কাঁচা হলুদের বিস্ময়কর ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি কি ইচ্ছুক? সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে কি উপকার হয় জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। 
কাঁচা-হলুদের-বিস্ময়কর-২০-টি- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
কারণ, আজকে আমরা আলোচনা করব কাঁচা হলুদের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।সাথে আরো জানাবো আপনার ত্বকে হলুদের উপকারিতা এবং প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেলে কি হয়। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচীপত্রঃ কাঁচা হলুদের বিস্ময়কর ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

কাঁচা হলুদের স্বাস্থ্য উপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। কিন্তু আপনি জানেন কি, প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে এই কাঁচা হলুদ একটি মহৌষধ। ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগ দূর করতেও কাঁচা হলুদ বেশ কার্যকরী। শুধু তাই নয়, কাঁচা হলুদ এমন একটি মসলা যা আমিষ নিরামিষ সহ সব রান্নায় অতীত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার চলুন কথা না বাড়িয়ে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনি ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু কোনভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারছেন না। তাহলে বলবো আপনি প্রতিদিন সকালে উঠে এক কোয়া কাঁচা হলুদ খান। কারণ, একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে নিয়মিত সকালে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে আপনার শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
  • দেহের ইনফ্লেমেশনের মাত্রা কমাতেঃ সাধারণত আমাদের শরীরে প্রদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করলেন শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। তার সাথে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নানান ধরনের রোগ ব্যাধি। আর ঠিক এই কারণেই প্রতিদিন আপনার কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত। কারণ, এই কাঁচা হলুদের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা শরীরের প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর।
  • ক্ষত সারাতেঃ আপনার শরীরের ক্ষতস্থান বা কাঁটা স্থানে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে পারেন। তাতে ক্ষতস্থানের যন্ত্রনা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। কারণ, কাঁচা হলুদে রয়েছে কারকিউমিন এবং অন্যান্য আন্টি উপাদান যা কিনা বিভিন্ন ধরনের ক্ষত স্থানের যন্ত্রণা কমাতে সক্ষম।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আর ঠিক এই সময় চিকিৎসকরা এক গ্লাস দুধে কয়েক চামচ হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, এই পানীয়টিতে রয়েছে একাধিক উপকারী উপাদান যা আপনার শরীরের ইমিউনিটিকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • মাথার যন্ত্রণা সারাতেঃ মাঝে মাঝেই আপনার মাথা যন্ত্রণা করে এবং কোন কাজেই মন বসে না। ঠিক এই সময় আপনি এক কাপ হলুদ মেশানো দুধ খেয়ে নেন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথার যন্ত্রনা অনেকটাই কমে গেছে। বিশ্বাস করতে পারছেন না তাই তো! তাহলে আপনি এখনই এই পানীয়টি পান করুন যার ফলাফল নিজেই বুঝতে পারবেন।
  • শরীরের টক্সিক উপাদান অপসারণ করেঃ শরীর ডিটক্সিফাই করতে কাঁচা হলুদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কারণ, এই উপাদানটির মধ্যে রয়েছে কার্কিউমিন যা আপনার রক্তে উপস্থিত সকল ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান অপসারণে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার ব্লাড ভেসেলের ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ কাঁচা হলুদ আপনি কোনভাবেই আপনার ওজন কমাতে পারছেন না বরং দিনকে দিন ওজন বেড়েই চলেছে। তাহলে আজ থেকেই আপনি নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করুন। কারণ, কাঁচা হলুদ খেলে আপনার শরীরের মেটাবলিজম রেট স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে এবং আপনার ওজনও কমতে থাকবে। তাছাড়া কাঁচা হলুদের কার্কিউমীন উপাদান আপনার শরীরে উপস্থিত হেড গলানোর মাধ্যমে ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে।
  • লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আপনি কি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত? তাহলে আর দেরি না করে আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করুন কাঁচা হলুদ। কারণ কাঁচা হলুদের থাকা কার্কিউমিন উপাদান লিভারের কার্যক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে লিভারের কোন রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। শুধু তাই নয়, ফ্যাটি লিভারের মত রোগ সারেতের সক্ষম এই কাঁচা হলুদ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনার লিভারকে চাঙ্গা এবং কর্মক্ষম রাখতে কাঁচা হলুদের কোন বিকল্প নেই।
  • হাঁচি কাশির প্রকোপ কমাতেঃ আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে ছোট বড় প্রায় সকলেরই হাঁচি কাশি লেগেই থাকে। এই সময় আপনি যদি কাঁচা হলুদ খান তাহলে হাঁচি-কাশি প্রকোপ থেকে অনেকটাই রেহাই পাবেন। কারণ, কাঁচা হলুদে বিদ্যমান আন্টি ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ রেস্পিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমাতে সক্ষম।
  • হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ খাবার খেলে আপনার পেটে খাবার হজম হতে চাই না ফলে বদহজম হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি কাঁচা হলুদ খেতে পারেন। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে শরীরে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে আপনার বদহজম,গ্যাস,অম্বল এর মত পেটের যেকোনো সমস্যা খুব সহজেই নির্মূল হবে।
  • ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেঃ ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকেই। আপনি নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ খেলে আপনার ত্বকের ভেতরে থাকা টক্সিন উপাদান অপসারিত হয় এবং সেইসাথে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে করে আপনার ত্বক এতোটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে যে ত্বকের বলিরেখাও কমতে শুরু করবে।
  • পিরিয়ড যন্ত্রণা দূর করেঃ মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মা বোনদের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি অল্প করে এক কোয়া হলুদ খেয়ে নেন তাহলে দারুণ উপকার পাবেন। কারণ, কাঁচা হলুদে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা আপনার পিরিয়ড জনিত সকল যন্ত্রণা দূর করতে পারে।
  • ব্রণ দূর করেঃ নিয়মিত কাঁচা হলুদ ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের ব্রণ,ব্রনের কালো দাগ, রোদে পোড়া কালো ছোপ দাগ দূর করতেও সাহায্য করে। তাছাড়া আসছে শীতকালে আপনি যদি আপনার ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান তাহলে আজ থেকেই হলুদ মিশ্রিত দুধ খাওয়া শুরু করুন।
  • খাদ্য সংক্রমণ থেকে বাঁচাতেঃ আপনি প্রতিদিন যে খাবার খাচ্ছেন তাতে অনেক সময় নানান জীবাণু থাকতেই পারে। ফলে জীবাণুযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে এটি আপনার খাদ্যনালী কে খুব সহজেই আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু এই খাবারের সাথে আপনি যদি কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করেন তাহলে এটি আপনার খাদ্যনালী কে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। কারণ, কাঁচা হলুদে বিদ্যমান কার্কিউমিন, আন্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বানান ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে আপনার খাদ্যনালী কে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে।
  • ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতেঃ অনেক সময় হাত পা মচকে গেলে আক্রান্ত স্থানে চুন-হলুদ লাগানোর কথা আমরা প্রায় কমবেশি সকলেই জানি। শুধু তাই নয়, আপনি কাঁচা হলুদ বেটে যদি ভেঙে যাওয়া হাড়ের ক্ষতস্থানে লাগান তাতেও ভালো উপকার পাবেন। কারণ, হলুদের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান হাড়ের টিস্যুকে রক্ষা করে এবং ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • হাড় ক্ষয় রোধ করতেঃ কাঁচা হলুতে বিদ্যমান কার্কিউমিন উপাদান যা হাড় ক্ষয় রোধ করে এবং আপনার হাড়কে রাখে মজবুত। তাছাড়া মহিলাদের মেনোপজের সময় হাড়ের যে ক্ষয় হয় তা থেকেও কাঁচা হলুদ আপনাকে বাঁচাতে পারে। 
  • মানসিক স্ট্রেস কমাতেঃ আপনি প্রচন্ড রকমের মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কোনভাবেই দুশ্চিন্তার ট্রমা থেকে নিজেকে বের করতে পারছেন না। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি এক কোয়া কাঁচা হলুদ খেয়ে নিন। কারণ, কাঁচা হলুদের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ আপনাকে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেস,উদ্বেগ থেকে খুব সহজেই মুক্তি দিতে পারে।
কাঁচা-হলুদের-বিস্ময়কর-২০-টি- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  • হার্ট সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেলে এটি আপনার হার্টকেও সুস্থ রাখে। তাই আপনি আপনার হার্ট সুস্থ রাখতে চাইলে আজ থেকে শুরু করে দিন কাঁচা হলুদ খাওয়া।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ কাঁচা হলুদ ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করতেও সক্ষম। কারণ কাঁচা হলুদের এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধিকে রুখে দিতে পারে। আর তাই এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ আলঝেইমার একটি মারাত্মক জটিল রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি অনেকাংশেই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং লোপ পায়। আলঝেইমার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কাঁচা হলুদ।
  • বয়সের ছাপ দূর করেঃ অনেকের অল্প বয়সেই ত্বকে বার্ধক্য আঁকড়ে ধরে এবং বয়সের একটা ছাপ পড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন কাঁচা হলুদ। কারণ, কাঁচা হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতে বেশ কার্যকর।
  • জয়েন্টের ব্যথা কমাতেঃ জার্নাল অফ অল্টারনেটিভ এন্ড কম্প্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, অস্টিওআর্থাইটিস আপনার ব্যক্তিরা তাদের জয়েন্টের ব্যথা কমাতে কারগিউমেন্ট গ্রহণ করে। আর এই কার্কিউমিন কে ড্রাগের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা কাঁচা হলুদে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।
  • শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ আপনাদের যাদের অ্যাজমা ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য হলুদ গুঁড়া মহৌষধ এর মত কাজ করে। তাছাড়া আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে হলুদ গুঁড়া হালকা কুসুম গরম জলে মিশিয়ে এ রাতের শোয়ার আগে খেতে পারেন তাহলে আপনার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে।
  • শিশুর লিউকোমিয়া সারাতেঃ অনেক সময় নিয়মিত এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আপনি ১চা চামচ কাঁচা হলুদের রস হালকা কুসুম গরম জল এবং মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং লিউকোমিয়া সেরে যায়।
  • রক্ত পরিশুদ্ধ করেঃ আপনার শরীরকে ডিটক্সিকাই করতে কাঁচা হলুদের ভূমিকা অনন্য। কারণ, কাঁচা হলুদের বিদ্যমান কার্কিউমিন আপনার রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান অপসারণ করে। ফলে আপনার ব্লাড ভেসেলের কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো থাকেই না সেইসাথে রক্তও পরিশুদ্ধ হয়।
তাছাড়া কাঁচা হলুদ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। সেই সঙ্গে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল এবং আন্টি কার্সিনোজেনিক প্রপার্টিজ যা আপনার শরীরকে মজবুত রাখে এবং কঠিন থেকে কঠিনতর রোগ ব্যাধিকে দূরে রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

