গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা নিশ্চয়ই জানেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার অপকারিতা হয়তো আপনার জানা নেই। যদি না জানা থাকে তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
গর্ভাবস্থায়-জাম-খাওয়ার-১৫-টি-স্বাস্থ্য-উপকারিতা
কেননা আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয়বস্তু হল  গর্ভাবস্থায় মৌসুমি ফল জাম খাওয়ার উপকারি দিক এবং অপকারিতা। সাথে আর আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন আপনার কি পরিমাণ জাম খাওয়া উচিত এবং কিভাবে জাম খাবেন সে সম্পর্কে।

পেইজ সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানিনা। এখন চলছে জামের মৌসুম। রসালো এই ছোট্ট ফলটি শুধু যে খেতেই সুস্বাদু তা নয় বরং এর একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। আবার অনেক মা, বোনদের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া যাবে কিনা বা খেলেও এর কোন উপকারিতা আছে কিনা। সম্মানিত পাঠক, প্রথমেই চলুন তাহলে জেনে আসি জামের উপকারিতা সম্পর্কে-
  • হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ গর্ভাবস্থায় জাম খেলে এটি আপনার হজম শক্তি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় বদহজম থেকে পরিত্রাণ পেতে চান তাহলে নিয়মিত জাম খান। সুতরাং গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জাম খেলে এটি শুধুমাত্র আপনার বদহজম নয় বরং ডাইরিয়া এবং আলসারের মতো সমস্যাকেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
  • জাম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ফলে একজন গর্ভবতী মা ওবেসিটি তে আক্রান্ত হন এবং তা থেকে পরবর্তীতে আরো নানারকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। 
  • উচ্চ রক্তচাপঃ উচ্চ রক্তচাপ এর মধ্যে একটি যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় প্রিক্ল্যাম্পসিয়া। উচ্চ রক্তচাপের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জাম খান। কারণ, জামে রয়েছে পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাছাড়া জামে ক্যালরি কম থাকার কারণে একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
  • জাম কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করেঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কমবেশি সকল গর্ভবতী মা গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকেন। এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিয়মিত জাম খান। কারণ, জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যা আপনার পেট পরিষ্কার করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ফলে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • গর্ভস্থ ভ্রুনের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতেঃ জামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ। ভিটামিন এ এর অভাবে দৃষ্টিশক্তি জনিত নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই আপনি যদি গর্ভাবস্থায় জাম খান তাহলে এটি আপনার গর্ভস্থ শিশুর দৃষ্টিশক্তির বিকাশেও সাহায্য করবে।
  • জাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ জামে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যা আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে গর্ভকালীন সময়ে আপনি জ্বর, সর্দি, কাশি সহ আরো নানান রকম সংক্রামক ব্যাধি থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।
  • রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে জামঃ গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা বা রক্তাল্পতা দূর করতে আপনি নিয়মিত জাম খান। কারণ, জামে রয়েছে আয়রন যা আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর হিমোগ্লোবিন বাড়লে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার রক্তস্বল্পতাও দূর হবে।
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জামঃ গর্ভাবস্থায় অনেকে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন। একে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় যে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কে জব্দ করার ক্ষেত্রে জাম একটি মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
গর্ভাবস্থায়-জাম-খাওয়ার-১৫-টি-স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  • জাম মৌখিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখেঃ প্রেগনেন্সিতে আপনি নিয়মিত জাম খেলে এটি আপনার মুখের স্বাস্থ্যও ঠিক রাখবে। ফলে দাঁত ও মাড়ির কোন সমস্যা খুব সহজে আপনাকে আক্রান্ত করতে পারবে না।
  • জাম অকাল প্রসব রোধ করেঃ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা অনেকেরই দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে আপনার ইম'ম্যাচিউর সন্তানের জন্ম হয়। এই সমস্যা রুখতে আপনি গর্ভাবস্থায় জাম খেতে পারেন। কেননা জামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম নামক খনিজ পদার্থ যা সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়া রোধ করতে পারে।
  • জাম ইমিউন সিস্টেম উন্নত করেঃ জামে রয়েছে ভিটামিন সি। আর গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি গ্রহণ করলে এটি আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম, আয়রন শোষণ এবং কোলাজেন সংশ্লেষণ কে উন্নত করতে সক্ষম।
  • প্রাকৃতিক মিষ্টতা মেটাতেঃ জাম একটি রসালো টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত ফল। আর তাই গর্ভাবস্থায় মিষ্টি স্বাদের চাহিদা মেটাতে এটি আপনার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাদ্য উপাদান হতে পারে।
  • জাম ক্লান্তি দূর করেঃ গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক দুর্বলতা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। জামে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা। ফলে গর্ভাবস্থায় ব্রাম ভক্ষণে এটি আপনার শারীরিক ক্লান্তি খুব সহজেই দূর করতে পারে।
  • হাড় ক্ষয় রোগ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ জামে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন ডি, আয়রন, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। এই ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ গুলি গর্ভাবস্থার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • মুখের রুচি বৃদ্ধিতেঃ গর্ভাবস্থায় অনেকে রুচিহীনতায় ভোগেন বা খাবার খেতে রুচি পান না।জামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি । তাই জাম খেলে এটি মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে রুচি এনে দেয়। 
সম্মানিত পাঠক, এই ছিল গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা, যা জানার পর হয়তো আপনি নিজেও অবাক হয়েছেন। শুধু জাম ফল নয়, গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মৌসুমি ফল আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তানের জন্য ভীষণই উপকারি।

