চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয় জানুন
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয় জানেন কি? সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? যদি না থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলকে আপনার জন্যই।
কারণ আজকে আমরা আলোচনা করব চন্দ্রপাড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ দংশন করলে কি হয় এবং এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন রাসেল ভাইপার কামড়ালে করনীয় সম্পর্কে। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।পোস্ট সুচিপত্রঃ চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয়
- চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার আসলে কি?
- রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয়
- বর্তমানে বাংলাদেশে আতঙ্কের নাম রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ
- সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা
- বিষধর সাপে কামড়ানোর লক্ষণ কি কি
- রাসেল ভাইপারের কামড় এড়াতে করণীয়
- রাসেল ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করনীয়
- রাসেল ভাইপার কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা
- রাসেল ভাইপারের অ্যান্টিভেনম আছে কি?
- চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে এর অ্যান্টিভেনোম কোথায় পাবেন এবং দাম কত
- চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপের বিস্তৃতি
- চন্দ্রপাড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয় এ সম্পর্কে আমার মন্তব্য
চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার আসলে কি?
উপমহাদেশে যে প্রধান চারটি বিষাক্ত সাপ রয়েছে তার মধ্যে রাসেল ভাইপার একটি। রাসেল ভাইপার এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো, Daboia russelii. এর দেহ বেশ মোটাসোটা এবং লেজ অপেক্ষাকৃত ছোট ও সরু হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক রাসেল ভাইপার সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এদের দেহের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য 1.8 মিটার।
এই সাপের মাথা চ্যাপ্টা ত্রিভুজাকৃতি এবং ঘাড় থেকে খানিকটা আলাদা থাকে। বিষধর এই চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপের শরীরে অনেকটা চাঁদের মতো গাঢ় বাদামি গোল ছোপ দাগ থাকে এবং গায়ের রং মেটে বর্ণের। শারীরিক এই বৈশিষ্ট্যের কারণে রাসেল ভাইপার শুকনো পাতা, খড়কুটো বা ধান ক্ষেতের মধ্যে খুব সহজেই নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারে।
স্থলভাগের সাপ হলেও জলের সাথে দ্রুতগতিতে এরা সাঁতরে চলতে পারে। রাসেল ভাইপার সাধারণত নিশাচর এবং খাদ্য হিসেবে ইঁদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি এবং ব্যাঙ ভক্ষণ করে থাকে। এই সাপ অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির এবং আগ বাড়িয়ে কখনো কাউকে আক্রমণ করে না, যদি না তাকে উত্যক্ত করা হয়।
তবে আক্রমণের ক্ষেত্রে রাসেল ভাইপার এতটাই ক্ষীপ্র প্রকৃতির যে, এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগেরও ১ ভাগ সময়ে কামড়ের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করে ফেলে। ক্ষিপ্ত অবস্থায় এই সাপ প্রচন্ড জোরে প্রেসার কুকারের মত "হিস হিস" শব্দ করে। বাংলাদেশে এই রাসেল ভাইপার চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া সাপ নামেও পরিচিত।
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয়
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে শরীরে এর কি প্রভাব পড়তে পারে এই প্রশ্ন এখন অনেকেরই? তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতংক বিরাজ করছে কমবেশি সকলের মনে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে রাসেল ভাই পাঠাব কামড়ালে মানব দেহে এর কি হতে পারে তা জেনে নিন--
আরো পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি পাওয়ার উপায় ২০২৪
- রাসেল ভাইপার যে স্থানে কামড় দেয় সেই স্থানে তীব্র ব্যথা এবং দ্রুত ফোলা ভাব এবং লালভাবের সৃষ্টি হয়।
