তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম কি আপনার জানা আছে? যদি না জানা থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
তালমাখনা-খাওয়ার-৬-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
কারণ, আজকে আমরা আলোচনা করব তালমাখনা খাওয়ার নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। সাথে আরো আলোচনা করবো তালমাখনার দাম, আপনি তালমাখনা কোথায় পাবেন। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্র: তালমাখনা খাওয়ার  অপকারিতা

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। তালমাখনার ঔষধি বীজে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার এবং এটি অত্যন্ত কম ফ্যাট যুক্ত। কিন্তু আমরা যদি তালমাখনার পুষ্টিগুণ বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাই এটি বিভিন্ন রোগের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী। তাহলে চলুন দেরি না করে প্রথমেই জেনে নিন উপকারি এই ভেষজের উপকারিতা সম্পর্কে--
  • শারীরিক দুর্বলতা কমাতেঃ অনেকেই আছেন যারা সঠিক  পুষ্টি সম্পূর্ণ খাবার খাওয়ার পরেও শরীরে দুর্বলতা অনুভব করেন। এই দুর্বলতার কারণে কোন কাজ ঠিকমতো করতে পারেন না। ঘরে বসে বসে আপনার শরীর আরও দুর্বল হয়ে যায়। আপনি যদি  আপনার শরীরের এই দুর্বলতা কমাতে তাহলে বলবো আপনি আজ থেকেই তালমাখনা আপনার খাওয়া শুরু করুন । এতে আপনার শরীরের দুর্বলতা কমে আসবে।
  • কিডনির সমস্যা সমাধানেঃ আমাদের অনেকের মধ্যেই বেশি বেশি বাইরের খাবার এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে খুব অল্প বয়সে কিডনি সমস্যা দেখা যায়। আবার অত্যধিক মাত্রায় ব্যথার ওষুধ খেলেও অনেক সময় কিডনির সমস্যা হতে পারে। তো আপনাদের যাদের কিডনির সমস্যা এখনো হয়নি তারা তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন। কারণ, তালমাখনা আপনার হজম ক্রিয়া সহজ  করে এবং কিডনির সমস্যা সমাধানে ভালো কাজ করে।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানেঃ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আমাদের কমবেশি প্রায় সকলেরই। অনেকেই আছেন যাদের জীবিকার তাগিদে বাইরে খেতে হয়। আবার বর্তমান সময়ের ফাস্টফুড খেয়ে অনেকে গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন। এর ফলে বুকে অসহ্য রকমের জ্বালাপোড়া হয়। গ্যাসের সমস্যা হলে আমরা কি করি?
  •  চট করে একটা ওষুধ খেয়ে ফেলি। ফলে দ্রুত গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যায়। এভাবে ওষুধ খেয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দ্রুত সমাধান হলেও একটা সময় পর ওষুধ খেতে খেতে এতে আর কাজ করবে না। তাই ঔষধ খাওয়ার পরিবর্তে আপনি গ্যাসের সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খেয়ে দেখতে পারেন। কারণ, এটি বুকের জ্বালাপোড়া, পেটের ফোলা ভাব কমাতে বিশেষ ভাবে উপকারী।
