এলাচের ১৫টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
এলাচের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? খালি পেটে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকে আমাদের এ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ এলাচের ১5টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
- এলাচ খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা
- এলাচের অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- এলাচ চিবিয়ে খাবার উপকারিতা
- রাতে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা
- এলাচের প্রয়োজনীয় পুষ্টমান
- এলাচ খাওয়ার নিয়ম
- কালো এলাচের উপকারিতা
- খালি পেটে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা
- এলাচ জলের উপকারিতা
- কিভাবে তৈরি করবেন এলাচ জল
- এলাচের নানাবিধ ব্যবহার
- এলাচ চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ
- এলাচ গাছের বৈশিষ্ট্য
- এলাচ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- এলাচের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া
এলাচ খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা
এলাচের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই।গরম মসলা বলতে আমরা যে সমস্ত মসলাগুলোকে বুঝে থাকি তার মধ্যে অন্যতম হলো এলাচ। এটি গরম মসলার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন পদের রান্নায় খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে এলাচের জুড়ি নেই। রান্নার ক্ষেত্রে এলাচ বহুল ব্যবহৃত হলেও এলাচের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে প্রথমে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি এলাচ খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে--
আরো পড়ুনঃ ডুমুরের ১০টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
এসিডিটির সমস্যা সমাধানে এলাচঃ যাদের গ্যাস অম্বল বা এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা এসিডিটি দূর করতে পারেন শুধুমাত্র একটি এলাচ। কারণ এলাচ আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে এবং হজমে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া পেটের যে কোন সমস্যা এবং বদহজমেও এলাচ বেশ কার্যকর। পেটের হজমের সমস্যা দূর করতে আপনি একটা গরম পানিতে একটি এলাচ থেতো করে পান করুন ।এতে দেখবেন আপনার বদহজমের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।
হাঁপানি ও হৃদরোগ প্রতিরোধে এলাচঃ নিয়মিত এলাচ খাওয়ার ফলে এটি আপনার হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং আপনার স্পন্দন স্বাভাবিক রাখে। ফলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। হৃদরোগের সমস্যা এড়াতে আপনি এলাচের গুড়োর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণে এলাচঃ অনেকের মুখে দুর্গন্ধ জনিত সমস্যা থাকে। ভালোভাবে টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করার পরেও দেখা যায় আপনার নিঃশ্বাসের সাথে একটা দুর্গন্ধ থেকেই যায়। আর মুখের এই দুর্গন্ধের কারণে আপনাকে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আপনি যদি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে চান তাহলে আপনাকে বলব একটি এলাচ মুখে নিয়ে চিবাতে থাকুন। তাতে দেখবেন আপনার মুখে যে দুর্গন্ধ ছিল তা একেবারেই দূর হয়ে গেছে। তাছাড়া এলাচ দাঁতের সুস্বাস্থ্যও বজায় রাখে।
এলাচ শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ যারা হুপিংকাশি এবং ফুসফুসের সংক্রমণের মত সমস্যায় আক্রান্ত তাদের জন্য এলাচ হতে পারে একটি মহৌষধ। শ্বাসকষ্ট দূর করতে আপনি মধু ,লেবুর রস এবং গরম পানির সাথে একটি এলাচ মিশিয়ে পান করুন। এভাবে নিয়মিত কিছুদিন খেলে আপনার শ্বাসকষ্ট দূর হবে এবং সেই সাথে হুপিংকাশিও দূরীভূত হবে।