- এই সাপের বিষ এতটাই মারাত্মক যে, এই বিষের প্রভাবে শরীরে রক্তক্ষরণ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। এমনকি নাক মাড়ি এবং মলদ্বার দিয়েও রক্তপাত হতে পারে।
- রাসেল ভাইপার কামড়ানোর ফলে বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা,পেশীতে ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা ,শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরা, চোখে ঝাপসা দেখা, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- তাছাড়া এই সাপের বিষক্রিয়ায় কিডনি ফেইলিওর,হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া, পেশী প্যারালাইসিস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
- গবেষক মোঃ আবু সাঈদের ভাষ্যমতে, রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে রোগী খুব দ্রুত মারা যায় একথা একেবারেই ভিত্তিহীন ।কারণ রোগী সহজে মারা যায় না বরং চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে আতঙ্কের নাম রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ
বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে আতঙ্কের নাম হল রাসেল ভাইপার। ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের ১৭ টি জেলায় রাসেল ভাইপারের অস্তিত্ব দেখা গিয়েছিল । তবে বর্তমান সময়ে এর বিস্তৃতি আরো বেড়েছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা ,মানিকগঞ্জ, মন্সিগঞ্জ, ভোলা, দিনাজপুর, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা ,পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় এই রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে।
সাধারণত ঝোপ-ঝাড়ে, বনে-জঙ্গলে এবং আবাদি জমিতে বা জমির বড় গর্তে এই সাপের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করেছে। এই সাপের বিষক্রিয়া এতটাই তীব্র যে কাউকে কামড় দিলে ২ ঘণ্টার মধ্যে যদি এন্টিভেনম ভ্যাকসিন না নিতে পারেন তবে সাপে কাটা রোগী মারা যাবে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই বাংলাদেশে এসবকে বিলুপ্তপ্রায় সাপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত এই সাপের উপদ্রব আবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এবং এই সাপ কোথা থেকে আসছে এসে নিয়েও গবেষণা চলমান রয়েছে। তাছাড়া রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয় তা ইতিমধ্যেই জেনেছেন।
সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা
সাধারণত যে কোন সাপে কামড়ালে প্রাথমিকভাবে প্রাণ রক্ষার জন্য আপনাকে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা নিতে হবে এবং পরবর্তীতে দ্রুত হাসপাতাল মুখী হতে হবে। সেই প্রাথমিক চিকিৎসা গুলোর মধ্যে রয়েছে--
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে ইতালি বিমান ভাড়া কত ২০২৪
- সাপে দংশনকৃত ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করতে হবে এবং তার মনে সাহস যোগাতে হবে। কারণ সাপে কামড়ালে অনেকে ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়েই মৃত্যুবরণ করেন। মনে রাখবেন ,সাপের কামড়ে যতটা না মৃত্যু হয় ঠিক ততটা মৃত্যু হয় মানসিক আতঙ্কের কারণে। এই মানসিক আতঙ্ক বিষহীন সাপের থেকেও প্রাণঘাতী হতে পারে।
- সাপে কাটা স্থানটি অবশ্যই স্থির রাখতে হবে। অর্থাৎ হাতে কামড়ালে হাত বেশি নড়াচাড়া করবেন না এবং পায়ে কামড়ালে হাটা চলাফেরা না করে স্থির থাকুন।
- আক্রান্ত স্থানটি ব্যান্ডেজ এর সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হবে। এই প্যাঁচানোকে ডাক্তারি পরিভাষায় প্রেসার ইমোবিলাইজেশন বলা হয়। তৎক্ষণিকভাবে ব্যান্ডেজ না পেলে আপনি গামছা বা ওড়না জাতীয় যেকোনো কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন।
- ক্ষতস্থানের জীবাণু দূর করার জন্য আপনি সাবান বা জীবাণু নাশক লোশন দিয়ে আলতো ভাবে আক্রান্ত স্থানটি ধুয়ে নেবেন বা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছে নেবেন।
- আপনার শরীরে যদি তাবিজ, তাগা, ঘড়ি বা অন্য কোন অলংকার থেকে থাকে তাহলে তা খুলে ফেলুন কারণ এগুলো শরীরের রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে।
