চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয় বিস্তারিত জানুন
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয় জানতে চান? চিরতা খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আমরা আলোচনা করব চিরতা এবং এর জল খাওয়ার নানান উপকারি দিক সম্পর্কে।
সাথে আরো আলোচনা করব চিরতা খাওয়ার নিয়ম এবং চিরতা সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য। সুতরাং আর দেরি না করে চটজলদি আর্টিকেলটি পড়ে নিন এবং সেই সাথে জেনে নিন চিরতার সব গুনাগুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়
- চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
- চিরতার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
- চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়
- চিরতা খাওয়ার নিয়ম
- চিরতার আরো নানাবিধ ব্যবহার
- খালি পেটে চিরতা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
- চিরতা কি?
- চিরতা গাছের বৈশিষ্ট্য
- চিরতা গাছের বিস্তৃতি
- চিরতা গাছের নানাবিধ নাম
- চিরতার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
- চিরতা কোথায় পাওয়া যায়
- চিরতার দাম কত ২০২৪
- অন্যান্য খাবারের সাথে চিরতা কিভাবে খাবেন
- চিরতা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা
- চিরতা কতদিন পর্যন্ত খাওয়া যায়
- লেখকের মন্তব্য
চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
চিরতা খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। আপনারা যারা চিরতা গাছ চেনেন না তাহলে জেনে রাখুন কালোমেঘ গাছের পাতাই হলো চিরতা। আপনি চিরতা গাছের শুকনো পাতা পানির সঙ্গে ভিজিয়ে সেই পানি পান করলে পাবেন বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। যেমন-
- চিরতা ওজন হ্রাস করেঃ বর্তমান সময়ে ওজন কমানো এক মারাত্মক সমস্যা। অনেকেই আবার ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করে থাকে। দীর্ঘদিন যাবত ঔষধ সেবনের ফলে একটা সময় পর আপনার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঔষধ সেবনের থেকে প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমানোই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী।
- আপনি চিরতা সেবনের মাধ্যমেই প্রাকৃতিকভাবে আপনার ওজন কমাতে পারেন। কেননা চিরতাতে রয়েছে মিথানল যা আপনার মেটাবলিজমের হার বৃদ্ধি করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- চিরতা রক্ত শোধক হিসেবে কাজ করেঃ চিরতা সাধারণত তিক্ত স্বাদ যুক্ত হওয়ায় এটি খুব সহজেই আপনার রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আবার এনিমিয়া থেকে রক্ষা করতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে এই চিরতা।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারীঃ আমরা অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকি। সাধারণত পেট বা পরিপাকতন্ত্র সংক্রান্ত কোনো রোগ হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের মহা ঔষধ হলো চিরতা। আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে চিরতার গাছ থেকে তৈরি হওয়া শুকনো খাড়া বা গাছের কান্ড খেতে থাকবেন যতদিন না পর্যন্ত কোষ্ঠকাঠিন্য না সারে।
- চিরতা লিভারকে সুরক্ষিত রাখেঃ চিরতা লিভারের বিভিন্ন সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। তাছাড়া লিভারের কোষগুলিকে আরাম প্রদান করে ফ্যাটি এসিড, সিরোসিস এবং লিভার সংক্রান্ত অন্যান্য প্রদাহ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে এই চিরতা। আপনার যদি লিভার জনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনি নির্দ্বিধায় নিশ্চিন্তে সেবন করতে পারেন চিরতা। কেননা চিরতা আপনার লিভার থেকে টক্সিন অপসারণ করে এর কাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে চিরতাঃ যেকোনো রোগ সেরে ওঠা বা না ওঠা অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার দেহের অনাক্রম্যতা বা ইমিউন সিস্টেমের ওপর। চিরতা আপনার শরীরের এই অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনার শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে দিতেও সাহায্য করে চিরতা।
