কুলেখাড়া পাতার ৬টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার নিয়ম জানেন কি? যদি না জানা থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
কুলেখাড়া-পাতার-৬-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
কারণ, আজকে আমরা আপনাদের জানাবো কুলেখাড়া পাতার নানান উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। সুতরাং কুলেখাড়া পাতা সম্পর্কিত সকল যাবতীয় তথ্য সহজ সরল ভাষায় জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কুলেখাড়া পাতার ৬টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি হয়তো অনেকেই জানেন। সাধারণত বাড়িতে ঘরোয়াভাবে ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে যেসব চিকিৎসা করা হয় সেগুলোর মধ্যে কুলেখাড়া পাতা অন্যতম। যারা কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা সম্পর্কে এখনো অবগত নন চলুন জেনে নিন কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা--
  • কুলেখাড়া পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে এটি আপনার শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • যারা অ্যানিমিয়া অথবা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য কুলেখাড়া পাতা হতে পারে একটি আদর্শ ভেষজ উদ্ভিদ। কারণ, কুলেখাড়া পাতা আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে পারে। সেই সাথে এটি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সক্ষম, কারণ এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
  • কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। আপনারা যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন তারা যদি কুলেখাড়া পাতা খেতে পারেন তাহলে আপনার এ সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। কারণ, কুলেখাড়া পাতার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে এ সাহায্য করে।
  • কুলেখাড়া পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আপনার শরীরের হাড় মজবুত এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • পেটের বিভিন্ন রোগ যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয় প্রভৃতি কমাতে কুলেখাড়া শাক বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • কুলেখাড়া শাক বা পাতা আপনার পাকস্থলী এবং লিভারের কার্যকরী ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • কুলেখাড়া পাতার মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার ফলে আপনার পেটের কৃমি দূর হয়। কারণ, কুলেখাড়া পাতায় রয়েছে Anthelminthic।
  • ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কুলেখাড়া পাতা ভীষণই উপকারী। কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে সাহায্য করে। তাই যদি কোন ব্যক্তির ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কুলেখাড়া পাতা হবে তার জন্য সবচেয়ে বড় মহৌষধ।
  • আপনার কোমরে যদি বাতের ব্যথা হয় তাহলে এই কোন খারাপ পাতা খেলে আপনি অনেকটাই বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
  • আমাদের অনেকেরই রাতে ঘুমের সমস্যা হয়। আপনার যদি ঘুমের সমস্যা হয় তাহলে সন্ধ্যাবেলা ২-৪ চা চামচ কুলেখাড়ার শিকড়ের রস খান। এতে আপনার ঘুম ভালো হবে ।
  • কুলেখাড়া আপনার রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে এবং মূত্রনালীর দোষ কুলেখাড়া অনেকটাই প্রশমন করে।
  • কুলেখাড়া পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ এবং আয়রন। তাই আপনার যদি ফিস্টুলা হয়ে থাকে তবে কুলেখাড়া পাতা খেলে এ রোগটি কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যাবে।
  • আপনার হারপিস হলে কুলেখাড়া পাতা এবং কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে আপনার ক্ষতস্থানে লাগান। এতে জ্বালা-যন্ত্রণা যেমন কমবে তেমনি ক্ষত শুকিয়ে যাবে খুব দ্রুত।
  • আপনার শরীরের কোন অংশ হঠাৎ ফুলে উঠলে ১ টেবিল চামচ কুলেখাড়া পাতার রস গরম করে দিনে ২ বার খাবেন। সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়েও আপনি খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের ফোলা কমে যাবে এবং আপনি অনেকটাই আরাম পাবেন।
  • আপনার শরীরের কোন অংশ কোন কারণে কেটে গেলে কিংবা রক্তপাত হলে রক্তপাত বন্ধ না হতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আপনি কুলেখাড়া পাতা থেঁতো করে কাটা জায়গায় চেপে বেঁধে দিন। এতে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে এবং দ্রুত আপনার ক্ষতও শুকিয়ে যাবে।
  • আপনার রক্তে যদি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় সেক্ষেত্রে কুলেখাড়া পাতার রস সেদ্ধ করে ছেকে নিয়ে সেই জল খান। দেখবেন তাতে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
  • পিত্তথলি অথবা কিডনির পাথর অপসারণ করতে আপনি কুলেখাড়ার বীজ আধ চা চামচ নিয়ে আধ গ্লাস জলে গুলে খেতে পারেন।
  • তাছাড়া জ্বর সর্দি ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগে কুলেখাড়া পাতা বেশ উপকারী।

