চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার করুন ৬টি উপায়ে
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আপনি জানতে চান? কারি পাতা ব্যবহার করে কিভাবে চুল লম্বা করা যায় জানেন কি? না জেনে থাকলে আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
কারণ, আজকে আমরা আলোচনা করব চুলের যত্নে কারি পাতার নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে। সেই সাথে আরো আলোচনা করব ত্বকের যত্নে এবং চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করুন ৬টি উপায়ে
- চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা
- কারি পাতা এবং টক দই এর হেয়ার প্যাক
- চুলের যত্নে হেয়ার টনিক হিসবে কারি পাতার তেল
- কারি পাতা ব্যবহার করে কিভাবে চুল লম্বা করা যায়
- ত্বকের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
- চুলের যত্নে কারি পাতার জল
- চুলের যত্নে কারি পাতার তৈরি চা
- চুলের যত্নে কারি পাতার আরো কিছু ব্যবহার
- ঘন কালো চুল পেতে খাদ্য তালিকায় যোগ করুন কারি পাতা
- কারি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
- চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমার মন্তব্য
চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহারের উপকারিতা অনেক। সেই প্রাচীনকাল থেকে চুলের যত্নে কারি পাতা নানান ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু চুলের যত্নে এই কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো আপনাকে জানিয়ে দিই ---- কারি পাতা চুল পাকা রোধ করেঃ আপনারা যারা অল্প বয়সে চুল পাকার সমস্যায় ভুগছেন তারা আজ থেকেই চুলে কারি পাতার ব্যবহার শুরু করুন। আপনি কারি পাতার সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে এই প্যাকটি আপনার চুলে ব্যবহার করুন। এতে আপনার চুল থাকবে কালো এবং সেই সাথে আপনার বয়স ধরে রাখতেও সাহায্য করবে ।
- চুল পড়া রোধ করে কারি পাতাঃ চুল পড়া বর্তমানে সকলেরই একটি সাধারণ সমস্যা। এই চুল পড়া থেকে মুক্তি পেতে আপনি কারি পাতা দুধের সাথে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি আপনার চুলে ভালো করে লাগান। চুলে লাগানোর এক দুই ঘন্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে আপনি চুল পড়া সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
- কারি পাতা চুল ঝলমলে করেঃ কারি পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রুক্ষ শুষ্ক চুলকে করে তোলে প্রাণবন্ত এবং ঝলমলে। যার ফলে শুধু কারি পাতা পেস্ট করে চুলে লাগালেও আপনি পাবেন ঝলমলে চুল।
- কারি পাতা খুশকি দূর করেঃ কারি পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল , এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আপনার মাথার ত্বককে খুশকি এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাছাড়া আপনার মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কারি পাতার বেশ কার্যকর।
- কারি পাতা চুল বৃদ্ধি করেঃ প্রতিদিন নিয়ম করে কারি পাতা ব্যবহার করলে এটি আপনার চুল বৃদ্ধিতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। আপনি কিছু কারি পাতা রোদে শুকিয়ে সেটি গুড়ো করে এক টেবিল চামচ দইয়ের সাথে মিশিয়ে, সেটি আপনার চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগান। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার মাথার চুল এমনিতেই বৃদ্ধি পাবে।
- কারি পাতা চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করেঃ আপনার ঘন, কালো, লম্বা চুল থাকার পরেও যদি চুলের আগা ফাটার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেটি দেখতে বেশ বিব্রতকর লাগে। চুলের এই আগা ফাটা দূর করতে আপনি নিয়মিত কারি পাতা পেটে আপনার চুলে লাগান। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারের পর, লক্ষ্য করবেন আস্তে আস্তে আপনার চুলের আগা ফাটা অনেকটাই কমে গেছে।
