চিরতরে মেছতা দূর করার ২০টি উপায়
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে আপনি নিশ্চয়ই খুব উৎসাহী? মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ চিরতরে মেছতা দূর করার ২০টি উপায়
- আগে জানুন মেছতা কি?
- মেছতা দূর করার উপায় সমূহ
- মেছতা হওয়ার কারণ এবং এর প্রকারভেদ
- মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
- অ্যালোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
- মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম
- পুরুষের মেছতা দূর করার উপায়
- পুরুষের মেছতা দূর করার ক্রিম
- মেছতা দূর করার হোমিও ঔষধ
- মেছতা দূর করার ক্রিমের দাম কত ২০২৪
- মেছতা দূরীকরণে কিছু সতর্কতা
- চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে আমার অভিমত
আগে জানুন মেছতা কি?
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে মেছতা কি এবং কি কারনে হয়? সুন্দর লাবণ্যময়ী ত্বক কে না চায় বলুন তো? কিন্তু তাতে বাধ সাধে মেছতার দাগ।আমাদের দেশের নারী পুরুষের খুব সাধারণ একটি সমস্যা এই মেছতা। সাধারণত মুখের অংশবিশেষে কালচে ছোপ বা বাদামি দাগকেই আমরা মেছতা নামে চিনি। চিকিৎসাশাস্ত্রে মেছতা "মেলাজমা" নামে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ এলোভেরা মুখে দিলে চুলকানোর ৫ টি অজানা কারণ
প্রাথমিক অবস্থায় মেছতা ছোট আকারে দেখা দিলেও পরবর্তীতে তা আস্তে আস্তে পুরো মুখের ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে। মেছতা সব থেকে বেশি দেখা যায় গালের উপরিভাগে। তাছাড়া গালের দুই পাশে, নাকের ওপরে , ঠোঁটের ওপরে , কপালে ভ্রুর ওপরে, আবার অনেক সময় চিবুকের ওপরেও এই মেছতা দেখা যায়। কখনো বা মেছতা নাকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে প্রজাপতির আকার ধারণ করে।
মেছতা দূর করার উপায় সমূহ
চিরতরে মেছতা দূর করার অনেক গুলো উপায় রয়েছে যা আপনি নিজেও হয়তো জানেন না। সুন্দর এবং উজ্জ্বল ত্বকের যত্নে আমরা কমবেশি সকলেই সচেতন। কিন্তু ত্বকে মেছতা হলে এটি আপনার ত্বকের ব্যাপক সৌন্দর্যহানি ঘটায়। অনেকেই আবার ব্যস্ততার দাগ নিয়ে প্রচণ্ড রকমের দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন।
তবে বর্তমান সময়ে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এই মেছতা নিরাময়েও নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করার পর আপনার ত্বকের এই মেছতা ভাব অনেকটাই দূরে চলে যাবে। এবার চলুন, মেছতা দূর করার ট্রিটমেন্ট গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন--
এজিলেক অ্যাসিডঃ মেছতার দাগ নির্মূলে আরেকটি কার্যকরী উপাদান হল এজিলেক এসিড। এজেলেক এসিড ব্যবহারে এটি আপনার স্কিনের রঞ্জক পদার্থ তৈরি করা মেলানোসাইটসকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সাথে আপনার স্কিন থেকে মেছতার দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
হাইড্রোকুইনোনঃ বেশিরভাগ চিকিৎসকরা মেছতা নির্মূলে হাইড্রোকুইনোন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই হাইড্রোকুইনোন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা আপনার ত্বকের মেছতা দূর করতে বেশ কার্যকরী। বর্তমানে মেছতা নিরাময়ে হাইড্রোকুইনোন জেল,লোশন এবং ক্রিম বিভিন্ন ফর্মুলায় বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকানে পাওয়া যায়।
কোজিক অ্যাসিডঃ মেছতা দূরীকরণে আরেকটি কার্যকরী রাসায়নিক উপাদান হলো কোজিক অ্যাসিড। এই কোজিক অ্যাসিড ব্যবহারের ফলে এটি আপনার স্কিনের মেলানোসাইটোসের অতিরিক্ত উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ত্বকের মেছতা প্রতিরোধ করে। অনেক সময় হাইড্রোকুইনোন এর পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে চিকিৎসকরা এই কোজিক এসিড ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
মেডিকেল ট্রিটমেন্টঃ মেছতা নিরাময়ে কতগুলো মেডিকেল ট্রিটমেন্টও রয়েছে। মেছতার বেশ কার্যকরী কিছু মেডিকেল ট্রিটমেন্ট গুলো হল
- লাইট থেরাপি
- ডার্মাব্রেশন
- লেজার ট্রিটমেন্ট
- কেমিক্যাল পিলস এবং
- মাইক্রোডার্মাব্রেশন
