নিম পাতার ২০টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
নিম-পাতার-২০-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
কারণ, আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেল আলোচনা করব নিম পাতার  বহুমুখি উপকারিতা ও গুটিকতক অপকারিতা এবং নিম রস খেলে কি হয় সম্পর্কে। সাথে আরো আলোচনা করব নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম এবং চুল ও ত্বকের জন্য নিমপাতার উপকারিতা।

পোস্ট সূচিপত্রঃ নিম পাতার ২০টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার বিস্ময়কর কিছু উপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কমবেশি প্রায় সকলেই জানেন। নিম এমন একটি ঔষধি গাছ যার পাতা, ছাল, ডাল সব কিছুই কাজে লাগে, কোন কিছুই ফেলনা নয়। তাছাড়া বর্তমানে নিমের পাতা বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। সম্মানিত পাঠক, আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার উপকারিতা গুলো কি কি --
  • ক্ষত সারাতেঃ অনেক সময় বিভিন্ন কীটপতঙ্গ যেমন ভিমরুল, মৌমাছি কামড়ালে তাতে প্রচন্ড জ্বালাপোড়ার উদ্রেগ হয়। এই সময় আপনি যদি নিম পাতা পেটে এর পেস্ট আপনার ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন তাহলে জ্বালাপোড়া দ্রুতই উপসমহবে। তাছাড়া আপনার শরীরে কোন আঘাত জনিত ক্ষত স্থানে নিম পাতার পেস্ট লাগালেও তা দ্রুত সেরে যাবে।
  • চোখের সমস্যা দূর করেঃ আপনি আপনার চোখের যে কোন ধরনের প্রদাহু ক্লান্তি লালচে ভাব দূর করার জন্য কিছু নিম পাতা পানিতে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ করার পর পানিটুকু ছেঁকে ঠান্ডা করে নিন এবং এই পানিতে আপনার চোখ ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চোখের সকল সমস্যা দূর করে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ কিছু নিম পাতা গুঁড়ো করে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে পান করতে পারেন, তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
  • কান ফোড়া সারাতেঃ কান ফোড়া সারাতেও নিম পাতার ব্যবহার রয়েছে। কানফোড়া সারাতে আপনি কিছু নিম পাতা গুড়োর সাথে মধু মিশিয়ে নিন এবং সেবন করুন। আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের ফোড়া সারাতে এই মিশ্রণের কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট।
  • ব্রণ দূর করতেঃ ত্বকের ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেশ কার্যকর। ত্বকের ব্রণ দূর করতে আপনি নিম পাতা গুঁড়ো করে পেস্ট বানিয়ে আপনার ত্বকের ব্রণে লাগান। এভাবে যতদিন ব্রণ না শুকাবে ততদিন ব্যবহার করে যান নিম পাতার পেস্ট। তাছাড়া ত্বকের যে যেকোনো ধরনের ফুসকুড়ি, ডার্ক স্পট এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধান নিম পাতা বেশ কার্যকর।
  • ত্বকের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধেঃ নিম পাতা গুঁড়ো করে পেস্ট তৈরি করে তার সাথে হলুদ মিশিয়ে ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের যেকোনো ধরনের একজিমা এবং ত্বকের প্রদাহ জনিত রোগ অতি দ্রুত সেরে যাবে।
  • ভাইরাস প্রতিরোধেঃ প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাস রোগ প্রতিরোধে নিমপাতা ব্যবহৃত হতো। চিকেন পক্স, হাম এবং অন্যান্য চর্মরোগ হলে তাতে নিম পাতার পেস্ট লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানিতে স্নান করলে ত্বকের চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া দূর হবে। 
নিম-পাতার-২০-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
  • এলার্জি দূর করতেঃ আপনার এলার্জি সমস্যা থাকলে আপনি প্রতিদিন নিম পাতা ফুটিয়ে সেই জলে স্নান করুন। এছাড়াও কাঁচা হলুদ এবং নিমপাতা একসাথে বেটে সেই পেস্ট আপনি আপনার শরীরে লাগাতে পারেন। এতে আপনার এলার্জির প্রকোপ অনেকটাই কমে যাবে।
  • ম্যালিরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরীঃ নিম পাতার সেদ্ধ পানি ঠান্ডা করে একটি স্প্রেই বোতলে ভরে রাখুন। এরপর এটি নিয়মিত ঘরে স্প্রে করলে আপনার ঘরে মশার উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে। ফলে ম্যালেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পাবে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতা চমৎকার কাজ করে। আপনারা যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিন সকালে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিমপাতা বেটে খাবেন। এতে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
