ডুমুরের ১০টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম কি আপনার জানা আছে? যদি না জানা থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি ডুমুর সম্পর্কিত সকল তথ্য জেনে নিতে পারেন।
আজকে আমরা ডুমুরের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। আর তাই সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষায় ডুমুর সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ ডুমুরের ১০টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
- ডুমুরের কিছু কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
- ডুমুরের কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- ডুমুর ফল কি?
- ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম
- ডুমুর পাতার উপকারিতা
- ডুমুরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান
- ডুমুর খাওয়ার নানাবিধ উপায়
- প্রতিদিন আপনি কতটা ডুমুর খাবেন
- বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের দৃষ্টিতে ডুমুরের গুরুত্ব
- ডুমুর ফল রান্না করার নিয়ম
- ডুমুর দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক
- কাক ডুমুরের উপকারিতা
- ডুমুর ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- ১৪ ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া
ডুমুরের কিছু কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। সাধারণত অযত্ন আর অবহেলায় ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠে এই ডুমুর গাছ। ডুমুর ফল খেতে নরম ও মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হয় এই ডুমুর আপনি কাঁচা বা শুকনো দুইভাবেই খেতে পারেন। প্রচুর পুষ্টিগুণ এবং খনিজ পদার্থের ভরপুর এই ডুমুর আমাদের শরীরে নানান উপকারিতা বয়ে নিয়ে আসে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে ডুমুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কি কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
- ডুমুর হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখেঃ ট্রাইগ্লিসারাইড সাধারণত হৃদরোগের জন্য দায়ী।কারণ এটি আপনার রক্তনালীর মধ্যে জমাট সৃষ্টি করে যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত ডুমুর খান তাহলে এই ডুমুর আপনার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ হ্রাস করে। ফলে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
- ডুমুর ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত পরিমাণ ডুমুর খাওয়ার ফলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আবার ডুমুর ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনাকে ভাজা খাবার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রিত হয় এই ডুমুর খেলে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ডুমুরঃ ডুমুর আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সক্ষম। কারণ, ডুমুর পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি সোডিয়ামের প্রভাব কে নিয়ন্ত্রণ করে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- ডুমুর বার্ধক্য দূর করেঃ নিয়মিত ডুমুর খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে পর্যাপ্ত লোহা, ইস্ট্রোজেন ইত্যাদি সরবরাহ করে আপনার বয়সের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাছাড়া এটি আপনার শরীরের হরমোন গুলিকে পরীক্ষার মধ্যে রাখে এবং আপনার শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে দ্বিগুণ পরিমাণ ।ফলে বার্ধক্য আপনাকে আঁকড়ে ধরতে পারে না।
- ডুমুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ আপনি যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ডুমুর খান তাহলে এটি আপনার শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। কারণ, ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা র্যাডিকেল এবং ক্রনিক প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক। আর এই র্যাডিকেল ক্যান্সারে, হৃদরোগ এবং ডাইবেটিস সহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য অনেকটাই দায়ী।