- সোরিয়াসিস রোগের ক্ষেত্রে চিরতাঃ চিরতা সোরিয়াসিস রোগ সারিয়ে তুলতেও বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সোরিয়াসিস রোগ সরাতে চাইলে আপনি রাতে চার গ্রাম চিরতার সাথে ১২৫ গ্রাম জল মিশিয়ে পান করে পরের দিন সকালে ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত খালি পেটে থাকবেন। আপনি পরপর একটানা ২ সপ্তাহ এভাবে চিরতা সেবন করলে সোরিয়াসিস রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- ত্বকের যত্নে চিরতাঃ আপনার ত্বকের ব্রণ এবং বিভিন্ন ক্ষতস্থান সারাতে চিরতা বেশ কার্যকর। আপনি যদি চিরতা গিলে খান অথবা চিরতার পেস্ট বানিয়ে আপনার ত্বকে ব্যবহার করেন তাহলে ভালো উপকার পাবেন। এছাড়া চিরতার নির্যাসও ত্বকের নানান রকম সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে।
- আর্থরাইটিস এর চিকিৎসায় চিরতাঃ আর্থরাইটিসের ফলে অনেক সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। আর্থরাইটিস এর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আজ থেকেই চিরতা সেবন করতে পারেন। কারণ, চিরতার মধ্যে রয়েছে প্রদাহ নাশম গুণ যা আপনার আর্থরাইটিস এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া যে কোনো ধরনের ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং লালচে ভাবের চিকিৎসায় চিরতা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- চিরতা সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ চিরতার তিক্ত স্বাদ আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে ।তাছাড়া প্যানক্রিয়াসের কোষে ইনসুলিনের উৎপাদন উত্তেজিত করে ব্লাড সুগার হ্রাস করে এই চিরতা।
- পেট ফাঁপার সমস্যা সমাধানেঃ নিয়মিত চিরতা সেবনে আপনি পেট ফাঁপার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। অনেক সময় খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং অন্যান্য জীবাণুর কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রের নানারকম অসুখ দেখা দেয়। চিরতা ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে কৃমি বের করে দিয়ে এই অঙ্গকে বিভিন্ন রকম জীবাণু এবং রোগের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
- জ্বর সারাতে চিরতাঃ জ্বরের মতো সাধারণ রোগেও আপনি চিরতা সেবন করতে পারেন। বিশেষত ম্যালেরিয়া সংক্রমণে চিরতা খুবই কার্যকর। আর যারা বয়স্ক রয়েছেন তাদের জ্বরের ক্ষেত্রে চিরতা অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তিক্ত টনিক হিসেবে কাজ করে।
- চিরতা ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগ সারাতেও চিরতা বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। যদিও আমাদের মাঝে ক্যান্সার এখনো প্রতিকারযোগ্য নয়, তবে লিভার ক্যান্সার সারিয়ে তুলতে চিরতা বেশ কার্যকর।
- পেটের প্রদাহ দূর করেঃ নিয়মিত চিরতা সেবনের ফলে এটি আপনার পরিপাকতন্ত্রে এসিডের উৎপাদন কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তাছাড়া ক্ষুদ্রান্ত্র ফুলে যাওয়াও কমাতে সাহায্য করে চিরতা। এর মাধ্যমে আপনি ডায়রিয়া, এসিডিটি এবং পেটের নানাবিধ সমস্যা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে পারেন।
- চিরতা এলার্জি দূর করেঃ যাদের শরীরে এলার্জির সমস্যা রয়েছে, বা চুলকানোর জায়গাটা খুলে লালচে হয়ে যায়, অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে ত্বক চাকা চাকা হয়ে ওঠে তারা চিরতার শরণাপন্ন হলে ভালো ফল পাবেন। কারণ, চিরতার তি তারস এলার্জি সারাতে বেশ কার্যকর। এলার্জি দূর করতে আপনি আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন।
- পরদিন সেই পানি পরিষ্কার কাপড় বা ছাকুনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে দিনের মধ্যে ২-৩ খাবেন। এভাবে কিছুদিন চিরতা পানি সেবন করলে আপনার এলার্জির সমস্যা অনায়াসেই দূর হবে। তবে যে সমস্ত খাবার খেলে সাধারণত এলার্জি হয় যেমন বেগুন, চিংড়ি মাছ, মসুর ডাল, গরুর মাংস, হাঁসের ডিম ইত্যাদি এই খাবারগুলো খাওয়া থেকে আপনি নিজেকে বিরত থাকবেন।
- চিরতা হাঁপানির উপশম করেঃ আপনাদের যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে অথবা অল্প ঠান্ডা লাগলে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি কাশি হয়ে হাঁপানির টানটা বেড়ে যায়, তারা এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিশ্চিন্তে সেবন করতে পারেন চিরতা। এক্ষেত্রে আপনি আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো ৩ ঘন্টা অন্তর মধুসহ চেটে খাবেন। এতে করে আপনি খেয়াল করবেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আপনার প্রবল হাঁপানির যে সমস্যা ছিল সেটি অনেকটাই কমে গেছে।
