একেবারে ঝরঝরে।
- পেঁয়াজ রসুন এবং মাছ কাটার পর অনেক সময় হাতে দুর্গন্ধ হয় । এই দুর্গন্ধ সহজে দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস। পানিতে লেবুর রস মিশে সেটিতে হাত ধরে ফেললেই আপনার হাতে আর কোনো দুর্গন্ধ থাকবে না।
কাগজি লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা
শুধু কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতাই নয় বরং এর খোসাতেও রয়েছে অনেক উপকার। সাধারণত অস্ট্রিও আর্থাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থাইটিসের ব্যথা কমাতে লেবুর খোসা সবথেকে বেশি কাজে লাগে। লেবুর খোসাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও লেবুর খোসা মুখের ব্রণ কমাতে এবং দাঁতের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে থাকে।
লেবুর খোসায় রয়েছে একটি নামক একটি উপাদান। আর তাই আপনি যদি নিয়মিত লেবুর খোসা খান তাহলে আপনার ওজন অনেকাংশেই কমে যাবে । কারণ, এই পেকটিন উপাদানটি আপনার শরীরে বিদ্যমান অতিরিক্ত চর্বিকে ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এই লেবুর খোসা আপনি আচার করে খেতে পারেন। আবার লেবুর খোসার চা করেও খেতে পারেন।
যারা লেবুর খোসার চা বা আচার পছন্দ করেন না তারা লেবুর খোসা ভর্তা করেও খেতে পারেন। আবার ত্বকের জন্য লেবুর খোসা ব্যবহার করতে চাইলে আপনি খোসার আইস কিউব করে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। সম্মানিত পাঠক, লেবুর খোসাও কিন্ত একেবারে ফেলনা নয়। তাই বলবো লেবু খাওয়ার পর এর খোসা না ফেলে দিয়ে সংরক্ষন করুন।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা, লেবু একটি সাইট্রাস জাতীয় ফল বিধায় এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। সকালে খালি পেটে লেবু পানি খাওয়ারও বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন এই উপকারিতা গুলো চটজলদি জেনে নিন--
- প্রতিদিন সকালে আপনি যদি খালি পেটে ৪০০ মিলি লিটার লেবু পানি খান তাহলে আপনার খুব সহজেই বেড়ে যাবে। এর ফলে আপনি সারাদিনে চা খাবেন তা অতি সহজে হজম হবে। শুধু লেবুর পানি নয়, আপনি লেবুর খোসার যদি চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলেও আপনার হজমে সুবিধা হবে
- সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আপনি যদি লেবু-মধু-পানি খান তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ক্ষুধা হ্রাস পাবে। এতে আপনার খাওয়ার পরিমাণও কমে যাবে এবং আপনার ওজন ও নিয়ন্ত্রণ হবে খুব সহজেই।
- লেবুর রস গরম পানি দিয়ে পান করতে যদি আপনার অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে আপনি এর সাথে সামান্য মধু ও লবন মিশিয়েও পান করতে পারেন। এতে আপনার কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা যেমন দূর হবে তেমনি সারাদিন আপনাকে সতেজ সুন্দর রাখবে সকালের এই গরম লেবু পানি।
- সকালের লেবু পানি পান আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর যোগান দেয়। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। বিভিন্ন গবেষকদের মধ্যে ভিটামিন সি আপনার ত্বকে বলিরেখা পড়তে বাধার সৃষ্টি করে এবং ভিটামিন সি'র কোলাজেন ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে।
- লেবুতে ভিটামিন সি থাকার কারণে অনেক সময় দাঁতের এনামেল এর জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই লেবু পানি পান করার পর আপনি অবশ্যই কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে নিবেন। আর যাদের গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলের সমস্যা রয়েছে তারা লেবু পানি এড়িয়ে চলবেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই লেবু পানি পান করবেন।
খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপরিউক্ত উপকারিতা গুলো পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে খেতে হবে। তবে শুধুমাত্র লেবু-মধু-পানি পান করলেই যে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট ক্ষয় হবে বা বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যাবে এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তাই আপনার শরীরের ফ্যাট বা চর্বি ক্ষয় করার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম।
পাতি লেবুর কিছু উপকারী পানীয় ও ও আচার তৈরি
কাগজি লেবু থেকে এর উপকারিতা পরিপূর্ণ রুপে পেতে আপনি এই লেবু দিয়ে আচার তৈরি করেও খেতে পারেন। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন পাতি লেবু দিয়ে কিছু উপকারী পানীয় এবং আচার কিভাবে তৈরি করবেন তা আপনাদের জানিয়ে দেই
পাতিলেবুর শরবত
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- পাতি লেবুর রস- ২৫০ গ্রাম
- আদার রস- ১২৫ গ্রাম
- চিনি- ৫০০ গ্রাম
- নুন এবং
- বিট লবণ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার:
- শরবত তৈরি করতে প্রথমে আপনি একটি পরিষ্কার পাত্র নেবেন। অতঃপর পরিষ্কার পাত্রে আপনি ২৫০ গ্রাম পাতিলেবুর রস, ১২৫ গ্রাম আদার রস, ৫০০ গ্রাম চিনি, পরিমাণ মতো নুন, বিট লবণ এবং অল্প হিং মিশিয়ে চুলার আচে বসাবেন। মিশ্রণটি চুলার আচে তিনবার ফুটে উঠলেই নামিয়ে নিন। নামানোর সাথে সাথে গরম থাকা অবস্থায় মিশ্রণটি একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে অথবা ছাকুনি দিয়ে ছেঁকে নিন।
- কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা হলে এই মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে রাখুন। আপনি এই পাতিলেবুর শরবতে এক চিমটি কর্পূর মিশিয়ে আন্দাজ মতো জল মিশিয়ে পান করতে পারেন। পাতিলেবুর এই শরবতে আপনার বদহজম, কলেরা, পেটে কৃমি, আমাশয়, ক্ষুধামন্দা ভাব সহ পেটের যাবতীয় অসুখ দূর হবে।
লেবু খামির
- লেবু খামির তৈরি করতে আপনি একটি মাটির হাঁড়িতে এক স্তর করে লেবু এবং তার ওপর আরেক স্তর করে লবণ রাখুন। এভাবে স্তরে স্তরে লেবু এবং লবণ চেপে চেপে সাজিয়ে রাখুন। চেপে চেপে সাজানোর ফলে একটি খামিরের সৃষ্টি হবে। এই খামির থেকে একটি একটি করে লেবু খেলে আপনার বদহজম দূর হবে ।
লেবুর আচার
- লেবুর আচার তৈরি করতে প্রথমে একটি লেবুকে চার টুকরা করে কেটে নিবেন। অতঃপর টুকরো করালেবুগুলোকে বয়ামে ভরে ওপর থেকে বিট লবণ, গোলমরিচ, শুকনো আদার গুঁড়ো ও সাধারন লবণ দিয়ে রোদে রাখুন। এভাবে কিছুদিন লবণ সংযোগে রোদে রাখলে কিছুদিনের মধ্যেই মধ্যেই লেবু গলে নরম হয়ে যাবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আপনার লেবুর আচার। লেবুর এই আচার খেলে আপনার মুখের অরুচি দূর হবে।
লেবু পোড়া
- লেবু পড়া করতে প্রথমেই আপনি একটি লেবুকে চিরে অর্ধেক করে নেবেন। অতঃপর এই টেরা অংশের মধ্যে আপনি শুকনা আদা গুড়ো ও লবণ দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে নিন। এই লেবু পড়ার রস চুষলে আপনি বমি বমি ভাব, ঢেকুর ওঠা এবং এসিডিটির সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
লেবুর শরবত
- প্রচন্ড গরমে লেবুর শরবত শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। একটি পরিষ্কার গ্লাসে টাটকা লেবুর রস এবং তাতে অল্প পরিমাণ লবঙ্গ, গোলমরিচ গুঁড়ো এবং পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন লেবুর শরবত।
নিম্বু পানীয় তৈরি
- নিম্বু পানীয় তৈরি করতে আপনি একভাগ পাতি লেবুর রস এবং ছয় ভাগ চিনি পানিতে মিশিয়ে তাতে লবঙ্গ ও গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন পাতিলেবুর পানীয় বা নিম্বু পানক।
সম্মানিত পাঠক, লেবুর রস এবং লেবুর শরবত পান করার ফলে আপনার পেটের যাবতীয় অসুখ দূর হয় এবং আপনার রক্তকেও শুদ্ধ করে।
কাগজি লেবুর কিছু ঔষধি গুনাগুন
কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি এর ঔষধি গুনাগুনও কম নয়। আপনি কি জানেন, নিয়মিত কাগজি লেবু খেলে এটি আপনার দেহের তারুণ্যকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। তো চলুন এবার কাগজি লেবুর কিছু ঔষধি ও ভেষজ গুনাগুন জেনে নেওয়া যাক--
- কৃমি রোগের ক্ষেত্রেঃ সাধারণত শিশুরা কৃমি রোগে বেশি ভোগে। আপনার শিশুর এই কৃমিরোগ দূর করতে খাওয়াতে পারেন লেবুর রস। আপনার শিশুর বয়স যদি ৪-৫ বছরের মধ্যে হয় তাহলে অর্ধেক পরিমাণ কাগজি লেবুর রস দুই কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে খাওয়াবেন। এতে আপনার শিশুর কৃমি রোগ দূর হবে।
- আবার কিশোর কিশোরীদের ক্ষেত্রে একই পরিমাণ পানিতে একটি পূর্ণাঙ্গ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে এবং পূর্ণবয়স্কদের বেলায় একই পরিমাণ পানিতে দুইটি লেবুর রস খেতে হবে। মাত্র ৭ দিন আপনি যদি এভাবে লেবুর রস খেতে পারেন তাহলে সুতা কৃমি গোল কৃমি ফিতা কৃমি যাই বলুন না কেন তা দূর হয়ে যাবে।
- সর্দির ক্ষেত্রেঃ অনেক সময় সর্দি লেগে নাক দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। এই সমস্যা দূর করতে আপনি লাল চায়ের সাথে আধটুকরো লেবুর রস এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন। এইটা আপনাকে একবার খাবার ২ ঘন্টা পর আবারো খেতে হবে। এভাবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার সর্দি ভাবটা না যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি খাওয়া চালিয়ে যান। দেখবেন একসময় আপনার নাক দিয়ে সর্দি ঝরা বন্ধ হয়ে গেছে।
- চুলের খুশকি প্রতিরোধেঃ চুলের খুশকি প্রতিরোধে কাগজি লেবু বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। আপনি একটি কাগজি লেবুর রস, তার চার গুণ পরিমাণ গরম পানিতে মিশিয়ে গোসলের আগে চুলের গোড়ায় ভালো করে মেসেজ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। রস শুকিয়ে গেলে গোসল করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে একদিন পরপর তিন থেকে চার বার লেবুর রস ব্যবহার করলে আপনার চুল এবং মাথা হবে খুশকি মুক্ত।
- দাদ প্রতিরোধেঃ শরীরের দাদের সৃষ্টি হলে ক্ষতস্থানে প্রচন্ড রকমের চুলকানির উদ্রেক হয়। আপনি খুব সহজেই লেবুতে এই দাঁত রোগ প্রতিরোধ করতে পারেন তার জন্য একটি কাগজি লেবু মাঝ বরাবর কেটে সেই টুকরো আপনার দাদের ক্ষতস্থানে কিছুক্ষণ ঘষতে থাকুন। এভাবে দিনে ২-৩ বার ঘষলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই আপনার দাদ রোগ সেরে যাবে।
- দাঁতের যত্নে লেবুঃ অনেক সময় আমাদের দাঁতের উপর লালচে ভাব পড়ে। আবার দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে পাথরের সৃষ্টি হয়। আপনি আপনার দাঁতের এই লালচে ভাব দূর করতে আধা চা চামচ খাবার সোডা, সামান্য লবণ, টুথপেস্ট এবং এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
- প্রতিমাসে আপনি যদি ১ বার করে এই মিশ্রণ দিয়ে ২-৩ মিনিট ব্রাশ করেন তাহলে আপনার দাঁতের লালচে ভাব দূর হবে এবং সেই সাথে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা পাথরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- চুল পাকা রোধে লেবুঃ আপনি যদি আপনার পাকা চুলকে কালো করতে চান তাহলে প্রথমেই আমলকি পাটায় বেটে মিহি করে নিন। অতঃপর এর সাথে একটি লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে মেসেজ করুন। এভাবে সপ্তাহে আপনি যদি একবার করতে পারেন তাহলে আপনার চুল হবে কালো এবং আপনার চুল পড়াও বন্ধ হবে।
ওজন কমাতে লেবু পানি কিভাবে কাজ করে
ওজন কমাতে লেবু পানি কিভাবে কাজ করে জানেন কি? লেবুতে রয়েছে ফাইবার যা দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে । তাছাড়া লেবু পানি খাওয়ার ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ দূষিত পদার্থ অপসারিত হয় এবং ফ্যাটও বার্ন হয়। এবার চলুন ওজন কমাতে লেবু পানি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক--
