আনারসের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয় জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
আনারসের-১৫-টি-গুরুত্বপূর্ণ-স্বাস্থ্য-উপকারিতা
কারণ, আজকে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনি আনারসের নানাবিধ উপকারিতা এবং গর্ভকালীন সময়ে এই আনারস ফল খেলে কি হয় তা জানতে পারবেন। সম্মানিত পাঠক, তাহলে চলুন  আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ আনারসের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

আনারস খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

আনারসের উপকারিতা পেতে আপনাকে খেতে হবে এই সুস্বাদু, মিষ্টি, রসালো মৌসুমী ফলটি। যদিও অনেকেই আছেন যারা আনারস খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এর উপকারিতা জানার পর আপনিও হয়তো আনারস খেতে চাইবেন। আনারস সম্পূর্ণরূপে কোলেস্টেরল এবং চর্বি মুক্ত একটি ফল। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। তাহলে আসুন কথা না বাড়িয়ে এই গলের গুন সম্পর্কে জেনে নিন--
  • আনারস হাড় মজবুত করেঃ একটু বয়স হলেহই আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা অনুভূত হয়। হাড় দুর্বল হয়ে যায়। হাড়ের এই সমস্যা দূর করতে আপনি খেতে পারেন আনারস। কারণ, আনারসে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আপনার হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া আনারসে থাকা ম্যাঙ্গানিজ আপনার হাড়কে করে তোলে মজবুত এবং শক্তিশালী।
  • দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়ঃ নিয়মিত আনারস খেলে এটি আপনার দাঁত ও মাড়িকে সুরক্ষা দেয়। কারণ, আনারসে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম এটি আপনার দাঁতকে যেমন গোড়া থেকে মজবুত রাখে তেমনি মাড়ির যেকোনো সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাছাড়া আনারস খাওয়ার ফলে আপনার দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ অনেকটাই কমে যায়।
  • শরীরে পুষ্টির অভাব দূর করেঃ যারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন তাদের জন্য আনারস হতে পারে একটি আদর্শ ফল। কারণ, আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম। তাই আনারস খাওয়ার ফলে খুব সহজেই আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ হবে।
  • হজমে সাহায্য করেঃ আপনারা যারা বদহজম বা হজমের সমস্যায় ভুগছেন,খাবার হজম হতে চায় না এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি আনারস খান। কারণ, আনারসে ব্রোমেলিন নামক একপ্রকার এনজাইম রয়েছে, যা আপনার হজম শক্তিকে উন্নত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • ভাইরাস জনিত জ্বর প্রতিরোধেঃ অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আমাদের জ্বর,  ঠান্ডা, কাশি লেগেই থাকে এবং শরীরে প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি বোধ হয়। এই সময় আনারস খেলে আপনার জ্বর, ঠান্ডা, কাশি খুব সহজেই দূর হবে। কারণ, আনারস প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় জ্বর, সর্দি, কাশি প্রতিরোধে এটি বেশ কার্যকর। তাছাড়া গলা ব্যথা এবং ব্রংকাইটিস দূর করতে আপনি আনারসের রস খেতে পারেন। এতে ভালো ফল পাবেন।
  • ওজন কমাতেঃ আনারস সম্পূর্ণরূপে একটি চর্বি বা ফ্যাট মুক্ত ফল। যার ফলে নিয়মিত আনারস বা আনারসের জুস পান করলে এটি আপনার ওজন কমাতে পুরোপুরি ভাবে সক্ষম। সুতরাং ওজোন কমানোর পাথেয় হিসেবে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় আনারস যোগ করতে পারেন।
  • রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখেঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যা আপনার দেহে রক্ত জমাটে বাধা প্রদান করে। এর ফলে আপনার শরীরে সিরাজ ধমনীর মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়।