- চুলের গ্রন্থীকোষ মজবুত করেঃ কারি পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামিনো এসিড যা আপনার চুলের কোষ গ্রন্থিকে মজবুত এবং শক্তিশালী করে তোলে।
- চুল পাতলা হওয়া রোধ করেঃ প্রোটিন এবং বিটা ক্যারোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস হল কারি পাতা। আর এই দুটি উপাদানই আপনার মাথার চুল পড়া এবং চুল পাতলা হওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
চুলের যত্নে কারি পাতার কদর বরাবরই অনেক বেশি। তাছাড়া কারি পাতার মধ্যে এমন সব উপাদান রয়েছে যেগুলি আপনার চুল ও স্ক্যাল্পের যত্ন নেয়। আর তাই চুলের যে কোন সমস্যা রুখতে আপনি আজ থেকে ব্যবহার শুরু করুন এই কারি পাতা।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
প্রথমে আপনি কারি পাতাগুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এরপর ১ চা চামচ কারি পাতার পেস্টের সাথে ৩-৪ চা চামচ দই সাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। অতঃপর এই হেয়ার মাস্কটি আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো মতো মেসেজ করে লাগিয়ে ফেলুন।
কারি পাতা এবং টক দই এর হেয়ার প্যাক
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার করতে আপনি টক দই এবং কারি পাতা একসাথেও ব্যবহার করতে পারেন। কারন, টক দই এ রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আর তাই কারি পাতা এবং টক দই এর হেয়ার প্যাক চুলে ম্যাজিকের মত কাজ করে। এবার চলুন এই হেয়ার প্যাকটি আপনি কিভাবে তৈরি করবেন তা জেনে নিন-প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- কারি পাতা- এক মুঠো পরিমাণ এবং
- টক দই- ৩-৪ চা টেবিল চামচ।
প্রথমে আপনি কারি পাতাগুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এরপর ১ চা চামচ কারি পাতার পেস্টের সাথে ৩-৪ চা চামচ দই সাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। অতঃপর এই হেয়ার মাস্কটি আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো মতো মেসেজ করে লাগিয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ আসল মুলতানি মাটি চেনার ৫টি উপায়
এমন ভাবে লাগাতে হবে যেন আপনার চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ চুল এই পেস্টের আবরণে ঢেকে যায়। এভাবে ৩০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই হেয়ার প্যাকটি তৈরীর ক্ষেত্রে আপনি চাইলে বিকল্প হিসেবে টক দই এর পরিবর্তে দুই টেবিল চামচ দুধও ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারের সময়সীমাঃ
- টক দই এবং কারি পাতার এই হেয়ার প্যাকটি আপনি প্রত্যেক সপ্তাহে একবার ব্যবহার করবেন ।এতে করে ভাল ফল পাবেন।
চুলের যত্নে হেয়ার টনিক হিসবে কারি পাতার তেল
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার অনেকটা হেয়ার টনিক হিসেবে কাজ করে। আপনি নারিকেল তেলের সাথে গাড়ি পাতা মিশিয়েই তৈরি করে নিতে পারেন এই হেয়ার টনিক। এই হেয়ার টনিক ব্যবহারের ফলে আপনার চুলের আদ্রতা যেমন দূর হবে, তেমনি এটি আপনার চুলকে গোড়া থেকে মজবুত এবং শক্তিশালী করে তুলবে। তো চলুন এই হেয়ার টনিক আপনি কিভাবে তৈরি করবেন তা জেনে নিন--প্রয়োজনীয় উপকরণঃ- কারি পাতা- ১০ টি তাজা কারি পাতা এবং
- নারিকেল তেল- ৫ চা চামচ।
- প্রথমেই আপনি একটি পরিষ্কার পাত্র নিন। এবার পাত্রে নারিকেল তেল ঢালুন এবং তার সাথে কারি পাতাগুলো যোগ করুন।
- পাতার চারপাশ যতক্ষণ না পর্যন্ত কালো বর্ণের হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো করে নাড়তে থাকুন।
- অতঃপর পাতার চারপাশ কালো হয়ে এলে চুলার আঁচ বন্ধ করুন এবং মিশ্রণটি কিছু সময়ের জন্য ঠান্ডা হতে রেখে দিন।