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ডুমুরঃ ডুমুরে বিদ্যমান ক্লোরোজেনিক এসিড ডায়াবেটিক রক্তের শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- ডুমুর হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ একটু বয়স হলেই আমাদের অনেকেরই শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হয়। কারণ, বয়সের সাথে সাথে হাড়ও দুর্বল হয়ে যায়। আপনি যদি ডুমুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে এটি আপনার হাড়কে স্বাস্থ্যকর এবং মজবুত করে তুলবে।
- কারণ, হাড়কে স্বাস্থ্যকর মজবুত রাখতে প্রয়োজন হয় ক্যালসিয়াম। আর ডুমুর হলো ক্যালসিয়ামের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উৎস। বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হলেও তা যথেষ্ট নয়। ফলে ডুমুর ক্যালসিয়ামের একটি ভালো বিকল্প হিসেবে গণ্য হতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ডুমুরঃ ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আপনার অন্ত্রের বিপাক ক্রিয়া সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
- কিডনির পাথর প্রতিরোধেঃ ডুমুর আপনার কিডনির পাথর প্রতিরোধেও সক্ষম। এর জন্য আপনি কিছু ডুমুর জলে ফুটিয়ে নিন এবং সেই জলটি কিছুদিন ধরে পান করতে থাকুন। এই জল আপনার কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ রক্তে আয়রনের পরিমাণ কমে গেলে আমরা অনেকেই রক্তাল্পতা বা রক্তশূন্যতায় ভুগতে থাকি। রক্তাল্পতা থেকে রেহাই পেতে আপনি নিয়মিত ডুমুর খান। কারণ ডুমুর একটি আয়রন সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় এটি আপনার রক্তে আয়রন ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বকের যত্নে ডুমুরঃ ডুমুর শুধু ফল হিসেবেই নয় বরং এটি আপনার ত্বককেও ভালো রাখে। আপনি আপনার চর্মের বিবর্ণতা দূর করতে ডুমুর গাছের ছাল সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।এতে আপনার চর্মার বিবর্ণতা দূর হবে। আবার ডুমুরের পেস্ট মুখে মাখলে এটি আপনার ত্বকের ব্রণ প্রতিরোধেও সক্ষম।
- টিউমার প্রতিরোধে ডুমুরের ভূমিকাঃ ডুমুরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ক্যালরি থাকার কারণে এটি টিউমার এবং অন্যান্য অস্বাভাবিক শারীরিক কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধেঃ নিয়মিত ডুমুর খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রায স্বাভাবিক থাকে এবং ডায়াবেটিস স্বাভাবিকভাবেই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত ডুমুর খেলে এটি আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। কারণ, ডুমুরে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম দস্তা এবং ম্যাঙ্গানিজ যা উর্বরতা বজায় রাখে এবং শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে শরীরে পেস্টিস তরুণের পরিমাণ বাড়াতে ডুমুর ফল আপনি খেতেই পারেন।
- ফোড়া পাকাতে ডুমুরঃ অনেক সময় আমাদের শরীরে ফোড়া ওঠে এবং তাতে ভীষণ যন্ত্রণাদায় ব্যথা হয়। ফোড়ার এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে আপনি ডুমুর দুধের সাথে সিদ্ধ করে ফোড়ার উপর লাগান। আপনার ফোড়া দ্রুত পেটে ফেটে যাবে এবং আপনি যন্ত্রণা থেকেও রেহাই পাবেন।
- অপুষ্টি দূরীকরণেঃ শরীরের অপুষ্টি দূর করতে দিনে দু-একবার খাওয়ার পরে আপনি কাঁচা ডুমুরের রস সেবন করুন। এতে আপনার অপুষ্টি দূর হবে এবং ভালো ফল পাবেন।
- স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি রোধেঃ মহিলাদের সাধারণত মেনোপজের পর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, নিয়মিত ডুমুর খেলে এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- চুলের যত্নে ডুমুরের ভূমিকাঃ ডুমুরে বিদ্যমান জিংক এবং কপার যা আপনার চুল পড়া রোধে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাছাড়া জিংক নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে।
- চোখের যত্নে ডুমুরঃ ভিটামিন এ এর একটি প্রাকৃতিক উৎস হলো ডুমুর। ফলে নিয়মিত ডুমুর খেলে ভিটামিন এ আপনার চোখ সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারেন।
