ড্রাগন ফলের ১৫টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম কি আপনার জানা আছে? না জেনে থাকলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ, আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেল আলোচনার বিষয়বস্তু হল ড্রাগন ফল এর উপকারিতা এবং এই ফল খাওয়ার নিয়ম।
ড্রাগন-ফলের-১৫-টি-কার্যকরী- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
সাথ্র আরো আলোচনা করবো ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা  সম্পর্কে। যা হয়তো অনেকেরই অজানা। সুতরাং ড্রাগন ফল সম্পর্কিত আরো খুঁটিনাটি  সকল তথ্য জানতে আর্টিকেলটি  প্রথম থেকে শেষ অব্দি  পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ড্রাগন ফলের ১৫টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

ড্রাগন ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

ড্রাগন ফলের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। ড্রাগন একটি বিদেশি ফল হলেও অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এই ড্রাগন ফল। সম্মানিত পাঠক, তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে এই ফলের উপকারিতা গুলো কি কি সেগুলো জেনে নিন-
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেঃ নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে আপনার শরীরের রক্তে শর্করার ভারসাম্যতা ঠিকঠাক বজায় থাকে।
  • হজমে সাহায্য করেঃ যাদের বদহজম এর সমস্যা রয়েছে বা খাবার হজম হতে চায় না তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খেতে পারেন ড্রাগন ফল। কারণ, ড্রাগন ফল প্রচুর ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া নিয়মিত ড্রাগন ফল সেবনে এটি আপনার শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে ফলে স্বাভাবিকভাবে আপনার হজম ক্ষমতাও উন্নত হয়।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ ড্রাগন ফল প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাছাড়া এতে ফেলোনিক এসিড, বিটাসায়ানিন এবং ফ্লাভোনয়েড এর মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে যা আপনার দেহের কোষ গুলোকে ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে আপনি ক্যান্সার এর মত মরণব্যাধি  এবং অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ড্রাগন ফল সেবনে আপনার ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। কারণ ড্রাগন ফলে রয়েছে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য। ফলে এটি আপনার কোলন ক্যান্সারের মত ঝুঁকি কমাতে বেশ সহায়ক। তাছাড়া এই ফল আপনার বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন- পারকিনসন, অ্যালজাইমার, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার এর মতো রোগ প্রতিরোধেও সক্ষম।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আপনি কি শারীরিক দুর্বলতা কিংবা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন? তাহলে নিয়ম করে ড্রাগন ফল খান। কারণ, ড্রাগন ফল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।
  • হার্ট সুস্থ রাখেঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার সময় লক্ষ্য করবেন এর ভেতরে ছোট ছোট কালো বীজ রয়েছে। ড্রাগন ফলের ক্ষুদ্র এই বীজগুলো ওমেগা-৩ এবং অমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। যা আপনার হার্টের সুস্থতার জন্য ভীষণই উপকারী এবং সেই সাথে আপনার কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকিও অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।
  • অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধেঃ বর্তমান সময়ে দৈনন্দিন জীবনে কাজের চাপ, পরিবেশ দূষণ, খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারায় অকাল বার্ধক্য যেন আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে। এই অকাল বার্ধক্য থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে আপনি ড্রাগন ফল খাওয়া শুরু করুন। কারণ, ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা আপনার ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। তাছাড়া ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে দিনে একবার ড্রাগন ফল জুস করেও খেতে পারেন।
  • হাড় মজবুত করেঃ যাদের বোন ডেনসিটি বা হাড়ের কোন সমস্যা রয়েছে তারা ড্রাগন ফল খেলে উপকার পাবেন। কারণ, এতে রয়েছে প্রায় ১৮% ক্যালসিয়াম যা আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
  • চোখ ভালো রাখেঃ ড্রাগন ফল আপনার চোখের জন্য বেশ উপকারী। কারণ, ড্রাগন ফলের বিটা ক্যারোটির উপাদান যা আপনার চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- চোখে ছানি পড়া এমনকি ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধেও সক্ষম।
  • গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য আদর্শ ফল হতে পারে এই ড্রাগন ফল। কারণ, ড্রাগন ফলে ভিটামিন বি,ফোলেট এবং আয়রন রয়েছে যা একজন গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই জরুরী। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ড্রাগন ফল সেবনে এর ভিটামিন বি এবং ফলেট গর্ভাবস্থায় আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করবে এবং সেই সাথে আপনার নবজাতকের জন্মগত ত্রুটিও রোধ করতে সাহায্য করবে।
  • হৃদপিন্ডের জন্য উপকারীঃ ড্রাগন ফলে বিদ্যমান মনো সেচুরেটেড মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফেটে এসিড যা আপনার হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। তাছাড়া নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে এর ফাইবার আপনার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরনের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। ফলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ড্রাগন ফলের ভূমিকা অনবদ্য। ড্রাগন ফলের পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া ড্রাগন ফলে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম আপনার রক্তনালীকেও শিথিল রাখে।
  • মানসিক চাপ দূর করেঃ ড্রাগন ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে অক্সিডেটিভ সহ মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। ফলে যারা প্রচন্ড রকমের মানসিক চাপে রয়েছেন, তারা ড্রাগন ফল খেলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • হাইড্রেশনে সাহায্য করেঃ ড্রাগন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় অংশ যা আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
ড্রাগন-ফলের-১৫-টি-কার্যকরী- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  • কিডনি সুস্থ রাখেঃ সাধারণত আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের অভাব হলে কিডনি জটিলতা দেখা দেয় এবং কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই আপনি যদি আপনার পিকনিকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে ড্রাগন ফল খান। কারণ, ড্রাগন ফলের রয়েছে পটাশিয়াম যে আপনার কিডনিতে সুস্থ রাখে। কিডনিকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি এই ফল কিডনিতে পাথর জমতেও বাধা প্রদান করে। 
  • চুলের যত্নে ড্রাগন ফলঃ রুক্ষ শুষ্ক চুলে আপনি কি খুব চিন্তিত? তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন ড্রাগন ফল খাওয়া। কারণ, ড্রাগন ফলে রয়েছে ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড যা আপনার চুলের জন্য উপকারী হবে।
  • ব্রণ দূর করেঃ আমাদের কমবেশি সকলেরই মুখে ব্রণের সমস্যা রয়েছে। যাদের সমস্যা রয়েছে তারা ড্রাগন ফল খাওয়া শুরু করুন। কারণ, তোকে ব্রণ হওয়ার প্রধান কারণ হলো ভিটামিন সি এর অভাব। আর ড্রাগন ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার ত্বকে টপিক্যাল মলম হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় আপনি ড্রাগন ফল পেস্ট করে লাগালেও আপনার ত্বকের ব্রণ দূর হবে।
  • রক্তশূন্যতা দূর করেঃ শরীরে রক্তের অভাবে অনেকেরই শরীর ফেক আসে হয়ে যায় শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করেন। এই শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে আপনি খেতে পারেন ড্রাগন ফল। কারণ, ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আপনার রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণ করে।
  • ওজন হ্রাস করতেঃ যারা ওজন কমাতে চান কিন্তু কোনভাবেই ওজন কমছে না তাদের জন্য ড্রাগন ফল হতে পারে একটি উপাদেয় পথ্য। কারণ, ড্রাগন ফল কম ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা আপনার ওজন কমাতে সহায়ক হবে।