এলাচ মাথা ব্যথা দূর করেঃ মাথা।ব্যথার সমস্যা আমাদের কম বেশি সকলেই রয়েছে। মাথাব্যথারই সমস্যা দূর করতে আপনি খেতে পারেন এলাচ চা। এর জন্য আপনি গরম পানিতে এলাচ গুঁড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি করে নিন এলাচ চা। এই এলাচ চা পান করার পর দেখবেন নিমিষেই আপনার মাথাব্যথা গায়েব হয়ে গেছে। মাথা ব্যথা ছাড়াও আপনার মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে এই এলাচ চা।
শরীরের চুলকানি প্রতিরোধে এলাচঃ অনেক সময় এলার্জির কারণে আমাদের শরীরে চুলকানির উদ্রেক হয়। এমনও হয় চুলকাতে চুলকাতে আক্রান্ত স্থান চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে। আপনি যদি চুলকানিতে ভুগে থাকেন তাহলে বড় এলাচ চন্দনের মত ঘষে লাগিয়ে এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ভালো উপকার পাবেন।
এলাচ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এলাচ বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি এলাচ, বেল ও দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে গরম করুন। দুধ গাঢ় হয়ে আসলে তা চুলার আঁচ থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে খেয়ে নিন। এভাবে কিছুদিন খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য অনায়াসেই দূর হবে।
রূপচর্চায় এলাচঃ এলাচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এ ভিটামিন সি ত্বকের সমস্যায় ভীষণ উপকারী। কারণ ভিটামিন সি আপনার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। আবার আপনার ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকলে এলাচ বেটে সেই দাগে নিয়মিত লাগাতে থাকুন। কিছুদিন পরে দেখবেন আপনার ত্বকের কালো দাগ নিমিষেই দূর হয়ে গেছে।
বেশি টান প্রতিরোধে এলাচঃ অনেক সময় হঠাৎ করে কোন ভারী জিনিস তুলতে গেলে আমাদের শরীরের কোথাও না কোথাও টান ধরে। এই সমস্যা দূর করতে ছোট বা বড় এলাচ গরম পানিতে গুলে ছেঁকে খেলে তৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়। আপনি যদি সপ্তাহখানে প্রতিদিন এইভাবে খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে আর বেশি টান দেখা দেবে না।
এলাচ শরীরের দুর্গন্ধ দূর করেঃ গরমে প্রচন্ড ঘামের কারণে আমাদের শরীরে মারাত্মক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এতে অনেক সময় আমাদের অবস্থাতেও পড়তে হয়। শরীরের এই দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি বড় এলাচ বেটে আপনার গায়ে মেখে কিছুক্ষণ পর স্নান করে ফেলুন। এতে আপনি শরীরের দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাবেন।
আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে এলাচঃ ছোট এলাচে রয়েছে আন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা খেলে আপনার শরীরে ইনফ্লেমেটরি মাত্রা কমে যায়। যার ফলে আর্থাইটিস এর মত সমস্যাও আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখে এলাচঃ এলাচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ। এই মিনারেল আপনার রক্তে চিনির মাত্রা কে ঠিক রাখে। ফলে আপনি যদি খাবারের সাথে অ্যালার্জি মিশে খান সেক্ষেত্রে আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক থাকবে।
পাকস্থলীর সমস্যা দূর করেঃ ভরপেট খাওয়ার পর আপনি যদি একটা এলাচ মুখে নিয়ে চিবাতে থাকেন এতে আপনার পাকস্থলীর অনেক সমস্যায় দূর হয়ে যাবে।
এলাচ হজমে সাহায্য করেঃ এলাচে বিদ্যমান ডিউরেটিক উপাদান যা আপনার দেহের ক্ষতিকারক টক্সিন অপসারণ করে হজমে সাহায্য করে। ফলে আপনার শরীর হয় ঝরঝরে এবং সতেজ। তাছাড়া বমি বমি ভাব এড়াতেও এলাচ ভীষণভাবে সাহায্য করে।
এলাচ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ এলা যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এলাচ খুবই উপকারী। উচ্চ রক্তচাপের এ সমস্যা দূর করতে আপনি স্যুপ এর সাথে এলাচ মিশিয়ে খান। এতে দ্রুত আপনার রক্তচাপ নিচে নামতে শুরু করবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে এলাচঃ এলার্ট ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে লড়াই করতে সক্ষম। শুধু তাই নয় নিয়মিত এলাচ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে টিউমার বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
