সাবুদানা খাওয়ার ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা অনেকেই জানেন। কিন্তু আসল সাবুদানা চেনার উপায় জানেন কি? যদি না জেনে থেকে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
সাবুদানা
কারণ, আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি সাবু খাওয়ার উপকারিতা  এবং আসল সাবুদানা কিভাবে চিনবেন সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরি না করে সাবুদানা সম্পর্কে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সাবুদানা খাওয়ার ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

সাবুদানা খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা

সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সবারই প্রায় কম বেশি ধারণা রয়েছে। তবু অনেকেই আছেন যারা এখনো সাবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নন। ছোট বড় সকলেই সাবুদানা খেতে পছন্দ করেন। তবে আমাদের দেশে সাধারণত শিশুদেরকেই সাবুদানা বেশি খাওয়ানো হয়। সম্মানিত পাঠক, চলুন সাবুদানা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন--
  • হাড় মজবুত করনে সাবুদানাঃ সাবুদানায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে । তাছাড়া নিয়মিত সাবুদানা সেবনে এটি আপনার অস্ট্রিওপোরোসিসের মত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে সাবুদানাঃ সাবুদানা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। কারণ, সাবুদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন ও ফ্লাভোনোয়েড নামক দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,যা আপনার শরীরে ফ্রী রেডিকেলগুলো ধ্বংস করে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে।
  • রক্তচাপ হ্রাসে সাবুদানাঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য সাবুদানা একটি উপদেয় পথ্য। কেননা সাবুদানায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ খুব সহজেই হ্রাস করতে পারে। এতে করে আপনার হৃদরোগ বা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
  • ওজন বাড়াতে সাবুদানাঃ যারা ওজন বাড়াতে যান তাদের জন্য সাবুদানা বেশ উপকারী। কারণ, সাবুদানা একটি ক্যালোরি ঘন খাবার ,যা নিয়মিত নিয়ম করে খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া অনেক সময় শিশুদের ওজন বৃদ্ধির জন্যও সাবুদানা খাওয়ানো হয়।
  • সাবুদানা হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ যাদের বদহজমের সমস্যা রয়েছে বা খাবার হজম হতে চয় না তারা সাবুদানা খেলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। কারণ, সাবুদানায় রয়েছে জলে দ্রবণীয় তন্তু বা আঁশ যা আপনার পৌষ্টিক নালীকে পরিষ্কার রাখে এবং সেই সাথে আপনার হজম শক্তিও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া আপনার পাইলসের মতো সমস্যা সমাধানেও সক্ষম এই সাবুদানা।
  • শরীরে শক্তি জোগাতে সাবুদানাঃ সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইডেট ছাড়াও রয়েছে প্রোটিন ,ফাইবার, সামান্য খনিজ লবণ এবং ভিটামিন। ফলে সাবুদানা খাবার পর পরই তৎক্ষণাৎ শরীরে এনার্জি পাওয়া যায়। আর ঠিক এই কারণেই অনেক মানুষ ব্যায়ামের আগে অথবা পরে সাবুদানা খেয়ে থাকেন।
  • গর্ভাবস্থায় সাবুদানাঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি উত্তম খাবার হলো সাবুদানা। কারণ, গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খেলে তাতে শরীরের ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়ে যায়। তাছাড়া সাবুদানাতে রয়েছে ভিটামিন বি৬ এবং ফোলেট যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশ ও বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তবে গর্ভাবস্থায় যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা সাবুদানা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • চুলের যত্নে সাবুদানাঃ নিয়ম মেনে সাবুদানা খেলে এটি আপনার চুলের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। কারণ, সাবুদানাতে রয়েছে একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন, যা আপনার চুল পড়া রোধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, আপনাকে খুশকির প্রকোপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত সাবুদানের সেবনে এটি আপনার চুলের বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ করে
