চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন বিস্তারিত জানুন
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা অনেকেই ব্যবহার করেন। কিন্তু তেলাকুচা পাতার রস কোন রোগে উপকারী তা অনেকেই জানেন না। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
কেননা আজকে আমাদের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জেনে নিতে পারবেন তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন চুলের যত্নে উপকারী এই ভেষজের ব্যবহার এবং তেলাকুচার রস কোন কোন রোগে ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করি ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা
- তেলাকুচা বা কুচিলা পাতার উপকারিতা
- তেলাকুচা গাছ দেখতে কেমন হয়
- তেলাকুচা গাছের চাষ পদ্ধতি এবং বিস্তৃতি
- তেলাকুচার পাতা এবং ফল আপনি কিভাবে খাবেন
- তেলাকুচার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
- তেলাকুচা পাতার ভর্তা রেসিপি
- তেলাকুচা পাতার রস কোন রোগে উপকারী
- চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
- তেলাকুচা পাতার অপকারিতা
- তেলাকুচা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম
- লেখকের বক্তব্য
কুচিলা বা তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
তেলাকুচা পাতা সাধারণত আমাদের বসতবাড়ির আশেপাশে, বনে জঙ্গলে এবং রাস্তার পাশে জন্মে থাকে। অবহেলিত এই তেলাকুচা গাছ এবং এই গাছের পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই উপকারী। শুধু তাই নয়, নানা ধরনের রোগ নিরাময়েও তেলাকুচা পাতার রস ব্যবহার করা হয়। সম্মানিত পাঠক, চলুন আর কথা না বাড়িয়ে উপকারি এই ভেষজের উপকারিতা গুলো চট জলদি জেনে নেওয়া যাক--
- মুখের রুচি বৃদ্ধিতে তেলাকুচা পাতাঃ যারা খাবারে রুচি জনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছেন তাদের জন্য তেলাকুচা পাতা হতে পারে একটি দুর্দান্ত মহা ঔষধ। যেহেতু তেলাকুচা পাতা একটি ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ পাতা সেহেতু আপনি নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খেলে আপনার মুখের রুচি বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুন: হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেলাকুচা পাতার ভূমিকা অনবদ্য। আপনি যদি ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন তাহলে তেলাকুচার কাণ্ড সহ পাতা ছেচে রস তৈরি করে আধা কাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে খাবেন। এতে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- যদি তেলাকুচা পাতার রস খেতে অসুবিধা হয় তাহলে আপনি তেলাকুচা পাতা ভাজি করেও খেতে পারেন। এতেও আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তেলাকুচাপাতা প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবেও কাজ করে।
- জন্ডিস রোগে তেলাকুচা পাতাঃ জন্ডিস রোগ হলে তেলাকুচার মূল ছেচে এর রস তৈরি করে খাবেন প্রতিদিন সকালে আধা কাপ পরিমাণ। এতে আপনার জন্ডিস রোগ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেরে যাবে।
- শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ (হাঁপানি নয়)- প্রচন্ড গরমে ঘাম হলে অনেক সময় বুকে সর্দি বা কাশি বসে যাওয়ার কারণে আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। আপনার যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ খাবেন। এতে আপনার শ্বাসকষ্ট দূর হবে।
- পায়ের ফোলা রোগ দূরীকরণেঃ দীর্ঘ সময় বসে থাকলে বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে অনেকেরই পা ফুলে যায়। একে বলা হয় পায়ের শোথ রোগ। আপনি যদি পায়ের শোথ রোগে ভুগেন তাহলে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে তেলাপোচার মূল ও পাতা ছেচে এই রস ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ খাবেন। এতে আপনার পায়ের ফোলা রোগ ও অনেকটাই প্রশমিত হবে।
