কেওড়া ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
কেওড়া ফলের উপকারিতা জানতে চান? কেওড়া জল এর উপকারিতা জানেন কি ? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জেনে নিতে পারবেন কেওড়া ফলের নানান উপকারিতা সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন কেওড়া জলের উপকারিতা এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে। তো চলুন আজকের মত আলোচনা শুরু করি।পোস্ট সুচিপত্রঃ কেওড়া ফলের উপকারিতা
- কেওড়া ফল খাওয়ার উপকারিতা সমূহ
- কেওড়া ফল কি?
- কেওড়া ফলের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান
- কেওড়া জল এর উপকারিতা
- কেওড়া জলের নানাবিধ ব্যবহার
- কেওড়া জল কিভাবে তৈরি হয়
- কেওড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম
- কেওড়া ফুলের মধুর উপকারিতা
- কেওড়া ফলের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের অভিমত
কেওড়া ফল খাওয়ার উপকারিতা সমূহ
কেওড়া ফলের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। বিশেষত, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কেওড়া ফল। উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়াও যে কোন মানুষের স্বাস্থ্যের কয়েকটি দিকে এই ফলটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে এই ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিই -
- কেওড়া ফল ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটের পীড়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে কার্যকরীভাবে দমন করতে সক্ষম। তাই আপনি যদি আপনার পেটের প্রদাহ দূর করতে চান তাহলে কেওড়া ফল খেতে পারেন।
- ডায়াবেটিক, ক্যান্সার, আর্থাইটিস হৃদরোগ চোখে ছানি পড়া এলার্জিজনিত রোগ বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ সহ প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে এই কেওড়া ফল।
- এছাড়াও কেওড়া ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পালমিটিক এসিড, আস্করবাইল পালমিটেট এবং স্টিয়ারিক এসিড খাদ্যশিল্পে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং তৈরিকৃত খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
- আপনারা যারা শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ঝরাতে চান তাদের জন্য কেওড়া ফল হতে পারে একটি উপাদেয় খাবার । কারণ, নিয়মিত কেওড়া ফল খেলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি/ফ্যাট কমে যায় খুব সহজেই।
- কেওড়া ফলে বিদ্যমান এনজাইম যা আপনার শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনার যদি পেটে হজম বা বদহজমের কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিশ্চিন্তে এই কেওড়া ফল খেতে পারেন।
- আপনি যদি নিয়মিত কেওড়া ফল খান তবে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
- অনেক সময় আমাদের শরীরে ঘা পাচড়ার মতো ক্ষতস্থানের সৃষ্টি হয়। এই ঘা পাচটা দূর করতে আপনি কেওড়া গাছের ফল এবং পাতা একসাথে পিষে আপনার ক্ষতস্থানে লাগালে ঘা পাঁচড়ার সেই ক্ষতস্থান খুব সহজেই সেরে যাবে।
- যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কেওড়া ফল হতে পারে একটি মহৌষধ। কারণ, কেওড়া ফল খেলে পাকস্থলীর এসিডিটি অনেকটাই কমে যায়।
- কেওড়া গাছের পাতা এবং ফল একসাথে পিষে শরীরের চুলকানির স্থানে লাগালে সেই চুলকানি খুব দ্রুত ভালো হয়।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও সক্ষম এই কেওড়া ফল।
- চা খেলে আপনার শরীর যেমন সতেজ থাকে তেমনি কেওড়া ফল খেলেও আপনার শরীর ও মন সতেজ থাকবে। কারণ, চায়ের চেয়ে কেওড়া ফলে ক্যাটেকিন সহ বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল রয়েছে প্রচুর পরিমাণে যা আপনাকে খুব সহজেই চনমনে অনুভূতি দেয়।
- অনেকেই আছেন যারা খাবার খেতে রুচি পান না বা রুচি হীনতায় ভুগতে থাকেন। আবার অনেকে ক্ষুধা মন্দার সমস্যায় জর্জরিত। এই সমস্যা দূর করতে আপনি কয়েকদিন কেওড়া ফল খান তাতে অনায়াসেইই আপনার মুখের রুচি ফিরে আসবে ।
- তাছাড়া বমি বমি ভাব সর্দি কাশি প্রভৃতি প্রতিরোধেও সক্ষম নানান ঔষধি গুণসম্পন্ন এই কেওড়া ফল।
কেওড়া ফল কি?
