লটকনের অবিশ্বাস্য ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
লটকনের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? যদি না থেকে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন।
কারন, আজকে আমাদের এই আর্টিকেল থেকেই জানতে পারবেন লটকনের নানান উপকারিতা এবং গর্ভকালীন সময়ে লটকন খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা। সাথে আরো জানবেন লটকনের বিচি খেলে কি হয়। তাহলে চলুন আর সময় ক্ষেপণ না করে আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সুচিপত্রঃ লটকনের উপকারিতা ও অপকারিতা
- লটকনের স্বাস্থ্য উপকারিতা
- লটকনের অপকারিতা
- লটকন খেলে সারবে যেসব রোগ
- লটকন কিভাবে খায়
- গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কি?
- লটকনের বিচি খেলে কি হয়
- লটকন খেলে কি ওজন বাড়ে?
- লটকনের পুষ্টিগুণ উপকারিতা
- লটকন ফলের ইংরেজি নাম
- লটকন গাছের ছবি
- লটকন দিয়ে পাই বানানোর রেসিপি
- লটকন ফলের দাম কত ২০২৪
- লটকন সংরক্ষণ পদ্ধতি
- লটকন খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- পরিশেষে
লটকনের স্বাস্থ্য উপকারিতা
লটকনের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। কিন্তু লটকনে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ নানান উপকার করে থাকে। এই ফলটি দেখতে আকারে ছোট হলেও রয়েছে হাজারও পুষ্টিগুণ। আসুন এবার জেনে নিই লটকনের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কি কি--- ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ লটকন এমন একটি ফল যা আপনাকে ক্যান্সার এর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। কারণ এই ফলে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। সুতরাং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে আপনি লটকন খেতেই পারেন।
- ডিহাইড্রেশন কমাতেঃ আপনি আপনার শরীরের ডিহাইড্রেশন কাটিয়ে উঠতে খেতে পারেন লটকন ফল। কারণ এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। শুধু ডিহাইড্রেশন নয় বরং আপনি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য লটকন ফল খেয়ে দেখতে পারেন।
- অ্যানিমিয়া দূর করেঃ মূলত আয়রনের অভাবে আমাদের শরীরে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা সৃষ্টি হয়। এই অ্যানিমিয়া থেকে বাঁচতে আপনি আজ থেকেই লটকা খাওয়া শুরু করুন। কারণ, এই লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আপনাকে রক্তশূন্যতার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
- লাল চোখ নিরাময়েঃ অনেকের চোখের ভেতর টকটকে লাল হয়ে থাকে। এটি এমনিতে হয় না অবশ্যই এটি কোন রোগের আভাস অথবা চুলকানি থেকে হয়। যাদের চোখ এমন লাল হয় তারা লটকন খান। কারণ, লটকন চোখের লাল ভাব কমাতে বেশ কার্যকর।
- রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখেঃ মৌসুমী এই লটকন ফল খাওয়ার ফলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ লটকন ফলে চিনির উপাদান খুব বেশি একটা নেই বললে চলে। ফলে স্বাভাবিকভাবে লটকন খেলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- পরিপাকতন্ত্রে সাহায্য করেঃ লটকন একটি ফাইবার বা আশ জাতীয় ফল। আর এই ফাইবার আপনার পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়াকে উন্নত করে। নিয়মিত লটকন ফল খেলে এটি আপনার অন্ত্র এবং পাকস্থলীর মতো পরিপাক অঙ্গের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে।
- চর্মরোগ নিরাময়েঃ লটকন বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ যেমন- খোশপাঁচড়া, দাদ, চুলকানি ইত্যাদি সারাতে লটকন বেশ কার্যকর। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? আপনার যদি এই ধরনের চর্ম রোগ থেকে থাকে তাহলে আপনি আজ এক্ষুনি লটকন ফল বেটে ক্ষতস্থানে লাগান। এর ফলাফল টের পাবেন হাতেনাতেই।
- স্নায়বিক দুর্বলতা কমাতেঃ লটকনে রয়েছে কলার মতই পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম যা আপনার স্নায়বিক দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে পারে। তাছাড়া এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের মতো ঝুঁকিও অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
- শক্তির উৎস হিসেবেঃ আপনি কি শরীরে দুর্বলতা অনুভব করছেন? তাহলে বলব আজ থেকেই আপনি লটকন খাওয়া শুরু করুন। কারণ, লটকনে এমন সব ভিটামিন খনিজ উপাদান এবং প্রোটিন রয়েছে যা আপনার শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। তাছাড়া যারা প্রচুর পরিশ্রমের কাজ করেন তারাও নিয়মিত লটকন খেলে শরীরে শক্তি পাবেন।