- অর্শ প্রতিরোধে ডুমুরঃ যারা অর্শ রোগে ভুগছেন ডুমুর তাদের জন্য হতে পারে একটি প্রাকৃতিক মহৌষধ। কারণ, ডুমুরের রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার বা আঁশ যা অর্শ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।
- অনিদ্রা দূরীকরণেঃ অনেকেই আছেন যারা অনিদ্র রোগে ভুগছেন। মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন রয়েছে যা আমাদের ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। আর ডুমুর হল অ্যামিনো এসিড ট্রিপটোফ্যান এর একটা প্রধান উৎস যা মেলাটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সক্ষম। ফলে নিয়মিত ডুমুর খেলে এই ট্রিপটোফ্যান মেলাটোনিন ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে এবং ঘুমও ভালো হয়।
- প্রস্রাবে বজ্র পদার্থ হ্রাসঃ ডুমরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি আপনার প্রস্রাবে বজ্র পদার্থের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
- পেটের বজ্র পদার্থ অপসারণঃ ডুমুর ফলের ভিতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছোট বীজ এবং এতে রয়েছে মিউসিন যা আপনার পেটের সমস্ত ময়লা একত্রে অপসারণ করতে সাহায্য করে।
- ক্ষুধা নিবারণে ডুমুরঃ ডুমুর ক্ষুধা নিবারণেও বেশ সহায়ক। আপনি ২-৩ টি শুকনো ডুমুর বা ১-২ টি পাকা ডুমুর খেলে আপনার ক্ষুধা তাৎক্ষণিকভাবে কমে আসবে।
- হাঁপানি প্রতিরোধেঃ আপনার যদি হাঁপানির মত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি ডুমুরের সাথে মেথি এবং মধু মিশিয়ে খান এতে আপনার হাঁপানি অনেকাংশে কমে যাবে।
সম্মানিত পাঠক, ডুমুরের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন। আশা রাখছি,এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি এখন থেকে নিশ্চয়ই ডুমুর খাওয়ার বিষয়ে সচেতন হবেন।
ডুমুরের কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ডুমুরের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। এর উপকারিতা থেকে অপকারিতা একেবারেই নগণ্য। তবু খাদ্য উপাদান হিসেবে প্রত্যেকটি খাবারেরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। সে হিসেবে ডুমুরেরও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তো চলুন ডুমুর খেলে আপনার কি কি অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
আরো পড়ুনঃ কেওড়া ফলের ১০টি কার্যকরী উপকারিতা
- অধিক পরিমাণে ডুমুর খেলে এটি আপনার পেট খারাপের কারণ হতে পারে।
- কিছু ঔষধের সাথে ডুমুর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ঔষধ সেবনরত অবস্থায় আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ডুমুর খাবেন।
- ডুমুর অনেক সময় আপনার রক্তকে পাতলা করে ফেলতে পারে। তাই কোন অস্ত্রোপচারের আগে ডুমুর না খাওয়াটাই আপনার জন্য ভালো।
- ডুমুরের আঠা বা কষে অনেকের আবার এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ডুমুর খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- ডুমুর মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি ফল হওয়ায় অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে নিয়ম করে পরিমাণ মতো ডুমুর খেলে তাতে কোন সমস্যা নেই।
- যারা ডায়েট করছেন তারা অধিক পরিমাণ ডুমুর খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কারণ, ডুমুরের মিষ্টি স্বাদ অনেক সময় আপনার শরীরে ওজন বাড়িয়ে দেয়।
- মাত্রাতিরিক্ত ডুমুর খেলে আপনার অন্ত্র এবং পেটে ব্যথার উদ্রেক হতে পারে।
- দীর্ঘদিন ধরে অধিক পরিমাণে ডুমুর ভক্ষণের ফলে এটি আপনার রেটিনার রক্তপাত, পায়ু পথ এবং যোনিপথের রক্তপাতের একটা কারণও হতে পারে।
- ডুমুর প্রাকৃতিক চিনি হিসেবে কাজ করে। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খেলে আপনার দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ডুমুরে থাকে প্রাকৃতিক ল্যাটিক্স যার ফলে কারো কারো এলার্জিও হতে পারে।
- শুকনো ডুমুরে চিনি ও ক্যালোরি বেশি থাকে যা ওজন বাড়ানো ও ডায়াবেটিস রোগীদের নানান সমস্যার কারণ হতে পারে।
- অধিক পরিমাণে ডুমুর ভক্ষণ আপনার লিভারের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, কোন কিছুই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের উচিত নয়। এতে আপনার শরীরের উপকারের পরিবর্তে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ডুমুর ফল কি?