  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ নিয়মিত সাবুদানা সেবনের ফলে ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এর সহজ প্রাচ্যতা এবং এতে প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে ডায়াবেটিসের মতো রোগগুলোও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এই সাবুদানা।
  • হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতেঃ সাবুদানা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কারণ, সাবুদানাতে রয়েছে পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সাবুদানা আপনার রক্ত প্রবাহকে সচল রাখতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ওপর চাপ কমে। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
  • ব্রণ দূরীকরণে সাবুদানাঃ সাবুদানাতে ট্যানিন থাকার কারণে এর মধ্যে একটি প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফলে যাদের ত্বকে ব্রনের সমস্যা রয়েছে তারা মধু দিয়ে সাবুদানার ফেসমাস্ক ব্যবহার করলে ব্রণ অনেকটাই কমে যায়। ব্রণ দূর করার পাশাপাশি এই ফেসমাস্কটি আপনার মুখের কালো ছোপ দাগ এবং ব্রনের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
  • রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণেঃ যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন নিয়ম মেনে সাবুদানা খান। কারণ, সাবুদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আপনার রক্তশূন্যতার ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ করতে পারে।
  • গ্লুটেন মুক্ত খাদ্য উপাদানঃ গ্লুটেন মানবদেহে এলার্জির সৃষ্টি করে। অনেকেই আছেন যারা গ্লুটেন মুক্ত খাবার খেতে চান। তাদের জন্য সাবুদানা উত্তম। কারণ, সাবুদানার মতো গ্লুটেন বিহীন খাদ্য প্রকৃতিতে নেই বললেই চলে। যেহেতু গম বা বার্লির মতো খাদ্য উপাদানে গ্লুটেন থাকে তাই এর বিকল্প হতে পারে একমাত্র সাবুদানা।
  • মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতেঃ সাবুদানা খাওয়ার ফলে এটি আপনার জিব্বা তে অবস্থিত স্বাদকোরক গুলিকে উদ্দীপিত করে তোলে। ফলে রোগগ্রস্ত অবস্থা থেকে মুক্তির সময় মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে এই সাবুদানা।
  • ফ্লু এবং জ্বর সারাতেঃ আপনি জ্বরে আক্রান্ত হলে এক বাটি সাবুদানা খান তাতে জ্বর দ্রুত সেরে যাবে। শুধু তাই নয়, জ্বরে আক্রান্ত হলে সাবুদানার খিচুড়ি খেলেও অতি দ্রুত ঠাণ্ডা এবং জ্বর সেরে যায়। আবার আপনার ক্ষুধামন্দা ভাবও অনেকটাই কমে যাবে। 
সাবুদানা-খাওয়ার-গুরুত্বপূর্ণ-কিছু-স্বাস্থ্য-উপকারিতা
  • ক্ষুধামন্দা দূর করেঃ অনেক সময় মা-বোনদের পিরিয়ড হওয়ার পূর্বে ক্ষুধামান্দা ভাব দেখা দেয়।সেক্ষেত্রে আপনি দুপুরের খাবারের সময় টক দইয়ের সাথে যদি এক বাটি সাবুদানা খেতে পারেন  তাহলে তৎক্ষণাৎ শরীরে এনার্জি পাবেন এবং ক্ষুধামন্দাও দূর হবে। 
  • মাথা ব্যথা কমাতেঃ পিরিয়ডের সময় প্রজেস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ায় অনেক সময় মা-বোনদের মাথাব্যথা হয়। এই মাথা ব্যথা কমাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে সাবুদানা। কারণ, সাবুদানে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা পিরিয়ডকালীন সময়ে মাথা ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকর।
  • ত্বকের সান ট্যান দূর করেঃ অতিরিক্ত রোদের কারণে আপনার ত্বকে সান ট্যান হলে আপনি সাবুদানা দিয়ে এই সান ট্যান অতি সহজেই দূর করতে পারেন। সান ট্যান দূর করতে আপনি সাবুদানা পেস্ট এর সাথে মধু এবং দুধ মিশিয়ে আপনার ত্বকে ব্যবহার করুন। এভাবে ব্যবহার করতে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ত্বকের সান ট্যান দূর হবে।
  • মেনোপোজ এ সাবুদানার উপকারিতাঃ মেনোপজের সময় মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তন হয়। যার ফলে এই সময় মহিলাদের নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আবার হরমোন পরিবর্তনের সাথে সাথে শরীর ও খারাপ হতে শুরু করে। তাই মেনোপজের সময় সাবুদানা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
এক কথায় বলতে গেলে, সাবুদানা শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী।

