সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম

সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি কি ইচ্ছুক? সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
সরিষার-তেলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-এবং-ব্যবহারের-নিয়ম
কারণ, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন সরিষার তেলের গুনের কথা এবং এই তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন চুল ও ত্বকের যত্নে সরিষার তেলের উপকারিতা এবং সরিষার তেলের ব্যবহার সম্পর্কে। তাহলে চলুন আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচীপত্রঃ সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

সরিষার তেলের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। যা জানলে জানলে আপনি নিজেও চমকে যাবেন। মানব দেহের জন্য যে কয়েকটি তেল স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত তার মধ্যে সরিষার তেল অন্যতম। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সরিষার তেল সে বনে শরীরে একাধিক উপকার হয় এবং সেই সাথে বাড়ে আয়ুও।
অত্যন্ত পুষ্টি কোন সমৃদ্ধ এই সরিষার তেলে রয়েছে ক্যালোরি, প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ফ্যাটি এসিড, ওমেগা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ। তাহলে এবার চলুন সরিষা তেল ব্যবহারের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক-
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ সরিষার তেলে রয়েছে লাইনোলেনিক এসিড যা আপনার শরীরে ক্যান্সার সেল বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারেই কমিয়ে দেয়। ফলে নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহারে ক্যান্সার আপনার ধারে কাছেও ঘেষতে পারে না। শুধু তাই নয়, পাকস্থলী এবং কোলন ক্যান্সারকেও রুখতে সরিষা তেলের কোন বিকল্প নেই।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ আপনি যদি নিয়মিত সরিষা তেলে রান্না করা খাবার খান তাতে আপনার হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায় এবং আপনার হার্টও সুস্থ থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
  • শরীরের প্রদাহ কমাতেঃ সরিষার তেলে বিদ্যমান আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, ঠান্ডা লাগা, কাশি, মাথা ব্যথা এবং তলপেটের অস্বস্তি কমাতে দারুন কাজ করে এই সরিষার তেল।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ একটু বয়স হলেই আমরা অনেক কিছু মনে রাখতে পারিনা এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি ও লোপ পায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিয়মিত সরিষার তেল সেবন করুন। কারণ, সরিষার তেলে এমন কিছু স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে যা আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • মাইগ্রেনের কষ্ট দূর করেঃ সরিষার তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। আর এই ম্যাগনেসিয়াম আপনার মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই আপনারা যারা মাইগ্রেনের কষ্টে ভুগছেন তারা আজ থেকেই সরিষা তেলের ব্যবহার শুরু করুন এবং সরিষা তেলে রান্না করা খাবার খান। এতে আপনার মাইগ্রেনের কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। 
সরিষার-তেলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-এবং-ব্যবহারের-নিয়ম
  • হাড়ের ব্যথা দূর করেঃ বয়সজনিত কারণে আমাদের কম বেশি সকলেরই শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে এবং হাড়ে ব্যথা অনুভূত হয় যা খুবই কষ্টদায়ক। হাড়ের এই ব্যথা থেকে রেহাই পেতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন ঘানি ভাঙ্গা সরষে তেল। তাছাড়া জয়েন্টের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি সরিষার তেলে পরিমাণমতো কর্পূর মিশিয়ে গরম করে নিন। ঠান্ডা হলে এই তেলটি আপনার ব্যথার স্থানে মালিশ করুন। কিছুদিন এই তেল ব্যবহারে আপনার জয়েন্টের ব্যথা অনেকটাই লাঘভ হবে।
  • ওজন হ্রাস করেঃ সরিষার তেলে রয়েছে ওমেগা ৩,ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং স্বাস্থ্যকর কিছু ফ্যাট যা আপনার রক্তে চর্বির মাত্রাকে অনেকটাই কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • হজম ক্রিয়া উন্নত করেঃ অনেকেরই পেটে বদহজম পেট ফাঁপা সমস্যা থাকে। খাবার খেলে তা সহজে হজম হতে চায় না। এতে করে গ্যাস অম্বলের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা দূর করতে আপনি আজ থেকেই নিয়মিত সরিষা তেলে রান্না করা খাবার খাওয়া শুরু করুন। কারণ, সরিষা তেল হজমে সাহায্য করে।
  • ত্বকের যত্নে সরষে তেলঃ নিয়মিত সরষে তেল ত্বকে ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারে। তাছাড়া সরিষার তেল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার ত্বকের অ্যালার্জিও প্রতিরোধ করতে পারে।
  • নখ মসৃণ করতেঃ অনেকেরই হাতের নখ এবং আঙ্গুল ভঙ্গুর হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিয়মিত নখ এবং আঙুলে সরিষার তেল ব্যবহার করুন।
  • মানসিক চাপ কমাতেঃ বিভিন্ন ধরনের মানসিক অবসাদ কাটাতে সরিষার তেল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া মস্তিষ্কের জন্য সরিষার তেল উপকারী।
  • উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেঃ নিয়মিত সরষের তেল ব্যবহারে এটি পরিপাকতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
  • ঠোট ফাটা রোধেঃ ঠোঁটফাটার অতি সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকের এই ঠোঁট ফাটা সমস্যা এতটাই বেশি থাকে যে কোন লিপজেলও কাজ করে না। এ সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে সরষে তেল। কারণ, সরষে তেল ঠোঁটফাটা রোধে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ 
সরিষা তেলে বিদ্যমান ভিটামিন ই, অমেগা৩, অমেগা6 এবং ফ্যাটি এসিড আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহারে এটি আপনার দেহের নানা রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। যেমন--
  1. সরষে তেলে বিদ্যমান আন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আপনার দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং দাঁতের মাড়িকে মজবুত ও শক্ত করে।
  2. আর্থাইটিস রোগ প্রতিরোধে সরষে তেল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  3. ঠান্ডা,সর্দি,কাশি,জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা সমাধানে সরিষা তেলের কোন বিকল্প নেই।
  4. কোলন এবং ইন্টেস্টাইন সহ যেকোনো ইনফেকশন দূর করতে সরষে তেল বেশ কার্যকরী।

