নারিকেল তেলের ২০টি কার্যকরী উপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
নারিকেল তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? নারিকেল তেল খাওয়ার নিয়ম কি আপনার জানা আছে? যদি না জানা থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
কারণ, আজকের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জেনে নিতে পারবেন নারিকেল তেলের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এই তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। সেইসাথে আরো জানবেন চুল, ত্বকে নারিকেল তেল বাবহারের উপকারিতা সম্পর্কে।
পোস্ট সুচিপত্রঃ নারিকেল তেলের উপকারিতা
পোস্ট সুচিপত্রঃ নারিকেল তেলের উপকারিতা
- নারিকেল তেলের কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
- নারিকেল তেলের অপকারিতা
- চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহারের নিয়ম
- চুলে নারিকেল তেলের উপকারিতা
- চুলের যত্নে অন্যান্য তেলের তুলনায় নারিকেল তেল কেন ভালো?
- চুলের জন্য নারিকেল তেলের অপকারিতা
- প্যারাসুট নারকেল তেলের উপকারিতা
- প্যারাসুট নারিকেল তেল কি খাওয়া যায়?
- অর্গানিক নারিকেল তেলের উপকারিতা
- নারিকেল তেল খাওয়ার নিয়ম
- প্রতিদিন কি পরিমান নারিকেল তেল খাওয়া উচিত?
- ত্বকে নারিকেল তেলের উপকারিতা
- ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহারের অপকারিতা
- ত্বকের যত্নে নারিকেল তেলের ফেসপ্যাক
- নারিকেল তেলের অন্যান্য ব্যবহার
- নারিকেল তেলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান
- নারিকেল তেলের দাম কত ২০২৪
- লেখকের প্রতিক্রিয়া
নারিকেল তেলের কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
নারিকেল তেলের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। জানলেও আমরা বিশেষত নারিকেল তেল বলতে চুলের উপকারিতাই বুঝে থাকি। কিন্তু আপনি জানেন কি নারিকেল তেল এমন একটি খাবার যাকে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে। কারণ, এই নারিকেল তেলে ফ্যাটি এসিডের একটি চমৎকার সমন্বয় রয়েছে।তাছাড়া ওজন কমানো থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে নারিকেল তেল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নারিকেল তেলের এই বহুবিধ গুনাগুন সম্পর্কে আমরা যথাযথভাবে অবগত নই। আর সে কারণেই আজকে আপনাদের জানাবো নারিকেল তেলের বিশেষ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-
- হৃদরোগের ক্ষেত্রেঃ অনেকেই মনে করেন নারিকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে তা হার্টের জন্য মোটেও ভালো নয়। কিন্তু গবেষকদের কথা ভিন্ন,তাদের মতে নারিকেল তেল হার্টের জন্য মোটেও ক্ষতিকারক নয়। কারণ, নারিকেল তেলের রয়েছে ৫০ শতাংশ পরিমাণ লিউরিক এসিড যা আপনাকে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ নারিকেল তেল অনেকটা সবজির তেলের মতোই। নিয়মিত নারিকেল তেল সেবনে এটি আপনার দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে দেয় না এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। শুধু তাই নয়, এই তেল অ্যাথ্রোসক্লেরোসিস প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর।
- ঔষধ হিসেবে নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেল মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাটের একটি দুর্দান্ত উৎসব যার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারিকেল তেলের এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট ক্ষতিকর নয় বরং এটি মস্তিষ্কের এলজাইমার প্রতিরোধ করে এবং দ্রুত শক্তি বাড়াতে পারে। মস্তিষ্ক ছাড়াও লিভারের ডাইজেসট্রিভ ট্র্যাক্ট ভালো রাখে এই নারিকেল তেল।
- সংক্রমণ প্রতিরোধেঃ নারিকেল তেলের ফ্যাটি এসিড এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ১২-কার্বন ইউরিক অ্যাসিড রয়েছে। যা আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
- ত্বকের যত্নে নারিকেল তেলঃ সব ধরনের ত্বকেই নারিকেল তেল ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বক মাসাজের জন্য নারিকেল তেলের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া আপনার ত্বকের বলিরেখা, সোরিয়াসিস, ডার্মাটাইটিস একজিমা এবং ত্বকের নানা ধরনের সংক্রমণ রুখে দিতে সক্ষম এই নারিকেল তেল। এছাড়াও ত্বকের জন্য তৈরি বিভিন্ন প্রসাধনীতেও ব্যবহৃত হয় নারিকেল তেল।
- অকাল বার্ধক্য রোধেঃ অনেকে আছেন যাদের অল্প বয়সে অকাল বার্ধক্য আঁকড়ে ধরেছে। এই অকাল বার্ধক্য থেকে মুক্তি পেতে আপনি নারিকেল তেলের ব্যবহার শুরু করুন। কারণ, নারিকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আপনাকে অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
- ওজন কমাতে নারিকেল তেলঃ আপনি আপনার ওজন নিয়ে কি অধিক চিন্তিত? কোনভাবেই আপনার ওজন কমাতে পারছেন না। আর চিন্তা নয়, আজ থেকেই খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন নারিকেল তেল। কারণ, এই নারিকেল তেলে রয়েছে ছোট এবং মধ্যম চেইনের ফ্যাটি অ্যাসিড যা আপনার বাড়তি ওজন ধরাতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে মোটা মানুষের ক্ষেত্রে ওজন কমাতে নারিকেলের তেল বেশ কার্যকরী।