- ব্যাস, টনিকটি ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনি শুধুমাত্র তেলগুলো পাতা থেকে ছেঁকে নিন এবং আপনার মাথায় লাগান।
- এবারে এই তেল আঙ্গুলের অগ্রভাগে লাগিয়ে আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত আস্তে আস্তে ভালো মতো ম্যাসাজ করুন।
- ম্যাসাজ শেষ হওয়ার পর প্রায় এক ঘন্টা এই তেলটি আপনার মাথায় রাখুন এবং এক ঘন্টা পর ঠাণ্ডা পানিতে শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন।
- ভালো ফলাফল পেতে আপনি সপ্তাহে ২-৩ বার আপনার মাথার ত্বকে এই তেল ব্যবহার করুন এবং প্রতিবার লাগানোর পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে এই হেয়ার টনিক আপনার চুল বৃদ্ধিতেও বিশেষভাবে সাহায্য করবে।
- হেয়ার টনিক তৈরির সময় আপনি চুলা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন। কারণ, কারি পাতা যখন নারিকেল তেলে ভাজতে থাকবেন তখন পাত্র থেকে তেল ছিটকে আসার সম্ভাবনা থাকে।
- আপনার স্ক্যাল্পে যদি গুরুতর কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই এই তেল সেবন করবেন।
কারি পাতা ব্যবহার করে কিভাবে চুল লম্বা করা যায়
কারি পাতা কোন উপায়ে ব্যবহার করে চুল লম্বা করা যায় তা আমাদের অনেকেরই অজানা। আর লম্বা, ঘন এবং ঝলমলে চুল কে না চায় বলুন তো!! আপনি যদি লম্বা ,ঘন এবং ঝলমলে চুল চান তাহলে কারি পাতার এই আয়ুর্বেদিক মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার চুল প্রাকৃতিকভাবে একদিকে যেমন লম্বা হবেতেমনি চুল পড়ার প্রবণতাও অনেকটাই কমে যাবে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে চুলের যত্নে এই আয়ুর্বেদিক মিশ্রণটি আপনি কিভাবে তৈরি করবেন তা জানিয়ে দিচ্ছি--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- বিটের খোসা
- কারি পাতা
- আমলকি
- এক টুকরো আদা এবং
- পানি।
- আপনি প্রথমেই বিট থেকে খোসা ছাড়িয়ে খোসা গুলোকে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন।
- এরপর কেটে রাখা বিটের খোসার সাথে সতেজ একমুঠো কারি পাতা, আমলকি, এক টুকরো আদা এবং পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন । ব্লেন্ডার না থাকলে আপনি শীল-পাটাতেও বেটে নিতে পারেন।
- ব্যাস, মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে একটি ছাঁকনি দিয়ে বা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের সাহায্যে ছেকে এর নির্যাসটুকু বের করে নিন। আমলকি, বিট এবং আদার এই নির্যাস আপনার চুলের গোড়ায় নিয়মিত লাগাতে থাকুন এবং পরের দিন সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- যা হোক, বিট এবং আমলকি থেকে প্রাপ্ত এই পেস্ট আপনার চুলে ভালো করে ম্যাসাজ করে লাগান এবং এক ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
- আমলকি, বিটের এই আয়ুর্বেদিক মিশ্রণটির নিয়মিত ব্যবহার আপনার চুলকে একদিকে যেমন মজবুত এবং ঝলমলে করে তুলবে। অন্যদিকে আদার ব্যবহার আপনার চুলকে লম্বা করতেও সহায়তা করবে।
ত্বকের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। শুধু চুলের যত্নে নয় বরং ত্বকের যত্নেও কারি পাতা ব্যবহৃত ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে। চটজলদি আপনার ত্বকের জেল্লা ফেরাতে কারি পাতা দারুন কাজ করে। কিন্তু কিভাবে আপনি ত্বকের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করবেন? এবার আপনাদের জানাবো ত্বকের যত্নে কারি পাতার কিছু ফেসপ্যাক। তাহলে চলুন কারি পাতার ফেসপ্যাক গুলো জেনে নিন--কারি পাতা ও হলুদের ফেসপ্যাকঃ কারি পাতা এবং হলুদ গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বকের জন্য হতে পারে একটি প্রাকৃতিক আয়ুর্বেদিক ফেসপ্যাক। এবার জেনে নিন কিভাবে তৈরি করবেন এই কারি পাতার হলুদের ফেসপ্যাক-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- কারি পাতা- ১০-১২ টি এবং