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। এবার চলুন এই ফল সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিন। ডুমুর তুত পরিবারের উদ্ভিদ। এটি একটি ফল নরম এবং মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফল। ডুমুর ফলের আস্তরণ খুবই পাতলা হয় এবং এর ভেতরে অনেকগুলো ছোট ছোট বীজ থাকে। বাংলাদেশে বেশ কয়েক প্রজাতির ডুমুর ফল দেখতে পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে সচরাচর যে ডুমুর গুলো দেখতে পাওয়া যায় তা আকারে অনেকটা ছোট এবং খাওয়ারও অনুপযোগী। খাওয়ার অনুপযোগী এই ডুমুর ফল গুলো কাকডুমুর নামে পরিচিত। সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এই প্রজাতির কাজ বেশি জন্ম। এই কাক ডুমুরের গাছগুলো যেখানে সেখানে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠার কারণে আকারে ছোট হয়।
কাক ডুমুর মূলত পাখিরা খেয়ে থাকে এবং তাদের বিষ্ঠার মাধ্যমে যেখানে সেখানে এ গাছের বংশ বিস্তার হয়। এটি এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়াতেও পাওয়া যায়। অনিক অঞ্চলে এই ডুমুর তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। এই ডুমুর গাছের পাতা শিরীষ কাগজের মত খসখসে এবং এর ফল গাছের কাণ্ডের গায়ে থোকায় থোকায় জন্মে থাকে।
ডুমুর শুকনো এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। আবার কখনো বা ডুমুর ফল চাটনি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। জগডুমুর বা যজ্ঞডুমুর নামে আরেক প্রজাতির ডুমুর রয়েছে যার বৈজ্ঞানিক নাম হল Focus racemosa. এই জাতের ডুমুরটি আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রান্না করে খাওয়া হয়। তাছাড়া পিপল নামে আরেকটি ডুমুর জাতীয় গাছ রয়েছে বৈজ্ঞানিক নাম Focus religious এবং এর পাতার অগ্রভাগ সূচালো।
আবার মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্জির নামক একপ্রকার ডুমুর পাওয়া যায়, যার ফল আকারে বেশ বড় এবং মধ্যপ্রাচ্যে এটি একটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। এই আঞ্জির ডুমুর বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত। অঞ্জির ডুমুরের গাছ ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই প্রজাতি গুলো ছাড়াও ডুমুরের প্রায় ৮০০ প্রজাতি রয়েছে।
ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম
ডুমুর ফল খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। আমরা এমন অনেকে আছি যারা জানিনা ডুমুর কিভাবে খেতে হয়। ডুমুর ফল সাধারণত কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তো চলুন কাঁচা ডুমুর ফল কিভাবে খেতে হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা যায়--
কাঁচা ডুমুর খাওয়ার নিয়মঃ
- ডুমুর ফল শুকনো এবং কাঁচা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। টাটকা কাঁচা ডুমুর ফল পরিষ্কার করে ধুয়ে খেলে এটি আপনার পেটের আমাশয়ের জন্য উপকারী হবে। তবে এটি পর পর টানা তিন দিন নিয়মিত খেতে হবে।
- যাদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয় তারা যদি কাঁচা ডুমুর বেটে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন তাতে অনেক উপকার পাবেন । মনে রাখবেন, এটি নিয়মমাফিক খেতে হবে মাত্রাতিরিক্ত নয়।
- আপনাদের যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা সকাল সন্ধ্যায় একটি করে কাঁচা ডুমুর চিবিয়ে খাবেন এতে আপনার ডায়াবেটিসের মাত্রা অনেকটাই কমে যাবে। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে আপনি একটি বেশি ডুমুর খাবেন না।