সাবুদানা খাওয়ার অপকারিতা

সাবুদানার উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যা আপনার জানা প্রয়োজন। এবার চলুন সাবুদানা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন--

  • সাবুদানা খাওয়ার সময় অবশ্যই প্রক্রিয়াজাত করে তবেই খাবেন। কারণ, প্রক্রিয়াজাত করে না খেলে তাতে আপনার বমি বমি ভাব সৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে লিভারেরও ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই প্রক্রিয়াজাত না করে সরাসরি সাবুদানা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
  • যাদের ওজন এমনিতেই বেশি তাদের সাবুদানা না খাওয়াটাই উত্তম। কেননা এতে কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালরি বেশি থাকার কারণে এটি আপনার ওজনকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। আর তাই আপনি যদি ওজন বাড়াতে না চান সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সাবুদানা না খাওয়াই ভালো।
  • সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে অনেক সময় এটি আপনার পক্ষে হজম করা কঠিন হতে পারে। সুতরাং অতিরিক্ত মাত্রায় সাবুদানা খাবেন না।
  • যদিও সাবুতে সায়ানাইড এর পরিমাণ কম রয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতেই পারে। ঠিক এই কারণে অনেক সময় মনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে এবং পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে তা কোমা পর্যন্তও চলে যেতে পারে।
  • আপনাদের যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা সাবুদানা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত সাবুদানা খেলে আপনার অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা পরবর্তীতে আপনার শরীরে ব্যথা, কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হবে এমন উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
  • সাবুতে রয়েছে উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক। এর অর্থ হল আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই বেড়ে যেতে পারে। আর এটি মূলত যারা ডায়াবেটিসে রোগে ভুগছেন বা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা সাবুদানা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, অন্যথায় তাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তারাও সাবুদানা সেবন এড়িয়ে চলুন। কারণ, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাবুদানা খেলে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে।
  • অতিরিক্ত সাবুদানা খেলে অনেক সময় আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কারন মাত্রতিরিক্ত সাবুদানা খেলে এটি পাচন প্রক্রিয়ায় শোষিত হয়, ফলে আপনার মলত্যাগের জন্য যে পরিমাণ আঁশ প্রয়োজন তা কমে যায়।
  • সাবুদানায় অতিরিক্ত পরিমাণে স্টার্ট থাকার কারণে নিয়মিত সাবুদান খেলে আপনার লিভারের সমস্যাও হতে পারে।
তবে আপনি যদি নিয়ম মেনে সাবুদানা খান সেক্ষেত্রে অপকারিতার থেকে উপকারিতাই বেশি পাবেন

গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশুর জন্য সাবুদানা খাওয়া কতটা উপকারী আপনি কি জানেন? শুধু গর্ভাবস্থায় নয় বরং গর্ভবতী হওয়ার পরবর্তী সময়েও এই সাবুদানা আপনার জন্য উপকার বয়ে আনতে পারে। আসুন এবার জেনে নিন গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খাবার উপকারিতা গুলো কি হতে পারে--
  • শিশুর দৈহিক বিকাশেঃ সাবু দানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল এর মত পুষ্টি উপাদান। ফলে গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খেলে এটি আপনার শিশুর শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে।
  • রক্ত সঞ্চালন প্রবাহ ঠিক রাখতেঃ গর্ভাবস্থায় রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাবুদানায় পটাশিয়াম থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় সেবন করলে পটাশিয়ামের উচ্চমাত্রা আপনার রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • শিশুর জন্মগত বিকৃতি দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত নিয়ম মেনে সাবুদানা খেলে এটি আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্মগত বিকৃতি দূর করে। কারণ, সাবুদানায় রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ফলিক অ্যাসিড যা গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • অস্বস্তি দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় মহিলারা অনেক সময় পেটের ভেতরে জ্বালা ভাব বা অস্বস্তি অনুভব করেন। এই অস্বস্তি দূর করতে হলে আপনি নিয়মিত সাবুদানা খান। কারণ, এটি আপনার হজম ক্রিয়ায় সাহায্য করবে এবং পেটের অস্বস্তিও দূর হবে।
  • পেশী বৃদ্ধিতে সাবুদানাঃ সাবুদানায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিনের ভান্ডার। ফলে গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খেলে এটি আপনার পেশী বৃদ্ধিতে যেমন সাহায্য করে তেমনি আপনার শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি খুব সাধারণ সমস্যা। এই কষ্ট কাঠিন্য দূর করতে আপনি গর্ভাবস্থায় সাবুদানার তৈরি খিচুড়ি খেতে পারেন যা আপনার হজম ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হবে।
  • গর্ভস্থ ভ্রুনের বৃদ্ধিতেঃ গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খেলে গর্ভস্থ ভ্রুণ তার বিকাশের প্রয়োজনীয় সকল উপাদান গ্রহণ করতে পারে এই সাবুদানা থেকে।
  • হাড় মজবুত করতেঃ ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস হলো সাবুদানা । আর এই ক্যালসিয়াম একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • কর্মক্ষমতা বাড়াতেঃ সাবুদানায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। ফলে গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খেলে এটি আপনার দৈনন্দিন কর্ম ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
  • প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর সপ্তাহে অন্তত দুইবার সাবুদানা খাওয়া উচিত। কারণ, এক বাটি সাবুদানা মাখা খেলে এটি আপনার প্রজনন ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করবে।
সুতরাং গর্ভবতী মায়েদের ডায়েটে এমন একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান রাখা উচিত যা প্রসবের পরেও আপনি মেনে চলতে পারেন। আর এই বিকল্প খাদ্য হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন সাবুদানাকে

শিশুদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খাওয়া যেমন উপকারী, তেমনি একটি শিশু জন্মের ছয় মাস পর প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে সাবুদানা। শিশুর সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি হতে পারে চলুন তা আপনাকে জানিয়ে দিই --
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা দূর করেঃ সাবুদানা একটি শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদান হওয়ায় এটি আপনার শিশুর শরিরের ক্লান্তি ভাব কমিয়ে দেয়। আবার একটি অংশ অতিরিক্ত ক্ষুধা দূর করতেও বেশ সহায়ক।
  • শিশুর দৈহিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ সাবুদানা আপনার শিশুর শরীরের ওপর শীতল প্রভাব ফেলে। ফলে আপনার শিশুকে নিয়মিত সাবুদানা খাওয়ালে এটি আপনার শিশুকে খুব গরম বা অস্বস্তিকর হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • শিশুর ওজন বৃদ্ধিতেঃ আপনার যদি কখনো মনে হয় যে আপনার শিশুর ওজন কম, তাহলে ওজন বৃদ্ধির জন্য আপনি আপনার শিশুকে সাবুদানা খাওয়াতে পারেন। কারণ, স্টার্চ এবং শর্করা সমৃদ্ধ এই সাবুদানা একটি শিশুর দৈহিক বৃদ্ধিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • হজম ক্রিয়া উন্নত করেঃ সাবুদানা স্টার্চ এবং কার্বোহাইড্রেটের একটি দুর্দান্ত উৎস হওয়ায়, এটি শুধুমাত্র আপনার শিশুর হজম নয় বরং পাচন সিস্টেমের জন্যও বেশ উপকারী। ফলে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আপনি সাবুদানা খাওয়াতেই পারেন।
  • রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াঃ আপনার শিশুকে নিয়মিত সাবুদানা খাওয়ালে এটি আপনার শিশুর রক্ত প্রবাহ ও রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকেও উন্নত করে। তাছাড়া সাবুদানায় উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের কার্যকারিতায় বেশ সহায়ক।
  • হাড়ের উন্নয়নেঃ সাবুদানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর এই ক্যালসিয়াম একটি শিশুর জন্মের পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যখন শিশুটি তার শরীরের শক্তি ব্যবহার করতে শিখছে। ফলে আপনার শিশুকে নিয়মিত স্বাগতানা খাওয়ালে তা ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে শুরু করে এবং আপনার শিশুর হাড়ের বিকাশেও সাহায্য করে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনার শিশুর জন্য সাবুদানা কতটা উপকারী। তাই দেরি না করে আজ থেকেই আপনার শিশুর খাদ্য ডায়েটে যোগ করুন সাবুদানা।

দুধ সাবু খাওয়ার উপকারিতা

আমরা সাধারণত দুধের সাথে সাবুদানা একসাথে রান্না করে খাই। এতে করে সাবুদানা খেতে আরও বেশি সুস্বাদু হয়। এই দুধ সাবুদানা খাওয়ারও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তাছাড়া দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং সাবুদানায় থাকা শর্করা আমাদের দৈহিক বৃদ্ধিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর তাই ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের জন্য এই দুধ সাবু উচ্চ গুণ সম্পন্ন পুষ্টি হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সাবুদানা আসলে কি?

সাবুদানা খাওয়ার নানান উপকারিতা তো জানলেন। কিন্ত এই সাবুদানা আসলে কি জানেন কি? সাবুদানা সাধারণত একটি সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য। অনেকেই আবার মনে করেন, সাবুদানা এক ধরনের ফল যা গাছে ধরে এবং এই ফল থেকেই সাবুদানা তৈরি করা হয়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। সাবুদানা কোন ফল নয়।
 
 মূলত, পাম গাছের গোড়া থেকে সাদা দুধের মত এক প্রকার রস বের হয়। গ্রীষ্ম মন্ডলীয় এই পাম গাছের স্পঞ্জি মূল থেকে রস সংগ্রহ করে সেটি রোদে শুকিয়ে প্রথমে ময়দার মত পাউডার তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে এই পাউডারকে বিভিন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ছোট ছোট দানায় রুপ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই ছোট ছোট দানাদার পদার্থই বাজারে সাবুদানা হিসেবে বিক্রি করা হয়। 
 