সরিষার তেলের অপকারী দিক

যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তবে উপকারীর দিক বিবেচনা করলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো খুবই নগণ্য। এবার চলুন সরিষা তেলের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন--
  • প্রথমেই বলি সরিষার তেলে ২০-৪০ শতাংশ এরিউসিক এসিড রয়েছে যা মানব দেহে প্রায় ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে। আর এই ট্রাইগ্লিসারাইড হৃৎপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। এমনকি এর ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার সহ অ্যানিমিয়াও হতে পারে।
  • ত্বকে মাত্রাতিরিক্ত সরিষার তেল ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের স্কিনের ক্ষতি হতে পারে।
  • সরিষার তেল ব্যবহারে অনেকের এলার্জির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। সুতরাং, যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের সরিষার তেল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই ব্যবহার করবেন।
  • বাচ্চাদের শরীরে সরিষার তেল মালিশ করলে এটি বাচ্চার এপিডার্মিস এর ক্ষতি করে এবং ত্বকের জলীয় অংশের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। এর ফলে অনেক সময় ত্বকে ফোসকা পড়ে যেতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন সময়ে মাত্রাতিরিক্ত সরষে তেল ব্যবহার না করাটাই ভালো। কারণ, সরষে তেলে এমন কিছু রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের গঠনে বাধা প্রদান করতে পারে।
  • এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মাত্রাতিরিক্ত সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে বন্ধ্যাত্বের মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের সর্ষে তেল ব্যবহার না করাটাই ভালো। কারণ, তৈলাক্ত ত্বকে সর্ষের তেল ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব আরো বেড়ে যেতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ ত্বকে ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে।
  • এরিউসিক অ্যাসিড দীর্ঘ দিন ধরে মানব দেহে প্রবেশ করলে এটি মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস নামক একপ্রকার রোগ সৃষ্টি করে। যদিও তিনি এখনো তেমন কোনো গবেষণা পাওয়া যায়নি।
সম্মানিত পাঠক, কোন খাদ্য উপাদান সেটি যতই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হোক না কেন মাত্রা অতিরিক্ত খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। সরিষার তেলের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য।

সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম

সরষে তেল খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যারা সরষে তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেন তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিতই এই তেলের ব্যবহার করে থাকেন। তারপরেও অনেকেই আছেন যারা সরষে তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। যারা অবগত নন তারা জেনে নিন সরিষার তেল কোন নিয়মে খেতে হয়-
  • আপনি অনেকভাবেই সরিষার তেল খেতে পারেন। বিশেষ করে রান্নার ক্ষেত্রে আপনি সরিষার তেলকে বেস্ট চয়েজ হিসেবে নিতে পারেন।
  • যেকোনো ধরনের ভাজাভুজি, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড সহ যেকোনো রান্নায় আপনি সরিষার তেল অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার খাবারও সুস্বাদু হবে।
  • শুধু খাবার নয় বরং সরষে তেল ত্বক এবং শরীরের জন্য সমানভাবে উপকারী। আর তাই সরষে তেল খেলে আপনার শরীরের কোন ক্ষতি হবে এমন ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন।
  • আপনি সর্ষের তেল দিয়ে মুড়ি মাখিয়েও খেতে পারেন।
  • তাছাড়া বিভিন্ন খাবার যেমন ঝাল মুড়ি চানাচুর বাদাম চাউলের চিড়া ইত্যাদিতে সাত বাড়াতে আপনি সরষে তেল ব্যবহার করে খেতে পারেন।
  • বাঙালির বর্তমানে সরষে তেল। আর সরষে তেল ছাড়া ভর্তা যেন একেবারেই বেমানান। বিভিন্ন ধরনের ভর্তা যেমন আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, পটল ভর্তা, মাছ ভর্তা, সবজি ভর্তা, শাক ভর্তা এবং সিদল ভর্তা থেকে শুরু করে সকল ভর্তায় আপনি সরষে তেল ব্যবহার করে খেতে পারেন।

রান্নায় সরিষা তেলের উপকারিতা

সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। রোজকার রান্নায় সরষে তেল ব্যবহার করলে এতে খাবারটি যেমন সুস্বাদু হয় তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত হয় বটে। শুধু তাই নয়, রান্নায় সরষের তেল ব্যবহার করলে আপনি ৭টি মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আসুন এবারে জেনে নেই রান্নায় সরিষা তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে--
  • হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর অনেক মানুষ অকালেই মারা যাচ্ছে। হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি রান্নায় সরষের তেল ব্যবহার করুন। কারণ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেলে বিদ্যমান মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে যায়।
  • রান্নায় সরষে তেল ব্যবহার করলে আপনার শতকরা ৫০ ভাগ টিউমার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
  • নিয়মিত রান্নায় সরষে তেল ব্যবহারে এর এলিল আইসোথিয়োকানেট উপাদান মুদ্রাশয় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩৪ ভাগ কমিয়ে দেয়।
  • শরীরের প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করতে সরিষার তেলের কোন বিকল্প নেই।
  • সরষে তেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ একেবারে কম থাকায় এটি আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন প্রতিদিনের রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করলে নানান উপকার পাওয়া যায়। এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি আজ থেকেই আপনার রোজকারের রান্নায় সয়াবিন তেলের পরিবর্তে সরষে তেল যোগ করে নিন।

চুলের জন্য সরিষা তেলের উপকারিতা

শুধু ত্বকই নয় বরং চুলের যত্নেও সরিষার তেলের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। চুলের যত্নে সরষের তেল প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। অনেকেই চুলে সরষের তেল ব্যবহার করতে চান না। কিন্তু চুলে সরষে তেলের উপকারিতা জানলে আপনি আজ থেকেই আপনার চুলে সরষের তেল ব্যবহার শুরু করে দিবেন। চুলের জন্য সরষে তেলের উপকারিতা গুলো হল--
  • সরষের তেলে রয়েছে আলফা ফ্যাটি এসিড। ফলে চুলে নিয়মিত সরষে তেল ব্যবহারে এটি আপনার চুল পড়া যেমন বন্ধ করে তেমনি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
  • আপনি আপনার চুলকে অকাল পক্বতা হাত থেকে বাঁচাতে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার চুলে সরষে তেল মালিশ করুন। এতে আপনার চুল অকাল পক্বতা থেকে রক্ষা পাবে।
  • এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারকেল তেল ও আমলার তেলের মধ্যে সরষে তেল চুলের বৃদ্ধিতে অধিক কার্যকর।
  • সরষে তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক এবং বিটা ক্যারোটিন যা আপনার মাথায় নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
  • তাছাড়া সরষে তেলে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান। আর এই অ্যান্টি ফাঙ্গাল আপনার চুলের খুশকি দূর করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • মাথার তালুতে নিয়মিত সরষের তেল মালিশ করলে আপনার মাথার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং চুলের গোড়াও শক্ত ও মজবুত হবে।
  • যারা চুল লম্বা করতে চান তারা আজ থেকেই চুলে সরষে তেলের ব্যবহার শুরু করে দিন। কারণ, সরষে তেলে রয়েছে ভিটামিন,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং মিনারেল যা আপনার চুলকে লম্বা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • চুল পড়া রোধ করতে আপনি সরষে তেলের সাথে এলোভেরা মিশিয়ে সেটি ভালো করে আপনার মাথার তালুতে মালিশ করুন। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট পর আপনার চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার চুল অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পাবে।
সম্মানিত পাঠক, চুলের যত্নে সরিষা তেলের এতসব উপকারিতা জানার পরে আর দেরি নয় বরং আজ থেকেই আপনার চুলে সরষে তেলের ব্যবহার শুরু করে দিন।