- আপনারা যারা রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন ডুমুর রান্না করে অথবা কাঁচা খেতে পারেন। এতে আপনার রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর হবে ।
- কাঁচা ডুমুর অন্যান্য সবজির সাথে মিশিয়ে ভাজি করেও আপনি খেতে পারেন।
- ডুমুরের ভর্তা এবং ছোট মাছের সাথে ডুমুরের ঝোলের চচ্চড়ি একটি উপাদেয় খাবার।
শুকনো ডুমুর খাওয়ার নিয়মঃ
এবার চলুন শুকনো ডুমুর ফল আপনি কিভাবে খাবেন সে সম্পর্কে জানিয়ে দেই --
- ডুমুর খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি সম্পূর্ণ পাকা ডুমুর ফলটি ব্যবহার করুন। কারণ পাকা ডুমুর ফল আপনাকে মধুর স্বাদ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে।
- শুকনো ডুমুর আপনি অন্যান্য শুকনো ফলের সাথে ড্রাই ফ্রুটস হিসেবেও খেতে পারেন।
- শুকনো ডুমুর খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি এটি দুই টুকরো করে কেটে রাতের বেলা এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রাখবেন। পরের দিন সকালে ডুমুর ভেজানো জলসহ ডুমুর চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন নিয়ম মত খেলে অনেক উপকার পাবেন।
- ডুমুর ফল খাওয়ার সময় এর বীজগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ, ডুমুরের এই বীজ আপনার অন্ত্রের বিপাকক্রিয়ায় বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
- পুরুষের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সাথে এক চা চামচ মধু এবং কুচি কুচি ডুমুর একসাথে মিশিয়ে খেতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- বুকে জমা কফ এবং শুকনো খুশখুসে কাশি সারাতে আপনি শুকনো ডুমুর এবং এক গ্লাস দুধ গরম করে খেতে পারেন। এতে শুকনো কাশি দূর হয়ে যাবে।
- শুকনো ডুমুর নিয়মিত খেলে হার্টের সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়।
- আপনি ডুমুর শুকনো খান বা কাঁচা খান দুটোই আপনার শরীরের জন্য উপকারী। তবে ডায়েটের জন্য খেতে চাইলে শুকনো ডুমুর খাওয়াটাই অধিক কার্যকর।
ডুমুর পাতার উপকারিতা
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এতক্ষণ জানলাম। এই ফল খেলে শরীরের একাধিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি জানেন কি ডুমুর পাতাও একেবারে ফেলনা নয় । ডুমুর পাতাতেও রয়েছে নানাবিধ গুনাগুন । তাহলে চলুন ডুমুর পাতার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছি যা আপনার শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।
- ডুমুর পাতা সাধারণত চওড়া এবং আকারে বড় হয়ে থাকে। ডুমুরের পাতায় রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড এবং কপার। তাছাড়া ডুমুর পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে। সুতরাং ডুমুর পাতা খেলে আপনার মারাত্মক রোগের ঝুঁকে অনেকটাই কমে যায়
- যাদের হাড় দুর্বল তাদের ডুমুর পাতা খাওয়া উচিত। কারণ ডুমুর পাতা আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। ডুমুর পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম যা হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- আবার অ্যান্টি-এজিং গুনেও পরিপূর্ণ এই ডুমুর পাতা। ফলে এটি আপনার ত্বককে বলিরেখা হতে রক্ষা করে। তাছাড়া নিয়মিত ডুমুর পাতা ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
- ডুমুর পাতায় রয়েছে অমেগা৩ এবং অমেগা৬ যা আপনার হার্টের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে এবং আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
- ডুমুর পাতায় বিদ্যমান ব্যক্তির নামক দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় যা আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণ করতে বিশেষভাবে কার্যকর।