এলাচ অনিদ্রা দূর করেঃ অনেকে আছেন যাদের দিনে প্রচুর কাজ করতে হয় কিন্তু রাতের বেলা ভালো ঘুম হয় না। আবার একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে তা আর আসতেই চায়না। আপনারা যারা এই অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা ঘুমানোর আগে প্রতিদিন রাতে নিয়মিত গরম জল দিয়ে এলাচ খান। এতে করে আপনার ঘুম ভালো হবে এবং অনিদ্রাজনিত সমস্যা ও দূর হবে।
ত্বকের যত্নে এলাচঃ এলাচ আপনার ত্বকে ব্রণ এবং কালচেভাব দূর করতে পারে। ব্রণ এবং ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে আপনি মধু ও এলার্জির প্যাক পানি সেটি মুখে লাগান। এতে আপনার ত্বকের ব্রণ এবং কালচেভাব দূর হবে। তাছাড়া এলাচ দিয়ে ঠোঁটের নানা রকমের বাম, গ্লস বা তেল তৈরি হয় যা আপনার ঠোঁটের গোলাপি ভাবকে বজায় রেখে কোমল ভাব ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে এলাচঃ এলার্জি বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার মাথার ত্বকের জন্য ভালো। এলাচের এই পুষ্টিকর উপাদান আপনার চুলের গোড়াকে যেমন মজবুত করে তেমনি চুলকে ঝলমলে লম্বা করতেও সাহায্য করে। শুধু তাই নয় এলাচ আপনার চুলের ফলিকলগুলিকেও মজবুত করে। ভালো ফল পেতে আপনি এলাচ ভেজানো পানিতে চুল ধুলে বা এলাচের গুঁড়ো চুলে লাগানোর পর শ্যাম্পু করে নিতে পারেন।
এলাচ এমন একটি মসলা যা যে কোন খাবারকে সুগন্ধি এবং দ্বিগুণ পরিমাণ সুস্বাদু করে তোলে। তাছাড়া রান্নার ক্ষেত্রে এলাচ ব্যবহার করা বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ।
এলাচের অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
এলাচের উপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষন আমরা জানলাম। কিন্তু আপনি জানেন কি এই এলাচের কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আর তাই এলাচ ব্যবহারের আগে এর অপকারিতা গুলোও আপনার জানা প্রয়োজন। তো চলুন এবার এলাচের অপকারিতা গুলো আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রেঃ এলাচের রয়েছে হাইপোটেন্সিভ বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ এটি আপনার রক্তচাপকে কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এলাচ উপকারী হতে পারে ,কিন্তু যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের এলাচ খাওয়ার আগে বিশেষ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ আপনারা অনেকেই আছেন যারা এলাচকে প্রাকৃতিক মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে ব্যবহার করেন। বলে রাখি, কিছু কিছু সময় এতে আপনার এলার্জির মত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া যেমন- চুলকানি ,মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এলাচ ব্যবহারের ফলে আপনি যদি এই সমস্যাগুলোর যেকোনো একটি বুঝতে পারেন, তাহলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এ ব্যাঘাতঃ মাত্রাতিরিক্ত এলাচ খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালার্ট সেবনের ফলে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে পেট খারাপ , পেট ফাঁপা,বদহজম এবং ডায়রিয়ার মতো উপসর্গগুলোও দেখা যায়। এলাচের অন্যতম প্রধান অপকারিতা বলতে গেলে এটিই। এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি পরিমিত পরিমাণে এলাচ খান।
আরো পড়ুনঃ কেওড়া ফলের ১০টি কার্যকরী উপকারিতা
হরমোনকে প্রভাবিত করেঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এলাচে ইস্ট্রোজেনিক প্রভাব থাকতে পারে, যা আপনার শরীরের হরমোনের মাত্রাকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাছাড়া স্তন বা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী যাদের হরমোন অত্যন্ত সংবেদনশীল হতে পারে ,তাদের সতর্কতার সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই এলাচ ব্যবহার করা উচিত।