  • উকুন দূর করতেঃ উকুন দূর করতেও নিমপাতা ব্যবহৃত হয়। আপনার মাথায় উকুনের প্রকোপ হলে আপনি সপ্তাহে তিনবার করে টানা দুই মাস নিমের পেস্ট বানিয়ে আপনার মাথায় ব্যবহার করুন এবং এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুব সহজেই আপনার মাথার উকুন দূর হবে।
  • বাতের ব্যথা দূর করেঃ নিমের তেল বাতের ব্যথা দূর করতেও সক্ষম। তাছাড়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বাতের ব্যথা দূর করতে নিমপাতা নিমের বীজ এবং বাকল ব্যবহৃত হতো।
  • দাঁতের রোগ নিরাময়েঃ মজবুত এবং শক্তিশালী তার পেতে চাইলে আপনি নিয়মিত নিম পাতা, ছাল বা মিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজুন। এতে আপনার বিভিন্ন দন্তরোগ খুব সহজেই নিরাময় হবে। তাছাড়া নিমের ডাল যে দাঁতের পক্ষে উপকারী সে কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আপনার মুখের দুর্গন্ধ এবং দাঁতের জীবাণু প্রতিরোধেও এই একটি বেশ কার্যকরী।
  • রক্ত পরিষ্কার করেঃ আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো রক্ত। এই রক্ত যদি পরিষ্কার না থাকে এবং রক্তচাপ আপনার নিয়ন্ত্রণে না থাকে সে ক্ষেত্রে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতাও দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ত পরিষ্কার করতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে নিমপাতা। কারণ নিম পাতার রস সেবনে এটি শরীর থেকে রক্তের দূষিত পদার্থ অপসারণ করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • ওজন হ্রাস করেঃ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড এবং ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে আমাদের ওজন প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আপনি আপনার ওজন নিয়ে বেশ চিন্তিত কিভাবে ওজন কমানো যায় বা ওজন কোনভাবেই কমাতে পারছেন না। এক্ষেত্রে বলবো আপনি নিম পাতার রস সেবন করুন। কারঅ, সঠিক নিয়মে নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি আপনার ওজন কমাতেও সক্ষম। 
  • পাকস্থলীকে সুস্থ রাখেঃ নিম পতা পাকস্থলীর জন্য অনেকটাই উপকারী। আমরা সারাদিনে যা খাবার খাই তা পাকস্থলীতে যে জমা হয় এবং সেখান থেকে খাবার হজম হয়ে আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। আর এই পাকস্থলী যদি সুস্থ না থাকে তাহলে হজমে সমস্যা হয় এবং এতে করে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই আপনি আপনার পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে চাইলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস পান।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত নিম পাতার সাথে কাঁচা হলুদ বেটে পেস্ট করে ত্বকে ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি আপনার স্কিনটোনও ঠিক হবে।
  • কৃমিনাশক হিসেবে নিম পাতাঃ বাচ্চাদের পেটে কৃমি হলে বাচ্চার অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। অনেক সময় পেট ব্যথা করে এবং পেট ফুলেও যায়। বাচ্চাদের এই পেটে কৃমি দূর করতে পারে একমাত্র নিম পাতার রস।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ নিম পাতার রসে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য। আর এই ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য কোলন ক্যান্সার,ত্বকের ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং ফুসফুসের মত ক্যান্সার প্রতিরোধেও সক্ষম।
  • হজম ক্রিয়া উন্নত করেঃ যাদের বদহজম,পেটফাঁপার মত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য নিম পাতা হতে পারে একটি প্রাকৃতিক মহৌষধ। কারণ, নিয়মিত নিয়ম করে নিম পাতার রস খেলে এটি আপনার শরীর থেকে টক্সিন এবং বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করে আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে।
  • হাড় শক্ত করেঃ নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শক্তিশালী ক্যালসিয়াম এবং খনিজের উপাদান। আর এই ক্যালসিয়াম আপনার হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে
  • পোকামাকড় তাড়াতেঃ পোকামাকড় চারাতেও নিমপাতা বেশ কার্যকর। আপনি নিম পাতা পুড়িয়ে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
  • হাঁপানি ও এজমা প্রতিরোধেঃ যারা হাঁপানি ও অ্যাজমার মত কষ্টকর ব্যাধিতে ভুগছেন তাদের জন্য এটি একটি সুখবর ঘটে আপনার বাড়ির চারপাশে থাকা নিম গাছটি আপনার সুস্থতার কারণ হতে পারে। তাছাড়া নিম গাছের ফুল এবং ফল থেকে প্রাপ্ত নিম তেল আপনার হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে।
  • আলসার দূর করেঃ আপনি যদি নিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে দৈনিক এক গ্লাস জলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার পেটের আলসার রোগের উপশম হবে।

