গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা জানতে বিস্তারিত পড়ুন
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনি জানতে চাচ্ছেন? কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি হয়তো অনেক ওয়েবসাইট খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। তাহলে আপনি আজকে সঠিক জায়গায় এসেছেন।
গর্ভকালীন সময়ে কচু শাক খাওয়ার বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। তাছাড়া এই সময় কচু শাক খেলে আপনার এলার্জি হবে কিনা, অতিরিক্ত কচু খেলে কি ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এর সব টাই থাকবে আজকের আর্টিকেল জুড়ে।
পোস্ট সূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার ১০টি কার্যকরী উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
- কচু শাকের পুষ্টিগুণের তালিকা
- কচু শাকের উপকারিতা
- কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়
- কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন
- কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
- গাটি কচু খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় যেসব ফল এবং সবজি খাবেন না
- কচু শাকের অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সুপরিচিত একটি সবজি শাক হিসেবে পরিচিত কচুশাক। কচু শাক আমাদের দেশের সহজলভ্য একটি সবজি এবং ভরপুর মাত্রায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি শাক । আর তাই গর্ভকালীন সময়ে এবং সন্তান প্রসবের পর কচু শাক খাওয়ার একাধিক উপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন গর্ভকালীন সময়ে কচু শাকের উপকারিতা গুলো কি কি সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
- কচু শাকে বিদ্যমান ফোলেট যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। এই ফোলেট গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভনালী এবং আপনার গর্ভের ভ্রুন নির্মাণে, বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কচু শাকের এই ফোলেট শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডের উন্নত বিকাশেও সাহায্য করে।
- কচু শাকে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। একজন গর্ভবতী মায়ের এই পুষ্টিকর উপাদান গুলি একান্ত প্রয়োজন যা কচু শাক সরবরাহ করে থাকে।
- একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভবস্থায় আয়রনের চাহিদা পূরণ করতে পারে কচু শাক। আয়রন আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন করে এবং মা ও শিশুর উন্নত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। সুতরাং আয়রনের ভালো উৎস হিসেবে গর্ভাবস্থায় কচুশাক খেতে পারেন।
- কচু শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয় যা শিশুর অস্তিত্ব, হাড় গঠন, দাঁতের গঠন এবং মাতৃ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেরল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা অতীব জরুরী। এই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে কচুশাক। কারণ, কচু শাকের মধ্যে ফাইবারের প্রাধান্যতা থাকায় এটি আপনার শরীরে স্বাভাবিকভাবে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে।
- গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। আর তাই যারা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের তারা প্রোটিন ড্রিঙ্ক ও ভিটামিন ক্যাপসুলের পরিবর্তে কচু শাক গ্রহণ করতে পারেন
- শিশু জন্মের পর অনেক সময় মাত্রই স্তনে শিশুর আহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধের ঘাটতি দেখা দেয়। আপনি যদি পরপর তিন থেকে চার দিন টানা কচু শাক খান তাহলে আপনার মাতৃ স্তনের দুগ্ধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক মা বোনদের একটি সাধারণ সমস্যা হলো কষ্টকাঠিন্য। আপনাকে এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে কচু শাক। আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে কচু শাক খান তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই দূরীভূত হবে।
কচু শাকের পুষ্টিগুণের তালিকা
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুণে ভরপুর সহজলভ্য এই কচু শাক। এবার চলুন, তাহলে জেনে নেওয়া যাক প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কত----
- খাদ্য শক্তি- ৫৬ কিলোক্যালরি
- ক্যালসিয়াম- ২২৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি- ১২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ১- ০.২২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ২- ০.২৬ মিলিগ্রাম
- ফ্যাট- ১.৫ গ্রাম
- প্রোটিন- 3.9 গ্রাম
- শর্করা- 6.8 গ্রাম
- ফাইবার- ৫.১ গ্রাম