কাঁচা হলুদ খাওয়ার অপকারিতা

কাঁচা হলুদের যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাছাড়া কোন কিছু অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয় এটি আমরা সকলেই জানি এবং হলুদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। এবার চলুন মাত্রাতিরিক্ত কাঁচা হলুদ খেলে আপনার কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • হলুদের এফেক্ট এমনিতেই গরম। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ হলুদ খান তবে সেটি আপনার পেটে জ্বালা ভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই সঠিক মাত্রাই হলুদ গ্রহণ করুন।
  • মাত্র অতিরিক্ত হলুদ খাওয়ার ফলে এটি আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, হলুদে রয়েছে অক্সালেট। আর এই অক্সালেট ক্যালসিয়াম দ্রবীভূত করার পরিবর্তে শরীরে ক্যালসিয়াম জমাটে সাহায্য করে। যা আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টির জন্য অনেকটাই দায়ী।
  • হলুদের মধ্যে কারকুমিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা অনেক সময় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে মাত্রাতিরিক্ত হলুদ খাওয়ার ফলে আপনার ডায়রিয়া এমনকি বমি বমি ভাবও দেখা দিতে পারে।
  • কাঁচা হলুদ আপনার ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এ কথা যেমন সত্য ঠিক তেমনি অধিক পরিমাণে কাঁচা হলুদ গ্রহণ গ্রহণ করার ফলে আপনার উপকারের পরিবর্তে অপকারীই হতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় হলুদ সেবনে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং ত্বকও ফাটতে শুরু করে।
  • আমাদের দেহে প্রতিটি খনিজ পদার্থের নিজস্ব একটি কাজ রয়েছে এবং এর মধ্যে আয়রন অন্যতম। শরীরে আয়রনের অভাবেও কিন্তু অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে অনেক সময় আয়রন শরীরে শোষণ হতে বাধা প্রদান করে। আর তাই আপনার যদি আয়রনের ঘাটতি থেকে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট মাত্রায় হলুদ গ্রহণ করুন।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় হলুদ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীর থেকে আয়রন শোষণ করে নেয় এবং এর ফলে আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। ফলে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ কাঁচা হলুদ সেবনে আপনার মাথা ধরা, ত্বকের সমস্যা এগুলো তো লেগে থাকেই, তার সাথে সাথে আলসার, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, প্রদাহ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন পরিস্থিতিতে মা বোনদের কাঁচা হলুদ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, এই সময়ে কাঁচা হল খেলে এটি আপনার জরায়ু সংকোচনকে আরো উদ্দীপিত করতে পারে।ফলে দেখা দিতে পারে নানা রকম শারীরিক জটিলতা।
  • বড়দের মতো বাচ্চাদেরও অধিক পরিমাণে কাঁচা হলুদ খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। সুতরাং সাবধান!
একটি কথা বলে রাখি, হলুদের উপকারিতা এবং অপকারিতা কেবলমাত্র এর পরিমাণের ওপর নির্ভর করে অর্থাৎ আপনি প্রতিদিন কি পরিমান হলুদ গ্রহণ করছেন তার ওপর। সুতরাং আপনি যদি সঠিক পরিমাণে কাঁচা হলুদ গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না বললেই চলে।

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে কি উপকার হয়

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা জানতে চান? সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে এর জন্য আপনাকে সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে খেতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি রোজ সকালে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খান তাতে আপনার নানা রকম শারীরিক উপকারিতা মিলবে এবং এর ফল আপনি পাবেন হাতেনাতে।
 
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা হল খেলে এটি আপনার রক্ত যেমন পরিশুদ্ধ করে তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। আর ঠিক সে কারণে করোনা কালীন সময়ে কাঁচা হলুদের কদর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল বাজারে। কারণ, তখন সকালে খালি পেটে চিকিৎসকরা কাঁচা হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে করে আপনার শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়। 
আর এই ইমিউনিটি বৃদ্ধি পেলে কোন রোগব্যাধি আপনাকে সহজে আক্রমণ করতে পারবেন। হলুদের মধ্যে কারকিউমিন নামক যে উপাদানটি রয়েছে এটি আপনার শরীরকে রোগমুক্ত রাখতেও সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত সকালে এক কোয়া কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে আপনি গ্যাস অম্বল থেকে মুক্তি পেতে পারেন, 
 
আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে, ওজন কমাবে, আপনার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে, বয়স জনিত নানা রোগের প্রকোপ কমে আসবে, আপনার রক্ত পরিশুদ্ধ হবে, আপনার লিভারকে সুস্থ রাখবে, এবং আপনার হার্টকেও সুস্থ রাখবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন শরীরকে সুস্থ রাখতে এক কোয়া কাঁচা হলুদের কোন বিকল্প নেই।

কাঁচা হলুদ ও মধু খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা হলুদের আরো  স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে আপনি কাঁচা হলুদ এবং মধু এক সাথেও খেতে পারেন। এই দুটি উপাদানই হাজার হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া কাঁচা হলুদের পাশাপাশি মধুও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। এবার জেনে নিন কাঁচা হলুদ এবং মধু একসঙ্গে খেলে আপনার স্বাস্থ্যের কি কি উপকার হতে পারে--
  • প্রথমেই বলি, কাঁচা হলুদে কারকিউমিন সহ এন্টিব্যাকটেরিয়াল,এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে ফলে অতি সহজেই এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। অপরদিকে মধুও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।
  • নিয়মিত কাঁচা হলুদ এবং মধু একসাথে সেবনের ফলে এটি আপনাকে এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা হলুদ এবং মধু সর্দি কাশি প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।
  • আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে।
  • নিয়মিত নিয়ম মেনে কাঁচা হলুদ এবং মধু খেলে আপনার ওজন যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকবে তেমনি শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতেও সাহায্য করবে।
  • বিভিন্ন ধরনের মানসিক উদ্বেগ এবং বিষন্নতা দূর করবে।
  • আপনার গাটের ব্যথা হ্রাস করবে।
  • নিয়মিত কাঁচা হলুদ এবং মধু সেবনে এটি আপনাকে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির হাত থেকেও রক্ষা করবে।
  • আপনার শরীরের বিভিন্ন আঘাত জনিত স্থান,ক্ষতস্থান, কাঁটাস্থান,দ্রুত সারাতে সাহায্য করবে এই মধু এবং কাঁচা হলুদ।
  • নিয়মিত কাঁচা হলুদ এবং মধু গ্রহণে আপনার শরীরের নানা ধরনের প্রদাহ কমাতেও এটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং কাঁচা হলুদ এবং মধু এই দুটি জিনিসই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কাঁচা হলুদ এবং মধু যেভাবে ব্যবহার করবেন
আপনি দুই ফোঁটা লেবুর অ্যাসেনশিয়াল অয়েল,১ চামচ পরিমাণ হলুদ এবং ১/৪ কাপ পরিমান কাঁচা মধু একসাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং ঢাকনাযুক্ত একটি পরিষ্কার পাত্রে মিশ্রণটি সংরক্ষণ করুন। সর্দি, কাশি, ঠান্ডা এবং এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে এই মিশ্রণটি আপনি দিনে ৩ বার করে আধা চামচ পরিমাণ খাবেন।
 
এভাবে কিছুদিন নিয়ম মত মধু এবং হলুদ সেবন করলে আপনার ঠান্ডা জনিত রোগ অচিরেই দূর হবে। তাছাড়া আপনি আপনার ঔষধের সাথেও এই মিশ্রণটি ব্যবহার করে খেতে পারেন। আরেকটি কথা না বললেই না, কাঁচা হলুদ এবং মধু কখনোই ঔষধ বা চিকিৎসার বিকল্প হতে পারে না। তাই কাঁচা হলুদ এবং মধু খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবে খাবেন।

প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেলে কি হয়?

আপনি যদি কাঁচা হলুদ থেকে পরিপূর্ণ উপকারিতা পেতে চান তাহলে আপনাকে নিয়ম মত সঠিক সময়ে কাঁচা হলুদ খেতে হবে। প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেলে কি হয় চলুন তা জেনে নিই--
  • নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে এটি আপনার রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
  • তাছাড়া কাঁচা হলুদের কারকিউমিন উপাদান আপনার শরীরে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি শরীরের রক্ত চলাচলের গতিকেউ ত্বরান্বিত করে।
  • প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেলে এটি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত হলুদ খাওয়ার ফলে আপনার হার্টের ব্লকেজ দূর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • শুধু তাই নয়, আপনার স্কিনের তারুণ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করে এই কাঁচা হলুদ।
  • তাছাড়া কাঁচা হলুদে রয়েছে নানা ধরনের জীবাণু নাশক গুণ। আপনি যদি প্রতিদিন এক কোয়া করে কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তাহলে এর ফলাফল আপনি টের পাবেন হাতেনাতেই।

কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়

কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই। দেখুন, যেকোনো খাদ্য উপাদানের উপকারী এবং অপকারী দুটি দিকই রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি নিয়ম মেনে সঠিক মাত্রায় সেই খাদ্য উপাদানটি গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর দিকের থেকে উপকারী দিকই বেশি পাবেন। কাঁচা হলুদের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। কাঁচা হলুদও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে আপনার শরীরে নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতেই পারে।
 