ত্বকে সরিষা তেলের উপকারিতা

সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর আপনি এখন নিশ্চয়ই ত্বকের যত্নে সরষে তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। ত্বকের যত্নে সরিষা তেলের বেশ কদর রয়েছে। কারণ, সরিষা তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা আপনার ত্বকের জন্য ভীষণই উপকারী। সম্মানিত পাঠক, ত্বকে সরিষার তেল ব্যবহারের উপকারিতা কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • আপনি আপনার ত্বকে সরিষার তেলকে সানস্ক্রিন বা লোশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • নিয়মিত নিয়ম করে ত্বকে সরিষার তেল ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বকের তামাটে ভাব অনেকটাই দূর করে দেয়।
  • সরষে তেল আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রো ভায়োলেট অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া এটি আপনার ত্বকের রিংকেল কমাতেও সাহায্য করে।
  • সরষের তেল এবং হলুদ গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে আপনার ত্বকের মৃত কোষ অপসারিত হয় এবং ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর হয়।
  • সরষে তেলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান আপনার ত্বকের এলার্জির সমস্যা দূর করে এবং সেই সাথে ত্বককে করে তোলে মসৃণ ও উজ্জ্বল।

সরিষার তেলের নানাবিধ ব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনযাপনে সরিষার তেলের সরিষার তেলের নানান উপকারিতা পেতে ও অপকারিতা এড়িয়ে চলতে এই তেলের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে।। তাছাড়া সরষে তেলের ব্যবহার আমাদের কমবেশি সকলেরই জানা। অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় এই তেল প্রত্যেকটি বাড়িতে বিশেষ করে বাঙালি বাড়ির রান্নাঘরে পাওয়াই যায়। কিন্তু শুধু রান্না নয় বরং মালিশ এবং ঔষধি কাজেও ব্যবহৃত হয় এই সরিষার তেল। সম্মানিত পাঠক, এবার সরিষার তেলের আরো নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে জানাবো

