পাট শাকের ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
পাট শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? পাট পাতার ব্যবহার ও ঔষধি গুনাগুন কতটা জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।কারণ, আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করব পাট শাকের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ পাট শাকের ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
- পাট শাক খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা
- পাট শাকের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় পাট শাকের উপকারিতা
- পাট শাকের নানাবিধ রেসিপি
- পাট শাক খাওয়ার নিয়ম
- বিভিন্ন দেশে যেভাবে পাট শাক খাওয়া হয়
- পাট পাতার ব্যবহার ও ঔষধি গুনাগুন
- পাট গাছের বৈশিষ্ট্য
- পাট পাতার প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান
- পাট শাক সংরক্ষণের পদ্ধতি
- পাট শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া
পাট শাক খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা
পাট শাকের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। পাটকে সাধারণত আমরা সোনালী আঁশ হিসেবে চিনি। পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি অনেক পণ্য দেশ-বিদেশে রপ্তানি করা হয়। পাটের কচি পাতা আবার শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। পাটের এই কচি পাতা কেউ ডাল দিয়ে রান্না করে খান আবার কেউবা শাক হিসেবে ভেজেও খান।
প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এই পাটশাকে রয়েছে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থের মতো উপাদান। এবার চলুন পাট শাক খাওয়ার ফলে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনি পেতে পারেন তা জেনে নিন--
আরো পড়ুনঃ শুশনি শাকের ১৫টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
- ওজন কমাতে পাট শাকঃ আপনি অনেক ডায়েট করেও ওজন আপনার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারছেন না। তাহলে বলব আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করুন পাট শাক। কারণ, পাটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ওজন কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- গ্যাস বা এসিডিটি হ্রাস করেঃ আপনি কি গ্যাস এসিডিটির মতো পেটের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন পাট শাক খাওয়া। কেননা পাটে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার যা আপনার অন্ত্রে উপকার ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া পেটের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা গ্যাস অম্বল বা এসিডিটির সমস্যায় জর্জরিত তাঁরা অবশ্যই নিয়ম করে পাঠন।
- ইমিউনিটি বৃদ্ধি করেঃ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে আপনার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তপোক্ত হওয়া ভীষণই জরুরী। আপনি আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়াতে চাইলে পাট পাতা খান। কেননা পাট পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং উপকারী কিছু আন্টি অক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ থেকে আপনাকে দূরে রাখে।
- হাড় শক্তপোক্ত করেঃ হাড় মজবুত এবং শক্তপোক্ত করতে চাইলে আজ থেকে আপনার খাবার যোগ করুন পাট শাক। কারণ পাট পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম। আর এই ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম উভয়ই হাড়কে মজবুত শক্তিশালী করে তোলে। তাছাড়া অস্টিওপোরোসিস এর মত জটিল রোগে যারা আক্রান্ত তারাও তাদের ডায়েটে চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে পাট শাক রাখতে পারেন।
- পাট শাক প্রদাহ হ্রাস করেঃ সাধারণত বেশিরভাগ ক্রনিক রোগের পেছনে দায়ী বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ। আর তাই আপনি সুস্থ থাকতে চাইলে আপনার ইনফ্লামেশন কমাতে হবে। এই ইনফ্লামেশন কমাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে একমাত্র পাট পাতা। কারণ, পাট পাতায় রয়েছে অমেগা৩ ফ্যাটি এসিডে যা কিনা আপনার অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করতে বেশ কার্যকর। আর এই ঠিক এই কারণেই পাটসার খেলে প্রদাহের বারবাড়ন্ত অনেকটাই কমে যায়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পাট শাকঃ যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য পাট পাতা হতে পারে একটি মহৌষধ। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ থেকেই আপনার খাবার পাতে যোগ করুন পাট শাক। কারণ, পাট শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
- ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেঃ অল্প বয়সেই অনেকেই মুটিয়ে যান। আবার কারো কারো ত্বকে বয়সের একটা ছাপ পড়ে যায়। আপনি আপনার ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখতে নিয়মিত পাট শাক খান। কারণ, পাটশাকে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বকের ক্ষতিকর বিভিন্ন ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বকের তারুণ্যকে ধরে রাখতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ একটু বয়স হলেই আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে আসে। যার ফলে অনেকেই চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। আপনি আপনার দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে পাট শাক খাওয়া শুরু করুন। কারণ, পাটশাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ যা আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- হতাশা দূর করতেঃ প্রাত্যহিক জীবনের কাজে-কর্মে নানান দুশ্চিন্তা, হতাশা আমাদের আঁকড়ে ধরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হতাশা দুশ্চিন্তা দূর করতে পারে ম্যাগনেসিয়াম। আর পাট শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ , হতাশা এবং অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে।
- মুখের রুচি বৃদ্ধিতেঃ মুখের রুচি বৃদ্ধ অনেক সময় ডাক্তাররা তেতো শাকসবজি খাবার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে তেতো সবজি হিসেবে তেতো পাট শাক খাবারে যেমন রুচি ভারতের সাহায্য করে তেমনি মেদ কমাতেও সাহায্য করে। তাছাড়া খেতে বসে আপনি প্রথমে যদি তেতো পাট শাক খান তাহলে সেটি আপনার মুখে লালা ক্ষরণ করে শ্বেতসারকে ভাঙতে সাহায্য করে। এতে করে আপনার হজম ক্রিয়া সহজ হয় এবং লিভারও ভালো থাকে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেঃ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যাক কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে খাওয়া শুরু করুন পাটের শাক।
- বাতের ব্যথা দূর করতেঃ যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য পাটশাক ভীষণ উপকারী। কারণ, পাকশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই। এই ভিটামিন ই আপনার গেটেবাত, আর্থাইটিস এবং প্রদাহ জনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আপনি নিয়মিত নিয়ম করে পাটশাক খেলে বাতের ব্যথা নিমেষেই দূর হয়ে যাবে।
- মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ আপনি আপনার মুখের স্বাস্থ্য অর্থাৎ দাঁতের সমস্যা, মুখের ঘা প্রভৃতি দূর করতে খেতে পারেন পাট শাক। কারণ, পাটশাকে থাকা ভিটামিন সি এবং ক্যারোটিন যা আপনার মুখের ঘা দূর করতে সাহায্য করে এবং দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
- শরীর দূষণমুক্ত করতেঃ পাট শাকে রয়েছে লাইকোপিন। এটি এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিয়মিত পাশা খেলে এটি আপনার শরীরকে দূষণমুক্ত রাখে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃ পাটশাকে কোলেস্টেরলের পরিমাণ একেবারেই কম। ফলে নিয়ম করে পাট শাক খেলে এটি আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টকেও সুস্থ রাখতে পারে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ পাট শাকে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রোস্টেট ক্যান্সার ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং টিউমারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর।
- আয়রনের ঘাটতি পূরণঃ দেহে আয়রনের অভাবে অনেকে "রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম" রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তি অনবরত পা নাড়াতে থাকেন। পাট পাতায় রয়েছে ২.৭৩ মিলিগ্রাম আয়রন, যা মানব দেহের দৈনিক আয়রনের চাহিদার প্রায় এক- তৃতীয়াংশই মেটাতে পারে। ফলে "রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম" থেকে পরিত্রান পেতে চাইলে আপনাকে পাট শাক খেতেই হবে।
- হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখেঃ পাট শাক খেলে রক্তের কোলেস্টেরল ভোজ্য আঁশের সাথে যুগলবন্দী হয়ে বেরিয়ে আসে। ফলে আপনার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- বাড়ন্ত শিশুর পথ্য হিসেবেঃ পাট শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য আপনার বাড়ন্ত শিশুর খাদ্য তালিকায় পাট শাক যোগ করা অতীব জরুরী।
এতসব উপকারিতা থাকে সত্বেও আপনি পাট শাক কেন খাবেন না বলুন তো? আপনি এক প্লেট গরম ভাতে একটু খাঁটি গাওয়া ঘি, একটি পোড়া মরিচ এবং পাট শাক ভাজি খেয়েই দেখুন না কেমন লাগে!!