- পেটের কৃমি প্রতিরোধে চিরতাঃ পেটে কৃমি হলে সাধারণত পেটের উপরের অংশ মোচড়ায় এবং ব্যথা করে। আপনার পেটে কৃমি জনিত কোন সমস্যা থাকলে আপনি আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো সকালে মধুসহ বা চিনি মিশিয়ে চেটে খেতে পারেন। খাওয়ার পর সামান্য পানি খেয়ে নেবেন। তাতে আপনার পেটে কৃমির উপদ্রব দূর হবে।
- শরীরের চুলকানি প্রতিরোধেঃ আপনার শরীরে চুলকানি হলে বা অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে চাকা চাকা দাগ হলে আপনি সেই ক্ষতস্থানে চিরতা ব্যবহার করতে পারেন। শরীরের চুলকানি প্রতিরোধে আপনি ২০ গ্রাম পরিমাণ মত চিরতাতে অল্প পরিমাণ পানি ছিটিয়ে এটি পাটায় ছেঁচে বা বেটে নিন। অতঃপর তা লোহার কড়াই বা তাওয়াতে সর্ষের তেল দিয়ে ভালো করে হালকা আঁচে জ্বাল করে নেবেন।
- খেয়াল রাখবেন, অতিরিক্ত জালে যেন চিরতা পুড়ে না যায়। সরষের তেল গরম হয়ে ফেনা মুক্ত হয়ে এলে তাতে চিরতা ছেড়ে দেবেন এবং ভালো করে ভাজা হলে নামিয়ে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নেবেন। এবার এই তেল আপনি আপনার শরীরের ক্ষতস্থানে বা চুলকানোর জায়গায় ঘষে অল্প অল্প করে মালিশ করলে আপনার চুলকানি দ্রুতই সেরে যাবে।
- পঁচা ঘা সারাতে চিরতাঃ আপনার শরীরে অনেক দিন যাবত ঘা হয়েছে কিন্তু কিছুতেই সারছে না। এক্ষেত্রে আপনি আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রাখবেন। পরের দিন সেই জল ছেঁকে পচা ঘা ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যেই আপনার ঘায়ের পচানি যেমন চলে যাবে তেমনি এটি দ্রুত শুকিয়েও যাবে।
- চিরতা চুল পড়া রোধ করেঃ কোন কারণ ছাড়াই আপনার মাথা থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে যাচ্ছে। এমনকি চুল পড়তে পড়তে আপনার ঘন কেশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে এবং আপনি এ নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। চুল পড়ার এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে দিন।
- পরের দিন সেই পানি ছেঁকে তা দিয়ে আপনার মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।এভাবে একদিন পরপর চিরতার পানিতে মাথা ধুতে হবে। আপনি যদি ৩-৪ বার এভাবে চিরতার পানিতে মাথা ধুতে পারেন তাহলে আপনার চুল পড়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।
- রক্তশূন্যতা কমাতে চিরতাঃ মানবদেহে রক্ত কোষ গঠন করে চিরতা। ফলে চিরতা সেবনে আপনার রক্তশূন্যতাও কমে আসে। শুধু তাই নয়, মহিলাদের ঋতুস্রাব বা মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে সেটি কমাতেও সাহায্য করে এই চিরতা। আবার আপনার শরীরে কোথাও কেটে গেলে সেই কাটাস্থানে চিরতার রস লাগিয়ে দিলে খুব দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ যেমন নাক দিয়ে রক্ত পড়া এসবও বন্ধ করতে পারে চিরতা।
- হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেঃ চিরতায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার বার্ধক্য কে বিলম্বিত করে দিতে পারে। এমনকি আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে চিরতা সেবন করেন তাহলে ক্যান্সার, হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
- বদহজম দূর করতেঃ চিরতা পেটে বদহজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন এসিডিটি, বদহজম, পেটে গ্যাস জমা ,পেটের ফোলা ভাব, বুক জ্বালাপোড়া করা এবং পেট ব্যথায় চিরতা বেশ সহায়ক। আবার চিরতার মধ্যে রয়েছে রেচক বৈশিষ্ট্য যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে বেশ ভালো কাজ করে। সুতরাং পেটের হজম সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যাকে চিরতরে বিদায় জানাতে আপনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন চিরতা।
- টনসিল এ আরাম পেতেঃ চিরতা আপনাকে টনসিলাইটিস বা গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কারণ চিরতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ইনফ্লেমেটরি এবং ইমিউনো মডুলেটরি বৈশিষ্ট্য যা টনসিলের প্রদাহ কে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- ক্ষুধা বৃদ্ধিতে চিরতাঃ অনেকেই আছেন যারা খাবারে রুচি পাননা এবং ক্ষুধা মন্দায় ভুগতে থাকেন। আর এই ক্ষুধা মন্দার কারণে আপনার খাওয়ার প্রতিও অনীহা চলে আসে। এ সমস্যা দূর করতে আপনি চিরতা খেতে পারেন কারণ চিরতা ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে চিরতা পিত্তের নিঃসরণ বাড়ায় যা ক্ষুধা বাড়াতে সহায়ক।
- চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ একটু বয়স হলে ই আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, কোন কিছু দেখতে অসুবিধা হয়। চিরতাকে বলা হয় চোখের টনিক। কারণ, চিরতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি। যা আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং বয়সজনিত চোখের রোগ প্রতিরোধ করতেও সক্ষম। ঠিক এই কারণেই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য চিরতাকে সুপারিশ করা হয়।
সম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো চিরতা ভেজানো জলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতেন না বা জানলেও সেটি হয়তো কখনো জোর দিয়ে মেনে চলার চেষ্টা করেননি। এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি নিশ্চয়ই চিরতা ব্যবহারে সচেতন হবেন।
চিরতার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
চিরতা ভেজানো জলের উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। চিরতার মত প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভেষজ উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে চিরতা গ্রহণ করাটাও সমীচীন নয়। কারণ, এতে উপকারের থেকে আপনার অপকারই বেশি হবে। তাহলে চলুন চিরতার অপকারিত গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নেওয়া যাক-
আরো পড়ুনঃ কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
- ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেঃ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে দীরুতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এটা ঠিক তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে চিরতা গ্রহণ না করাই ভালো। কারণ, চিরতাকে ডায়াবেটিস রোগের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা অতীত জরুরী।
- সার্জারি করার ক্ষেত্রেঃ আপনার যদি কোন সার্জারি করার থাকে সেক্ষেত্রে ২-৩ সপ্তাহ আগ থেকে আপনি চিরতার সেগুন সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। কারণ, চিরতা সার্জারির ক্ষেত্রে আপনার রক্তক্ষরণে বিপত্তি ঘটাতে পারে । সার্জারি সময় রোগীর রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ।
- অন্ত্রে আলসার হলেঃ আপনার অন্ত্রে আলসারের সমস্যা থাকলে আপনি চিরতা সেবন থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। কারণ, চিরতা আপনার অন্ত্রে আলসারের অবনতি ঘটাতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়েঃ আপনার গর্ভকালীন সময়ে এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় চিরতা না খাওয়াটাই উত্তম। কারণ, গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে তো তা সেবন করলে আপনার উপকার কি অপকার হবে সে বিষয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তাছাড়া গর্ভকালীন সময় চিরতা সেবন করতে চাইলে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই সেবন করবেন।
- দৃঢ়তা বমির উদ্রেক করেঃ চিরতার সব থেকে বড় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো এটি তিক্ত স্বাদের হওয়ায় খেলেই শরীরে বমি বমি ভাব সৃষ্টি হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনারা যারা খাবারের স্বাদের ব্যাপারে খুব সচেতন তারা চিরতা সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। আর যদি আপনাকে চিরতা খেতেই হয় সেক্ষেত্রে এর স্বাদ নিতে পারার মন-মানসিকতা তৈরি করে তবেই চিরতা খাবেন।
- অন্যান্য ক্ষেত্রেঃ রক্ত প্রবাহের ব্যাধি, উচ্চ রক্তচাপ, পুরুষত্বহীনতা, বন্ধত্ব ইত্যাদি রোগের সাথে সম্পৃক্ত থাকা অবস্থায় আপনি চিরতার সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
কোন কিছুই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো নয়। দীর্ঘদিন একটানা চিরতার পানি খেলে তা আপনার কিডনির উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং আপনি নিয়ম মেনে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ চিরতা সেবন করুন।
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়? এই প্রশ্ন অনেকের মনেই। আসলে চিরতা ভেজানো জল খেলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। চিরতা তিক্ত স্বাদযুক্ত হওয়ায় এই ফলটির রয়েছে নানান গুণ। তো চলুন চিরতা ভেজানো জল খেলে কি কি হতে পারে তা জেনে নিন-
- আপনি চিরতার ডাল পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে একটি গ্লাসে সারারাত জল দিয়ে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ওই জল খেলে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