  • হরমোনের সমস্যা সমাধানেঃ অনেকেই আছেন যারা হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন। হরমোনের এই  সমস্যার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দেয় শরীর দুর্বল থাকে এবং সেই সাথে হরমোনের কারণে অনেক মেয়ের সহবাসের ইচ্ছাও কমে যায়। হরমোনের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আজ থেকেই তালমাখনা খাওয়া শুরু করতে পারেন। কারণ, তালমাখনা হরমোনের সমস্যা সহ শরীরের সকল দুর্বলতার সমস্যার সমাধানে খুব ভাল কাজ করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তিঃ যাদের পেটে খাবার সহজে হজম হতে চায় না বা হজমের সমস্যায় ভুগছেন অথবা যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা তালমাখনা বীজ খেলে এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কেননা তালমাখনা আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে। এছাড়াও তালমাখনা আপনার পাকস্থলী সমস্যা সমাধানে এবং বায়ু নিশ্বরক হিসেবেও কাজ করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ আপনার যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তালমাখনা হতে পারে তাদের আপনার জন্য একটি উপাদেয় মহা ঔষধ। আপনি যদি তালমাখনা দিয়ে মেডিসিন তৈরি করে খেতে পারেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস অনেকটাই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই, ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করতে আপনি তালমাখনা খেতেই পারেন।
  • কিডনি ও লিভার কে সুরক্ষিত রাখতেঃ আমাদের শরীরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি এবং লিভার। এই দুটি জিনিস অকেজো হয়ে গেলে মানুষের শরীরে অকেজো হয়ে যায়। আপনি যদি কিডনি এবং লিভার কে সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়ম করে নিয়মিত তালমাখনা খান। কেননা কিডনি এবং লিভার কে ভালো রাখার জন্য তালমাখনা অনেক উপকারী একটি ভেষজ।
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসেবেঃ অনেক পুরুষ রয়েছে যাদের বিভিন্ন কারণে যৌন শক্তি কমে যায়। আপনি যদি আপনার যৌন শক্তিকে বৃদ্ধি করতে চান সে ক্ষেত্রে বলবো আপনি নিয়মিত তালমাখনা খান। কারণ, তালমাখনা যৌন শক্তি বৃদ্ধি কারক হিসেবে কাজ করে।
  • দেহের পুষ্টি বৃদ্ধিতেঃ আপনারা যারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন তাদের জন্য তালমাখনা হতে পারে একটি কার্যকরী সমাধান। যারা পুষ্টিগ্নতায় ভুগছেন তারা শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করার জন্য সকাল এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সাথে তালমাখনা খাবেন। এতে করে আপনার শরীর থেকে পুষ্টিহীনতা দূর হবে।
  • বাতের ব্যথা দূরীকরণঃ আমাদের একটু বয়স হলে অনেকের বাতের সমস্যা দেখা দেয়। বাতের এই ব্যথা প্রচন্ড কষ্টদায়ক। তাই আপনাদের যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা যদি তালমাখনার পাতা পিষে পেস্ট করে ব্যথার জায়গায় লাগাতে পারেন তাহলে আপনার ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
  • মূত্রনালীর সমস্যা সমাধানেঃ আপনার মূত্রনালীর বিভিন্ন সমস্যা যেমন প্রস্রাবের সমস্যা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা, মূত্রথলিতে পাথর হওয়া এ সকল সমস্যা দূর করতে আপনি তালমাখলা খাওয়া শুরু করতে পারেন। কেননা তালমাখনা মূত্রথলির পাথর দূর করতেও সক্ষম।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম তালমাখনার উপকারিতা। উপরিউক্ত গুনাগুণ ছাড়াও তালমাখনা আপনার শরীরে হরমোনের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম

তালমাখনা কিভাবে কোন নিয়মে খেতে হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু আপনি কি জানেন, ভিন্ন ভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে তালমাখনা খাওয়ার ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম রয়েছে। এবার চলুন আপনি তালমাখনা কিভাবে খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • তালমাখনা খাওয়ার সব থেকে কার্যকরী নিয়ম হলো, আপনি ১ গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ তালমাখনা ১-২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ভালো করে নেড়ে খাবেন। তবে সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি তালমাখনা বীজ রাত্রে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খালি পেটে সেটি খান। এটি খাওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিট পরে যদি নাস্তা করেন তাহলে বেশি উপকার পাবেন।
  • আপনি তালমাখনা বীজ খাওয়ার পূর্বে এটিকে ১৫-২০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। এরপর তালমাখনা বীজগুলো ধীরে ধীরে ফুলে উঠবে। তারপর এই বীজ সকালে আপনি খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবেন। এতে ভালো উপকার পাবেন।
তালমাখনা-খাওয়ার-৬-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

  • আপনি আপনার শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ৩ গ্রাম পরিমাণ মত তালমাখনা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরে খাবেন।
  • আপনার যদি যৌন দুর্বলতা থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতি রাতে ১ গ্লাস দুধে ৩ গ্রাম পরিমাণ মত তালমাখনা ভিজিয়ে রেখে সেই দুধ পান করবেন। আবার ঘুমানোর পূর্বে ৩ গ্রাম পরিমাণ তালমাখনা ২-৩ চা চামচ মধুর সাথে ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে খালি পেটে পান করবেন। এতে আপনার যৌন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • আপনার প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং দুপুরে অথবা যে কোন সময় আখের গুড়ের সাথে তালমাখনা ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পান করবেন। এতে আপনার প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হবে।
  • তালমাখনা শুধু যে দুধ বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলেই উপকার হবে তা কিন্তু নয়, আপনি যদি তালমাখনা খালি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেবন করেন সেক্ষেত্রেও উপকৃত হবেন।
  • তাছাড়া তালমাখনার পাশাপাশি আপনি কাতিলা গামও খেতে পারেন । এতে করে আপনি আরো ভালো এবং দ্রুত ফল পাবেন
সম্মানিত পাঠক, তালমাখনা নিঃসন্দেহে একটি উপকারী ভেষজ ঔষধ । আপনি যদি এটি সঠিক নিয়মে খান তাহলে আপনার শরীরের জন্য সেটি ভীষণই উপকার হবে। আপনি তালমাখনা বীজ ছাড়া খেতে চাইলে এটি পাউডার করেও খেতে পারেন।

তালমাখনা গাছের বৈশিষ্ট্য

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি।  তালমাখনা একটি অতি উৎকৃষ্ট ভেষজ উদ্ভিদ। এই গাছটি সাধারণত ৫০ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তালমাখনা গাছের কান্ড হতে বহু শাখা প্রশাখা বের হয় এবং এর ফুল উজ্জ্বল বেগুনি লাল কিংবা বেগুনি সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। 
 
তালমাখনা বীজ ছোট গোলাকৃতি দেখতে অনেকটা তিলের মত তবে বীজের বর্ণ গাড়ো খয়রি রঙের। তালমাখনার বীজ পানিতে ভেজালে চটচটে কিংবা লোদ বের হয়। তালমাখনা প্রচলিত নাম কুলেখাড়া নামেই বেশি পরিচিত। এর ইউনানী নাম তালমাখনা এবং আয়ুর্বেদিক নাম কোকিলাক্ষা। বৈজ্ঞানিক নাম Hygrophila auriculata(Sch.) Heyne. এবং এর ইংরেজি নাম star thorn.

তালমাখনা চেনার উপায়

তালমাখনা খেয়ে এর অপকারিতা এড়াতে আসল তালমাখনা চেনা ভীষণই জরুরী। তালমাখনা এক ধরনের বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। বর্ষজীবী উদ্ভিদ হলেও এর ফুল আসে সাধারণত ডিসেম্বর মাসে। এর ফুল লালচে বা বেগুনি রং ধারণ করে। তবে কিছু ফুল আবার সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। তালমাখনার এই ফুলের মধ্যে তৈরি হয় বীজ। 
 
তালমাখনা চেনার সব থেকে সহজ উপায় হলো তালমাখানা বীজ গুলো ছোট ছোট সরিষা দানার মত হয়ে থাকে এবং কালো রঙ্গের হয়। তালমাখনার ইংরেজি নাম Marsh Barbel। তাছাড়া তালমাখনা একটি পুষ্টিকর শুক্র বর্ধক, প্রফুল্লতা আনয়ন কারক ও খাদ্য হিসেবেও বিবেচিত। তালমাখনার মূল ব্যবহার্য অংশ হলো এর বীজ,
 
যা নিয়মিত সেবনের ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়। তাছাড়া তালমাখনা বীজ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান যেমন- ডাইয়াসটেস, অ্যালকালয়েডস, লিপেস, ফাইটোস্টেরল এবং এনজাইমে ভরপুর।
 