পাট শাকের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
পাট শাকের তেমন বিশেষ কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবুও খাদ্য উপাদান হিসেবে যেহেতু এর উপকারিতা রয়েছে সেহেতু কিছু অপকারিতা থাকবেই। তাহলে এবারে জেনে নিন খেলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে--
আরো পড়ুনঃ সজনে ডাটার ১০ টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
- প্রথমেই বলি, অনেকের শাকসবজিতে অ্যালার্জি থাকে। তাই যাদের পাট শাক খাওয়ার অভ্যাস নেই তারা খাবার আগে অবশ্যই এলার্জি টেস্ট করিয়ে নেবেন। কারণ, পাট শাকে সামান্য এলার্জি রয়েছে। ফলে খাওয়ার পরে আপনার চুলকানি হতে পারে।
- একটি খাদ্য উপাদান যতই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হোক না কেন, তা কখনোই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া একদমই অনুচিত। অতিরিক্ত পাট শাক হওয়ার পরে আপনার গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- পাট শাকে কিছু উপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ফলে গর্ভকালীন সময় পাট শাক খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।
- পাট শাক রক্তকে পাতলা করতে পারে। তাই আপনি যদি কোন চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যান সেক্ষেত্রে পাট শাক না খাওয়াটাই ভালো। কেননা এটি আপনার চলমান ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পাট শাকের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পাটশাকের উপকারিতা জানেন কি? গর্ভাবস্থায় এই পাট শাক খাওয়ারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। চলুন গর্ভাবস্থায় পাট শাক খেলে কি উপকার হয় তা জেনে নিন--
- গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলারাই রক্তস্বল্পতায় ভুগতে থাকেন। আপনি যদি গর্ভকালীন সময়ে নিয়ম করে পরিণত পরিমাণে পাট শাট খান তাহলে এই রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- পাট শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি যা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়
- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যে যারা ভুগছেন পাট শাক তাদের জন্য হতে পারে একটি উপাদেয় ও খাদ্য উপাদান। কারণ, পাটশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকার কারণে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি পাট শাক খেতেই পারেন।
- ফোলেট যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার গর্ভের ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। আর পাট শাকে রয়েছে ফোলেট। ফলে গর্ভাবস্থায় পাট শাক খেলে এটি আপনার অনাগত সন্তানের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
গর্ভকালীন সময়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন পাট শাক খাওয়া যাবে কি, যাবে না। তাহলে জেনে রাখুন আপনি গর্ভাবস্থায পাট শাক খেতে পারবেন। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই খাবারের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয়। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে পাট শাক খাওয়া থেকে নিজেকে সতর্ক রাখা উচিত।
পাট শাকের নানাবিধ রেসিপি
পাট শাকের উপকারিতা পেতে এই শাক দিয়ে আপনি বিভিন্ন পদের রেসিপি করেও খেতে পারেন।পাটশাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি গরম ভাতের সাথে পাট শাক ভাজি অথবা পাট শাকের বড়া খেতেও দারুন লাগে। অনেকেই আবার পাট শাক ডাল দিয়েও রান্না করে খান। কেউ আবার নারকেল দিয়ে পাট শাক ভেজে খান। সম্মানিত পাঠক, এবার আপনাদের জানাবো পাট শাক দিয়ে তৈরি কিছু রেসিপি। তো চলুন রেসিপি গুলো কি কি তা দেখে নিন--