- হাড়ের সুরক্ষায়ঃ হাড়ের ব্যথা,শরীরের জয়েন্টের ব্যথা, গাটের ব্যথা ইত্যাদি দূর করতে আপনি লটকন খান। কেননা লটকন ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। শুধু ক্যালসিয়াম নয় এতে আয়রনও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ যা আপনার হারকে বিশেষভাবে সুরক্ষা দেয়।
- দাঁত মজবুত করেঃ লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে এই লটকন খেলে যেমন আপনার শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয় তেমনি আপনার দাঁতকে গোড়া থেকে করে তোলে মজবুত ও শক্তিশালী। শুধু দাঁত নয় বরং ত্বক এবং মাড়ির সুস্থতায় লটকন দারুন কাজ করে।
- মুখের রুচি বাড়াতেঃ যারা খাবার খেতে রুচি পান না তারা রুচি বাড়ানোর জন্য খেতে পারেন লটকন। কারণ, লটকন টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হওয়ায় এটি আপনার মুখের রুচিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
- হজমে সাহায্য করেঃ লটকন অতিরিক্ত ফাইবার বা আস জাতীয় ফল হয় এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- জ্বর প্রতিরধেঃ বর্ষাকালে আবহাওয়ার কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি উঠল ইত্যাদি সংক্রমণ হতেই থাকে। লটকন বর্ষাকালীন ফল হাওয়ায় আপনি এই সময় লটকন খেলে এই সব সংক্রমণজনিত রোগ থেকে রেহাই পেতে পারেন।
- খাদ্য শক্তির উৎস হিসেবেঃ লটকন খাদ্যশক্তির ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে কারণ প্রতি 100 গ্রাম লটকনে রয়েছে প্রায় ৯২ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি যা কিনা কাঁঠালের থেকেও দ্বিগুণ।
- শরীর সুস্থ রাখতেঃ লটকন লটকনে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্রোমিয়াম। এসব উপাদান আপনার শরীরকে প্রতিনিয়ত সুস্থ এবং কার্যক্রমও রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও লটকনে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড এবং এনজাইম যা আপনার দেহ গঠন এবং কোষকলের সুস্থতায় বেশ কাজে লাগে। লটকন এমন একটি ফল যার কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে। তাই দেহের সার্বিক সুস্থতায় আপনি আজ থেকেই লটকন খাওয়া শুরু করুন।
লটকনের অপকারিতা
অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু এই লটকন ফলের শুধু উপকারিকাই নয় বরং কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কিন্তু এই অপকারিতা উপকারিতার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তাছাড়া প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদানের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা থাকবেই। এবার চলুন, অতিরিক্ত লটকন খেলে আপনার কি কি অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--- অতিরিক্ত পরিমাণে লটকা ফল খেলে আপনার পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এমনকি পেট ফোলার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত লটকন খাওয়ার ফলে আপনার অ্যালার্জি মত চুলকানির সমস্যা হতে পারে।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ লটকন খেলে আপনার শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এমনটা হলে আপনি একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
- লটকন আপনার ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে এবং ঔষধের কার্যকারীতা কমিয়ে দিতে পারে।
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে,লটকন গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং স্তন্য দুগ্ধে অক্সালেটের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- মাত্রাতিরিক্ত লটকন খাওয়ার ফলে এটি আপনার ক্ষুধা মন্দার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
লটকন খেলে সারবে যেসব রোগ
লটকনের উপকারিতা আপনাকে আমরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। এবার জানাবো লটকন আপনি কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। লটকন আপনার শরীরের বিশেষ কিছু রোগ সারাতে সক্ষম যা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না। বর্ষাকালের সহজলভ্য এই ফলটি আপনাকে কি কি রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে চলুন তা জেনে নিন--- কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেঃ লটকনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম। একজন গবেষক নিশ্চিত করেছেন, লটকনের এই সমস্ত উপাদান আপনার শরীরে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- বেরিবেরি রোগ নিরাময়েঃ লটকন ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-২ ২ এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা আপনাকে বেরিবেরি রোগ থেকে পরিত্রান দিতে পারে। সেই সাথে আপনার চোখের সংকোচন প্রসারণের ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে পারে।