কুলেখাড়া পাতার পুষ্টিগুণ

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। এবার আপনাকে জানাবো উপকারি এই ভেষজের পুষ্টিগুন সম্পর্কে। এর পুষ্টি উপাদান গুলো হল--
  • খাদ্য শক্তি
  • প্রোটিন
  • কার্বোহাইড্রেট
  • ফাইবার
  • ফ্যাট
  • পটাশিয়াম
  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • সোডিয়াম
  • ভিটামিন সি
  • ভিটামিন এ
  • রিবোফ্লাবিন
  • ফলিক এসিড
  • কপার এবং
  • বিটা ক্যারোটিন।
প্রতি ১০০ গ্রাম কুলেখাড়া পাতায় রয়েছে --
  • খাদ্য শক্তি- ৫৮.৮০ কিলো ক্যালরি
  • প্রোটিন- ৪.৬ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট- ১২.২ গ্রাম
  • ফাইবার- ১.৮০ গ্রাম
  • ফ্যাট- ০.১৩গ্রাম
  • পটাশিয়াম- ২৬৬ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম- ৫৬.১ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি- ৫০.০৮ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম- ২৭.৯৩ মিলিগ্রাম
  • তামা- ৪. ৮৭ মিলিগ্রাম
  • দস্তা- ০.৪৪ মিলিগ্রাম
  • বিটা ক্যারোটিন- ২.৫ মিলিগ্রাম
  • ফলিক এসিড- ১.০ মিলিগ্রামের বেশি

কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

কুলেখাড়া পাতার মধ্যে বিভিন্ন জাদুকরী উপকারী উপাদান রয়েছে বলে অনেকে একে জাদুকরী ভেষজ বলেও সম্মোধন করে থাকেন। আপনি কুলেখাড়া পাতা শাক হিসেবে খান বা পাতাগুলো চিবিয়েই খান না কেন সকল ভাবে এটি আপনার উপকার করতে সক্ষম।
কুলেখাড়া-পাতার-৬-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
সবথেকে বড় কথা হলো এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার শুধু পাতা নয় বরং সম্পূর্ণ গাছই আমাদের বিভিন্ন ধরনের দৈহিক সমস্যার কাজে লাগে। এতক্ষণ তো আমরা কুলেখাড়া পাতার বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা  সম্পর্কে জানলাম। এবার চলুন জেনে নেই কুলেখাড়া পাতার রস আপনি কিভাবে খাবেন---
  • প্রথমে আপনি একগুচ্ছ কুলেখাড়া পাতা নিয়ে সেগুলিকে ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • তারপর পাতাগুলোকে কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ পানি যোগ করে শীল পাটায় বেটে নিন অথবা মিক্সার থাকলে তাতে ব্লেন্ড করে নিন।
  • তারপর একটি ছাকুনির সাহায্যে বেটে নেওয়া পাতা থেকে রসটা থেকে আলাদা করে নিন।
  • ব্যাস, এরপর একটি কাপে পানি নিয়ে তাতে এক চামচ কুলেখাড়ার রস নিয়ে ১ চামচ মধু মিশে আপনি প্রতিদিন পান করুন।
  • এভাবে কুলেখাড়া পাতার রস আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে খান তাহলে আপনি অনেক উপকার পাবেন। শুধু কুলেখাড়া পাতার রস নয় বরং এর কাণ্ডের রসও আপনি খেতে পারবেন। পাতা বা কাণ্ডের রস সামান্য তেতো হয়। তাই কারো যদি খাওয়ার অভ্যাস না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি কুলেখাড়ার টনিক কুলেখাড়া পাউডার বা কুলেখাড়ার ট্যাবলেটও খেতে পারেন। অনেকে আবার কুলেখাড়া পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খায়।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম  কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। উপরিউক্ত নিয়মে এই পাতার রস সেবন করলে আপনি এর সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন।

কুলেখাড়া পাতার রস কখন খেতে হয়

কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার নিয়ম আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন।  কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার ফলে আমাদের অনেক রোগের উপশম হয়। তবে রোগভেদে এই কুলেখাড়া পাতার রস বিভিন্ন সময় খেতে হয়। কুলেখাড়া পাতার রস সাধারণত খাওয়ার একটি নিয়ম রয়েছে। এই রসটি আপনি সকালে রাতে খেতে পারবেন আপনার রোগের উপর নির্ভর করে। আপনার রক্তে যদি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় সে ক্ষেত্রে কুলেখাড়া পাতার রস সব থেকে বেশি খাওয়ানো হয়।