নিম পাতার অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতাই বেশি অপকারিতা থেকে। তাছাড়া নিম পাতার এমন কোন তীব্র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই যাতে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তারপরেও নিমের কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েই গেছে। তো চলুন নিম পাতায় অপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • খালি পেটে দীর্ঘদিন ধরে নিম পাতা খেলে এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সুতরাং দীর্ঘদিন ধরে নিম পাতা সেবন না করাটাই ভালো।
  • যারা গর্ভবতী রয়েছেন তাদের জন্য নিমপাতা একেবারেই উপযোগী নয়। কারণ, নিম পাতা অনেক সময় আপনার গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। সেই হিসেবে আপনার দিনে সর্বোচ্চ দুইটি নিমপাতা খাওয়া উচিত। এর অতিরিক্ত ব্যবহার করলে এটি উপকারের পরিবর্তে আপনার অপকার বয়ে আনবে।
  • যারা নিম্ন রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন তারা নিম পাতা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ নিমপাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • যেকোনো ধরনের অপারেশনে অন্তত দুই সপ্তাহ পূর্ব থেকে নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
  • দীর্ঘদিন ধরে নিম পাতা খাওয়ার ফলে এটি আপনার বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়েও উঠতে পারে। ফলে যারা সন্তান নিতে চাচ্ছেন তারা নিম পাতা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
  • নিম পাতা খাওয়ার পর কারো ডায়রিয়া মাথা ঘোরা মাথা ব্যথা বা বমি বমি ভাব হয় সে ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ আপনি নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিন।
  • মাত্র অতিরিক্ত নিম পাতার রস খেলে এটি আপনার পাকস্থলীর বা লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • খালি পেটে অতিরিক্ত নিম পাতা খেলে এটি স্টোমাটাইটিস এর মত এলার্জি সৃষ্টি সৃষ্টি করতে পারে।
  • সাধারণত বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে নিম পাতার কোন বিষক্রিয়া দেখা যায় না তবে শিশুদের ক্ষেত্রে নিম পাতার বিষক্রিয়ার নিদর্শন পাওয়া গেছে। একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, নিমপাতার একটি সক্রিয় যৌগ উপাদান এজারডিরক্তিন যা শিশুদের ক্ষেত্রে বিষক্রিয়াজ সৃষ্টি করতে পারে
এই অপকারিতা থেকে রক্ষা পেতে আপনি নিয়ম মেনে নিম পাতা খাবেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত নিম পাতা কখনোই খাবেন না। আর গর্ভকালীন সময়ে নিম পাতা খেতে চাইলে আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবে খাবেন।