- মানসিক অবসাদ দূর করেঃ লটকনে এমন সব পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা আপনার মানসিক অবসাদ কাটাতে সক্ষম। আর তাই লটকন খাওয়ার ফলে আপনার মানসিক অবসাদ দূর হতে পারে।
- বমি বমি ভাব দূর করেঃ লটকন একেবারে মিষ্টি জাতীয় ফল নয় বরং সামান্য টক মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফল। আর টক মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হওয়ায় এটি আপনার বমি বমি ভাব কে দূর করতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রেঃ যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা নিশ্চিন্তে লটকন খেতে পারেন। কারণ এতে চিনির পরিমাণ একেবারেই কম। তাছাড়া লটকন খেলে এটি আপনার রক্তের শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।ডাইরিয়া রোধেঃ লটকনের পাতা ঔষধের কাজ করে লটকন গাছের পাতাও ফেলনা নয় বরং এর পাতারও রয়েছে ঔষধি গুণ। আপনার যদি ডাইরিয়া হয় তাহলে আপনি লটকন গাছের পাতা গুঁড়ো করে খেতে পারেন বেশ কাজে দিবে। তাই শুধু লটকন ফল নয় বরং এর পাতা ও শিকড় খেলে আপনার পেটের অসুখ এবং জ্বর ভালো হয়
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক দুর্বলতা ,বুক ধড়ফড় করা,পায়ের তালু ফাটা, ঠোট এবং মুখের ঘা, বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়া, হাতে পায়ে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় যারা ভুগছেন লটকন তাদের জন্য হতে পারে একটি উপাদেয় পথ্য।
লটকন কিভাবে খায়
লটকনের উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে লটকন খেতে হবে। লটকন একটু সুস্বাদু এবং সুগন্ধি ফল যা বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে এখন চলছে লটকনের মৌসুম। এই লটকন খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। লটকন খাওয়ার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চললে আপনি সুস্বাদু ফলটি আরো ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন। এবার চলুন আপনি লটকন কিভাবে খাবেন সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই-- প্রথমেই বলি, লটকা ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে পাকা, সতেজ এবং ভালো মানের লটকন নির্বাচন করুন যা খুব বেশি শুকনো বা মোলায়েম নয়। কারণ, পাকা লটকন খেতে সাধারণত মিষ্টি হয় এবং এর বাইরের শ্বাস একটু নরম থাকে।
- লটকন খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন যাতে কোন প্রকার ময়না বা পেস্টিসাইড না থাকে।
- এবারে খোসা ছাড়ানোর পালা। লটকনের বাইরে একটি শক্ত পুরু খোসা থাকে যা আপনি খুব সহজেই হাত দিয়ে ছাড়াতে পারবেন।
- লটকনের খোসা ছাড়ানোর পর এর ভিতর শক্ত একটি বীজ থাকে এটি বের করে ফেলুন এবং লটকনের নরম সুস্বাদু শ্বাস খেতে থাকুন।
- আপনি লটকন সালাদ পুডিং, আইসক্রিম, কাস্টার্ড ইত্যাদিতে ব্যবহার করেও খেতে পারেন।
- তাছাড়া লটকন দিয়ে জুস বা স্মুদি বানিয়েও খেতে পারেন এটি খেতে খুবই মিষ্টি এবং সুস্বাদু হয়।
গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা
লটকনের উপকারিতা সম্পূর্ণরূপে পেতে আপনি গর্ভাবস্থায় লটকন খেতে পারেন। কারণ, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ারও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এবার আসুন গর্ভাবস্থায় লটকন খেলে আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের কি কি উপকার হতে পারে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-- পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলঃ লটকনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার, পটাশিয়াম, মিনারেল এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এই কষ্টকাঠিন্য দূর করতে আপনি গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন লটকন। কারণ, লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ। এই ফাইবার আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে এবং সেই সাথে পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করবে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ লটকনে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা একজন গর্ভবতী মায়ের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন সিঃ এর সাহায্যে আয়রন শোষণ বৃদ্ধি লটকনের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি।ফলে গর্ভাবস্থায় লটকন খেলে এতে আপনার শরীরে আয়রন শোষণ বেড়ে যায়। ফলে আপনি খুব সহজেই অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