- হজমে সাহায্য করেঃ নিয়মিত নারিকেল তেল সেবনে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং আপনার থাইরয়েড ও এন্ডোক্রাইন পদ্ধতির কার্যক্রমও ঠিক রাখে। এছাড়া আপনার পাকস্থলী এবং পরিপাক সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিরোধ করতে সক্ষম নারিকেল তেল।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ নারিকেল তেল আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কারণ, নারিকেল তেলের মধ্যে রয়েছে এন্টিমাইক্রোবাইয়াল লিপিডস, লিউরিক অ্যাসিড, কাপ্রিক এসিড এবং ক্যাপরিলিক এসিড। এই উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ নারিকেল তেল সেবনে এটি আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও নারিকেল তেলের বেশ কার্যকারিতা রয়েছে।
- হাড়ের সুরক্ষায়ঃ নিয়মিত নিয়ম করে নারিকেল সেবনে এটি আপনার হাড়ের ব্যথা শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথাও দূর করে কারণ নারিকেল তেল তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুরক্ষায় অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া মাঝ বয়সে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধেয় সক্ষম নারিকেল তেল।
- দাঁতের যত্নেঃ নারিকেল তেল নারিকেল তেলে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা আপনার দাঁতের জন্য ভালো। আপনি প্রতিদিন কিছুটা নারিকেল তেল মুখে নিয়ে 10-15 মিনিট মুখের ভেতরে রাখুন এবং গড়গড়া করুন। এতে আপনার মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া দূর হবে, আপনার দাঁতের ক্ষয় রোধ করবে এবং দাঁতকে গোড়া থেকে করে তুলবে মজবুত ও শক্তিশালী।
- চোখের নিচের কালি দূর করেঃ আপনার চোখের নিচে কালি জমেছে,বলিরেখার মত হচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে আপনি যেমন চিন্তিত আবার বাজার থেকে কেনা কোন প্রসাধনীয়ও ব্যবহারের সাহস পাচ্ছেন না। তাহলে বলবো আপনি নিশ্চিন্তে নারিকেল তেল ব্যবহার করুন সামান্য একটু নারিকেল তেল আপনার আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে চোখের নিচের কালিতে আলতো করে লাগান। নারিকেল তেলের ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খনিজ উপাদান আপনার চোখের নিচের কালি খুব সহজেই দূর করতে পারে।
- হাত-পা এবং কনুই এর যত্নেঃ আচ্ছা আপনি একটু ভালো করে মনে করেন তো, ছোটবেলায় আপনার নানী-দাদীরা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হাতের তালুতে সামান্য নারিকেল তেল নিয়ে হাত, পায়ে এবং কনুই এর গোড়ালিতে মাখতেন কিনা!! নিশ্চয়ই মনে পড়েছে। এর কারণ হলো হাত-পা, কোনই এবং গোড়ালির খসখসে স্থানে নিয়মিত নারিকেল তেল মালিশ করলে শক্ত হয়ে যাওয়া বা ভাঁজ পড়ে যাওয়া ত্বক কিছুদিনের মধ্যে মসৃণ নরম এবং কোমল হয়ে ওঠে। আপনিও আপনার হাত-পা কোনই এবং গোড়ালির যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
- ত্বকের যত্নে নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আপনার ত্বকের যে কোন প্রদাহ বা অস্বস্তি প্রশমিত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। অনেক সময় খেয়াল করবেন আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া হয় কিংবা ত্বক লাল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি নারিকেল তেল ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বকের জ্বালাপোড়া খুব সহজেই লাঘব হবে।
- ঠোঁট ফাটা রোধ করেঃ অনেকেই আছেন যাদের ঠোঁট খুব শুষ্ক হয়ে থাকে এবং ফেটে যায়। অনেক সময় এই ফাটা ঠোঁট নিয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আপনি না পারেন প্রাণ খুলে হাসতে, না পারেন ঠিকমতো খেতে। এই ঠোঁট ফাটা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে নারিকেল তেল কারণ ঠোঁটে নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে এটি আপনার ঠোঁটকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরে ফ্যাট জমতে বাধা প্রদানঃ নারিকেল তেলে রয়েছে মিডিয়াম চেইন ট্রিগলিসেরাইডস বা এম,সি,টি কিন্তু অন্যান্য তেলে থাকে লং চেইন ট্রিগলিসেরাইডস বা এল,সি,টি। এক্ষেত্রে বলে রাখি, লং চেইন ট্রিগলীসেরাইডস স্নেহ পদার্থকে আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশে ফ্যাট টিস্যু হিসেবে সঞ্চয় করে রাখে কিন্তু মিডিয়াম চেইন ট্রিগলিসেরাইডস স্নেহ পদার্থ আপনার অন্ত্র থেকে সরাসরি যকৃতে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বেশিরভাগ সেখানেই গলিয়ে ফেলে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন নারিকেল তেল এমপিসি হওয়ায় এটি আপনার শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে বাধা প্রদান করে।
- ইনফেকশন থেকে বাঁচাতেঃ নারিকেল তেল পরিপাক হওয়ার সময় এতে মনোলরিয়াম নামক এক পদার্থ তৈরি হয় যা আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন ইনজুরি থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেলের অপকারিতা