তালমাখনা বীজ অনেক ধরনের রোগের উপশমে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এর পাতা ও শিকড় গনোরিয়া, জন্ডিস, বাত সহ অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তালমাখনার বীজগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখলে চটচটে আঠালো হয়। এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন নিম্নভূমি অঞ্চলে যেখানে বছরে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে সেখানে পাওয়া যায়। 
 
তালমাখনার ফুলের মৌসুম সাধারণত হেমন্ত থেকে শীতকাল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং নদী এলাকায় এটি বেশি পাওয়া যায়। তালমাখনা শব্দটির সাথে আমরা তেমন একটা পরিচিত না। তবে ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ হওয়ায় এর ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিপূর্বেই জেনেছেন।

তালমাখনার পুষ্টি উপাদান

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা আমরা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। তালমাখনা বীজ নিঃসন্দেহে একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। তালমাখনা আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন কাঁচা, শুকনো ও ভেজে। সাধারণত তালমাখনা পরিবেশন এর পরিমাণ বেশ ছোট হয়ে থাকে। যেমন- এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম। এবার চলুন, এক আউন্স (২৮ গ্রাম) শুকনো এবং রোস্টেড তালমাখার জন্য একটি সাধারণ পুষ্টি তালিকা জেনে নেওয়া যাক----
  • ক্যালোরি- ১০৬ গ্রাম
  • মোট চর্বি- ০.৯ গ্রাম
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট-  ০.১ গ্রাম
  • সোডিয়াম-  ৮ মিলিগ্রাম
  • কোলেস্টেরন- ০ মিলিগ্রাম
  • ডায়েটারি ফাইবার- ১ গ্রাম
  • মোট কার্বোহাইডেট- 21 গ্রাম
  • মোট চিনি- ৩ গ্রাম
  • প্রোটিন- ৪ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম- ৩৯ মিলিগ্রাম
  • আইরন- ০.৮ মিলিগ্রাম এবং
  • পটাশিয়াম- ১৭৬ মিলিগ্রাম।
মনে রাখবেন, বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুতকৃত তালমাখনা প্যাকেটে অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং তেল মেশানো থাকতে পারে। যা পুষ্টির ভারসাম্যকে পরিবর্তন করে দেয়। তাছাড়া তালমাখনা খাওয়ার এতসব উপকারিতা পেতে ও অপকারিতা এড়াতে আপনি আজ থেকেই তালমাখনা খাওয়া শুরু করতে পারেন।

তালমাখনা মিক্স আপনি কিভাবে তৈরি করবেন

তালমাখনা মিক্স আপনি কিভাবে তৈরি করবেন জানেন কি? হয়ত জানেন না।এবার চলুন তালমাখনা মিক্স আপনি কিভাবে তৈরি করবেন সে সম্পর্কে জানাবো। অনেকেই আছেন যারা তালমাখনা মিক্স কিভাবে তৈরি করতে হয় তা জানেন না। তাহলে জেনে রাখুন, তালমাখানা মিক্স তৈরি করতে আপনার ৭টি উপাদানের প্রয়োজন হবে। উপাদান গুলো হল--
তালমাখনা-খাওয়ার-৬-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

  • তালমাখনা
  • ইসবগুল দানা(ভুষি নয়)
  • তোকমা দানা
  • মিশ্রী দানা
  • হালিম দানা এবং
  • কাতিলা গাম।
এই সাতটি উপাদান একত্রে মিশিয়ে আপনি একটি কাঁচের বৈয়াম এ সংরক্ষণ করে রাখবেন। তারপর প্রতিদিন সকালে ও রাতে ১-৩ চামচ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে ৩০ মিনিট পরে খাবেন। আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে তালমাখনা মিক্স খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার বিভিন্ন রোগের উপশম থেকে শুরু করে শরীরকেও সতেজ করবে। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।

তালমাখনা মিক্স পাউডার তৈরির নিয়ম

আপনি কাতিলাগাম, তোখমাদানা, ইসবগুল দানা, এবং তালমাখনা কে একত্রে মিশিয়ে পাটায় বেটে অথবা ব্লেন্ডারের মাধ্যমে গুড়ো করে তালমাখনা মিক্স পাউডার তৈরি করতে পারেন। এই পাউডার আপনি দুই বছর পর্যন্ত ঘরে সংরক্ষণ করতে পারবেন। তবে মাঝে মাঝে রোদে শুকিয়ে নিলে এতে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জমাট বাঁধবে না। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

