রসুনের অজানা ২০টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ও অপকারিতা

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? ভরা পেটে রসুন খেলে কি হয় জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
রসুন
কারন আজকে আমরা আপনাদের জানাবো রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা, ভরা পেটে রসুন খেলে কি হয় , খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা, কখন , কিভাবে রসুন খাবেন এবং রসুন সম্পর্কিত সকল যাবতীয় তথ্য। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক রসুনের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রসুনের অজানা ২০টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ও অপকারিতা

রসুন খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্যকর উপকারিতা

রসুন খাওয়ার উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের দৈনন্দিন খাবারে ব্যবহৃত একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হল রসুন। তাছাড়া বিভিন্ন তরিতরকারিতে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য পেঁয়াজ ,আদা এবং মরিচের সাথে রসুনও ব্যবহৃত হয়। আবার অনেকে আছেন যারা রোশনের আচার খেতেও খুব পছন্দ করেন। যারা এই রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে এখনো জানেন না চলুন তাহলে আপনাদের জানিয়ে দিই রসুন খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে--
রসুন
  • রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: যারা প্রায়শই শারীরিক দুর্বলতায় ভুগে থাকেন রসুন তাদের জন্য হতে পারে একটি মহৌষধ। কারণ রসুনে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এন্টিফাঙ্গাল গুনাগুন যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে পারে। তাছাড়া রসুনে রয়েছে এলিসিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা খুব সহজেই আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম।

আরো পড়ুনঃ  তেলাকুচা পাতার ১০টি কার্যকরী উপকারিতা

  •  হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে রসুন: একটা বয়সে পরে নারীদের হাড়ের শক্তি অনেকটাই কমে যায়। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে এবং গিঁটে গিটে ব্যথা হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন দুই গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন বাড়িয়ে হাড় ক্ষয় রোধ করে এবং যাদের কম থাকে তাদের কিছুটা বেড়েও যায়। ফলে নারীদের হাড় সংক্রান্ত সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়। তাছাড়া যেসব নারীদের মেনোপজ হয়ে গেছে, তারাও যদি নিয়মিত রসুন খান তবে ভালো উপকার পাবেন। এমনকি বৃদ্ধ বয়সে অস্টিও আর্থারাইটিস রোগ থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করে এই রসুন।
  • সুনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসে রসুন: আপনার সুনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস বজায় রাখতে সাহায্য করে রসুন। রসুন এতোটাই সুস্বাদু যে, এটি অল্প পরিমাণে কোন চর্বি বা ক্যালোরি প্রদান না করেই আপনার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাদ যোগ করতে পারে। আর তাই আপনি যদি রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমাতে চান এবং পাশাপাশি স্বাদযুক্ত খাবারও খেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি লবণের প্রতিস্থাপন হিসেবে নিশ্চিন্তে রসুন ব্যবহার করতে পারেন।
  • রসুন প্রদাহ হ্রাস করে: প্রদাহ হল শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ, যা আপনার শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাছাড়া বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ আপনার শরীরে অনেক রোগের কারণও হতে পারে যেমন- ডায়াবেটিস ,আর্থাইটিস ,আলঝেইমার রোগ ইত্যাদি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন শরীরের প্রদাহের বায়োমার্কার হ্রাস করে শক্তিশালী প্রদাহ বিরোধী প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম।
  • রসুন রক্তের লিপিড কমাতে সাহায্য করে: রসুন আপনার রক্তের সিরামে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাছাড়া যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের অলিভ অয়েল এবং রসুন সংমিশ্রিত খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে করে তাদের কোলেস্টেরন এবং ট্রাই গ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। গেলো ২০১৬ সালে একদল গবেষক প্রমাণ করেছেন, প্রতিদিন আধা থেকে এক কোয়া রসুন খেলে আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৯% পর্যন্ত কমে যায়। এটি ১৯৯৩ সালের একটি অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের একটি গবেষণায় গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, রসুনের গুড়ো শুধুমাত্র যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় তা নয় বরং কাঁচা রসুন কোলেস্টোরেলের জন্য আরও বেশি উপকারী হতে পারে।
  • কার্ডিওভাসকুলার রোগের ক্ষেত্রে রসুন: রসুন আপনার কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুকি কমাতে বেশ সক্ষম। তাছাড়া রসুন এ রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল বৈশিষ্ট্য যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া এমনকি ইস্কেমিক স্ট্রোকের মতো ঝুঁকিও হ্রাস করতে পারে। মূলত রসুন স্থূলতায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে এবং প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা: অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে এই রসুন। আপনার শরীরে মুক্ত রেডিকেলের কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এন্টিঅক্সিডেন্ট সেবনের ফলে প্রশমিত হয়। তাছাড়া এক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতার জন্যই এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে বেশ সহায়ক।

আরো পড়ুনঃ কাগজি  লেবুর ১০টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ও অপকারিতা