সাবুদানা সাগু নামেও বেশ পরিচিত। কেউ কেউ আবার সাবুদানাকে চেনেন বহুমুখীতা নামে। সাবুদানা একটি সহজপ্রাচ্য এবং হজম যোগ্য খাবার। তাছাড়া কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস হলো সাবুদানা।খাওয়ার পাশাপাশি সাবুদানা অনেক সময় কাপড়ের মার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

আসল সাবুদানা চেনার উপায়

সাবুদানা সেবনের পূর্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আসল সাবুদানা আপনি কিভাবে চিনবেন। কারণ, বর্তমানে বাজারে বর্তমানে আসল জিনিস খুঁজে পাওয়াটাই দায়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ময়দা দিয়েও নকল সাবুদানা তৈরি তৈরি করেও বিক্রি করছেন। আর এই নকল সাবুদানা খেলে তাতে আপনার শরীরে উপকারের পরিবর্তে অপকারিতাই ডেকে আনবে। এবার আসুন আসল সাবুদানা চেনার কিছু টিপস আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
  • আসল সাবুদানা চেনার প্রথম উপায় হল, আপনি যখন সাবুদানা ক্রয় করবেন তখন খেয়াল করবেন দানাগুলো দেখতে যেন উজ্জ্বল সাদা অথবা হালকা গোলাপি বর্ণের হয়।
  • সাবুদানা গুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখলে আঠালো হবে।
  • পানিতে ভেজানোর পর সাবুদানা সাদা রঙের হবে।
  • নকুল সাবুদানা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এটি গলে যায়, কিন্তু আসল সাবুদানা কখনোই গলবে না।
  • নকল সাবুদানা চেনার আরেকটি উপায় হল আপনি পানিতে সাবুদানা ভিজিয়ে রাখলে পানি ঘোলাটে হয়ে যাবে। কিন্তু আসল সাবুদানা অনেকক্ষণ পানিতে ভিজে রাখলেও পানি ঘোলাটে হবে না।
  • নকল সাবুদানার মধ্যে আপনি বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের গন্ধ পাবেন। কিন্তু আসল সাবুদানার মধ্যে আপনি কোন কটু গন্ধ তো পাবেনই না বরং আসল সাবুদানার গন্ধ অনেকটা মিষ্টি মিষ্টি হয়।
  • আসল সাবুদানা চেনার আরেকটি উপায় হল, সাবুদানা গুলোকে আপনি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সাবুদানা গুলো ফুলে উঠবে। কিন্তু নকল সাবুদানা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা কখনোই ফুলে উঠবে না।
  • আপনি রান্নার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ বা জল দিয়ে সাবুদানা গুলো নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত সিদ্ধ হয়। রান্নার পরে যদি সাবুদানা গুলো ট্রান্সপারেন্ট হয়ে যায় তখনই বুঝতে পারবেন এটি আসল সাবুদানা।
আপনি যদি উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য গুলি সাবুদানার মধ্যে না দেখতে পান তাহলে সেটি অবশ্যই আসল সাবুদানা নয়। তাই সাবুদানা কেনার সময় আপনি অবশ্যই একজন নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত খুচরা বিক্রেতার দোকান থেকে কিনবেন।

সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম

সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানার পর আপনি এখন নিশ্চয়ই সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? সাবুদানা খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে।যে নিয়ম মেনে খেলে আপনি এর থেকে উপকারিতা বেশি পাবেন। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন সাবুদানা খাবার নিয়ম গুলো কি তা জেনে নিন --
  • আপনি সাবুদানা খাওয়ার পূর্বে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তবেই খাবেন। সাবুদানা পানিতে ভিজিয়ে বা শুকনো একাধিক উপায়েই আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
  • শুধু সাবুদানা খাবার অভ্যাস না থাকলে আপনি বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়েও এই সাবুদানা খেতে পারেন। শুধু সাবুদানা খাওয়ার থেকে আপনি সবজির সাথে মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাবেন।
  • অনেকে আবার সাবুদানা দুধের সাথে মিশিয়ে খান। এছাড়া কোন ডেজার্ট বা জুসের সাথে মিশিয়েও আপনি সাবুদানা খেতে পারেন।
  • জ্বর হলে আপনি সাবুদানার খিচুড়ি বানিয়েও খেতে পারেন।
  • সাবুদানা দিয়ে অনেকে আবার ক্ষীর,পায়েস এবং বড়া বানিয়েও খেতে পছন্দ করেন।
  • এছাড়াও ফালুদা সহ বিভিন্ন খাবারেও আপনি সাবুদানা ব্যবহার করে খেতে পারেন।
সাবুদানা এমন একটি খাদ্য উপাদান যা দিয়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে পারেন। তবে সাবুদানা দিয়ে সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবারই বেশি তৈরি করা হয়।