- হজম ক্রিয়া উন্নত করেঃ লটকন একটি ফাইবার বা আঁশ জাতীয় ফল হাওয়াই এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করতে পুরোপুরি সক্ষম।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ লটকনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আপনার শরীরকে গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে।
- শিশুর বিকাশে সহায়কঃ লটকনে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন সি, আয়রন এবং ফোলেট আপনার গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- চর্ম স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ লটকনে থাকে ভিটামিন সি একজন গর্ভবতী মায়ের চামড়ার উজ্জ্বলতা এবং কোমলতা বজায় রেখে চামড়ার স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
- মর্নিং সিকনেস কমাতেঃ গর্ভাবস্থায় প্রায় সকল গর্ভবতী মা ই সকালবেলা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করেন। এই দুর্বলতা কাটাতে আপনি খেতে পারেন লটকন। কেননা লটকনের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গর্ভবতী মায়ের সকালের শারীরিক দুর্বলতা কমাতে বেশ সহায়ক।
- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধেঃ গর্ভাবস্থায় অনেকেই পানি শূন্যতায় ভুগতে থাকেন। পানি শূন্যতা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন লটকন। কারণ, লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ যা আপনাকে পানি শূন্যতা থেকে পরিত্রান দিতে পারে।
- প্রেগনেন্সি কমপ্লিকেশন কমাতেঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে লটকনের কার্যকারিতা গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কমপ্লিকেশন কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- অ্যামিনো এসিড সরবরাহঃ লটকনে থাকা অ্যামিনো এসিড একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কি?
গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কি যাবে না এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই রয়েছে। উত্তর হল হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় আপনি অবশ্যই লটকন খেতে পারেন। কারণ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মাকে খাবারের দিকে বেশি নজর দিতে হয় অন্যান্য সময় থেকে। কারণ, এই সময় গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের ভ্রুন উভয়ের জন্যই পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্টির প্রয়োজন হয়।অনেক সময় গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাব দেখা দেয়। তাছাড়া একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন পড়ে। আর এই আয়রনের অভাবে আপনার অনাগত সন্তানের ওজন কমে যাওয়ার ভয় থাকে সেই সাথে প্রসবকালীন সময়ে রক্তস্বল্পতাও দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় এই আয়রন স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে আপনি লটকন খেতে পারেন।
কারণ লটকন আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস। যা কিনা আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের ত্বক এবং হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় লটকন খেলে এটি আপনার প্রসবকালীন জটিলতা থেকেও রক্ষা করতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, গর্ভাবস্থায় লটকন খেতে কোন বারণ নেই বরং গর্ভকালীন সময়ে লটকন খাওয়ার রয়েছে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা।
লটকনের বিচি খেলে কি হয়
লটকনের উপকারিতা পেতে আপনি এর বিচিও খেতে পারেন। শুনে কিছুটা অবাক হয়েছে নিশ্চয়!! হ্যাঁ এটাই সত্যি, হাজারো পুষ্টিগণের সমৃদ্ধ লটকন ফলের বিচিও ফেলনা নয়, বরং এর বীজেরও রয়েছে ওষধি ব্যবহার। লটকনের বীজ মূলত গণোরিয়া রোগের জন্য প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।সুতরাং, লটকন খাওয়ার পরে এর বীজ ফেলে না দিয়ে সেটিও খেয়ে ফেলতে পারেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই। শুধু লটকন নয় এমন কিছু ফল রয়েছে যেমন-কাঁঠাল, তরমুজ, পেঁপে, বেদানা, অ্যাভোকাডো, নাশপাতি প্রভৃতি ফলের বীজ আপনার স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
লটকন খেলে কি ওজন বাড়ে?