  • চোখর উপকারিতায়ঃ অনেক সময় চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে একজন মানুষ অন্ধত্বকে বরণ করে নেয়। সাধারণত ম্যাকুলার ডিগ্রেডেসন রোগের কারণে এটি হয়ে থাকে। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন আনারস। কারণ, আনারসে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। সুতরাং চোখকে অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে হলে আপনি আজ থেকেই আনারস খাওয়া শুরু করুন।
  • কৃমি দূর করেঃ যারা পেটে কৃমি রোগের সমস্যায় ভুগছেন তারা আনারস কে পথ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। কারণ, আনারস দূর করতে বেশ ভালো কাজ করে। আপনি নিয়মিত আনারস খেলে আপনার পেটে কৃমির উৎপাত অনেকটাই কমে যাবে। পেটের এই কৃমি দূর করতে আপনি প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে খালি পেটে আনারস খাবেন।
আনারসের-১৫-টি-গুরুত্বপূর্ণ-স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  • ত্বকের যত্নেঃ আনারস ত্বকের যত্ন আনারস বেশ উপকারী। অল্প বয়সে অনেকের ত্বকেই বয়সের ছাপ পড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি খেতে পারেন আনারস। কারণ, আনারসে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং সেই সাথে আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তেও বাধা প্রদান করে। তাছাড়া তৈলাক্ত ত্বক,ব্রণ সহ ত্বকের কালো ছোপ দাগ দূর করতেও আনারস কার্যকরী।
  • উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ নিয়মিত আনারস খেলে এটি আপনার দেহের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির স্থিত হওয়াও প্রতিরোধ করে এই আনারস এবং এতে করে আপনার উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • মর্নিং সিকনেস কমায়ঃ আনারস এমন একটি ফল যা আপনি সকালে খালি পেটে খেলেও তাতে তেমন কোন ক্ষতি নেই। বরং সকালে আনারস খেলে এটি আপনার সকালের শারীরিক দুর্বলতা বা মর্নিং সিকনেস দূর করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেঃ ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগ প্রতিরোধেও আনারস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের ফ্রী রেডিক্যাল মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে ক্যান্সার সহ হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। 
  • কিন্তু আপনি যদি আনারস খান তাহলে এইসব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। কারণ, আনারসে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা আপনার শরীরকে ফ্রি মেডিকেল থেকে মুক্ত করে এবং ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিও আপনার শরীরের বাসা বাঁধতে পারে না।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ। এই ফাইবার বা আর আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যায় ভুগে থাকলে আজ থেকে আনারস খাওয়া শুরু করুন এতে আপনার কষ্ট কাঠিন্য দূর হবে।
  • জন্ডিস রোগ সারাতেঃ জন্ডিস রোগ সারাতে আনারসের ভূমিকা অনন্য। আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা আপনার দেহে শক্তি যোগায় এবং জন্ডিস এর মত রোগ প্রতিরোধেও সক্ষম।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ সেই প্রাচীনকাল থেকে আনারস বিভিন্ন ঔষধি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া আনারস ভিটামিন,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদানের ভালো উৎস হওয়ায় এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আনারসের এতসব উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও আপনি আনারস কেন খাবেন না বলুন তো!! আপনার শরীরের পুষ্টি থেকে শুরু করে শরীরকে সুস্থ সবল এবং রোগমুক্ত রাখার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি সাশ্রয়ী ফল হল হতে পারে আনারস। ফলে ছোট বড় প্রত্যেকেরই আমাদের আনারস খাওয়া উচিত।