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা যতটা বেশি এর অপকারিতা ঠিক ততটাই নগণ্য। সহজ ভাষায় বলতে গেলে গর্ভকালীন সময়ে জাম খাওয়ার তেমন কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবে প্রত্যেকটি খাবারেরই তো কিছু উপকারিতা অপকারিতা রয়েছে। সে হিসেবে জামেরও গুটিকতক অপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন জাম খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন--
  • যদি আপনার ওজন কম থাকে বা গর্ভকালীন সময়ে ওজন কম হয় সেক্ষেত্রে আপনার জাম না খাওয়াটাই ভালো । কেননা জামে কার্যত শুন্য ক্যালোরি রয়েছে যা আপনার ওজন বৃদ্ধি রোধ করে।
  • জাম একটি অক্সালেট সমৃদ্ধ ফল । আর এই অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সাথে আবদ্ধ হয়ে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়। যদি আপনি কিডনিতে পাথর জনিত কোন সমস্যা থাকে তবে আপনার ডাক্তার আপনাকে ইতিমধ্যেই অক্সালেট যুক্ত খাবার খেতে বারণ করেছেন। সুতরাং কিডনির এই সমস্যা থাকলে আপনার জাম না খাওয়াই ভালো।
  • গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে থাকলে আপনি খুব বেশি জাম খাবেন না, কারণ ডায়াবেটিসের সমস্যায় জাম খেলে তাতে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
  • খালি পেটে জাম খাওয়ার ফলে পেট ফাপা, বদ হজম, বুকে জ্বালাপোড়া বা অম্বল সৃষ্টি হতে পারে
  • শরীরে পানি জমে গেছে অথবা যারা সবেমাত্র বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন বা আপনার শরীরে ঘন ঘন বমি ভাব দেখা দিচ্ছে এমন সময় জাম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ, এমন সময় জাম খেলে আপনার শরীরে উপকারের পরিবর্তে হিতে বিপরীত হতে পারে।
  • প্রেগনেন্সিতে আপনার ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে আপনি বেশি পরিমাণে জাম খাবেন না। কারণ, অধিক পরিমাণ জাম খেলে তা আপনার শরীরে হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব ফেলে এবং অনেক সময রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার এই অপকারিতা গুলো তখনই দেখা দেবে, যখন আপনি অতিরিক্ত পরিমানে জাম খাবেন। সুতরাং গর্ভাবস্থায় জাম খেয়ে এর উপকারিতা পেতে আপনি পরিমিত পরিমানে জাম খাবেন। তাতে কোন সমসসা নেই।

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া যাবে কি?