আরো পড়ুনঃ কাগজি লেবুর ১০টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ও অপকারিতা
ডাল দিয়ে পাট শাকের রেসিপিঃ আমাদের দেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে পাট শাকের এই রেসিপিটি বেশ জনপ্রিয়।রেসিপিটি কিভাবে তৈরি করবেন জেনে নিন-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পাট শাক- ১ আটি
- মুগ বা মসুর ডাল- ১/২ কাপ
- কাঁচা মরিচ- ৩/৪ টি
- পেঁয়াজ কুচি- ১/২ কাপ
- রসুন কুচি- ৬/৭ কোয়া
- জিরা গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
- আদা-রসুন বাটা- ১/২ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
- লবণ- স্বাদমতো
- গরম পানি- পরিমাণ মতো
- শুকনো মরিচ- ৪-৫ টি
- তেল- ৪ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ
- প্রথমেই পাট শাকগুলো পরিষ্কার করে কেটে বেছে ধুয়ে নিন। আপনি যদি মুগ ডাল দিয়ে পাট শাক রান্না করতে চান সেক্ষেত্রে মুগ ডাল শুকনা প্যানে টেনে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। আর মসুর ডাল দিয়ে পাট শাক রান্না করতে চাইলে টেলে নেওয়ার দরকার নেই শুধু ভালো করে ধুয়ে পানিতে ভিজে রাখলেই চলবে।
- এবার একটি কড়াই এ ২ টেবিল চামচ পরিমাণ গরম তেলে এক এক করে কাঁচা মরিচ এবং পেঁয়াজ কুচি দিন।
- পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে তাতে আদা-রসুন বাটা যোগ করুন। এরপর সামান্য নেড়ে হলুদ এবং জিরা গুঁড়ো দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানি দিন যাতে মসলাটি কোনভাবেই পুড়ে না যায়।
- মসলা অল্প অল্প করে পানি দিয়ে কষাতে থাকুন যতক্ষণ না মসলার উপর তেল ভেসে ওঠে। মসলার উপর তেল ভেসে উঠলেই ডাল দিয়ে দিন।
- পরিমান মত গরম পানিতে ডাল ঢেকে রান্না করবেন এবং ডাল সিদ্ধ হওয়ার পর তাতে লবণ দিন।
- অতঃপর ডালের পানি ঘন হয়ে এলে ডালের মধ্যে পাটশাক দিয়ে দিন এবং ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে ডাল ও পাট শাক মিশিয়ে নিন।
- এভাবে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত হয়। সিদ্ধ হয়ে ডাল ঘন হয়ে আসলে চুলার আঁচ বন্ধ করে দিন।
- সবশেষে ডাল মিশ্রিত পাট শাক ফোড়ন দেওয়ার জন্য কড়াইয়ে ২ টেবিল চামচ তেল গরম করে তাতে রসুন কুচি এবং আস্ত ৪-৫টি শুকনো মরিচ দিয়ে দিন। আস্তে আস্তে রসুন বাদামি বর্ণের হয়ে আসলে তেলসহ রসুন মরিচ একসাথে ডালের মধ্যে পাত্রে ঢেলে দিন এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।
ব্যাস তৈরি হয়ে গেল মজাদার সুস্বাদু পাট শাক দিয়ে ডালের সালুন। এই পাট শাক ডালের সালুন গরম গরম খেতে বেশ লাগে।
পাট শাক ভাজি রেসিপিঃ শুধু পাট শাক ভেজেও খাওয়া যায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পাট শাক- ১-২ আটি
- পেঁয়াজ কুচি- ১/২ কাপ
- রসুন কুচি- ৭-৮ কোয়া
- লবণ- স্বাদ মত
- তেল- ২ টেবিল চামচ
- আস্তো শুকনো মরিচ- ৩-৪ টি
প্রস্তুত প্রণালীঃ
- প্রথমেই স্বাদ কেটে পেতে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন। কারণ, পাটশাকে অনেক সময় কীটনাশকের সংক্রমণ থাকে।
- এবার একটি কড়াইয়ে পাট শাক এবং পেঁয়াজ নিয়ে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে শাক কিছুক্ষণ ভাপিয়ে নিন যতক্ষণ না সিদ্ধ হয় ।
- শাক সিদ্ধ হয়ে এলে এবার কড়াইয়ে গরম তেল দিয়ে একে একে রসুন কুচি পেঁয়াজ কুচি এবং আস্ত শুকনো মরিচ দিয়ে বাদামী করে ভেজে নিন।
- সবশেষে এর সাথে শাক যোগ করুন । এবার পাট শাক পেয়াজ রসুন শুকনো মরিচ একসাথে ভালো করে কিছুক্ষণ ভেজে নামিয়ে ফেলুন।
- ব্যাস আপনার পাট শাক ভাজির রেসিপি কমপ্লিট। এবার গরম গরম ভাতে এটি পরিবেশন করুন।
নারিকেল দিয়ে পাট শাক ভাজির রেসিপিঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পাট শাক- ১/২ আটি
- পেঁয়াজ কুচি- ১/২ কাপ মত
- রসুন কুচি- ৬/৭ কোয়া