বিভিন্ন ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়াঃ আপনি যদি ডায়াবেটিসের ওষুধ খান বা অন্য কোন ঔষধ খাচ্ছেন সেক্ষেত্রে এলাচ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই ব্যবহার করবেন ।কারন এলাচের মধ্যে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যা আপনার ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে এবং ঔষধের কার্যকারিতা কে গ্রাস করে দিতে পারে। এর ফলে আপনার শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
গর্ভপাতের সম্ভাবনাঃ গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত এলাচ সেবনের ফলে আপনার গর্ভপাতের মত দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। এমনিতেই গর্ভাবস্থায় খাদ্য বিষয় অনেক সচেতন থাকতে হয়। আপনি যদি গর্ব অবস্থায় অ্যালার্ট খেতে চান তাহলে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খাবেন।
কিডনিতে স্টোন বা পাথর সৃষ্টিঃ আপনাদের যাদের গলব্লাডার বা কিডনিতে স্টোনের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এলাচ ক্ষতিকারক হতে পারে। কারণ এলাচের বীজ এটি আপনার শরীরে পাথর সৃষ্টি করে জটিলতা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত এলাচ খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব হতে পারে। সাধারণত ঠান্ডা স্বাদযুক্ত ।আর তাই অতিরিক্ত সেবনে আপনার কাশিও হতে পারে। তাছাড়া কোন কোন কিছুই প্রয়োজন এর তুলনায় অতিরিক্ত খাওয়াটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই উপকারী নয়। তাই আপনি নিয়মিত নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণ এলাচ ব্যবহার করুন।
এলাচ চিবিয়ে খাবার উপকারিতা
এলাচ শুধু তরকারিতে মসলা হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না বরং এটি আপনি চিবিয়েও খেতে পারেন।চিবিয়ে এলাচ খাওয়ারও রয়েছে নানান উপকারিতা।এবার চলুন তাহলে আপনি চিবিয়ে খেলে কি কি উপকার পাবেন টা জেনে নিন --
- অনেকে আছেন যারা কথা বলার সময় মুখের দুর্গন্ধ বের হয়। টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করার পরেও মুখের গন্ধ দূর হতে চায় না বা নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। মুখের এই দুর্গন্ধ জনিত সমস্যা দূর করতে আপনি আজ থেকেই এলাচ চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে আপনার মুখের দুর্গন্ধ যেমন দূর হবে তেমনি আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধও আর থাকবে না।
- আপনাদের যাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে তাদের জন্য একটাই পরামর্শ আপনি নিয়মিত এলাচ চিবিয়ে খান।এতে আপনার দাঁতের সকল সমস্যা দূর হবে।
- আবার ,আপনি চায়ের সাথে মিশিয়েওও এলাচ খেতে পারেন কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি হাইপোলিপিডেমিক বৈশিষ্ট্য যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- আপনাদের যাদের হার্টের সমস্যা নেই, কিন্তু ভয় জনিত নানান সমস্যা রয়েছে। অর্থাৎ অল্পতেই ভয় পেয়ে যান মনের মধ্যে নানা রকম ভীতি কাজ করে ,উচ্চ শব্দে সমস্যা হয় ,অধিক উত্তেজনা সহ্য করতে পারেন না, তারা নিয়মিত প্রতিদিন দুবেলা দুটি করে এলাচ মুখে রেখে আস্তে আস্তে চিবিয়ে খাবেন। এতে আপনি ভালো ফল পাবেন এবং আপনার যে ভয় জনিত সমস্যা রয়েছে সেটিও দূর হবে।
- উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্নর রক্তচাপ উভয়েই রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার শারীরিক ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। এই উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কোন ঔষধের প্রয়োজন পড়ে না এজন্য আপনি কেবল নিয়মিত প্রতিদিন দুবেলা দুটি করে এলার্জি চিবিয়ে খেয়ে নেবেন। তাতে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রাতে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা
এলাচ আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই এলার্ট আপনি বিভিন্ন তরী তরকারিতে মসলা হিসেবে এবং চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। আবার রাতে ঘুমের আগে আপনি দুধের সাথে এলাচ মিশিয়েও খেতে পারেন। যদিও এই অভ্যাস আদৌ ঠিক কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নানান ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করেন দুধের সাথে এলাচ মিশিয়ে খেলে তাতে শরীরের কোন ক্ষতি তো নেই ই বরং এর উপকারিতা আরো বেশি।
কারণ রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে এলাচ মিশিয়ে খেলে তাতে নাকি ঘুম ভালো হয়।ফলে অনিদ্রা রোগের রোগীদের ক্ষেত্রে এই দুধ ,এলাচ মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া আজকাল জীবন যাত্রার নানা পরিবর্তনে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও অনেকটাই বেড়ে গেছে। এর ফলস্বরূপ অনেক পুরুষ যৌন সমস্যার মত সমস্যায় ভুগছেন। নিয়মিত এলাচ সেবনে পুরুষের এই যৌন সমস্যা দূর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন দুটি করে এলাচ খেলে পুরুষের শুক্রাণু সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
শুধু তাই নয়, পুরুষদের জন্য বিভিন্ন যৌন বর্ধক ঔষধ তৈরি হয়ে থাকে এই এলাচ থেকে। আবার আয়ুর্বেদ বলছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি কয়েক ফোটা অ্যালার্জির তেল পুরুষরা ব্যবহার করতে পারেন সে ক্ষেত্রে তাতেও পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই পুরুষরা নিজেদের যৌন জীবনকে সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন দুটো করে এলাচ খেতেই পারেন। সর্বোপরি, রাতে এলাচ খেলে এটি আপনার শরীরের মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে আপনার ক্ষুধামন্দাও দূর করে।
এলাচের প্রয়োজনীয় পুষ্টমান
এলাচের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এলাচের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে?রান্নার স্বাদ এবং সুঘ্রাণ বাড়াতে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই রান্নায় এলাচ ব্যবহারের চল চলে আসছে। চলুন এখন আমরা আপনাদের জানাবো এলাচের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-
এলাচের মধ্যে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হল:
- ফ্যাট
- কার্বোহাইড্রেট
- প্রোটিন
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- ক্যালরি
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- কপার
- ম্যাঙ্গানিজ
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- ফসফরাস
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- জিংক
- ফ্যাট
- থায়ামিন
- সোডিয়াম
- ক্যালোরি
- রিবোফ্লেভিন
- পাইরেডক্সিন এবং
- ইলেক্ট্রোলাইট।
এলাচ খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্নভাবে আমরা এলাচ ব্যবহার করে থাকি। এই এলাচ খাওয়ারও রয়েছে কিছু নিয়ম। যারা জানেন না এলাচ কিভাবে কোন নিয়মে কোন নিয়মে খেতে হয় চলুন জানিয়ে দিচ্ছি আপনি এলাচ কিভাবে খাবেন--
প্রথমতঃ এক কাপ গরম জলে একটি এলাচ থেতো করে নিয়ে কিছুক্ষণ ফেলে রাখার পর সেই জল পান করুন ।এতে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে বধু তুমি সমস্যা দূর হবে।
দ্বিতীয়তঃ লেবুর রস মধু এবং গরম জলের সঙ্গে একটা এলাচ ভালো করে মিশিয়ে পান করলে আপনার শ্বাসকষ্ট দূর হবে। যারা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছেন তারা এইভাবে এলাচ খেলে ভালো উপকার পাবেন।
তৃতীয়তঃ মধু এবং এলাচ একসাথে মিশিয়ে খেলে এটি হৃদরোগের জন্য বেশ ভালো কাজ করে।
চতুর্থতঃ মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে আপনি এলাচ সরাসরি চিবিয়েও খেতে পারেন। আবার যে কোন খাবার বা সবজি রান্নার সময় তাতে এলাচ দানা যোগ করেও খেতে পারেনা।
