হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম জানতে চান? হাতিশুর গাছের পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? যদি না থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন হাতিশুঁর গাছের শিকড় কিভাবে কখন খেতে হয় এবং হাতিশুরের পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন এই গাছ আপনি কোথায় পাবেন। তাহলে চলুন, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
পোস্ট সূচিপত্র: হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
- হাতিশুর গাছের শিকড় খাবেন যেভাবে
- হাতিশুর গাছের পাতার উপকারিতা
- হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা
- হাতিশুঁড় গাছের বৈশিষ্ট্য
- হাতিশুঁড় গাছের বৈজ্ঞানিক নাম
- হাতিশুঁড় গাছের ব্যবহারিত অংশ
- হাতিশুঁড় গাছের শিকড় কখন খাবেন
- যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
- হাতিশুঁড় গাছের ফুল খাওয়ার কারণ
- হাতিশুঁড় গাছের অপকারিতা
- হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমার মন্তব্য
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাবেন যেভাবে
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। সম্মানিত পাঠক, আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই উপকারী এই ভেষজের মুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
- হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি বয়স্ক হাতিশুর গাছ নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ গাছে ফুল হয়েছে এবং পাতা সামান্য হলুদাভ এমন একটি পূর্ণবয়স্ক হাতিশুর গাছ সংগ্রহ করুন।
- হাতিশুর গাছ সংগ্রহ করা হয়ে গেলে এর মূল বা শিকড় আপনি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিবেন।
- হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার জন্য আপনার তিনটি উপকরণ প্রয়োজন হবে যেমন- হাতিশুর গাছ, মধু ,পান এবং কালোজিরা।
- অতঃপর হাতিশুর গাছের এক ইঞ্চি পরিমাণ শিকড় আপনি কেটে নিবেন। এই কর্তনকৃত শিকড়টি এবং কালোজিরা আপনি একটি পানের ভেতরে নিয়ে যেভাবে পান ভাজ করে খেতে হয় ঠিক সেভাবে খেয়ে ফেলবেন।
- মনে রাখবেন, এক্ষেত্রে হাতিশুর গাছের শিকড় টি যেন অবশ্যই এক ইঞ্চি সাইজের হয়।
- এই ওষুধটি আপনি যদি ঘুমানোর ১ ঘন্টা আগে খান তাতে ভালো উপকার পাবেন। আর প্রতিদিন রাতে যদি একবার করে খেতে পারেন তাহলে এক সপ্তাহ পর আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।
- আপনাকে প্রতিদিন সকালে উঠে ২৫০ গ্রাম প্রথমে পানি খেতে হবে। তারপর হাতিশুর গাছের মূল অর্থাৎ শিকড় 2 ইঞ্চি পরিমাণ নিয়ে মধুর সাথে মিক্স করে চিবিয়ে রস খেয়ে ফেলবেন।
- এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে, হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার আগে সকালে অবশ্যই আপনাকে ২৫০ গ্রাম পানি খেতে হবে এবং তারপরেই হাতিশুরের শিকড় খাবেন। বলে রাখি, হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার খাওয়ার ১ ঘন্টার ভেতরে আর কোন কিছুই আপনি খাবেন না।
- আর আপনাকে অবশ্যই এটি সকালে খাওয়ার কথা বলছি কারন এটি খালি পেটে খেতে হয়। যদি আপনার হাতের নাগালে মধু না থাকে তাহলে আপনি শুধুমাত্র ২ ইঞ্চি পরিমাণ হাতিশুরের শিকড় চিবিয়ে রস খেয়ে এর ছোবা ফেলে দিবেন।
- এভাবে আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে হাতিশুর গাছের শিকড় খেতে পারেন তাহলে আপনার যৌন সমস্যা অচিরেই দূর হয়ে যাবে।
হাতিশুর গাছের পাতার উপকারিতা