- ফ্যাট- ০.১১ গ্রাম
- আইরন- 10 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই- ০.৯৩ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম- ৩০ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ-০.৪৪৯ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম- ৪৮৪ মিলিগ্রাম এবং
- জিঙ্ক- ০.২৭ মিলিগ্রাম
এছাড়াও কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি রয়েছে। ফলে কচুশাক গর্ভাবস্থায় উপকারী তো বটেই, সেইসাথে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্যালসিয়াম এবং লৌহের চাহিদা মেটাতে কচু শাক বিশেষ বিশেষভাবে সাহায্য করে।
কচু শাকের উপকারিতা
সম্মানিত পাঠক, এতক্ষণ তো আমরা জানলাম গর্ভাবস্থায় কচুশাক খেলে কি কি উপকার পাওয়া যেতে পারে। এবার চলুন জেনে নেই কচুশাকে কি কি উপকারিতা রয়েছে---
- দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করেঃ কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস। যা আমাদের দাঁত এবং হাড়ের গঠনে বিশেষ উপকারী। তাছাড়া ক্ষয় প্রতিরোধক হিসেবে কচুশাক বিশেষ ভূমিকা পালন করে । তাই আপনি যদি আপনার দাঁত এবং হাড়কে মজবুত শক্ত করতে চান তাহলে নিয়মিত কচু শাক খান।
- রক্তশূন্যতা দূরীকরণেঃ কচু শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন যা আপনার শরীরে রক্তাল্পতাকে দূর করতে সাহায্য করে। যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তারা অবশ্যই কচু শাক খান। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কচু শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা খাবারকে খুব সহজেই হজম করতে সাহায্য করে এবং আমাদের কষ্টকাঠিন্যের মতো কঠিন সমস্যকে অনায়াসেই দূর করতে পারে। যারা কষ্টকাঠিন্যের মত সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত কচু শাক খেতে পারেন।
- শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করেঃ কচু শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি আমাদের শরীরের যে কোন ক্ষত সারাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই আপনাকে বলবো আপনি নিজে কচু শাক খান এবং আপনার শিশুদের ছোটবেলা থেকে কচু শাক খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
- রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করেঃ সাধারণত ভিটামিন এর অভাবে আমাদের রাতকানা চোখে ছানি পড়া এবং চোখের অন্যান্য বিভিন্ন রোগ হয়। কচু শাকের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ। যা আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং রাতকানার মত রোগ সারাতেও সাহায্য করে এই কচুশাক।
- রক্তে অক্সিজেন সরবরাহেঃ আমাদের শরীরে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে কচু শাক। তাছাড়া কচু শাকের মধ্যে রয়েছে আয়রন এবং ফোলেট যা আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক থাকে। কচুশাকে বিদ্যমান "ভিটামিন কে" আপনার রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণেঃ কচু শাক খেলে স্বাভাবিকভাবে আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী আছেন তাদের জন্য কচু শাক ভীষণ উপকারী। তাছাড়া আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে কচু শাক খান তাহলে কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সারের মতো ঝুঁকিও আপনার শরীরে অনেকটাই কমে যাবে।
কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। কিন্ত কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়? এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। তাহলে শুনুন কচুশাকে এলার্জি আছে এ কথা সত্য। তবে কচুশাকে আপনার কি পরিমাণ এলার্জি আছে, সেটি প্রাথমিকভাবে বোঝার জন্য আপনাকে কচু শাক খেতেই হবে।
কচুর শাক খাওয়ার পর আপনি যদি আপনার শরীরে এলার্জি লক্ষণ বুঝতে পারেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার অ্যালার্জি আছে। আর যদি কোন লক্ষণ না বুঝতে পারেন সে ক্ষেত্রে কচুশাকে আপনার কোন এলার্জি নেই সহজ কথা। আরেকটি কথা কচু শাক অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে পরিমান বুঝে খেলে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা কম বেশি সকলেরই জানা। কিন্তু কচুশাক খলে গলা চুলকায় কেন তা জানেন কি? তাহলে জেনে রাখুন, কচুশাকে রয়েছে রেফাইট। এই রেফাইটের কারণে অনেক সময় আমাদের গলা চুলকায়। রেফাইটের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ক্যালসিয়াম অক্সালেট কচু গাছের মূল কাণ্ড এবং পাতায় এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট যৌগটি থাকে।