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা ইতিমধ্যেই আমরা আলোচনা করেছি। গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া যাবে কি যাবে না এ নিয়ে আমাদের মা বোনদের সংশয়ের শেষ নেই। বলে রাখি, আপনি গর্ভবতী হলে নিশ্চিন্তে জাম খেতে পারেন। আবার বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভকালীন সময়ে জাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। 
কারণ, জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ। যা আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে। তাই বুঝতেই পারছেন গর্ভাবস্থায় জাম খেলে তাতে উপকারই পাবেন আপনিই। সুতরাং, গর্ভাবস্থায় রসালো সুস্বাদু এই জাম ফল খাওয়ার লোভ হলে কারো কথাই কর্ণপাত না করে আপনি নির্দ্বিধায় নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে জাম খান। 
 
আর পেতে থাকুন একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা। তবে যেহেতু প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা হয় এবং গর্ভাবস্থায় একেকজনের শারীরিক কন্ডিশন একেক রকম হয় তাই সেটি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিলে ভালো হয় যে জাম খাওয়া যাবে কিনা। কেননা আপনার ডাক্তার আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন।

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কি পরিমাণ জাম খাবেন

গর্ভাবস্থায় জাম খেয়ে এর উপকারিতা পেতে আপনাকে পরিমান মত পরিমিত পরিমানে খেতে হবে। কারন, গর্ভাবস্থায় অসুস্থতা না হলেও খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। আবার, অনেক সময় ইচ্ছে করলেও আপনার পছন্দের খাবারগুলো খেতে পারবেন না এবং যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে ভাবতে হয় এটি খাওয়া আপনার জন্য নিরাপদ কিনা। 
 
যদিও জাম একটি রসালো সুস্বাদু ফল, তা বলে আপনি গর্ভকালীন সময়ে এটি আপনার ইচ্ছামত যত খুশি তত পরিমাণ খেতে পারবেন না। কারণ, গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেই একজন গর্ভবতী মাকে কিছু নিয়ম মেনে খেতে হয় হয় এবং এই সময় খাবারের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হয়। সে হিসেবে আপনার প্রেগনেন্সিতে দিনে দুই বারের বেশি জাম খাওয়া উচিত হবে না। 
 
আপনি প্রতিদিন একটি মাঝারি সাইজের দুই বাটির বেশি জাম খাবেন না। গর্ভাবস্থায় আপনার এমন খাবার খাওয়া প্রয়োজন যা আপনার গর্ভের ছোট্ট সোনামণিকে পুষ্টি যোগাবে এবং আপনি যদি ডায়েটের মধ্যেও থাকেন তাহলে গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে যোগ করে নিতে পারেন এই জাম ফল। এক্ষেত্রে আপনার ডায়েটের খাদ্য তালিকায় জাম যুক্ত করার আগে আপনি একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় আপনি জাম কিভাবে খাবেন

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা তো জানলেন। এবার আপনাকে জানাবো এই সময় আপনি কি কি উপায়ে জাম খেতে পারেন। অন্যান্য ফলের মত আপনি জাম কাঁচা খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেবেন। আবার যারা কাঁচা জাম খেতে পছন্দ করেন না, তারা জামের স্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন। এখন ভাবছেন জামের স্মুদি কিভাবে তৈরি করা যায়? চলুন তাহলে আপনাকে জানিয়ে দিই আপনি কিভাবে যাবেন স্মুদি তৈরি করবেন--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • জামের পরিমাণ- ৩-৪ কাপ
  • দই এর পরিমাণ- ২ কাপ
  • মধুর পরিমাণ- স্বাদ অনুযায়ী এবং
  • কয়েকটি বরফের কিউব।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ
প্রথমে আপনি জাম গুলি থেকে এর বীজ আলাদা করে ফেলুন। অতঃপর একটি ব্লেন্ডারে জাম, দই এবং মধু একসাথে মিশে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। 
গর্ভাবস্থায়-জাম-খাওয়ার-১৫-টি-স্বাস্থ্য-উপকারিতা
ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে একটি গ্লাসে ঢেলে তাতে কয়েকটি বরফের কিউব যোগ করে দিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেলে মজাদার স্মুদি। কাঁচা জাম খেতে যাদের আপত্তি তারা এভাবে জামের স্মুদি তৈরি করে খেতে পারেন খুব অনায়াসেই।