- কাশি দূর করতে তেলাকুচা পাতাঃ কাশি উপশমে আপনি প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ৩-৪ চা চামচ তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে তাতে আধা চা চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে টানা ৩-৭ দিন খাবেন। এভাবে খেলে আপনার শ্লেষ্মা তরল হয়ে বেরিয়ে আসবে এবং আপনি কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- ফোড়া ও ব্রণ দূরীকরণেঃ আমরা অনেকেই মুখের ব্রণ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আবার অনেকেই আছেন যারা ব্রণ দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করেন। এতে উপকার তো হয়ই না বরং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কসমেটিকস ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে।
- ত্বকের এই ব্রনের সমস্যা দূর করতে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন তেলাকুচা পাতা। ব্রনের সমস্যায় আপনি তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁটে প্রতিদিন সকাল বিকাল ত্বকের ব্রণে লাগাবেন। এতে আপনার ব্রণ এবং ত্বকের কালো ছোপও দূর হবে। আবার শরীরে ফোড়া হলে আপনি যদি সেখানে তেলাকুচা পাতার রস প্রতিদিন সকাল বিকাল ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ফোঁড়ার ব্যথা থেকেও রেহাই পাবেন।
- স্তনে দুধের স্বল্পতা প্রতিরোধেঃ সন্তান প্রসবের পরে অনেকেরই স্তনে দুধ আসে না। এটি গর্ভকালীন সময়ে খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। আবার অনেকের শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আপনি তেলাকুচা পাতার রস হালকা গরম করে সকাল বিকাল ৭ দিন খেলে বেশ উপকার পাবেন। যদি তেলাকুচা পাতার রস তিতা হয় সেক্ষেত্রে আপনি মধুর সাথে মিশিয়েও এই রস খেতে পারেন।
- আমাশয় এর ক্ষেত্রেঃ আপনার পেটে আমাশয়ের সমস্যা থাকলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস প্রতিদিন সকাল বিকাল টানা ৭ দিন তিন থেকে চার চার চামচ পরিমাণ খাবেন। এতে আপনার আমাশয় দূর হবে।
- খাবারের অরুচি রোধেঃ অনেক সময় সর্দি হলে আমাদের মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায় এবং খাবারে অরুচি দেখা দেয়। সর্দিতে মুখে অরুচি হলে আপনি তেলাকুচা পাতা একটু সিদ্ধ করে নিয়ে সেটি ঘি দিয়ে শাকের মতো রান্না করেও খেতে পারেন। এতে আপনার মুখের রুচি বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি খেতে পারবেন।
- শ্লেষ্মা জ্বর দূরীকরণে তেলাকুচা পাতাঃ আপনার শ্লেষ্মা জ্বর দূর করতে তেলাকুচা পাতা এবং মুল পাটায় বেটে রস করে নেবেন। অতঃপর সেটি হালকা গরম করে সকাল বিকাল ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ মতো ২-৩ দিন খাবেন। এভাবে নিয়ম করে খেলে আপনার শ্লেষ্মা জ্বর খুব সহজেই দূর হবে।
- পরিপাক ক্রিয়াকে সহজ করতে তেলাকুচা পাতাঃ তেলাকুচা পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ থায়ামিন, যার ফলে এটি পরিপাকে বেশ সহায়ক। তাছাড়া থায়ামিন কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজ এ পরিণত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত তেলাকুচাপাতা সেবনের ফলে এটি আপনার প্রোটিন এবং চর্বি ঝরাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- পরিপাকতন্ত্র সুরক্ষিত রাখতেঃ আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে তেলাকুচা পাতা খেতেই পারেন। কারণ তেলাকুচা পাতায় এবং এর ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আশ। এই ফাইবার আপনার পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখে, মল বাড়ে এবং সফট হয়। ফলে আপনার এসিডিটি এবং আলসার জনিত সমস্যা ও দূর হয়।
- বৃক্ষ বা মূত্রথলিতে পাথর জমতে বাধা প্রদান করেঃ আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে তেলাকুচা পাতা খান তাহলে এটি আপনার মূত্রথলীতে পাথর জমতে বাধা প্রদান করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত ক্যালসিয়ামও পাথর হিসেবে মূত্রথলিতে জমতে পারে। কিন্তু তেলাকুচা পাতায় যে ক্যালসিয়াম রয়েছে তা পাথর হিসেবে কখনোই মূত্রথলিতে জমে না।