লটকনের এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, লটকন খেলে ওজন বাড়ে নাকি কমে? তাহলে জেনে রাখুন, লটকন খেলে কখনোই ওজন বাড়ে না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ, লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ যা আপনার রক্তশূন্যতা কমানোর পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।শুধু তাই নয়,প্রতি ১০০ গ্রাম লটকন থেকে আপনি কমপক্ষে ৯২ কিলো ক্যালরি শক্তি পেতে পারেন যা কিনা আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের থেকেও দ্বিগুণ। আবার পরিমিত পরিমাণে লটকন খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য লটকন হতে পারে একটি উপকারী ফল। সুতরাং আপনারা যারা লটকন খেতে পছন্দ করেন কিন্তু ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় খেতে পারছেন না তারা আজ থেকে নিশ্চিন্তে নির্দ্বিধাই লটকন খেতে পারেন। আপনি লটকন খান এবং এই ফলের রসালো আস্বাদ গ্রহণ করুন। এতে আপনার ওজন কমবে বৈকি বাড়বে না।
লটকনের পুষ্টিগুণ উপকারিতা
প্রতি ১০০ গ্রাম লটকন ফলে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান--পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
কার্বোহাইড্রেড | ১০.৬ গ্রাম |
ক্যালরি | ৪৩ কিলো ক্যালরি |
প্রোটিন | ০.৬ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৬০ মিলিগ্রাম |
ডায়েটারি ফাইবার | ১.৯ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৮ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ২৩৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৩২০ আইইউ |
জিংক | ০.৩ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.৪ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০৩ মিলিগ্রাম |
নিয়াসিন | ০.৫ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
পান্তোথেনিক এসিড | ০.০৬ মিলিগ্রাম |
ভিতামিন B6 | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ১৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ১০ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ২৩ মিলিগ্রা |
লটকন ফলের ইংরেজি নাম
বাংলাদেশের অতি জনপ্রিয় একটি ফল হল লটকন। এর ইংরেজি নাম Burmese grap এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea Motleyana. লটকন ফল দেখতে ছোট আকৃতির গোলাকার এবং পাকা অবস্থায় হলদে রংয়ের হয়। ফলের খোসা অত্যন্ত পুরু এবং প্রতিটি ফলে তিনটি করে বীজ থাকে। লটকন টক মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি ফল। লটকন কাঁচা বা পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়।তবে পাকা অবস্থায় খাওয়াটাই বেশি ভালো।লটকন শুধু ফল হিসেবেই নয় বরং লটকন দের বিভিন্ন ধরনের আচার জ্যাম জেলি শরবত ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তাছাড়া লটকনের ছাল থেকে রং তৈরি করা হয় যার রেশম সুতা রাঙাতে বহুল ব্যবহৃত হয়। স্থানভেটে লটকন বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- হাড়-ফাটা, বুগি, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাও, কিছুয়ান, আশফল, নটকোনা প্রভৃতি।
লটকন গাছের ছবি
লটকন গাছ সাধারণত ৯-১২ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর কান্ড বেটে এবং উপর অংশ কিছুটা ঝোপালো আকৃতির। লটকন গাছ স্ত্রী এবং পুং দুই ভাগে বিভক্ত। লিঙ্গ ভেদে দুই গাছে আলাদা সুগন্ধি যুক্ত ফুল হয়। আর লটকন ফল ধরে থোকায় থোকায়। সাধারণত অল্প ছায়া যুক্ত স্থানে লটকন গাছ ভালো জন্মে থাকে।লটকন গাছ দক্ষিণ এশিয়ায় গাছ হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশ থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ হচ্ছে। আমাদের দেশে বলতে গেলে নরসিংদীতেই লটকনের ফলন বেশি হয়। এছাড়াও সিলেট, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ময়মনসিংহ, গাজীপুর এই জেলাগুলোতেও সাম্প্রতিকালে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
লটকন দিয়ে পাই বানানোর রেসিপি