নারিকেল তেলের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। এবার চলুন নারিকেল তেল ব্যবহারে আপনার শরীরে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--- নারিকেল তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। আর এই ফ্যাট আপনার উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত নারিকেল তেল খেলে এটি আপনার রক্তনালীর ভেতরে ফ্যাটি এসিডের একটি চেইন তৈরি করে এবং ধমনীতে ফ্যাট জমে উচ্চ রক্তচাপ এর সৃষ্টি করে।
- যাদের ওজন এমনিতেই বেশি নারিকেল তেল ব্যবহারে তাদের ওজন আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নারিকেল পেলে ফ্যাটের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আর তাই নিয়মিত নারিকেল তেল খেলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সাথে শরীরে মেদও জমতে থাকবে।
- যাদের ত্বকে এলার্জি রয়েছে কিংবা চুলকানি হয় তাদের নারিকেল তেল অতিমাত্রায় ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত নারিকেল তেল ব্যবহারে এটি আপনার এলার্জির কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে নারিকেল তেল খাওয়ার ফলে আপনার ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে।
- আপনাদের যাদের ত্বক খুবই শুষ্ক এবং রুক্ষ প্রকৃতির তাদের জন্য নারিকেল তেল বেশ ক্ষতিকর।
- যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের অতিরিক্ত পরিমাণ নারিকেল তেল ব্যবহার না করাটাই ভালো।কারণ,নারিকেল তেলে রয়েছে ট্রাইগ্লিসারাইড যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- দীর্ঘদিন ধরে নারিকেল তেল খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- এ গবেষণায় দেখা গেছে নারিকেল তেলের প্রায় ৮০ ভাগই ফ্যাট যা গরুর মাংসের যে ৬০ শতাংশ বেশি। শুধু তাই নয়,যে কোন চর্বিযুক্ত খাবারের চেয়েও এই ফ্যাট দ্বিগুণ পরিমাণ। সে হিসেবে নারিকেল তেলের থেকে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাদ্য যেমন বাদাম,বীজ,তেলযুক্ত মাছ ইত্যাদি হওয়া উচিত।
চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহারের নিয়ম
চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহার করে উপকারিতা পেতে আপনাকে সঠিক নিয়মে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। এবার চলুন আপনার চুলের জন্য নারিকেল তেল ব্যবহার করার কয়েকটি উপায় জানিয়ে দিচ্ছি--- আপনি কি জানেন নারিকেল তেল আপনার চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে! এর জন্য আপনি চুলে শ্যাম্পু করার পর চুলের মধ্যভাগ থেকে শেষ পর্যন্ত নারকেল তেল দিয়ে ভালো করে আঁচড়িয়ে নিন।
- আপনি চুলে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করার পর ব্রাশ করার সময় চুলকে সুরক্ষা দিতে সামান্য পরিমাণ নারিকেল তেল ঘষে নিন।
- হেয়ার মাস্ক হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারিকেল তেল চুলে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন যাতে করে তেল আপনার চুলের গোড়ায় বসতে পারে এবং পরের দিন শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন
- চুল শ্যাম্পু করার আগে আপনি চুলে খানিকটা নারিকেল তেল লাগিয়ে নিন। এতে করে আপনার চুল আরও সফট হবে এবং শ্যাম্পু করার সময় কোন জটলা পাকবে না।
চুলে নারিকেল তেলের উপকারিতা
চুলে নারিকেল তেল সঠিক নিয়মে ব্যাবহার করলে তবেই এই তেলের উপকারিতা পরিপূর্ণ রুপে পাবেন। চুলে নারিকেল তেল ব্যাবহারের উপকারি দিক গুলোর মধ্যে রয়েছে--- চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখেঃ নিয়মিত চুলে নারিকেল তেল ব্যবহারে এটি আপনার চুলকে ধুলা বালি,ময়লা থেকে রক্ষা করে,চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করে। তাছাড়া নারিকেল তেলের ম্যাজিক্যাল লরাইট আপনার চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
- চুল কন্ডিশনিংঃ চুল কন্ডিশনিংকরতে চুলের ক্ষেত্রে নারিকেল তেল অন্যতম প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে,যা আপনার চুলকে গভীর থেকে কন্ডিশনিং করে চুলে হাইড্রেশন প্রদান করে। এই হাইড্রেশনের ফলে আপনার চুল হয়ে ওঠে ঝলমলে সতেজ এবং চকচকে।
- চুল লম্বা করতেঃ লম্বা,ঝলমলে এবং মসৃণ চুল কে না চায় বলুন তো! আপনি যদি আপনার চুলকে লম্বা করতে চান তাহলে আজ থেকে আপনার চুলে ব্যবহার শুরু করুন নারিকেলের তেল। কারণ, নারিকেল তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যে আপনার চুলকে লম্বা করতে সাহায্য করে।
- চুলের উকুন প্রতিরোধেঃ অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাবে মাথায় উকুনের সৃষ্টি হয়। আপনি অনেক উকুন নাশক স্প্রে এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করেও উকুন দূর করতে পারছেন না!! তাহলে আজ থেকে আপনার চুলে নারিকেল তেলের ব্যবহার শুরু করুন কারণ নারিকেল তেল।মাথার উকুন দূর করতে অন্যান্য যে কোন শ্যাম্পুর থেকে নারিকেল তেল ৪০% বেশি কার্যকর।