ড্রাগন ফলের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা

ড্রাগন ফলের যেমন উপকারি দিক রয়েছে তেমনি কিছু অপকারি দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত এই ফল খেলে আপনার শরীরে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।যেমন ধরুন-
  • যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের ড্রাগন ফল না খাওয়াই ভালো। কারণ, ড্রাগন ফল খেলে আপনার এনার্জি মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে আপনার ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা ড্রাগন ফল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই পাবেন।
  • যারা চিকিৎসার মধ্যে আছেন তারা ড্রাগন ফল সেবনের পূর্বে একবার সাথে পরামর্শ করবেন।কারন ড্রাগন ফল আপনার নিয়মিত ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করে শারীরিক জটিলতা আরও বাড়ি হতে পারে।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা ড্রাগন ফল খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, ড্রাগন ফলের ভেতরে ছোট ছোট কালো বীজে ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা আপনার রক্তচাপকে আরো কমিয়ে দিতে পারে।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ ড্রাগন ফল খেলে এটি আপনার গ্যাস, অম্বল অথবা শরীর ফোলা ভাবের কারণ হতে পারে।
  • দেশের সব জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ড্রাগন ফল চাষ না হওয়ায় অনেক সময় চাহিদা থাকার পরেও  এ ফল কিনতে পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও সেটি তেমন টাটকা তাজা থাকে না।
শুধু ড্রাগন ফল নয়, আপনি যেকোনো জিনিসই কেন খাচ্ছেন এবং কতটুকু খাবেন তা নির্ভর করবে আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর। তাই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোন কিছুই খাবেন না, যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। একটি কথা মনে রাখবেন, আপনি যা কিছু খাবেন তা যেন আপনার ডাইজেস্টিক সিস্টেমের জন্য যথেষ্ট হয়।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