  • রান্নায় সরষে তেলের ব্যবহারঃ উচ্চ তাপমাত্রায় সহনশীল হওয়ায় সরষে তেলকে রান্নার জন্য একটি আদর্শ তেল হিসেবে গণ্য করা হয়। তাছাড়া সরষে তেলের নাক ঝাঁঝালো ঘ্রাণ খাবারের স্বাদ আরো দ্বিগুণ পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সরষের তেল দিয়ে আপনি আলু ভাজা,ডিম ভাজা,মাছ ভাজা বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক ভর্তা ইত্যাদি করতে পারেন। 
  • এগুলো ছাড়াও সরষে তেল দিয়ে মাছ-মাংস রান্না,ডাল ভুনা, মটরশুঁটির ঝোলও রান্না করতে পারেন।অন্যান্য তেলের থেকে সরষে তেল দিয়ে রান্না করা খাবার নিঃসন্দেহে বেশি স্বাস্থ্যকর কারণ সরিষার তেলে রয়েছে গ্লুকো সিনোলেট উপাদান যা ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।
সরিষার-তেলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-এবং-ব্যবহারের-নিয়ম
  • সরিষা তেলের ঔষধি ব্যবহারঃ সরিষা তেলে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল,এন্টিফাঙ্গাল এবং আন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে একে প্রাকৃতিক ঔষধি তেলও বলা হয়ে থাকে। ফলে এই পেন দিয়ে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ যেমন-ব্রণ, ব্রনের কালো দাগ, ত্বকের বলি রেখা ইত্যাদিতে সরিষার তেল ব্যবহৃত হয়।
  •  শুধু ত্বকের ক্ষেত্রেই নয় বরং চুল পড়ার মতো সমস্যাতেও সরিষা তেল ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া গলা ব্যথা,সর্দি কাশি এবং হাঁপানির মতো সমস্যায় সরিষা তেল ব্যবহার করলে বেশ স্বস্তি পাওয়া যায়।
  • মালিশের ক্ষেত্রে সরিষা তেলের ব্যবহারঃ মালিশের ক্ষেত্রে সরিষা তেল দারুন কাজ করে। কারণ শরীরে সরিষার তেল মালিশ করলে এটি তত্ত্বকে উষ্ণ করে তোলে এবং ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাছাড়া নিয়মিত সরিষার তেল মালিশে ত্বক মসৃণ এবং সুন্দর হয়। শুধু তাই নয় সরিষার তেল মালিশে মাথা যন্ত্রণা, বাতের ব্যথা, পেশির ব্যথা ইত্যাদি দূরীভূত হয়।
  • সরষে তেলের অন্যান্য ব্যবহারঃ অনেক ক্ষেত্রে সরষে তেল জ্বালানিতে হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সাবান, শ্যাম্পু এবং অন্যান্য প্রসাধনী তৈরিতেও এই সরষে তেল বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
রান্নার ক্ষেত্রে সরষে তেল ব্যবহারের কিছু ঘরোয়া টোটকাঃ
  1. আপনি রান্নার সময় সরিষার তেল মাত্রা অতিরিক্ত গরম করবেন না কারণ বেশি গরম করলে এই তেলের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়।
  2. রান্নার সময় আপনি পরিমিত পরিমাণ সরষে তেল ব্যবহার অর্থাৎ রান্নার ক্ষেত্রে যতটুকু তেল আপনার লাগবে ঠিক ততটুকুই। কারণ, অধিক দিলে রান্না করলে সেই খাবার অনেক সময় খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।

সরিষার তেল ব্যবহারের নিয়ম

সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতার পর এবার আপনাদের এই তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানাব। সরিষার তেলের উপকারিতা পেতে আপনি নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহারের চেষ্টা করুন। কারণ, চিকিৎসকদের মতে যে কনো রোগ নিরাময়ে সরিষার তেলের উপর আস্থা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া নিয়মিত সরিষা তেল ব্যবহারে অনেক জটিল শারীরিক সমস্যা মোকাবেলা করাও সম্ভব হয়। এবার চলুন,সরিষার তেল ব্যবহারের কিছু নিয়ম আপনাদের জানাবো--
  • আপনি অল্প পরিমাণ সরিষার তেল হাতের তালুতে ঘষে আপনার মুখের ত্বকে লাগিয়ে নিন এতে করে সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রভারলেট অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে আপনার ত্বক রক্ষা পাবে।
  • ঠান্ডা লাগা, জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি দূর করতে আপনি উষ্ণ সরিষার তেলের সাথে কালোজিরে মিশিয়ে আপনার বুকে, পিঠে ভালো করে মালিশ করুন, তাতে আরাম পাবেন। এতে আপনার শরীর যেমন উষ্ণ হবে তেমনি শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হবে।
  • সরিষার তেল এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় টি আপনার ত্বকের অ্যালার্জি এবং র‍্যাশ প্রতিরোধেও সক্ষম। তাছাড়া ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি দূর করতেও সরষে তেল বেশ কার্যকরী।
  • আপনার ত্বককে যদি নরম,মসৃণ করতে চান এবং ত্বকের হারানো ঔজ্জ্বল্য জন্য ফিরে পেতে চান তাহলে সরষে তেল এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে আপনার ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
  • আপনার ত্বকের কালো দাগ ,ট্যান পড়া, বলিরেখা ইত্যাদি দূর করতে দই, বেসন, লেবুর রস এবং সরষের তেল একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকে লাগিয়ে 10-15 মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। আপনি টানা কয়েকদিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের কালো দাগ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
  • সরষে তেলে ভিটামিন এ ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকার কারণে এটি রিংকল কমাতেও সাহায্য করে।
সরষে তেলের উপরিউক্ত ব্যবহারগুলোর গুলোর মধ্যে আপনার সুবিধামত যে কোন পদ্ধতি আপনি আপনার ত্বকে ব্যবহার করেই দেখুন না! এর ফলাফল টের পাবেন হাতেনাতেই।

ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল কিভাবে উৎপাদন করে?