উপরিউক্ত এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে আপনি চিরতরের মত মেছতা দূর করতে পারেন। আপনি যদি মেছতার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চান তাহলে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা উপরোক্ত ট্রিটমেন্টগুলো অনেক সময় আপনার ত্বকে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই ট্রিটমেন্ট এগুলো নেওয়ার আগে অবশ্যই আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই নেবেন।
মেছতা হওয়ার কারণ এবং এর প্রকারভেদ
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। ত্বকে মেছতা হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সাধারণত ধারণা করা হয় ত্বকের রং তৈরির কোষ মেলানোসাইটোসের ত্রুটিগত কারণে ত্বকে মেছতার সৃষ্টি হয়। সে হিসেবে ফর্সা মানুষের তুলনায় যারা গাড়ো ত্বকের অধিকারী তাদের মধ্যে মেছতার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, যেহেতু তাদের ত্বকে মেলানো সাইটোসের পরিমাণ বেশি থাকে। হওয়ার জন্য আরও যে সকল কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো--
- দৈনন্দিন জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে আমাদের অনেক সময় রোদে পুড়েও কাজ করতে হয়। সূর্যের এই ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির কারণে আপনার ত্বকে মেছতা হতে পারে।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার কারণে মুখে মেছতার সৃষ্টি হয়।
- হরমোনের চিকিৎসার গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন মুখে মেছতা সৃষ্টির আরেকটি অন্যতম কারণ।
- অনেক সময় ত্বকের যত্নে আমরা ভুলভাল কসমেটিক্স বা প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বকে মেছতা দেখা দেয়।
- মহিলাদের মেনোপজের সময় হরমোন এর রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণের ফলে ত্বকে মেছতার দাগ পড়তে পারে।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করার কারণে আপনার ত্বকে মেছতা হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা করা,পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া ইত্যাদি মেছতা হওয়ার অন্যতম কারণ।
- টক্সিন,থাইরয়েডের সমস্যার কারণে আপনার ত্বকে দেখা দিতে পারে।
- ত্বকে ঘাম হওয়ার পরও পরিচ্ছন্ন না হওয়া এবং দীর্ঘদিন ত্বকের যত্ন না নিলে আপনার ত্বকে মেছতা হতে পারে।
- তাছাড়া জেনেটিক বা বংশগত কারণেও মেছতা হয়ে থাকে।
ত্বকের লেয়ার ভেদে মেছতা সাধারণত দু'ধরনের হতে পারে। যেমন
- ত্বকের বাহ্যিক স্তরে মেছতা হলে সেটি অ্যাপিডার্মাল মেলাজমা এবং ডারমাল লেয়ারে মেছতা হলে সেটিকে বলা হয় ডার্মাল মেলাজমা।
- যাদের ত্বকের উপরের স্তরে মেছতার সমস্যা রয়েছে তাদের এই সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।
- যাদের ত্বকের গভীরে স্তরে মেছতার সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী ট্রিটমেন্ট
চিরতরে মেছতা দূর করতে চাইলে আপনাকে উপরিউক্ত এই বিষয় গুলো মাথায় রাখতে হবে। আপনার ত্বকে যদি একবার মেছতা তাহলে তা একেবারে দূর করা কখনোই সম্ভব নয় বরং ধীরে ধীরে এর দাগ হালকা করা যেতে পারে। বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের সহযোগিতায় বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী ট্রিটমেন্টের সাহায্যে অনেক পুরনো মেছতাও দূর করা সম্ভব।
মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
মেছতা দূর করার বেশ কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় রয়েছে। যা হয়তো আপনার এখন অজানা। মেছতা ত্বকের এমনই এক নাছোড়বান্দা সমস্যা যা একবার হলে কোনোভাবেই দূর হতে চায় না। অনেকে আবার মেছতার দাগ নির্মূল করতে লেজার ট্রিটমেন্টও করাতে চান। এই লেজার ট্রিটমেন্ট করানোর পর অনেকে আবার ত্বকের যত্ন ঠিকমতো নেন না, যার কারণে আপনার ত্বক আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়।
ত্বকে মেছতার দাগ দূর করতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা করেও আপনি ব্যর্থ এবং প্রচন্ড রকমের দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তাইতো? দুশ্চিন্তা নয় বরং আপনার হাতের নাগালেই রয়েছে ঘরোয়াভাবে মেছতা দূরীকরণের উপায়। হ্যাঁ, সম্মানিত পাঠক আজ আপনাকে জানাবো মেছতা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে-