- নারকেল কোরা-১/৩ কাপ
- গোটা শুকনা মরিচ-৪-৫ টি
- লবণ- স্বাদ মতো এবং
- তেল- পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
- সব কেটে বেছে দুই নিয়ে একটি করে গরম তেল দিয়ে এতে বরাবরের মতোই এক এক করে রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি এবং শুকনা মরিচ দিয়ে দিন।
- এবার এতে পাটশাক দিয়ে পেঁয়াজ কুচি রসুন কুচি শুকনো মরিচ এবং পাট শাক একসাথে ভালোভাবে নাড়িয়ে নিন কিছুক্ষণ। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করবেন শাক থেকে পানি বের হবে এবং শাকের পানি টেনে আসলে তাতে স্বাদমতো লবণ যোগ করুন।
- সবশেষে শাকে নারিকেল কোরা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়িয়ে ঝরঝরে হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
তৈরি হয়ে গেল আপনার নারিকেল দিয়ে পাট শাক ভাজির রেসিপি। এই রেসিপিটি খেতে কিন্তু দুর্দান্ত হয়।
কাঁঠালের বিচি ও পাটা শাক ভাজা রেসিপিঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পাট শাক- এক আটি
- কাঁঠালের বিচি- ১০-১৫ টি
- নারিকেল বাটা- ২ টেবিল চামচ
- চিংড়ি মাছ- দুই টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ কুচি- ২ টেবিল চামচ
- রসুন কুচি- ১ টেবিল চামচ
- কাঁচামরিচ- ৫-৬ টি
- হলুদ গুঁড়ো -আধা চা চামচ
- লবণ- স্বাদমতোএবং
- তেল- পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রণালীঃ
- প্রথমেই কাঁঠালের বিচি পরিষ্কার করে পাতলা করে কেটে নিন এবং পাট শাক ধুয়ে পানি ঝরিয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
- এরপর একটি কড়াইয়ে পরিমাণ মতো তেল নিয়ে তাতে একে একে পেয়াজকুচি নারিকেল বাটা চিংড়ি মাছ হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
- কষানো শেষে এতে কাঁঠালের বিচি এবং আধা কাপ পরিমাণ পানি যোগ করুন।
- বিচি সেদ্ধ হয়ে আসলে তাতে পাট শাক এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে খানিকক্ষণ নাড়তে থাকুন । এভাবে কিছুক্ষণ নাড়ার পর সব মসলা মিশে ভাজা ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন এবং গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
পাট শাক খাওয়ার নিয়ম
পাট শাকের উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে এই শাক খেতে হবে। পাটের শাক খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে খেলে আপনি এর থেকে উপকারিতাই বেশি পাবেন। চলুন পাট শাক খাওয়ার নিয়ম গুলো কি তা আপনাকে জানিয়ে দিই --
- পাট শাক খাওয়ার পূর্বে খুব ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। কারণ, নানা ধরনের কীটনাশক এর উপদ্রব হয়ে থাকে।
- রান্নার সময় পাট শাকের স্বাদ অটুট রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ব্যবহার করুন।
- পাট শাক রান্নার সময় কখনো কখনও পানি ছিটকে আসার সম্ভাবনা থাকে। এটি দূর করার জন্য পাট শাকের পানি ছিচলে অন্য আরেকটি পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
- পাট শাক রান্নার জন্য একটি পানি উঠিয়ে নিন এবং উঠিয়ে নেওয়া পানিতে আপনি সঠিক মাত্রায় লবণ যোগ করুন।
- পাট শাক টাটকা সতেজ থাকা অবস্থায় রান্না করুন। পাট শাক সাথে এমনিতেই নরম প্রকৃতির শাক। ফলে রান্নার সময় একটু সতর্কতা অবলম্বন করুন যেন এটি ঘেঁটে না যায়।
উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে পাট শাক রান্না করে আপনি নিয়মিত খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
বিভিন্ন দেশে যেভাবে পাট শাক খাওয়া হয়
পাট শাকের উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। দেশ ভেদে পাট শাকের ব্যবহারও ভিন্ন ভিন্ন। এবার চলুন বিভিন্ন দেশে পাট শাক কিভাবে খাওয়া হয় সে সম্পর্কে চলুন জেনে নিন--