পঞ্চমতঃ প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর এই এলাচ ।তাই সর্দি কাশিজনিত সমস্যাতে এলাচ খেলে আপনি পাবেন সুফল। যাদের ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে এলার্ট খেলে ভালো উপকার পাবেন।
উপরিউক্ত পদ্ধতিতে নিয়ম মেনে আপনি যদি এলাচ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন তাতে বিভিন্ন প্রকার রোগ ব্যাধি থেকে নিজেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারবেন।
কালো এলাচের উপকারিতা
আমরা কমবেশি সকলেই সাদা এলাচের সাথেই বেশি পরিচিত। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন সাদা ও কালো দুই এলাচের মধ্যে কোন এলাচের উপকারিতা সবথেকে বেশি? পুষ্টিবিদরা বলছেন এই দুই ধরনের এলাচেই রয়েছে হাজারো গুনাগুন তবে কালো এলাচের উপকারিতা একটু বেশি সাদা এলাচের থেকে। যার উপকারিতা জানলে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। তাহলে চলুন, এবার আপনাকে জানিয়ে দেব কালো এলাচের উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে--
- আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, কালো এলাচ পিত্তকে প্রশমিত করে। আবার কেউ যদি অনিদ্রা সমস্যায় ভোগেন কিংবা খাবারের প্রতি রুচি কমে যায় সেক্ষেত্রে কালো এলাচ বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- হার্ট কিংবা লিভারের সুস্থতায়ও কালো এলাচ বেশ সহায়ক।
- আপনার পেটে হজমের সমস্যা থাকলে বা বদহজম ,পেট ফাঁপা ইত্যাদি হলে কালো এলাচ খেতে পারেন। এতে আপনার হজমের সমস্যা দূর হবে।
- আপনি আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কিংবা ক্ষুধা বাড়াতে চিবাতে হতে পারেন এই কালো এলাচ।
- মাথাব্যথা দূর করতে কালো এলাচের খোসা পেটে আপনি যদি কপালে লাগান তাহলে আপনার মাথা ব্যথা সেরে যাবে।
- তাছাড়া আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ,মুখের ঘা সারাতে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে এবং দাঁতের ব্যথা দূর করতেও এই কালো এলাচের ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে।
- আমাশয় বা কলেরা রোগে আপনি যদি ১ গ্রাম কালো এলাচের গুঁড়ো সেবন করেন তাতে বিশেষ উপকার পাবেন।
- আপনার হঠাৎ বমি বমি ভাব হলে দুইটি কালো এলাচ আর কিছু পুদিনা পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি একটু একটু করে খেতে পারেন। এতে আপনার বমি বমি ভাব দূর হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে যেমন- কুষ্ঠ রোগ, লিভার ডিসঅর্ডার, কিডনির সমস্যা, আলসারের মতো চিকিৎসা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, এমনকি সৌন্দর্য বর্ধক রূপেও কালো এলাচের বহুল ব্যবহারিত হয়।
খালি পেটে এলাচ খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটেও এলাচ খাওয়ার রয়েছে নানান উপকারিতা। আমাদের প্রায় সকলেরই রান্নাঘরেই থাকে এই ছোট্ট এলাচ। রান্না ছাড়াও নিয়মিত খালি পেটে একটি করে এলাচ খেলে আপনার শরীরের নানা রকম সমস্যা সমাধান হতে পারে। এবার চলুন খালি পেটে এলাচ খাবার উপকারিতা কি তা জেনে নেওয়া যাক--
- যাদের ত্বকের বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে এলাচ ভেজানো জল খান ।এতে আপনার ত্বক টানটান হবে এবং ত্বকের বলিরেখাও কমে যাবে।
- প্রতিদিন খালি পেটে আপনার রক্তের ঘনত্ব ঠিক থাকে কারণ এলাচ রক্ত সঞ্চালনেও বেশ সহায়ক।
- রোজ সকালে খালি পেটে একটি করে এলাচ খেলে এটি আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় ও রাখতেও সাহায্য করে।
- নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এলাচ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের ক্ষতিকর টক্সিনও দূর করতে পারে।
- প্রচুর পরিমাণ এন্টি এক্সিডেন্টে ভরপুর এই এলাচ। সর্দি-কাশি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এলাচ বেশ উপকারী নিয়মিত এলাচ খেলে আপনি
- খালি পেটে এলাচ খেলে এটি আপনার ওজন কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। বিশেষভাবে এলাচ ভেজানো জল এক্ষেত্রে বেশি উপকারী।
- ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত খালি পেটে এলাচ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।এতে আপনার ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি আজ থেকেই শুরু করুন খালি পেটে এলাচ খাওয়া এবং বিভিন্ন সংক্রমক ব্যাধি থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
এলাচ জলের উপকারিতা
গোটা এলাচ চিবিয়ে খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় ,তেমনি এলাচ ভেজানো জলেরও রয়েছে আশ্চর্যজনক কিছু উপকারিতা । ওজন কমানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই এলাচ ভেজানো জল। এবার জেনে নিন এলাচ ভেজানো জল খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন--
- যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে এলাচ ভেজানো জল খেতে পারেন। কেননা এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে এই জল খেলে আপনি উপকার পাবেন।
- এলাচ ভেজানো জল খেলে এটি আপনার রক্ত জমাট বাধার সমস্যা কিছুটা প্রশমিত করতে পারে এবং সেই সাথে রক্ত সঞ্চালনের গতিকেও বাড়িয়ে দিতে পারে।
- প্রতিদিন সকালে এলাচ ভেজানো জল খেলে এটি আপনার যেমনওজন কমাতে সাহায্য করে তেমনি এলাচ ভেজানো জল আপনার শরীরের দূষিত পদার্থও অপসারণ করে।
- দাঁতের গোড়ার নানা রকম সংক্রমণ দূর হয় এই এলাচ ভেজানো জল খেলে।
- যাদের ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে তারা আজ থেকেই নিয়মিত এলাচ ভেজানো জল খাওয়া শুরু করুন। কারণ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এলাচ ভেজানো জল খেলে এতে আপনার ত্বক টান টান হবে এবং ত্বকের বলিরেখাও হ্রাস পাবে।
- হ্যালো ভেজানো জল আপনার হজম ক্ষমতাকে বাড়ি দিতে পারে দ্বিগুণ পরিমাণে।ফলে পেটের সমস্যা থেকে আপনি পরিত্রাণ পেতে পারেন।
- শীতকালে অনেকেরই শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বেড়ে যায়। এই শ্বাসকষ্ট থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিতে পারে এলাচ ভেজানো জল।
- প্রতিদিন নিয়ম করে এলাচ ভেজানো জল খেলে এটি আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। কারণ এলাচের সুগন্ধ মস্তিষ্ককে সতেজ ও শান্ত রাখে। ফলে এলাচ জল খেলে আপনার স্মৃতিশক্তি যেমন বাড়ি তেমনি ডিপ্রেশনও দূর হয়।
- নিয়মিত এলাচ ভেজানো জল খেলে চুলের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। কারণ এলাচ চুলের সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে কাজ করে।
কিভাবে তৈরি করবেন এলাচ জল
এলাচ জল তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনি একটু পরিষ্কার গ্লাস নেবেন। আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস জলে ৭-৮ টির মতো এলাচ ভিজিয়ে রাখুন। অতঃপর, পরের দিন সকালে এলাচ ভেজানো জল ছেঁকে খালি পেটে পান করুন। ভেজানো এলাচ গুলো আপনি ফেলে না দিয়ে রান্নার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারেন।এভাবে নিয়ম করে প্রতিদিন আপনি যদি এলাচ ভেজানো জল খেতে পারেন ,তাহলে নানারকম সংক্রামক ব্যাধি থেকে খুব সহজেই রেহাই পাবেন।
এলাচের নানাবিধ ব্যবহার
আমাদের দেশে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে রান্না ,পানীয় এবং ঔষধি হিসেবে। এবার চলুন এলাচের নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই --
- চা বা কফি তৈরিতে এলাচ ব্যবহৃত হয়। চা বা কফির সাথে এলাচ ব্যবহার করলে এটি পানীয়কে যেমন সুগন্ধি করে তোলে তেমনি এর স্বাদকেও দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়
- বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন বিরিয়ানি, কারি, ডেজার্ট ইত্যাদিতে এলাচ ব্যবহৃত হয়। এতে এলাচ ব্যবহারে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ উন্নত হয়।
- মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাবার যেমন পায়েস, রসগোল্লা , চমচম প্রভৃতিতে এলাচ ব্যবহৃত হয়।