মধু ও কুসুম গরম লেবু পানির শরবত
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাধারণত লেবু খাওয়ার চেয়ে মধু ও কুসুম গরম লেবু পানির শরবত বেশি কাজে আসে। তাই যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন কিন্তু ওজন কমছে না তারা অন্যান্য ডায়েট করার পাশাপাশি আপনার খাদ্য তালিকায় মধু এবং লেবুর কুসুম গরম পানি যোগ করতে পারেন।
লেবু ও মধুর শরবত এর প্রস্তুত প্রণালীঃ
আপনি প্রথমে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি এবং তাতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে শরবত করে খেতে পারেন। আপনি চাইলে এর সাথে গ্রিন টি মিশিয়েও খেতে পারেন। এই পানীয়টি আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেতে পারেন তাহলে বেশি উপকার পাবেন।
সতর্কতা
- লেবু মধুর এই শরবত তৈরি করতে আপনি প্রথমে পানি হালকা কুসুম গরম করে নেবেন। কখনোই লেবু, মধু এবং পানি একসাথে মিশিয়ে চুলায় গরম করতে দেবেন না।
- এই মিশ্রণটি আপনি যদি হালকা গরম পানিতে না খান তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে অর্থাৎ আপনার ওজন কমার পরিবর্তে বেড়েও যেতে পারে।
- যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা খালি পেটে এই শরবত খাবেন না। কারণ, লেবু এসিডিটি হওয়ার ফলে আপনার গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
লেবুর কয়েকটি জাতের নাম
কাগজি লেবুর নানাবিধ স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ইতিমধ্যেই জেনেছেন। এবার আপনাকে এই কাগজি লেবুর বেশ কিছু জাত সম্পর্কে জানাবো। আমাদের দেশ ছাড়াও সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে 30 রকমের বিভিন্ন জাতের লেবু পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে প্রায় ২০ রকমের বিভিন্ন জাতের লেবু পাওয়া যায়। যেমন-
- কাগজি বা পাতিলেবু
- শরবত লেবু
- বাতাবি লেবু
- কমলালেবু
- সিডলেস লেবু
- বারি লেবু ১
- বারি লেবু ২
- বারি লেবু ৩
- বাউ লেবু ১
- বাউ লেবু ২ এবং
- বাউ লেবু ৩
ত্বকের যত্নে লেবু পাতার ব্যবহার
শুধু লেবু নয় বরং এর পাতাও আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়তা আমাদের বাইরে বের হতেই হয়। ফলে বাইরের ধুলাবালি এবং রোদ আমাদের ত্বকের যে ক্ষতি করে সেটি নিরাময় করতে সাহায্য করে এই লেবু পাতা। এক্ষেত্রে আপনি লেবু পাতা পেস্ট করে ত্বকে লাগাতে পারেন। আবার লেবু পাতার চা করেও খেতে পারেন।
আবার আপনি যদি পুদিনা পাতা ও লেবু পাতা এই দুটি উপাদান পেস্ট করে আপনার
ত্বকে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার ত্বকের ব্রণের দাগ নিমেষেই
দূর হয়ে যাবে। তবে একটি কথা আপনাদের যাদের ত্বকে অতিরিক্ত অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই লেবু পাতার পেস্ট সরাসরি ত্বকে লাগানো থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।
লেখকের মন্তব্য
কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। প্রচুর পুষ্টি করে ভরপুর এই কাগজি লেবু। লেবু পানির উপকারিতা নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। এটি আমাদের শরীরে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ফাইবারের যোগান দেয়। শুধু তাই নয়, প্রাণঘাতী ক্যান্সার থেকে শুরু করে সকল রোগ নিরাময়ে কাগজি লেবু বিশেষ ভাবে কার্যকরী।
আর তাই আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আজ থেকেই খাবার পাতে যোগ করে নিন এক টুকরো কাগজি লেবু। সেই সাথে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে কাগজি লেবুর রস খাবারের সাথে অথবা শরবত বানিয়ে খান। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই রকম আরো তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন
পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য
আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url