- অবসন্নতা প্রতিরোধেঃ যারা ডিপ্রেশন নামক মহামারি রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাদের নিয়মিত তেলাকুচা পাতা খাওয়া উচিত। কেননা তেলাকুচা পাতা অবসন্নতা কাটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ স্নায়ুবিধ নানা সমস্যার কারণে আমরা অনেক সময় অনেক কথা ভুলে যাই। কোনভাবেই স্মরণ করতে পারিনা। আবার কোন ঘটনা আমাদের মস্তিষ্কে খুব দেরিতে প্রতিক্রিয়া পায়। আপনার যদি স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে তেলাকুচা পাতা খান । কারণ, নিয়মিত তেলাকুচা পাতা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ব্রংকাইটিস প্রতিরোধেঃ জন্ডিসের পাশাপাশি অনেকে ব্রংকাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই ব্রংকাইটিস রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন তেলাকুচা পাতা। কারণ, ব্রংকাইটিস প্রতিরোধে তেলাকুচা পাতার ভূমিকা অনবদ্য।
- অধগত রক্তপিত্তেঃ অনেক সময় দেখা যায় অর্শের কোন লক্ষণ ছাড়াই রক্ত পড়ে। এতে কোন জ্বালা যন্ত্রনাও হয় না। এক্ষেত্রে আপনি তেলাকুচার মূল ও পাতার রস ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ গরম করে খেলে ২-৩ দিনের মধ্যেই আপনার রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
- বমনের প্রয়োজনেঃ অনেক সময় পেটে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন কিছু চলে গেলে সেক্ষেত্রে বমি করার দরকার পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আপনি যদি তেলাকুচা পাতার রস ৫-৬ চা চামচ গরম না করে কাঁচাই খান, তাহলে এর দ্বারা খুব দ্রুত বমি হয়ে তা বের হয়ে আসবে।
তেলাকুচা গাছ দেখতে কেমন হয়
চুলের যত্নে কুচিলা পাতার ব্যবহার জেনেছেন। এবার চলুন এই উপকারী ভেষজ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিন। যা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না। তেলাকুচা একটি লতা জাতীয় গাড়ো সবুজ রং এর নরম পাতা ও কান্ডবিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ লতার কাণ্ড থেকে আকশির সাহায্যে অন্য গাছকে আঁকড়ে ধরে বিস্তৃতি লাভ করে।
তেলাকুচা গাছের পাতা সাধারণত পঞ্চভুজ আকারের হয়ে থাকে এবং এর পাতা ও লতার রং গাড়ো সবুজ হয়। আমাদের বসতবাড়ির আশেপাশে, রাস্তার পাশে, বনে জঙ্গলে, জলাধারের পাশে এই তেলাকুচা উদ্ভিদ বংশবিস্তার করে। বাংলা মাস চৈত্র বৈশাখে তেলাকুচা রোপণ করতে হয়। তবে তেলাকুচা পাতার মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বৃষ্টি হলে তাতে নতুন করে পাতা গজায়
এবং কয়েক বছর ধরে সেই পুরনো মূল থেকেই গাছ জন্মে থাকে। শীতকাল ছাড়া প্রায়ই সব মৌসুমেই তেলাকুচার ফুল ও ফল হয়ে থাকে। তবে বর্ষাকালে অপেক্ষাকৃত বেশি ফুল ফোটে অন্যান্য সময়ের থেকে। তেলাকুচার ফুল দেখতে অনেকটা তারার মত পাপড়ি এবং লাউ ফুলের মত সাদা রংয়ের। তেলাকুচার ফল সাধারণত ২-৩ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় তেলাকুচা ফল দেখতে অনেকটা পটলের মতো এবং এর গায়ে সাদা ডোরা দাগ থাকে। তেলাকুচা গাছে ফল ধরার চার মাস পর এর ফল পাকে এবং তেলাকুচা ফল পাকলে সেটি লাল টকটকে হয়। এই লাল টকটকে ফল খুব সহজেই পাখিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে শালিক, বুলবুলি, টিয়া, বসন্ত বাউরীসহ বিভিন্ন পাখি ফলটি একবার চোখে দেখার জন্য ছুটে আসে এবং খেতেও দেখা যায়।
তেলাকুচা একেক স্থানে একেক নামে পরিচিত। যেমন বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বা বিভিন্ন দিকে অঞ্চল বিশেষে এটি কুচিল, কুদ্রা , টেন্ডুরা, তেলাকুচা বিম্বী, কেলাকুচ, তেলাহারি ইত্যাদি নামে পরিচিত। আবার বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ডালু আদিবাসীরা তেলাকুচা শাককে কুইচ্চাগেলেক ও কুইচ্চা গ্যাস বলে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গে তেলাকুচা কুদরী নামে পরিচিত। নেপালে তেলাকুচা পরিচিত কানক্রি নামে। সিলেট এবং হবিগঞ্জ জেলার মানুষের কাছে তেলাকুচা কাওয়ালুলি নামে পরিচিত।
তেলাকুচা গাছ দেখতে যেমনঃ
আবার পটুয়াখালী জেলায় তেলাকুচা মামা সিন্দুর নামে পরিচিত। অনেক অঞ্চলে তেলাকুচা পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তেলাকুচা গাছের ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল এবং ফল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তেলাকুচা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি তিতা এবং অপরটি মিষ্টি সাদ যুক্ত। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, তিতাটিকে তেলাকুচা এবং মিষ্টিটিকে তু-কেরি বলা হয়।
তেলাকুচা গাছের চাষ পদ্ধতি এবং বিস্তৃতি