- হলুদ গুঁড়ো- ২ চা চামচ।
কারি পাতা ও মুলতানি মাটির ফেসপ্যাকঃ কারি পাতা ও মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক তৈরি করতে আপনি প্রথমেই কারি পাতার একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এরপর তাতে ৩-৪ চা চামচ মুলতানি মাটি এবং দুই চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে ভালো করে দাঁড়িয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেলে আপনি মুখে ১৫ মিনিটের মত এই পেস্টটি লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে এলে মুখ ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। আপনি সপ্তাহে অন্তত দুইদিন কারি পাতা ও মুলতানি মাটিকে এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে কোন প্রকার বলিলেখা পড়বেনা।
কারি পাতা ও লেবুর রসের ফেসপ্যাকঃ কারি পাতা শুধুমাত্র আপনার ত্বকের রং ফর্সা করে তা নয় বরং আপনার ত্বকের ব্রণ থাকলে ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের ব্রণ দূর করতে আপনি কারি পাতা পেস্ট এর মধ্যে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে ফেলুন। একটি ২০-২৫ মিনিট আপনার মুখে লাগিয়ে রাখুন এবং শুকিয়ে এলে ঠান্ডা পানিতে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। কারি পাতা ও লেবুর রসের ফেসপ্যাক কিভাবে কিছুদিন ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক থেকে ব্রণ একেবারেই গায়েব হয়ে যাবে।
কারি পাতা ও মধুর ফেসপ্যাকঃ ত্বকের ফুসকুড়ি, চুলকানি, লাল রেশ, কালো ছোপ দাগ ইত্যাদি দূর করতে আপনি কারি পাতার পেস্টের সাথে ফুলার্স আর্থ, সামান্য গোলাপজল, দই এবং মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি আপনার মুখে লাগিয়ে ঠিক ২০ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা যেমন বাড়বে তেমনি ত্বকের ফুসকুড়ি, চুলকানি প্রভৃতি খুব সহজেই দূর হবে।
ত্বক ফর্সা করার জন্য আমরা অনেকেই অনেক রকম কসমেটিক বা প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে একটা সময় পর ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ত্বকে ক্যান্সারের সম্ভাবনাও অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই ত্বকের ক্যান্সার এডাতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আপনি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি উপরোক্ত কারি পাতার ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। যা আপনার ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী।
চুলের যত্নে কারি পাতার জল
চুলের যত্নে কারি পাতার জলও বেশ উপকারি। আপনার চুল যদি ফ্রিজি বা শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কারি পাতার জল আপনার চুলে ব্যবহার করতেই পারেন। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন কারি পাতার জল আবার কিভাবে চুলে ব্যবহার করা যায়? সম্মানিত পাঠক, এই কারি পাতার জল আপনি কিভাবে তৈরি করবেন চলুন তা জানিয়ে দিই-প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- জল- এক কাপ পরিমাণ এবং
- এক মুঠো পরিমাণ কারি পাতা।
- কারি পাতার জল তৈরি করার জন্য আপনি প্রথমেই একটি পরিষ্কার প্যান নিন।
- অতঃপর, পরিষ্কার পাত্রে এক কাপ পরিমাণ জলের সাথে এক মুঠো টাটকা সতেজ কারি পাতা মিশিয়ে চুলার হালকা আঁচে ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
- জল ফুটানো হয়ে গেলে সবশেষে এই জল একটি পরিষ্কার ছাকনি দিয়ে ছেকে নিন এবং একটি স্প্রে বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন।
- ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল কারি পাতার জল এবং আপনি আপনার ফ্রিজিং চুলে নিয়মিত এই জল স্প্রে করে ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার চুলের ফ্রিজিং অনেকটাই কমে যাবে।
চুলের যত্নে কারি পাতার তৈরি চা