- রোগীকে আধাশোয়া অবস্থায় রাখতে হবে।
- রোগীর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসলে তাকে মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করাতে হবে।
এই প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো শেষে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিভেনোম গ্রহণ করতে হবে।
বিষধর সাপে কামড়ানোর লক্ষণ কি কি
আমাদের দেশে মূলত মূলত বিষধর সাপের থেকে বিষহীন সাপের সংখ্যায় বেশি রয়েছে। ফলে শুধু সাপে কাটলেই যে মৃত্যু অবধারিত এই ধারনা একেবারেই ভুল এবং এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া বিষধর সাপের কামড় চেনার জন্য সবথেকে বেশি দরকার হলো সাপটিকে চেনা। কারণ একেক সাপের কামড় একেক রকম হয়ে থাকে। তবে মনে রাখবেন,বিষধর সাপের চোখের মনি ও বিষ দাঁত লম্বা হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে সাধারণত ছয় ধরনের বিষধর সাপ দেখা যায় যেমন- কিং কোবরা, চন্দ্রবড়া বা রাসেল ভাইপার, কেওটে ,গোখরা এবং শঙ্খচুড়। এইসব সাপের কামড় চেনার আগে সাপটি চেনা বেশি জরুরি কারণ সাপ চিনলে সাপের কামড় এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এবার চলুন বিষাক্ত সাপে কামড়ানোর লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে তা আপনাকে জানিয়ে দিই --
- প্রথমতঃ সাপের বিষ আপনার শরীরে ঢোকার পর শরীর আস্তে আস্তে অবশ হতে থাকবে।
- দ্বিতীয়তঃ সাপে কামড়ানোর স্থানে প্রবল জ্বালা করতে শুরু করবে এবং এই জ্বালা পোড়া আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে।
- তৃতীয়তঃ সাপে কামড়ানোর আক্রান্ত স্থান ক্রমাগত ফুলে উঠবে এবং আপনি চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখতে শুরু করবেন।
- চতুর্থতঃ আপনার ঢোক গিলতে অসুবিধা হবে এবং মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাবের সৃষ্টি হবে।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত এই লক্ষণগুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনাকে বিষাক্ত সাপ দংশন করেছে নাকি করেনি। তবে এই সাপ বিষাক্ত হোক বা না হোক সাপে কামড়ালে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। অহেতুক ভয় পাবেন না এবং ওঝা ডেকে কোন চিকিৎসার চেষ্টা করে সময় ক্ষেপণ করবেন না।
রাসেল ভাইপারের কামড় এড়াতে করণীয়
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে রাসেল ভাইপার এক বড় আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষধর এই সাপের কামড় এড়াতে প্রত্যেকেরই কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে হিসেবে আপনি রাসেল ভাইপার সাপের দংশন থেকে বাঁচতে নিম্নলিখিত সতর্কতা মেনে চলতে পারেন---
- প্রথমেই বলি,যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার সাপের অস্তিত্ব মিলেছে, সেসব এলাকায় চলাচলে ছোট, বড় প্রত্যেকেরই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন।
- আপনি ঝোপঝাড়, কৃষি জমিতে, ধানি জমিতে চলাচল করার সময় বিশেষ সতর্ক থেকে চলাচল করুন।
- কারণে-অকারণে বা কাজের ক্ষেত্রে যেকোনো গর্তের মধ্যে হাত-পা প্রবেশ করাবেন না। কারণ এই গর্তই হলো রাসেল ভাইপারের আবাসস্থল।
- রাতে চলাফেরার সময় আপনি অবশ্যই একটি পকেট টর্চলাইট ব্যবহার করবেন।
- বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক যাদের জমিতে কাজ করতে হয়, তারা কাজ করার সময় গামবুট ও জিন্সের প্যান্ট পরিধান করলে এই সাপের দংশন থেকে নিজেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারবেন।
- আপনার বাড়ির চারপাশ সর্বদা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন এবং আবর্জনা মুক্ত রাখুন।
- জ্বালানির জন্য জমিয়ে রাখা পরিত্যক্ত খড়কুটো বা পতিত গাছ ইত্যাদি সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারণ রাসেল ভাইপার সাপের গায়ের রং গাড়ো মেটে রংয়ের হওয়ায় খুব সহজেই এটি শুকনো পাতার সাথে বা মাটির সাথে মিশে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম।
- রাসেল ভাইপার সাপ অনেকটা প্রেসার কুকারের শব্দের মত খুব জোরে "হিস হিস" শব্দ করে নিজের অবস্থানকে জানান দেয়। ফলে রাসেল ভাইপার সাপের মুখোমুখি হয়ে গেলে আপনি দেখার আগেই সাপ আপনাকে সতর্ক করে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করবেন এবং উক্ত স্থান পরিত্যাগ করবেন।