হাতিশুর গাছের পাতারও নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন হাতিশুর গাছের শুধু শিকড়ই উপকারী। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। এবার চলুন উপকারী এই ভেষজের পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিন-
- আপনার শরীরে যদি বিষাক্ত কোন কীটপতঙ্গ যেমন- মৌমাছি, ভিমরুল দংশন করে তাহলে ক্ষতস্থান ফুলে যায় এবং প্রচন্ড জ্বালাপোড়ার উদ্রেগ হয় । তাই বিষাক্ত কোন পোকামাকড় কামড়ালে সেই স্থান ফুলে গেলে আপনি যদি ক্ষতস্থানে হাতিশুর গাছের পাতা পেটে এর রস লাগান তাহলে দ্রুত আপনার জ্বালা পোড়ার উপশম হবে।
- আপনার শরীরের কোন আঘাত জনিত ফোলা থাকলে আপনি যদি সেখানে হাতিশুর গাছের পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগান তাহলে ফোলা এবং ব্যথা উভয়ই কমে যাবে।
- ঠান্ডা লেগে হাত পায়ের গাট ফুলে গেলে বা বাগী ফোলা অর্থাৎ উরু এবং তলপেটের মাঝখানে কুচকির ডান ও বাম দিকে যে কোন দিকে ফুলে গেলে হাতিশুর গাছের পাতা পেটে হালকা গরম করে আক্রান্ত জায়গায় লাগালে আপনার ফোলা এবং ব্যথা কমে যাবে।
- অনেক সময় আমাদের শরীরে ছত্রাক জনিত বা ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমনের লাল লাল চাকা চাকা দাগের সৃষ্টি হয়। এইসব দাগ নিরাময় হাতিশুর কাছে পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
- হাতিশুর গাছের পাতা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- হাতিশুরের পাতা আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- আপনার মুখের আলসার দূর করতে সাহায্য করে এই হাতিশুর গাছের পাতার রস।
- কোন কারনে আপনার চোখ যদি টকটকে লাল হয়ে যায় বা চোখের ভেতর করকর করছে এমন মনে হয় সেক্ষেত্রে হাতিশুর গাছের পাতার রস দারুন কার্যকর।
- আপনার সর্দি লাগলে আপনি যদি এই হাতিশুর গাছের পাতা ছেচে ২ চামচ পরিমাণ রস খেতে পারেন তবে আপনার সর্দি সেরে যাবে।
- একজিমা থেকে মুক্তি পেতে আপনি হাতিশুর গাছের পাতা থেতলে আক্রান্ত স্থানে কিছুদিন লাগালে আপনার একজিমা সেরে যাবে।
- টাইফয়েড রোগে হাতিশুর গাছের পাতা হতে পারে একটি কার্যকরী চিরস্থায়ী সমাধান। এর পাতার রস হালকা গরম করে পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড ভালো হয়ে যায়।
- আপনাদের যাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং ব্যথা করে তারা যদি হাতিশুর গাছের মূল চিবাতে পারেন তাহলে দাঁতের মাড়ি ফোলা কমে যাবে এবং সেই সাথে ব্যথাও হ্রাস পাবে।
- আপনার মুখে ব্রণ হলে বা এর দাগ হয়ে গেলে আপনি হাতিশুর গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেতো করে দুপুরে গোসল করতে যাবার ঠিক ১ ঘণ্টা আগে আপনি যদি ব্রনের উপর প্রলেপ দিতে পারেন। তাহলে আপনার ব্রণ সেরে যাবে এবং নতুন করে আর ব্রণও উঠবে না।
- আপনার যদি রিউম্যাটিক বাতের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি রেডির তেলের সঙ্গে হাতিশুর পাতার রস মিশিয়ে প্যাক করে গাট এ লাগাবেন। এতে করে আপনার বাতের ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
- ফ্যারিনজাইটিস রোগের ক্ষেত্রে হাতিশুর পাতার রস অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করলে এই রোগ সেরে যায়।
- তাছাড়া জ্বর কাশিতে এ গাছের মূল পানির সঙ্গে ফুটিয়ে ক্বাথ তৈরি করে ব্যবহার করা হয়।
- হাতিশুর গাছের পাতা আপনার চুলের গোড়াকে শক্ত করতে এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