- লেবুর রসঃ আপনার ত্বকের মেছতা দাগ দূর করতে পারে লেবুর রস। কারণ, লেবুর রসে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আপনার ত্বককে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। কিন্তু ভুলক্রমেও আপনি লেবুর রস কখনোই সরাসরি আপনার ত্বকে লাগাবেন না।
- সামান্য জলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে এটি আপনার ত্বকে ১৫-২০ মিনিটের মতো লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা জলে মুগ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে বেশ কিছুদিন লেবুর রস ব্যবহারে আপনার ত্বকের মেছতার অনেকটাই দূর হবে।
- আমন্ড অয়েলঃ আমন্ড ওয়েলের কার্যকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানেন। এই আমন্ড অয়েল শুধুমাত্র আমাদের চুলের যত্নেই নয় বরং ত্বকের যত্নেও সমানভাবে উপকারী। মেছতা দূর করতে আপনি ২-৩ ফোঁটা আমন্ড অয়েল নিয়ে সেটি আপনার ত্বকের মেছতার ওপর ভালো করে মেসেজ করুন এবং এক ঘন্টা রেখে দিন।
- ঘন্টাখানেক পর আপনার ত্বক সাধারণ তাপমাত্রার জলে ধুয়ে ফেলুন। আপনি যদি নিয়মিত এই আমল ওয়েল আপনার ত্বকে ব্যবহার করেন তাহলে নিশ্চিত করে বলতে পারি আপনার মেছতার দাগ দূর হবেই।
- টক দইঃ নিয়মিত টক দই ব্যবহারে এটি আপনার ত্বককে যেমন উজ্জ্বল করে, তেমনি মেছতার দাগও দূর করে। এর জন্য আপনি ১-২ চা চামচ পরিমাণ টক দই ফেটিয়ে খুব ভালো করে মেছতার দাগের উপর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর সময় হলে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। মিস্টার দাঁত দূর করতে এই টক দই বিশেষভাবে কার্যকরী। তাই দেরি না করে আপনি আজ থেকেই আপনার ত্বকে টক দই ব্যবহার শুরু করুন।
- হালকা গরম তেলঃ নিয়মিত কুসুম গরম তেল ত্বকে ব্যবহারের ফলে মেছতা দূর হয় জানেন কি? আপনি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! হ্যাঁ, এর জন্য ত্বকে ব্যবহার উপযোগী যে কোন তেল যেমন- অলিভ অয়েল, টি ট্রি ওয়েল, অর্গান অয়েল কুসুম গরম করে নিয়ে সেটি আপনার ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন।
- এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার ত্বক তেল শুষে না নিচ্ছে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি ম্যাসাজ করতেই থাকবেন। ত্বকে ম্যাসাজ শেষে আপনি ঘন্টা খানিকের মত অপেক্ষা করুন এবং সময়মতো হালকা গরম জলে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপনি নিয়মিত আপনার ত্বকে এইভাবে ব্যবহার করুন। দেখবেন মেছতা অচিরেই গায়েব হয়ে গেছে।
- মেছতা দূরীকরণে আলুঃ আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেকলেজ নামক এনজাইম যা আপনার ত্বকের মেছতার কালো দাগ দূর করে ত্বকের স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর জন্য একটি ছোট আলু গ্রেট করে আপনি আপনার ত্বকে লাগান এবং লাগিয়ে ১৫-২০ পর্যন্ত মিনিট রেখে দিন। ২০ মিনিট পর আপনার ত্বক ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত আপনার ত্বকে আলুর এই ব্যবহার আপনাকে মেছতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
- কমলার খোসার ব্যবহারঃ কমলা খাওয়ার পরে আমরা এর খোসাটাকে ফেলনা হিসেবেই ফেলে দেই। কিন্তু আপনি জানেন কি মেছতার দাগ নিরাময়ে কমলার খোসা ভীষণভাবে কার্যকরী। কারণ, কমলার খোসায় রয়েছে অ্যান্টিক ফাঙ্গাল উপাদান যা আপনার মুখের কালো ছোপ দাগ এমনকি ব্রনও দূর করতে পারে।
- কমলার খোসা আপনি বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তাতে হলুদ এবং মধু একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এই পেস্টটি আপনার মুখে ভালো করে লাগান। ঠিক ১০ মিনিট পরে আপনার মুখ গোলাপ জল দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করুন। এভাবে নিয়মিত কমলার খোসা ব্যবহারে আপনি মেছতা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
- টমেটোর রসঃ মেছতার দাগ দূর করতে আপনি টমেটোর রস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ টমেটোর রস লাইকোপেন সমৃদ্ধ যা আপনার মুখের দাগ দ্রুত অপসারণ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া তোকে নিয়মিত টমেটোর রস ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বকের খোলা পোরস সংকুচিত করতেও সহায়তা করে।