- প্রয়োজনে আপনি জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ এই নম্বরে কল করে সাহায্য নিতে পারেন অথবা আপনার নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করতে পারেন।
রাসেল ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করনীয়
সাধারণত বেজি, গুইসাপ ,মেছো বিড়াল, বন-বিড়াল, ঈগল, মদনটাক এবং আরো কিছু প্রজাতির সাপ রয়েছে যেগুলো রাসেল ভাইপার খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে এবং এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এইসব বন্যপ্রাণী বলতে গেলে আজ প্রায় বিলুপ্তির মুখে। তাছাড়া এই সকল বন্যপ্রাণীকে আমরা অনেক সময় দেখলেই কারণে-অকারণে নির্বিচারে আমরা হত্যা করে ফেলি। যারই ফলশ্রুতিতে প্রকৃতিতে রাসেল ভাইপারের আগমন বেড়েই চলেছে।
তাই যেকোনো বন্যপ্রাণী দেখলে এদেরকে হত্যা করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এই বিষধর রাসেল ভাইপার যেমন ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার এই সাপের বিষ থেকে জীবন রক্ষাকারী অনেক ঔষধও তৈরি করা হয়। মনে রাখবেন, সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ,আর তাই সাপ মারা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা
- চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার দংশন করলে আতঙ্কিত না হয়ে আপনি শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। কারণ আতঙ্কিত হলে অনেক সময় বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- যত দ্রুত সম্ভব ক্ষ ক্ষতস্থান অতি সাবধানে সাবান বা জীবাণুনাশক লোশন দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
- সাপে কামড়ানো স্থানটি যতটা সম্ভব হৃদপিন্ডের চেয়ে নিচু স্থানে রাখুন।
- যদি হাতে বা পায়ে কামড় দেয় সেক্ষেত্রে শরীরে টাইট পোশাক থাকলে তা খুলে ফেলুন যেন শরীরে কোন ফোলা ভাব না হয়।
- সাপে কামড়ানোর পর আপনি কোন খাবার খাবেন না বা পান করবেন না।
- এই সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে আপনার নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিভেনোম গ্রহণ করতে হবে।
রাসেল ভাইপার সাপে দংশন করলে আপনি যা করবেন না
এই বিষাক্ত সাপ দংশন করার পরে কিছু সর্তকতা রয়েছে। যেগুলি মেনে চললে এর বিষ আপনার শরীরে খুব সহজে ছড়িয়ে যাবে না। যেমন-
- এই বিষধর সাপ কামড়ানোর পর আপনি কোন ওঝার কাছে যেয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করবেন না কারণ ও যাদের চিকিৎসা প্রদানের বিষয়ে তেমন কোন প্রশিক্ষণ বা যোগ্যতা নেই বললেই চলে। ফলে ও যাদের চিকিৎসা প্রায়শই বিপদজনক হয়।
- সাপ দংশন করার পরে আক্রান্ত স্থান ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে চিড়ে ফেলে বা সুই ফুটিয়ে রক্তপাত করার কোন চেষ্টা করবেন না। কারণ, এতে বিষ আরো দ্রুত আপনার শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- অনেকেই আবার বিশ্বাস করেন সাপে কামড়ানোর স্থান মুখ দিয়ে চুষলে সাপের বিষ বেরিয়ে আসে। এই ধারণা একেবারেই ভুল। আপনি কখনোই মুখ দিয়ে বিষ শুষে বের করার চেষ্টা করবেন না ,এতে আপনি নিজেও সাপের বিষে বিষাক্ত হতে পারেন।
- সাপে কামড়ানোর ক্ষতস্থানটি যত কম পারা যায় ঠিক তত কম নড়াচড়া করবেন। কারণ বেশি নড়াচড়া করলে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
- এসিড জাতীয় কোন কিছু দিয়ে সাপে কামড়ানোর আক্রান্ত স্থানটি পোড়ানোর চেষ্টা করবেন না।
- আক্রান্ত ক্ষতস্থানে কোন গাছ-গাছড়ার রস বা চুন লাগাবেন না।
- সাপে কামড়ের পর কখনো জোর করে বমি করার চেষ্টা করবেন না।
উপরোক্ত নির্দেশাবলী অনুসরণ করলে আপনি এই সাপের বিষক্রিয়া থেকে নিজেকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে পারবেন। যেহেতু এটি একটি ভয়ংকর বিষধর সাপ তাই সময় ক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার সহায়তা নিন এবং কাছাকাছি কোন হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে যান।
রাসেল ভাইপারের অ্যান্টিভেনম আছে কি?