ড্রাগন ফলের উপকারিতা পেতে আপনাকে সঠিক নিয়মে ড্রাগন ফল খেতে হবে। কেননা একটি খাবার বা ফল যতই পুষ্টিকর হোক না কেন আপনি যদি নিয়ম মেনে সঠিক মাত্রায় না খান তাহলে সেটি আপনার শরীরে উপকারের পরিবর্তে অপকারই বয়ে আনবে। তো চলুন ড্রাগন ফল আপনি কোন নিয়মে খেতে পারবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • টাটকা সতেজ ড্রাগন ফল সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি একটি টাটকা সতেজ ড্রাগন ফল খেতে পারেন। যদিও আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ড্রাগন ফলের চাষ না হয় এটি টাটকা পাওয়াটা বেশ মুশকিল। টাটকা ড্রাগন ফলের খোসা নরম এবং হালকা হলুদ রঙের হয়।
  • ড্রাগন ফল কাটার নিয়ম ড্রাগন ফল কাটার পূর্বে প্রথমেই আপনি ফলটিকে ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিবেন। তারপর ফলটিকে মাঝ বরাবর কেটে দুই টুকরো করে এর খোসা ছাড়িয়ে নিন।খাওয়ার সুবিধার্থে এই দুই টুকরো কেটে আরো চার টুকরো করে নিন। এবার স্বাদমতো চিনি বা মধু মিশিয়ে পরিবেশন করুন ড্রাগন ফল।
  • ড্রাগন ফল বিভিন্ন রঙের পাওয়া যায়।আর রঙিন ফলে পুষ্টি সব সময় বেশি থাকে। আপনি চেষ্টা করবেন কয়েকটি রংয়ের ড্রাগন ফল একসাথে মিক্স করে খেতে।
  • ড্রাগন সালাদ ড্রাগন ফল আপনি খাবারের সাথে সালাদ হিসেবেও খেতে পারেন। তাছাড়া এই ফলের সালাদ বেশ পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। ড্রাগন ফলের সালাদ তৈরির ক্ষেত্রে আপনি এর সাথে আরও অন্যান্য ফল, সবজি কিংবা বাদামও যোগ করতে পারেন। এতে সালাদ আরও সুস্বাদু হবে।
  • ড্রাগন জুস শুধু পাকা ড্রাগন ফল আপনার খেতে অসুবিধা হলে আপনি ড্রাগন ফল জুস করেও খেতে পারেন। ড্রাগন জুস অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি পানীয়। ড্রাগন ফলের জুস তৈরির জন্য আপনি একটি পাকা ড্রাগন ফলের মাংসল অংশটুকু ভালো করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এই জুস একটি বোতলের ঢেলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। সারাদিনে আপনি দুইবার এই জুস পান পান করতে পারেন।
  • ড্রাগন আইসক্রিম বা কেক বিভিন্ন ধরনের আইসক্রিম এবং কেক তৈরিতেও ড্রাগন ফল ব্যবহৃত হয়। ড্রাগন ফল দিয়ে তৈরি আইসক্রিম কেক খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।
  • তাছাড়া মিল্কশেক কিংবা স্মুদি তৈরি করেও ড্রাগন ফল আপনি খেতে পারেন।
  • আবার আপনি ড্রাগন ফল ফ্রিজে রেখেও খেতে পারেন। কারণ, ফ্রিজে রাখলে এটি আরো বেশি সুস্বাদু হয়।
  • আরেকটি বিষয় মাথায় রাখবেন, এই ফল খাওয়ার সময় ফলের ওপরের শক্ত অংশটুকু কখনোই খাবেন না।
উপরিউক্ত নিয়মে আপনি ড্রাগন ফল খেতে পারেন। তবে ড্রাগন ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন ফলটি যেন অবশ্যই ভালোভাবে পরিপক্ক হয়। কারণ, বাজারে অনেক সময় কাঁচা, আধা পাকা ড্রাগন ফল কিনতে পাওয়া যায় যা না খাওয়াটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়

ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি তা অনেকেই জানতে চান। আসলে কি ড্রাগন ফল খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে? বলে রাখি, এই ফল খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। সুতরাং  আপনি আপনার সুবিধামত যেকোনো সময় এই ফল খেতে পারেন। তবে আপনি আপনার সকালের নাস্তার সাথে বা বিকেলের মধ্যে এই ফল খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া যাবে কি যাবে না এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই একজন গর্ভবতী মায়ের খাবারে বাড়তি নজর দিতে হয় অন্যান্য সময়ের থেকে। ড্রাগন ফল যেহেতু অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল তাই আপনি আপনার গর্ভাবস্থার খাদ্য তালিকায় ড্রাগন ফল রাখতেই পারেন। একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রুনের জন্য এই ফল যথেষ্ট উপকারী। আসুন এবার গর্ভাবস্থায় এই ফলের উপকারিতা কি তা জেনে নিন--
  • ড্রাগন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফোলেট,আয়রন এবং ভিটামিন বি। এই ভিটামিন বি এবং ফোলেট গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি রোধে সাহায্য করে এবং গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মাকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে।
  • তাছাড়া ড্রাগন ফলে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম যা গর্ভস্থ শিশুর হাড়ের গঠনে বিশেষ উপকারী।
  • গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ একটি সমস্যা। গর্ভকালীন সময়ে এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনি নিয়মিত নিয়ম করে ড্রাগন ফল খান। কারণ, ড্রাগন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার যা আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে পারে।
  • ড্রাগন ফলে আরও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা নারীদের পোস্ট পোস্টমেনোজাল জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।
  • গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খেলে একজন গর্ভবতী মা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে রক্ষা পেতে পারে । কারণ ড্রাগন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইরন যা আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয় এবং রক্ত কোষের অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে
সম্মানিত পাঠক, সুতরাং বুঝতেই পারছেন গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া একেবারেই নিরাপদ এবং গর্ভাবস্থায় এর একাধিক উপকারিতা রয়েছে যা আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তানের কাজে লাগবে।

বাচ্চাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

 ড্রাগন ফলের উপকারিতা বাচ্চাদের জন্যও কম নয়। আপনি আপনার শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য এই ফল খাওয়াতে পারেন।  বাচ্চাদের জন্য এই ফলের কিছু উপকারিতা জেনে রাখুন। যেমন -
  • পুষ্টিমূলক সামগ্রীঃ ড্রাগন ফলে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার শিশুর উন্নত গোষ্ঠীকরণের সাহায্য করে।
  • মজার রং এবং রুচিকর স্বাদঃ ড্রাগন ফলের প্রত্যেকটি সেগমেন্ট দেখতে আকর্ষণীয় এবং হালকা মিষ্টি স্বাদ যুক্ত যা আপনার শিশুর খাদ্য পরিপূর্ণতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন সাপ্লাইঃ ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হল ড্রাগন ফল সেই হিসেবে এটি শিশুদের শরীরের সার্কুলেশন সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
  • পেটের সমস্যা সমাধানেঃ ড্রাগন ফলে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকার কারণে এটি আপনার শিশুর পেটের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • স্বাস্থ্যকর ভিটামিন সমৃদ্ধঃ ড্রাগন ফলের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শিশুর পুরো দিনের পোষণের একটি ভালো উৎস হতে পারে। এই পুষ্টিমূলক উপকারিতা আপনার শিশুর শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • হাইড্রেশন প্রমোট করতে পারেঃ ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকাই এটি আপনার শিশুর শরীর হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
সুতরাং বাচ্চাদের জন্য ড্রাগন ফল একটি মজার এবং পুষ্টিকর স্বাদ যুক্ত ফল হতে পারে যা আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্য সুন্দর করে তুলতেও সাহায্য করে।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

