গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার ১০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা হয়তো অনেকেই জানেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে কি হয়? তা অনেকেরই অজানা। এ সম্পর্কে জানতে হলে এক্ষুনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
গর্ভাবস্থায়-আম-খাওয়ার-১০-টি-কার্যকরী- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
কারণ, আজকের আর্টিকেলে  আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় আপনার প্রতিদিন কতটি আম খাওয়া উচিত, গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে কি হতে পারে এবং গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া সম্পর্কিত সকল খুঁটিনাটি তথ্য। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার ১০ টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার অনেক গুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। সাধারণত একজন গর্ববতী নারীর খাদ্যাভাস অন্যান্য সময়ের খাদ্যাভ্যাস থেকে কিছুটা আলাদা হয়। কারণ, এ সময় গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের ভ্রুনের কথা বিবেচনা করে খাবারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় খাবারের ক্ষেত্রে কিছু ফলের বিধি নিষেধ থাকে।
 
আপনি নিশ্চয়ই এখন ভাবছেন গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া যাবে কিনা? হ্যাঁ বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিধি-নিষেধ নেই। ফলে এটি আপনার খাদ্য তালিকায় নির্দ্বিধায় যোগ করতে পারেন। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় আম খেলে কি কি উপকারিতা আপনি পাবেন সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই -- 
  • প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের এবং তার গর্ভের ভ্রূণের জন্য শরীরে বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে। আমে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি ৬। যার কারণে আম খেলে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়।
  • ভ্রুনের সঠিক বিকাশঃ গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভের ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজন আমের মত পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং পুষ্টিকর খাবার। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে সুমিষ্ট ও রসালো ফল আম। কারণ, আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড। আর এই অ্যাসিড শুধুমাত্র গর্ভবতী মায়েরই নয় বরং গর্ভস্থ সন্তানের জন্যও সমান উপকারী। 
  • তাই আপনি যদি গর্ভাবস্থায় আপনার নিজের এবং গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থতা চান তাহলে গ্রীষ্মকালীন ফল আম খান।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আপনি খেতে পারেন আম। কারণ, আমে এমন সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন রোগ ব্যাধির সাথে লড়াই করতে সক্ষম এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কার্যকরী।
  • শক্তির উৎস হিসেবেঃ আম শক্তি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য অত্যাবশক। আর তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত আম খেলে এটি আপনার শরীরে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করবে।
  • অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে আমঃ গর্ভাবস্থায় আপনি প্রতিদিন ১-২ টি আম খেলে এটি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় আয়রন সরবরাহ করবে। যা অ্যানিমিয়ার সাথে লড়াইয়ের জন্য আপনার শরীরে লাল রক্তের কোষ বৃদ্ধি করে। ফলে গর্ভাবস্থায় আম খেলে খুব স্বাভাবিকভাবে আপনি অ্যানিমিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
  • ভ্রুণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশঃ  আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড। এই ফলিক অ্যাসিড আপনার গর্ভের ভ্রুনের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ এবং মস্তিষ্কে বিকাশে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হলে গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে আম খেলে এটি আপনার অনাগত সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশেও বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া গর্ভাবস্থার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে নিউরাল টিউব জনিত যে ত্রুটিগুলো ঘটতে পারে সেটিও আপনি এড়াতে পারেন এই আম খেয়ে।
গর্ভাবস্থায়-আম-খাওয়ার-১০-টি-কার্যকরী- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  •  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ গর্ভাবস্থার খুব সাধারণ একটি সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য যা কম বেশি সকলেরই হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনি আম খেতে পারেন। কারণ, আমে রয়েছে উক্ত স্তরের ডায়েটরি ফাইবার যা আপনার পাচন সিস্টেমকে উন্নত করে। ফলে খুব সহজেই আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় মলত্যাগ প্রক্রিয়া মসৃণ হয় এবং ব্যথা মুক্ত হয়।
  • প্রাক-মেয়াদী প্রসবের ঝুঁকি কমাতেঃ তামাক বিকিরণ বা কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ রেডিকেল তৈরি করে যাতে আপনার ক্যান্সার হতে পারে এবং আপনার ভ্রূণের বৃদ্ধিকেও প্রভাবিত করতে পারে। আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি। ফলে এটি আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং আপনার দেহে ক্রমবর্ধমান এই রেডিকেল গুলোকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 
  • তাছাড়া আমের এই ভিটামিন সি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার অকাল প্রসবের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।
  • শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনেঃ আম "ভিটামিন এ" সমৃদ্ধ হওয়ায় গর্ভাবস্থায় আম খেলে এটি আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর দাঁত এবং হাড় গঠনেও বেশ সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় নিয়ম করে আম খেলে এটি আপনার অনাক্রম্যতাকে সমর্থন করে এবং নবজাতকের জটিলতার ঝুঁকিও অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
  • ইমিউন সিস্টেমঃ আম প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার শিশুর দাঁত ও হাড় বৃদ্ধির পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেম এবং টিস্যু নিরাময়ের জন্যও বেশ দরকারি।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ আম ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি উচ্চ রক্তচাপের জন্য প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, এটি পিক্ল্যাম্পসিয়া নামক হাইপারটেনশিপ অবস্থায়ও প্রতিরোধ করতেও সক্ষম। যেহেতু পিক্ল্যাম্পসিয়া আপনার গর্ভকালীন সময়ে জীবাণুর সংক্রমণের কারণ হতে পারে, তাই আপনি আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে আজ থেকেই যোগ করুন আম।
  • মর্নিং সিকনেসঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত সকালবেলা শরীরে অস্বস্তি ভাব হয়। কারো কারো আবার শরীর অনেক দুর্বল মনে হয়। এই সমস্যা দূর করতে আপনি গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন আম। কারণ, আমের মিষ্টি অম্ল স্বাদ প্রাতঃকালীন অসুস্থতা দূর করতে আপনাকে সাহায্য করবে।
  • শরীরে তরলের ভারসাম্যঃ আমে রয়েছে পটাশিয়াম যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ফাইবার হজমেও সাহায্য করে।
  • শরীরের এনার্জি বৃদ্ধিতেঃ অধিক পরিমাণ ক্যালরি থাকার কারণে গর্ভাবস্থার তৃতীয় পর্যায়ে আম খাওয়াটা খুবই জরুরী । কারণ, এই সময় গর্ভবতী মায়ের বেশি এনার্জি প্রয়োজন হয়।
আমের এতসব উপকারিতা গুলো জানার পর আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিঃসন্দেহে উপকারী।