কেওড়া ফল কি? জানতে চান! এই ফলটি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সম্মুখ ধারনা নেই বললেই চলে। । হাজার রকম ফলের ভিড়ে একটি বুনো ফলের নাম হলো কেওড়া। আমরা অনেকে আছি যারা খুলনা অঞ্চলের এই ঐতিহ্যবাহী স্বল্প পরিচিত ফলটি চিনি না। কারণ, কেওড়া ফল খুলনা এবং সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্য কোথাও সেভাবে পাওয়াও যায় না।
আরো পড়ুনঃ চিরতা খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ও অপকারিতা
কেওড়া ফল দেখতে কেমন হয়, এর স্বাদ কেমন তা উপকূলীয় এলাকার মানুষজন জেনে থাকলেও যারা শহরে বসবাস করছেন তাদের কাছে এটিে একেবারেই অপরিচিত একটি ফল। কেওড়া ফল দেখতে গোলাকার এবং খানিকটা ডুমুরের মতো। এই ফলের রং গাড়ো সবুজ। সবুজ রঙের এই ক্যামেরা ফলের ওপরের মাংসের অংশটুকু অম্ল স্বাদ এর হয়ে থাকে এবং এর একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫ টি।
আগস্ট মাসে কেওড়া ফল পাকা শুরু করে এবং এই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। কেওড়া ফল সবচেয়ে বেশি উপদেয় খাদ্য হলো হরিণ আর বানরের। তবে বহু বছর আগ থেকে মানুষ এবং মাছের খাদ্য হিসেবেও এই কেওড়া ফল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেওড়াফুল যখন পচে যায় তখনো এটি ফেলনা নয়,
কারণ পচা কেওড়া ফল মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। কেওড়া ফল রান্না করে খাওয়া যায়, অনেকে আবার ডালের সাথেও রান্না করে খান। ডালের সাথে কেওড়া ফল রান্না করলে ডালের স্বাদ দ্বিগুণ পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত অম্ল টক স্বাদ যুক্ত হওয়ার কারণে এই ফল কাঁচা লবণ দিয়েও খাওয়া যায় ।
কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি কেওড়া ফলের সঙ্গে চিংড়ি এবং মসুরের ডাল মিশিয়ে একটি বিশেষ পদ রান্না করা হয়। আবার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ আচার হিসেবেও খেয়ে থাকেন এই ফলটি। সহজলভ্য নানান পুষ্টিগন সমৃদ্ধ এই ফলটি কয়রার হাটবাজারে আপনি 10 টাকা কেজি দরে পেয়ে যাবেন।
কেওড়া ফলের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান
কেওড়া ফল উপকারিতার দিক থেকে বলতে গেলে এর পুষ্টিগুণ আমলকির চেয়েও উৎকৃষ্ট। সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেল এর গবেষণা প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব শেখ জুলফিকার হোসেনের করা একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে ,পুষ্টির দিক থেকে প্রচলিত সব ফলকেই দিনকে দিন হারিয়ে দিচ্ছে কেওড়া ফল। এতে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টিমান--
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শর্করা | ১২ শতাংশ |
আমিষ | ৪ শতাংশ |
ফ্যাট বা চর্বি | ১৫ শতাংশ |
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- আয়রন এবং
- জিংক
শুধু তাই নয় কেওড়া ফলে সমপরিমান আপেল ও কমলার তুলনায় রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণ পলিফেনল ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
কেওড়া জল এর উপকারিতা
কেওড়া ফলের উপকারিতার পাশাপাশি কেওড়া জলেরও রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। কেওড়া জলের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। কিন্তু সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে যুগ যুগ ধরে প্রসাধনীতে কেওড়া জলের ব্যবহার চলে আসছে। এবার চলুন এই জলের উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
আরো পড়ুনঃ সূর্যমুখী বীজের ২০টি কার্যকরী উপকারিতা