- চুলকে সূর্য থেকে সুরক্ষা দেয়ঃ নিয়মিত নারিকেলের তেল ব্যবহারে এটি আপনার চুলকে সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারে। কারণ, নারিকেল তেলে রয়েছে সূর্য সুরক্ষা ফ্যাক্টরি এটা আপনার চুলের জন্য উপকারী।
- খুশকি রোধেঃ অনেক সময় মাথার ত্বকে অতিরিক্ত ইস্ট এর কারণে খুশকির প্রবণতা দেখা দেয়। এই খুশকি দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন নারিকেলের তেল কারণ নারিকেলের তেলে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবাইয়াল বৈশিষ্ট্য যা খুশকি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
- চুল পড়া রোধ করেঃ নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে এটি আপনার চুলকে প্রয়োজনে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। ফলে গোড়া থেকে আপনার চুল হয়ে ওঠে মজবুত, শক্তিশালী এবং আপনার চুল অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পায়। শুধু তাই নয়, আপনার চুলকে ধোয়া, দূষিত বায়ু সহ বিভিন্ন প্রোটিনের ক্ষতি থেকে এড়াতেও সাহায্য করে এই নারিকেল তেল।
চুলের যত্নে অন্যান্য তেলের তুলনায় নারিকেল তেল কেন ভালো?
স্বাস্থ্যকর চুল পেতে চুলের যত্নে অন্যান্য তেলের তুলনায় নিঃসন্দেহে নারিকেল তেল বেশি উৎকৃষ্ট। একটি গবেষণায় চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন তেল বেশি উপকারী তা পরীক্ষা করতে চুল ধোয়ার আগে এবং পরে নারিকেলের তেল, খনিজ তেল এবং সূর্যমুখীর তেল চুলে প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে দেখা গেছেচুল ধোয়ার আগে বা পরে সূর্যমুখী তেল,খনিজ তেল এই দুয়ের থেকে নারিকেল তেল চুলের প্রোটিনের ক্ষতি রোধে অধিক কার্যকর। এই গবেষণার পর তারা চুলের যত্নে সূর্যমুখী থেকে নারিকেল তেলের প্রাধান্যই বেশি দিয়েছেন। তাছাড়া নারীকেল তেল লরাইক এসিড নামক একটি মাঝারি চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে গঠিত।
ফলে এটি চুলের খাদের গভীরে খুব সহজেই শোষিত হতে পারে। অন্যদিকে সূর্যমুখী তেলে রয়েছে লিনোলিক এসিড আপনার চুলের খাদের গভীরে সহজেই শোষিত হতে পারে না। সুতরাং খনিজ তেল এবং সূর্যমুখী তেল আপনার চুলকে আবরণ করতে পারে কিন্তু চুলের খাদে ঠিকমতো শোষিত হতে পারে না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন চুলের যত্নে অন্যান্য তেলের থেকে নারিকেল তেলই শ্রেষ্ঠ।
চুলের জন্য নারিকেল তেলের অপকারিতা
চুলের যত্নে নারিকেল তেলের নানাবিধ উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। বিশেষ করে আপনি যদি প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করেন। যেমন--- চুলে অতিরিক্ত পরিমাণে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে আপনার চুল এবং মাথার ত্বকে তেল জমা হতে পারে। একটা সময়ে এই জমাকৃত তেল আপনার চুলকে চর্বিযুক্ত এবং নিস্তেজ করে তুলতে পারে।
- চুলে মাত্রাতিরিক্ত নারিকেল তেল ব্যবহারে আপনার মাথার ত্বকে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে।
- অনেক সময় চুল পড়ার জন্য নারিকেল তেলকে অনেকেই দায়ী করে থাকেন কিন্তু নারিকেল তেল মোটেও এর জন্য দায়ী নয়।
প্যারাসুট নারিকেল তেলের উপকারিতা
নারিকেল তেলের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি তেল হল প্যারাসুট নারিকেল তেল। চুলে প্যারাসুট তেল ব্যবহারের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।যেমন--- চুল বৃদ্ধিতেঃ প্যারাসুট নারিকেল তেল ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ একটি তেল যা আপনার চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি যোগায়। তাছাড়া এই প্যারাসুট তেলের রয়েছে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে যা আপনার চুলের আগা ফাটা রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- চুল মজবুতকরণেঃ আপনার চুলকে গোড়া থেকে মজবুত এবং শক্তিশালী করে তুলতে চাইলে আজ থেকেই প্যারাসুট তেলের ব্যবহার শুরু করুন। কারণ এই তেলের প্রোটিন আপনার চুলের স্ট্যান্ড মজবুত করতে সাহায্য করে।
- চুলকে ময়েশ্চারাইজ করতেঃ নিয়মিত প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল ব্যবহারের ফলে এটি আপনার চুলের গভীরে প্রবেশ করে ভেতর থেকে চুলকে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া আপনার চুলের শুষ্কতা দূর করতেও সাহায্য করে এই প্যারাসুট কোকোনাট অয়েল।
- চুলকে সুরক্ষা দিতেঃ প্যারাসুট ককোনাট অয়েল এন্টিফাঙ্গাল এবং আন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ একটি তেল। ফলে আপনার চুলকে প্রাকৃতিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে প্যারাসুট নারিকেল তেলই যথেষ্ট।
- মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতেঃ আপনি যদি নিয়ম করে নিয়মিত আপনার মাথার ত্বকে প্যারাসুট নারিকেল তেল ম্যাসাজ করেন তাহলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত হবে এবং সেইসাথে খুশকি শুষ্কতা এবং চুলকানিও দূর হবে।
প্যারাসুট নারিকেল তেল কি খাওয়া যায়?