- মধ্যপ্রাচ্যের রন্ধন প্রণালীতেও এলাচ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে যেখানে কফি এবং চায়ের স্বাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই এলাচ।
- আয়ুর্বেদিক ঔষধে এ মূত্রনালী রোগের চিকিৎসায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয় এলাচ।
- এলাচ বিভিন্ন মসলা মিশ্রণের অংশ হিসেবেও বহুল ব্যবহৃত হয় যেমন- গরম মসলা। এটি খাবারের ফ্লেভার এবং স্বাদ উভয় বাড়াতে সাহায্য করে।
- চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এলাচ বেশ কার্যকর। এর জন্য আপনি এলাচের চা বানিয়ে সেই চা আপনার মাথায় মেসেজ করলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে এবং সেই সাথে খুশকির সমস্যাও দূর হবে।
এলাচ চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ
এলাচের ইংরেজি নাম হল "Cardamom". এলাচ গাছ সাধারণত ভেজা এবং স্যাতসেতে জায়গায় ভালো জন্মে থাকে। আমাদের দেশে যেহেতু বৃষ্টি কম হয় তাই এলাচ গাছ তেমন বেড়েও ওঠে না। এলাচ সাধারণত বেশিরভাগ চাষ করা হয় ভারত শ্রীলংকা এবং গুয়াতেমালায়। এলাচের ফল পরিপক্ক হওয়ার ঠিক আগে ডালপালা থেকে বাছাই করা হয় এবং কেটে পরিষ্কার করা হয়।
অতঃপর পরিষ্কারকৃত এলাচ রোদে শুকানো হয়। আবার,জ্বলন্ত সালফারের ধোয়ায় এই এলাচ কৃমি সাদা রঙ্গেও ব্লিচ করা যেতে পারে। সবশেষে নিরাময় এবং শুকানোর পরে ক্যাপসুল গুলির ছোট ডালপালা উইনো করে মুছে দেয়া হয়। এই সজ্জিত এলাচ ভূষিযুক্ত শুকনো বীজ নিয়ে গঠিত।
এলাচ গাছের বৈশিষ্ট্য
এলাচ গাছ দেখতে অনেকটা আদা গাছের মতো। এই গাছের গোড়ার দিক থেকে লম্বা ফুলের স্টিক বের হয়। গাছের পাতার কান্ড সাধারণত শাখা-প্রশাখা থেকে ১.৫-৬ মিটার পর্যন্ত ওপরে ওঠে। এর ফুলের অঙ্কুর প্রায়১ মিটার লম্বা সোজা বা বিস্তৃত হতে পারে। এলাচ এর প্রতিটি ফুলে প্রায় ৫ সেমি ব্যাসের সবুজ পাপড়ি থাকে এবং একটি বেগুনি শিরাযুক্ত সাদা ঠোঁট সহ অসংখ্য ফুল বহন করে।
এলাচ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
এলাচ খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণ মেনে চলা উচিত। কারণ মাত্রাতিরিক্ত কোনো কিছুই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
- আপনি প্রতিদিন ১-২ টি এলাচ খেতে পারেন। এর বেশি পরিমাণ গ্রহণ করলে আপনার পেটে সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আর তাই পরিমিত পরিমাণে এলাচ গ্রহণ করাটাই শ্রেয়।
- গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানো শিশু এবং মহিলাদের পক্ষে এলাচ খাওয়া উপযুক্ত নাও হতে পারে।
- আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোন মেডিকেল কোর্সের ভেতর দিয়ে যান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এলাচ খাবেন
সুতরাং আপনি যা কিছু খাবেন পরিমাণ মত খাবেন এবং আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোন কিছু খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এলাচের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া
এলাচের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের আর্টিকেল পড়ে জানতে পেরেছেন এবং আশা করছি এলাচ সম্পর্কে আপনাদের বাস্তবিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান আরো বৃদ্ধি পাবে। এই এলাচের রয়েছে ননাবিধ উপকারিতা এবং ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। আমাদের দৈনন্দিন রান্নার এক অপরিহার্য উপাদান হলো এই এলাচ। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই এলাচ বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবেও কাজ করে।
দেখতে ক্ষুদ্র এই এলাচ মসলাকে তার বিশদ গুনাগুনের জন্য মসলার রানী নামেও আখ্যায়িত করা হয়। তবে এলাচ ব্যবহারের পূর্বে এর সঠিক ব্যবহার এবং পরিমাণ নির্ণয় করাটা ভীষণ জরুরী। যারা এলাচ ফিতে অভ্যস্ত নন, তারা এলাচ খাওয়ার আগে এর অপকারিতা সম্পর্কে অবহিত হবেন এবং প্রয়োজনে একজন পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url