- ফিলিপাইনঃ ফিলিপাইনে সাধারণত অলিটোরিয়াস জাতের পাটের পাতা এবং বাঁশের অঙ্কুর একসাথে মিশিয়ে শাক হিসেবে খাওয়া হয়।
- উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যেঃ উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণত মালুখিয়া নামক পরিচিত এক কচি পাট পাতা সবুজ শাক হিসেবে খাওয়া হয়।
- জাপানঃ পাটের শুকনো পাতা কফি এবং চায়ের বিকল্প হিসেবে জাপানে বহুল ব্যবহৃত হয় এবং জাপানে এই পানীয়টি বেশ জনপ্রিয়।
- ইউরোপঃ ইউরোপে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু স্যুপ তৈরিতে পাটের পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- তুরস্ক এবং সাইপ্রাসেঃ তুরস্ক এবং সাইপ্রাসে পাট পাতা মোলোখিয়া নামে পরিচিত যা যা মলোচা হিসেবে এক ধরনের মুরগির স্টু রান্নাতে ব্যবহার করা হয়।
- নাইজেরিয়াঃ নাইজেরিয়াতে পাট পাতা এবং শুকনো মাছ দিয়ে "ইয়েডু" নামে একটি স্যুপ তৈরি করে খাওয়া হয়।
- মিশরঃ মিশরে পাট পাতা কুচিয়ে তার মধ্যে সামান্য লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে খাওয়া হয় ,যা মুলুখিয়া নামে অধিক পরিচিত।
- ভারত এবং বাংলাদেশঃ ভারত এবং বাংলাদেশ পাট শাক দিয়ে নানান পদ রান্না করে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
তাছাড়া সিরিয়া, জর্ডান ,ফিলিস্তিন, লেবানন এবং তিউনিসিয়ার বিভিন্ন রান্না তে ব্যবহৃত হয় এই পাট পাতা
পাট পাতার ব্যবহার ও ঔষধি গুনাগুন
পাট পাতার নানান ব্যবহার এবং এর ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। পাট এমন একটি গাছ যার কোন অংশই ফেলনা নয় বরং এই গাছের প্রতিটি অংশই ঔষধ হিসেবে বেশ কার্যকর। পাট পাতা শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য গুটি বসন্ত ইনফ্লুয়েঞ্জা গুড়া কৃমি প্রভৃতির চিকিৎসায় সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাট পাতার ঔষধি গুনাগুন গুলো কি কি চলুন আপনাকে তা জানিয়ে দিই --
আমাশয় নিরাময়েঃ পেটের আমাশয় নিরাময়ে ব্যবহৃত হয় এই পাট পাতা। আমাশয় দূর করার জন্য আপনি পাট পাতার গুড়ো, ৫-১০টি বীজ দানা, হলুদ গুড়োর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার পেটের আমাশয় সহজেই দূর হবে। আবার এক গ্রাম পাট পাতা আধা কাপ পরিমাণ মতো পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পরে সেই পানি ছেকে খেলে আমাশয় রোগ ভালো হয়।
রক্ত আমাশয় দূরীকরণেঃ আপনি ১ গ্রাম পাট পাতার গুঁড়ো এবং ১ গ্রাম হলুদ গুঁড়ো একসাথে ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার সেবন করলে আপনার রক্ত আমাশয় খুব সহজেই দূর হবে।
মুত্রাশয়ের রোগেঃ যারা মুত্রাশয় রোগে ভুগছেন অর্থাৎ প্রস্রাবের বেগ থাকলেও ফোটা ফোটা প্রস্রাব হয়, কোথ দিলে প্রস্রাবের সাথে সাদা চুনগোলা পানির মত ঘোলাটে প্রস্রাব বের হয় তাদের জন্য পাট পাতা একটি মহা ঔষধ। এমন পরিস্থিতিতে আপনি ৫০ মিলিলিটার গরম পানিতে ২ গ্রাম পরিমাণ শুকনো পাটের পাতা 10-12 ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সে পানি ছেকে খাবেন। কিছুদিন নিয়ম করে এভাবে খেলে আপনার মুত্রাশয় রোগের বেশ উপশম হবে।
পেটের যন্ত্রণা দূর করতেঃ আপনার পেটে খুব যন্ত্রণা বা ব্যথা হলে আপনি শুকনো পাটের পাতা পুড়িয়ে যে ছাই হবে সেই ছাইয়ের ১-১.৫ গ্রাম নিয়ে তার সাথে ৩ চামচ মধু মিশিয়ে চেটে চেটে খেয়ে ফেলুন। আপনার পেটের যন্ত্রণা অনেকটাই সেরে যাবে।
- অগ্নিমান্দ্য দূর করতেঃ অগ্নিমান্দ্য দূর করতে আপনি টাটকা কচি পাট পাতা রস ২০-২৫ মিলিগ্রাম আধা কাপ পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে সামান্য গরম করে সকাল এবং বিকালে একবার করে খাবেন। এতে অগ্নিমান্দ্য খুব সহজেই দূর হবে।
- পেট পরিষ্কার করতেঃ শুকনো পাট পাতার গুঁড়ো ২ গ্রাম এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে এতে ভালো পেট পরিষ্কার হয়।
