গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা জানতে বিস্তারিত পড়ুন
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি আজ থেকেই হয়তো আখরোট খাওয়া শুরু করবেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার নিয়ম অনেকেই জানেন না। তাহলে বলবো এক্ষুনি আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
আজকের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার নানা উপকারি দিক এবং আখরোট কিভাবে খেতে হয় তা জানতে পারবেন। সাথে আরো জানবেন গর্ভাবস্থায় আখরোটের অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার পরিমাণ।
পোস্ট সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়া কি নিরাপদ?
- আখরোটে কোন কোন পুষ্টিগুণ থাকে
- গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে আখরোট সেবন
- গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে আখরোট সেবন
- গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন কি পরিমান আখরোট খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। পুষ্টিকর এবং উপাদেয় ও খাদ্য হিসেবে আখরোটের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় আখরোটের উপকারিতা প্রসূতিবিদ্যার ক্ষেত্রে অনেক পেশাদার চিকিৎসক দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি এর উপকারিতা সম্পর্কে-- আখরোটে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন- তামা, বোরন, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, কোবাল্ট, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক। যা একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই সকল উপাদান একজন গর্ভবতী মহিলার পেশীবহুল সিস্টেমকেও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
- আখরোটে বিদ্যমান ফাইটোস্টেরল যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তনালী গুলো পরিষ্কার থাকে। যার ফলে একজন গর্ভবতী মহিলার শরীরে রক্ত সংবহন এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত হয়।
- আখরোটে বিদ্যমান ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই শুধুমাত্র যে মা এবং তার গর্ভের সন্তানের অনাক্রম্যতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে তা নয় বরং এটি হরমোন সিস্টেম পুনরুদ্ধারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় এমিনো এসিড যেমন ভ্যালাইন, আইসো লিউসিন এবং আরজিনাইন এগুলো একজন গর্ভবতী মহিলার পুষ্টির শক্তি পুনরুদ্ধার করে এবং সেই সাথে গর্ভবতী মহিলার শরীরে মৌলিক বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলির প্রবাহকেও ত্বরান্বিত করে।
- গর্ভাবস্থায় আখরোট সেবনের ফলে এর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাভাবিকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একই সাথে পেটের অম্লতাও দূর করে।
- ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিডের সমৃদ্ধ একটি উৎস হলো আখরোট। ফলে গর্ভাবস্থায় আখরোট খেলে এটি আপনার গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- ভিটামিন ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিদের সমৃদ্ধ উৎস হলো আখরোট। এগুলো ছাড়াও আখরোটে রয়েছে ক্যালসিয়াম, জিংক, আইরন ও সেলিনিয়াম। এইসব উপাদান গর্ভাবস্থায় মা ও গর্ভের ভ্রুনের জন্য অপরিহার্য।
- আখরোটে বিদ্যমান আলফা লিনোলেনিক ফ্যাটি এসিড আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করে।আখরোটে আরো রয়েছে গামাটোকোফেরোল আকারে ভিটামিন ই। গর্ভাবস্থায় এই ভিটামিন ই ভীষণ কার্যকর।
- ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড এবং প্রোটিনের সমৃদ্ধ এই গর্ভাবস্থায় এটি আপনার অনগত শিশুর চোখ এবং মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়।
- আখরোটের উদ্ভিজ্জ স্টেরোল যা গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- গর্ভাবস্থায় আখরোট খেলে এটি আপনার শরীরে সন্তোষ জনক লিপিড প্রোফাইল বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় নিয়মিত আখরোট সেবনের ফলে এটি আপনার রক্ত প্রবাহকে শিথিল করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- আখরোটে বিদ্যমান কপার উপাদানটি আপনার ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে।
- গর্ভাবস্থায় আখরোট সেবন করলে এটি আপনার মেলাটোনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। এই মেলাটোনিন আপনার ঘুমকে প্ররোচিত করে। গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসীকে আখরোট খাওয়া উপকারী হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এই সময় একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুম বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে।
- আখরোটে থাকে তামা বা কপার যা আপনার লোহিত রক্ত কণিকা গঠনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