- আপনার প্রস্রাব শেষে যদি জ্বালাপোড়া হয় বা প্রস্রাব বেরোনোর সময় জ্বালাপোড়া করে সেক্ষেত্রে হাতিশুর গাছের পাতার রস হতে পারে আপনার জন্য উপদেয় মহা ঔষধ। কারণ, হাতিশুর গাছের পাতা ভালো করে বেটে এর রসটুকু নিয়ে যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার মূত্রথলির সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা
হাতিশুর গাছের শিকড় আপনি কিভাবে খাবেন তা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো হাতিশুর গাছের শিকড়ের কি কি উপকারিতা রয়েছে। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় হাতিশুর গাছের শিকড় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাহলে চলুন হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিই --
- আপনার চোখ যদি কোন কারনে ফুলে যায় অথবা টকটকে লাল হয়ে যায় আপনি সকাল সন্ধ্যা যদি হাতিশুর গাছের শিকড় চিবাতে পারেন। তাহলে আপনার চোখের এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে আশা করা যায়।
- আপনার জ্বর বা ঠান্ডা লেগে থাকলে আপনি হাতিশুর গাছের শিকড়ের সাথে যদি পানি ফুটিয়ে খান তাহলে অনেকটাই উপকার পাবেন।
- আপনার অত্যধিক পরিমাণে যদি কাশি কাশি হয় সে ক্ষেত্রে আপনি হাতিশুর গাছের পাতার রস বের করে খেতে পারেন। এতে অনেকটাই আরাম অনুভব করবেন এবং কাশির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
- হাতিশুর গাছের শিকড় আপনার লিভারের কার্যক্ষমতা কে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে হাতিশুর গাছ হতে পারে তাদের জন্য একটা আদর্শ ভেষজ ঔষধ। কারণ, হাতিশুর গাছের শিকড় আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে আপনার ডায়াবেটিস ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- হাতিশুর গাছের শিকড় বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যা গ্যাস অম্বল এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা সমাধানেও বেশ কার্যকর।
- হাতিশুর গাছের পাতা ও মূত্রের রস আপনার মূত্রনালীর ইনফেকশন এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- ঘরের পোকামাকড় দূর করতে হাতিশুর পাতা ব্যবহৃত হয়।
- এই হাতিশুর গাছের পাতা এবং মূলের রস যৌন শক্তি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- কিডনিতে পাথর হলে সেই পাথর অপসারণে হাতিশুর গাছের শিকড় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- হাতিশুর গাছের শিকড় আপনার ধাতু ক্ষয় রোধে সাহায্য করে।
- হাতিশুর গাছের শিকড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
তাছাড়া হাতিশুর গাছের শিকড়ে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধের গুণ। আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে হাতিশুর গাছের শিকড় খেতে পারেন তাহলে ক্যান্সারের হাত থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
হাতিশুর গাছের বৈশিষ্ট্য
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। অনেকেই আছেন যারা হাতিশুর গাছ কখনোই দেখেন নি। সাধারনত গ্রাম অঞ্চলের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন জায়গায় হাতিশুর গাছ দেখতে পাওয়া গেলেও শহরাঞ্চলে খুব একটা চোখে পড়ে না। তাহলে চলুন হাতিশুর গাছ দেখতে কেমন হয় তা জেনে নিন--
- পাতাঃ হাতিশুর গাছের পাতা ডিম্বাকৃতি সবুজ রঙের । এটি লম্বায় ৫-১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ৩-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। হাতিশুর গাছের পাতার কিনারা তরঙ্গায়িত হয় এবং পাতার ওপরে খসখসে কাটার মত লোম থাকে।