আনারসের অপকারিতা

আনারসের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যারা আনারস খেতে পছন্দ করেন,তাদের অন্তত জেনে রাখা উচিত আনারস খেলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাহলে চলুন আনারস খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি হতে পারে তা জেনে নিন--
  • আনারস খেলে এমনিতেই খানিকটা গলা চুলকায়। ফলে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা আনারসহ থেকে বিরত থাকুন আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এতে আপনার বিভিন্ন এলার্জিজনিত সমস্যা যেমন ঠোট ফুলে যাওয়া গলায় সুরসুরি হওয়া ইত্যাদি বেড়ে যেতে পারে। তাই আনারস খাওয়ার পূর্বে আপনি অবশ্যই লবণ পানিতে ধুয়ে খাবেন। এতে আপনার এলার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
  • সাধারণত গর্ভাবস্থায় আনারস খেতে বারণ করা হয়। কারণ, আনারস খেলে নাকি নারীদের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় আনারস খেতে হলে আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।
  • মাত্রাতিরিক্ত আনারস খাওয়ার ফলে এটি আপনার বাতের ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারন, আপনি যখন আনারস খান তখন এটি আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টটিনাল নালীর কাছে পৌঁছে অ্যালকোহলে পরিণত হয়। যার ফলস্বরূপ আপনার শরীরে বাতের ব্যথা শুরু হয়। তাই যাদের দাঁতের ব্যথা রয়েছে বা আনারস খেলে শরীরে ব্যথা হয় তাদের আনারস না খাওয়াটাই ভালো।
  • আনারসের প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া আনারসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সুক্রোজ এবং ফ্রুকটোজ একজন ডাইবেটিস রোগীর জন্য ভীষণই ক্ষতিকর। সুতরাং যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন আনারস না খেয়ে সপ্তাহে দুইদিন খেতে পারেন।
  • আপনি যদি চিকিৎসা চলমান থাকে থাকেন বা অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিকনভালসেন্ট ঔষধ সেবন করে থাকেন সেক্ষেত্রে আনারস এড়িয়ে চলুন। কারণ, এই সময় আনারস খেলে আনারসের ব্রোমিলিন উপাদান আপনার ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে। ফলে আপনার শারীরিক জটিলতা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • অনেকেই আছেন যারা কাঁচা আনারস জুস করে খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই কাঁচা আনারস আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত। আবার কাঁচা আনারসে প্রচুর পরিমাণে এসিডিটি থাকার কারণে এটি আপনার গলা এবং জিহ্বায় চুলকানির সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে আনারস খাওয়ার ফলে আপনার বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে ।
  • রক্ত তরল করতে যে ঔষধ তৈরি করা হয় তাতে আনারস ব্যবহৃত হয়। ফলে এটি আপনার শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে।
  • অতিরিক্ত আনারস খেলে আনারসের ব্রমিলিন উপাদান আপনার দেহে প্রোটিনের পরিমাণ নষ্ট করতে থাকে। এর ফলে খুব খুব সহজেই আপনার শরীরে ডার্মাটাইটিস ও এলার্জির সংক্রমণ ঘটে।
  • আপনাদের যাদের দাঁতে কেভিটিস ও জিংজাইভেটিভোস এর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আনারস না না খাওয়া দাঁত এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য আনারস ক্ষতিকর কারণ এক কাপ পরিমাণ মিষ্টি আনারসে রয়েছে আপনার ওজন কমানোর থেকে ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • যেহেতু আনারস এসিডিটিক এবং টক স্বাদযুক্ত ফল,তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার গ্যাস,অম্বলের মত সমস্যা হতে পারে।
  • আনারস একটি এসিটিক্যাল ফল। ফলে খালি পেটে খেলে কখনো কখনো আপনার পেটে ব্যথাও হতে পারে।
আনারস একটি সুস্বাদু রসালো ফল হাওয়ায় অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন। তাই আনারস খাওয়ার পরে আপনার যেন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা দেখা না দেয়, সেটি মাথায় রেখে প্রতিদিন নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণ আনারস খান।

আনারস খাওয়ার নিয়ম

আনারসের এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে সুষম খাদ্য হিসেবে আনারস নিশ্চিন্তে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে আনারস খেতে হবে তবেই আপনি এর থেকে উপকারিতা পাবেন। তো আসুন আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিভাবে আনারস যোগ করবেন তার কিছু টিপস জেনে নিন--
  • প্রথমেই বলি, আনারস থেকে পুষ্টি পেতে আপনি টাটকা তাজা আনারস বেছে নেবেন। কারণ, সতেজ টাটকা আনারস খেতে এমনিতেই সুস্বাদু। এই সুস্বাদু আনারস আপনার খাবারের সালাদে যোগ করলে সালাদের স্বাদ আরও দ্বিগুণ পরিমাণ বেড়ে যাবে।
  • আপনি কাবাব খেতে পছন্দ করলে কাবাবের সাথে আনারস যোগ করে খেতে পারেন। তাছাড়া পেঁয়াজ, আনারস এবং চেরি টমেটো দিয়ে চিংড়ি অথবা মুরগি বা স্টেক কাবাব করে খেয়েই দেখুন না কতটা মজা!
  • আপনি আনারস, ম্যান্ডারিন কমলা, স্ট্রবেরি এবং আঙ্গুর দিয়ে একটি ফলের সালাদ তৈরি করেও খেতে পারেন।
  • জাম, আম, আনারস এবং মরিচ দিয়ে আপনি একটি টাটকা সালসা তৈরি করে খেতে পারেন।
  • আপনি আনারস ভেজে বা গ্রিল করেও খেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি গ্রিল করা আনারসকে গ্রিল করা মাংস বা সবজিতে টপিং হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • আবার আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবার জুসে বা পানীয়র সাথে আনারস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, আনারস দিয়ে জুস তৈরি করলে সেটি খেতে আরো সুস্বাদু হয়।
  • শুধু পাকা টাটকা আনারস স্লাইড করে কেটে আপনি আপনার সকালের নাস্তার সাথে প্রোটিনের উৎস হিসেবে খেতে পারেন। আপনি চাইলে আনারসের সাথে দই ও বাদামও যুক্ত করতে পারেন।
  • তাছাড়া বিভিন্ন ফলের সালাদ,আইসক্রিম টপিং হিসেবে এবং বিভিন্ন ধরনের ডেজার্টেও আপনি আনারস যোগ করতে পারেন