নিম পাতার নানাবিধ ব্যবহার

ইতিমধ্যেই আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এবার আপনাদের জানাবো দৈনন্দিন জীবনে নিম পাতার নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক--
  • শরীরের কোন স্থানে আঘাত জনিত ক্ষত, কাটা, পোড়া জায়গায় নিম পাতার রস লাগালে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনি উপকৃত হবেন।
  • আপনি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চাইলে পানির সাথে নিম পাতার রস মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে ফেসওয়াশ করুন। এতে করে আপনার ত্বক দিন দিন উজ্জ্বল হতে শুরু করবে।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিনটি নিমপাতা চিবিয়ে খান। এতে আপনার পাকস্থলী সুস্থ থাকবে।
  • অনেকেই আছেন যারা নিম পাতার কাঁচা রস খেতে পারেন না। যারা তিতার কারণে নিম পাতার রস খেতে অভ্যস্ত নন কিন্তু নিম পাতা খেতে চায় সেক্ষেত্রে আপনি সকালে অথবা বিকেলে চায়ের সাথে নিম পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • আপনার শরীরে থাকা দুর্গন্ধ এবং চুলকানি দূর করার জন্য আপনি একটি পাত্রে পানি এবং কয়েকটি নিম পাতা নিয়ে সেদ্ধ করুন এবং সেই পানি দিয়ে স্নান সেরে ফেলুন। এতে আপনার শরীরের দুর্গন্ধ বের হবে এবং এটি আপনার স্কিনের জন্যও অনেক উপকারী।
  • ফেসমাস্ক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নিমপাতা রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে সংরক্ষণ করে রেখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে এগুলো আপনি আপনার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন।
  • নিম গাছের ডাল আপনি ব্রাশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার দাঁত মজবুত শক্তিশালী হবে এবং আপনার মুখের দুর্গন্ধও দূর হবে।
  • মাথার ত্বকে অনেকেরই এলার্জির মত চুলকানি হয়।নিম পাতার রস আপনি মাথায় নিয়মিত লাগালে আপনার মাথার চুলকানি চুলকানি দূর হবে এবং চুলের শুষ্কতা ও কমে যাবে।

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতার উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনাকে নিয়ম মেনে নিম পাতা খেতে হবে। আপনি ইচ্ছে করলেই আপনার ইচ্ছামত যত খুশি ততটা খেতে পারবেন না, তাতে উপকার তো হবেই না বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। আর তাই নিম পাতা খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়মগুলো কি কি চলুন জেনে নিন-
  • নিমপাতা অবশ্যই খালি পেটে খেতে হবে। আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম মেনে ২-৩ টি নিমপাতা চিবিয়ে খাবেন।
  • অতিরিক্ত তিক্ততার কারণে যারা নিমপাতা চিবিয়ে খেতে অভ্যস্ত নন, তারা নিমপাতা গুঁড়ো করে পানির সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। শুধু পানি নয় বরং চিনি বা মধুর সাথে বা মিষ্টি জাতীয় যেকোনো খাবারের সাথে এই নিম পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে আপনি খেতেই পারেন।
  • আবার আপনি নিম পাতা পাতা পাটায় বেটে সেটিকে ছোট ছোট ট্যাবলেট এর মত শেপ দিয়ে রোদে শুকিয়ে পরবর্তীতে পানির সাথে ট্যাবলেট হিসেবেও খেতে পারেন।
  • তাছাড়া তরকারিতে আপনি ধনেপাতার পরিবর্তে নিম পাতা ব্যবহার শুরু করতে পারেন।