সেটা বাচ্চা অথবা বয়স্ক মানুষ যে কারোরই হতে পারে। এই ভেষজ উপাদানটিতে কারকিউমিনের মত যেমন ভালো পলিফেনাল রয়েছে, ঠিক তেমনি আবার অক্সালেট ফাইটেড এর মত ক্ষতিকর যৌগ উপাদানও রয়েছে। আবার, আমরা আমাদের রোজকার খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে যে আইরন ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক এর মত খনিজ লবণগুলো শরীরে গ্রহণ করি তাতে আমাদের শারীরিক সুস্থতা বেশ অটুট থাকে।
 
কিন্তু এইসব উপকারী খনিজ লবণগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শোষণ করে নেয় কাঁচা হলুদ। ফলে শরীরে খনিজ লবণের গুণাগুণ অনেকটাই কমে যায় এবং রক্তাল্পতার প্রবণতা দেখা দেয়। তাছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা হলুদ দীর্ঘদিন ধরে খেলে আপনার ডায়রিয়া, কিডনিতে পাথর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কাঁচা হলুদের উপকারিতা পেতে আপনি অবশ্যই পরিণত পরিমাণে কাঁচা হলুদ খাবেন।

কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা হলুদ থেকে উপকারিতা পেতে কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। হলুদ কিন্তু অনেকে অনেক ভাবেই খেয়ে থতিয়। কেউ কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খায় কেউবা আবার কাঁচা হলুদ জলের সাথে ফুটিয়ে খায়। শুধু মশলা কিংবা প্রসাধনী নয় বরং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাতেও কাঁচা হলুদের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন কাঁচা হলুদ খাবার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই --
  • কাঁচা হলুদ হাম জ্বরের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। হাম জ্বর হলে আপনি কাঁচা হলুদকে শুকিয়ে গুড়ো করে এর সাথে উচ্ছে পাতার রস এবং পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে খেলে হাম দ্রুত সেরে যাবে।
  • যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ গরুর মাংস, চিংড়ি, মাছ,মসুর ডাল এগুলো খেলে যাদের শরীরে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে চুলকায় তাদের জন্য এই কাঁচা হলুদ হতে পারে একটি দুর্দান্ত উপায়। এর জন্য আপনি কাঁচা হলুদের গুঁড়ো ২ ভাগ, শুকনো আমলকির গুঁড়ো ৩ ভাগ এবং নিম পাতার গুঁড়ো ১ ভাগ এই তিনটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে খেলে আপনি এলার্জি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
  • দীর্ঘমেয়াদি কাশি বা বুকের জমানো কফ অপসারণ করতে আপনি ৫-৭ গ্রাম কাঁচা হলুদ প্রথমে পিষে নিন। এরপর হলুদের এই পেস্ট আন্দাজ মত দেড় কাপ পরিমাণ পানিতে ৫ মিনিটের মত অল্প আঁচে ফুটিয়ে নিন। ফুটানো শেষে থেকে পানিটুকু আলাদা করে এর সাথে অল্প পরিমাণ চিনি বা মধু মিশিয়ে মাঝে মাঝে খেলে আপনার কফ জনিত সমস্যা দূর হবে।
  • আপনার শরীরের কোন অংশ মচকে গেলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেখানে চুন লবণ এবং হলুদ মিশিয়ে গরম করে কিছুদিন লাগান। এতে আপনার ব্যাথার উপশম হবে।
  • তাছাড়া কাটা ঘা,ফোলা, এমনকি ক্ষতস্থানেও হলুদের গুঁড়ো দারুন কাজ করে।
  • আপনাদের যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তারা কাঁচা হলুদের গুঁড়ো, খাঁটি সরিষার তেল এবং আখের গুড় একসাথে মিশিয়ে নিয়ম করে খেতে থাকুন। এতে করে আপনি হাঁপানি থেকে রেহাই পাবেন।
  • শরীরে ফোড়া হলে অনেক সময় তাতে ঘা এর মত সৃষ্টি হয়। ফোড়ার এই ঘা সারাতে আপনি পোড়া হলুদের ছাই পানিতে গুলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগান। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনার ঘা শুকিয়ে গেছে।
  • পেটের কৃমি দূর করতে কাঁচা হলুদ বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। কৃমি নিরাময়ে আপনি ১৫-২০ ফোটা কাঁচা হলুদের রসের সাথে সামান্য লবন মিশিয়ে খালি পেটে খেলে কৃমিনাশ হবে।
  • আপনাদের যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা ৫-১০ ফোটা কাঁচা হলুদের রসের সাথে এক চা চামচ চিনি বা মধু মিশে খেতে পারেন এতে আপনার লিভারের রোগ অনেকটাই দূর হবে এবং লিভার সুস্থ থাকবে।
  • আবার, কাঁচা হলুদ আপনি দুধ দিয়েও খেতে পারেন। কারণ দুধ দিয়ে কাঁচা হলুদ খেলে কাচা হলুদের কারকিউমিন উপাদান পুরোপুরি কাজে লেগে যায়।
  • আপনি চাইলে গোল মরিচের সাথে কাচা হলুদ বেটেও খেতে পারেন। গোলমরিচ এবং কাঁচা হলুদ একসাথে বেটে খেলে গোলমরিচের পিপারিন উপাদান হলুদের কারকিউমিনের কার্যক্ষমতা প্রায় ২০০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ কাঁচা হলুদ খাবেন