- আখরোটের ম্যাঙ্গানিজ যা আপনার গর্ভের শিশুর হাড় এবং তরুণাস্তির বিকাশের জন্য প্রয়োজন। সারাদিনে মাত্র একবার আখরোট খেলে প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণের প্রায় অর্ধেকটাই আপনি পেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়া গেলেও অতিমাত্রায় আখরোট খাওয়া একদমই ঠিক নয়। কারণ, যে কোন কিছুরই আধিক্য ক্ষতিকারক হয়ে থাকে এবং আখরোটের ক্ষেত্রেও এটি একইভাবে প্রযোজ্য। অতিরিক্ত পরিমাণে আখরোট খেলে নিচের সম্ভাব্য অপকার গুলি আপনার দেখা দিতে পারে-- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনার ডায়রিয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- মাত্র অতিরিক্ত আখরোট সেবনে প্রসবের সময় রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনের তুলনায় অধিক আখরোট খেলে এটি আপনার শরীরে আয়রন শোধনের ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে আপনার অ্যানিমিয়ার সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
- আখরোট খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় কালীন সময়ে আপনার এলার্জির উদ্রেক হতে পারে। আপনি যদি বাদামের প্রতি অতিরিক্ত এলার্জি প্রবণ হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় সামান্য আখরোট খেলেও তাতে আপনার ত্বকে চুলকানি, ঠোঁট ফুলে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং মাথা ধরার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- অত্যধিক আখরোট সেবনের ফলে আপনার পেটে গ্যাস বা অম্বলের সৃষ্টি হতে পারে।
- প্রয়োজনের তুলনায় অধিক আখরোট খেলে এটি আপনার লিভারজনিত সমস্যা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার নিয়ম
প্রচুর পুষ্টি গুণে ভরপুর এই আখরোট কিভাবে খেতে হয় তা আমাদের অনেকেরই অজানা। তবে আখরোট খাওয়ার তেমন নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। অর্থাৎ আপনার যেভাবে ইচ্ছা আপনি ঠিক সেভাবেই আখরোট খেতে পারেন। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় আপনি কি কি উপায়ে আখরোট খাবেন সে নিয়মগুলো জেনে নিন--- বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের মতে, আখরোট খাওয়ার পূর্বে এটি কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে খেতে হয়। এই নিয়মে আখরোট খেলে আপনি আখরোটের সঠিক পুষ্টিগুণ পাবেন।
- শুধু আখরোট খেতে অসুবিধে হলে আপনি দুধ বা মধুর সাথে মিশিয়েও আখরোট খেতে পারেন। এতেও আপনি আখরোটের পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণরূপে পাবেন।
- আবার আপনি ৩-৪ টি আখরোট কুচিয়ে নিয়ে তাতে এক চা চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে এক গ্লাস জলের সাথে খেতে পারেন। এই নিয়মে আখরোট খেলে আপনার অনিদ্রা, বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ, মাথাব্যথার মতো আরো অনেক খুব সহজেই দূর হবে।
- আপনি একটি গ্লাসে ২ চা চামচ মধু এবং লেবুর খোসা কুচিয়ে নিয়ে তার সাথে আখরোট কুচি যোগ করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি প্রতিদিন খাবার আগে ১ চামচ করে খেলে আপনি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
- আপনি আপনার জলখাবারের সাথেও আখরোট যোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি একটি কলা নিয়ে সেটি টুকরো করে কেটে তার সাথে মধু এবং সুক্ষভাবে কুচানো আখরোট বাদাম যোগ করুন। এই জলখাবারটি খেলে এটি আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ রাখবে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতাও দূর হবে।
- পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম এবং কাজু বাদাম এর সাথে আখরোট মিশিয়ে আপনি এটি ড্রাই ফ্রুটস হিসেবেও খেতে পারেন।
- আবার,বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে আখরোট কুচি মিশিয়েও খাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম অনেকেই জানতে চান। গর্ভাবস্থায় শুধুমাত্র খাবার দিয়ে শরীরের কিছু পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটানো বেশ কষ্টসাধ্য। ফলিক এসিড এমনই একটি পুষ্টি উপাদান যা গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় প্রথম থেকে একজন গর্ভবতী মায়ের ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করা উচিত।এই ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়মও আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। তো চলুন গর্ভাবস্থায় আপনি ফলিক এসিড কিভাবে, কতটুকু খাবেন তা জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি---
ফলিক এসিড কিভাবে খাবেনঃ
আপনি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে পারেন এবং সন্তান জন্মদানের তিন মাস পর্যন্ত ফলিক এসিড খাওয়া কন্টিনিউ রাখা উচিত। কারণ, গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ গুলোতে গর্ভের শিশুর ব্রেন এবং স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো গড়ে উঠতে থাকে। আর তাই গর্ভধারণের ১২ তম সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড খাওয়া প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশেষভাবে জরুরী।
গর্ভাবস্থায় কি পরিমান ফলিক এসিড খাবেনঃ
একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিডের প্রয়োজন পড়ে। যার পুরোটা খাবার থেকে পাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর তাই ফলিক এসিডের এই ঘাটতি দূর করার জন্য ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন করা উচিত।