এটি দেখতে অনেকটা সূর্যের মতো তাই খাওয়ার সময় এগুলো গলায় আটকে যায় এবং গলা চুলকানির সৃষ্টি হয়। তবে অতিরিক্ত তাপে রান্না করার ফলে বেশিরভাগ রেফারিটি গলে যায় ফলে রান্না করার কচুতে খুব একটা গলা চুলকায় না। তবুও অনেক সময় কিছু কিছু অক্ষত থেকে যায় যেগুলো পরবর্তীতে গলা চুলকানির মত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শুধু তাই নয়, এই রেফাইট অনেক সময় আপনার রক্তে মিশে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে এটি আপনার কিডনিতে পাথর জমার কারণ হতে পারে। তাই বলব কচু শাক রান্নার সময় এতে লেবু তেঁতুলের মত টক জাতীয় কিছু ব্যবহার করুন।এতে করে কচুশাক খেলেও আপনার গলা চুলকাবে না। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
কচুশাক যেমন আমাদের সকলের কাছে অতি পরিচিত তেমনি কচুর লতিও। কচুর লতি খাওয়ারও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তা কি জানেন? কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী। তাহলে চলুন এবার কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন--
- কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
- আপনি যদি নিয়মিত প্রচুর লতি খান তাহলে হাত-পায়ে ঝিঝি ধরার মত সমস্যাগুলো অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। কারণ, কচুর লতিতে বিদ্যমান কোলেস্টেরল বা চর্বি, কিছু পরিমাণ ভিটামিন বি, আপনার হাত-পা মাথার উপরিভাগে গরম হয়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলো থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
- কচুর লতিতে রয়েছে ভিটামিন বি যা মস্তিষ্কে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলের জন্য ভীষণই জরুরি।
- আয়োডিন খাবার হজমের পরে দেহ থেকে বজ্র সঠিকভাবে অপসারণ করতে সাহায্য করে। আর তাই আপনি যদি কচুর লতি খান তাহলে আপনার এসিডিটি এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
- যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কচুর লতি হতে পারে একটি আদর্শ সবজি। কারণ, কচুর লতি রক্তের চিনির মাত্রাকে বাড়ায় না যার ফলে শরীরে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা নিঃসংকোচে কচুর লতি খেতে পারেন।
- গরমকালে সাধারণত ঘাম হয়ে শরীর অনেকটাই শুকিয়ে যায়। আর তাই আপনি যদি নিয়মিত কচুর লতি খান তবে আপনার শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
- যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কচুর লতির তরকারি খান। এতে আপনার রক্তে কোলেস্টেরনের মাত্রা কমে যাবে।
- আমাদের অনেকেরই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে আসে। আবার অনেকে রাতে চোখে ভালো দেখতে পান না। আপনি যদি কচুর লতি খান তাহলে আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং এই সমস্যাও দূর হবে।
- আয়োডিনের ভালো উৎস হওয়ায় কচুর লতি আপনার দেহের রক্তশূন্যতা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- কচুর লতিতে থাকা ক্যালসিয়াম যা আপনার হাড় গঠনে, হাড় মজবুত করনে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- কচুর লতিতে কোন কোলেস্টেরল বা লেস্তেরল। যার ফলে ওজন কমানোর জন্য আপনার কচুর লতি খেতে কোন বারণ নেই।
গাটি কচু খাওয়ার উপকারিতা
কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা ইতিপূর্বেই জেনেছেন। কচু শাক এমন একটি শাক যেটি বাঙালির হেঁসেলে প্রায়শই দেখা যায় এবং যার পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত সবটাই খাওয়া যায়। এবার চলুন গাটি কচু খেলে আপনার কি কি উপকার হতে পারে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক--
- গাটি কচু আপনার শরীরের এনার্জি ধরে রাখতে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। গাটি কচুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে বলে এটি অ্যাথলেটরদের জন্য ভালো একটি খাবার।
- গাটি কচুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে বলে এটি হজম ক্রিয়ায় বেশ উপকারী এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে।
- যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য একটি ভাল সবজি হলো গাটি কচু। কারণ, এতে ক্যালরির পরিমাণ একেবারেই কম।
- গাটি কচু ফাইবার সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে এটি আপনার পরিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার পাশাপাশি আপনার পাকস্থলীর বজ্র পদার্থ নিষ্কাশনের সাহায্য করে।
- গাটি কচুতে ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে বলে এটি আপনার ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে। দৈনিক ভিটামিন ডি গ্রহণের মাত্রা ১৯% আপনি পূরণ করতে পারেন এই গাটি কচু খেয়ে যা আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
- ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস হলো গাটি কচু। এক কাপ গাটি কচু দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদার প্রায় ১১ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। এছাড়াও ভিটামিন সি ইমিউনিটি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে এই গাটি কচু।
- যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে ডাক্তাররা সাধারণত কম চর্বিযুক্ত এবং কম সোডিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সে হিসেবে এক কাপ গাটি কচুতে ২০ গ্রাম সোডিয়াম ও ০.১ গ্রাম ফ্যাট থাকে বলে এটি উচ্চ রক্তচাপে রোগীদের জন্য একটি উপাধিও খাবার। এছাড়া কিডনির রোগীদের জন্য গাটি কচু বেশ কার্যকর।
গর্ভাবস্থায় যেসব ফল এবং সবজি খাবেন না
গর্ভকালীন সময়ে কোন ফল বা সবজি খাওয়ার আগে আপনাকে ভেবে চিন্তে তবেই খাওয়া উচিত। তা না হলে এতে আপনার গর্ভের ভ্রূণের ওপরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। যেসব ফল আপনি গর্ভাবস্থায় একেবারেই খাবেন না চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক -
- আনারসঃ আনারস অত্যন্ত রসালো এবং সুস্বাদু ফল হওয়ার সত্বেও আনারসের রোমেলেন ক্ষতি করে থাকে আপনার অনাগত গর্ভজাত সন্তানের। তাই অনেক ধরনের ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও আপনি গর্ভাবস্থায় আনারস একেবারেই খাবেন না।
- আঙ্গুরঃ আঙ্গুর এমন একটি ফল যা পেট গরম করে থাকে। অর্থাৎ মা এবং সন্তান দুজনের ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় আঙ্গুর বেশ ক্ষতিকারক। আঙ্গুরে বিদ্যমান রখেরাট্রল নামক পদার্থ আপনার গর্ভজাত সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।
তাছাড়া গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি চেরি নাশপাতি আম তরমুজ কমলালেবু কখনোই খাওয়া উচিত নয়। এবার চলুন কোন কোন সবজি গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয় সেটি জেনে নেওয়া যাক--
- পেঁপেঃ পেঁপে যদিও আমাদের শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী একটি সবজি, কিন্তু গর্ভাবস্থায় পেঁপে খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত। কেননা পেঁপের ল্যাটেক্স গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভজাত সন্তানের ক্ষতি করে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় পেঁপে একদম নয়।
- করোল্লাঃ করলার গ্লাইকোলাইসিস, সেপোনিক, মারোডিসিন নামক ক্ষতিকারক পদার্থ যা গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের সন্তানের নানান উপসর্গের সৃষ্টি করতে পারে। এতে ক্ষতি হতে পারে আপনার গর্ভজাত সন্তানের। আর তাই গর্ভাবস্থায় করোলা কে এড়িয়ে চলবেন।
কচু শাকের অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাছাড়া প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো মন্দ দুটি দিকই থাকে। সে হিসেবে কচু শাকেরও কিছু অপকারিতা রয়েছে। যেগুলো আপনার জানা প্রয়োজন। তো চলুন কচু শাকের অপকারিতা গুলো কি তা জেনে নেওয়া যাক--
- সাধারণত কচু শাক খেলে কারো কারো গলাতে চুলকানির সৃষ্টি হয়। কচু শাকের মধ্যে রয়েছে অক্সালেট নামক একটি উপাদান যার জন্য এই চুলকানির উদ্রেগ হয়। এজন্য আপনি কচু শাক রান্না করার সময় সামান্য লেবুর রস অথবা টক জাতীয় কোন কিছু দিয়ে রান্না করলে চুলকানির সমস্যা থাকবে না
- যাদের শরীরে এলার্জির মতো কোনো সমস্যা রয়েছে তাদের কচু শাক না খাওয়াটাই ভালো।
- অতিরিক্ত কচু শাক খাওয়ার ফলে আপনার পাচনতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কচু শাকের বিভিন্ন অংশ যেমন অ্যামাইনো এসিড এবং ফাইবার যা পাঁচজনের ক্ষেত্রে কঠিনতা তৈরি করতে পারে এবং পাঁচনতন্ত্রের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে
- মনে রাখবেন, কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। অতিরিক্ত কচু শাক খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাস অম্বলের মত সমস্যা হতে পারে। আর তাই মাত্রাতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ কচু শাক নিয়ম করে খাবেন।
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসকরা আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শে দিয়ে থাকেন। আর তেমনি একটি উপকারী শাক হলো কচু শাক। কচু শাকের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এর চাহিদাও ব্যাপক।
আপনি আপনার শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন কচু শাক। আর গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার নিরাপদ তা নিয়ে আপনি যদি অনিশ্চয়তায় থাকেন তাহলে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রধানকারীর সঙ্গে পরামর্শ করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url