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার জন্য কিভাবে জাম নির্বাচন করবেন

গর্ভাবস্থায় জাম খেয়ে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে সঠিক জাম নির্বাচন করাটাও ভীষণ জরুরী। যে কোন ফল খাওয়ার আগে যেমন কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে, তেমনি আপনাকে এই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম রয়েছে। তো চলুন গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার ক্ষেত্রে জাম নির্বাচনের নিয়ম গুলো জেনে নিন--
  • প্রথমেই বলি, জামের এই ভরা মৌসুমে আমাদের বাড়ির আশেপাশের প্রায় জাম গাছগুলিতে জাম পাকতে দেখা যায়। ফলে অনেক সময় আমরা জাম খাওয়ার লোভ সামলাতে পারি না। আবার অনেক সময় আমরা কুড়িয়েও জাম খাই। গর্ভাবস্থায় এই ভুল কাজটি আপনি কখনোই করবেন না। কারণ, পতিত জামে অনেক সময় জীবাণুর সংক্রমণ থাকতে পারে যা আপনার গর্ভকালীন সময়কে দুর্বল করে তুলতে পারে।
  • জাম একটি নরম ফল বিধায় অনেক সময় থেতলে যায়। ফলে বাজার থেকে জাম ক্রয় করার সময় আপনি বিকৃত, পচা, এবং ক্ষতিগ্রস্ত জাম ক্রয় করবেন না।
  • জাম যদি আধা পাকা হয়, কাঁচা হয়, টাটকা সতেজ না হয় এবং অতিরিক্ত শক্ত হয় সেই জাম কখনোই আপনি গর্ভাবস্থায় ভক্ষণ করবেন না।
  • সাধারণত ঘরের নরমাল তাপমাত্রায় জাম দুই দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। আপনি চাইলে জাম কিনে সেটি নেট ব্যাগে করে রেফ্রিজারেটরে ও সংরক্ষণ করতে পারেন। রেফ্রিজারেটরে জাম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
সম্মানিত পাঠক,  গর্ভাবস্থায় জাম খেয়ে এর অপকারিতা এড়াতে আপনাকে উপরোক্ত নিয়মে সঠিক জাম নিরবাচন করতে হবে।যা আপনার জন্য স্বাস্থ্য সম্মত হবে।

জামের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই জামের পুষ্টিগুণ জানতে চান। জাম একটি উচ্চ পুষ্টিকর প্রোফাইল, কম ক্যালরি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ভরপুর সুস্বাদু রসালো ফল। চলুন এই ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনাকে এবার জানিয়ে দিই --
প্রতি ১০০ গ্রাম জাম এ রয়েছেঃ
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
আয়রন ০.২৪ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ১৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ ৯ মাইক্রো গ্রাম
প্রোটিন ০.৭ গ্রাম
চিনি ৮.৫ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ০.৬ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১৪ গ্রাম
সোডিয়াম ২৮ মিলিগ্রাম
ফ্যাট ০.১ গ্রাম
ক্যালরি ৬২ কিলো ক্যালরি
পটাশিয়াম ৫৫ মিলিগ্রা