  • স্মৃতিশক্তি বর্ধক রূপে কাজ করে রসুন: রসুন আপনার স্মৃতিশক্তিকে বাড়াতেও বেশ সাহায্য করে। রসুন এবং এর নির্যাস নিউরোএকটিভ হতে পারে যার অর্থ হল তারা আপনার নিউরাল টিস্যুকে উদ্দীপিত করতে পারে। ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে রসুনের ভূমিকা অনবদ্য।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রসুন: রসুন আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। আমাদের শরীরের LDL বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণত রক্তচাপ বেড়ে যায়। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত নিয়ম করে রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে আপনার রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
  • অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যে রসুন: নিয়মিত রসুন খেলে এটি আপনার পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। তাছাড়া রসুন আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর অণুজীব বজায় রাখতেও সাহায্য করতে পারে। শুধু তাই নয় রসুন ভালো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাস্থ্য এমনকি অন্যান্য শারীরিক সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়াতেও সক্ষম।
  • অ্যাথলিটিকের কর্মক্ষমতা বাড়াতে: ক্রীড়াবিদদের বিশেষ শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ৬ জন পুরুষের উপর একটি গবেষণা করে প্রমাণিত হয়েছে, রসুনের বিদ্যমান বিভিন্ন যৌগ উপাদান যা পেশীর কার্যক্ষমতা উন্নত করতে পারে এবং সেই সাথে ৫ মিলি লিটার পরিপক্ক রসুনের নির্যাস দিয়ে ১০ দিনের মত পেশির কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।
  • আন্টি ক্যান্সার হিসেবে কাজ করে রসুন: রসুন এবং রসুনের কিছু যৌগ উপাদান যা আপনার শরীরের অ্যান্টি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত রসুন সেবনে এটি আপনার ক্যান্সার এবং ক্যান্সার কোষের বিস্তারকেও বাধা প্রদান করে। রসুনের বিদ্যমান ক্যান্সার বিরোধী যে প্রভাব গুলো রয়েছে সেগুলো হল--

  1. রসুন আপনার কার্সিনোজেন নিষ্ক্রিয়কারী এনজাইম গুলোকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
  2. ক্যান্সারের বিকাশের সাথে সম্পর্কিত এমন সকল প্রদাহ হ্রাস করে।
  3. আপনার শরীরের DNA মেরামতে সমর্থন করে এই রসুন।
  4. ফলে নিয়মিত রসুন সেবনে আপনি স্তন ক্যান্সার, রেক্টার ক্যান্সার, প্রস্ট্রেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার এবং গলব্লাডার কে ক্যান্সার মুক্ত রাখতে পারেন।
  • পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন: নানান কারণে পুরুষের যৌন ক্ষমতা কমে যায়।সে ক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে ধীরে ধীরে আপনার যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। মূলত পুরুষের যৌন ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে সক্রিয় রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া। আর রসুন আপনার রক্ত চলাচল প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে বলেই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
  • ত্বকে এবং চুলের যত্নে রসুন: রসুন এ বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য জৈবিক বৈশিষ্ট্য যা আপনার ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর প্রতিষেধ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া নিয়মিত রসুন সেবনের ফলে এটি আপনার অনাক্রম্যতা, মাইক্রোসার্কুলেশন এর কারণে UVB ক্ষতি থেকে আপনাকে রক্ষা করতেও সহায়তা করে। তাছাড়া গবেষকদের ভারসামতে রসুনের নির্যাস ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের যা সমস্যা আছে 
  • তা দূর হতে পারে যেমন সোরিয়াসিস, এলোপেসিয়া, এরিয়াটা, ত্বকের ক্ষত নিরাময় ,ত্বকের ফাঙ্গাস জনিত আক্রমণ, চামড়া পক্বতা ইত্যাদি। ব্রণের সমস্যা সমাধানে এবং আপনার ত্বকে কোন দাগ থাকলে তাতেও রসুন বেশ কার্যকরী। তাছাড়া আপনি যদি নিয়মিত রসুন খান এতে আপনার ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কখনোই পড়বে না। আপনার চুলকে শক্তিশালী, মজবুত এবং ঝলমলে করতেও রসুনের ভূমিকা অনবদ্য।
  • ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে রসুন: অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে সর্দি, কাশি, ঠান্ডা অনেকের লেগেই থাকে। আবার অনেকে আছেন যাদের অ্যালার্জি জনিত কারণে সারা বছরই সর্দি-কাশিতে ভুগতে থাকেন। এর ফলে আপনার ফুসফুসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুটি অনেকটাই বেড়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে রসুন সেবন করতে পারেন তাহলে এই ফুসফুস সংক্রমণের এই ঝুঁকি থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন। আপনি যদি রসুন পিষে এর রস নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনার ফুসফুসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি প্রশমিত হবে।
  • রসুন কোষের ক্ষতি রোধ করে: রসুন এ বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা "সেল ড্যামেজ" এবং "এজিং" রোধ করে। আর তাই নিয়মিত রসুন সেবনের ফলে আপনার ব্রেনের কোষের ড্যামেজ কম হয়ে অ্যালঝাইমারস ও ডিমেনসিয়ার মত রোগের হাত থেকেও আপনি রক্ষা পেতে পারেন।
  • মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: নিয়মিত রোশন সেবনে এটি আপনার শরীরের রক্তে সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি ভীষণই উপকারী।
  • রসুন হজম শক্তি উন্নত করে: যারা পেটের নানারকম প্রদাহুনে ভুগছেন রসুন তাদের জন্য হতে পারে একটি অন্যতম পাথেয়। কেননা নিয়মিত রসুন সেবনে এটি আপনার বদহজম গ্যাস অম্বল এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা ও দূর করতে পারে।
  •  রক্ত বিষমুক্ত হয়: আপনি যদি প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে ২ কোয়া রসুন খান তবে আপনার রক্তে থাকা বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে অপসারিত হতে শুরু করবে। এর ফলে আপনার ত্বক এবং শরীর উভয়ই চাঙ্গা এবং সতেজ হয়ে উঠবে।
  •  রসুন শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে: অন্যান্য ঔষধ সেবনের থেকে রসুন সেবন করলে এটি আপনার শরীরকে বেশি ডি-টক্সিফাই করতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রসুন ক্রিমি পরিত্রাণ, সাংঘাতিক জ্বর, ডায়াবেটিস, বিষন্নতা এবং ক্যান্সারের মতো বড় বড় রোগ প্রতিরোধেও সক্ষম। তাছাড়া নিয়মিত রসুন সেবনের ফলে এটি নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ,হুপিং কাশি, ফুসফুসের সংক্রমণ ইত্যাদি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।
  • যক্ষা প্রতিরোধক হিসেবে রসুন: আপনার যদি টিবি বা যক্ষার কোন সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে আপনি সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুনকে কয়েক অংশে বিভক্ত করে বারবার খেতে থাকুন ।এতে করে আপনার যক্ষা বা টিবি সহজে নির্মূল হবে।
  • প্লাক জমাতে বাধা দান: নিয়মিত রসুন সেবনের ফলে এটি আপনার শিরা-উপুশিরায় প্লাগ জামাতে বাধা প্রদান করে। তাছাড়া রসুন শিরা-উপশিরার মারাত্মক রোগ যেমন অথেরোস্কেলেরোসিস এর হাত থেকে খুব সহজেই রক্ষা করে।
  • রসুন ওজন কমায়: যারা ওজন কমাতে চান তারা সকালে রসুনের সাথে গরম পানি এবং লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এভাবে কিছুদিন রসুন সেবন করলে আপনার ওজন খুব দ্রুতই কমে যাবে।
  • ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু ঘটিত রোগ প্রতিরোধে রসুন- সেই ইস্যু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু ঘটিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে রসুন ব্যবহৃত হয়ে আসছে।গবেষণায় দেখা গেছে শিশুদের কৃমি দূর করতে রসুনের নির্যাস বেশ ভালো কাজ করে। তাছাড়া রসুনের নির্যাস থেকে এক প্রকার "মাউথ ওয়াশ" তৈরি করে যা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার মাড়িতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ অনেকটাই হ্রাস পায়।
  • চোখের যত্নে রসুন: নিয়মিত রসুন সেবনে একটি আপনাকে আপনার চোখের ছানি পড়ার হাত থেকেও রক্ষা করতে পারে। শুধু তাই নয় দাঁতের ব্যথাতেও রসুন বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তি দেয়: অনেকে আছেন যাদের রাতে ঘুম হয় না বা কোন কারণে রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর ঘুম আসতে চায় না।যার ফলে আপনি নিদ্রাহীনতায় ভুগেন। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ রসুন সেবন করেন তাহলে অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