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

 সকালে খালি পেটে নিমের পাতার রস খেলে কি হয় এ প্রশ্ন আমাদের মনে অনেকেরই।  নিম পাতার উপকারিতা পেতে আপনাকে খেতে হবে নিম পাতার রস। সম্মানিত পাঠক, খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে আপনার কি হতে পারে তা জেনে নিন--  
  • প্রতিদিন খালিপেটে নিম পাতার রস খেলে এটি আপনার রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করবে এবং সেই সাথে আপনার রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহনতন্ত্রকে উন্নত করবে।
  • নিম পাতার রসে অত্যন্ত শক্তিশালী যৌগিক উপাদান রয়েছে যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করতে সক্ষম এবং আপনার মুখ গহ্বরের বিভিন্ন রোগ, মুখের দুর্গন্ধ এবং মাড়ির রোগ দূর করতে পারে।
  • নিম পাতার রস ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য একটি প্রাকৃতিক মহৌষধ। আপনি প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ নিম পাতার সকালে খালি পেটে টানা তিন মাস ধরে সেবন করলে আপনার ডায়াবেটিস রোগ ভালো হবে। এছাড়া নিম পাতার রস খেলে ইনসুলিন নেওয়ার প্রবণতা ৩০%-৭০% কমে যায়।
  • যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন,তাদের জন্য উপাদেয় পথ্য হলো নিম পাতার রস। আপনি নিয়মিত নিয়ম মেনে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে এটি আপনার শরীরের ভেতর থেকে রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করে।
  • শুধু তাই নয়, নিয়মিত নিম পাতার রস সে বলে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা সহ পেটের যাবতীয় সকল সমস্যা দূর করে। 
নিম-পাতার-২০-টি-কার্যকরী-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
  • যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত নিম পাতার রস সেবন করলে ভালো উপকার পাবেন। কারণ, নিম পাতার রস কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি প্রতিদিন নিম পাতার রস কিংবা নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে এর রস পান করেন, সেক্ষেত্রে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকটাই হ্রাস পাবে। 
  • আবার আপনি সামান্য মধুর সাথে ২৫-৩০ ফোটা নিম পাতার রস মিশিয়ে খেলে জন্ডিস রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
  • খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে আপনার পাকস্থলীতে থাকা ক্ষতিকর বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি মারা যায়।
  • নিয়মিত নিয়ম মেনে নিম পাতার রস সেবনে আপনার ত্বকের বাহ্যিক উজ্জ্বলতা দিনকে দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • তাছাড়া নিম পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট, ইনফ্লামেন্টরি এবং এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে আপনার শরীরে কি কি হতে পারে।   নিম পাতার রসের গুণের শেষ নেই। তাই আপনি যদি নিম পাতার রস খেতে চান বা নিয়মিত নিম পাতার রস সেবনের পরিকল্পনা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে বলবো আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে তবেই সেবন করবেন।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই এর রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে দীর্ঘদিন টানা নিম পাতার রস খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এতে প্রাথমিকভাবে উপকার পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন একটানা খাওয়ার ফলে আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। 
সুতরাং নিম পাতার রস কোন নিয়মে খেলে আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না সেটিও জানা একান্ত প্রয়োজন। এবার চলুন আপনি কিভাবে নিম পাতার রস খাবেন সে সম্পর্কে জানিয়ে দিই --
  • খালি পেটে নিম পাতার রস অল্প পরিমাণে খেলেও তা ভরা পেটে ফুল গ্লাস খাওয়ার মতো কাজ করে।খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন সকালে 1-2 টি নিম পাতার রস খাবেন, এর বেশি অবশ্যই নয়। আপনি এই নিয়মে দীর্ঘদিন একটানা খেলেও তাতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
  • দ্রুত ফলাফল পাওয়ার জন্য অনেকে আবার খালি পেটে এক গ্লাস পরিমাণ নিম পাতা রস খেতে চান। এ বিষয়ে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, সর্বোচ্চ ৭ দিন পর্যন্ত একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ খালি পেটে এক গ্লাস পরিমাণ নিম পাতার রস খেতে পারেন। ৭ দিনের বেশি একটা না খালি পেটে নিমপাতার রস খাওয়া মোটেও উচিত নয় বরং একদিন পরপর সেবন করলে সেটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ভালো।
  • নিম পাতার রস অধিক তিক্ত স্বাদযুক্ত হওয়ায় আপনি এর সাথে সামান্য চিনি বা মিছরি মিশিয়েও খেতে পারেন। তাছাড়া চিনি বা মিছরির সাথে নিম পাতার রস মিশিয়ে খেলে কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ওজন কমাতে আপনি নিমপাতা পানিতে ফুটিয়েও এর নির্যাস গ্রহণ করতে পারেন। এর জন্য আপনি ২-৩ গ্লাস পানি ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে কয়েকটি নিমপাতা ছেড়ে দিন। এরপর পানি ফুটতে শুরু করলে তাতে আধা  চা চামচ গোলমরিচ এর গুড়ো মিশিয়ে নিন। এবার পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে এলে ছেকে এর নির্যাসটুকু বের করে নিন।
  • তারপর স্বাদ মতো আপনি মধু এবং লেবুর রস যোগ করে খেয়ে নিন। টানা 15 দিন প্রতিদিন সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠে নিম পাতার এই পানীয়টি গ্রহণ করলে আপনার ওজন তরতরিয়ে কমতে থাকবে। যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য নিম পাতা খাওয়ার এই নিয়মটি বেশ কার্যকরী হবে।
সম্মানিত পাঠক, অনেক সময় নিম পাতার রস সেবনে নানান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন- অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, মুখে ব্রনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। নিম পাতার রস সেবনের ফলে যদি আপনারও এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে আপনি নিম পাতা রস খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিম পাতার রস সেবন করুন।

চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা

চুলের জন্যও নিম পাতার উপকারিতাই বেশি অপকারিতার থেকে। অনেকে খুশকির সমস্যায় ভুগতে থাকেন, অনেকের আবার মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়তে শুরু করে। আপনিও যদি এই সমস্যার মুখোমুখি হন তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন নিম পাতার হেয়ার প্যাক। নিম পাতার এই হেয়ার প্যাক ব্যবহারের ফলে আপনি কি কি উপকার পেতে পারেন তা জেনে নিন--
  • নিম পাতায় রয়েছে একাধিক পুষ্টি উপাদান যা আপনার রুক্ষ চুলের হাল ফেরাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে আপনার স্ক্যাল্পকেও পুষ্টির যোগান দেয়।
  • নিয়মিত নিমের হেয়ার প্যাক ব্যবহারের ফলে এটি আপনার চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে তোলে।
  • আপনার স্ক্যাল্পে কোন ফাংগাল ইনফেকশন থাকলে সেটিও সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে এই নিমপাতা।
  • নিম পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই যা আপনার চুলের জেল্লা ফেরাতে এবং চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
  • নিম পাতা ব্যবহারে এটি আপনার চুলের বৃদ্ধি এবং গ্রোথের পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
  • নিম পাতা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার চুলকে অকালপক্কতার হাত থেকে রক্ষা করে অর্থাৎ অসময়ে চুল পাকা রোধ করে।
  • নিম আপনার চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশন হিসেবে কাজ করে। এর ফলে আপনার চুল হয় নরম, ঝলমল এবং উজ্জ্বল।

ত্বকের যত্নে নিমপাতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ত্বকের যত্নেও নয়। অনেক সময় ত্বকের অযত্ন এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে আমাদের ব্ল্যাক হেডস এবং পিম্পলস মত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাছাড়া রোদের তাপে এবং বাইরের ধুলোবালি জমে নাজেহাল হয়ে ওঠে আমাদের ত্বক। আপনার ত্বককে সুরক্ষা দিতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন নিমপাতা। এবার আপনি জেনে নিন আপনার ত্বকের যত্নে নিম পাতার কিছু ব্যবহার-
ব্রণ নিরাময়ে নিম পাতার ব্যবহারঃ ব্রণ ছোট বড় সকলেরই অতি সাধারণ একটি সমস্যা।বিশেষ করে যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের এই ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ত্বকের এই ব্রণ দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন নিমপাতা। ব্রনের পাশাপাশি আপনার ত্বকে ব্রনের জন্য যে ব্রেকআউট গুলো দেখা যায়, সেগুলোর সমাধানও নিম পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখে। এবার চলুন তবে আপনি নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন--
  • নিম পাতা এবং হলুদ এর পেস্ট আপনার ত্বকে ব্যবহার করুন এটি আপনার ত্বককে খুব বেশি তৈলাক্ত না করে শুষ্কতা থেকে মুক্তি দেয়।
  • আপনি নিমপাতা জলে সিদ্ধ করে সেটির টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনার ত্বকে যদি অতিরিক্ত ব্রনের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে আপনি নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • ব্রনের কালচে দাদ দূর করতে আপনি নিম পাউডার সামান্য জলের সাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে, সেই পেস্ট ব্রনের দাগের উপর লাগান। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার ব্রণের কালচে দাগ নিমিষেই গায়েব হয়ে যাবে।
  • আপনি নিমপাতা, চন্দন কাঠের গুঁড়ো, গোলাপ জল এবং তুলসী একসাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে সেটি আপনার মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পরে ঠান্ডা জলে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
  • নিম পাতার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে আপনার মুখে লাগান। আপনার ত্বক যদি খুব সুস্থ হয় সেক্ষেত্রে এই পেস্টের সাথে আপনি সামান্য মধু এবং দই যোগ করতে পারেন।
  • আবার ব্রণ দূর করতে আপনি নিমপাতা সিদ্ধ করে তার মধ্যে বিট এবং কমলা লেবুর খোসা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। বিট এবং কমলালেবুর খোসা নরম হয়ে এলে সেটা দিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। এতেও আপনার ব্রণ সেরে যাবে।
  • তাছাড়া স্নানের সময় আপনি নিম সাবান কিংবা নিম পাতা ভেজানো জল দিয়েও স্নান করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর হবে।

নিম পাতার প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা তো জেনেছেন। এবার চলুন এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন। প্রতি ৩৫ গ্রাম নিম পাতায় রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান--
পুস্টি উপাদান পরিমাণ
ম্যাগনেসিয়াম ৪৪.৪৫ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ৮৮.৯ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৭৫.৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ২৫.২৭ মিলিগ্রাম
ফ্যাট ০.০০৩ গ্রাম
আয়রন ৫.৯৮ মিলিগ্রাম
ক্যালরি ৪৫ মিলিগ্রাম
ফাইবার ৬.৭৭ গ্রাম
প্রোটিন ২.৪৮ গ্রাম