তেলাকুচা এই উপকারী ভেষজ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই খানিকটা অনাদরে অবহেলায় জন্মে থাকে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এই তেলাকুচা গাছের চাষ করা হয় অতি যত্ন সহকারে। কেননা সেখানে এর ফল এবং কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেলাকুচা গাছের চাষের জন্য এর শিকড় সহ লতা এনে রোপন করলে অতি সহজেই তেলাপোতা গাছ জন্মে।
আবার এর বীজ থেকেও চারা তৈরি করা যায়। সাধারণত বাণিজ্যিক চাষাবাদ এর জন্য দুই থেকে আড়াই ফুট দূরত্বে তেলাকুচার চাষ করা হয়। তেলাকুচা গাছ চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হলো বেলে বা দোঁআশ বাংলা বৈশাখ-জ্যেষ্ঠ মাসে বৃষ্টি হলে তেলাকুচার বীজ বপন করতে হয় করতে হয়। তেলাকুচার বীজ বপন করার আগে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়
এবং বীজ বপণের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চারা গজায়। তেলাকুচা শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর বিস্তৃতি রয়েছে। মিষ্টি তেলাকুচা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকাতেও দেখা যায়।
তেলাকুচার পাতা এবং ফল আপনি কিভাবে খাবেন
চুলের যত্নে আপনি তেলাকুচা পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন তা খানিক আগেই জেনেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তেলাকুচা পাতা নানান রকম সবজির সাথে মিশিয়ে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। আবার কোন কোন এলাকায় এর ফল ও কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেলাকুচার কাঁচা ফল আপনি সবজি হিসেবে রান্না করে খেতে পারেন। আবার কাঁচা ফল পটলের মতো চিরে দুই ভাগ করে ভেজেও খেতে পারেন।
এর পাতা আপনি শাক হিসেবে ভেজে খেতে পারেন। এছাড়া তেলাকুচার কাঁচা ফল এবং কচি পাতা আপনি স্যুপ এবং সালাদ তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। ভারত এবং বাংলাদেশে তেলাকুচা শাক খাওয়া হলেও এর চাষ হতে তেমন একটা দেখা যায় না। তবে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন তরকারি এবং স্যুপে তেলাকুচার ফল ব্যবহার করা হয়। তেলাকুচার এই পাতা এবং ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই উপকারী।
বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসায় তেলাকুচার এই ফল এবং পাতার রস বেশ কিছু রোগে যেমন কুষ্ঠ, জ্বর, শোথ, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস এবং জন্ডিস রোগে ব্যবহৃত হয়। অনেকেই তেলাকুচা পাতা ভর্তা হিসেবে খেয়ে থাকেন। আবার যারা তেলাকুচা পাতার রস কাঁচা খেতে পারেন না তারা তেলাকুচা পাতাকে শুকিয়ে চূর্ণ করে রেখে সেটি খেতে পারেন।
তেলাকুচার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই এই পাতার পুষ্টি উপাদান জানতে চান।স্বাদের পাশাপাশি তেলাকুচা ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি সবজি। এবার চলুন তেলাকুচা পাতায় কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন--
প্রতি 100 গ্রাম তেলাকুচায় রয়েছে--
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
প্রোটিন | ১.২ গ্রাম |
আয়রন | ১.৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ০.০৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.০৭ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ১.৬ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৪০ মিলিগ্রাম |
এছাড়াও তেলাকুচা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী ।
তেলাকুচা পাতার ভর্তা রেসিপি
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা পেতে আপনি এই পাতা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের রেসিপি করেও খেতে পারেন।যারা তেলাকুচা পাতার রস খেতে পারেন না, তারা তেলাকুচা পাতা ভর্তা করেও খেতে পারেন। তাহলে চলুন তেলাকুচা পাতা আপনি ভর্তা করে কিভাবে খাবেন সে রেসিপি জানিয়ে দিচ্ছি-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- তেলাকুচাপাতা- ১ আটি
- শুকনো মরিচ অথবা কাঁচামরিচ- ৭-৮ টি
- রসুন- ৫-৬ কোয়া এবং