সম্মানিত পাঠক, আশা করছি আপনারা রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণে অবগত হয়েছেন। তাই বলবো, যারা রসুনকে এতদিন উপেক্ষা করতেন এই উপকারিতা গুলো জানার পর নিশ্চয়ই রসুন ব্যবহারে আপনি উৎসাহী হবেন।

রসুন খাওয়ার কিছু অপকারিতা

রসুন খাওয়ার অপকারিতা এর উপকারিতা থেকে খুবই নগণ্য। প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদানের কিছু উপকারী এবং অপকারী দিক রয়েছে। ঠিক তেমনি রসুনেরও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছু না খাওয়াটাই ভালো। আপনি যদি প্রয়োজন এর তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণ রসুন খান তাহলে এটি আপনার শরীরে উপকারীর থেকে অপকারিতাই ডেকে আনবে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে রসুন খাওয়ার ফলে কি কি অপকারিতা দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই--
  • আন্টিকোয়াগুলান্ড মূলত রক্ত পাতলা কারী হিসেবে পরিচিত এবং বেশিরভাগই হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা গ্রহণ করে থাকেন। ফলে তাদের খুব বেশি পরিমাণ রসুন খাওয়া উচিত নয় ।কারণ এটি আপনার শরীরের রক্ত পাতলা করার প্রভাবকে যুক্ত করতে পারে। তাছাড়া যারা ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ঔষধ সেবন করে থাকেন তাদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
  • যাদের শ্বাসকষ্ট এবং শরীরে দুর্গন্ধ সমস্যা রয়েছে তাদের রসুনের, তাই রসুনের শ্বাস এড়িয়ে চলতে তাদের এটি না খাওয়াটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • গবেষণায় জানা গেছে মাত্র অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে রসুনে থাকা রাসায়নিক উপাদান এলিসিন যা আপনার লিভারে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
  • রসুন এ বিদ্যমান সালফার যা আপনার পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে । যার ফলে খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • আপনি দীর্ঘদিন যাবত অতিরিক্ত রসুন খেলে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘদিন রসুন খেলে ঘাম বেশি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত রসুন খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয় আর এই দুর্গন্ধের প্রধান কারণ হচ্ছে রসুনে বিদ্যমান সালফার উপাদান।
  • অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে হাইফিমা" হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ এটি আইরিশ ও কর্নিয়ার মাঝে রক্ত ক্ষরণ ঘটতে পারে ।এতে আপনার দৃষ্টিশক্তি চিরতরের জন্য হারিয়েও যেতে পারে।
  • মাত্রাতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে আপনার মাথা ঘোরার মত সমস্যা হতে পারে ।কারণ রসুন বেশি খাওয়ার ফলে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে আর নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো এবং বমি বমি ভাব।
  • আমাদের শরীরে যকৃতের প্রধান কাজ হল রক্ত পরিশোধন, চর্বি ও প্রোটিন বিপাক এবং শরীর থেকে অ্যামোনিয়া অপসারণ করা। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে রসুনে থাকা এলিসিন উপাদান আপনার যকৃতে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে যদি আপনি মাত্রাতিরিক্ত রসুন খান।
  • আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবত মাত্র অতিরিক্ত রসুন খেতে থাকেন তাহলে আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং লাল লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। কারণ রসুন এ বিদ্যমান অ্যালাইনেজ নামক একটি এনজাইম যা ত্বকের ফুসকুড়ির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে যারা যোনিপথের সংক্রমে ভুগছেন তাদের রসুন খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ রসুন যোনিপথের কমল টিসুগুলোকে জ্বালাতন করে খামির সংক্রমণ কে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত রসুন খান সেক্ষেত্রে এটি নিঃশ্বাসের গন্ধ, এসিডিটির সমস্যা, হজম সংক্রান্ত সমস্যা ,রক্তপাতের মত বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই সুস্বাদু মশলাটি আপনি পরিমিত পরিমাণ গ্রহণ করুন।

রসুনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান

রসুন এ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি এবং বায়োএক্টিভ যৌগ যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।এবার চলুন রসুনের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
প্রতি এক কোয়া বা ৩ গ্রাম রসুনে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান:
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ০.৯ মিলিগ্রাম
ভিতামিন বি৬ ০.০৪ মিলিগ্রাম
মাঙ্গানিজ ০.০৬ মিলিগ্রাম
প্রোটিন ০.২ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ০.১ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১ গ্রাম
ক্যালরি ৫কিলো ক্যালরি
 
এছাড়াও রসুন এ রয়েছে এলিসিন নামক একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা ক্যান্সার সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর। আর এই এলিসিন নামক উপাদান রসুন এ পাওয়ার কারণে রসুনকে সুপারফোডেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আপনি কখন, কিভাবে রসুন খাবেন?

রসুন কখন খাবেন: রসুন খাওয়ার উপকারিতা পেতে চাইলে রসুন কখন খেতে হবে সে নিয়মটিও আপনাকে জানতে হবে।আমরা অনেকেই ভাবি রসুন শুধুমাত্র খালি পেটেই খেতে হয়। কিন্তু রসুন শুধু সকালে খালি পেটেই খেতে হবে এমনটি একেবারেই নয়। বরং রসুন ভরা পেটে খাওয়াও উত্তম। তবে হ্যাঁ, সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া সবচেয়ে ভালো।আবার আপনি বিকেল ,দুপুর বা রাতে খাবারের আগেও যেকোনো সময় রসুন খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, দিনে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া শরীরের জন্য সবথেকে বেশি উপকারী।

কিভাবে রসুন খাবেন: আপনার যদি কাঁচা রসুন খেতে অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে আপনি ধনেপাতার সঙ্গে বেটেও রসুন খেতে পারেন। আবার যাদের পেটের প্রদাহ রয়েছে তারা বিভিন্ন খাবারের সাথে যেমন- নারকেল বা কচুবাটায়ও আপনি রসুন যোগ করে খেতে পারেন। তাছাড়া সালাদ বা দইর সাথে মিশিয়েও রসুন খাওয়া যায়। আবার গোটা রসুনের কোয়া খেতে অস্বস্তি হলে আপনি কুচি কুচি করে কেটেও খেতে পারেন।
আপনি রসুনের তেল বানিয়েও সেই তেল খেতে পারেন এবং আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।রসুন খেলে যেহেতু মুখে দুর্গন্ধ হয় তাই এই দুর্গন্ধ ঠেকাতে আপনি একটু পার্সলে পাতা চিবিয়ে নিতে পারেন, টুথপেস্ট ব্যবহার করে দাঁত মাজুন ,অথবা মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার মুখের রসুনের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

কিভাবে রসুন খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে

রসুন কিভাবে খেলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যাবে এই প্রশ্ন আমাদের কম বেশি সকলেরই। আপনি প্রতিনিয়ত রসুন খাচ্ছেন কিন্তু উপকার পাচ্ছেন না। আবার আপনি হয়তো জানেনও না রসুন কিভাবে খেলে সেটি শরীরের পক্ষে বেশি উপকারী। তাহলে চলুন কিভাবে রসুন খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায় চলুন সে সম্পর্কে জেনে নিন-
  • রসুনের ভালো উপকারিতা পাওয়ার জন্য সাধারণত সকালে খালি পেটে খেতে বলা হয়। কারণ রসুনের যে সালফার কম্পাউন্ড থাকে চিবিয়ে খেলে সেটার কার্যকারিতা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • অনেকেই আছেন যারা রসুনের ঝাঁঝালো স্বাদের জন্য খেতে পারেন না, তারা রসুনের সাথে সামান্য মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • তাছাড়া আপনি বিভিন্ন খাবারের সাথে যেমন- ভর্তা, শাক রান্না এবং মুড়ি মাখানোতেও কাঁচা রসুন দিয়ে খেতে পারেন।
  • আপনি কখনোই রসুন ভেজে খাবেন না। কারণ,রসুন ভেজে খেলে বা রান্না করলে আগুনের তাপে এর প্রধান রাসায়নিক উপাদান এলিসিনের গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই আপনি কাঁচা রসুন কেটে ১৫ মিনিট খোলা জায়গায় ছড়িয়ে রাখুন তারপর খান ।এতে এলিসিন খুব সহজেই হজম হয়।
  • আপনি রসুন দিয়ে আচার তৈরি করেও খেতে পারেন। রসুনের আচার খেলে তাতে জীবাণু নাশক কোন গুণ পাওয়া যায় না। তবে অন্যান্য উপকারিতা পাওয়া যাবে।