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা

আনারস থেকে পরিপূর্ণ উপকারিতা পেতে সঠিক নিয়মে আনারস খাওয়াটা ভীষণ জরুরী। শুধু আনারস কেন যেকোনো ফল খাওয়ার ক্ষেত্রেই আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে খেতে হয়। কিছু কিছু ফল রয়েছে যেগুলি আবার খালি পেটে খাওয়া যায় না খাওয়ার পরে খেতে হয়। তবে আনারস একটিমাত্র ফল যা আপনি খাল পেটে খেলেও এর থেকে উপকারিতা পাবেন।
আনারস খালি পেটে খাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে যারা সংশয়ের মধ্যে আছেন,তারা জেনে রাখুন আনারস খালি পেটে খাওয়া নিঃসন্দেহে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। খালি পেটে আনারস খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন চলুন জেনে নিন-
  • প্রথমেই বলি, সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কয়েক টুকরো আনারস খেয়ে ফেললে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরকেও সারাদিনের জন্য সতেজ ও ফুরফুরে রাখে।
  • আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ব্রোমিলাইন রয়েছে যা খালি পেটে খেলে আপনার শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তা করে।
  • খালি পেটে আনারস খেলে এর ব্রোমিলাইন প্রোটিন আপনার হজম ক্রিয়ায় বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • তাছাড়া নিয়মিত খালি পেটে আনারস খাওয়ার ফলে এর এন্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বককে ফ্রি রেডিক্যাল এর হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং স্কিন ক্যান্সারের প্রবণতাও কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি এমন হয়  এ নিয়ে অনেকের মনেই কৌতূহল রয়েছে।? গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মাকে তার খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষ নজর দিতে হয় অন্যান্য সময়ের থেকে। বিশেষ করে একটি মেয়ে যখন প্রথম গর্ভধারণ করে ঠিক তখন তার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার পরিজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা নানান উপদেশ মতবাদ দিয়ে থাকেন সেটা হোক খাবারের ক্ষেত্রে, হোক চলাফেরার ক্ষেত্রে।
 
সে হিসেবে গর্ভকালীন সময়ে আনারস খাওয়া নিয়েও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রচুর দ্বিমত রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া কি উচিত নাকি আদৌ উচিত না? এর উত্তর পেতে হলে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে গর্ভাবস্থায় কেন আনারস খেতে বারণ করা হয়। তো চলুন গর্ভাবস্থায় আনারস কেন খেতে বারণ করা হয় সে সম্পর্কে জানুন-
 
  • রসে টইটুম্বুর এবং টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত এই আনারস খেতে কেনা পছন্দ করে বলুন তো? আর একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে এই ধরনের খাবারই বেশি পছন্দ হয়।তা সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়ার উপরে দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা । এর একমাত্র কারণ হলো আনারসে রয়েছে ব্রমিলিন নামক একটি এনজাইম যা আপনার গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান প্রসব হতে পারে।
  • গর্ভকালীন সময়ে যেসব মা-বোনদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের আনারস খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ, এতে চিনির পরিমাণ থাকে অত্যাধিক যা আপনার ডায়াবেটিসের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • যাদের হজম ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম তারা গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে এসিডিটি, বুক, জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • যে সমস্ত গর্ভবতী মা-বোনদের ওজন বেশি এই সময় তাদের আনারস সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত। কারণ, আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে যা আপনার ওজনকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
সাধারণত এইসব কথা বিবেচনা করেই গর্ভাবস্থায় আনারস খেতে বারণ করা হয়। তবে চিকিৎসা শাস্ত্র বলছে এর উল্টো কথা। বিজ্ঞান এবং চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া নিয়ে এ সমস্ত ধারণা একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া নিয়ে বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা শাস্ত্র কি বলছে সে বিষয়ে জেনে নিন-
  • বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষ্যমতে গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে গর্ভস্থ ভ্রূণের কোন ক্ষতিই হয় না। বরং আনারসে  এর পুষ্টিগুণ আপনার অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা, অনেকেই আবার মনে করেন গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা যদি গোটা আনারস একবারে খেয়ে ফেলে তাহলে নাকি সাথে সাথে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকদের হাস্য মতে এই ধারণা একেবারেই ভুল। 
  • কারণ চিকিৎসকরা মনে করেন, গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা যদি ৭-৮ টি আনারস একসাথে খেয়ে ফেলেন সে ক্ষেত্রে গর্ভপাত বা নির্দিষ্ট সময়ের আগে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা থাকে। তবে অল্প পরিমাণে আনারস খেলে মা এবং তার গর্ভে সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না।
  • আবার কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন,একজন গর্ভবতী বা দশটি আনারস একসাথে খেয়ে ফেললে তার শরীরে যে তার শরীরে যে ব্রোমেলিন ঢোকে তাতে গর্ভপাতের সম্ভাবনা মাত্র ৩০%।
সবটা শুনে আপনি নিজেও এখন কনফিউশনে পড়ে গেলেন তাইতো? তাহলে শুনুন গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য সবথেকে ভালো বুঝবেন একজন চিকিৎসক। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার থেকে আনারস খেতে ইচ্ছে হয় অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খাবেন। তাছাড়া পরিণত মাত্রায় আনারস খেলে যদি আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা না হয়,
 