আমের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা জেনেছেন। এবার জানাব আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।  সুস্বাদু, মিষ্টি অম্ল স্বাদ-যুক্ত এবং প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর গ্রীষ্মকালীন এই ফল আম। যা একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরেও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের যোগান দেয়। তো চলুন আমের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ গুলো কি কি তা জেনে নিন--
পুস্টি উপাদান পরিমাণ
জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম
মাঙ্গানিজ ০.০২৭ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.১৩ মিলিগ্রাম
কপার ০.১১০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ১৫৬ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ৪.২ মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন ই ১.১২ মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন এ ৭৬৫ IU
ভিটামিন সি ২৭.৭ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ০.০৫৮ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাবিন ০.০৬৫৭ মিলিগ্রাম
পাইরিডক্সিন ০.১৩৪ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন ০.৫৮৪ মিলিগ্রাম
পান্টোথেনিক এসিড ০.১৬০ মিলিগ্রাম
ফোলেটস ১৪ মাইক্রো গ্রাম
ডায়েটরি ফাইবার ১.৮০ গ্রাম
কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম
ফ্যাট ০.২৭ গ্রাম
প্রোটিন ০.৫ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১৭ গ্রাম
শক্তি ৭০ ক্যালরি
ক্যারোটিন ৪৪৫ মিলিগ্রাম

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কতটি আম খেতে হবে

গর্ভাবস্থায় আম খেয়ে আমের উপকারিতা পেতে আপনাকে পরিমান বুঝে আম খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রচুর ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এই আম। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে এই ক্যালোরি এবং শক্তি প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হয়। আর তাই নিয়মিত নিয়ম করে আম খাওয়ার ফলে একজন গর্ভবতী মা খুব সহজেই প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টির যোগান পেয়ে যান।
গর্ভাবস্থায় আপনার ডাক্তার যদি আপনাকে ক্যালরি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন সেক্ষেত্রে আমি বলব আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন আম। তবে অতিরিক্ত আম খেলে এটি আবার আপনার শরীরে উপকারের পরিবর্তে নানা অপকারী দিক টেনে আনতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একটি আমের বেশি খাওয়া অনুচিত।