ড্রাগন ফলের উপকারিতার পাশাপাশি এই ফলের খোসার উপকারিতাও কম না। শুধু ড্রাগন ফলই পুষ্টিকর নয় বরং এর খোসাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ ,ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, গ্লুটামিন, থায়ামিন এবং নায়াসিন। তাহলে বুঝতে পারছেন তো ড্রাগন ফলের খোসাও কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ!! এবার চলুন জেনে নিন ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে--
  • প্রথমেই বলি, আপনি কি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? অনেক চিকিৎসা করেও কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে পারছেন না। তাহলে আপনি আজ থেকে ড্রাগন ফলের খোসার জুস খেতে শুরু করুন। ড্রাগন ফলের খোসার জুসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যকে নিমেষের মধ্যেই দূর করে দিবে।
  • রোদে পুড়ে আপনার ত্বকে কি কালচে দাগ পড়ে গেছে? নানান প্রসাধনী বা কসমেটিক ব্যবহার করেও এই কালো ছোপ ও তার ব্রণের দাগ আপনি কোনভাবেই দূর করতে পারছেন না। তাহলে চিন্তা কিসের? আজ থেকেই শুরু করে দিন ড্রাগন ফলের খোসার জুস খেতে। এই জুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আপনার ত্বকের বিভিন্ন কালচে দাগ এবং ব্রনের দাগ দূর করতে সক্ষম।
  • আপনার চুল অকালেই ঝরে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে আপনি ভীষণই চিন্তিত। আপনি আপনার চুলকে ঘন এবং লম্বা করতে চাইলে সপ্তাহে ২-৩ বা আপনার স্ক্যাল্পে ড্রাগন ফলের খোসার পেস্ট ব্যবহার করুন। কারণ ড্রাগন ফলের খোসায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন যা আপনার চুলকে গোড়া থেকে মজবুত শক্তিশালী করে তুলবে এবং সেই সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে
  • ড্রাগন ফলের খোসার মধ্যে সমস্ত ফলের ভিটামিন এবং মিনারেল এর একটি মিশ্রণ থাকতে পারে যা আপনার শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • এই ফলের খোসায় উন্নত ব্যাকটেরিয়াল গুন থাকতে পারে যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।

রূপচর্চায় ড্রাগন ফল

ড্রাগন ফল শুধু খেলেই যে এর উপকারিতা পাওয়া যাবে তা নয় বরং রূপচর্চাতেও আজকাল ড্রাগন ফল ব্যবহৃত হচ্ছে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে বা ত্বকের জন্য ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করবে, ত্বকের বলিরেখা দূর করবে, ব্রনের দাগ দূর করবে,ত্বকের শুষ্কতা দূর করবে এবং সেই সাথে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনও বাড়িয়ে দিবে।
 
ত্বকের এতসব উপকারিতা জানার পর এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে ড্রাগন ফল ত্বকের ক্ষেত্রে আবার কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। তো চলুন ত্বকের যত্নে কোন উপায়ে আপনি ড্রাগন ফল ব্যবহার করতে পারবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
ড্রাগন-ফলের-১৫-টি-কার্যকরী- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  • ড্রাগন ফলের স্ক্রাবঃ ড্রাগন ফলের স্ক্রাব আপনার ত্বকের মৃত কোষ কে অপসারিত করে ত্বকে মসৃণ করে তোলে। ড্রাগন ফলের এই স্ক্রাব তৈরি করতে আপনি ড্রাগন ফলের মাংসল অংশটুকু একটি চামচ দিয়ে ভালো করে ম্যাশ করে নিন। এরপর এই ম্যাশ এর সাথে এক চা চামচ বেসন এবং এক চা চামচ মধু খুব ভালো মতো মিশিয়ে নিন। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেলে এবার মিশ্রণটি আপনার ঘাড়ে এবং মুখে হালকা ভাবে কিছুক্ষণ ঘষে নিন। তারপর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • ড্রাগন জুসঃ নিয়মিত ড্রাগন ফলের জুস পান করলে এটি আপনার ত্বকে আদ্রতা যোগাতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের এই জুস তৈরি করতে আপনি প্রথমেই একটি পাকা ড্রাগন ফলের মাংসের অংশটুকু ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন এবং বোতলে ভরে ফ্রিজের সংরক্ষণ করুন। দিনে দুইবার করে এই ড্রাগন জুস খেতে থাকুন। এভাবে কিছুদিন খেলে আপনার ত্বক যেমন আদ্র থাকবে তেমনি এটি ত্বক থেকে ব্রণ এবং ব্রনের দাগও দূর করবে।
  • ড্রাগন ফেসপ্যাকঃ ড্রাগন ফল দিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করতে আপনি ড্রাগন ফলের মাংসল অংশটুকু একটি কাটা চামচের সাহায্যে ম্যাশ করে নিন। এরপর এর সাথে ১ চা চামচ গোলাপজল এবং ১ চা চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেলে এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। প্রায় ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা জলে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন ড্রাগন ফলের এই ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বককে যেমন উজ্জ্বল, মসৃণ করবে তেমনি ত্বকের কোমলতাও ফিরিয়ে আনবে।
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল যোগে ড্রাগন ফলঃ আবার আপনি একটি ড্রাগন ফল চার ভাগে ভাগ করে এর একভাগ ভালো করে পেস্ট করে নিন। এরপর এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে এই পেস্ট আপনার ত্বকে এপ্লাই করুন এবং ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে হালকা পিংক ভাব চলে আসবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
ত্বকে ড্রাগন ফল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্তকতা
  • ড্রাগণ ফলের ফেসপ্যাক আপনার ত্বকে লাগানোর পূর্বে শরীরের যে কোন অংশে অল্প পরিমাণে লাগিয়ে পরীক্ষা করুন, তাতে কোন এলার্জির সমস্যা হচ্ছে কিনা। সমস্যা হলে এই ফেসপ্যাক ব্যবহার বন্ধ করুন
  • ড্রাগন জুস পান করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত জুস পান করবেন না।

লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ড্রাগন সাধারনত লাল, হলুদ, সাদা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। তবে রঙিন ফলে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে অন্যান্য রঙের থেকে। সেই অর্থে ড্রাগন ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি লাল রঙের ড্রাগন ফল নির্বাচন করতে পারেন। কারণ, লাল এবং সাদা রঙের ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদানের মধ্যেও কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। সে যা হোক, লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে আপনি বিভিন্ন উপকারিতা পেতে পারেন। যেমন--
  • নিয়মিত নিয়ম মেনে লাল ড্রাগন ফল খেলে এটি আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।
  • লাল রঙের ড্রাগন ফল বিভিন্ন রকম ভিটামিন খনিজ এবং প্রোটিনের প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে কাজ করে। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • লাল রংয়ের ড্রাগন ফল খেলে এটি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের স্তর কমাতে সাহায্য করে। ফলে কোলেস্টেরল অনেকটাই আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
  • লাল ড্রাগন ফল আপনাকে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির হাত থেকেও রক্ষা করতে পারে।

ছাদে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

ড্রাগন একটি বিদেশি ফল হওয়ায় আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে এ ফলের চাষ হচ্ছে না। ফলে আপনি চাইলেও যখন তখন বাজার থেকে টাটকা ড্রাগন ফল খুঁজে পাবেন না। কারণ, বাজারে যে ড্রাগন ফলগুলো পাওয়া যায় সেগুলোও বেশ কয়েকদিন প্রক্রিয়াজাত হয়ে তবেই বাজারে আসে।
 
এটাই টাটকা সাথে ড্রাগন ফল খেতে আপনি আপনার বাড়ির ছাদের ফাঁকা জায়গায় এই ফলের চাষ করতে পারেন। এবার চলুন আপনি ছাদে কিভাবে ড্রাগন ফল চাষ করতে পারেন সে বিষয়ে জেনে নিন --
  • টবের মাটি তৈরি ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করতে আপনি বড় কোন টব বা যেকোনো পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যে টবে গাছ লাগাবেন তার দুই ভাগ পরিমাণ বেলে মাটি এবং দোআঁশ মাটি,  এক ভাগ পরিমাণ গোবর,পটাশ সার ৪০-৫০ গ্রাম এবং টিএসপি ৪০-৫০ গ্রাম এই প্রত্যেকটি উপাদান একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  • এরপর আপনি যে পাত্রে লাগাবেন সেই পাত্রে মাটি ভর্তি করুন এবং পানি দেওয়ার জন্য ৩-৫ সেন্টিমিটার জায়গা ফাঁকা রাখবেন। পানি দেওয়ার পরে আপনি এই সার গোবর মিশ্রিত মাটি পচনের জন্য ১১-১২ দিন রেখে দিন।
  • ঠিক 12 দিন পর আপনি মাটিগুলো একটু আলগা করে দেবেন এবং আরো ৪-৫ দিন এই ভাবেই রেখে দিন। এরপর মাটি ঝুরঝুরে হলে আপনি তাতে ড্রাগনের কাটিং চারা ৮-১০ সেন্টিমিটার গভীরে রোপন করুন।
  • চারা রোপণ শেষে গাছের গোড়ার মাটি সামান্য উঁচু করে দিন যেন গোড়ায় কোনোমতে পানি না জমে। এভাবেই খুব সহজে আপনি আপনার বাড়ির ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করতে পারেন এবং এই গাছ থেকে আপনি টাটকা সতেজ ড্রাগন ফল খেতে পারবেন।