- ফুলঃ হাতিশুর গাছের ফুল ছোট সাদা বর্ণের এবং ঝাকড়া অবস্থায় থাকে।
- ফলঃ হাতিশুর গাছের ফল সামান্য বাদামি বর্ণের গোলাকার এবং লম্বায় পাঁচ থেকে সাত মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- কান্ডঃ হাতিশুর গাছের কান্ড সাধারণত লতানো হয় এবং লম্বায় দুই থেকে তিন মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
- বীজঃ এর বীজ ছোট এবং কালো বর্ণের।
হাতিশুঁড় গাছের বৈজ্ঞানিক নাম
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। হাতিশুর একটি ভেষজ এক বর্ষজীবী ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এই গাছের বাঁকানো পুষ্প দন্ডে ফুটে থাকে সাদা সাদা ফুল। হাতির দাঁতের মতো শুভ্র এই ফুলগুলো দেখতে বলে এর নাম হাতিশুর। হাতিশুর গাছের সংস্কৃত নাম হল শ্রী হস্তিনী।
তাছাড়া হাতিশুর গাছকে হাতিশুরি, হাতিশুন্দি , মহাশুন্ডি, হস্তিশুন্ডি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়ে থাকে। গাছটি সাধারণত আগাছার সাথে এখানে সেখানে আনাচে-কানাচে জন্মায় বলে সাধারণত সর্ব সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় না। হাতিশুর গাছ মোটামুটি এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং এর কান্ড ফাঁপা নরম বিশিষ্ট।
এই গাছের সারা দেহে ছোট ছোট রোম রয়েছে। গাছের উপরের দিকের কান্ড চৌক এবং নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত গোলাকার। হাতিশুর গাছের পাতা খসখসে এবং আঙ্গুল দিয়ে ঘষলে বেশ উটকো গন্ধ পাওয়া যায়। হাতিশুর গাছের ডালের নিচের দিকের পাতাগুলো সাধারণত বড় এবং পত্র বৃন্ত লম্বা হয়। এই বড় পাতা গুলো দেখতে আবার অনেকটা বর্শার ফলার মত।
এরপত্র দন্ডে ছোট ছোট ফুলগুলি দুই সারিতে সাজানো থাকে এবং ফুলগুলো শ্বেত শুভ্র। সাধারণত হাতিশুর গাছে সারা বছরই ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুল ফুটতে দেখা যায়। হাতিশুর গাছে ইউডিসিন, পাইরোলিজিডিন, অ্যালক্যালয়েডস ও হেলিওট্রিন নামক নানা রকম জৈব উপাদান পাওয়া যায়। এর গর্ভাশয় চার খন্ডে বিভক্ত।
হাতিশুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল হেলিও ট্রাপিয়াম ইন্ডিকাম(Heliotropicum indicum) এবং ইংরেজিতে Indian heliotrop,Indian turnsole বলা হয় .এর অর্থ হলো এর ফুল গুলো সূর্যের দিকে মুখ করে রয়েছে। এই গাছটি বরাজিনেসি পরিবারভুক্ত।
হাতিশুর গাছের ব্যবহারিত অংশ
হাতিশুর গাছের বাবহারিত অংশ এর পাতা থেকে শিকড় সবতাই। প্রকৃতিতে জন্মানো অনেক ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। যার মধ্যে অনেক উদ্ভিদ প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে থাকে। এই সকল উদ্ভিদ যেমন ভিন্ন ভিন্ন গুনে গুণান্বিত, তেমনি এদের ব্যবহারও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন কোন উদ্ভিদ সরাসরি খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আবার কোন কোন উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয় ঔষধ এর সাথে। শুধু মানুষ নয় বরং গবাদি পশু পাখির চিকিৎসার কাজেও এই সকল ঔষধি উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়।
আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য ভান্ডার এবং চিকিৎসা পদ্ধতিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকা এই সকল ভেষজ উদ্ভিদ। হাতিশুর ঠিক তেমনি একটি একবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জন্মালেও এগুলো একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো হাতিশুর একটি অচাষকৃত উদ্ভিদ।