- ক্যান্সার প্রতিরোধে কেওড়া জল: কেওড়া জলের উপকারিতার কথা বলতে গেলে প্রথমে যে কথাটি বলতে হয় সেটি হল এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা ক্যান্সার নামক মরণব্যাধি রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- ত্বকের কোষের ক্ষেত্রে: ত্বকে নিয়মিত কেওড়া জল ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে একটা তাজা সতেজ ভাব তৈরি হবে। সাধারণত কার্ডিওটনিক হিসেবে কেওড়া জল ব্যবহার করা যায় এবং ব্যবহারের ফলে এটি এর রক্ত প্রবাহে সচ্ছলতা আনতে পারে। ফলে আপনার টিস্যুগুলো সঞ্চালিত হতে পারে। শুধু কি তাই, কেওড়া জল ব্যবহার আপনার হার্টবিটকে করে তোলে সহজ এবং হৃদ যন্ত্রের পেশীগুলোকে সক্রিয় রাখতেও বেশ সক্ষম।
- ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে: কেওড়া জলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা আপনাকে ত্বকের ব্রণ, শুষ্ক ত্বক, সোরিয়াসিস, একজিমা এবং রোসেসিয়া থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। আবার কেওড়া জল ব্যবহারের ফলে আপনি আপনার ত্বকের নানা রকম সমস্যা যেমন- চুলকানি, জ্বালাপোড়া, স্কিনের ভাঁজে দাগ পড়ে গেলেও এর থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন।
- বার্ধক্য দূর করে: কেওড়া জলে বিদ্যমান পর্যাপ্ত পরিমাণ ফেনল এবং ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয়ের গভীর স্তর থেকে টক্সিন ফ্রি রেডিক্যাল এবং ময়লা অপসারণ করতে সাহায্য করে। যার ফলে আপনার ত্বকের বলিরেখা সূক্ষ্মরেখা ঝুলে পড়া ত্বক হ্রাস করতে আশ্চর্যজনক ভাবে কাজ করে এবং চট করে আপনার ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তেও ও দেয় না।
- ময়েশ্চারাইজেশন প্রদানে: কেওড়াতে রয়েছে হিওমেট্যান্ট। ফলে কেওড়া ফুলের জল আপনার সুস্থ ত্বকে তাৎক্ষণিকভাবে হাইড্রেটেড করতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং আপনার ত্বক, চোখে, মুখে শীতল অনুভূতি প্রদান করে।
- ওপেন পোরস দূর করতে: রূপচর্চা বিশেষজ্ঞদের মতে আপনি ওপেন পোরসের সমস্যা হ্রাস করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন কেওড়া জল। কেওড়া জল ব্যবহার করার পূর্বে আপনি আপনার মুখ ফেস ওয়াশ দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর সামান্য তুলার সাহায্যে কেওড়াজল আপনার মুখের ত্বকে লাগান।
- ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধিতে: শুষ্ক ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াতে দারুন কাজ করে এই কেওড়া জল। আপনি মুখের ডেড সেল বা মৃত কোষ দূর করতে যে এক্সফলিয়েট ব্যবহার করেন তার সঙ্গে খানিকটা কেওড়া জল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। দেখবেন তাতে উপকার মিলবে দ্বিগুণ।
- ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার করতে: দৈনন্দিন প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের প্রায় প্রতিদিনই বাইরে যেতে হয়। আর তাতে অনেক সময় পরিবেশগত কারণে হোক, আর দূষণের কারণে হোক ধুলাবালিতে আমাদের ত্বকের যে লোমকূপ রয়েছে তা বন্ধ হয়ে যায়। আপনি খুব সহজেই কেওড়া জল দিয়ে আপনার ত্বকের এই লোমকূপ পরিষ্কার করতে পারেন।
- আপনি সামান্য তুলো নিয়ে সেটি কেওড়া জলে ভিজিয়ে আপনার ত্বকে মুখে ধীরে ধীরে ঘষলে আপনার ত্বকের লোমকূপ থেকে ময়লা অপসারিত হবে এবং পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে: প্রাকৃতিক টোনার হিসেবেও কেওড়া জল অসাধারণ কাজ করে। নিয়মিত কেওড়া জল ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে নির্জীব ত্বককে ফিরিয়ে দিয়ে করে তোলে তরচাজা চেহারা।
- মানসিক প্রশান্তি আনয়নে: কেওড়া জল আপনার স্ট্রেস এবং উদ্বেগ প্রশমিত করতেও সক্ষম। শুধু তাই নয়, এটি আপনার হতাশা, ডায়াবেটিস এবং হজম সিস্টেমের সমস্যা এমনকি কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যার মত উদ্দীপনা জনিত রোগ প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর। কেওড়া জল পাইনের ফুলের পাতন থেকে পাওয়া যায় যা আপনাকে স্নিগ্ধ শীতল সুভাস দেয়। নিয়মিত কেওড়া জল সেবনে এটি আপনার মানসিক চাপ এবং হতাশা কমিয়ে শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