লটকনের উপকারিতা পেতে আপনি লটকন যেমন ফল হিসেবে খেতে পারেন, তেমনি লটকন দিয়ে পাই বানিয়েও খেতে পারেন। আর এই লটকন পাই খেতে যেমন অত্যন্ত সুস্বাদু । আসুন এই লটকন পাই আপনি কিভাবে বানাবেন তা জেনে নিন--প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- লটকনের পরিমাণ- ১কেজি
- চিনির পরিমাণ- পৌনে ১ কাপ
- দারুচিনি গুঁড়ো - সিকি টেবিল চামচ
- ময়দার পরিমাণ- ১.৫ কাপ
- মাখন- ২ টেবিল চামচ
- চিনিগুড়া- ১ চা চামচ
- তরল দুধ- ২টেবিল চামচ এবং
- ফেটানো ডিম- ১ টেবিল চামচ
ঘন হয়ে এলে চুলার আঁচ বন্ধ করে দিন। এবারে আপনি ফ্রিজিং করে রাখা পাইয়ের ডো ফ্রিজ থেকে বের করে পাতলা রুটির মতো বেলে নিন এবং এতে লটকনের মিশ্রণ দিন। আপনি চাইলে পাই ডাইসেও তৈরি করতে পারেন। 180 ডিগ্রী হিট করা অধীনে ৪০ মিনিট বেক করুন। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল মজাদার লটকন পাই। আপনার বাসায় অতিথি আসলে আপনি এই অভিনব নতুন রেসিপি লটকন পাই পরিবেশন করতে পারেন।
লটকন ফলের দাম কত ২০২৪
লটকনের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এই ফলের দাম সম্পর্কে জানতে চান। লটকন একটি জনপ্রিয় স্থানীয় ফল যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়এখন চলছে লটকনের ফলের মৌসুম। আর মৌসুমী রসালো ফল কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে বলুন তো!! অনেকেই আছেন যাদের লটকনের দাম সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকার কারণে এই ফলটি কিনতে চান না,আবার খাওয়াও হয় না।যার ফলে লটকনের পুষ্টিগুণ থেকে আপনি বঞ্চিত হন। বলে রাখি, আপনি বাজারে ১৬০- ২০০টাকা কেজি করে লটকন পেয়ে যাবেন। তবে স্থানীয় বাজারের চাহিদা এবং সরবরাহের উপর ভিত্তি করে এর দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে। দাম তো জেনে নিলেন,এবার এই ফল কিনে এর আস্বাদ গ্রহণ করুন আর আপনার শরীরে পেতে থাকুন লটকনের হাজার পুষ্টিগুণ।
ফ্রিজে সংরক্ষণ (১-২ সপ্তাহ)
লটকন দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য আপনি ফ্রিজিং করেও রাখতে পারেন। এটি করার জন্য আপনি লটকন গুলো ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। এরপর লটকন গুলো ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করে রাখুন। যদি সম্ভব হয়,ভ্যাকুয়াম সিলার ব্যবহার করে বাতাস বের করে দিন, এতে ফ্রিজে সংরক্ষণ কালে লটকনের স্বাদ এবং গুণগত মান দীর্ঘদিন বজায় থাকবে। এবার প্যাকেট গুলো ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে আপনি দীর্ঘ মেয়াদী লটকন সংরক্ষণ করতে পারেন।
ডিহাইড্রেশন পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে আপনি প্রথমে লটকন গুলো ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিন। লটকন গুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফেলুন। এবার লটকন শুকানোর জন্য ডিহাইড্রেটর ব্যবহার করুন অথবা ওভেনে কম তাপমাত্রায় শুকিয়ে নিন। শুকানোর পর লটকন গুলো সিলযুক্ত বায়ুরধী পাত্র বা ব্যাগে রাখুন। এবার লটকন ভর্তি ব্যাগগুলো ঠান্ডা শুকনো এবং অন্ধকার স্থানে রাখুন। এই পদ্ধতিতে লটকন কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
ক্যানিং পদ্ধতি
লটকন সংরক্ষণ পদ্ধতি
লটকন একটি মৌসুমী ফল হওয়ায় শুধুমাত্র বর্ষাকালেই পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি চাইলে এই লটকন ফল সংরক্ষণ করে রেখেও দীর্ঘদিন খেতে পারেন। লটকন সংরক্ষণ করার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি আপনি অনুসরণ করতে পারেন।। এবার চলুন আপনি লটকন কিভাবে সংরক্ষণ করবেন সে পদ্ধতি গুলো জেনে নিন--ফ্রিজে সংরক্ষণ (১-২ সপ্তাহ)
- ফ্রেশ লটকন আপনি যদি ফ্রেশ লটকন সংরক্ষণ করতে চান তবে প্রথমে লটকনের খোসা এবং বীজ ছাড়িয়ে নিন। তারপর একটি এয়ারটাইট কন্টেইনার বা প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এভাবে সংরক্ষণ করলে ১-২ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে এবং খেতে পারবেন।
- লটকন খোসা ও বীজ সহ সংরক্ষণ আপনি যদি খোসা এবং বীজ সহ লটকন সংরক্ষণ করতে চান,তবে সেক্ষেত্রে আপনি ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় রেখে দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণরূপে পাকে। এরপর ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