সাধারণত শুকনো ভেজা স্যাঁতসেতে জায়গায় হাতিশুর গাছ জন্মে থাকে। যদিও এই গাছের পরিমাণ এখন অনেকটাই কমে এসেছে তবুও এটি বিরল বলা যাবে না কেননা গ্রামবাংলায় এর দেখা মেলা যত্রতত্র। হাতিশুর এমন একটি গাছ যার শিকড় থেকে শুরু করে পাতা পর্যন্ত সবকিছু ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া হাতিশুর গাছের পাতার উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। হাতিশুর গাছের ব্যবহৃত অংশগুলো হল---
- পাতা
- কান্ড
- শিকড়
- ফুল
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম হলেও এসব উদ্ভিদের রয়েছে নানান ব্যবহার এবং গুনাগুন। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাণিজ্যিক কৃষির অভাব এবং গাছটির গুনাগুন সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পতিত জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে এই সমস্ত ঔষধি উদ্ভিদের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
বর্তমানে যে সমস্ত উদ্ভিদ বৈচিত্র দেখা যাচ্ছে সেগুলো সংরক্ষণ করা এখনই জরুরি। তাতে প্রাণবৈচিত্র যেমন রক্ষা হবে তেমনি প্রাকৃতিক খাদ্য ভান্ডার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে গ্রামীন চিকিৎসা পদ্ধতিকে সমৃদ্ধ করে স্থায়িত্বশীল জীবন গঠনে ভূমিকা রাখবে এই সকল উদ্ভিদ।
হাতিশুর গাছের শিকড় কখন খাবেন
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম জেনেছেন। কিন্তু এই শিকড় কখন খেতে হয় জানেন কি? আমরা অনেক সময় হাতিশুর গাছ চিনে থাকলেও এটি কিভাবে খেতে হয় ,কখন খেতে হয়, এর শিকড় পাতা কিভাবে খেতে হয় তা অনেকেই জানিনা। হাতিশুর গাছের শিকড় কখন খেতে হবে সেই বিষয়ে সম্মুখ জ্ঞান থাকা আমাদের ভীষণ জরুরী। হাতিশুর গাছের শিকড় সাধারণত ভোরবেলা খেতে হয়। আবার আপনি যদি খালি পেটে না খান তাহলে এর কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে।
আপনি যদি সকালে এই পাতা খালি পেটে সেবন করেন তাহলে পরবর্তীতে পানি সেবন করতে হবে এবং খাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে আপনি অন্য কোন কিছু খেতে পারবেন না। আপনি সকালবেলা হাতিশুর গাছের শিকড় পরিষ্কার করে ধুয়ে তা যদি পানিতে গরম করে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন তবে ভালো ফলাফল পাবেন।
যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
যৌন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড় কিভাবে কোন নিয়মে খেতে হয় সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। আবার অনেকে জানলেও এর সঠিক ব্যবহার আমাদের অজানা। আর সঠিকভাবে এর শিকড় ব্যবহার করতে না পারার ফলে আপনার যৌন সমস্যা ও দূর হতে চায় না। তাহলে চলুন এবার জেনে নেই যৌন সমস্যা সমাধানে আপনি হাতিশুর গাছের শিকড় কিভাবে খাবেন--
- প্রথমেই বলি, আপনি হাতিশুর গাছের শিকড়ের এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নেবেন আর যদি শিকড় টি অনেক চিকন হয় তবে ছয় ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নেবেন। এরপর শিকড়টি পরিষ্কার করে ধুয়ে একটি পান পাতার মধ্যে নিয়ে পান যেভাবে ভাঁজ করে ঠিক সেভাবে খেতে হবে। আপনার খাওয়ার অভ্যাস না থাকলে আপনি পান পাতার সাথে অবশ্যই এক চা চামচ কালোজিরা এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আপনি এ রাতে ঘুমানোর আগে এই পান পাতা ভালো করে চিপে রসগুলো খাবেন ।নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে একটি হাতিশুর গাছের শিকড় এবং পান পাতা আপনি যদি এভাবে খেতে পারেন তাহলে আশা করা যায় দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আপনার যৌন সমস্যার সমাধান হবে।