এক্ষেত্রে কুলেখাড়া পাতা সিদ্ধ করে সেই পানীয় আপনাকে খেতে খেতে হবে। তাতে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার হিমোগ্লোবিনের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং এটি আপনি দিনে দুইবার ৪ চা চামচ করে খাবেন। আবার আপনাদের যাদের শরীরের কোন স্থান কেটে গেলে সহজে শুকায় না বা ক্ষতস্থানে থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয় না, তারা যদি কুলেখাড়া শিকড়ের রস নিয়মিত দিনে চার চামচ করে রাতে এবং সকালে খান তাহলে সে ক্ষতস্থান খুব দ্রুতই সেরে যাবে।

কুলেখাড়া পাতা কিভাবে খেতে হয়

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনাকে জানতে হবে এই পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। কুলেখাড়া আমাদের গ্রামাঞ্চলে কুলেখাড়া শাক হিসেবে বেশ পরিচিত। কিন্তু যারা শহরাঞ্চলে থাকেন তারা হয়তো অনেকেই কুলেখাড়া নামটির সাথে খুব একটা পরিচিত নন। ফলে অনেকেই জানেন না কুলেখাড়া পাতা কিভাবে খেতে হয়। খানিক আগেই আমরা জেনেছি কুলেখাড়া পাতার রস কিভাবে খেতে হয়। এবার চলুন তাহলে জেনে নিই কুলেখাড়া পাতা কিভাবে খেতে হয়--
 
  • কুলেখাড়া পাতাগুলো সংগ্রহ করার পরে প্রথমে ভালো করে বেছ ধুয়ে নিতে হবে। তারপর শাক যেভাবে রান্না করে ঠিক সেভাবে শাক রান্না করে আপনি খেতে পারেন।
  • আবার কুলেখাড়া পাতাগুলোকে আপনি সিদ্ধ করে আলু সেদ্ধর সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • এছাড়াও আপনি কাঁচা কুলেখাড়া পাতা ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে চিবিয়েও খেতে পারেন।
  • কাঁচা পাতা চিবিয়ে খেতে না পারলে আপনি কুলেখাড়া পাতার জুস বানিয়েও খেতে পারেন।
  • আবার আপনি চাইলে কুলেখাড়া পাতা দিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারেন। আপনি এক গ্লাস জলে তিন থেকে চারটি পরিস্কার কুলেখাড়া পাতা মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এতে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন কুলেখাড়া পাতার চা।
  • আপনি কুলেখাড়া পাতা রোদে শুকিয়ে সেই শুকনো পাতা মিক্সার এ পিষে একটি পাত্রে গুঁড়ো করে রাখুন। এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ এই গুঁড়ো এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এভাবে দিনে এক থেকে দুইবার পান করুন।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম  কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার নিয়ম। যা আপনার উপকারে আসবে। তাছাড়া কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা খানিক আগেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি।

কুলেখাড়া পাতার কিছু ঔষধি গুণ

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি এর বেশ কিছু ওষুধি গুনাগুন রয়েছে।  স্বাস্থ্যকর যে সকল খাবার রয়েছে প্রত্যেকটির খাবার স্বাদ খুব একটা ভালো হয় না ঠিক তেমনি কুলেখাড়ার পাতার ক্ষেত্রেও তাই। তবে কুলেখাড়া পাতার পুষ্টিগুণ জানলা আপনি অবাক হয়ে যাবেন। কারণ, এটি শুধুমাত্র ভিটামিন সি সমৃদ্ধ নয় বরং এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়ামও রয়েছে। 
 
তাছাড়া আমাদের চারপাশে যে শাক সবজি গুলো রয়েছে তার তুলনায় কুলেখাড়া পাতায় আয়রনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পুরুষের বন্ধ্যাতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কুলেখাড়া পাতা বেশ উপদেয়। যুগ যুগ ধরে পুরুষের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় কুলেখাড়ার বীজ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি আফ্রোডিসিয়াক হিসেবে কাজ করে এবং শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং সিরাম টেস্টোস্টেরন করতে পারে।

কুলেখাড়া পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন এই  পাতার বৈজ্ঞানিক নাম কি?  কুলেখাড়া শব্দটি এসেছে মূলত 'কোকিলাক্ষা" শব্দ থেকে যার অর্থ হলো কোকিলের মত চক্ষু। কিছু কিছু স্থানে কুলেখাড়া গাছ গোকুলকাটা, কান্তাকালিকা বা কুলিকারহা বা ক্ষরিক নামেও বহুল পরিচিত।
 
এটি একটি একবর্ষজীবী খাড়া শাখা বিহীন বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এই কুলেখাড়া গাছের কান্ড কন্টকময়।এটি দেড় দুই ফুট উঁচু হয় আবার জায়গা হিসেবে তিন থেকে চার ফুটও উঁচু হতে দেখা যায়। কুলেখাড়া গাছে কাঁটা থাকে ছয়টি এবং কাঁটাগুলো ১.৫-৩.৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।কুলেখাড়া গাছের কাঁটাগুলো সোজা বা বক্র কাক্ষিক কন্ঠক বিশিষ্ট চতুষ্কুনি এবং পর্বে ৮ টি বৃন্তক বা অর্ধ বৃন্তক পাতা বিশিষ্ট।
 
