গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি নিজেও চমকে যাবেন। গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয় জানতে চান? জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
আজকের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জেনে যাবেন গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা। সাথে আরো জানবেন গর্ভাবস্থায় মাদার হররিক্সের উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন, দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কি খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়া নিরাপদ কিনা ?
- গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
- গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে ঘি যোগ করবেন কিভাবে
- গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ ঘি খেতে পারবেন?
- গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘি সেবন
- গর্ভাবস্থায় নবম মাসে ঘি সেবন
- গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় কি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা মূলত একটি প্রাচীন পদ্ধতি যা বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অনেকটাই প্রচলিত রয়েছে। গর্ভাবস্থায় সময়ে ঘি সেবনের ফলে আপনার কিছু উপকার হতে পারে। তো চলুন কি কি উপকার হতে পারে সেগুলো জেনে নিই ---- ঘি মানসিক স্ট্রেস রোধ করেঃ গর্ভকালীন সময়ে অনেক গর্ভবতী মহিলারা মানসিক চাপে ভোগেন। গর্ভাবস্থায় এই মানসিক চাপ দূর করতে আপনি নিয়মিত ঘি খান। কেননা ঘিয়ে রয়েছে ভিটামিন এবং বুটাইরেট। যা ফ্রী র্যাডিকেল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।
- ঘি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত নিয়ম মেনে কি খেলে এটি আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আবার গর্ভাবস্থায় অনেকেআর মধ্যে অলসতা ভাব চলে আসে। নিয়মিত সেবনে এটি আপনার শরীরকে অলসতা থেকে মুক্ত করতেও সক্ষম।
- প্রোটিন সরবরাহঃ গর্ভকালীন সময়ে হিসেবে একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রোটিন এবং ভিটামিনের উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে, যা গর্ভাবস্থার সময়ে গর্ভধারণ ও শিশু উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- হরমোনাল ব্যালেন্সঃ গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ঘি সেবনে এটি আপনার হরমোনাল স্তরের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে, যা গর্ভধারণ এবং স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার জন্য ভালো।
- ঘি হজম শক্তি বাড়ায়ঃ ঘিয়ে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য এবং বুটিরিক অ্যাসিড যা একজন গর্ভবতী মায়ের কোলন কোষ এবং সামগ্রিক পরিপাকতন্ত্রের জন্য বেশ সহায়ক। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় নিয়ম করে ঘি সেবন করলে এটি আপনার শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। ফলে, আপনার হজম শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।
- গর্ভাবস্থায় স্ট্রেচ মার্কেট সমস্যা হ্রাস করেঃ গর্ভাবস্থায় স্ট্রেস মার্ক একটি অতি সাধারণ বিষয়। গর্ভকালীন সময়ে পেট সব থেকে বেশি এবং দ্রুত প্রসারিত হয়। ফলে পরবর্তীতে স্ট্রেস মার্কের সৃষ্টি হয়। আপনি আপনার পেটের ক্ষতস্থানে আলতো করে ঘি মালিশ করলে এই স্ট্রেচ মার্ক দূর হতে পারে।
- বুকের দুধের প্রবাহ বাড়াতেঃ গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান যা বুকের দুধের উন্নতির জন্য বেশ কার্যকর। এটি মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ এবং মান উন্নতির জন্য সাহায্য করতে পারে যে গর্ভাবস্থায় শেষ দিকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
- গর্ভের ভ্রূণের উন্নতিঃ ঘিয়ে রয়েছে ভিটামিন A, D, E ও k যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে সঠিকভাবে কাজ করতে। এই ভিটামিন গুলি বিশেষভাবে আপনার গর্ভের ভ্রূণের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- মেটাবলিজম বৃদ্ধি এবং ওজন কমাতে ঘিঃ গর্ভকালীন সময়ে আপনি নিয়ম মেনে ঘি সেবন করলে এটি গর্ভাবস্থায় আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে পারে এবং ডেলিভারির পরে আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি অপসারণ করতেও সক্ষম । তাছাড়া ঘি DHA এবং CLA সমৃদ্ধ হওয়ায় চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর।
- ত্বকের হাইড্রেশনঃ গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ঘি সেবনে এটি আপনার ত্বকের অতিরিক্ত স্থিতিশীলতা বা ভাবাত্মক অবস্থানকে সংশোধিত করে এবং আপনার ত্বকে হাইড্রেশন রাখতে পারে। তাছাড়া এটি আপনার সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের ফলাফল স্থায়ী রাখতে সাহায্য করে।