- পাকা পেঁপের ব্যবহারঃ পাকা পেতে ত্বকের মেছতা দাগ দূরীকরণে বেশ উপকারী। এর জন্য একটি পাকা পেঁপের কিছুটা নিয়ে ভালো করে চটকে আপনের মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। মিনিট ২০ এরপর আপনার মুখ সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
- ডিমের সাদা অংশঃ ডিমের সাদা অংশটুকু নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের মেছতার দাগ অনেকটাই দূর হতে পারে। এর জন্য আপনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে সেটি মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ঠিক ১৫ মিনিট পর মুখ জলে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ত্বকে ডিমের ব্যবহার আপনার ত্বককে মেছতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
- হলুদ এবং কাঁচা দুধের ব্যবহারঃ মেছতা দূর করার আরেকটি কার্যকরী উপাদান হলো হলুদ এবং কাঁচা দুধ। কারণ হলুদের রয়েছে টেট্রাহাইড্রোকার্কিউমিন নির্যাস যা আপনার ত্বকের পুরনো মেছতার দাগও দূর করতে সক্ষম। আর কাঁচা দুধ আপনার ত্বককে এক্সফলিয়েট করতে সাহায্য করে।
- আপনি হলুদের সাথে পরিমাণমতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং ২০ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। ব্যাস, এভাবে নিয়মিত হলুদ এবং কাঁচা দুধ ব্যবহারেও আপনি মেছতা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
- মুলতানি মাটির ব্যবহারঃ ত্বকের তৈলাক্ত ভাব মেছতার জন্য অনেকটাই তাই। আর আপনার ত্বকের এই তৈলাক্ত ভাব দূর করতে পারে মুলতানি মাটি। সামান্য পানির সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত মুলতানি মাটির ব্যবহারে আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব যেমন দূর হবে তেমনি ত্বকও মেছতা থেকে রক্ষা পাবে।
- দারুচিনি গুড়ো ও দুধের সরঃ এক চিমটি দারু চিনি গুঁড়ো এবং সামান্য দুধের সর ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এই পেস্টটি আপনার মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পরে ত্বক শুকিয়ে এলে ঠান্ডা জলে আলতো করে ঘোষে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আপনি প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এ কাজটি করলে আপনার ত্বক থেকে দ্রুত মেছতা দূর হবে।
- ছোলার ডালঃ অনেকের বয়স জনিত কারণে ত্বকে মেছতা পড়ে। বয়সের কারণে ত্বকে মেছতা পড়লে আপনি ছোলার ডাল ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন। এর জন্য আপনি আধা কাপ পরিমাণ ছোলার ডাল সারাদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। অতঃপর ভেজানো ছোলার ডালের সাথে আপনি ১ চা চামচ মধু এবং পানির পরিবর্তে কাঁচা দুধ দিয়ে ব্লেন্ডারে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবারে মিশ্রণটি আপনার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের মেছতা দূরীকরণে ছোলার ডালের এই ফেসপ্যাক বেশ কার্যকর।
- পেঁয়াজের রসঃ ত্বকের মেছতা দূর করতে আপনি পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনি একটি পেঁয়াজ গ্রেট করে কেটে নিন এবং চিপে রস বের করে নিন। এবারে এই রসের সাথে এক চা চামচ পরিমাণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এই রসটি আপনার মেছতার দাগের উপর লাগিয়ে ৩-৪ মিনিট রেখে দিন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। মেছতা দূর করতে যুগ যুগ ধরে পেঁয়াজের রসের এই ফেসপ্যাক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভালো ফলাফল পেতে আপনি পেঁয়াজের রস নিয়মিত ব্যবহার করুন।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগারঃ ত্বকের মেছতা দাগ দূর করতে আপনি অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। তবে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার কখনোই সরাসরি মুখে লাগাবেন না। সামান্য জলের সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে শুধুমাত্র মেছতার দাগ যুক্ত স্থানে লাগিয়ে ৩ মিনিটের মধ্যেই ধুয়ে ফেলুন। আরেকটি কথা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আপনার ত্বকে বেশিক্ষণ রাখবেন না, মিনিট তিনেক রাখলেই চলবে।