লটকন দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য আপনি ফ্রিজিং করেও রাখতে পারেন। এটি করার জন্য আপনি লটকন গুলো ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। এরপর লটকন গুলো ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করে রাখুন। যদি সম্ভব হয়,ভ্যাকুয়াম সিলার ব্যবহার করে বাতাস বের করে দিন, এতে ফ্রিজে সংরক্ষণ কালে লটকনের স্বাদ এবং গুণগত মান দীর্ঘদিন বজায় থাকবে। এবার প্যাকেট গুলো ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে আপনি দীর্ঘ মেয়াদী লটকন সংরক্ষণ করতে পারেন।
ডিহাইড্রেশন পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে আপনি প্রথমে লটকন গুলো ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিন। লটকন গুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফেলুন। এবার লটকন শুকানোর জন্য ডিহাইড্রেটর ব্যবহার করুন অথবা ওভেনে কম তাপমাত্রায় শুকিয়ে নিন। শুকানোর পর লটকন গুলো সিলযুক্ত বায়ুরধী পাত্র বা ব্যাগে রাখুন। এবার লটকন ভর্তি ব্যাগগুলো ঠান্ডা শুকনো এবং অন্ধকার স্থানে রাখুন। এই পদ্ধতিতে লটকন কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
ক্যানিং পদ্ধতি
- বাছাই ও প্রস্তুতিঃ ক্যানিং পদ্ধতিতে লটকন সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রথমেই লটকন গুলো পরিষ্কার পানিতে বরাবরের মতোই ধুয়ে ফেলুন। যদি কাটার প্রয়োজন মনে করেন তাহলে টুকরো করে কেটে নিতে পারেন।
- জার প্রস্তুতকরনঃ এবারে ক্যানিং জার গুলো পরিষ্কার করে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
- প্যাকিংঃ এবার লটকন যারে ভরে দিন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এতে চিনি লেবুর রস অথবা অন্য কোন মসলা যোগ করুন।
- প্রসেসিংঃ লটকন ভর্তি যার গুলো বয়লারে 10 থেকে 15 মিনিট ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
- স্টোরেজ ক্যানিং প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে যার গুলো ঠান্ডায় স্থানে সংরক্ষণ করুন। সঠিকভাবে ক্যান করা হলে লটকন বছরের পর বছর ভালো থাকে।
লটকন খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
লটকন খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যদিও লটকা ফল উপকারী। এবার জেনে নিন লটকন খাওয়ার সময় কোন কোন বিষয় গুলো খেয়াল রাখা উচিত-- আপনি একসাথে মাত্রাতিরিক্ত লটকন খাবেন না বরং প্রতিদিন ৩-৪ টি লটকন খাবেন। এতে ভালো ফল পাবেন।
- যারা কিডনিজনিত রোগে ভুগছেন তাদের লটকন না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, লটকনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম যা আপনার কিডনি রোগকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা লটকন এড়িয়ে চলুন। কারন, লটকন অনেক সময় এলার্জির উদ্রে করে। লটকন খাওয়ার পর চুলকানির সৃষ্টি হলে আপনি অতিসত্বর একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
- যারা চিকিৎসার মধ্যে আছেন বা ঔষধ সেবন করছেন তারা লটকন খাবেন না। আর খেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তবেই খাবেন।
- গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের লটকন খাওয়ার পূর্বে একজন গাইনি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরী।
পরিশেষে
লটকনের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণ অবগত হয়েছেন আর্টিকেলটি পড়ে। এই লটকন অতি স্বল্প সময়ের একটি ফল। বর্ষাকালে আপনি রাস্তাঘাট, বাজারে সব জায়গায় এই ফল পাবেন। ছোট্ট এই ফলটি এমন সব পুষ্টি উপাদানে ঠাসা যা আপনার কোলন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রকম জটিল রোগ খুব অনায়াসেই সরিয়ে তুলতে সক্ষম।সব থেকে বড় কথা কি জানেন? এই লটকনে কোন ক্ষতিকর উপাদান নেই, ফলে ছোট থেকে বুড়ো পর্যন্ত সকলেই এই ফলটি খেতে পারেন। আপনি যদি এখনো লটকন ফল না খেয়ে থাকেন তাহলে বলব আপনি আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় লটকন অন্তর্ভুক্ত করুন এবং লটকন খেয়ে সারাদিন সক্রিয় থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url