ফলিক এসিড খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ
ফলিক এসিড খাওয়ার ক্ষেত্রে দুটি সর্তকতা আপনার মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। যেমন--
- সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি খালি পেটে আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে পারেন । এর জন্য আপনি যে কোন খাবার খাওয়ার ঠিক ১ ঘন্টা আগে ফলিক এসিড ট্যাবলেট টি খাবেন।
- যদি কোন কারণে খাওয়ার আগে ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে ভুলে যান সে ক্ষেত্রে খাওয়ার অন্তত ২ ঘন্টা পরে এক গ্লাস জল দিয়ে ট্যাবলেট খেয়ে নিবেন। এটি শুধুমাত্র ভর পেট খাওয়ার পরেই নয় বরং চা কিংবা দুধ খেলেও আপনাকে এই নিয়মটি মেনে চলতে হবে।
- জল দিয়ে ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে আপনার অসুবিধে হলে আপনি জলের পরিবর্তে এর সাথে এক গ্লাস কমলার রস যোগ করেও খেতে পারেন।
আপনি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে পারেন এবং সন্তান জন্মদানের তিন মাস পর্যন্ত ফলিক এসিড খাওয়া কন্টিনিউ রাখা উচিত। কারণ, গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ গুলোতে গর্ভের শিশুর ব্রেন এবং স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো গড়ে উঠতে থাকে। আর তাই গর্ভধারণের ১২ তম সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড খাওয়া প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশেষভাবে জরুরী।
গর্ভাবস্থায় কি পরিমান ফলিক এসিড খাবেনঃ
একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিডের প্রয়োজন পড়ে। যার পুরোটা খাবার থেকে পাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর তাই ফলিক এসিডের এই ঘাটতি দূর করার জন্য ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন করা উচিত।
ফলিক এসিড খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ
ফলিক এসিড খাওয়ার ক্ষেত্রে দুটি সর্তকতা আপনার মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। যেমন--
- প্রথমতঃ অ্যান্টাসিড বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার সময় একই সাথে/একই সময়ে আপনি ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাবেন না। কারণ, একই সাথে ফলিক এসিড ট্যাবলেট এবং ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে তাতে আপনার শরীরে আয়রনের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যাবে।
- দ্বিতীয়তঃ এন্টাসিড বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার এক ঘন্টা আগে অথবা দুই ঘন্টা পরে আপনি আয়রন ট্যাবলেট খাবেন।
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়া কি নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই আমরা জানিয়ে দিয়েছি। গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়া নিরাপদ কিনা এ নিয়ে অনেকেরই অনেক রকম সংশয় থাকে। গর্ভাবস্থায় আখরোট খাবেন কিনা এ নিয়ে যারা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছেন তাদেরকেই বলছি ,আখরোট অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর একটি খাবার এবং গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ।কারন, আখরোটে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি-ফোলেড রাইবোফ্লাভিন এবং ফলিক এসিড থাকে যা একজন গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই জরুরী । তাছাড়া গর্ভাবস্থায় একজন মা আখরোট খেলে এর পলি আনসাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভের শিশুর এলার্জির সমস্যা ও দূর করতে সাহায্য করে।
শুধু গর্ভাবস্থায় নয়, প্রসবের পরেও মায়েদেরকে আখরোট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় যেন প্রসব পরবর্তী বিভিন্ন ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপ চাপ থেকে আপনি নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়া আপনার জন্য উপকারি এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ।
প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা নিচে দেওয়া হল:
গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে আখরোট সেবন
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে এটি খাওয়া শুরু করতে পারেন। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য আখরোটের উপকারিতা অতুলনীয়। কারণ, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আখরোট খেলে এটি গর্ভবতী মায়ের শরীরের হরমোন, স্নায়বিক কার্ডিওভাসকুলার, সংবহন, ইমিউন সিস্টেম,
আখরোটে কোন কোন পুষ্টিগুণ থাকে
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই আখরোটের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আখরোট একটি উচ্চ মাত্রার পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল বা বাদাম। আখরোটে কোন কোন পুষ্টি উপাদান রয়েছে চলুন তা জেনে নিই ---প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা নিচে দেওয়া হল:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