- অস্থি ও দাঁতের উন্নতিতে ঘিঃ ঘি গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা ও তার শিশুর অস্থি ও দাঁতের উন্নতির জন্য সাহায্য করতে পারে। কারণ, ঘি এ রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান যা অস্থি এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় তারা ঘি খেতে পারেন। প্রতিদিন নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণ কি খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই সহজ হবে।
- প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ ঘি গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যও সাহায্য করতে পারে। এটি একজন গর্ববতী মায়ের হরমোনাল স্তরের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং প্রজনন সমস্যার ঝুঁকিও হ্রাস করতে পারে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ কিছু গবেষক মনে করেন ,ঘি খাওয়ার মাধ্যমে প্রসব পরবর্তী ডায়াবেটিস রোগীদের রক্ষা করা যেতে পারে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার মাধ্যমে হৃদরোগ এবং হজম প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় অতিরিক্তি ঘি খেলে কি কি অপকার হতে পারে সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই--- কোলেস্টেরল বৃদ্ধিঃ গর্ভাবস্থায়ী ঘি খাওয়ার ফলে এটি আপনার হৃদরোগের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং কোলেস্টরলের স্তর ও বৃদ্ধি করতে পারে।
- পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়াঃ মাত্র অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার ফলে এটি আপনার পেটে ব্যথার উদ্রেক করতে পারে এবং পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে।
- হৃদরোগের ঝুঁকিঃ ঘিতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে ফলে অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার ফলে আপনার এর হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকিঃ ভিতে রয়েছে চিনি। যার ফলে মাত্রাতিরিক্ত ঘি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- এলার্জির সমস্যাঃ যে সব গর্ভবতী মায়ের এলার্জির সমস্যা রয়েছে অতিরিক্ত ঘি খেলে তাদের এলার্জি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- পাচন সমস্যাঃ অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার ফলে একজন গর্ভবতী মায়ের পাঁচন সমস্যা হতে পারে যেমন- অতিরিক্ত গ্যাস বা পেটের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা।
- হরমোনাল পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঘি খেলে আপনার হরমোনাল পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যা হরমোনাল স্তরের অস্তিত্বের অস্থিরতা এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধির কারণঃ গর্ভাবস্থায় অধিক পরিমাণে জিনিসি সেবনের ফলে অনেক সময় এটি আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ঘি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য উপাদান হওয়ায় অধিক পরিমাণে খেলে একটু সাবধানতা নিয়ে খাওয়া উচিত। এটি মাংসপেশি গঠনের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ঠিক তবে অত্যধিক ঘি ব্যবহারে নানান সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় ঘি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন যেন অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে কোন ঝুঁকি বা সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়া নিরাপদ কিনা ?
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের খাবারের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয় অন্যান্য সময়ের থেকে। সে হিসেবে গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়া নিরাপদ হবে কি হবে না, আবার খেলেও এর তীব্র কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শরীরে অনুভূত হবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ভুগতে থাকেন।যারা গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন তাদেরকেই বলছি, গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণ ঘি খাওয়াটা একেবারেই নিরাপদ। কারণ, এই সময় ঘি খেলে এটি আপনার হজম এবং বিপাক ক্রিয়াকে সহজ করে যা অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য সহজেই করতে পারেনা। তাছাড়া ঘি একটি উচ্চ মাত্রার অত্যন্ত পুষ্টিশালী, ভিটামিন ও মিনারেলস এর সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান।