সে ক্ষেত্রে আপনি কেন খাবেন না বলুন তো!!তাই আপনি আপনার চিকিৎসকের কাছে ভালো করে জেনে নিন গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে আপনার গর্ভের সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কিনা এবং প্রতিদিন ঠিক কতটা পরিমাণ আনারস খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।

প্রতিদিন কি পরিমান আনারস খাওয়া উচিত

আনারসের উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে পরিমিত মাত্রায় আনারস খেতে হবে। আপনি আনারস খেতে পছন্দ করেন তার মানে এই নয় যে আপনার যতটা ইচ্ছা খেয়েই যাবেন। আপনি যদি নিয়ম মেনে সঠিক মাত্রায় আনারস না খান সেক্ষেত্রে এর উপকারিতা থেকে আপনার শরীরে নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
 
সে হিসেবে আপনি প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ টুকরো আনারস অনায়াসেই খেতে পারেন। শুধু আনারস নয় বরং সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আনারসের পাশাপাশি আপনার আরও বিভিন্ন রকম ফলমুল এবং শাকসবজি খাওয়া উচিত। যা খাবেন তা পরিমিত মাত্রায় খাবেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

আনারস খেলে কি এলার্জি হয়?

আনারসের উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। আনারস খেলে কি এলার্জি হয় এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনে। যদিও গরমকালে আনারস খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ উপকারী, তারপরেও অনেকেই তাজা আনারস খেতে একদমই পছন্দ করেন না। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করেন আনারস খেলে গলা চুলকায়, গলা খুসখুস করে। কেউ কেউ আবার বলেন আনারস খেলে জিব্বা তিরতির করতে থাকে।
 
দেখুন,আনারস খেলেই এলার্জি হবে এই কথাটি একেবারেই ভুল। কারণ, আপনি আনারস কাটার সময় যদি কিছু টিপস মেনে কাটেন, সেক্ষেত্রে আপনার এলার্জির মত সমস্যাগুলো হবে না এতোটুকু আশ্বস্থ আপনাকে করতেই পারি। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি আনারস খাওয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে আনারস কেটে নিন।
 
এরপর আপনি একটি বড় পাত্রে জল নিয়ে তাতে দুই চামচ পরিমাণ সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে নিন। এবার লবণ মিশ্রিত এই জলে আপনার টুকরো করে কেটে রাখা আনারস গুলো কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এইভাবে লবণ জলে ভিজিয়ে রাখা আনারস খেলে আপনার কখনোই গলা চুলকাবে না এতটুকু বলতে পারি। পাশাপাশি আনারস খাওয়ার ফলে আপনি পেয়ে যাবেন এর যাবতীয় পুষ্টিগুণ।

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়?