মাঙ্গানিজ | ৩.৪১৪ মিলিগ্রাম |
শর্করা | ১৩.৭১ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৩৪৬ মিলিগ্রাম |
জিংক | ৩.০৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন | ২০IU |
স্নেহ পদার্থ | ৬.৭ গ্রাম |
পটাশিয়াম | ৪৪১ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৫৮ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৯৮ মিলিগ্রাম |
প্রোটিন | ১৫.২ গ্রাম |
গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে আখরোট সেবন
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে এটি খাওয়া শুরু করতে পারেন। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য আখরোটের উপকারিতা অতুলনীয়। কারণ, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আখরোট খেলে এটি গর্ভবতী মায়ের শরীরের হরমোন, স্নায়বিক কার্ডিওভাসকুলার, সংবহন, ইমিউন সিস্টেম, পাঁচন ক্রিয়া এবং জিনিটরিনারি সিস্টেমগুলিতে সবচেয়ে ভালো প্রভাব ফেলে। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ জন মনে করেন যে প্রাথমিক পর্যায়ে আখরোট খেলে এটি একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। আর তাই গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে একজন গর্ভবতী মায়ের আখরোট সেবন করা অতীব জরুরী।
গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে আখরোট সেবন
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ারও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। কারন, গর্ভাবস্থার শেষ মেয়াদে আখরোটের প্রভাব আরো কার্যকর হয়ে ওঠে, যতটা না গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে ছিল। গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আখরোট ব্যবহারের ফলে এটি শুধুমাত্র একজন গর্ভবতী মাকে তার ওজন বৃদ্ধির দিকেই যে পরিচালিত করে তা নয়,তবে গর্ভবতী মায়ের শরীরের পেশীবহুল সিস্টেমকেও উন্নত করে। ফলে বিশেষজ্ঞরা এই সময় গর্ভবতী মায়েদের প্রোটিন গ্রহণ সীমিত করার পরামর্শ দেন এবং আখরোটের ঘনত্ব উচ্চমূল্যে পৌঁছে যায়। আপনি নিয়ম মেনে গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আখরোট সেবন করতেই পারেন।
গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন কি পরিমান আখরোট খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা জানার পর এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে প্রতিদিন একজন গর্ভবতী মায়ের কি পরিমান বা কতটি আখরোট খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় এই আখরোট খাওয়ার পরিমাণ মূলত গর্ভকালীন বিভিন্ন সময়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। যেমন, গর্ভাবস্থার প্রথমার্ধে, একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টুকরা পর্যন্ত আখরোট খাওয়া উচিত।কিন্তু গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে, গর্ভবতী মায়ের শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য গুরুতর শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আখরোট খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হয়। অর্থাৎ আপনি গর্ভাবস্থার প্রথমার্থে ১০-১২ টুকরো আখরোট খেলে সেটি দ্বিতীয়ার্ধে এসে কমিয়ে ৪-৫ টুকরো খেতে হবে। অর্থাৎ গর্ভাবস্থা কালে দিনে ৩০ গ্রামের বেশি আখরোট খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ, অত্যধিক পরিমাণে আখরোট খেলে তা মা এবং তার গর্ভের ভ্রুণ উভয়ের জন্যই জটিলতা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। শুধু আখরোট নয় বরং প্রতিটি খাদ্য উপাদানই খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা থাকে যা মেনে চললে সেটি আপনার শরীরের পক্ষে উপকারী হবে।- গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সর্তকতা হল, যারা অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তাদের অতি সতর্কতার সাথে আখরোট ব্যবহার করা উচিত। কারণ, এতে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদ হজমের মত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- আবার আপনার মুখের ভেতরে কোন ঘা বা টনসিল এর প্রধান থাকলে আখরোট খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
- আবার গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে হরমোন সিস্টেমে কোন ত্রুটি থাকলেও আখরোট সেবন নিজেকে থেকে বিরত রাখা উচিত।
লেখকের মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেল পড়ে অবগত হয়েছেন এবং আশা করছি উপকৃত হয়েছেন। মূলত গর্ভাবস্থায় আখরোট একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমে সাহায্য করে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত আখরোট সেবনে এতে আপনার বিপত্তিও কেউ দেখা দিতে পারে।তাই উপরিউক্ত নিয়ম মেনে আপনার গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ আখরোট সেবন করুন। যা আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই রকম আরো তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন
পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য
আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url