তাছাড়া কেওড়া জলে রয়েছে প্রাকৃতিক বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন ট্যানিন, গ্লাইকোসাইডোস, আইসোফ্ল্যাভোনোস এবং ক্যারোটিনয়েড । এগুলো ত্বকের রস, সোরিয়াসিস, ব্রণ এবং একজিমার মত বেশ কয়েকটি ত্বকের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
কেওড়া জলের নানাবিধ ব্যবহার
কেওড়া জল এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এবার আপনাদের জানাবো কেওড়া জলের নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে। কেওড়া জল পানডানাস নামক একটি ফুলের নির্যাস। এটি দেখতে একেবারে স্বচ্ছ তরল ঠিক গোলাপ জলের মতো। কিন্তু কেওড়া জল এবং গোলাপ জল এক নয়।তো চলুন কেওড়া জল কোথায় কিভাবে ব্যবহার করা হয় সে ব্যাপারে জেনে নি--
- রান্নায় কেওড়া জলের ব্যবহার নতুন নয়। বিরিয়ানি থেকে শুরু করে চাপ, রেজালাতেও এটি ব্যবহার করা হয়। বিরিয়ানি রান্নাতে কেওড়ার জল অল্প পরিমাণ হলেও দিতে হয়। না হলে খাবারে খুব একটা স্বাদ আসেনা।
- মোগোলাই খাবারে কয়েক ফোটা কেওড়ার জল দিলে তাতে খাবারের স্বাদ এবং ঘ্রাণ বেড়ে যায় অনেক গুণ।
- বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার, মাংস, বরফ ঠান্ডা শরবত ক্রিমযুক্ত পনির গ্রাভি এবং রান্নায় নতুন ফ্লোরাল ফ্লেভার আনতে কেওড়া জল ব্যবহৃত হয়।
- ত্বকের যত্নেও ব্যবহৃত হয় এই কেওড়ার জল কারণ এই কেওড়া জলে রয়েছে ট্যানিন ,ক্যারোটিনয়েড এবং গ্লাইকোসাইড এর মত উপাদান। যা আপনার ত্বকের জন্য ভীষণই উপকারী।
- আবার বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক, ক্রিম, স্ক্রাব, ফেস মিস্ট ইত্যাদিতে কেওড়া জল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
- ত্বকের রেশ, ব্রণ, সোরিয়াসিস এবং একজিমার মত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এই কেওড়া জল ।নিয়মিত কেওড়া জল ব্যবহারে আপনার ত্বকের জেল্লা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
কেওড়া জল কিভাবে তৈরি হয়
কেওড়া ফলের নানাবিধ উপকারিতা আপনি জেনেছেন আজকের আলোচনা থেকে। এবার আপনাকে জানাবো কেওড়া জল কিভাবে তৈরি হয় সে সম্পর্কে। কেওড়া গাছের ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি হয়।বাজারে বিভিন্ন গ্রোসারির দোকানে গোলাপ জলের মত খুব সহজেই পাওয়া যায় এই কেওড়া জল। আপনি যদি কিনতে না চান তাহলে
নিজে বাড়িতেও তৈরি করে ফেলতে পারেন এই কেওড়া জল। বাড়িতে কেওড়া জল তৈরি করার জন্য আপনি এক গ্লাস জলে কয়েকটা কেওড়াফুল সেদ্ধ করে নেবেন। অতঃপর সেই জল ঠান্ডা হলে পরিষ্কার ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে একটি বোতলে রেখে সংরক্ষণ করুন। আপনি চাইলে এই জল রেফ্রিজারেটরে রেখেও সংরক্ষণ করতে পারেন। তাছাড়া কেওড়া জল এর উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন।
কেওড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম
কেওড়া ফলের উপকারিতা তো জেনেছেন। এবার চলুন এই ফলের গাছ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিন। কেওড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Sonneratia apetala. এটি অতি দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ এবং সুন্দরবনের গরান বনাঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু গাছ গুলোর মধ্যে কেওড়া গাছ একটি। কেওড়া গাছের উচ্চতা ২০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এই গাছের পাতা সরল, বিপরীতমুখী এবং অখন্ড চামড়ার মত। ছোট ছোট হলুদ বর্ণের ফুল হয় এবং কেওড়ার ফুল উভলিঙ্গ। ফল আকারে ছোট ডিম্বাকৃতি খানিকটা দেখতে ডুমুরের মতো। লবণাক্ত মাটিতে জন্ম নেওয়া এই কেওড়া গাছের শ্বাসমূল দেখা যায়। মূলত জোয়ার ভাটার জলে পুষ্ট সুন্দরবনে শ্বাসমূল এই গাছের বায়ুতে থাকা শ্বাসমূল গুলো গ্রহণ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