কুলেখাড়া গাছ জন্মানোর পরে প্রথম দিকে গাছে কোন কাটা হয় না। তবে আশ্বিন কার্তিক মাসের পর থেকে পাতার গোড়া থেকে কাঁটা বের হয়। কুলেখাড়া কে হিন্দিতে অনেকে তালমাখনা বলেন এবং ইংরেজিতে বলেন Marsh Barbel. আর এর সংস্কৃত নাম হল কোকিলাক্ষ।কুলেখাড়া আকান্তুস পরিবারের একটি উদ্ভিদ।
 
এর বৈজ্ঞানিক নাম Hygrophila Auriculata. কুলেখাড়া পাতা ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, ইন্দোচীন, মায়ানমার, শ্রীলংকা, পাকিস্তান এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় আফ্রিকায় বেশ বিস্তৃত । এ সমস্ত দেশে বিভিন্নভাবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। কুলেখাড়া গাছ ধান ক্ষেত গর্ত বা জলের ট্যাংকের কাছে আদ্র জমিতে বেশি জমে থাকে।

আয়ুর্বেদে কুলেখাড়া পাতার ব্যবহার

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আয়ুর্বেদেও কম নয়। আয়ুর্বেদে কুলেখাড়া পাতার ব্যবহার আমাদের অনেকেরই অজানা। আয়ুর্বেদে সাধারণত কুলেখাড়া পাতার বীজ শিকড় এবং পঞ্চাঙ্গ অর্থাৎ কুলেখাড়া গাছের পাঁচ অংশ যেমন মূল, ফুল ,কাণ্ড, ফল এবং পাতা একসাথে পুড়িয়ে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকে হয়তো জানেনও না যে কুলেখাড়ার পাতা ,শিকড় তথা বীজ বেশ কিছু উপকারী রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর। 

যেমন- অ্যালকালয়েডস মিউসিলেজ, ফাইটোস্টেরোল ও সুগন্ধি তৈল পদার্থ। এছাড়াও রয়েছে আরো কিছু উঠছে চোখ যেমন ডাইয়াসটেজ ও লিপেজ যা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কুলেখাড়া পাতায় এগুলো ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যা আমাদের বিভিন্ন রকম দৈহিক সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

কুলেখাড়া পাতা সেবনের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। শুধু কুলেখাড়া পাতা নয়, প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো মন্দ দুটি দিকই থাকে। কুলেখাড়া পাতাও এর ব্যতিক্রম নয়। কুলেখাড়া পাতার বিভিন্ন ঔষধি গুণের পাশাপাশি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তো চলুন কুলেখাড়া পাতা সেবনর ফলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক ---
  • শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময় অথবা আপনি যখন সন্তান ধারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং গর্ভবতী অবস্থায় কুলেখাড়া পাতা আপনার না খাওয়াটাই ভালো। আর যদি খেতে চান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।
  • আপনাদের যাদের ক্রনিক এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা কুলেখাড়া পাতা থেকে দূরে থাকুন।
  • যাদের হাইপার সেনসিটিভ রয়েছে তাদের এই পাতা এড়িয়ে চলা উচিত।
  • কোন কিছু মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া একদমই ভালো নয়। আপনি মাত্রাতিরিক্ত কুলেখাড়া কাণ্ডের রস খেলে আপনার বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত মাত্রায় কুলেখাড়া খাওয়ার ফলে আপনার বদহজম হতে পারে।
  • আবার কারো কারো অতিরিক্ত কুলেখাড়া পাতার রস খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
  • আবার অনেকের ক্ষেত্রে মাত্রতিরিক্ত কুলেখাড়া পাতা সেবনের ফলে গ্যাস অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে কুলেখাড়া পাতার যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে সেগুলো উপকারিতার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত সেভাবে পাওয়া যায়নি।

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার অভিমত

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এবার বিস্তারিত ভাবে আজকের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছেন। বিশ্বের সব ঔষধি গুণাবলী থাকার কারণে কুলেখাড়া গাছকে জাদুকরী ভেষজ বলা হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন চিকিৎসায় কুলেখাড়া গাছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বিশেষ করে যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে তারা এই কুলেখাড়া পাতার রস সেবন করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কে বাড়াতে পারেন খুব দ্রুত। তবে কুলেখাড়ার পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও আমাদের সকলেরই জেনে রাখা উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই সেবন করা উচিত। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url