- ওটমিলের ব্যবহারঃ মেছতা প্রতিরোধে ওটমিল দারুন কাজ করে। এটি আপনার ত্বকের ব্রাউন স্পট এবং মৃত কোষ কে সরিয়ে স্কিন করে তোলে উজ্জ্বল গ্লোয়িং। ওটমিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি ২ চা চামচ ওটমিল, ১ চা চামচ পরিমাণ মধু এবং ২ চা চামচ দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
- এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকের মেছতা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ঠিক ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। মেছতা দূরীকরণে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিও বেশ কার্যকরী।
- গোলাপজল,শসার রস এবং সবুজ চাঃ গোলাপজল শসার রস সবুজ চা লেবুর রস পরিমাণ মতো পানি এবং মুলতানি মাটি দিয়ে আপনি একটি মিশ্রণ তৈরি করে এই মিশ্রণটি ২০ মিনিটের মতো ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন
- সানস্ক্রিনের ব্যবহারঃ আমরা অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চাই না বা এর প্রয়োজনীয়তা বুঝিনা। কিন্তু ত্বকের সুরক্ষার জন্য এবং সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে যদি ত্বককে বাঁচাতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত এই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই হবে।
- আপনি প্রতিদিন বাইরে বেরোনোর অন্তত 20 মিনিট পূর্বে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন এবং সেই সাথে ছাতা, মাস্ক এবং সানগ্লাস নিতে ভুলবেন না। এতে করে আপনি মেছতা থেকে খুব সহজে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
মেছতার দাগ দূর করতে আমরা অনেক সময় নানান ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করে থাকি। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে একটা সময়ে আপনার ত্বকের মেছতা তো দূর হয়ই না বরং এতে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই বিভিন্ন প্রসাধনি ছেড়ে আপনি যদি এই প্রাকৃতিক ঘরোয়া পরিচর্যা গুলো করতে পারেন, তাহলে ধীরে ধীরে আপনার মেছতার দাগ অনেকটাই কমে আসবে। সেই সাথে ত্বকে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।
অ্যালোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই অবগত হয়েছেন। সেই প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় ভেষজ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অ্যালোভেরা। নিয়মিত এলোভেরা ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বকের সৌন্দর্য যেমন ফিরিয়ে আনে, তেমনি ত্বকের শুষ্কতাও দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া আপনি আপনার ত্বকের মেছতা দাগ দূর করতেও ভেষজ এই উপাদান এলোভেরা ব্যবহার করতেই পারেন। এবারে চলুন মেছতা দূর করতে এলোভেরা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
- প্রথমেই আপনি একটি টাটকা সতেজ অ্যালোভেরা সংগ্রহ করে এর থেকে এলোভেরা জেল বের করে নিন।
- এরপর এলোভেরার জেলের সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকের মেছতার দাগের ওপরে আঙ্গুলের সাহায্যে খুব ভালো করে ১০-১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
- মেছতা দূর করতে এই নিয়মে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি খুব ভালো ফলাফল পাবেন আশা রাখছি। যেহেতু মেছতার দাগ সহজেই উঠতে চায় না তাই ভালো ফলাফল পেতে হলে আপনাকে বেশ কয়েক মাস সময় নিয়ে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন--
- আপনার ত্বকে কোন ক্ষতস্থান বা কাটা স্থান থাকলে সেখানে এলোভেরা জেল ব্যবহার করবেন না এতে সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে।
- অ্যালোভেরা ব্যবহার ক্ষেত্রে সবসময় চেষ্টা করবেন পাতার তাজা জেল ব্যবহার করা।
- আপনি সপ্তাহে অন্তত দুবার এলোভেরা জেল ব্যবহার করবেন।
সম্মানিত পাঠক, এলোভেরা নিয়মিত ব্যাবহার করলেও মেছতা দূর হয়।। নিয়মিত এলোভেরা ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বকের শুষ্ক এবং খসখসে ভাব দূর করবে এবং ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতাও খুব সহজেই ফিরিয়ে আনবে।
মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় হিসেবে আপনি ভালো মানের ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। যারা মেছতার সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রায়শই জানতে চান মেছতা দূর করার কোন ক্রিম আছে কিনা, যেটি ব্যবহার করলে মেছতা কিছুদিনের মধ্যেই রাতারাতি মেছতা একেবারে গায়েব হয়ে যাবে। অনেকে আবার তাড়াহুড়ো করে মেছতার দাগ দূর করার জন্য যে কোন প্রসাধনীর দোকান থেকে যেন তেন নিম্নমানের ক্রিম কিনে ব্যবহার করতে শুরু করে দেন।
এতে করে আপনার মেছতা তো দূর হয়ই না বরং আপনার ত্বকের আরো ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে একটা কথা বলে রাখি,যেকোনো রোগ হলেই সেটি সেরে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লাগে,হুট করে কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যায় না। মেছতার চিকিৎসা পদ্ধতিও ঠিক তেমনি খানিকটা সময় সাপেক্ষ। তাই আপনি তাড়াহুড়ো করে ধৈর্য না হারিয়ে বরং ধৈর্য ধরে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। তাছাড়া বর্তমানে মেছতার দাগ অপসারণের লেজার ট্রিটমেন্ট এর মত জন্য বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিও এসেছে।
আবার মেছতা দূর করার জন্য বিভিন্ন গুণগত মানসম্পন্ন ক্রিমও রয়েছে। আপনি যদি চান তাহলে Fruit of the Wokali Collagen Anti Spot Fairness Cream এই ক্রিমটি ব্যবহার করতে পারেন। মেছতা দূর করার ক্ষেত্রে এই ক্রিমটি প্রাকৃতিক গুণগতমান সম্পন্ন। এই ক্রিমটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের স্বচ্ছতা ফিরে আসবে, এটি আপনার ত্বকের নতুন কোষগুলিকে মেরামত করতে সাহায্য করবে,
আপনার ত্বককে ময়েশচারাইজ করবে এবং আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ হাইড্রেশন সরবরাহ করবে। তাছাড়া, ক্লিনিক্যালি প্রমাণিত হয়েছে এটি মেছতার কালো দাগ ও ত্বকের বিবর্ণতা হ্রাস করতে পারে। কিছু কিছু চিকিৎসক মেছতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাইড্রোকুইনোন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
এই হাইড্রকুইনোন আপনি বাজারে লোশন, ক্রিম অথবা জেল হিসেবে খুব সহজেই পাবেন। হাইড্রোকুইনোন আপনার মেছতার রং ধীরে ধীরে হালকা করতে সাহায্য করে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে চর্ম বিশেষজ্ঞগণ সংমিশ্রণ ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেন। যার মধ্যে একটিতে হাইড্রোকুইনোন, কোর্টি কোস্টেরয়েড এবং ট্রেটিনইন থাকতে পারে।
মেছতা দূর করার ক্রিম
এছাড়া ইন্ডিয়ান "মেটাকরটিল লাইট ক্রিম" নামে একটি ঔষধ পাওয়া যায়। এটিও আপনি ব্যবহার করতে পারেন। একটি কথা মনে রাখবেন, শুধুমাত্র ক্রিমের উপর নির্ভর করে থাকলেই চলবে না বরং ক্রিম ব্যবহারের পাশাপাশি আপনাকে স্কিন কেয়ার রুটিন সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। তবেই চিরতরে মেছতা প্রতিরোধ সম্ভব।
পুরুষের মেছতা দূর করার উপায়
চিরতরে মেছতা দূর করার নানান উপায় নিয়ে বর্তমানে ছেলেরাও বেশ উদ্বিগ্ন। মেছতার সমস্যা নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কারোরই হতে পারে। তবে পুরুষদের থেকে নারীরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। সাধারণত যে সকল নারী পুরুষের বয়স 35 বা তদূর্ধ্ব তাদের ক্ষেত্রে এই মেছতার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।ত্বকে মেছতা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখা এবং ত্বকের যত্নে অবহেলা করা। এবার চলুন পুরুষরা মেছতা কিভাবে দূর করবেন সেই উপায় সম্পর্কে জেনে নিন-
- প্রথমেই বলি, আপনি যদি প্রতিরোধ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ত্বকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপরে গুরুত্ব দিতে হবে।
- আপনি আপনার ত্বকে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ভালো করে ধুয়ে নেবেন এবং সর্বদা নিজের তোয়ালে, গামছা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করুন। যাতে করে আপনার ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণ না থাকে।
- আপনি যদি চকলেট কফি মিষ্টি ইত্যাদি খেতে পছন্দ করেন তাহলে এগুলো না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে এগুলো ত্বকে মেছতার সৃষ্টি করে।