নতুন জৈব সমৃদ্ধ এবং অধিক লবণযুক্ত মাটিতে এই গাছ ভালো জন্মে থাকে। মিষ্টি জলের এলাকাতে কেওড়া গাছ একেবারে জন্মে না বললেই চলে। কেওড়া গাছের কাঠ ঘরের বেড়া, দরজা জানালা, প্যানেল বানানো, প্যাক করার বাক্স তৈরি, আসবাবপত্র ও জ্বালানি হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়।
কেওড়া ফুলের মধুর উপকারিতা
কেওড়া ফলের উপকারিতা জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই কেওড়া ফুলের মধুর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। সুন্দরবনের যে কয়েকটি ফুলের মধু পাওয়া যায় তার মধ্যে কেওড়া ফুলের মধু অন্যতম। কেওড়া গাছে ছোট ছোট হলুদ বর্ণের উভলিঙ্গ ফুল হয় এবং এই ফুল থেকেই আমরা মধু পেয়ে থাকি। সুন্দরবনে ফুল ফোটার একটি নির্দিষ্ট সময়ের বিভিন্ন পর্যায়ে
ফোটে বিভিন্ন রকম ফুল যেমন, বাইন, গরান, খলিশা ও কেওড়া ফুল। মার্চ থেকে খলিশা ফুল ফুটতে শুরু করে এবং এই সময় কেবলমাত্র খলিশা ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়। এরপর আসে গরান এবং গরানের শেষে আসে বাইন এবং কেওড়া ফুল ফোটে। ঠিক এই সময়ই কেওড়াফুল থেকে সংগ্রহ করা হয় কেওড়া ফুলের মধ্যে মধু । কেওড়াফুলের মধুতে রয়েছে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন-
- কেওড়া ফুলের মধু অন্যান্য ফুলের মধু থেকে অত্যন্ত ঔষধি গুনসম্পন্ন।
- এই মধু সামান্য হলুদাভ বর্ণের হতে পারে কারণ কেওড়াফুল হলদে বর্ণের হয়ে থাকে।
- কেওড়াফুলের মধুতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকাই অন্যান্য মধুর থেকে অনেকটা পাতলা হয়।
- কাঁচা মধু পাত্রের মধ্যে হালকা গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে সামান্য ঝাঁকি লাগলে তাতে ফেনা হয় এবং বুদবুদ সৃষ্টি হয়।
- কেওড়া ফুলের মধুতে ph এর মাত্রা বেশি থাকার কারণে কোন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট এতে সক্রিয় হতে পারে না।
খাঁটি মধু চেনার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই ল্যাব টেস্ট ছাড়া। আর তাই এই সুযোগে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনাদের কাছে নকল মধু বিক্রি করে থাকতে পারে। সেজন্য খাঁটি মধু কিনতে হলে আপনি অবশ্যই একজন বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই মধু ক্রয় করবেন তাতে ঠকার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
সতর্কতা:
- আপনি মধু কখনোই ফ্রিজে অথবা সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখবেন না আপনার কখনো তাপমাত্রাতে মধু সংরক্ষণ করবেন।
- বাতাস প্রবেশ করতে পারবে না এমন একটি জারে মধু সংরক্ষণ করুন এবং ব্যবহারের পর পাত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করুন।
কেওড়া ফলের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের অভিমত
কেওড়া ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বিশদভাবে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছেন। কেওড়া ফল যদিও বুনো ফল হিসেবেই বেশি পরিচিত তবু এই ফলটি হতে পারে আপনার খাদ্য তালিকার অন্যতম অনুষঙ্গ এবং আপনাকে দিতে পারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির যোগান। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিকসহ অনেক মারাত্মক রোগ প্রতিরোধেও টনিকের মত কাজ করে এই কেওড়া ফল।
স্থানীয়ভাবে কেওড়া ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বিশ্ববাজারে এর প্রচার এবং প্রসারের অভাবে খুব একটা চাহিদা নেই বললেই চলে। তবে বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বৃদ্ধি সহ প্রচার ও প্রসার করতে পারলে তা সুন্দরবন নির্ভর বনজীবীদের কর্মসংস্থান স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সার্বিক জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বেশ সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়। সেই সাথে সুরক্ষিত হবে সুন্দরবনের পরিবেশও। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url