প্রতিদিন কি পরিমাণ সাবুদানা খাওয়া উচিত

আসল সাবুদানা কিভাবে চিনবেন সে উপায় আপনি  ইতিমধ্যেই জেনেছেন। কিন্তু সাবুদানা শুধু খেলেই চলবে না বরং প্রতিদিন কি পরিমান সাবুদানা খেতে হবে সেটিও আপনার জানা একান্ত প্রয়োজন।কারণ, সাবুদানার পরিমাণ বয়স ভেদে এক একেক মানুষের জন্য একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন-
  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১-২ কাপ সাবুদানা অনায়াসেই খেতে পারেন।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে সাবুদানা খাওয়ার পরিমাণটা আবার একটু ভিন্ন। কারণ, শিশুদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ধীরে ধীরে সাবুদানার পরিমাণ বাড়াতে হয়। আপনি আপনার শিশুকে ৬ মাস বয়স থেকে সাবুদানা খাওয়াতে পারবেন।
  • আপনার শিশুর বয়স যদি ছয় মাস থেকে এক বছর বছর হয় তাহলে প্রতিদিন ১-২ চামচ সাবুদানা খাওয়াতে পারবেন।
  • আবার আপনার শিশুর বয়স দেড় বছর থেকে তিন বছর হলে আপনি প্রতিদিন 2.5-3 চামচ সাবুদানা খাওয়াতে পারবেন।
  • আপনার শিশু তিন বছর থেকে ছয় বছরের মধ্যে হলে প্রতিদিন ৪ চামচ করে সাবুদানা খাওয়াতে পারবেন।
  • আর শিশুর বয়স যদি ছয় বছর বা এর বেশি হয় তাহলে আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতোই আপনার শিশুকেও ১-২ কাপ পরিমাণ সাবুদানা খাওয়াতে পারবেন।