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই।অনেকেই আছেন যারা কাঁচা রসুন খেয়ে থাকেন । এই কাঁচা রসুন যেমন কারো জন্য মহা ঔষধ ,তেমনি আবার কারো জন্য বিষে পরিণত হয়। তো চলুন কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক-
কাঁচা রসুনের উপকারিতা:
  • বিশেষজ্ঞদের মতে কাঁচা রসুন খেলে হার্ট অনেক সুস্থ থাকে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
  • আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে ২ কোয়া কাঁচা রসুন খান। তারপর সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন ।এতে করে আপনার শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যাবে। আবার আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে এর সাথে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ও খেতে পারেন।
  • আপনি যদি প্রতিদিন ৪ কোয়া করে কাঁচা রসুন খান তাহলে এটি আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে। কাঁচা রসুন খাওয়ার কার্যকারিতা এতটাই যে, রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে এটি ওষুধের সঙ্গেও পাল্লা দিতে পারে।
  • আপনার ডায়েটে রসুনের উপস্থিতি কোলেস্টেরলের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তের শর্করের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে রসুন জাদুকরি ভূমিকা পালন করে। যেহেতু তাপের প্রভাবে রসুনের এলিসিন যৌগ তার ঔষধি গুণ হারিয়ে ফেলে সেজন্য আপনি রান্নার পরিবর্তে কাঁচা রসুন বেশি খাবেন।
  • বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া এবং পরিবেশ দূষণের ফলে যে ফ্রি রেডিকেলস গুলো তৈরি হয় তা মানব দেহের হার্ট এবং সমস্ত শরীরের জন্যই ক্ষতিকর। কাঁচা রসুন এ রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা এই ক্ষতি খুব ভালোভাবে রেখে দিতে পারে।
  • নিয়মিত কাঁচা রসুন সেবনের ফলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন লেভেল বেড়ে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হয়। তাছাড়া পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে এই কাঁচা রসুন।
  • আপনি যদি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে কাঁচা রসুন খান। এতে আপনি অনেক বেশি একটিভ থাকবেন।
  • কাঁচা রসুন এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বেশি থাকার কারণে অ্যালজাইমার ও ডিমেনসিয়ার প্রকোপও কমে যায়। হলে আপনার সংক্রমণজনিত অসুখ-বিসুখ কম হয় এবং আয়ুও বেড়ে যায়।
  • কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতা
  • কাঁচা রসুন খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতাও রয়েছে। তো কাঁচা রসুন খেলে কি কি অপকার হতে পারে চলুন সেসব জেনে nii--
  • যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায় ,খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে এমনকি বমিও হতে পারে।
  • প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত কাঁচা রসুন সে বনের ফলে আপনার আইরিশ ও কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটে আপনি দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো ঝুঁকিতেও করতে পারেন।
  • কাঁচা রসুন এ থাকা কিছু উপাদান জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোয়েসোফাজিয়াল রিফ্লেক্স ডিজিটের অন্যতম কারণ হতে পারে।
বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল স্টাডি তে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রসুন খেতে থাকলে আপনার ঘামের সমস্যা দেখা দিতে পারে ।তাই রসুন কারা, কতটুকু পরিমাণ খাবেন তা জেনে তবেই খাবেন। নইলে কিন্তু আপনি বিপদে পড়ে যাবেন ।কারণ শরীরের জন্য কোন কিছু বেশি খাওয়া একেবারেই ভালো নয়। প্রয়োজনে আপনি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে রসুন সেবন করতে পারেন।

কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম

রসুন খাওয়ার পরিপূর্ণ উপকারিতা পেতে আপনাকে কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে।কাঁচা রসুন খাওয়া ভালো নাকি রান্না করার ওষুধ খাওয়া বেশি ভালো এই নিয়ে অনেকের মধ্যেই নানান রকম মতবিরোধ রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন রসুন রান্নায় মসলা হিসেবে খাওয়ার থেকে কাঁচা রসুন খাওয়াটাই অধিক শ্রেয়। কেননা রসুন রান্না করলে আগুনের তাপে রসুনের মধ্যে যে এলিসিন এসিড রয়েছে সেটি নষ্ট হয়ে যায়। এই এলিসিন অ্যাসিড আপনার শরীরে ক্যান্সারকে বাসা বাঁধতে বাধা প্রদান করে 

এবং সেই সাথে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।আর তাই রান্নার থেকে কাঁচা রসুন খেলেই আপনার শরীরে এলিসিন প্রবেশ করবে। আপনি কাঁচা রসুন খাওয়ার আগে ১-২ কোয়া হালকা হাওয়ায় কিছুক্ষণ রেখে দিন তারপর খান। এতে আপনার বেশি উপকার পাবেন। পুষ্টিবিদদের মতে কাঁচা রসুন খেতে অনেকেরই অসুবিধা হয়। তবে নিম্নোক্তভাবে রসুন- খেলে আপনার কোন অসুবিধা হবে না। যেমন --
  • প্রথমত: যারা কাঁচা রসুন প্রথমবার খাচ্ছেন তারা অল্প পরিমাণ দিয়ে শুরু করবেন।
  • দ্বিতীয়তঃ আপনি প্রতিদিন খালি পেটে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাবেন।
  • তৃতীয়তঃ যেকোনো ভারী খাবারের সাথে আপনি ১-২ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারেন বা কোন ফল বা সবজির রসের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • চতুর্থত: ভাত বা রুটির সাথে কাঁচা রসুনের কোয়া গুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে খেয়ে ফেলতে পারেন।

খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই।সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া মূলত রসুনের কার্যক্ষমতা কে বাড়িয়ে দেয় এবং একে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকে পরিণত করে। এবার চলুন আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি সকালে খালি পেটে রসুন খেলে আপনি কি কি উপকার এবং অপকার পেতে পারেন---
রসুন

সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা:
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে: আপনি যদি সকালে খালি পেটে রসুন খান তাহলে রসুনে বিদ্যমান যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে: আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়তে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া করে রসুন খান। এতে রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগের সৃষ্টি করে তা আর করতে পারে না।
  • হৃদপিন্ডের শক্তিবর্ধক হিসেবে: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন পানি পানি দিয়ে যদি গিলে খেতে পারেন তাহলে আপনার হৃদপিণ্ড হবে শক্তিশালী এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বৃদ্ধির কারণে আপনার হৃদপিণ্ডের ব্লকগুলোও আর বাড়বে না। যার ফলে আপনার বুকের ব্যথা কমে যাবে এবং সিঁড়ি। পেয়ে ওপরে উঠতেও আপনাকে তেমন কোন বেগ পোহাতে হবে না।
  • পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে: পুরুষের যৌন ক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া করে রসুন খেলে পুরুষের যৌন শক্তি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে: আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে 2 রসুন খান তাতে আপনার ত্বক ভালো থাকবে এবং ত্বকে বার্ধক্য জনিত কোন ছাপও পড়বে না। আবার সকালে খালি পেটে রসুন সেবনের ফলে আপনার ত্বকে যদি ব্রণ থাকে তবে সেটি দ্রুত শুকিয়ে যাবে এবং ব্রণের দাগও দূর হয়ে যাবে।
  • বিপাক ক্রিয়ার উন্নতিতে: সকালে খালি পেটে রসুন খেলে সারারাত চলা আপনার বিপাকক্রিয়ার কাজ উন্নত হয়। তাছাড়া আপনার শরীরের দূষিত টক্সিনো মূত্রের মাধ্যমে অপসারিত হয়।
  • শীতকালে ঠান্ডার প্রবণতা কমাতে: শীতকালে আপনার যদি খুব বেশি ঠান্ডা লেগে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি সকালে ১ কোয়া রসুন খেলে ভালো উপকার পাবেন। তাছাড়া পরপর দুই সপ্তাহ একটানা রসুন খেলে আপনার ঠান্ডা লাগার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে।
  • সকালে খালি পেটে রসুন সেবন আপনার হাইপার টেনশন ,স্ট্রেস এবং পেটে হজমের গন্ডগোল রোধ করে। আবার স্ট্রেস থেকে পেটে গ্যাসের সমস্যা হলে সেটিও প্রতিরোধ করে খালি পেটে রসুন খাওয়া।
  • সম্মানিত পাঠক, তাহলে বুঝতেই পারছেন সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেলে অনেক রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। আর তাই নিজেকে সুস্থ সবল রাখতে আজ থেকে আপনি সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার অপকারিতা:
সকালে খালি পেটে রসুন খেলে এর অপকারিতা থেকে আপনি উপকারী দিকটাই বেশি পাবেন। তবে সবার ক্ষেত্রে রসুন কিন্তু উপকারী নয়। কারো কারো জন্য রসুন মারাত্মক ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। এবার চলুন সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
  • সকালে খালি পেটে রসুন খেলে অনেক সময় আপনার ডায়রিয়ার মত সমস্যাও হতে পারে। কারণ রসুন এ রয়েছে সালফার যা আপনার পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে এবং ডায়রিয়া হওয়ার পেছনে এই সালফার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
  • শরীরের রক্তস্বল্পতা রক্তচাপ ইত্যাদি সমস্যায় সকালে খালি পেটে রসুন না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়াটা বিপদজনক হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবে সকালে খালি পেটে রসুন সেবন করতে পারেন।
সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার অপকারিতা গুলো উপকারি থেকে একেবারেই নগণ্য। তারপরেও সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে উপরিউক্ত বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত।

ভরা পেটে রসুন খেলে কি হয়

রসুন খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি ভরা পেটেও রসুন খেতে পারেন।রসুন সাধারণত বিভিন্ন তরকারিতে মসলা হিসেবে খাওয়া হয়। আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের শারীরিক সুস্থতার জন্য সকালে খালি পেটে কিংবা রাতে কাঁচা রসুন খান। রসুন খাওয়ার উপযুক্ত সময় মূলত সকালে খালি পেটে। তবে যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা খাওয়ার পরে ভরা পেটেও রসুন খেতে পারেন। ভরা পেটে রসুন খেলে কি হয় চলুন তা জেনে নিই ---
  • ভরা পেটে রসুন খাওয়ার সবচেয়ে উপকারী দিক হলো আপনার গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা থাকলে সেটি অনায়াসেই দূর হয়ে যাবে।
  • আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে খাওয়ার পরে ভরা পেটে রসুন খান।
  • ভরা পেটে রসুন খেলে আপনার হজম শক্তিও বৃদ্ধি পায়। হলে পেটে বদহজম হয় না।
  • ভরা পেটে রসুন খেলে আপনার শরীরের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে অনেক সময় বমি বমি ভাবের উদ্রেগ হয়। সেক্ষেত্রে আপনি ভরা পেটে রসুন খেতেই পারেন। এতে আপনার আর বমি বমি ভাব হবে না।
  • ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি রোজ ভরা পেটে রসুন খান।
সম্মানিত পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে ভরা পেটে রসুন খেলে কি হয় তা জানতে পেরেছেন। খালি পেটে রসুন খেলে আপনি কি উপকার পাবেন ,ভরা পেটে রসুন খেলেও আপনি সেই একই উপকার পাবেন।

ঔষধি গুণে ভরপুর কালো রসুনের উপকারিতা

কালো রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন কি? রসুন এমন একটি ঝাঁঝালো সবজি যার রান্নার মসলা এবং ভেষজ ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ঠান্ডাই আপনার শরীরকে সুস্থ এবং উষ্ণ রাখতে রসুন হতে পারে একটি বিকল্প চমৎকার উপায়। কিন্তু আপনি কি জানেন রসুন শুধুমাত্র যে সাদা রংয়ের হয় তা নয় বরং কালো রংয়ের রসুনও রয়েছে। এই কালো রসুনের পুষ্টি এবং গুণাগুণ দুটোই সাদা রসুনের থেকে অনেকাংশে বেশি। 