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়? আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি সত্যিই বিষক্রিয়া হয়? আমাদের দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে, আনারস এবং দুধ একসাথে খেলে শরীরে বিষের সৃষ্টি হয় এবং তাতে নাকি মানুষ মারাও যায়। এ কথা কি আদৌ সত্য!! সম্মানিত পাঠক, তাহলে জেনে রাখুন দুধ আনারস একসাথে খেলে শরীরে ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে এই কথার বিজ্ঞানভিত্তিক কোন প্রমাণ নেই।
 
আনারস প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং টক মিষ্টি স্বাদযুক্ত। সাধারণত টক ফলের সাথে দুধ মিশিয়ে খাওয়া হয় না। কারণ, টক জাতীয় জিনিস দুধে দিলে তা ছানা হয়ে যায় বা ফেটে যেতে পারে।ফলে এতে আপনার বদহজম বা পেট থাপার মত সমস্যা হতে পারে। সে হিসেবে আনারস সামান্য টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় দুধ আনারস একসাথে খেলে এটি আপনার পাকস্থলীতে হজম ক্রিয়ার সমস্যা করতে পারে।
 
তবে এতে আপনার বিষক্রিয়ার কোন আশঙ্কাই নেই। অনেকের আবার ল্যাকটোজ ইন টলারেন্স থাকার কারণে আনারসের মতো এই এসিডিক খাবার খেয়ে বদ হজমের মত সমস্যাও হতে পারে। এর বেশি কিছু না। তবে দুধ আনারস একসাথে খেলে যে বিষক্রিয়া হয় এবং মানুষের মৃত্যু ঘটে এই কথা একেবারেই ভিত্তিহীন।

কিভাবে তৈরি করবেন আনারসের জুস?

যারা আস্ত আনারস খেতে পছন্দ করেন না, তারা আনারসের উপকারিতার কথা ভেবে এর জুস করেও খেতে পারেন। তাছাড়া এই গরমে আনারসের পানিও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এখন আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন আনারসের জুস কিভাবে তৈরি করা যায়? আসুন তাহলে কিভাবে আনারসন জুস তৈরি করবেন তা জেনে নিন--
আনারসের-১৫-টি-গুরুত্বপূর্ণ-স্বাস্থ্য-উপকারিতা
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • আনারস- ১ টি
  • পুদিনা পাতা- ১-৪ কাপ
  • গোলমরিচের গুঁড়ো- পরিমাণ মতো
  • আইস বা বরফ টিউব- ১০টি
  • লবণ- পরিমাণ মতো এবং
  • চিনি - স্বাদ মতো।
কার্যপ্রণালী
  • আনারসের জুস তৈরি করতে আপনি প্রথমেই একটি টসটসে পাকা আনারস বেছে নেবেন এবং এর খোসা ছাড়িয়ে নেবেন
  • খোসা ছাড়ানো হয়ে গেলে আনারস টিকে আপনি কিউব আকারে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন।
  • এরপর কেটে রাখা আনারসের সাথে পুদিনা পাতা, পরিমাণ মতো লবণ, গোলমরিচের গুঁড়ো এবং চিনি দিয়ে ব্লেন্ডারে একসাথে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। আপনি চাইলে চিনির পরিবর্তে মধু ও ব্যবহার করতে পারেন।
  • ব্যাস, ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে আনারসের এই সুস্বাদু পানীয় আপনি বরফের কিউব দিয়ে পরিবেশন করুন।
  • প্রচন্ড গরমে আনারসের এই জুস আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি এটি আপনার শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করবে। তাছাড়া আনারসের পানিও খাওয়ার ফলে আপনার সর্দি কাশি, বুকে শ্লেষ্মা বা কফ জমে থাকলে তারও উপশম হবে।

আনারসের জুসের উপকারিতা

আনারসের জুস শুধু যে খেতেই সুস্বাদু তা নয় বরং পুষ্টিগুনেও এই জুস অনন্য। আনারসের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি আজ থেকেই আনারস জুস খাওয়া শুরু করবেন। এবার চলুন এই জুস খাওয়ার উপকারিতা কি হতে পারে চলুন জেনে নিন--
  • আনারসের জুস আপনাকে ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন বা চোখের রেটিনা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। অর্থাৎ নিয়মিত আনারসের জুস খেলে আপনি অন্ধত্ব থেকে রেহাই পাবেন।
  • আনারসের জুস খেলে এটি আপনার শরীরে রক্ত জমাটে বাধা প্রদান করে। যার ফলস্বরূপ, আপনার শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ড খুব সহজেই সরবরাহ করতে পারে।
  • আনারসের জুস হজম শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসেবেও কাজ করে। পেটের যেকোনো হজম জনিত সমস্যার কারণে আপনি এই আনারস জুস খেতেই পারেন।
  • আপনি আপনার দাঁতের মাড়ি এবং দাঁত শক্ত করতে চাইলে প্রতিদিন এক গ্লাস করে আনারসের জুস পান করুন। কারণ, আনারসের ক্যালসিয়াম আপনার দাঁত ও মাড়ি মজবুত করনে কাজ করে।
  • প্রতিদিন এক গ্লাস করে আনারসের জুস পান করলে এটি আপনার হাড়ের যাবতীয় সমস্যা তা প্রতিরোধ করতে পারে।
  • যারা ওজন কমাতে চান নিয়মিত সেবন করুন আনারসের জুস। কারণ আনারসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার এবং কম ক্যালোরি থাকার কারণে এটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আনারসের আরো কিছু রেসিপি