- সহবাসের ঠিক ১৫ মিনিট আগে আপনি পান পাতা এবং শিকড় খেয়ে নেবেন।
সম্মানিত পাঠক, আরেকটি কথা বলে রাখি আপনি পরিমাণের অতিরিক্ত শিকড় কখনোই খাবেন না এতে আপনার পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাতিশুর গাছের ফুল খাওয়ার কারণ
আপনারা এতক্ষণে আমাদের আলোচনার মাধ্যমে হাতিশুর গাছের শিকড় কিভাবে খেতে হয় সে নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন আমরা জানবো হাতিশুর গাছের ফুল আদৌ খাওয়া যায় কিনা, খেলে কেন খেতে হয়? হাতিশুর গাছের ফুল সাধারণত অনেক ছোট , সাদা বর্ণের,পাঁচটি পাতা বিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং এই ফুলের কোন গন্ধ নেই।
এই ফুলের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই ফুল দেখতে হাতির শুড়ের মতো। হাতিশুর গাছের ফুল সম্পর্কে অনেকেরই একটি ধারণা রয়েছে যে এই গাছের ফুল সাধারণত বশীকরণের কোনো মন্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগে। এটিকে তান্ত্রিক শাস্ত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা আছে বলে জানা গেছে। তবে আমি মনে করি এই ধরনের কাজ একেবারে বেআইনি এবং হারাম। তাই হারাম কাজ থেকে আমাদের সকলেরই দূরে থাকা উচিত।
হাতিশুর গাছের অপকারিতা
হাতিশুর গাছের তেমন কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবু গুটিকতক অপকারিতা রয়েছে হাতিশুর গাছের। এতক্ষণ আমরা হাতিশুর গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এবার তাহলে চলুন হাতিশুঁড় গাছের অপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক--
- প্রথমেই বলি গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের হাতিশুর গাছের সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত। আর যদি খেতে চান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা হাতিশুর গাছের মূল সেবন থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলবেন কেননা হাতিশুর গাছের মূলে সামান্য এলার্জির উদ্রেক হয়।
- হাতিশুর গাছের শিকড় রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের রক্তচাপ এমনিতেই কম তারা এই মূল খাবেন না।
সম্মানিত পাঠক, আপনি জেনে খুশি হবেন যে এই গাছের উপকারিতা গুলো এতটাও ভয়ঙ্কর নয় যদি আপনি নিয়ম মেনে খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত উপকারিতা লোভে আপনি মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া শুরু করবেন না। এতে আপনার হিতে বিপরীত হতে পারে।
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমার মন্তব্য
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনারা এতক্ষণে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন আমাদের এই আর্টিকেল থেকে। প্রকৃতির এক অনন্য দান হল এই হাতিশুর গাছ। আমাদের দেশে এই গাছটি অনেকটাই অবহেলিত পরিত্যক্ত। কিন্তু এই গাছের নানামুখী ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রে এর কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জানিনা আমরা কবে সচেতন হব এবং এই হাতিশুর গাছের কদর বুঝতে পারব। হাতিশুর গাছের এত রকম ঔষধি গুনাগুন এবং উপকারিতা জানার পরে আজ থেকে নিশ্চয়ই আমি আপনি হেঁটে চলার পথে এই অদ্ভুত গাছটি মাড়িয়ে যাব না। বরং এ গাছটিকে দেখব নতুন ভাবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url