- অতিরিক্ত চা পান করার ফলে অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকেন। আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ডুমুর পাতা খান। কেননা ডুমুর পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার যা আপনার পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি ঘটায় এবং আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- ওজন কমাতেও ডুমুর পাতার চা বেশি কার্যকর। এতে রয়েছে ফাইবার যা ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
- শুধু তাই নয়, ডুমুর পাতার চা ডা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভীষণ উপকারী। নিয়মিত ডুমুর পাতার চা সেবনে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডুমুরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর আপনি এখন নিশ্চয়ই ডুমুর ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে চলুন ডুমুরের পুষ্টিগুণ আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরের পুষ্টিগুণ হল--
এছাড়াও ডুমুরে রয়েছে আরো কিছু পুস্টি উপাদান।যেমন--
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
শর্করা | ৭.৬ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২ গ্রাম |
আমিষ | ১.৩ গ্রাম |
আঁশ | ২.২ গ্রাম |
খনিজ পদার্থ | ০.৬ গ্রাম |
জলীয় অংশ | ১১. ৮৮ গ্রাম |
খাদ্য শক্তি | ৩৭ কিলো ক্যালরি |
ক্যালসিয়াম | ৮০ মিলিগ্রাম |
লৌহ | ১.১ মিলিগ্রাম |
ক্যারোটিন | ১৬২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.০৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ০.০৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৫ মিলিগ্রাম |
ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড
ফসফরাস
ম্যাঙ্গানিজ
কপার এবং
ম্যাগনেসিয়াম
ডুমুর খাওয়ার নানাবিধ উপায়
ডুমুরের উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া ছাড়াও আরও বিভিন্ন উপায়ে ডুমুর খেতে পারেন। তো চলুন আপনি কি কি উপায়ে ডুমুর খেতে পারবেন সে ব্যাপারে আপনাকে জানিয়ে দিই-
- আপনি ডুমুর কেটে এটি সালাদের সাথে ব্যবহার করে খেতে পারেন
- সূর্যের তাপে ডুমুর সুখে আপনি সারা বছর সংরক্ষণ করতে পারেন এবং এটিকে বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস এর সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
- আপনি ডুমুর ও দুধ দিয়ে শরবত বানিয়েও খেতে পারেন।
- বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে ডুমুর মিশিয়ে খেলে এটি ডুমুরের স্বাদ কে আরো দ্বিগুণ করে তোলে।
- বর্তমানে ডুমুর বাণিজ্যিকভাবে ইনস্ট্যান্ট কফি হিসেবেও পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিদিন আপনি কতটা ডুমুর খাবেন
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। যদিও ডুমুরের অনেক পুষ্টিগুণ উপকারিতা রয়েছে তবুও কোন কিছু অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছু খেলে সেটি আমাদের শরীরে উপকারের পরিবর্তে অপকারী ডেকে আনে। আর তাই ডুমুরের ক্ষেত্রেও আপনাকে নিয়ম মেনে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ ডুমুর প্রতিদিন খাওয়া উচিত।
আপনি প্রতিদিন ৩-৫ টা ডুমুর বা ৪০ গ্রাম ডুমুর খেতে পারেন। তবে আপনার শরীরের ধরন বয়স এবং রোগ ইত্যাদি অনুযায়ী ডুমুর খাওয়ার এই পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম ডুমুর খাওয়া আপনার জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাছাড়া আপনি রোজ কতটি ডুমুর খাবেনঅপর। অনেকটাই নির্ভর করবে আপনার স্বাস্থ্যর ওপর।
বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের দৃষ্টিতে ডুমুরের গুরুত্ব
ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম আপনাকে আমরা ইতিমধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। এবার চলুন বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে ডুমুরের গুরুত্ব কতখানি জা জানবেন--- ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিতে ডুমুর: পবিত্র কুরআনে সূরা সুরা আত-ত্বীনে ডুমুরের কথা বর্ণিত হয়েছে। ফলে ডুমুর কে বলা হয় বেহেস্তি ফল এবং কুরআনেও উল্লেখিত বিভিন্ন ফল যেমন জলপাই ,খেজুর, কলা এবং আঙ্গুরের মধ্যে ডুমুর ফলের বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া হাদিসে বর্ণিত রয়েছে আবু দারদার একবার দেখেছিলেন,
- প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে একজন ডুমুর হাদিয়া দিয়েছিলেন এবং নবী (সা :) সেই ডুমুর গুলোর সকলের মধ্যে ভাগ করে দিলেন এবং বললেন" ইহা খাও কারণ এই ফল অনেক রোগ নিরাময় করে"।
- বৌদ্ধ ধর্মীয় দৃষ্টিতে ডুমুর: বৌদ্ধ ধর্মেও ডুমুর গাছকে একটি পবিত্র গাছ হিসেবে মান্য করা হয়। কারণ গৌতম বুদ্ধ যে তরুতলে বসে দীক্ষা লাভ করেছিলেন তা ছিল একটি অশ্বথ গাছ এবং এটি ডুমুর জাতীয় একটি গাছ।
- খ্রিস্টান ধর্মীয় দৃষ্টিতে ডুমুর: বাইবেলে বর্ণিত রয়েছে ক্ষুধার্ত যীশু একটি ডুমুর গাছ দেখেন কিন্তু সেখানে কোন ফল ছিল না, হলে তিনি গাছটিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন।
- হিন্দু ধর্মীয় দৃষ্টিতে ডুমুর: হিন্দু ধর্মেও অশ্বত গাছকে গাছকে পবিত্র গাছ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ডুমুর ফল রান্না করার নিয়ম
ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। যারা ডুমুর ফলের সাথে খুব একটা পরিচিত নন, তারা অনেকেই জানেন না ডুমুর কিভাবে রান্না করতে হয়। ডুমুর ফল হিসেবে খাওয়া যায়, আবার এটি সবজি হিসেবেও রান্না করেও খাওয়া যায়। তো চলুন ডুমুর কিভাবে সবজি হিসেবে রান্না করে খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
- ডুমুর সবজি হিসেবে রান্না করার জন্য প্রথমেই আপনি আধা কেজি ডুমুর ভালো করে কুচি কুচি করে কেটে পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সাথে কিছু আলু টুকরো টুকরো করে কেটে নিন।
- ডুমুরের সামান্য কস থাকে এই কস দূর করতে আপনি পানির সাথে সামান্য হলুদ মিশিয়ে নিতে পারেন।
- এবার টুকরো করে কেটে রাখা আলুর সামান্য লবণ দিয়ে ভেজে নিন।
- অতঃপর একটি কড়াইতে আপনি সামান্য তেল, তেজপাতা দারুচিনি, এলাচ দিয়ে সামান্য গরম হলে তাতে মশলাসহ আলু ও ডুমুর একসাথে ঢেলে দিন এবং পরিমাণমতো পানি দিয়ে কষাতে থাকুন।
- ব্যাস, কসানোর পর সিদ্ধ হয়ে আসলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার সুস্বাদু ডুমুরের নিরামিষ সালুন। যা আপনি গরম ভাতের সাথেও পরিবেশন করে খেতে পারেন।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম ডুমুর ফল রান্না করার নিয়ম সম্পর্কে। উপরোক্ত নিয়মে আপনি ডুমুর খুব সহজেই রান্না করেও খেতে পারেন। তাছাড়া ডুমুর ফল কিভাবে খেতে হয় তার নিয়মও আপনি আজকের আলোচনা থেকে জেনে গেছেন।
ডুমুর দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা শুধু মাত্র স্বাস্থ্যগত নয়, বরং ত্বকের যত্নেও ডুমুর ফল বেশ কার্যকরী। অনেক সময় রোদে পুড়ে আমাদের ত্বকে বলিরেখা এবং কালো ছোপ দাগ পড়ে যায়। নিয়মিত ডুমুর ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের এই বলিরেখা দুর হতে পারে। তো চলুন ডুমুর দিয়ে কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করবেন তা জেনে নিন--