কাতিলাগাম ও তালমাখনা একত্রে খাওয়ার নিয়ম

তালমাখনা সেবন করে এর থেকে সর্বাধিক  উপকারিতা পেতে  ও অপকারিতা এড়াতে আপনি তালমাখনা ও কাতিলাগাম একসাথেও খেতে পারেন। এতক্ষণ তো আমরা তালমাখনা মিক্স পাউডার তৈরি করা শিখলাম এবং তালমাখনা কিভাবে খেতে হয় তা জানলাম। এবার চলুন জেনে নিই কাতিলাগাম ও তালমাখনা একত্রে আপনি কিভাবে খাবেন--

আপনি ১ চামচ কাতিলাগাম এবং ১ চামচ তালমাখনা রাতে ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে খালি পেটে খাবেন। এতে আপনার রতিশক্তি, যৌন দুর্বলতা এবং লিঙ্গ উত্থানজনিত কোন সমস্যা যদি থাকে তবে তা দূর হবে। এগুলো যেহেতু সম্পূরক খাদ্য তাই আপনি চেষ্টা করবেন প্রতিদিন খাওয়ার। কারণ, স্বাভাবিক খাবারের মতোই এগুলো আপনি প্রতিদিন খেলে উপকার পাবেন এবং খাওয়া বন্ধ করে দিলে আবারো ধীরে ধীরে এর পুষ্টি স্বল্পতা বাড়তে থাকবে।

তাই পুষ্টিহীনতা দূর করতে আপনি কাতিলাগাম ও তালমাখনা নিয়মিত খাবেন। পরিশেষে তালমাখনা সম্পর্কে আপনাকে একটি কথাই বলবো, যে কোন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হলেই তালমাখনা খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। আপনার কোন সমস্যা না থাকলেও শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্য আপনি এটি সেবন করতেই পারেন।

তালমাখনা আপনি কোথায় পাবেন

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন তালমাখনা কোথায় পাবেন? সম্মানিত পাঠক, তালমাখনা কিনতে হলে আপনাকে আপনার নিকটস্থ বাজারে বানিয়াতির দোকানে খোঁজ করতে হবে। এসব বানিয়াতির দোকানে আপনি তালমাখনার সবগুলো উপাদান পেয়ে যাবেন। 
 
তাছাড়া অনেক সময় ফুটপাতেও এসব আইটেম নিয়ে কিছু কিছু হকার বসে বিক্রি করে থাকে। আপনি তাদের থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন। আবার যেসব পুরাতন মুদি দোকানে গাছ-গাছালি বা শিকড় বা বাকড় বিক্রি করে যাকে স্থানীয় ভাষায় বকাল বলে সেসব দোকানেও আপনি তাল মাখনা পেতে পারেন। আবার বর্তমান ডিজিটাল সময়ে
 
আপনি ঘরে বসে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম, ই-কমার্স এবং ফেসবুক পেইজ থেকেও তালমাখনা বীজ বা পাউডার সংগ্রহ করতে পারেন। এগুলো কেনার পরে আপনি ভালো করে পরিষ্কার করে নেবেন। যেন তাতে কোন প্রকার নোংরা ময়লা অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত তুষ বা ভুসি কোন কিছু না থাকে। সেটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।

তালমাখনার দাম কত ২০২৪

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা তো জেনেছেন। এবার নিশ্চয়ই উপকারী এই ভেষজের দাম সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে জেনে রাখুন, তালমাখনার দাম সবসময়ই একরকম থাকে না। আবার স্থান ভেদে এর দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী ১০০ গ্রাম তালমাখনার দাম পড়বে ৭০- ৮০ টাকা।
 