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর আপনি ঠিক উপলব্ধি করতে পারছেন গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিঃসন্দেহে নিরাপদ। তাই আপনি আগ পিছ কোন কিছু না ভেবে আপনার গর্ভকালীন সময়ে নিশ্চিন্তে আম খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় পাকা আম খাওয়ারও বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে।
 
তবে এক্ষেত্রে আমের পরিমাণগুলো যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কারণ, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আম খাওয়া একদমই ভালো নয়। তাছাড়া আমে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন বি থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় এটি আপনাকে এবং আপনার গর্ভের ভ্রুনকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে কি হয়?

গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে কি এমন হতে পারে এ প্রশ্ন অনেকের মনেই। গর্ভাবস্থায় পাকা আম খাওয়া যেমন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি আপনি কাঁচা আমও খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ারও বেশ উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে আমে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং বিভিন্ন অর্গানিক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, 
 
যা একজন গর্ভবতী মা এবং তার ভ্রুনের স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে তা আপনার এবং আপনার গর্ভের অনাগত সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা খুব সহজেই পূরণ করতে সক্ষম।

গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খেলে কি হতে পারে তা তো জানলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ারও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আমের মত লিচু একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। আর তাই সব সময় চাইলেও আপনি এই ফলটি খেতে পারবেন না। অনেক সময় গর্ভবতী মায়েরা সংশয় থাকেন গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কিনা এই নিয়ে। 
 
স্বাদ এবং গন্ধে অতুলনীয় হলেও এই ফলটি গর্ভাবস্থায় খাবার ক্ষেত্রে খুব একটা নিরাপদ নয় । কারণ, এটি আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে এবং গর্ভাবস্থা কালীন ডায়াবেটিস আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায়-আম-খাওয়ার-১০-টি-কার্যকরী- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
লিচু খাওয়ার ফলে এটি গর্ভবতীর মধ্যে সংক্রমণ হওয়ার ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ রক্ত ক্ষরণও হতে পারে। সুতরাং, গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু আপনি একান্তই যদি লিচু খেতে চান সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খুব সীমিত পরিমাণে অর্থাৎ সারা দিনে ৩-৪ লিচু খেতে পারেন। আবার ,গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে একজন গর্ভবতী মা বেশ কিছু উপকারও পেতে পারেন। যেমন-
  • লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়াটাও ভীষণ জরুরী।
  • লিচুতে বিদ্যমান পটাশিয়াম যা একজন গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • ফাইবার বা আর সমৃদ্ধ হওয়ায় গর্ভাবস্থায় এই ফল খেলে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধেও কাজ করে। এছাড়া বিভিন্ন ফ্রী রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে লিচু।
  • গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে লিচুর ফিনোলিক যৌগ আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি লিভারের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লিচু খেলে এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা কে বাড়িয়ে দিতে পারে যার ফলে গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা যেমন- মৃত সন্তান প্রসব, এলার্জির প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে আম খেতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে আম খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। আপনি যদি নিয়ম মেনে আম খান তাহলে তাতে উপকারিতাও বেশি পাবেন। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় আপনি কোন নিয়মে কিভাবে আম খাবেন তা আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
  • আপনি কখনোই আম জুস করে খাবেন না বরং টুকরো করে কেটে খাবেন। কারণ, জুস করে আম খেলে আম থেকে ফাইবার এবং পুষ্টিগুণ অনেকাংশেই কমে যায়।
  • আমে এমনিতেই চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই স্মূদি, জুস বা আমের কোন ডেজার্ট বানাতে তাতে অধিক পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খাবেন না।
  • যেহেতু আমে শুধুমাত্র চিনির মাত্রা বেশি থাকে কিন্তু অন্যান্য উপাদানগুলো শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় এবং যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তারা মাত্রাতিরিক্ত আম খাবেন না। কেননা এতে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
  • গর্ভকালীন সময়ে আপনি দুপুরে বা রাতে খাওয়ার পর ভরা পেটে আম খাবেন না। কারণ, আম খেলে এমনিতেই অতি দ্রুত পেট ভরে যায় আবার এটি খাবারের পরিপূরক হিসেবেও কাজ করে।
  • গর্ভাবস্থায় আপনি সকালে বা বিকালে আম খাবেন। এতে করে আপনার এক সময়ের খাবার চাহিদা পূর্ণ হবে।