প্যারাসুট নারিকেল তেল খাওয়া যায় কিনা এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই। এই প্যারাসুট তেল মূলত মারিকো একটি কোম্পানি বাজারজাত করে থাকে। এবার আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, আপনি কি কখনো প্যারাসুট নারিকেল তেলের বোতলের গায়ে হেয়ার অয়েল (hair oil) এই লেখাটি খেয়াল করেছেন মনে করুন তো?সম্মানিত পাঠক, না প্যারাসুট তেলের বোতলের গায়ে হেয়ার অয়েল (hair oil) কথাটি লিখা থাকে না।অর্থাৎ আপনাকে বুঝে নিতে হবে এই প্যারাসুট তেল শুধুমাত্র চুলের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি হয়নি। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, প্যারাসুট কোম্পানি যেহেতু নারিকেল তেলকে চুলের তেল হিসেবেই প্রচার এবং
বাজারজাত করে তাহলে বোতলের গায়ে হেয়ার অয়েল (hair oil) শব্দটি লিখতে সমস্যা কোথায়। আপনি আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করবেন এই প্যারাসুট তেলের বোতলের সামনের দিকে কোন কিছু লিখা না থাকলেও পেছনের দিকে কিন্তু ঠিকই Eible oil (খাবার তেল) লিখা থাকে। এখানে বলে রাখি hair oil মানে হলো কসমেটিক প্রোডাক্ট এবং edible oil হল ফুড প্রোডাক্ট।
ভারতে সাধারণত এই প্রোডাক্টের ক্যাটাগরি এর উপর ভিত্তি করে ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। এই ট্যাক্সের পরিমাণ hair oil এর ক্ষেত্রে ১৮% এবং edible oil এর ক্ষেত্রে মাত্র ৫%। প্যারাসুট কোম্পানির আসল চালাকিটা কিন্তু এখানেই যে hair oil বলে প্রোডাক্টটি প্রচার করছে, কিন্তু বিক্রি করছে edible oil ক্যাটাগরিতে।
আবার ইন্ডিয়ান ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট যেন কোন সমস্যা করতেন না পারে তাই তেলের বোতলে FSSAl(food safety and standards authority of India) এই সার্টিফিকেশন জুড়ে দিয়েছে এবং সেই সাথে তেলের পুষ্টিগুণও উল্লেখ করেছে। তাহলে এখন আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন প্যারাসুট তেল আপনি নিশ্চিত মনে রান্নার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে খেতে পারেন।
অর্গানিক নারিকেল তেলের উপকারিতা
অন্যান্য নারিকেল তেলের তুলনায় অর্গানিক নারিকেল তেলের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। অর্গানিক নারিকেল তেলের বেশকিছু কার্যকরী উপকারিতা রয়েছে। যেমন-- অর্গানিক নারিকেল তেলের অন্যতম সুবিধা এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। হলে যাদের রক্তে শর্করা উচ্চমাত্রা রয়েছে তাদের জন্য এবং ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য এই তেল ভীষণই উপকারী
- নিয়মিত অর্গানিক নারিকেল তেল খেলে এটি আপনার শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এবং আপনার থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা ক ত্বরান্বিত করে।
- অনেকেই হয়তো নারিকেল তেল খাওয়ার কথা মাথাতেই রাখেন না। কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে অর্গানিক নারিকেলের তেল খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই বেড়ে যাবে।
- যারা পেটের সমস্যা বিশেষ করে বদহজমে ভুগছেন তারা এই অর্গানিক নারিকেল তেল খেতে পারেন। কারণ, এই তেল আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- অর্গানিক নারিকেল তেল নিয়মিত ব্যবহারে আপনার চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে, উজ্জ্বল এবং সিল্কি।
- ত্বকের ক্ষেত্রে আপনি অর্গানিক নারিকেল তেল লোশনের মত ব্যবহার করতে পারেন । এতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে এবং ত্বকের কালচে দাগ দূর হবে।
নারিকেল তেল খাওয়ার নিয়ম
নারিকেল তেল খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। চুল এবং ত্বকের যত্নে নারিকেল তেলের ব্যবহার আমাদের জানা থাকলেও,নারিকেল তেল কিভাবে খেতে হয় বা খাওয়ার নিয়ম আমাদের অনেকেই অজানা। এবার চলুন নারিকেল তেল খাওয়ার কিছু নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দেই--- প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনি খালি পেটে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল খেয়ে নিতে পারেন। আর সকালে নারিকেল তেল খেলে আপনার সারাদিনের শক্তি সঞ্চয় হবে।
- শুধু রান্নার ক্ষেত্রে নয় বরং চা বা কফির সাথেও আপনি এই নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি সকালে নাস্তার টেবিলে যে কোন খাবারের সঙ্গে নারিকেল তেল মিশিয়েও খেতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরনের ভাজাভুজি যেমন-ডিম ভাজি, আলু ভাজি, ফ্রেঞ্চ টোস্ট, পপকর্ন ইত্যাদিতে আপনি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