- নিয়মিত চিরতার জল সেবনে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া এমনিতেও নিয়মিত তিতা খাবার খেলে শারীরিক অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।
- আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে চিরতা ভেজানো জল খান তাতে আপনার পেটের কৃমির সমস্যা দূর হবে। আবার তারুণ্য ধরে রাখতেও চিরতার গুরুত্ব অতুলনীয়।
- অনেক সময় টাইফয়েড জ্বর হওয়ার পর আবারো নতুনভাবে প্যারাটাইফুয়েড জ্বর হয়। টাইফয়েড জ্বরের পরে আপনি যদি চিরতা ভেজানো জল খান। তাতে বেশ ভালো উপকার পাবেন।
- নিয়মিত চিরতা ভেজানো জল খেলে ফুট পয়জনিং হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
- চিরতার রস রক্তে চিনির মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা নেই কিন্তু রক্তে চিনির পরিমাণ সব সময় বেশি থাকে তাদের জন্য চিরতা ভেজানো জল হতে পারে একটি মহা ঔষধ।
- রাতে চিরতা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই জল খেলে আপনার রক্ত পরিশুদ্ধ হবে এবং সেই সাথে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস।
- তাছাড়া শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানো জ্বর কমানো থেকে শুরু করে তারুণ্য বজায় রাখে সহ নানা সমস্যায় কার্যকর ভমিকা রাখে চিরতা ভেজানো জল।
- চিরতা পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে। চিরতা ভেজানো জল খেলে এটি আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন পদার্থ বের করে দেয়। এতে শরীরের ভেতর থেকে পরিশুদ্ধ হওয়ায় অনেকটাই ফ্রেশ অনুভূতি পাবেন আপনি।
- বদ হজম, এসিডিটি প্রভৃতি থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে চিরতা ভেজানো জল। তাছাড়া আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের এর সমস্যা থাকে তাহলে চিরতার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলন।
- চিরতা ভেজানো জল কিংবা চায় সঙ্গে খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি ,জ্বালাপোড়া এবং লালচে ভাব ইত্যাদি দূর হয়।
সম্মানিত পাঠক, চিরতা তিতকুটে স্বাদযুক্ত হলেও এর গুনাগুন অস্বীকার করা যাবে না। এর উপকারিতা এতটাই যে চিরতা ভেজানো জলকে তরল সোনাও বলা হয়ে থাকে।
চিরতা খাওয়ার নিয়ম
চিরতা ভেজানো জল খেয়ে এর উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে চিরতা খেতে হবে। সবকিছু খাওয়ারই একটি নিয়ম রয়েছে এবং নিয়ম মেনে খাওয়ার ফলেই সেই খাবারের উপকার গুলো পাওয়া যায়। তেমনি চিরতা খাওয়ারও বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। চিরতার উদ্ভিদ এবং মূল উভয়ই ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি চাইলে নিম্নোক্ত নিয়মগুলো ব্যবহার করে চিরতা খেতে পারেন-
আরো পড়ুন: বেল পাতার ৭টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
- সোরিয়াস সারিয়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চিরতা। এর জন্য রাতে আপনি ৪ গ্রাম চিরতার সাথে ১২৫ গ্রাম জল মিশিয়ে পান করে পরের দিন সকালে ৩-৪ ঘন্টা খালি পেটে থাকবেন। এভাবে ধারাবাহিকভাবে টানা ২ সপ্তাহ করলে আপনি সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পাবেন।
- আবার ১৫ থেকে ৩০ মিলিটার বা ১-২ চামচ চিরতা নিন। এবার হালকা গরম পানির সাথে চিরতা , লবঙ্গ বা পান করুন।
- আপনি চাইলে চিরতার পাতা পাতায় বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তার সাথে স্বাদমতো হালকা মধু বা চিনি মিশিয়েও খেতে পারেন।
- চিরতার স্যালসিলিক নির্যাস একটি টনিক হিসেবে দিনে দুবার খাবারের আগে আপনি গ্রহণ করতে পারেন। এতে আপনার শারীরিক দুর্বলতা দূর হবে।
- চিরতার মূল হেঁচকি এবং বমিতে বিশেষ উপকারী। এর জন্য আপনি ০.৫ থেকে ২ গ্রাম পরিমাণ মধুর সাথে চিরতা সেবন করতে পারেন।
- চিরতা বেশ তিতকুঁটে তিতা স্বাদযুক্ত। যার ফলে আপনি আপনার স্বাদমতো খাওয়ার স্বার্থে আপনি এতে মধু বা চিনি যোগ করেও খেতে পারেন।
- ২৫০ গ্রাম হালকা গরম পানির মধ্যে কিছু পরিমাণ চিরতা অর্থাৎ ৭-৮ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রাখুন ।কমপক্ষে ৫-৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পরে পরিষ্কার কোন ছাঁকনি দিয়ে ছেকে সেই পানি খেয়ে ফেলুন।
- আপনি একটি পাত্রে ৫০০ গ্রাম পরিমাণমতো পানি নিন এবং ওই পানির মধ্যে এক মুঠো চিরতা ফেলে দিন। অতঃপর পানি চুলাতে জ্বাল করতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত পানিটি ৫০০ থেকে ২০০ গ্রামে আসছে। পানি ২০০ গ্রামে রূপান্তরিত হলে ওই পানিটুকু 12 ঘন্টা পর পর খেয়ে নেবেন।