চুলের যত্নে কারি পাতার নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। কারি পাতার চা এটি শুনে আপনিও নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন!! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এই কারি পাতার চা আপনার চুলকে ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। আপনার চুল কি ঝরে যাচ্ছে?আপনি কি চুলের খুশকির সমস্যায় ভুগছেন? আপনার চুলে কি খুব অল্প বয়সেই পাক ধরছে? আপনার কি চুল পড়ে মাথায় টাক পড়তে শুরু করেছে? এক কথায় বলতে গেলে রুক্ষ শুষ্ক চুল নিয়ে আপনি ভীষণই চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন।আপনি কি জানেন আপনার চুলের এইসব সমস্যার সকল সমাধান লুকিয়ে রয়েছে কারি পাতার তৈরি চা এ। এখন হয়তো ভাবছেন কারি পাতার চা কিভাবে খেতে হয়? সম্মানিত পাঠক, আপনি কয়েকটি কারি পাতা জলে ফুটিয়ে নিয়ে,
তাতে সামান্য লেবুর রস এবং স্বাদ মতো চিনি যোগ করে খুব সহজেই তৈরি করে ফেলুন কারি পাতার চা। এভাবে একটানা ৭ দিন কারি পাতার চা খেতে থাকুন। এতে আপনার চুলের সকল সমস্যা নিমিষেই গায়েব হয়ে যাবে।তাছাড়া নিয়মিত কারি পাতার চা সেবনে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে যেমন উন্নত করে তেমনি আপনার চুলের স্বাস্থ্যও ঠিক রাখে
চুলের যত্নে কারি পাতার আরো কিছু ব্যবহার
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার এর আরো কিছু উপায় রয়েছে। কারি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, যা আপনার চুলকে অকালপক্কতা থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া কারি পাতা প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার চুলের খুশকি দূর করতে এবং চুল পড়া কমাতেও সহায়তা করে।ইতিমধ্যেই চুলে কারি পাতা ব্যবহারের বেশ কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। এবার চলুন, আপনি আরো কি কি উপায়ে চুলে কারি পাতা ব্যবহার করতে পারেন তা জানিয়ে দিই --
চুলে পেঁয়াজ ও কারি পাতার ব্যবহারঃ আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজ ও কারি পাতার তৈরি প্যাক বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পেঁয়াজ ও কারি পাতার প্যাক আপনি কিভাবে তৈরি করবেন চলুন জেনে নিন-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পেঁয়াজ- ১টি এবং
- কারি পাতা।
ব্যাস, এবার এই রসে তুলা চুবিয়ে আস্তে আস্তে আপনার চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করে লাগান এবং ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ৩০ মিনিট পর আপনি আপনার চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কারি পাতা ও জবা ফুলের ব্যবহারঃ চুলের যত্নে কারি পাতা ও জবা ফুলের পাতার পেস্ট বেশ উপকারী। এর জন্য আপনি আধা কাপ পরিমাণ কারি পাতা ও জবা ফুলের পাতার সাথে প্রয়োজন মতো পানি মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন অথবা পাটায় বেটে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে প্রায় ৪০ মিনিটের মত অপেক্ষা করুন এবং ৪০ মিনিট পর একটি ভেষজ শ্যামপুর সাহায্যে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেথি পাতা ,কারি পাতা ও আমলকি পাতার ব্যবহারঃ মেথি পাতা, কারি পাতা এবং আমলকির প্যাক চুলের ক্ষেত্রে অনেকটা ম্যাজিক এর মত কাজ করে। এক্ষেত্রে আপনি ঠিক আগের মতই আধা কাপ পরিমাণ মেথি পাতা, কারি পাতা ও আমলকি একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এই পেস্টটি আপনার চুলের আগা থেকে গোরা পর্যন্ত সম্পূর্ণ চুলে ভালো করে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পুতে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন এবং চুলে কন্ডিশনের ব্যবহার করুন।