সাধারণত সাদা রসুনকে ফার্মেন্টেড করে কালো রসুন তৈরি করা হয় এশিয়ার মত বিভিন্ন দেশ যেমন- জাপান, থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়ায়। বর্তমানে এই কালো রসুনও সুপারফুড হিসেবে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে এর পুষ্টিগুণের কারণে। তাহলে চলুন জেনে নিন সুপারফুড কালো রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা-
  • কালো রসুন যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে কালো রঙে জন্মায় না, তাই সাদা রসুনকে গাজন করলে তার রঙ পরিবর্তিত হয়ে কালো হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে গাজন করার পরে যখন রসুনের রং পরিবর্তিত হয় তখন এর বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতাও অনেকাংশেই বেড়ে যায়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই কালো রসুনকে সুপারফুডের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
  • সাদা রসুন কে ফারমেন্টেড করার পুষ্টিগুণও দ্বিগুণ হয়ে যায়। ফলে কালো রসুন ভিটামিন বি১, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, সোডিয়াম ,ভিটামিন বি২ ,ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, এবং ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ হয়।
  • কালো রসুন উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সক্ষম। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরল, ক্লান্তি এবং স্ট্রেট এর ঝুঁকি কমাতে সুপার ফুড হিসেবে কাজ করে।
  • অন্যদিকে, কালো রসুন এ বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট যা মুক্ত রেডিক্যাল এর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে। এই কালো রসুন আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ,শরীরের শক্তি যোগাতে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • কালো রসুন এ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি ।এটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
  • কালুর রসুনের আরেকটি অন্যতম গুণ হলো ,এটি শরীরে প্রোটিন এবং কোলাজেনের উৎস হিসেবে কাজ করে। আর এই কোলাজেন আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া এটি আপনার প্রোটিন জয়েন্ট এবং হাড় মজবুত করনেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কালো রসুন বেশ উপকারী বলে মনে করা হয়। কারণ কালো রসুন এ রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্য যা আপনার শরীরে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • ইনটেক ওপেন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, কালো রসুন খাওয়ার ফলে ভিসারাল ফ্যাট, এপিডিডাইমাল ফ্যাট এবং লিভারের ওজন অনেকটাই কমে যায়।
  • আবার জার্নাল অফ ফুড এন্ড ড্রাগ এনালাইসিসে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু কালো রসুনের অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে তাই এর নিয়মিত সেবনে অনেক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকতে পারে।তবে আয়ুর্বেদে এটি স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী বলে মনে করা হয়।
  • কালো রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে এতে ফ্লাভোনয়েড ,অ্যালকালয়েড এবং পলিফেনল এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও কালো রসুন এ রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি , এবং কোলাজেনসহ অনেক পুষ্টিকর উপাদান।
  • কালো রসুনে বিদ্যমান অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা মানবদেহকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ এবং অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • কালো রসুন এ রয়েছে উচ্চমাত্রার এস-এল সিস্টেইন যা আপনাকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে।
  • বায়ো মেডিকেল রিপোর্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কালো রসুনের নির্যাস বা জুস আপনার কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর। এছাড়াও কালো রসুন মানবদেহের লিউকেমিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার এবং ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।
  • পেটের হজম সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কালো রসুন বেশ উপকারী।
  • অনেক সময় রক্ত প্রবাহে বাধার কারণে আপনার শরীরে ফোলা ভাব দেখা যায়। তাই আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালো রসুন অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে শরীরের ফোলা ভাব অনেকটাই কমে যাবে।
  • কালো রসুন আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া কালো রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে।

মধু ও রসুন একসঙ্গে খাবেন যেভাবে

রসুন খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি রসুনের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। মধু এবং রসুন একসাথে কিভাবে খাওয়া যায় জানেন কি? রসুনের মধ্যে রয়েছে ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুন যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে। তদ্রুপ, মধুর মধ্যেও রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। সুতরাং এই দুটি উপাদান যদি একসঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে মজা না হয় তাহলে তার উপকারিতাও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।
 
কিন্তু ঠিক কিভাবে রসুনের সাথে মধু মেশালে তা দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে তা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। তো চলুন আপনি মধু এবং রসুন একসঙ্গে কিভাবে মজিয়ে খাবেন সেই পদ্ধতিটি আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
  • রসুনের পরিমাণ-এক কোয়া রসুন ২০ টির মত
  • মধুর পরিমাণ- ২৫০ গ্রাম এবং
  • বায়ুরোধি একটি কাঁচের শিশি।
প্রস্তুত প্রণালী:
  • প্রথমেই আপনি রসুনের খোসা ছাড়িয়ে কোয়া গুলো একটি পরিষ্কার সুতি কাপড়ের সাহায্যে ভালো করে মুছে পরিষ্কার করে নিন।
  • অতঃপর পরিষ্কারকৃত রসুনের কোয়াগুলো বায়ুরোধী কাঁচের শিশিতে রেখে দিন। খেয়াল করবেন কাঁচের শিশির মধ্যে যেন কোন প্রকার জল না থাকে।
  • এবার শিশির মধ্যে আপনি মধু ঢেলে দিন। রসুনের কোয়াগুলো যেন মধুর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
  • ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার মধু এবং রসুনের মিশ্রণ।রসুন এবং মধু একসাথে মেশানো হয়ে গেলে এক মাস এই ভাবে রেখে দিন। তবে দিন তিনেক পরপর একটি পরিষ্কার চামচ দিয়ে রসুন নেড়ে দিতে হবে।
  • সতর্কতা:
  • মধু এবং রসুনের এই মিশ্রণ তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কোনভাবেই যেন রান্না ঘরের তাপ, সূর্যের আলো বা জলের সংস্পর্শে যেন মধু- রসুন মিশ্রিত শিশিটি না আসে।