- ২১০ গ্রাম পানির মধ্যে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রাখুন প্রায় ৫ ঘন্টা। অতঃপর পানিটি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে এর সাথে মধু যোগ করে খেয়ে নিন।
- আপনার শরীরে চুলকানি জনিত কোন সমস্যা বা ক্ষতস্থান থাকলে চিরতার পাতা তেলে ভেজে সেই ক্ষতস্থানে লাগাতে পারেন এতে করে আপনার চুলকানি দূর হবে।
সম্মানিত পাঠক, আশা করছি চিরতা কিভাবে কোন নিয়মে খেতে হবে তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন।
চিরতার আরো নানাবিধ ব্যবহার
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয় আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। চিরতা যেহেতু একটি ভেষজ উদ্ভিদ তাই বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসা এবং ঔষধ তৈরিতে নানান ভাবে এটি ব্যবহৃত হয়। এবার চলুন কথা না বাড়িয়ে চিরতাকে সাধারণ মানুষ কিভাবে ব্যবহার করে সে সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছি--
- ডাইবেটিসের ঔষধে চিরতার ব্যবহারঃ যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা অনেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দূর করতে গ্লাইবারাইড, ইনসুলিন, রোসিগ্লিটাজন, ক্লোরোপ্রোপামাইড, পিওগ্লিটাজন, গ্লিপিজাইড, এবং টোলবুটামাইডের মতো ইত্যাদি ঔষধ সেবন করেন। মনে রাখবেন এই সমস্ত ঔষধ তৈরিতে চিরতা ব্যবহার করা হয়।
- বিভিন্ন চর্ম রোগের চিকিৎসায়ঃ চর্ম রোগের বিভিন্ন চিকিৎসা বিশেষ করে ত্বকের ব্রণ এবং একজিমা দূর করতে যে সমস্ত ওষুধ তৈরি হয় তাতেও চিরতা ব্যবহৃত হয়। কারণ, গবেষণায় প্রমাণিত চিরতা থেকে প্রাপ্ত ক্বাথ ত্বকের ফুসকুড়ি সারাতে শতভাগ কার্যকরী। আবার যাদের জ্বালাপোড়া শুষ্কতা এবং ত্বকে চুলকানির সমস্যা রয়েছে তারাও চিরতা ব্যবহার করতে পারেন।
- কৃমি দূর করতে ব্যবহৃত হয় চিরতাঃ মানবদেহে কৃমি দূরীকরণে চিরতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কারণ, চিরতায় রয়েছে হেলমিন্থ নামক একটি উপাদান যা কৃমি দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। শুধু ক্রিমি নয় বরং কৃমির মত বিভিন্ন পরজীবী যেমন রাউন্ডওয়ার্ম, টেপওয়ার্মও দূর করতে সক্ষম এই চিরতা। যার কারণে চিকিৎসকরা চিরতাকে কৃমির ঔষধের অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেন।
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
আপনি চিরতা খাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু সেটি খালি পেটে, নাকি ভরা পেটে। মনে রাখবেন, চিরতা সাধারণত সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করতে হয়। প্রাচীন ভারতে এটি ম্যালেরিয়া ওষুধ হিসেবেও একসময় ব্যবহার করা হতো। এবার চলুন খালি পেটে চিরতা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানুন-
- খালি পেটে চিরতার জল খেলে আপনার ত্বক থাকে সুস্থ এবং একটা বয়সের পরেও শরীরের তারুণ্যতা বজায় থাকে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার কোন জুড়ি নেই।
- খালি পেটে চিরতার জল খেলে এটি আপনার শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখে।
- খালি পেটে চিরতার জল খাওয়ার ফলে আপনার বদহজমের সমস্যা দূর হতে পারে সেই সাথে এটি আপনার লিভারকেও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই চিরতার এই পানীয় লিভারের বিভিন্ন রকম সমস্যা যেমন ফ্যাটি লিভার এবং আরো অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
- আপনি যদি খালি পেটে চিরতার জল খেতে পারেন তাহলে আপনার এলার্জির সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। অনেকেরই প্রচন্ড রকমের এলার্জি সমস্যা থাকে। এলার্জির কারণে চোখ ফুলে যায় ,শরীর ফুলে যায় এবং চুলকানির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় শরীরে রেশও দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে বলব রোজ সকালে খালি পেটে চিরতার পানি পান করুন তাতে উপকার পাবেন।
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে বিভিন্ন রোগে নিরাময়ে খালি পেটে চিরতার পানি পান করার কথা উল্লেখ রয়েছে। আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানো, জ্বর কমানো থেকে শুরু করে নানান সমস্যায় কাজ করে এই চিরতার পানি। তাছাড়া খালি পেটে চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয় তা আজকের আলোচনায় ইতিমধ্যেই জেনেছেন।
চিরতা কি?