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- ডুমুর
- দই
- গোলাপজল এবং
- মধু
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার:
কিছু ডুমুর আপনি সারারাত পানিতে ভিজে রাখুন এবং সকালে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। ডুমুরের এই পেস্টে আপনি সামান্য দই ,গোলাপ জল এবং মধু ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সেটি আপনার মুখে লাগান। কিছুক্ষণ শুকানোর পর আপনার টক ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে নিয়মিত ডুমুর ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের ডার্ক সার্কেল যেমন দূর হবে তেমনি আপনার ত্বক হবে উজ্জ্বল। ডুমুরের এই ফেসপ্যাক ত্বকে যেকোনো ধরনের দাগ দূর করতে সক্ষম।
কাক ডুমুরের উপকারিতা
কাক ডুমুরের বৈজ্ঞানিক নাম Focus hispida,Moraceae. কাকডুমুর জংলি ডুমুর, বুনো ডুমুর, পাতি ডুমুর, খোকসা, খোকসা ডুমুর, গজ বহই, ইত্যাদি নামে পরিচিত। অনদরে অবহেলায় বনে জঙ্গলে কাক ডুমুরের গাছ জন্ম নেয় বিধায় কাক ডুমুরের ফল খাওয়ার অনুপযুক্ত এবং এর গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে থাকে।
অন্যান্য প্রজাতির ডুমুরের মত কাক ডুমুরের পাতা শিরিষ কাগজের মতো খসখসে হয় বলে একে খড়পত্রীয় বলা হয়। কাক ডুমুরেরও রয়েছে নানাবিধ উপকার। এবার চলুন কাক ডুমুরের উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক--
- কাকডুমুর সাধারণত রক্ত পরিষ্কারক এবং বমনকারক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এর ছালের ক্বাথ সোরিয়াসিস, জন্ডিস এবং রক্তপিতে বেশ উপকারী।
- জ্বর দূরীকরণে কাক ডুমুরের ছালের গুঁড়ো এক ১-২ গ্রাম মাত্রায় দিনে ৩-৪ বার খাওয়ালে এটি টনিকের কাজ করে।
- গ্রামাঞ্চলের দিকে সাধারণত কাক ডুমুরের গাছের খসখসে পাতা শিং মাছ মাগুর মাছ পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
ডুমুর ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
ডুমুর খেয়ে এর উপকারিতা পরিপূর্ণ রুপে পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনাকে ডুমুর খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। যেমন ধরুন-- আপনি যদি একেবারে প্রথমে ডুমুর ফল খান সেক্ষেত্রে আপনার উচিত ডুমুর ফলটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে খাওয়া। কেনন যদি ফলটি স্বাদগতভাবে একদম ঠিকঠাক হয় তাহলে অন্য ফলগুলিও খেতে পারবেন।
- ডুমুর ফল খাওয়ার সময় এর বীজগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা ডুমুরের এই বীজ আপনার অন্ত্রের বিপাকক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
- প্রচুর প্রাকৃতিক গুনসম্পন্ন এবং পুষ্টিকর ফল হল ডুমুর। তবে আপনার বিশেষ কোনো শারীরিক সমস্যা থেকে থাকলে আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই ডুমুর খাবেন
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া
ডুমুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমাদের আর্টিকেল থেকে বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। প্রাচীনকাল থেকেই ডুমুর ফল সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাছাড়া ডুমুরের নানারকম ওষধি গুনাগুনও রয়েছে।অনেকেই আছেন যারা সকালে খালি পেটে বাদাম এবং কিসমিস ভিজিয়ে খান। এই তালিকায় আপনি ডুমুরও যোগ করতে পারেন।
এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন ডুমুর ফল এবং পেতে থাকুন ডুমুরের সব উপকারিতা। এইরকম আরো তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে প্রতিনিয়ত চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url