রাসেল ভাইপার সাপের কামড় প্রাণঘাতী হতে পারে তাই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অতীব জরুরী। চন্দ্রপাড়া বা রাসেল ভাইপোর সাপের বিষে সাধারণত তিন ধরনের বিষাক্ত উপাদান থাকে। যেমন-
- Hemotoxins: এটি রক্তের কোষ ভেঙে ফেলে ফলে শরীরে রক্তক্ষরণের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
- Cytotoxins: এর ফলে শরীরের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- Neurotoxins: এই বিষাক্ত উপাদানটি মানব দেহের স্নায়ুতন্ত্র কে আক্রমণ করে। ফলে পেশী প্যারালাইসিস হয়। এমনকি শ্বাসকষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
বর্তমানে রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ালে এর জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টিভেনম বা প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়েছে। রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ানোর পরে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যু ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই এই সাপ কামড়ালে সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে আপনাকে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে।
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে এর অ্যান্টিভেনোম কোথায় পাবেন এবং দাম কত
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয় তা আজকের আলোচনায় জেনেছেন। কিন্তু রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে এর অ্যান্টিভেনোম কোথায় পাওয়া যেতে পারে , পাওয়া গেলেও এই অ্যান্টিভেনাম এর দাম কত হতে পারে তা আমরা অনেকেই জানিনা। এবার চলুন এই সাপে দংশন করলে আপনি কোথায় থেকে এন্টিভেনম পেতে পারেন এবং এর দাম কত হতে পারে তা আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
- সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আপনি রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
- বর্তমানে কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও এই সাপের অ্যান্টোন পাওয়া যাচ্ছে তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
- আবার আপনি ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ ঢাকা থেকেও সরাসরি এই এন্টিভেনোম সংগ্রহ করতে পারেন।
সাধারণত দেশের সকল সরকারি হাসপাতাল গুলোতে রাসেল ভাইপারের অ্যান্টিভেনোম বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। তবে আপনি যদি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এই এন্টিভেনম সংগ্রহ করতে চান, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন হাসপাতাল ভেদে এই অ্যান্টিভেনাম এর দাম পড়বে ৫০০০-১০০০০ টাকা পর্যন্ত।
চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপের বিস্তৃতি
রাসেল ভাইপার সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জেলা বিশেষ করে বর্ধমান, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞলে বেশি দেখা যায়। অতীতে বাংলাদেশের শুধুমাত্র রাজশাহী অঞ্চল এই বিষধর সাপ দেখা যেত যার কারণে এই সাপ অনেকটা বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ নামেও পরিচিত। তবে বর্তমান সময়ে পদ্মা নদীর অববাহিকা ধরে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় রাসেল ভাইপার সাপ বিস্তৃতি লাভ করেছে।
তাছাড়া বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি এলাকা বিশেষ করে রাজশাহী, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, হাতিয়া ,ভোলা এবং ফরিদপুরেও এই রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে এই বিষাক্ত রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব বেড়েছে উদ্বেগ জনক ভাবে।
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয় এ সম্পর্কে আমার মন্তব্য
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি হয়, কামড়ালে করণীয় কি, রাসেল ভাইপারের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচার উপায় এবং এই সাপের অ্যান্টিভেনোম সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমাদের আর্টিকেল পড়ে জানতে পেরেছেন। মনে রাখবেন সাপে কামড়ানো মানে মৃত্যু নয় বরং সঠিক সময়ে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সময়মতো রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসলে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
তাছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতেও সর্প দংশনের যথেষ্ট ভালো বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। তাই সাপে কামড়ালে আপনি আতঙ্কিত হয়ে অহেতুক ওঝার কাছে যেয়ে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে যান এবং এন্টিভেনম গ্রহণ করে নিজের জীবন রক্ষা করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url