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয় তা এতক্ষণে জেনেছেন। কিন্তু চিরতা আসলে কি জানেন কি? এবার চলুন এই ভেষজ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখুন।যা আপনার কাজে আসবে। চিরতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Swertia এবং হিন্দিতে একে চিরায়তা বলা হয়ে থাকে। চিরতা মূলত একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা সুপ্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সারা ভারতবর্ষে এটি পাওয়া গেলেও 1839 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ইউরোপে চিরতা আবিষ্কৃত হয়। মূলত ফুলন্ত থাকা অবস্থায় পুরো গাছ তুলে এনে রোদে শুকিয়ে ঔষধ তৈরি করার কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। চিরতার মূল আরও বেশি মূল্যবান। চিরতা এমনই এক ভেষজ যার পাতা, মূল, গাছের বাকল কোনটাই ফেলনা নয়।
চিরতা গাছের বৈশিষ্ট্য
চিরতা ভেজানো জলের উপকারিতা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। চিরতা একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং এর গড় উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। চিরতা গাছের পাতা কম বেশি ১০ সেন্টিমিটারের মতো দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং পাতার অগ্রভাগ সূচালো হয়। চিরতার ফুল বৃন্তহীন এবং জোড়ায় জোড়ায় বিপরীতমুখী হয়ে ফোটে।
এর ফুল হালকা সবুজের সঙ্গে গোলাপি মেশানো এবং প্রত্যেক পাপড়ি লতিতে একজোড়া সবুজ গ্রন্থি থাকে। চিরতা গাছের ফল হয় এবং এই ফল ৬ মি.মি বা তার থেকেও লম্বা হয়ে থাকে। ফলগুলোর আকৃতি সাধারণত ডিম্বাকৃতি ক্যাপসুল এর মত হয়ে থাকে। চিরতার ফল পাকলে এটি কাল কালচে বর্ণ ধারণ করে। এর বীজ গোলাকার এবং হলুদ বর্ণের।
ফুলন্ত অবস্থায় পুরো চিরতা গাছ তুলে শুকিয়ে নিয়ে সেটি ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়। জ্বর, অতিসার এবং শারীরিক দুর্বলতায় এই চিরতা গাছ বেশ উপকারী। চিরতার আয়ুর্বেদিক নাম কিরাততিক্ত। অনেকেই চিরতা এবং কালোমেঘ গাছকে এক মনে করে গুলিয়ে ফেলেন। এর কারণ হচ্ছে কালো মেঘের ইংরেজি নামের অর্থ হলো সবুজ চিরতা।
কিন্তু মনে রাখবেন, চিরতা এবং কালো মেঘ দুটি আলাদা গাছ এবং এদের বৈশিষ্ট্যও একে অপরের থেকে আলাদা। চিরতার সমস্ত গাছ-ই ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এর মূল খুবই মূল্যবান। আয়ুর্বেদিক ভাষ্যমতে, চিরতার রস বা স্বাদ তিতা, ধর্ম লঘু ও শুষ্ক, বীর্য ঠান্ডা এবং বিপাক কটু। এখন পর্যন্ত ৪০টিরও বেশি রাসায়নিক উপাদান চিরতা থেকে শনাক্ত করা হয়েছে।
চিরতা গাছের বিস্তৃতি
চিরতা গাছ সাধারণত হিমালয়ের উষ্ণ অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে। হিমালয় পর্বতের নাতিশীতোষ্ণ প্রদেশে চার হাজার থেকে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় চিরতা গাছ ভালোভাবে জন্মায়। আবার কাশ্মীর ও ভুটানের পাহাড়ি এলাকাতেও চিরতা গাছ জন্মে। তবে চিরতার বীজের অঙ্কুরোদগমের হার খুবই নগণ্য।
কার্বন সমৃদ্ধ বালুময় মাটিতে চিরতা গাছ ভালো জন্মে। কিন্তু সমতল মাটিতে চিরতা গাছ মোটেও জন্মায় না। সাধারণত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চিরতা গাছের ফুল ধরে। বর্তমানে বাংলাদেশে কৃত্রিমভাবে কোথাও কোথাও চিরতা গাছের চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া চিরতার চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
চিরতা গাছের নানাবিধ নাম
বিভিন্ন ক্ষেত্রবিশেষে চিরতা গাছের নানান রকম নাম রয়েছে। যেমন--
- চিরতার বৈজ্ঞানিক নাম- Swertia chirayita H. Karst.
- চিরতার ইংরেজি নাম- Clearing Nut Tree
- চিরতার বাংলা নাম- চিরতা
- চিরতার ইউনানী নাম- চিরয়তা
- চিরতার আয়ুর্বেদিক নাম- কিরাত তিক্তা
- চিরতার আরবি নাম- কসবুজাজারেয়ী
চিরতার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
চিরতা ভেজানো জলের এতসব উপকারিতা জানার পর এবার নিশ্চয়ই এই ভেষজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান। তিক্ত স্বাদযুক্ত হলেও হলেও নানান রকম পুষ্টিগণের কারণে চিরতা সুপ্রাচীন কাল থেকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিরতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ, এর রাসায়নিক গঠন বিভিন্ন প্রজাতি এবং পরিবেশগত কারণের উপরে নির্ভর করে অনেক সময় পরিবর্তিত হতে পারে। চলুন এবার চিরতার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো জেনে নিই --
প্রতি ১০০ গ্রাম চিরতায় রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান:
পুষ্টি উপাদান | পরিমান (প্রতি ১০০ গ্রাম) |
---|---|
পটাশিয়াম | ৪৮০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১৩ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮০ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৩৮০ মিলিগ্রাম |
ফ্যাট | ১.৩ গ্রাম |
ফাইবার | ৮ গ্রাম |