- যারা খাবারে অতিরিক্ত ঝাল খেতে পছন্দ করেন তারা ঝাল খাওয়া কমিয়ে দিন। কারন, এই ঝাল খাবার আপনার মুখের ফুসকুড়িকে ত্বরান্বিত করে। ফলে মেছতার সৃষ্টি হয়।
- আপনি যতটা পরিমাণ টাটকা সতেজ ফল, শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন গ্রহণ করবে এবং মেছতা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকবে।
- অনেক সময় কাজের ব্যস্ততার কারণে আমরা সারারাত না ঘুমিয়ে কাজ সম্পাদন করি। কিন্তু রাতে সময় মত না ঘুমালে এটি আপনার ত্বকে মেছতার সৃষ্টিকে আরও ত্বরান্বিত করবে। আর তাই সকল চিন্তাভাবনা দূর করে অন্তত রাতটুকু আপনি নিশ্চিন্তে ঘুম পাড়ুন। এতে আপনার মেছতার দাগ অনেকটাই কমে আসবে।
- এছাড়া আপনি মেছতা প্রতিরোধক মাস্ক হিসেবে ডিম ও লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনি একটি ডিমের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং আপনার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা জলে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। নারী-পুরুষ সকলেই এই ফেসমাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি টানা দুই সপ্তাহ এই ফেসমাস্ক ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের ফুসকুড়ি দূর হবে, ত্বকের সূক্ষ্ম রন্ধ্র আরো ছোট হয়ে আসবে, আপনার ত্বক হবে আরো নরম ও ফর্সা এবং সেই সাথে মেছতার দাগও দূর হবে।
- তাছাড়া ক্রিম হিসেবে মেছতা দূর করার জন্য আপনি মিনারেল সানস্ক্রিন পাউডার ব্যবহার করতেই পারেন।
- আপনি যতটা পারেন ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ অ্যালকোহল এবং ধূমপান সেবনের ফলে এটি আপনার ত্বকে মেছতা সৃষ্টির পথকে সুগম করে।
উপরোক্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করে একজন পুরুষ খুব সহজেই ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের মেছতা দূর করতে পারেন।
পুরুষের মেছতা দূর করার ক্রিম
ছেলেদের মুখের মেছতা দাগ দূর করার জন্য বাজারে বেশ কিছু ক্রিম পাওয়া যায়। এই ক্রিমগুলো নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে মেছতা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া একজন পুরুষের ত্বক নারীর তুলনায় দানাযুক্ত এবং অধিক তেলতেলে হয়। আর তাই পুরুষরা মেছতা দূর করতে ক্রিম হিসেবে মিনারেল সানস্ক্রিন পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া পুরুষদের মেছতা দূর করার জন্য আরও কিছু ক্রিম রয়েছে। যেমন--
- ভিটামিন সি ক্রিম
- কোজিক অ্যাসিড ক্রিম
- গ্লাইকোলিক এসিড ক্রিম
- হাইড্রোকুইনোন ক্রিম এবং
- বেনজোইল পারঅক্সাইড ক্রিম।
তবে এই ক্রিমগুলো ব্যবহারের পূর্বে আপনি অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টদের সাথে পরামর্শ করে তবে ব্যবহার করবেন। কারণ অনেক সময় এই ক্রিম ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
মেছতা দূর করার হোমিও ঔষধ
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় হিসেবে আপনি হোমিও ট্রিটমেন্টও নিতে পারেন। মেছতা দূর করার জন্য অনেকে অনেক রকম ক্রিম বা প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। সেগুলোতে যদি কাজ না হয় তাহলে আপনি হোমিও ঔষধ সেবন করে দেখতে পারেন। কারণ মেছতার চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতেও রয়েছে।
ত্বকের মেছতা দাগ দূর করতে যে সকল হোমিওপ্যাথি ওষুধগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হোমিওপ্যাথি ঔষধ হলো বার্বারিস একোপুলিয়াম। তাছাড়া ত্বকের মেছতার লক্ষণ ভেদে সিফিলিনাম, থূজা, কেলিব্রাম, আর্সেনিক, সিফিয়া ইত্যাদি হোমিওপ্যাথি ঔষধও ব্যবহার করা হয়।অনেক সময় হোমিও ঔষধ সেবনে মেছতা খুব দ্রুত সেরে যায়।
তবে এই হোমিওপ্যাথি ঔষধ আপনাকে দীর্ঘদিন সেবন করতে হবে। দীর্ঘদিন সেবনের ফলে আপনি মেছতা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন। আরেকটি কথা, এই সমস্ত হোমিওপ্যাথি ঔষধ আপনি নিজে নিজে ব্যবহার না করে ব্যবহারের পূর্বে একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং তার পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করুন।
মেছতা দূর করার ক্রিমের দাম কত ২০২৪