- পেয়াজ- ১-২ টি ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে আপনি একটি পরিষ্কার পাত্র নিয়ে সেটি চুলার আচে বসিয়ে দিন। অতঃপর শুকনো মরিচ গুলো সামান্য আছে টেলে নিন। মরিচ টেলে নেওয়া সম্পূর্ণ হলে আপনি তেল ছাড়াই সামান্য লবণ সহযোগে পেঁয়াজ এবং রসুনও হালকা আঁচে টেলে নিন যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি বাদামী রঙের না হয় । বাদামী রং হয়ে এলে আপনি টেলে নেয়া পেঁয়াজ এবং রসুনের মধ্যেই তেলাকুচা পাতা দিয়ে ৫-৭ মিনিট সিদ্ধ করে নিন।
মনে রাখবেন, তেলাকুচা পাতা সেদ্ধ করার জন্য আপনাকে আলাদাভাবে পানি যোগ করার প্রয়োজন হবে না কারণ তেলাকুচা পাতা থেকেই খানিকটা পানি বেরোবে। এবারে পানি শুকিয়ে এলে সিদ্ধ তেলাকুচা পাতা রসুন পেঁয়াজ এবং শুকনো মরিচ সহযোগে একসাথে পাটায় ভালো করে বেটে নিন। যদি পাটা না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ব্লেন্ডারেও ব্লেন্ড করেও নিতে পারেন। ব্যাস, তেলাকুচা পাতার ভর্তা একেবারে তৈরি। এই তেলাকুচা পাতার ভর্তা আপনি গরম ভাতে খেতে পারেন।
তেলাকুচা পাতার রস কোন রোগে উপকারী
সেই প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের উপশমে ব্যবহার করা হয় তেলাকুচা পাতার রস। এই পাতা ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ একটি পাতা। তেলাকুচা পাতায় রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ নানা ধরনের উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী। তো এবার চলুন তেলাকুচা পাতার রস কোন কোন রোগে উপকারী সে সম্পর্কে জেনে নিন--
- ব্রণ বাঁ ফোড়া প্রতিরোধে তেলাকুচা পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
- পাকস্থলীর সমস্যা রোধে তেলাকুচা পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
- পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয় তেলাকুচা পাতার রস।
- স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এই তেলাকুচা পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
- কিডনির পাথর প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় তেলাকুচা।
- ব্রংকাইটিস এবং জন্ডিসের মতো রোগ প্রতিরোধেও ব্যবহৃত হয় তেলাকুচা পাতার রস।
- পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা এবং আমাশয় প্রতিরোধে তেলাকুচা পাতার রস বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- জ্বর এবং হাঁপানি রোধে ব্যবহৃত হয় এই তেলাকুচা।
- অবসন্নতার প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেলাকুচা পাতার রস।
- স্তন্যে দুধ হীনতায় তেলাকুচা পাতার রস বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- ডায়াবেটিসের সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয় এই তেলাকুচা। সকালে খালি পেটে তেলাকুচাপাতার রস খেলে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- মুখের রুচি বৃদ্ধি করণে তেলাকুচা পাতার রস বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- খোস-পাঁচড়া ছুলি ইত্যাদি চর্মরোগে তেলাকুচা পাতার রস খেলে এবং ক্ষতস্থানে লাগালে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
- মাথাব্যথা দূর করতে তেলাকুচা পাতার রস তেলে মিশিয়ে মাথায় দিলে মাথাব্যথা খুব দ্রুত সেরে যায়।
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান চুলের বৃদ্ধি, পুষ্টি এবং সুরক্ষায় বিশেষভাবে সাহায্য করে। চুলের যত্নে তেলাকুচার উপকারিতা এখনো আমাদের অনেকেরই অজানাই রয়ে গেছে। আজ আপনাকে চুলের যত্নে এই পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানাব। তো চলুন জেনে নিন --
- খুশকি দূরীকরণেঃ তেলাকুচা পাতায় রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল গুণ। এই অ্যান্টি ফাঙ্গাল আপনার চুলের খুশকি দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধিতেঃ তেলাকুচা পাতার রস চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে চান তাহলে নির্দ্বিধায় তেলাকুচা পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
- চুল ঝলমলে/সিল্কি করতেঃ আপনি যদি আপনার চুলকে প্রাকৃতিক উপায়ে ঝলমলে সিল্কি করতে চান তাহলে নিয়মিত আপনার চুলে ব্যবহার করুন তেলাকুচা পাতার রস। কারণ, তেলাপোতা পাতার রস চুলকে সফট, ঝলমলে এবং সিল্কি করে খুব সহজেই।
- চুল পড়া রোধ করেঃ তেলাকুচা পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