- শুধু ভাজাভুজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং আপনি রান্নার ক্ষেত্রেও তরকারিতে নারিকেল তেল নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।
প্রতিদিন কি পরিমান নারিকেল তেল খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন কি পরিমান নারকেল তেল খাওয়া উচিত জানেন কি? আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনো জানেন না যে নারিকেল তেলও খাওয়া যায়। তবে নারিকেল তেল খাওয়ার ক্ষেত্রে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল সবথেকে বেশি উপকারী। একটি গবেষণায় প্রতিদিন ২ টেবিল চামচ অর্থাৎ ৩০ মিলিলিটার নারিকেল তেল একটি কার্যকরী ডোজ হিসেবে ধরা হয়েছে।আবার কিছু কিছু গবেষণায় আপনার ক্যালরি খাওয়ার উপর নির্ভর করে প্রতিদিন 2.5 টেবিল চামচ পর্যন্ত নারিকেল তেল খাওয়ার বলা হয়েছে। তবে যাই বলুন না কেন, নারিকেল তেলে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকার কারণে এই তেল প্রতিদিন নারীদের ক্ষেত্রে ২০ গ্রাম এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩০ গ্রামের বেশি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
আপনি যদি একান্তই নারিকেল তেল নিয়মিত খেতে চান তাহলে বলবো আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খেতে পারেন। কারণ, একজন ডায়েটেশিয়ান কিংবা চিকিৎসকই আপনাকে এর সঠিক পরিমাণ জানিয়ে দিতে পারবে। প্রতিদিন কি পরিমান নারকেল তেল খাওয়া উচিত আশা করছি এ বিষয়ে বুঝতে পেরেছেন।
ত্বকে নারিকেল তেলের উপকারিতা
নারকেল তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে তো জেনেছেন আজকের আলোচনায়। এবার ত্বকে এই তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে জানাবো। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার চট জলদি সমাধান পেতে আপনি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, এই নারিকেল তেল আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি তেল। ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে আপনি যে সমস্ত উপকার পেতে পারেন--- নারিকেল তেলের এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বককে ফাংগাল এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
- আপনার ত্বকের কালো ছোপ তার ট্যান পোড়া রোদে পোড়া দাগ দূর করতে নারিকেল তেল হতে পারে একটি কার্যকরী উপাদান। নিয়মিত ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বকের পোড়া ভাব দূর করার পাশাপাশি ত্বককে ভেতর থেকে মসৃণ করে তোলে।
- নারিকেল তেল আমাদের ঠোঁটের জন্য প্রাকৃতিক লিপ বাম হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে আপনি আপনার ঠোঁটফাটা ঠোঁটের শুষ্কতা ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি থেকে ঠোঁটকে বাঁচাতে পারেন। তাছাড়া নারিকেলের তেল আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতে এবং ঠোঁটের উজ্জ্বলতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- কিউটিকলের যত্নে নারিকেল তেল একটি অনবদ্য কার্যকরী উপাদান। নিয়মিত এবং সঠিক পরিমাণে কিউটিকলে নারিকেল তেল ব্যবহারের ফলে তা প্রানবন্ত হয়ে ওঠে।
- ত্বক সফট করতে নারিকেল তেলের প্যাক ব্যবহার করলে আপনার ত্বক হবে সফট এবং মসৃণ।
- সংক্রমণ রোধে অপরিশোধিত নারিকেলের তেল আমাদের ত্বকের জন্য ভীষণই উপকারী। তাছাড়া তোকে নিয়মিত নারিকেলের তেল ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বককে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে।
- ত্বকের আদ্রতা রক্ষায় নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে এটি আপনি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
- আপনি সপ্তাহে অন্তত একদিন নারিকেল তেল দিয়ে আপনার মুখ ম্যাসাজ করুন।এতে করে আপনার ত্বকের ক্লান্তি ভাব দূর হবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
- অনেক সময় রোদের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে। এই সময় আপনি সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, এতে রয়েছে এসপিএফ-৫ উপাদান যা আপনার ত্বকের জন্য উপকারী।
- অনেকের আবার চোখের ভ্রু খুবই পাতলা থাকে। তাই চোখের ভ্রু ঘন করতে আপনি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহারের অপকারিতা
ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে নারিকেল তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। শুধু নারিকেল তেল নয়, অন্য যে কোন প্রসাধনীও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।ত্বকের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহারে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো আপনার জেনে রাখা উচিত। যেমন-- অনেকেই আছেন যারা নারিকেল তেল মুখে সারা রাতভর লাগিয়ে রাখেন। এটি কখনোই করবেন না। কারণ, নারিকেল তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট। যার ফলে দীর্ঘক্ষণ নারিকেল তেল ত্বকে লাগিয়ে রাখলে এই ফ্যাট আপনার ত্বকের ছিদ্র রন্ধ্র বন্ধ করে দেয়।
- যাদের ত্বক স্পর্শকাতর তাদের সীমিত পরিমাণে নারিকেল তেল ব্যবহার করা উচিত। কেননা স্পর্শকাতর ত্বকের ক্ষেত্রে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে নারিকেল তেল ব্যবহারের ফলে এলার্জি বা চুলকানি দেখা দিতে পারে।
- অধিক পরিমাণে নারিকেল তেল ব্যবহারে অনেক সময় আপনার ব্রনের আবির্ভাব হতে পারে।
- তাছাড়া আপনাদের যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত তারা নারিকেল তেল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।কারণ, তৈলাক্ত ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে রাশ এবং লালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
- যদিও নারিকেল তেল প্রদাহ বিরোধী কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে এই তেল প্রদাহজনিত নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- যাদের ত্বক অতিরিক্ত ব্রণ প্রবণ তাদের ত্বকের জন্য নারিকেল তেল খুব একটা উপকারী নাও হতে পারে।
- ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণ নারিকেল তেল ব্যবহারের ফলে ত্বকের ওয়েল সিক্রিয়েশন বেড়ে যায় এবং ত্বক আরো তৈলাক্ত হয়ে ওঠে।ফলে ত্বক সর্বদা আঠালো থাকে এবং ধুলোবালি ত্বকে লেগেই থাকে।
ত্বকের যত্নে নারিকেল তেলের ফেসপ্যাক
নারিকেল তেলের নাম শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে চুলের কথা। কারণ, আমরা চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে বেশি অভ্যস্ত।কিন্তু আপনি কি জানেন শুধু চুল নয় বরং ত্বকের ক্ষেত্রেও এই নারিকেল তেল দিয়ে আপনি বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এবারে চলুন নারিকেল তেলের ফেসপ্যাক আপনি কিভাবে তৈরি করবেন তা জেনে নিন-লেবুর রস,নারিকেল তেল এবং মধুর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
নারিকেল তেল ও হলুদের ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
হলুদ গুঁড়ো,নারিকেল তেল এবং কলার ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
নারিকেল তেল,জায়ফল এবং টক দই এর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- নারিকেল তেল- ১ টেবিল চামচ
- মধু- ২ চা চামচ এবং
- লেবুর রস- ১/২ চা চামচ
নারিকেল তেল ও হলুদের ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- নারিকেল তেল- ১ টেবিল চামচ এবং
- হলুদ গুঁড়ো- ১ চিমটি
হলুদ গুঁড়ো,নারিকেল তেল এবং কলার ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- নারিকেল তেল- ১ টেবিল চামচ
- পাকা কলা- ১/২ টি এবং
- হলুদ গুঁড়ো- ১ চিমটি
নারিকেল তেল,জায়ফল এবং টক দই এর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- নারিকেল তেল- ১ টেবিল চামচ
- জায়ফল -- ১চা চামচ এবং
- টক দই- ১ টেবিল চামচ
নারকেল তেলের এই ফেস্ট প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক যেমন আদ্র থাকবে তেমনি আপনার ত্বকের বলি রেখাও দূর হবে।এই ফেসপ্যাক গুলোর মধ্যে আপনি আপনার সুবিধা মত যে কোন একটি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেলের এই ফেসপ্যাক গুলো নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ব্রনের প্রকোপ কমবে এবং ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত।
নারিকেল তেলের অন্যান্য ব্যবহার
চুল,ত্বক এবং স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ছাড়াও নারিকেল তেলের আরো নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। যেগুলো হয়তো আপনার অজানা। এবারে চলুন নারিকেল তেল আর অন্যান্য কি কাজে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে জেনে নিন-- মেকআপ ফাউন্ডেশনঃ প্রাইমার মেকাপের ফাউন্ডেশনের জন্য এই তেল খুব ভালো প্রাইমার। ত্বকে মেকআপ করার আগে আপনি কিছুটা তেল নিয়ে আপনার ত্বকে মাখুন এবং তেল শুষে নিতে খানিকটা সময় দিন। এবার আপনি ফাউন্ডেশন বা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে করে দেখবেন আপনার মেকআপ যেমন মসৃণ হবে তেমনি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ীও হবে।