নিম পাতার বড়ির উপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানী চিকিৎসায় নিম পাতার বড়ি বহুল ব্যবহৃত হয়। আপনি নিজেও ঘরে বসে নিমপাতার এই নিম পাতার বড়ি তৈরি করে নিতে পারেন। আবার এই নিম পাতার বড়ি আপনি ইচ্ছা করলে বয়মে ভরে সংরক্ষণও করতে পারবেন। নিম পাতার এই বড়িরও রয়েছে অনেক গুনাগুন।যেমন-
  • আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিম পাতার এই বড়ি ভীষণভাবে কার্যকরী।
  • নিয়মিত নিম পাতার বড়ি খেলে পেটটি এবং ডিউটেনাল আলসার এর উপশম হয়।
  • তাছাড়া নিম পাতার এই বড়ি চিকেন পক্স এবং বসন্ত রোগ প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর।
যেভাবে তৈরি করবেন এই নিম পাতার:
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • নিমপাতা
  • কাঁচা হলুদ- ২৫০ গ্রাম এবং
  • পানি- পরিমাণ মত।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
নিম পাতার বড়ি তৈরির ক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই নিম পাতা গুলো ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নেবেন এবং কাঁচা হলুদের খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নেবেন। এবার নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদ একত্রে শীল পাটায় বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করুন।এবার এই পেস্ট দুই হাতের তালুতে নিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন, 
 
বড়িগুলো যেন খুব ছোট না হয় কারণ রোদে শুকানোর পরে এগুলো আরেকটু ছোট হয়ে আসবে।এভাবে ৪-৫ দিন বড়ি গুলো ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন এবং একটি কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন।আপনি চাইলে নিম পাতা খালি পেটেও খেতে পারেন। তাছাড়া খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় তা ইতিমধ্যেই জেনেছেন। 

নিম পাতা সংরক্ষণের উপায়

নিম পাতার উপকারি দিক ভেবে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনি সারা বছরের জন্যও নিমপাতা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এবার চলুন আপনি নিমপাতা কিভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন সে উপায় সম্পর্কে জেনে নিন--
  • আপনি নিম পাতা রোদে ভালো করে শুকিয়ে বেশ কিছুদিন আপনার ঘরে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
  • আবার শুকনো নিম পাতা গুঁড়ো করে সেই বুড়ো আপনি কাচের বয়ামে ভরে সংরক্ষণ করতে পারেন।
  • আবার আপনি নিমপাতা পাটায় বেটে ছোট ছোট ট্যাবলেট এর মত আকৃতি করে রোদে শুকিয়ে দীর্ঘদিন এই নিম ট্যাবলেট সংরক্ষণ করতে পারেন। ফলে প্রতিদিন আপনি কাঁচা নিম পাতা না পেলেও নিম ট্যাবলেট পাবেন।
  • নিম পাতা সংরক্ষণের সময় আপনার বয়ামটি অবশ্যই শুষ্ক এবং ঠান্ডা স্থানে রাখবেন।
উপরিউক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি দীর্ঘদিন নিম পাতা খুব সহজেই সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন এবং চাইলে খালি পেটেও নিম পাতার রস খেতে পারেন, তাতেও উপকার মিলবে।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আশা করছি আপনাদের কাছে বোধগম্য হয়েছে। সম্মানিত পাঠক, আশা করছি নিম পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। নিম এমন একটি ঔষধি গাছ যার পাতা থেকে ছাল পর্যন্ত সবটাই কাজে লাগানো যায়। আবার নিম গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুব একটা যত্নেরও প্রয়োজন হয় না।
 
সেই প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ইউনানী এবং কবিরাজি চিকিৎসায় নিম পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম গাছের এতসব উপকারিতার জন্য অনেকে আবার নিম গাছকে ম্যাজিক গাছও বলে থাকেন। আপনাদের যদি নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে আমি বলব আপনি প্রতিদিন অন্তত ২-৩ টি কাঁচা নিমপাতা চিবিয়ে খান। এতে আপনিই উপকৃত হবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url