প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ কাঁচা হলুদ খাবেন তা জেনে রাখা জরুরী।সম্মানিত পাঠক, এবার আপনাকে জানাবো আপনি কাঁচা হলুদ কখন খাবেন এবং প্রতিদিন কি পরিমান খাবেন। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ মিলিগ্রাম হলুদ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে একবারে ২৫০ মিলিগ্রাম হলুদই যথেষ্ট।
 
আপনি সকালে এবং রাতে ২৫০ মিলিগ্রাম করে হলুদ খেতে পারেন। সকালে আপনি খালি পেটে হলুদ খেতে পারেন আবার রাতে ঘুমানোর আগে হলুদ দুধ খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, খাওয়ার পরিমাণ যেন অবশ্যই বেশি না হয়ে যায়। তাতে আপনার উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

ত্বকে কাঁচা হলুদের উপকারিতা

সৌন্দর্য চর্চায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কাঁচা হলুদ। ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের জুড়ি মেলা ভার। এবারে ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা কি কি হতে পারে চলুন তা জেনে নিই--
  • আপনার মুখে ব্রন, ব্রনের কালো ছোপ দাগ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে কাঁচা হলুদ। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে কাঁচা হলুদে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলি আপনার ত্বকের দাগ চিরস্থায়ীভাবে দূর করতে সক্ষম।
  • আপনার ত্বককে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগবালাই থেকে রক্ষা করে এই কাঁচা হলুদ।
  • রোদের অতিবেগুনে আলোকরশ্মি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারে একমাত্র কাঁচা হলুদ।
  • অনেকেরই অল্প বয়সে তোকে বলিরেখার সমস্যা দেখা দেয়। বলিরাখার এই সমস্যা দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন কাঁচা হলুদ।
  • হলুদে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান কারকিউমিন যা আপনার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত হলুদ ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করে।
  • অনেক সময় বিভিন্ন প্রসাধনী বা কসমেটিকস ব্যবহারের ফলে এর বিষাক্ত উপাদানে ত্বক মলিন এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি কাঁচা হলুদ ব্যবহার করুন এতে আপনার ত্বক আরো মসৃণ এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
  • চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল বা কালো দাগ কমাতে কাঁচা হলুদ অনেকটাই কার্যকরী।
  • শুধু ত্বক নয় বরং চুল পড়া রোধে এবং চুলের খুশকি দূর করতেও কাঁচা হলুদ বেশ উপকারী।
  • আপনার ত্বকে কোন ধরনের সংক্রমণ দেখা দিলে আপনি হলুদ এবং নারিকেল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ত্বক আরো হয়ে উঠবে।

রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার

রূপচর্চাতেও কাঁচা হলুদের উপকারিতা কম নয়।  ব্রনের সমস্যা, চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে, ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এবং ত্বকের পোড়া  দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক বিশেষভাবে কার্যকরী। এবার চলুন রূপচর্চায় কাচা হলুদের কিছু ব্যবহার জেনে নিন--