ফলে এটি একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো হতে পারে। কারণ, এটি গর্ভাবস্থার সময় ত্বক এর উজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন এ উৎপাদনে সক্ষম। তাছাড়া এটি হরমোনাল স্তরে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হতে পারে এবং সেইসাথে গর্ভস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে গর্ভ অবস্থায় কি খাওয়া আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে না যদি আপনি সঠিক মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সতর্কতা মেনে পরিমিত পরিমাণ খান।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হবে বেশিরভাগ মা ই জানতে চান। প্রত্যেক মা ই চান তার গর্ভের অনাগত সন্তান এর গায়ের রং যেন উজ্জ্বল হয় এবং সেইসাথে সুস্থ, সবল, হৃষ্টপুষ্ট একটি সন্তানের। তবে বিশেষজ্ঞ জন মনে করেন সন্তানের গায়ের রং খাদ্য নির্বাচনের উপর একেবারেই নির্ভর করে না। বরং এটি নির্ভর করে তার মা বাবার কাছ থেকে যে জিন পেয়েছে তার ওপরে। তাছাড়া কিছু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে যেগুলি গর্ভাবস্থায় খেলে বাচ্চার ফর্সা ও সুস্থ হওয়ার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। যেমন--- ফলিক এসিডঃ ফলিক অ্যাসিড আপনার শিশুর মস্তিষ্ক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এই ফলিক এসিডের ভালো উৎস হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি।
- দুধঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের দুধ পান করা আবশ্যক। কারণ, আপনার শিশুর বিভিন্ন শারীরিক গঠন এবং ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে দুধ সহায়ক হতে পারে বলে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে।
- ডিমঃ আবার আপনি যদি ফর্সা বাচ্চা চান, তাহলে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় তিন মাসে ডিমের সাদা অংশ ভক্ষণ করুন। এ নিয়েও একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। তবে গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়া একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ডিমের কুসুম অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় কুসুমসহ খাওয়াটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
- চেরি ও বেরি জাতীয় ফলমূলঃ ফেনী এবং বেড়ে জাতীয় ফলে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার গর্ভের শিশুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে।
- জাফরান দুধঃ গর্ভাবস্থায় অনেকে জাফরান দুধ পান করেন এবং মনে করা হয় জাফরান পান করলে শিশুর গায়ের রং উজ্জ্বল ও ফর্সা হবে।
- কমলাঃ ভিটামিন সি এর একটি পরিপূর্ণ উৎস হলো কমলা ফলে গর্ভাবস্থায় কমলা খেলে আপনার শিশুর ত্বক স্বাভাবিকভাবে ভালো হবে।
- বাদামঃ আপনি যদি আপনার গর্ভের সন্তান ফর্সা চান তাহলে গর্ব অবস্থায় নিয়মিত শুকনো বা ভেজানো আলমন্ড বাদাম খান। আবার অনেকেই বিশ্বাস করেন, বাদাম মিশ্রিত দুধ খেলে বাচ্চার গায়ের রং উজ্জ্বল হয়।
- ঘিঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় ঘি সেবন করলে তাতে প্রসব যন্ত্রনা কম হয় এবং অন্যদিকে ঘি আপনার গর্ভের ভ্রূণের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই এই সময় তেলের পরিবর্তে আপনি ঘি ব্যবহার করুন।
- নারিকেলঃ গর্ভাবস্থায় নারিকেল শ্বাস খাওয়া নিয়েও একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, নারিকেলের সাদা শাঁস খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয়। আর তাই গর্ভাবস্থায় আপনি নারিকেলের শাঁস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। মাদার হরলিক্স গর্ভাবস্থায় একটি পুষ্টি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা মা এবং শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খেলে এটি ভিটামিন খনিজ সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, যা গর্ভধারণের সময় একজন মা এবং শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়ক। গর্ভাবস্থায়ী মাদার হরলিক্স খাওয়ারও কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমন---- ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি এর একটি উত্তম উৎস হল মাদার হরলিক্স। যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যকে বিকশিত করে এবং মস্তিষ্কের উন্নতি সহ নার্ভ সিস্টেমেও উন্নতি ঘটায়।
- মাদার হরলিক্স এ আরো রয়েছে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে যা আপনার গর্ভের শিশুর সুস্থ মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজন।
- গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খেলে এটি মা এবং গর্ভের ব্রণ কে ভ্রূণকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে।
গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে ঘি যোগ করবেন কিভাবে
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন প্রেগনেন্সি কালীন সময়ে আপনি আপনার ডায়েটে ঘি কিভাবে যোগ করতে পারেন। তাহলে চলুন সে সম্পর্কে আপনাকে কিছু ধারণা দিচ্ছি--- গর্ভাবস্থায় আপনি ঘি কাঁচা খেতে পারেন আবার রান্নার সাথে খাবারে যোগ করেও খেতে পারেন।
- পরোটা বা রুটির সাথে আপনি কাঁচা ঘি মাখেও খেতে পারেন।
- গরম ভাতের সাথে আপনি কাঁচা ঘি খেয়ে খেতে পারেন।
- বিভিন্ন শাকসবজি রান্না করতে তাতে ফোড়ন হিসেবে তেলের পরিবর্তে আপনি ঘি ব্যবহার করতে পারেন।
- বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন ক্ষির লাড্ডু পায়েস প্রভৃতি তৈরিতে আপনি ঘি ব্যবহার করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ ঘি খেতে পারবেন?