ত্বকের যত্নে রসুনের উপকারিতা

রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এতক্ষণ জানলাম। এবার আপনাদের জানাবো ত্বকের যত্নে রসুনের উপকারিতা কি কি  হতে পারে ।আমাদের প্রায় সকলেরই কমবেশি ত্বকে ব্রণের সমস্যা রয়েছে। এই ব্রণ থেকে রক্ষা পেতে আমরা অনেকেই নানা রকম ক্রিম বা কসমেটিক্স ব্যবহার করে থাকি যা ত্বকের জন্য ভীষণই ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এই সমস্ত ক্রিম ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই মুখের ব্রণ দূর করতে বা ত্বকের যত্নে ক্রিম ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে আমরা রসুন ব্যবহার করতে পারি । তো চলুন আপনার ত্বকে আপনি রসুন কিভাবে ব্যবহার করবেন সে উপায় জানিয়ে দিচ্ছি--
  • আপনি প্রথমে রসুন নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে অথবা পাটায় ছেঁচে নিয়ে এর রস বের করে সেই রস আপনার ত্বকের ব্রণে লাগান। রস লাগানোর মিনিট পাঁচেক পর আপনি মুখ ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে আপনি যদি ৭-১৫ দিন ব্যবহার করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার মুখের ব্রণ এবং কালচে ভাব অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।
  • আমাদের শরীরের লোমকূপে ময়লা/ধুলাবালি জমে সেখান থেকে ব্রণের সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং ত্বকে কালো দাঁগ পড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি রসুন ব্যবহার করতেই পারেন। এক্ষেত্রে রসুন এবং একটি টমেটো ব্লেন্ডারে একসাথে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। অতঃপর এই পেজটি আপনার ত্বকে লাগান এবং মিনিট দশের পর ঠান্ডা পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। ব্যাস, তারপর খেয়াল করবেন আপনার মুখের ময়লা এবং লোমকূপে জমে থাকা ধুলাবালি নোংরা ও পরিষ্কার হয়ে গেছে।
  • এলার্জির কারণে অনেক সময় শরীরে লালচে চাকা চাকা দাগের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আপনার ক্ষতস্থানে রসুনের রস লাগিয়ে মেসেজ করবেন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে এলার্জির লালচে দাগ দূর হয়ে যাবে এবং সেই সাথে ত্বকের জ্বালাপোড়াও কমবে।

চুলের যত্নে রসুনের উপকারিতা

রসুন এ রয়েছে সালফার, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জিংক যা আপনার মাথার চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার চুলকে ঝলমলে ,সিল্কি এবং চুল পড়া রোধ করতে চান তাহলে আপনি আপনার চুলের যত্নে রসুন ব্যবহার করতেই পারেন। তো চলুন চুলের যত্নে রসুন কিভাবে ব্যবহার করবেন সে উপায় সম্পর্কে আপনাকে জানাচ্ছি--
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
  • রসুনের পরিমাণ- ৭-৮ কোয়া
  • পেঁয়াজ- ১ টি
  • অলিভ অয়েল তেলের পরিমাণ- আধা টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার:
প্রথমেই আপনি ৭-৮ কোয়া রসুন এবং একটি পেঁয়াজ নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। অতঃপর আধা টেবিল চা চামচ অলিভ অয়েল তেল গরম করে নেবেন। এই গরম অলিভ অয়েল তেলের সাথে রসুন এবং পেঁয়াজের পেস্ট এর মিশ্রণটি মিশিয়ে একসাথে গরম করতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি বাদামী বর্ণ ধারণ করে। অতঃপর পেঁয়াজ এবং রসুনের পেস্টটি বাদামী বর্ণ ধারণ করলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নেবেন।
 
ঠান্ডা হওয়ার পর আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো করে লাগাবেন। লাগানোর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আপনার মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত একদিন পরপর ব্যবহার করলে আপনার মাথার ত্বক যেমন পরিষ্কার থাকবে তেমনি আপনার চুল হবে সিল্কি , ঝলমলে এবং চুলের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে।

রসুন খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা

রসুন খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও রসুন খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। শুধু রসুন নয় বরংপ্রত্যেকটি খাদ্য উপাদান খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু না কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তেমনি রসুন খাওয়ার ক্ষেত্রেও আপনার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
রসুন খাওয়ার পর আপনি প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।
  • গর্ভকালীন সময়ে বা গর্ভাবস্থায় রসুন না খাওয়াটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কারণ গর্ভাবস্থায় আপনি যদি রসুন খান তাহলে আপনার প্রসব বেদনা বেড়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরাও রসুন খাবেন না। এতে আপনার বুকের দুধের স্বাদ পাল্টে যেতে পারে।
  • লিভার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • যাদের রসুন খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় তারা রসুন খাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন।
  • ডায়রিয়া, বুকে জ্বালাপোড়া বা বমি বমি ভাব হলে রসুন না খাওয়া শরীরের জন্য ভালো
  • যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা রসুন খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে সুতরাং আপনাদের যাদের এসিডিটি বা অম্বল সমস্যা রয়েছে তারা রসুন খাওয়া থেকে নিজেকে সংযত রাখুন।
  • দুর্বল বা সংবেদনশীল পেটের লোকেরা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন ।কেননা রসুন খাওয়ার ফলে পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার মত সমস্যা হতে পারে।
  • খুব ছোট বাচ্চাকেও রসুন খাওয়ানো উচিত নয়।
সুতরাং রসুন খাওয়ার ফলে আপনার যদি কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয় তবে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া

রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমাদের আর্টিকেল পড়ে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। রসুন যদিও মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে সেই প্রাচীনকাল থেকে রসুন ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারণ রসুনের মধ্যে বেশ কিছু ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রসুন শুধুমাত্র তে খাবারের স্বাদই বাড়াই তা নয় বরং এর গুনাগুণ গুলোও শরীরের খাবারের উপকারিতা বাড়ায়। 
 
তবে রান্নার স্বাদ অটুট রাখতে রসুনের কোন জুড়ি নেই।প্রচুর প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় রসুনকে সুপারফুডের মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আপনি যদি রসুন খেতে অভ্যস্ত না হন তাহলে এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি আজ থেকেই নিয়ম করে পরিণত পরিমাণ রসুন খাওয়া শুরু করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url