সাবুদানা দিয়ে তৈরি কিছু রেসিপি

সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই সাবুদানার রেসিপি সম্পর্কে জানতে চান। আমরা আগেই বলেছি সাবুদানা অনেকে অনেক ভাবে খেয়ে থাকেন। কেউ সবজির সাথে, কেউ খিচুড়ির সাথে আবার কেউবা বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন- ক্ষীর, পায়েস প্রভৃতির সাথে খান। সম্মানিত পাঠক,  এবার আপনাদের সাথে শেয়ার করব সাবুদানা দিয়ে তৈরি কিছু রেসিপি যা আপনার উপকারে আসবে আশা করি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে রেসিপি গুলো কি কি তা জেনে নিন--
সাবুদানা-দিয়ে-তৈরি-কিছু-রেসিপি
 সাবুদানার পায়েস রেসিপিঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • সাবুদানা- ১ কাপ
  • গরুর দুধ বা গুঁড়ো দুধ- ২ লিটার পরিমাণ
  • কেওড়া জল-১ টেবিল চামচ
  • দারুচিনি গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
  • এলাচ গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
  • কিসমিস- ১ টেবিল চামচ এবং
  • লবণ- স্বাদমতো
প্রস্তুত প্রণালীঃ
  • আপনি প্রথমেই সাবুদানা পানিতে ধুয়ে আধা ঘন্টার মত ভিজিয়ে রাখবেন।
  • এবার চুলার উপর একটি কড়াই বসিয়ে দিন এবং ২ লিটার পরিমাণ মতো দুধ জ্বাল করতে থাকুন।
  • এক পর্যায়ে দুধ ফেটে গেলে তাতে সাবুদানা দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করুন।
  • সাবুদানা দিয়ে এই পায়েস রান্নার সময় আপনি চুলার আঁচ মাঝারি রেখে ঘন ঘন সাবুদানা নাড়তে থাকবেন যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি সিদ্ধ হয়।
  • অতঃপর সাবুদানা সিদ্ধ হয়ে এলে এতে আপনি চিনি, কিসমিস, এলাচ গুঁড়ো ,দারুচিনি গুড়ো, কেওড়া জল এবং লবণ যোগ করে আরেকবার ভালো করে নেড়ে নিন।
  • এর কয়েক মিনিট পর সাবুদানা থেকে একটি সুন্দর মিষ্টি ঘ্রাণ বের হবে।
  • ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার সাবুদানার পায়েস। এবার আপনি চুলা থেকে নামিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।
সাবুদানার তৈরি বড়া রেসিপিঃ
সাবুদানা দিয়ে তৈরি বড়া অত্যন্ত মুখরোচক একটি খাবার। আপনি কিভাবে সাবুদানা দিয়ে বড়া তৈরি করবেন চলুন তা জানিয়ে দিই --
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • সাবুদানা- ১-২ কাপ
  • সেদ্ধ আলু- ২-৩ টি
  • ধনে পাতা কুচি- ১/২ কাপ
  • কাঁচা মরিচ- ৪-৫ টির মত
  • পেঁয়াজ কুচি- ১/২ কাপ
  • হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • লবণ- স্বাদমতো এবং
  • গরম মশলা গুড়ো- ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
  • সাবুদানের বড়া তৈরি করতে প্রথমেই আপনি সাবুদানা গুলো ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন।
  • এবার একটি কড়াইতে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে গরম করে তাতে ১/২ কাপ পরিমান মত পেঁয়াজ কুচি যোগ করে ভালো মতো ভেজে নিন।
  • পেঁয়াজ ভাজা হয়ে এলে তাতে এক এক করে হলুদ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো ,মরিচ গুঁড়ো, কুচানো কাঁচা মরিচ এবং ধনে গুঁড়ো দিয়ে কষিয়ে নিন।
  • এবার এই কষানো মসলার মধ্যে আপনি সেদ্ধ আলু দিয়ে ভালো করে চটকে মাখিয়ে নিন।
  • অতঃপর,স্বাদ বৃদ্ধির জন্য আপনি পরিমাণ মতো লবণ এবং গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে আরো একবার ভালো মতো মাখিয়ে নিন। এই পর্যায়ে ময়দার মতো একটি পেস্ট তৈরি হবে।
  • সবশেষে, এই পেস্টের সাথে সাবুদানা যোগ করে মিশিয়ে নিন এবং দুই হাতের সাহায্যে বড়ার মত সেপ দিয়ে গরম ডুবো তেলে ভেজে তুলুন।
সাবুদানা ও সবজি রেসিপিঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • সাবুদানা- ১ কাপ
  • সবজি- ১ কাপ ,আপনার পছন্দমত (পটল, আলু, মটরশুঁটি,গাজর টমেটো )
  • জিরা গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়ো-১ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়ো- ১ চা চামচ,
  • আদা-রসুন বাটা- ১ চা চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • গরম মশলা গুঁড়ো- ১ চা চামচ
  • তেল- পরিমাণ মতো এবং
  • লবণ- স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
  • সাবুদানা ও সবজি রান্না করতে আপনি প্রথমেই সাবুদানা গুলো ধুয়ে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • এবার একটি কড়াইতে পরিমাণ মতো তেল দিন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে থাকুন যতক্ষণ না এটি বাদামী বর্ণ ধারণ করে।
  • পেয়াজ বাদামি বর্ণের হয়ে আসলে তাতে এক এক করে সব মসলা যেমন মরিচ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, আদা-রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো এবং জিরা গুঁড়ো যোগ করে কষিয়ে নিন।
  • এভাবে কিছুক্ষণ কষানোর পর তাতে সবজিগুলো দিয়ে আবারো কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে। কসানো শেষে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে আপনি সবজিগুলো সেদ্ধ করে নিন।
  • সবজি সিদ্ধ হয়ে গেলে এই সেদ্ধ সবজির মধ্যে সাবুদানা দিয়ে আরেকবার নেড়েচেড়ে দিন।
  • সবশেষে সাবুদানা সেদ্ধ হলে তেল উপরে ভেসে উঠবে, ঠিক তখনই আপনি গরম মসলা গুড়ো এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালো করে নেড়ে নামিয়ে নিন।
ব্যাস আপনার সাবুদানা দিয়ে সবজি রেসিপি একেবারে তৈরি এবার আপনি গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করতে পারেন।
সাবুদানার খিচুড়ি রেসিপিঃ
সাবুদানার এই খিচুড়ি জ্বরের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী। জ্বর হলে সাধারণত খাবারের প্রতি রুচি অনেকটাই কমে যায়। এই সময় সাবুদানার খিচুড়ি খেলে এটি আপনার মুখের রুচি অতি দ্রুত ফিরিয়ে আনতে পারে। চলুন তাহলে এবার সাবুদানের খিচুড়ি রেসিপিটি জেনে নিন--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • সাবুদানা- ২ কাপ
  • ঘি বা মাখন- পরিমাণ মতো
  • আস্ত জিরা- পরিমাণ মত (ফোঁড়নের জন্য)
  • হলুদ গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
  • মরিচ গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
  • গরম মসলা গুড়ো - ১/২ চা চামচ এবং
  • লবণ- স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
  • সাবুদানের খিচুড়ি তৈরি করতে প্রথমেই আপনি সাবুদানা গুলো ধুয়ে সারারাত পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরদিন সকালে পানি ফুটিয়ে সাবুদানা গুলো সেদ্ধ করে নিন।
  • অতঃপর একটি পরিষ্কার কড়াইতে ঘি বা মাখন দিয়ে তাতে আস্ত জিরার ফোড়ন দিন।
  • এবার এতে আপনার পছন্দ মত সবজি যোগ করে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে সবজিগুলো একটু ভাজা ভাজা করে নিন।
  • সবশেষে, সবজির সাথে সেদ্ধ সাবুদানা, মরিচ গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো ,গরম মসলা গুঁড়ো এবং লবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন।
এভাবেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনি সাবুদানার সুস্বাদু খিচুড়ি তৈরি করে নিতে পারেন।