সরিষার তেলের এতসব উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই সরিষার তেল উৎপাদন সম্পর্কে জানতে চান। সম্মানিত পাঠক, আজকের এই পোস্টের মাধ্যমেই আপনি ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল উৎপাদন পদ্ধতি জেনে যাবেন। ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল উৎপাদন মূলত একটি সনাতনী পদ্ধতি। 
 
এই পদ্ধতিতে সরিষার তেল উৎপাদনের জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল উৎপাদন করতে প্রথমে সরিষা দানাগুলোকে পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয় যাতে করে সরিষার ভেতরে থাকা ধুলাবালি,নোংরা পদার্থ বেরিয়ে যায়। অতঃপর সরিষা দানা রোদে ভালো করে শুকিয়ে প্রসেস করে নিতে হজাবেনরোদে শুকানোর পর সরিষা দানা পিষ্ট করার জন্য নিয়ে যেতে হবে ঘানিতে।
 
আর এই ঘানি তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী কাঠ দিয়ে। এই পর্যায়ে সরিষা গুলো ঘানি র মধ্যে ঢেলে দেওয়া হয় এবং দুটি গরুর সাহায্যে ঘানির হাতল অত্যন্ত ধীরগতিতে অনবরত ঘোরানো হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখি, যদি উচ্চ গতিতে ঘানির হাতল ঘোরানো হযযাবেতাহলে অধিক পরিমাণ তাপ সৃষ্টি হবে এবং এই তাপে তেলের গুণগতমান নষ্ট হবে।
 
সে যাই হোক, এভাবে আস্তে আস্তে ঘানির হাতল ঘোরানোর সাথে সাথে সরিষার দানাও পিষ্ট হতে থাকে এবং সেগুলো থেকে অল্প অল্প করে রস বেরোতে থাকে। পরবর্তীতে এই রস ফিল্টার করে এর থেকে তেল আলাদা করে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত এই তেল বাজারজাত করা হয়। জা আমরা বাজার থেকে কিনে থাকি।

সরিষার তেলের প্রকারভেদ

আমাদের দেশে সাধারণত দুই প্রকার সরিষার তেল পাওয়া যায়। একটি হলো কাচ্চি ঘানি এবং অপরটি হল এসেন্সিয়াল অয়েল। এবার চলুন এই দুই প্রকার সরিষার তেল সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা ধারণা দেই-
  • কাচ্চি ঘানি সরিষার তেলঃ কাচ্চি ঘানি সরিষার তেল মূলত মেশিনে ভেঙ্গে তৈরি করা হয় এবং সরিষার তেলের বিশুদ্ধ রূপ এটিই। কাচ্চি ঘানি সরিষার তেল গাঢ় হলুদ রঙ্গের হয় এবং এর নাক ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে। এইটেল স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। কাচ্চি ঘানি সরিষার তেল কোল্ড প্রেসড(cold pressed) নামেও পরিচিত।
  • এসেন্সিয়াল অয়েলঃ এই তেল বিভিন্ন উপাদান যেমন ভিনেগার,পানি ইত্যাদির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় এবং খুবই পাতলা হয়। এই সরিষার তেলে মাইরোসিনেইস এবং সিনিগ্রীন নামক দুটি উপাদান থাকে যা পানির সাথে মিশে একটি বিষাক্ত কম্পাউন্ড তৈরি করতে সক্ষম। যার ফলে এই তেল খাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কিন্তু বিভিন্ন থেরাপির কাজে এই এসেন্সিয়াল অয়েল বহুল ব্যবহৃত হয়।

সরিষার তেল কি সত্যিই ওজন কমায়?