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা তো জানলেন। কিন্তু কি পরিমাণে ঘি প্রতিদিন খাবেন সেটি জানাও জরুরী। একজন গর্ভবতী মহিলা এবং তার গর্ভের ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ৩৫০ অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজন পড়ে । আর এই অতিরিক্ত ক্যালরি আপনি বিভিন্ন খাবার থেকে পেতে পারেন, যার মধ্যে ঘি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন । সে হিসেবে গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন প্রায় ১-২ টেবিল চা চামচ ঘি আপনি খেতে পারেন।তবে এটি আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা, খাবারের ধরন এবং অন্যান্য পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। একজন চিকিৎসক গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে প্রতিদিন ৬ টেবিল চামচ ফ্যাট রাখার পরামর্শ দেন । সেখান থেকে ১০%-১২% স্যাচুরেটেড ফ্যাট হিসেবে আপনি ঘি আপনার ডায়েটে যোগ করতেই পারেন। তাছাড়া আপনি জেনে আরো অবাক হবেন যে, গর্ভাবস্থায় ঘি খেলেও আপনার বাচ্চা ফর্সা হতে পারে।
গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘি সেবন
গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘি সেবন স্বাস্থ্যর জন্য উপকারি। তৃতীয় ত্রৈমাসিক বলতে বুঝানো হয় সাধারণত গর্ভাবস্থার ৭ম-৯ম মাস পর্যন্ত জাফরাই ২৭ সপ্তাহ থাকে। এই সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের শরীর এবং বাচ্চার উন্নতি অনেকটাই দ্রুত ঘটে। এই সময় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘি একটি উত্তম পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান হতে পারে আপনার জন্য।যা আপনাকে এবং আপনার শিশুর জন্য বিশেষ পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। গর্ভাবস্থার এই তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘি সেবনের ফলে এটি আপনার জরায়ুর সংকোচন বাড়িয়ে তুলতে প্রভাবিত করে। আবার নিয়মিত ঘি সেবনের ফলে এটি আপনার যোনিকে লুব্রিকেন্ট করে এবং প্রসবের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে বলে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে।
যদিও এর বিজ্ঞানভিত্তিক কোন প্রমাণ নেই। তাছাড়া গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ঘি সেবন এবং আপনার গর্ভের শিশুর সুস্থ মস্তিষ্ক এবং নার্ভ সিস্টেম উন্নতিতেও সাহায্য করে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি আপনার গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকেও ঘি খাওয়া শুরু করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় নবম মাসে ঘি সেবন
গর্ভাবস্থায় ঘি খেয়ে এর থেকে প্রয়োজনীয় উপকারিতা পেতে আপনি নবম মাসেও ঘি খেতে পারেন। গর্ভাবস্থার নবম মাসে মা ও শিশুর জন্য ঘি খাওয়া উত্তম হতে পারে। কারণ, এটি ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং কো এনজাইম সমৃদ্ধ একটি উৎস যা গর্ভাবস্থার নবম মাসে মা ও শিশুর উন্নতি ঘটায়। তাছাড়া ঘি একটি উত্তম উৎস হিসেবে পরিচিত।যা মা এবং শিশুর বিশেষ করে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য প্রয়োজন। আবার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্যও অনেক সময় গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে ঘি সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যা প্রসবকে পরবর্তীতে প্ররোচিত করতে পারে। তবে এগুলোর তেমন কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে পরিমিত পরিমাণে ঘি সেবন করাটাই উত্তম।
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছুটা সতর্কতা মেনে ঘি খাওয়া উচিত। যেমন ধরুন-- ঘি বাজার থেকে ক্রয় করার সময় আপনি নিশ্চিত হন যে এটি শুদ্ধ এবং গুণগত মান সম্পূর্ণ ঘি কিনা। কারণ অধিক প্রক্রিয়াজাত এবং ঘি এর গুণগতমান ঠিক না থাকলে এটি আপনার ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়।
- নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ঘি সেবন করা অত্যন্ত জরুরি। তা নাহলে এটি আপনার পাঁচজনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় কি সেবনের পূর্বে আপনি অবশ্যই আপনার একজন পরিচিত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবে সেবন করবেন।
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। গর্ভাবস্থায় কেবলমাত্র ওজন বৃদ্ধি ছাড়া ঘি খাওয়ার অন্য কোন ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবু নিয়ম মেনে পরিণত পরিমাণ করাটাই আপনার এবং আপনার গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। কারণ, অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।সবকিছু সীমার মধ্যে থাকাটাই ভালো। শুধু ঘি খেলে চলবে না বরং গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পরামর্শ মেনে চললে আপনার গর্ভাবস্থা কাটবে আরাম ও সুস্থতায়।ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। এই রকম আরো তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন
পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য
আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url