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়াটা আমাদের শরীরের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় খাবার ক্ষেত্রে আরো নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি মাত্রাতিরিক্ত আম খেতে থাকেন তাহলে আপনার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তো গর্ভাবস্থায় আম খেলে কি কি অপকারিতা আপনার হতে পারে চলুন সেগুলো জেনে নিন-
  • গর্ভাবস্থায়ী অতিরিক্ত আম খেলে আপনার মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা এবং কখনো বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • পাকা আম চিনির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে । ফলে অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে এটি আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং ওজন বৃদ্ধির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • শোনা যায়, গর্ভাবস্থায় আম খেলে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায় । যা খাদ্যের থার্মোজেনেসিস হিসেবেও পরিচিত। তবে এ বিষয়ে এখনও বিজ্ঞানভিত্তিক কোন প্রমাণ নেই যে আম খেলে শরীরের তাপ বৃদ্ধি হয় এবং শিশুর ভ্রুনের ক্ষতি হয়।
  • অনেক সময় গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে আপনার ডাইরিয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যার ফলে আপনার ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে আপনার হঠাৎ ঘুমঘুম ভাব অনুভূতি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে কখনো কখনো শরীরে এলার্জির উদ্রেক দেখা দিতে পারে ।
  • অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় অনেক সময় আপনার হাত এবং পায়ে শীরশীরানী অনুভূতি হতে পারে।
সুতরাং, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আম একেবারেই খাবেন না প্রয়োজনে প্রতিদিন কয়টি আম খেতে হবে তা আপনি একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা আপনাকে আমরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। গর্ভকালীন সময়ে আম খাবার ক্ষেত্রেও আপনার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন--
  • অন্যান্য ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার মত আমও খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া উচিত।
  • আম খাওয়ার পূর্বে আমের খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং খোসার গা থেকে সরাসরি আমের শাঁস খাবেন না। এতে করে কোন রাসায়নিক পদার্থের বিষাক্ততার ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পাবে।
  • বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা রাসায়নিকভাবে আম পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করে থাকে। রাসায়নিকভাবে পাকানো এই আম থেকে আপনি দূরে থাকবেন। কেননা রাসায়নিকভাবে পাকানো আমের মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বাইড রাইসিং এবং এজেন্ট ব্যবহারিত হয় যা আপনার শরীরের এবং আপনার গর্ভের ভ্রুনের নানা রকম ক্ষতিসাধন হতে পারে।
  • আপনি যদি কাঁচা আম কিনে বাড়িতে পাকিয়ে খেতে পারেন, তবে সেটি সব থেকে বেশি ভালো ।কেননা এতে রাসায়নিক কোন পদার্থ থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম থাকে।
  • আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ। আপনি যদি ইতিমধ্যেই ভিটামিন এ সম্পূরক গ্রহণ করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি একজন গাইনি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। কেননা "ভিটামিন এ" এর অতিরিক্ত মাত্রা আপনার শিশুর মধ্যে লিভার বিষাক্ততার কারণও হতে পারে।
  • আম কাটার পূর্বে আপনি আপনার ছুরি কাটার বোর্ড পরিষ্কার করে নিন এবং আম ছাড়ানো ও কাটার পরে আপনার হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন।
  • যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আম এড়িয়ে চলাটাই উত্তম।
সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাকা আমের তেমন বিশেষ কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। সুতরাং, অন্যান্য ফল গুলির মত আম যখন সঠিক ঋতুতে অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাবে ঠিক তখনই আম খাবেন।

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন। গর্ভাবস্থায় আপনার শিশুর সার্বিক বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য অনেক পুষ্টির প্রয়োজন হয় ,যা আপনি এই আম থেকে পেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত আম খাওয়াটাও গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাও হতে পারে।
 
সেক্ষেত্রে আপনি গর্ভাবস্থায় কোনো খাদ্য গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই সেটি খাবেন ।কারণ, এই সময় খাবারের ক্ষেত্রে প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আর তাই গর্ভাবস্থায় এবং গর্ভ পরবর্তী প্রসব জটিলতা কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন নিয়ম মেনে আম খান। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url