এছাড়া ৫০০ গ্রাম তালমাখনার দাম পড়বে ৩৫০- ৪০০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি তালমাখনার দাম পড়বে ৭০০- ৮০০ টাকা এবং ১০ কেজি তালমাখনার দাম পড়বে ৭০০০-৮০০০ টাকা। আপনি যদি পাইকারি মূল্যে তালমাখনা ক্রয় করতে চান সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি তালমাখনার দাম পড়বে ৮০০- ৯০০ টাকা।
 
আবার বিভিন্ন কোম্পানি এটার বিভিন্ন অবাঞ্ছিত অংশ অপসারণ করে ফ্রেশ ও প্রসিদ্ধতা এনে ১০০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রামের প্যাক অথবা কৌটা জাত করে প্রতি ১০০ গ্রাম তালমাখনা বিক্রি করছে ১২০-১৫০ টাকায়। তবে আপনি তালমাখনা কেনার সময় অবশ্যই বিশ্বস্ত দোকান বা অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে কিনবেন যাতে করে আপনি প্রতারিত না হন।

তালমাখনার কিছু অপকারিতা

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি এর আবার  গুটি কতক অপকারিতাও রয়েছে। তাছাড়া যে কোন খাবার বা ঔষধ আপনি যদি পরিমাণ মতো গ্রহণ করেন তবে সেটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিঃসন্দেহে উপকারী হবে। আর যদি মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করেন তাহলে সেটি উপকারের পরিবর্তে অনেক সময় আপনার শরীরের ক্ষতিকর দিকগুলো টেনে আনতে পারে। ঠিক তেমনি তালমাখনাও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সেবন করা উচিত। চলুন তালমাখনার অপকারিতা গুলো কি কি সে সম্পর্কে এবার জানা যাক---
  • আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত তালমাখানা খেয়ে ফেলেন সে ক্ষেত্রে আপনার পেটে বায়ুরোগ হতে পারে।
  • তাছাড়া তালমাখনা যেহেতু হরমোনের সমস্যা এবং শুক্র বর্ধক হিসেবে কাজ করে তাই পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেললে এটি আপনার হরমোন জনিত সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলতে পারে।
  • তালমাখনা আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করলেও অতিরিক্ত সেবনের ফলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা উল্টো আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • অনেকের আবার শুকনো তালমাখনা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। আপনি যদি সব সময় শুকনো তালমাখনা চিবিয়ে খেতে থাকেন তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • তালমাখনা আঠালো জাতীয় পদার্থ হওয়ার কারণে এটি কমপক্ষে 20 মিনিট বা তারও বেশি সময় ভিজিয়ে রেখে তবেই খাবেন। নয়তো আপনার পেটে অন্ত্র ক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • যাদের ওজন কম বা চিকন তারা তালমাখনা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। কারণ, তালমাখনা খেলে আপনার ওজন আরো হ্রাস পেতে পারে।
মনে রাখবেন, মাত্রাতিরিক্ত তালমাখনা সেবনের ফলে আপনার ডায়রিয়া বা হজম সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে আপনার এবডোমেনাল পেইন অর্থাৎ পেটে ব্যথাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তালমাখনা খাওয়া বন্ধ রাখবেন এবং সুস্থ হলে আবারও পরিমিত মাত্রায় খাওয়া শুরু করবেন।

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে অবগত হয়েছেন। যা আপনাদের নানা ধরনের রোগ হতে মুক্তি দিতে এবং আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। সুতরাং নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে তালমাখনা খেলে আপনি বিভিন্ন ধরনের উপকার পাবেন এটা বলাই বাহুল্য। উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনি তালমাখানা সেবন করুন এতে উপকারিতা পাবেন।

তবে আপনি যদি ঔষধি প্রয়োজনে তালমাখনা সেবন করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে বলবো, আপনি একজন বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন। আরেকটি কথা, আপনারা এই তালমাখানা বীজ শিশুদের হাতের নাগাল থেকে দূরে রাখবেন। কারণ, না বুঝে শিশুরা শুকনো তালমাখানা গিলে ফেললে সেটি গলায় আটকে যেতে পারে। আবার গিলে ফেললেও পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url