গর্ভাবস্থায় জাম খেলে গর্ভের বাচ্চা কালো হয় নাকি ফর্সা হয়

গর্ভাবস্থায় জাম খেলে গর্ভের বাচ্চা কালো হয় নাকি ফর্সা হয় এ নিয়ে অনেকের অনেক রকম কৌতূহল থাকে।  সেই প্রাচীনকাল থেকেই একটা কথা প্রচলিত আছে, গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা কালো জাম খেলে গর্ভের বাচ্চা কালো হতে পারে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভ্রান্ত একটি ধারণা মাত্র। গবেষণায় দেখা গেছে, চেরি জাতীয় ফল খেলে গর্ভের বাচ্চা মেলানিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে মানে ফর্সা হয়। 
 
জাম হল বেরি জাতীয় ফলের মধ্যে অন্যতম একটি। জামে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের ক্ষতি রোধ করে। তাই স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, এমনকি জাম খেলেও আপনার ত্বক ভালো থাকবে এবং গর্ভের বাচ্চাও ফর্সা হয়ে জন্মগ্রহণ করার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার সময় একজন গর্ভবতী মায়ের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রুনের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। যেমন--
  • জাম খাওয়ার পূর্বে সেটি অবশ্যই লবণ পানিতে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে তবেই খাবেন।
  • গর্ভাবস্থায় আপনি খালি পেটে কখনোই জাম খাবেন না।
  • আপনার প্রেগনেন্সিতে জাম খাওয়ার আগে এবং পরে অন্তত দুই ঘন্টা দুধ সেবন করবেন না। কারণ জাম খাওয়ার পরে সাথে সাথে দুধ খেলে পেটে বিষক্রিয়ার বৃষ্টি হতে পারে।
  • শুধু দুধ নয় বরং দুগ্ধ জাত বিভিন্ন খাবার যেমন- পনির, এবং দই এর মত কোন খাবার খাবেন না ।কারণ, জাম খাওয়ার পর এগুলো খেলে আপনার শরীরের জন্য তা বিপদ বয়ে আনতে পারে।
  • আবার জাম এবং হলুদ এই দুটি খুবই মারাত্মক জুটি। তাই জাম এবং হলুদ কখনোই একসাথে খাবেন না । কারণ, জাম খাওয়ার পরে হলুদ দিয়ে তৈরি কোন খাবার না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ্যারা ।
  • জাম খাওয়ার পূর্বে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ, জামের পুষ্টিগুণ অটুট রাখতে এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য জাম খাওয়ার পরে পানি খাওয়া যাবে না। জাম খাওয়ার পর পানি খেতে চাইলে আপনাকে অন্তত আধা ঘণ্টা মত অপেক্ষা করতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় খাবার পর পরই ভরা পেটে জাম খাবেন না এতে আপনার এসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
  • আবার, স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য জাম না খাওয়াটাই উত্তম।
  • গর্ভাবস্থায় ফরমালিন যুক্ত জাম খাবেন না। কেননা ফরমালিন একপ্রকার রাসায়নিক বিষ যা আপনার এবং আপনার গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে ।
আর তাই, আপনাকে বলব আপনি গর্ভাবস্থায় সতর্কতা মেনে খাবার গ্রহণ করুন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং আপনার গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখুন।

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে সচেতন হয়েছেন। জামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে যা নানা ধরনের ঔষধি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। গ্রীষ্মকালীন একটি জনপ্রিয় ফল হল জাম। বাজারে এই ফলের শুরু হয়েছে বেশ আনাগোনা। দেশীয় এই ফলটির স্থায়িত্বকাল অন্যান্য ফলের তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই অনেকেই গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি খাওয়ার সুযোগ কোনভাবেই মিস করতে চান না।
 
গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া যাবে কিনা এই নিয়ে যারা সংশয় ছিলেন, তারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে খুশি হয়েছেন যে গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়া একেবারেই নিরাপদ। তবে নিয়ম না মেনে জাম খেলে এর উপকারিতা থেকে ক্ষতিকর প্রভাব গুলোই আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই নিজে সুস্থ থাকতে এবং আপনার গর্ভের সুস্থ রাখতে নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে জাম খান । সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url