ব্রণ দূর করতেঃ ব্রনের সমস্যা দূর করতে আপনি কাঁচা হলুদের সঙ্গে চন্দন গুড়ো এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে 15 মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে শুধু ব্রণ নয় বরং ব্রনের কালো দাগও দূর হবে।
  • চোখের যত্নেঃ কাঁচা হলুদ অনেকেরই চোখের নিচে কালো দাগ থাকে এবং অনেক ট্রিটমেন্ট করেও চোখের এই কালো দাগ দূর করতে ব্যর্থ হন। আপনারা যারা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে চান তারা সামান্য কাঁচা হলুদের সঙ্গে মাখন বা জলপাই তেল মিশিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এভাবে টানা কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারে আপনার চোখের কালো দাগ অনায়াসেই দূর হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন হলুদের প্যাক যেন আপনার চোখে না ঢুকে যায়।
  • ত্বকের বলিরেখা দূর করতেঃ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে আপনি কাঁচা হলুদের সাথে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন হলুদের এই ফেসপ্যাক ব্যবহারে আপনার ত্বকের বলিরেখা অনেকটাই দূর হবে।
  • সংক্রামক ব্যাধি রোধেঃ আপনার ত্বকেকি বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি থেকে দূরে রাখতে চাইলে কাঁচা হলুদের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ভালো ফল পাবেন।
  • হলুদ গুঁড়ো এবং লেবুর রসঃ কাঁচা হলুদের রয়েছে ত্বক উজ্জ্বল করার উপাদান এবং লেবুর রশি রয়েছে ব্লিচিং উপাদান। আপনি আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে চাইলে হলুদ গুঁড়ো এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
  • হলুদ ও মধুর মিশ্রণঃ হলুদ এবং মধুর মিশ্রণ ত্বকে ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বককে আদ্রতা থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের উজ্জ্বল ভাব ফুটে তুলতে সাহায্য করে।
  • হলুদ ও নারিকেল তেলঃ হলুদ এবং নারিকেল তেল রয়েছে এন্টি ফারঙ্গল নামক উপাদান। হলুদ এবং নারিকেল তেলের মিশ্রণ ব্যবহারে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত। তাছাড়া ত্বকের ক্ষেত্রে নারিকেল তেল খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে।
  • ত্বকের পোড়া দাগ দূর করতেঃ ত্বকের পোড়া তার দূর করতে আপনি হলুদ বাটা শসার রস মুলতানি মাটি এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের পোড়া দাগ অনেকটাই হালকা হয়ে আসবে।
  • হলুদ,মধু এবং দুধের প্যাকঃ এক চা চামচ মধু এক চা চামচ কাঁচা দুধ এবং ১/৪ হলুদের গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে ফেলুন এবং ত্বকে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে ১৫-২০ মিনিট পর আপনার ত্বক ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে আপনি সপ্তাহে অন্তত একবার এই হলুদের প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। 
কাঁচা-হলুদের-বিস্ময়কর-২০-টি- স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  • হলুদ, বেসন এবং গোলাপজলের প্যাকঃ ১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো,তার সাথে ২ টেবিল চামচ বেসন, ১-২ টেবিল চামচ গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে 15-20 মিনিট রেখে পানিতে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই পেস্টটি ব্যবহারে আপনার ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর হবে। তাছাড়া বেসন ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে আপনার ত্বককে রাখে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত।
  • হলুদ,টমেটো এবং টক দইঃ আপনার ত্বকের সানবার্ন দূর করতে হলুদের এই প্যাকটি বেশ কার্যকর। এর জন্য আপনি ১/৪ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়ো, এক টেবিল চামচ টমেটোর পিউরি এবং এক টেবিল চামচ টক দই একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন এবং ত্বকে লাগান। ঠিক ১৫ মিনিট পর টক শুকিয়ে আসলে ঠান্ডা পানিতে ধরে ফেলুন।
  • চুলের যত্নে কাঁচা হলুদঃ চুল পড়া সমস্যা থেকেও আপনাকে মুক্তি দিতে পারে কাঁচা হলুদ। চুল পড়া কমাতে আপনি হলুদ বাটার সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে সেটি ভালোভাবে আপনার স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।
  • খুশকি দূর করতেঃ কাঁচা হলুদ খুশকি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনি কাঁচা হলুদ বাটার সাথে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল তেল মিশিয়ে আপনার স্ক্যাল্পে ভালোমত ম্যাসাজ করে ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আধা ঘন্টা পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের খুশকি রোধে এই প্যাকটি বেশ কার্যকর। আপনি চাইলে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
  • দাঁতের ব্যবহারেঃ হলুদ দাঁতের বাড়ির ব্যথা এবং দাঁত সাদা করতে কাঁচা হলুদ বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি ব্যবহার করার জন্য আপনি ৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা এবং ১/২ নারিকেল তেল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট দিয়ে তিন মিনিট পর্যন্ত আপনার ব্রাশ করুন এবং ভালোভাবে মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই পেস্ট ব্যবহারে আপনার দাঁত হবে সাদা এবং দাঁতের ব্যথাও লাঘব হবে।
সম্মানিত পাঠক, রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে তো জানিয়ে দিলাম। উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলোর মধ্যে আপনি আপনার পছন্দমত যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা

  • প্রথমেই বলি, কাঁচা হলুদ পেটে সেটি কখনোই সরাসরি মুখে লাগাবেন না। এতে আপনার ত্বক কালচে হয়ে যেতে পারে। তাই শুধু কাঁচা হলুদ না লাগে এর সাথে আপনি মধু,লেবুর রস, অ্যালোভেরা, দুধ দুই বেসন সহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • ত্বকে হলুদ লাগানোর পর আপনার ত্বক অবশ্যই ভালো করে পানি দিয়ে ঘষে ধুয়ে নেবেন।
  • ত্বকের যত্নে আপনি প্রতিদিন হলুদ ব্যবহার না করে সপ্তাহে এক দুই তিন ব্যবহার করুন।
  • কারণ প্রতিদিন হলুদের স্ক্রাব ব্যবহার করলে এতে ত্বকের ভেতর আঁচড় কেটে যায় এবং তোক বলিরেখার সৃষ্টি হয়।
  • ত্বকে হলুদ ব্যবহারের সময় রোদ থেকে দূরে থাকুন।কারণ ত্বকে হলুদ লাগিয়ে রোদে গেলে অনেক সময় ত্বক জ্বলে যেতে পারে এবং জ্বালাপোড়া সহ বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
  • যদি সম্ভব হয় আপনি আপনার ত্বকে দিনের পরিবর্তে রাতের বেলা হলুদ ব্যবহার করুন।
  • আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কাঁচা হলুদ ব্যবহার না করাটাই ভালো।কারণ এতে আপনার অ্যালার্জি আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • ত্বকে হলুদের প্যাক লাগিয়ে ২০ মিনিটের বেশি অবশ্যই রাখবেন না। কারণ ত্বকে বেশি সময় হলুদের প্যাক লাগিয়ে রাখলে আপনার ত্বকে গাঢ় হলুদ দাগ ফুটে উঠতে পারে, আবার রেসও দেখা দিতে পারে।
  • ত্বকে হলুদ ব্যবহারের ১০ ঘন্টার মধ্যে কোন ধরনের সাবান ব্যবহার করবেন না। কারণ সাবান ব্যবহারে আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে।

কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ

কাঁচা হলুদে রয়েছে ফাইবার, নায়াসিন, ভিটামিন বি,ভিটামিন সি, ভিটামিন ই,ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক এবং কারকিউমিন সহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে খুব সহজেই রক্ষা করে। এবার আপনাদের জানাবো কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান--
পুস্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ৩৩৪ গ্রাম
শর্করা ৬৪.৯ গ্রাম
প্রোটিন ৭.৮৩ গ্রাম
ফ্যাট ৯.৮৮ গ্রাম
ফাইবার ২১ গ্রাম
ফোলেট ৩৯ আইইউ
নায়াসিন ৫.১৪ মি.গ্রা
ভিটামিন সি ২৫.৯ মি.গ্রা
ভিটামিন ই ৩.১০ মি.গ্রা
ভিটামিন কে ১৩.৪ আইইউ
ক্যালসিয়াম ১৮৩ মি.গ্রা
আয়রন ৪১.৪২ মি.গ্রা
জিংক ৪.৩৫ মি.গ্রা
ফসফরাস ২৬৮ মি.গ্রা
কপার ৬০৩ আইইউ

কাঁচা হলুদের চা কিভাবে বানাবেন

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেয়ে উপকার পেতে আপনি কাঁচা হলুদের মূল দিয়ে সুস্বাদু হলুদ চা তৈরি করেও খেতে পারেন। ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এবং পুষ্টিবিদ মেরি-ইভ ব্রাউন কাঁচা হলুদ চায়ের প্রস্তুত প্রণালী দিয়েছেন ঠিক এইভাবে-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • কাঁচা হলুদের কাটা মূল বা হলুদ গুঁড়ো- ২ চা চামচ এবং
  • পানির পরিমাণ- ১-২ কাপ
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমেই একটি পরিষ্কার প্যানে এক দুই কাপ পরিমাণ পানি ফুটিয়ে নিন এবং এতে দুই চা চামচ হলুদ গুঁড়ো বা কাঁচা হলুদের কাঁটা মূল দিয়ে দিন। চুলার কম আছে পাঁচ মিনিটের মতো এটি সেদ্ধ করুন। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেকে এর সাথে স্বাদমত লেবু মধু যোগ করুন।তৈরি হয়ে গেল কাঁচা হলুদের চা।
 
এই চা আপনি গরম এবং ঠাণ্ডা উভয় অবস্থাতেই খেতে পারেন। এই হলুদ চা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি নিয়মিত হলুদ চা সেবনে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দ্বিগুণ পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং সুস্থ থাকতে কাঁচা হলুদ চা এর কোন বিকল্প নেই।

কাঁচা হলুদ যাদের খাওয়া উচিত নয়

কাঁচা হলুদ সবার জন্যই প্রযোজ্য নয়। কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ না খাওয়াটাই ভালো। এবার চলুন কাদের কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত নয় তা জেনে নিন
  • আপনারা যারা ডায়াবেটিসের ভুগছেন বা ওষুধ খান তাদের কাঁচা হলুদ এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, কাঁচা হলুদ আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণকে কমিয়ে দেয়। এতে করে আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • গর্ভবতী মা-বোনদের ক্ষেত্রে হলুদের সাপ্লিমেন্ট যদি বেশি পরিমাণ খাওয়া হয় তাহলে এটি ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এমনকি গর্ভপাতও হতে পারে।
  • ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে পিত্তথলির সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় কাঁচা হলুদ। তাই পিত্তথলি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা যদি আপনার থেকে থাকে তাহলে আপনি কাঁচা হলুদ খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
  • কিডনিতে পাথর জনিত কোন সমস্যা থাকলে আপনি কাঁচা হলুদ খাবেন না। কারণ, কাঁচা হলুদ রাসায়নিক অক্সালেট এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • যাদের অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার সমস্যা রয়েছে তারা কাঁচা হলুদকে না বলুন। কারণ, কাঁচা হলুদ খেলে এটি রক্ত পাতলা করে দেয় এবং রক্তপাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
  • আপনার পাকস্থলীর কোন সমস্যা থাকলে আপনি কাঁচা হলুদ খাওয়া আজ থেকেই বাদ দিন। কারণ কাঁচা হলুদ পাকস্থলীর এসিড বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • যাদের আগত কিছুদিনের মধ্যে অস্ত্র পাচারের সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলুদ খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

কাঁচা হলুদের উপকারিতা আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। প্রায় তিন হাজার বছর আগ থেকে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সাল থেকে এই কাঁচা হলুদ ব্যবহারিত হয়ে আসছে। কাঁচা হলুদ এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা তরকারির স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু মসলা নয় বরং কাঁচা হলুদ প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এতসব উপকারিতা জন্য কাঁচা হলুদকে পুষ্টির পাওয়ার হাউজ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। 
 
কাঁচা হলুদের এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি নিশ্চয়ই কাঁচা হলে ব্যবহারে সচেতন হবেন এবং আজ থেকেই আপনি আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে যোগ করুন এই কাঁচা হলুদ। আশা করছি নিয়মিত নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে কাঁচা হলুদ ব্যবহারে আপনি এর থেকে উপকারিতাই পাবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url