আনারসের উপকারিতা পেতে শুধু ফল বা জুস হিসেবে না খেয়ে  আপনি আনারস দিয়ে নানান ধরনের রেসিপি তৈরি করেও খেতে পারেন। যারা আনারস ফল হিসেবে খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না তাদের জন্য এই রেসিপি উপকারে আসবে আশা করছি। তো চলুন আপনি কিভাবে আনারস দিয়ে রেসিপি তৈরি করবেন তা জেনে নিন -
আনারসের চাটনি রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • আনারস- ১২ টি
  • চিনি- ২টেবিল চামচ
  • লবণ- ১ চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • গোটা সরিষা দানা- ১ চা চামচ
  • তেল- ১ টেবিল চামচ
  • শুকনো মরিচ-২ টি
  • কাঁচা মরিচ- ২টি ভাজা মসলা- ১ চা চামচ এবং
  • কিসমিস- পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালী
  • আনারসের চাটনি তৈরি করতে প্রথমেই আপনি আনারস পরিষ্কার জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। ধোয়া শেষে আনারস টি একটি কাঁটা চামচের সাহায্যে কুড়িয়ে নিন।
  • এবার চুলার আচে একটি পরিষ্কার প্যান বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করে নিন। তেল গরম হয়ে এলে তাতে গোটা সরিষা এবং শুকনো মরিচের ফোড়ন দিয়ে আনারস দিয়ে দিন।
  • কিছুক্ষণ দাড়ার পর এর মধ্যে পরিমাণ মতো লবণ ও হলুদ চিনি কাঁচা মরিচ যোগ করে ঢেকে দিন।
  • সবশেষে,আনারসের মিশ্রণটি ঘন আঠালো হয়ে আসলে এর ওপর কিসমিস এবং ভাজা মশলার গুড়ো ছিটিয়ে নামিয়ে নিন। ব্যাস আপনার আনারসের চাটনি একেবারেই তৈরি।
আনারস মাখা রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • আনারস- ১টি
  • লবণ- ১ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • চিনি- স্বাদ মত
  • কাসুন্দি- ২ টেবিল চামচ এবং
  • বিট লবণ- সামান্য পরিমাণ।
প্রস্তুত প্রণালী
  • আনারসের মাথা তৈরীর ক্ষেত্রে আপনি প্রথমে আনারসটি পরিষ্কার জলে রীতিমতো ধুয়ে নিন।ধোয়া শেষে আনারস টি টুকরো টুকরো করে কেটে নিন।
  • এবার একটি পরিষ্কার পাত্রে টুকরো করে কেটে রাখা আনারস গুলো নিয়ে এর সাথে একে একে মরিচ গুঁড়ো, পরিমাণমতো চিনি, কাসুন্দি এবং বিট লবণ যোগ করে ভালো করে মাখিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার আনারস মাথা।
আনারসী ইলিশ রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • ইলিশ মাছ- ৫ পিস
  • মরিচ গুঁড়ো- ১চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো- ৪চা চামচ
  • পেঁয়াজ বাটা- ২ টেবিল চামচ
  • কাঁচামরিচ বাটা- ১চা চামচ
  • আনারসের পিউরি- ২ টেবিল চামচ
  • সরষে বাটা- ১ টেবিল চামচ
  • সরষে তেল- পরিমান মত এবং
  • লবণ- পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালী
  • আনারসী ইলিশ রান্না শুরুতে মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • এবার চুলার আচে একটি পরিষ্কার প্যান বসে তাতে তেল দিয়ে গরম করে নিন। তেল গরম হয়ে এলে একে একে পেঁয়াজ বাটা, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
  • এবার আপনি সরষেবাটা,কাঁচামরিচ বাটা, স্বাদমতো লবণ, মাছ এবং আনারসের পিউরি দিয়ে আরও  একবার ভালো করে কষিয়ে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো জল দিয়ে দিন।
  • এক পর্যায়ে, পানি ফুটে উঠলে আনারসের পিস গুলো দিয়ে দেবেন এবং মাঝারি আছে ১৫ মিনিটের মত রান্না করবেন। ১৫ মিনিট পরে ঝোল মাখামাখা হলে নামিয়ে নিন এবং গরম গরম ভাতে পরিবেশন করুন।