ক্যালরি | ২৯৭ কিলো ক্যালরি |
জলীয় অংশ | ১২ গ্রাম |
আমিষ | ৪.৭ গ্রাম |
শর্করা | ৬২ গ্রাম |
চিরতা কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশের প্রায় সর্বোত্তই চিরতা গাছ কম বেশি জন্মে থাকে। গ্রাম অঞ্চলের রাস্তার আশেপাশে আপনি প্রচুর চিরতা গাছ দেখতে পাবেন। বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে চিরতার চাষও করা হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। তাছাড়া বাজারে বেশ ভালো চাহিদা থাকার কারণে আজকাল বাণিজ্যিকভাবেও চিরতার চাষ করা হচ্ছে। আপনার এলাকায় যে সমস্ত দোকানে ইসবগুল, তোকমাদানা ইত্যাদি আয়ুর্বেদিক ঔষধ বিক্রি করে সেখানে খোঁজ করুন পেয়ে যাবেন।
বর্তমান সময়ে আপনি ঘরে বসে থেকেই বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অথবা ফেসবুক পেজে অর্ডার করেও চিরতা কিনতে পারেন। তবে কেনার আগে আপনি অবশ্যই চিরতা ভালো কিনা সেটি যাচাই-বাছাই করে তবেই ক্রয় করবেন। কেননা বর্তমান বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীর অভাব নেই। সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি কোন স্বনামধন্য দোকান বা অনলাইন শপ থেকে কিনতে পারেন।
চিরতার দাম কত ২০২৪
চিরতা ভেজানো জল খেলে আপনার কি হতে পারে তা জেনেছেন। কিন্তু চিরতার দাম সম্পর্কে আপনার কোন ধারনা নাই। আর দাম না জানার কারনে ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় চিরতা কেনা হয়ে ওঠে না। সম্মানিত পাঠক, আজকে আপনাকে চিরতার দাম জানিয়ে দেব। যাতে করে পরবর্তীতে আপনি খুব সহজেই আগ পিছ না ভেবে এই উপকারি ভেষজটি ক্রয় করতে পারেন।
চিরতার দাম চিরতার পাতা শুকিয়ে সেটি গুড়ো করে পাউডার তৈরি করা হয়। নানান ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এই চিরতার দাম কিন্তু আমাদের নাগালের মধ্যে। অত্যন্ত তিক্ত স্বাদ যুক্ত হওয়ায় চিরতা খুব সামান্য পরিমাণ নিলেই তাতে আপনার বেশ কয়েকদিন চলে যাবে। বর্তমানে ১০০ গ্রাম বাছাই করা শুকনো চিরতার দাম পড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। তবে স্থানভেদে এর দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে।
অন্যান্য খাবারের সাথে চিরতা কিভাবে খাবেন
আপনি শুধু চিরতা ভেজানো জল বা চিরতার রস খেতে না চাইলে অন্যান্য খাবারের সাথে চিরতা মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন--
- চিরতা তিক্ত স্বাদযুক্ত হওয়ার কারণে এর তেতো সাধ দূর করতে আপনি অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে তিক্ত স্বাদ কম অনুভূত হবে।
- আবার আপনি বিভিন্ন ফল মিশ্রিত সালাদের সাথেও মিশিয়ে চিরতা খেতে পারেন।
- আপনি চিরতা দিয়ে স্বাস্থ্যকর স্মুদিও তৈরি করে খেতে পারেন।
চিরতা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা
চিরতা খাওয়া সাধারণত নিরাপদ। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতেও পারে। চিরতা খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন--- যাদের পিত্তথলির সমস্যা রয়েছে তাদের চিরতা খাওয়া উচিত নয়।
- গর্ভবতী মহিলাদের চিরতা সেবন থেকে দূরে থাকা উচিত ।
- প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত চিরতা গ্রহণ করলে আপনার শরীরে যে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- আপনি চিরতা সেবনের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই সেবন করবেন।
চিরতা কতদিন পর্যন্ত খাওয়া যায়
আপনি যদি একটানা দীর্ঘদিন ধরে চিরতা সেবন করতে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে নানান রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আর তাই চিরতা একটানা ১০ ১৫ দিনের বেশি খাওয়া ঠিক না। এতে আপনার শরীরে উপকারের পরিবর্তে হিতে বিপরীত হতে পারে। আবার দীর্ঘদিন ধরে চিরতা সেবন করতে থাকলে আপনার কিডনির সমস্যা এমনকি যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয় আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমাদের আর্টিকেল পড়ে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চিরতা এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত অনেক ধরনের ঔষধি গুণ রয়েছে। সম্মানিত পাঠক, আপনারা যারা জ্বর ,কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধামন্দা, পিত্তথলিতে কৃমি, লিভারের জ্বালাপোড়া, পেটের ব্যথা এবং ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য রোগের বিরুদ্ধে
নিরাপদ ভাবে যুদ্ধ করতে চান তাদের জন্য চিরতা সেবন হতে পারে একটি প্রাকৃতিক মহৌষধ। বর্তমান সময়ে ডেটাবেস কনজিউমার সংস্করণ দ্বারা সরবরাহ করা হচ্ছে এই চিরতাকে। সুতরাং বিশ্বস্ততার দিক থেকে আপনি কোনোভাবেই চিরতাকে অবমূল্যায়ন করতে পারবেন না। আর তাই চিরতার সাথেই হোক আমাদের সকল রোগের যুদ্ধ এবং দিনশেষে জিতে যাক মানুষের সুস্বাস্থ্য। ভালো থাকরে, সুস্থ থাকুন।ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url