- মেকআপ রিমুভার হিসেবেঃ মেকাপের প্রাইমারি ফাউন্ডেশন হিসেবে যেমন নারিকেল তেলের ভূমিকা অনন্য, ঠিক তেমনি আপনি মেকাপ রিমুভার হিসেবেও নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, সবথেকে ভালো ওয়াটার প্রুভ মাশকরাও নারিকেল তেল সহ্য করতে না। মেকআপ রিমুভার হিসেবে আপনি সরাসরি নারিকেল তেল হাতে নিয়ে অথবা একটি তুলোর সাহায্যে মেকআপ রিমুভ করতে পারেন। এভাবে মেকআপ রিমুভ করলে আপনার ত্বক মেকাপের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ থেকে কিছুটা হলেও বাঁচবে।
- শরীর মসৃণ রাখতে নারিকেল তেলঃ আপনি আধা কাপ পরিমাণ নারিকেল তেল এবং খুব মিহি করে গুড়ো করে নেওয়া চিনি একসাথে মিশিয়ে একটি বডি স্ক্রাব তৈরি করে ফেলুন। এবার স্নানের সময় এই বডি স্ক্রাব আপনার পুরো শরীরে ভালো করে ব্যবহার করুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে আপনার কোমলীয় ত্বক দেখে আপনি নিজেই অবাক হবেন।
- ক্যান্ডি তৈরিতে নারিকেল তেলঃ ক্যান্ডি!! Candy নাম শুনেই হয়তো আপনার জিভে জল চলে এসেছে। এই ক্যান্ডি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় নারিকেলের তেল। নারিকেল তেলে প্রায় 90% স্নেহ পদার্থ পরিপূর্ণরূপে রয়েছে ফলে খুব সহজেই এই তেল জমাট বেঁধে যায় যা কিনা ক্যান্ডি প্রস্তুত করতে ভীষণ জরুরি। আর তাইতো ক্যান্ডি তৈরিতে নারিকেল তেলের প্রাধান্যই বেশি অন্যান্য তেলের থেকে।
- পুরোনো দাগ অপসারনেঃআপনি আপনার বাসার ফার্নিচারে বা কার্পেট অনেক দিনের পুরনো দাগ দূর করতে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনি সামান্য বেকিং সোডার সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে ঘষলেই অনেক পুরনো দাগও দূর হয়ে যাবে নিমেষের মধ্যে।
- নাইট ক্রিমঃ কেউ কেউ আবার ত্বকের ফোলা ভাব, মেছতা দূর করতে নাইট ক্রিম হিসেবেও নারিকেল তেল ব্যবহার করে থাকেন।
- নেল্পালিশ তুলতেঃ নখ থেকে নেলপালিশ তুলতে আপনি নারিকেল তেল রিমুভার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- লোম অপসারনেঃ আপনার শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করার আগে উক্ত স্থানে আপনি নারিকেল তেল লাগিয়ে নিন তাতে ব্যথা কম হবে এবং আরাম পাবেন।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সামান্য নারিকেল তেল দিয়ে কুলকুচি করে নিন। এতে আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর ।
- অন্যান্যঃ অনেক সময় ব্যাগের চেইন,প্যান্টের চেইন আটকে গেলে সহজে খুলতে চায় না। এক্ষেত্রে আপনি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
সম্মানিত পাঠক, ত্বকে নারিকেল তেলের এই ব্যবহারগুলো আপনার প্রাত্যহিক জীবনে কাজে আসবে আশা করছি।
নারিকেল তেলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান
নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান ছাড়াও নারিকেল তেলে রয়েছে ভিটামিন ই কিন্তু কোনো ফাইবার নেই।প্রতি ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেলে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টিমূল্য--পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরি | ১২১ কিলো ক্যালরি |
প্রোটিন | ০ গ্রাম |
ফ্যাট | ১৩.৫গ্রাম |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১১.২ গ্রাম |
কোলেস্টেরল | ০ মিলিগ্রাম |
নারিকেল তেলের দাম কত ২০২৪
আমরা কমবেশি সকলেই নারিকেল তেল ব্যবহার করে থাকলেও এর দাম সম্পর্কে অবগত নই। আবার, আপনারা অনেকেই জানতে চান কোন নারিকেল তেলের দাম কত। বর্তমানে আমাদের দেশে কয়েক ধরনের নারিকেল তেল পাওয়া যায় তেল ভেদে এর দামও একেক রকম হয়ে থাকে। এবার চলুন নারিকেল তেলের প্রকারভেদে বর্তমান বাজারে এর দাম কত হতে পারে তা জেনে নিন-- ঘানি ভাঙ্গা নারিকেল তেল (১লিটার)- ৬০০-৬৫০ টাকা
- খাঁটি অর্গানিক নারিকেল তেল (১লিটার)- ১৫০০-১৮০০ টাকা
- এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেল (৫০০গ্রাম)- ৫০০-৫৫০ টাকা
- প্যারাসুট নারিকেল তেল (৫০০গ্রাম)- ৩০০-৩২৫ টাকা
লেখকের প্রতিক্রিয়া
নারিকেল তেলের উপকারিতা,অপকারিতা এবং এর ব্যবহার বিধি সম্পর্কে আপনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আশা করছি, আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে বেশ বোধগম্য হয়েছে।শুধু ত্বক বা চুলের যত্নেই নয় বরং সময়ের সাথে সাথে নারিকেল তেলের স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্য রান্নার ক্ষেত্রেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল হয়ে উঠেছে।নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে আপনি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক সহ একাধিক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সুতরাং, সুস্থ সবল জীবন যাপন করতে চাইলে আপনি আজ থেকেই আপনার দৈনন্দিন খাবারের সাথে নারিকেল তেল খাওয়ার কথা ভুলবেন না। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url