কারি পাতা ও এলোভেরার ব্যবহারঃ দিন দিন আপনার চুল কি পাতলা হয়ে যাচ্ছে? আপনি চুলের ঘনত্ব বাড়াতে চাইলে কারি পাতার পেস্ট এবং অ্যালোভেরা জেল একত্রে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে এই পেস্টটি আপনার চুলে লাগান এবং চুলে লাগিয়ে এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ঘনত্ব বাড়বেই।
চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপায় হিসেবে আপনি আপনার সুবিধা মত উপরোক্ত যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যাবহারে আপনার চুল হবে ঘন, ঝলমলে এবং উজ্জ্বল।
ঘন কালো চুল পেতে খাদ্য তালিকায় যোগ করুন কারি পাতা
ঘন কালো চুল পেতে খাদ্য তালিকায় যোগ করুন কারি পাতা। কারন, আপনি আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যা গ্রহণ করবেন অর্থাৎ আপনার শরীর যা গ্রহণ করবে আপনার চুলও সেটি গ্রহণ করবে। চুল ঝরে পড়া এবং ঘন কালো চুল পেতে আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন এই কারি পাতা। রোজকার খাবারের সাথে আপনি কারি পাতা কিভাবে খেতে পারেন চলুন তা জানিয়ে দিই --- কারি পাতা রোদে শুকিয়ে সেটি দিয়ে পাউডার তৈরি করে সেটি তরকারি কিংবা ভাতের সাথে খুব সহজেই মিশিয়ে খেতে পারেন।
- তাছাড়া আপনি কুচি কুচি করা পুদিনা পাতা এবং কারি পাতার মিশ্রণের সাথে বাটার মিল্ক বা দুধ মিশিয়েও খেতে পারেন।
- আবার আপনি কিছু কারি পাতা ভেজে নিয়ে তার তার মধ্যে সেদ্ধ করা বিভিন্ন ধরনের সবজি মিশিয়েও খেতে পারেন। এভাবে খেলে আপনার রোজকার একঘেয়ে খাবারে একটি নতুন ঘ্রাণ যুক্ত হয়। কারণ, কারি পাতার একটি সুন্দর নিজস্ব গন্ধ রয়েছে যা ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং এটি আপনার চুলের উপকারেও আসে।
কারি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
যদিও কারি পাতা ব্যবহারের তেমন কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে তবুও প্রত্যেকটি জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা মেনে চলা উচিত। কারি পাতার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিম্নলিখিত সতর্কতা গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। যেমন--- অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে কারি পাতার এই পেস্ট ব্যবহারের ফলে ত্বকে এলার্জির উদ্রেক হতে পারে। তাই মাথার ত্বকে কারি পাতা লাগানোর পূর্বে খানিকটা আপনার ত্বকে লাগিয়ে পরীক্ষা করে নিন তাতে এলার্জির কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা।
- কারি পাতার তেল ব্যবহারের ফলে অনেকের জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। যাদের এই সমস্যা হবে তাদের কারি পাতা ব্যবহার না করাটাই উত্তম
- কারি পাতার বীজ কখনো ভক্ষণ করবেন না। কারণ এ বীজ অনেক বিষাক্ত হয়ে থাকে।
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমার মন্তব্য
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমাদের আর্টিকেল পড়ে জানতে পেরেছেন। অনেকেই আছেন যারা চুলে অনেক দামি হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। আবার অনেকেই চুলের যত্নে ভরসা করেন বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদানে। সে হিসেবে প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে প্রথমেই উঠে আসে কারি পাতার নাম। কারি পাতার মধ্যে এমন সব উপাদান রয়েছে যা আপনার চুল এবং স্ক্যাল্পের যত্ন নেয়।যার কারণে আয়ুর্বেদেও কারি পাতা ব্যবহৃত হয়। নিয়মিত নিয়ম করে এই কারি পাতার ব্যবহারে আপনি আপনার চুলের একাধিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। সম্মানিত পাঠক, তাহলে দেরি কেন? আজ থেকেই চুলের যত্নে আপনি শুরু করে দিন কারি পাতার ব্যবহার। উপরিউক্ত এই কৌশল গুলি অবলম্বন করে আপনি পেতে পারেন স্বাস্থ্যকর, ঝলমলে, সিল্কি এবং লম্বা চুল। ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url