আনারস গাছের বৈশিষ্ট্য

আনারস এক প্রকার গুচ্ছ ফল।আনারস গাছ সাধারণত ৪-৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছটিতে শক্ত রসালো ৩০-৪০ টি পাতা থাকে যা একটি মোটা মাংসল কাণ্ডের উপর আটকে থাকে। আনারসের বৈজ্ঞানিক নাম Ananas comosus এবং ইংরেজি নাম Pineapple. ফল তৈরীর সময় একেকটি আনারস গাছ ২০০ টি পর্যন্ত ফুল উৎপাদন করে। এর ফুল একবারই ফোটে এবং ফুলের পৃথক ফল একসাথে একত্রিত হয়ে একাধিক ফল তৈরি করে।
 
অতীতে শুধুমাত্র বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় যেমন- বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শ্রাবণ, মাস ভাদ্র মাস পর্যন্ত আনারস পাওয়া যে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এবং আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদন কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে এখন সারা বছরই আনারস হাতের নাগালে পাওয়া যায়। আনারসের গাছ সম্পর্কিত আরো কিছু তথ্য জেনে নিন---
  • জাতঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আনারসের আরো অনেক জাত থাকলেও বাংলাদেশ কেবলমাত্র হানি কুইন, ঘোড়াশাল এবং জায়েন্ট কিউ এই তিনটি জাতের আনারস বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে।
  • বংশবিস্তারঃ আনারসের কোন বীজ হয় না। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সাকার বা চারার মাধ্যমে আনারসের বংশ বিস্তার করানো হয়।
  • চাষ পদ্ধতিঃ সাধারণত পাহাড়ের ঢালে উপযুক্ত মাটিতে আনারস চাষ করা হয়।

আনারসের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান

আনারসের প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,খনিজ পদার্থ এবং ফাইবার ছাড়াও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু ভিটামিন আর এতসব পুষ্টি উপাদানের জন্য আনারসকে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান--
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
মাঙ্গানিজ ০.৯২৭ মিলিগ্রাম
তামা ০.১১ মিলিগ্রাম
জিংক ০.১২ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ১০৯ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.২৯ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৫ ০.২১৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬ ০.১১২ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন (vitamin B3) ০.৫ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন ০.০৩২ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ০.০৭৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম
ফ্যাট ০.১ গ্রাম
প্রোটিন ০.৫ গ্রাম
ফাইবার ১.৪ গ্রাম
চিনি ৯.৮ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১৩.১ গ্রাম
ক্যালরি ৫০ কিলো ক্যালর

আনারস সংরক্ষণের উপায়

আনারসের বাইরের খোলসের রং যদি সবুজ হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি কাঁচা আনারস। এই কাঁচা আনারস আপনি ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় বেশ কয়েকদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন। কিন্তু আনারসের খোলসের রঙ যদি কমলা বর্ণের হয় বা হলুদ হয় সে ক্ষেত্রে বুঝতে হবে এটি পাকা। এই পাকা আনারস ঘরের তাপমাত্রায় খুব বেশি ১-২ দিন সংরক্ষণ করতে পারবেন।
 
পাকা আনারস বেশ কয়েক দিনের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে আপনি আনারস টুকরো করে কেটে একটি মুখ বদ্ধ পাত্রে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। তবে আরেকটি কথা, প্যাকেজড আনারস খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে লিখা এর এক্সপায়ার ডেট দেখে তবেই ক্রয় করবেন এবং খাবেন।

আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয় অবগত হয়েছেন। আনারস একটি মৌসুমী ফল হলেও এখন প্রায় বারোমাসি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। অনেকেই আছেন যারা আনারসের গন্ধে নাক সিটকায়। কিন্তু এতসব উপকারিতা জানার পরেও আপনি প্রচুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আনারস খাবেন কি খাবেন না সে সিদ্ধান্ত আপনার একান্তই নিজের।
 
প্রচন্ড গরমে এই রসালো ফলটি আপনার শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি বিভিন্ন রোগ বালাই থেকেও আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। তাই বলব নিজেকে সুস্থ সতেজ রাখতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় আজই যোগ করে নিন আনারসের মতো এই সুস্বাদু ফলটি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url