- জ্বরের ক্ষেত্রেঃ জ্বরের জন্য আপনি গাছের টাটকা পাট পাতা 30-40 গ্রাম চোট আকারে কেটে নিয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে ১৭০ মিলিলিটার পানির সাথে এই পাট পাতা সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ করার সময় ঢাকনা দিয়ে অবশ্যই ঢেকে দেবেন। অতঃপর পানি ফুটে 40-50 মিলি লিটার পরিমাণ হলে তা নামিয়ে ফেলুন এবং ঠান্ডা হতে রেখে দিন। সম্পূর্ণ ঠান্ডা হয়ে আসলে একটি ছাঁকনি দিয়ে এই পানি ছেঁকে নিন। পাট পাতার এই পানি প্রতিদিন ২ বার করে খেলে ২-৩ দিনেই আপনার জ্বর সেরে যাবে।
পাট গাছের বৈশিষ্ট্য
পাট গাছের কিছু বৈশিষ্ট্য এবার আপনাকে জানাবো। যা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না। পাট গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং এর পাতা দুই থেকে চার ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Corchorus capsularies (করচরাস ক্যাপসুলারিস) ।
পাট গাছের পাতা করাতের মতো সামান্য খাঁজ কাটা এবং আগার দিকটা বেশ সরু প্রকৃতির। পাট গাছের এই পাতা শাক হিসেবে এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময় ঔষধি পাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাট গাছের এক জায়গাতেই ২-৩ টি ফুল ফোটে এবং ফুলের বোঁটা অনেকটাই ছোট হয়। পাটের শুকনো পাতা 'নলতা' নামে পরিচিত।
পাট পাতার প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান
পাত শাকের এতসব উপকারিতা জানার পর এখন নিশ্চয়ই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান। পাট পাতা শুধু শাক হিসেবে নয় বরং এর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম পাট পাতায় রয়েছে নিম্নলিখিত পরিমাণ পুষ্টিগুণ--
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
আয়রন | ৫.৫ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৭২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৮৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৭৫৪৪ আই,ইউ |
চিনি | ১ গ্রাম |
প্রোটিন | ৩.৮ গ্রাম |
ডায়েটারি ফাইবার | ২.৮ গ্রাম |
পটাশিয়াম | ২৫৮ মিলিগ্রাম |
সর্বমোট কার্বোহাইড্রেট | ৯ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
সোডিয়াম | ১৫ মিলিগ্রাম |
ক্যালরি | ৪৫ কিলো ক্যালরি |
পাট শাক সংরক্ষণের পদ্ধতি
পাট শাক সংরক্ষনের পদ্ধতি অনেকেই জানেন না। পাট শাক বছরের একটা সময়ই পাওয়া যায়। যারা বছর জুড়ে পাট শাক খেতে চান তারা পাট শাক সংরক্ষণ করেও রাখতে পারেন। পাটের শাক সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আপনি নিম্নলিখিত ধাপ গুলি অনুসরণ করুন--
- প্রথমে শাক পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন। ধোয়ার পরে এর পানি ঝরিয়ে নিন।
- তারপরে পাট শাক আপনি প্লাস্টিক ব্যাগ অথবা এয়ারটাইট কন্টেইনারে ভরে আপনার রেফ্রিজারেটরের সংরক্ষণ করুন।
- আবার দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য আপনি পাট শাক ব্লাঞ্চ করে ফ্রিজারেও সংরক্ষণ করতে পারেন।
পাট শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া
পাট শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণ অবগত হয়েছেন। পাট পাতায় রয়েছে ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা নিয়মিত খেলে একাধিক প্রাণঘাতী রোগ থেকে খুব সহজেই দূরে থাকা যায়। এই পাট পাতা শুধু শাক হিসেবে নয় বরং এর নানান ঔষধি গুণাবলীও রয়েছে।
আপনি যদি পাট খেতে অভ্যস্ত না হন তাহলে এতসব উপকারিতা জানার পরে আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন পাট শাক। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। এই রকম আরো তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url