ডেঙ্গু জ্বরের মহৌষধ ড্রাগন ফল

ড্রাগন ফলের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। প্রচুর পুষ্টি গুণে ভরপুর ড্রাগন ফলকে সকল রোগের মহৌষধ বলা হয়। শুধু তাই নয় ডেঙ্গুর চিকিৎসাতেও এই ড্রাগন ফল ভীষণ ভাবে কার্যকর। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা একজন ডেঙ্গু রোগীর রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট এর পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয়।
 
ফলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত একজন রোগী এই ড্রাগন ফল সেবনের ফলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারেন। শুধু তাই নয়, ড্রাগন ফলের থাকা আয়রন আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং লোহিত রক্তকণিক উৎপাদনেও সাহায্য করে। যার ফলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসকরা ড্রাগন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন।

ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান

ড্রাগন ফল কিভাবে খাবেন, খাওয়ার নিয়ম জানানর পর, এবার আপনাকে এই বিদেশি ফলটির পুষ্টি সম্পর্কে জানাবো। আপনার দেহে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি নিশ্চিত করতে আপনার খাদ্য তালিকায় নানান ধরনের ফলমূল, শাকসবজি পাশাপাশি ড্রাগন ফলেও যুক্ত করতে পারেন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ফলটি সাধারণত লাল ও সাদাসহ আরো কয়েকটি রংয়ের হয়।
 
আবার রং ভেদে এই ফলের পুষ্টির কিছুটা তারতম্যতা দেখা যায়। তো চলুন এবার ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নিন। আনুমানিক প্রতি 100 গ্রাম ড্রাগন ফলে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হল--
সাদা মাংসযুক্ত ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান
পুস্টি উপাদান পরিমান
ক্যালরি ৬০ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১৪ গ্রাম
সুগার ১২ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ১-২ গ্রাম
প্রোটিন ১-২ গ্রাম
ফ্যাট ০.৯ গ্রাম

লাল মংসযুক্ত ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান 
 
পুস্টি উপাদান পরিমান
ক্যালরি ৫০-৬০ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৯-১৪ গ্রাম
সুগার ৮-১২ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ১-২ গ্রাম
প্রোটিন ১-২ গ্রাম
ফ্যাট ১ গ্রামের কম

ড্রাগন ফলের দাম কত ২০২৪

ড্রাগন ফলের এতসব উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এই ফলের দাম সম্পর্কে জানতে চান। বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ড্রাগন ফলের চাষ হলেও তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। তবে বর্তমান বাজারে ড্রাগন ফল বেশ সহজলভ্য হলেও এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি। 
 
ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেকে সাধ্যের বাইরে যে এ ফল কিনে খেতে পারেন না। আর ড্রাগন ফলের দাম সাধারণত এর মানের উপরে বেশি নির্ভর করে। ড্রাগন ফল যত ভালো কোয়ালিটি হবে এর দামও তত বেশি হবে। বর্তমান বাজারে খুব ভালো কোয়ালিটির ড্রাগন ফলগুলো ৪৫০ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় 
 
এবং সাধারণ কোয়ালিটির ড্রাগন ফলগুলো ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজার এবং স্থান ভেদে এর দাম কম বেশি হতে পারে। তাই ড্রাগন ফল কেনার ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্থানীয় বাজার ঘুরে দাম যাচাই-বাছাই করে তবেই কিনবেন। এতে আপনার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া

ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমাদের আর্টিকেল পড়ে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে। ড্রাগন একটি বিদেশি ফল হলেও বাংলাদেশে মূলত বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের প্রচলন শুরু হয় সেই ৯০ দশক থেকে এবং দিনকে দিন এই ড্রাগন ফলের জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে।
 
প্রচুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় ড্রাগন ফলকে সুপার ফুড নামেও আখ্যায়িত করা হয়। আপনি যদি এখনো ড্রাগন ফল না খেয়ে থাকেন, তাহলে আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় একটি পুষ্টিকর ফল হিসেবে ড্রাগন ফলকে যোগ করে নিন। এইরকম আরো তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে প্রতিনিয়ত চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url