সম্মানিত পাঠক, আপনারা ইতিমধ্যেই মেছতা দূর করার বিভিন্ন ফেসমাস্ক এবং ক্রিম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অনেকেই আবার মেছতা দূর করার ক্রিম ব্যবহার করতে চান কিন্তু দাম না জানার কারণে আর ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না। তাই এবার আমি আপনাদের আরও কিছু মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম জানাবো দাম সহ। এই ক্রিমগুলো নারী পুরুষ এই ব্যবহার করতে পারেন। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে মেছতা দূরীকরণের ক্রীমের দাম গুলো আপনাদের জানিয়ে দেই--
ক্রিমের নাম | মূল্য |
---|---|
Triclean cream | ২০০-২০৫ টাকা |
Trimela cream | ২০০-২০৪ টাকা |
Nospot cream | ২০০-২০৩ টাকা |
Melatrin cream | ২০০-২০২ টাকা |
Betameson N cream | ৩০-৩৭ টাকা |
Betavate N cream | ২০-২৫ টাকা |
Neocort cream | ১৫-১৮ টাকা |
মেছতা দূরীকরণে কিছু সতর্কতা
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় তো জানলেন। কিন্তু মেছতা দূর করতে আপনার কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতাও দরকার। যেমন ধরুন- দিনের বেলা রোদে বের হলে আপনাকে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাইরে বেরোনোর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে আপনি আপনার ত্বকে সানস্ক্রিন লাগাবেন। শুধু তাই নয় যাদের ত্বকে মেছতার দাগ রয়েছে তারা জানালার পাশের রোদেও দাঁড়াবেন না।
- শুধু রোদই নয় বরং গরমও আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। গরমে এমনিতেই শরীরে ঘাম বেশি হয় তাই ত্বকের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া অতীব পয়োজন। গরমকালে যতটা সম্ভব পারবেন আপনার ত্বককে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন।
- ।সকাল ৯-৩ তার সময় কার রোদ যতটা পারবেন এড়িয়ে চলবেন। কারণ, এই সময়ে রোদের তাপ তীব্র হয় এবং রোদে অতি বেগুনি রশ্মি বা আলট্রাভায়োলেট "এ"এবং "বি" থাকে যা আপনার ত্বকের জন্য ভীষণই ক্ষতিকর।
- আপনি প্রতিদিন এক্সফলিয়েট করুন নিয়ম মত। কারণ, এই এক্সফোলিয়েশন আপনার ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। ফলে আপনার ত্বকের পিগমেন্ট সেল দূর হয় যা আপনার মেছতার দাগকে ধীরে ধীরে হালকা দাগে পরিণত করে।
- মেছতার দাগ অনেক সময় ঠোটেও দেখা যায়। তাই মেছতার দাগ অপসারণ করতে যেয়ে কখনোই ঠোঁটকে অবহেলা করবেন না। ত্বকের পাশাপাশি ঠোঁটের যত্ন নিন এবং ঠোঁটের জন্য আপনি এসপিএফ যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করতে পারেন।
- অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় কোন খাবার খাবেন না এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন।
- যারা প্রতিদিন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন তারা এখনই পিল খাওয়া বন্ধ করুন।
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে আমার অভিমত
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় আপনারা আমাদের আর্টিকেল পড়ে এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন। সম্মানিত পাঠক, আমরা ইতিমধ্যেই আপনাদের মেছতা দূর করার বিভিন্ন ক্রিম, ক্রিমের দাম এবং ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজকাল ত্বক নিয়ে কমবেশি প্রায় সকলেই বেশ সচেতন। তাছাড়া সুন্দর এবং উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার জন্য আমরা কত কিছুই না করে থাকি। কিন্তু অনেক সময় আপনার ত্বকের সৌন্দর্যহানি ঘটার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই মেছতা।
অনেকে আবার মেছতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন মানুষের সলাপরামর্শে কেমিক্যালযুক্ত বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করতে শুরু করেন। এতে আপনার মেছতার দাগ তো দূর হয়ই না বরং আরো গাড় হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে আপনাকে বলবো আপনি কেমিক্যাল যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়গুলো ব্যবহারের মাধ্যমে মেছতা দূর করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ত্বক থাকবে সুন্দর সুস্থ এবং ভবিষ্যতেও আপনার ত্বকে কোন রূপ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ত্বকের যত্ন নিন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url