- চুলের বৃদ্ধিতেঃ তেলাকুচা পাতায় বিদ্যমান ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি আপনার চুলের বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে তেলাকুচা বা কুচিলা পাতা ব্যবহারের নিয়ম:
এবার চলুন চুলের যত্নে আপনি তেলাকুচা পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি-
- প্রথমতঃ আপনি তেলাকুচা পাতা বেটে এর তেল তৈরি করে আপনার চুলে লাগাতে পারেন।
- দ্বিতীয়তঃ আপনি চাইলে তেলাকুচা পাতা শেভ করেও আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
- তৃতীয়তঃ তেলাকুচা পাতা বেটে অথবা ব্লেন্ড করলে যে রস বের হয় সেই রস আপনি আপনার চুলে লাগাতে পারেন।
সতর্কতা:
চুলের যত্নে তেলাকুচার রস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন --
- তেলাকুচা পাতার রস ব্যবহারের পূর্বে আপনি তেলাকুচা পাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে তবেই ব্যবহার করবেন।
- সবকিছু পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করাই ভালো। আর তাই অতিরিক্ত পরিমাণে তেলাকুচা পাতার রস ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়।
- তেলাকুচা পাতা ব্যবহারের পরে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে আপনি একজন চর্ম বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
তেলাকুচা পাতার অপকারিতা
তেলাকুচা পাতার তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো-মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। তেমনি চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে গুটিকতক অপকারিতা। আপনি যদি নিয়ম করে নিয়মিত তেলাকুচা পাতা সেবন করতে পারেন তাহলে অপকারিতার থেকে আপনি উপকারী দিকটাই বেশি পাবেন। আপনাদের যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের তেলাকুচা পাতা ব্যবহার না করাটাই ভালো।
কারণ, তেলাকুচা পাতা আপনার শরীরে এলার্জির উদ্রেক করতে পারে। এর জন্য আপনাকে প্রথমে তেলাকুচা পাতা খেতে হবে। খাওয়ার পরে যদি বুঝতে পারেন এলার্জির সমস্যা হচ্ছে, তবে পরবর্তীতে আর খাবেন না। তেলাকুচা পাতা আপনার শ্বাসকষ্ট এবং প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে বলবো যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে তারা তেলাকুচা পাতা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই ব্যবহার করবেন।
তেলাকুচা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম
তেলাকুচা এক প্রকার লতা জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। এর বোটানিক্যাল নাম হল Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। তেলাকুচা ইংরেজি scarlet gourd, ivy gourd, baby watermelon, little gourd এবং gentleman's toes নামে পরিচিত। তেলাকুচার অন্যান্য বৈজ্ঞানিক নাম গুলো হল- Cephalandra indica (সিফালাদ্রা ইন্দিকা) এবং Coccinia indica(কচ্চিনিয়া ইন্দিকা)।
আবার কন্নড় ভাষায় এর নাম Thonde kaayi। তেলাকুচা ক্রান্তীয় অঞ্চলের একটি লতা গাছ। গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, মূল এবং ফল সবটাই ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া তেলাকুচা পাতার রস কোন রোগে উপকারীতা আজকের আলোচনা থেকে ইতিমধ্যেই জেনেছেন।
লেখকের বক্তব্য
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার ব্যবহার বিধি সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। তেলাকুচা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিটা-ক্যারোটিন যা আমাদের বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকেও মুক্তি দিয়ে থাকে। তাছাড়া মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে তেলাকুচা পাতার ভূমিকা অনন্য।
আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে তেলাকুচা খান সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। আর তাই নিজেকে সুস্থ সুন্দর রাখতে আজ থেকেই আপনার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যোগ করে নিন তেলাকুচা পাতা।ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই রকম আরো তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন
পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য
আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url