সাবুদানা খেলে কি মোটা হয়?

সাবুদানা খেলে কি মোটা হয়? এ নিয়ে অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আবার অনেকেই সংশয় ভোগেন সাবুদানা খেলে মোটা হয় কিনা? যারা সাবুদানা খাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন তাদের জন্যই বলছি , আপনি জেনে রাখুন সাবুদানা খেলে কখনোই কেউ মোটা হয় না। কারণ সাবুদানাতে রয়েছে প্রায় 90% জলীয় অংশ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। 
 
এই প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলো দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে। যা আপনার ওজন হ্রাসের জন্য সহায়ক। আবার সাবুতে বিদ্যমান ফাইবার বা আঁশ আপনার হজম ক্রিয়া কে ত্বরান্বিত করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে যা আপনার ওজন হ্রাসকে আরো সহজতর করে তোলে। 
 
সাবুদানাতে ক্যালরি কম এবং পুষ্টি বেশি থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের ওজন হ্রাসের জন্য একটি ভাল খাদ্য উপাদান হতে পারে। সাবুদানা খেলে কেউ মোটা হয় না বরং এটি আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে পরিমিত পরিমাণে সাবুদানের সেবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে আপনার যদি ডায়াবেটিস বা গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থাকে।

সাবুদানার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম সাবুদানাতে উপস্থিত রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উৎপাদন--
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ভিটামিন বি৬ ০.০০৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৫ ০.১৩৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১ ০.০০৪ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ১১ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৭ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম
আয়রন ১.৫৮ মিলিগ্রাম
ফাইবার ০.৯ গ্রাম
ফ্যাট ০.০২ গ্রাম
প্রোটিন ০.১৯ গ্রাম
শর্করা ৮৮.৭ গ্রাম
জলীয় অংশ ১১ গ্রাম
শক্তি ৩৫৮ কিলো ক্যালরি
 বিঃদ্র এই পুষ্টি উপাদানের পরিমান U.S.D.A (United States Department Of agriculture)  অনুসারে

সাবুদানা কোথায় পাওয়া যায় এবং দাম কত ২০২৪

সাবুদানা কোথায় পাওয়া যায় এবং দাম কত তা অনেকেই জানতে চান। এক্ষেত্রে বলব সবুদানার দাম নির্দিষ্ট করে বলাটা কিছুটা মুশকিল কারণ সময় ভেদে এর দাম ওঠা নামা করে। তবে বর্তমান বাজারে আপনি ২৫০ টাকা কেজি দরে সাবুদানা পেয়ে যাবেন। আপনি আপনার নিকটতম বিভিন্ন মুদিখানার দোকানে সাবুদানা পেয়ে যাবেন।
 
 তাছাড়া বর্তমান ডিজিটাল সময়ে আপনি বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকেও অর্ডার করে সাবুদানা ক্রয় করতে পারেন। তবে কেনার আগে অবশ্যই দেখে শুনে যাচাই-বাছাই করে নেবেন এটি আসল নাকি নকল সাবু। তাতে আপনার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া

সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা এ সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। সাবুদানের উপকারিতা এতটাই যে একে সুপারফুড নামেও আখ্যায়িত করা হয়। সাবুদানা এমন একটি সুস্বাদু খাবার যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই খেতে বেশ পছন্দ করেন। আপনি যদি সাবুদানা খেতে অভ্যস্ত না হন, 
তাহলে আপনার নিজের এবং আপনার পরিবারের সকলের সুস্থতার কথা ভেবে আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন সুপারফুড এই সাবুদানা। তবে একটি কথা, সাবুদানা খাওয়ার সময় আপনি অবশ্যই নিয়ম মেনে এবং পরিমাণ মতো সাবুদানা খাবেন। কারণ অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো নয়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url