সরিষার তেল কি সত্যিই ওজন কমায়। সরিষার তেল স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি আপনার ত্বক এবং চুলের জন্য সমানভাবে উপকারী। তাছাড়া যেকোনো তেলেই স্যাচুরেটেড ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। ফলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হলেও আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট আপনার শরীরের জন্য উপকারী।
 
এখন আপনাদের মনে অনেকেরই প্রশ্ন আসতে পারে সরিষার তেল কি আদৌ ওজন কমায়? দেখুন সরিষার তেল খেলে যে রাতারাতি আপনার ওজন কমে যাবে ব্যাপারটা তেমন নয়।তবে হ্যাঁ, যারা পেটের সমস্যায় ভোগেন বা সহজে খাবার হজম হতে চায় না তারা তাদের খাবারে সরিষার তেল ব্যবহার করলে এই তেল হজম শক্তিকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়।
 
আর হজম শক্তি বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।আবার সরিষার তেলে এমন কিছুর স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা শুধু খাবারের স্বাদই বৃদ্ধি করে না বরং আপনার রক্তে চর্বির মাত্রাও হ্রাস করতে সাহায্য করে। সুতরাং,বুঝতেই পারছেন সরিষার তেল ব্যবহারে কিছুটা হলেও আপনার ওজন কমবে।

সরিষার তেলের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান

সরিষার তেল খাওয়ার বহুবিধ নিয়ম তো জানলেন। এবার চলুন এই তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন। প্রতি ১ টেবিল চামচ সরিষার তেলে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান--
পুস্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ১২৪ কিলোক্যালরি
ফ্যাট ১৪ গ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট ১.৬ গ্রাম
মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৮.৩ গ্রাম
পলি অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২.৯ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ ১৪ গ্রাম

আসল সরিষার তেল চেনার উপায়

সরিষার তেলের উপকারিতা পেতে  এবং অপকারিতা এড়াতে আসল খাঁটি সরিষার তেল চেনা অত্যন্ত জরুরী। কারন, আজকাল তো চাল,আটা,ময়দা থেকে শুরু করে সব খাবারে এমনকি ভোজ্য তেলও ভেজালের হাত থেকে রেহাই পায় না। আর এই ভেজাল তেল ব্যবহারের ফলে আপনার শরীরে নানা রকম শারীরিক সমস্যা যেমন- পেটের সমস্যা,দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এমনকি রক্তাল্পতাও দেখা দিতে পারে।
 
সুতরাং আসল সরিষার তেল চেনাটা ভীষণ জরুরী।এখন প্রশ্ন হল আপনি আসল সরিষার তেল কিভাবে চিনবেন? সম্মানিত পাঠক, আসল সরিষার তেল চেনার কিছু উপায় আজ আপনাদের জানাবো যাতে করে আপনি খুব সহজেই আসল খাঁটি সরিষার তেল চিনতে পারেন। তাহলে আসুন সরিষার তেল চেনার উপায়গুলো জেনে নিন --
  • প্রথমতঃ আপনি সরিষার তেল কিনে দুই থেকে তিন ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিন। ঘন্টা দুয়েক পর ফ্রিজ থেকে তেলটি বের করে যদি দেখেন এটি খানিকটা জমাট বেঁধে গেছে এবং তেলের ওপর সাদা আস্তরণ পড়ে গেছে তাহলে বুঝবেন এটি ভেজাল যুক্ত সরিষার তেল। কারণ খাঁটি সরিষার তেল কখনোই জামিনা এবং সর্বদা তরল অবস্থায় থাকে।
  • দ্বিতীয়তঃ আপনি সরিষার তেলের ঘ্রাণ সুখেই বুঝতে পারবেন এটি আসল নাকি নকল। কারণ,খাঁটি সরিষার তেলে তীব্র নাক ঝাঁঝালো ঘ্রাণ থাকে। এই ঝাঁঝালো ঘ্রাণ আপনার চোখে পানিও এনে দিতে পারে। কিন্তু ভেজাল সরিষার তেলের গন্ধ অতোটা তীব্র হয় না।
  • তৃতীয়তঃ সরিষার তেল আসল নাকি ভেজাল যুক্ত তা বোঝার সবথেকে সহজ উপায় হলো হাতের তালুতে তেল নিয়ে ঘষে দেখা। এর জন্য আপনি আপনার হাতের তালুতে খানিকটা সরিষার তেল নিন এবং একটু ঘষে নিন। ঘষার ঠিক পরে যদি দেখেন তেলের রং ছেড়ে যেতে শুরু করেছে, তেল একটু বেশি চিটচিটে হয়ে গেছে এবং তেলের ঘ্রাণও পরিবর্তন হয়ে গেছে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে বুঝে নেবেন সেটি ভেজাল সরিষার তেল।
  • চতুর্থতঃ সরিষার তেলের রং অত্যন্ত গাঢ় এবং ঘন হয়। কিন্তু ভেজালযুক্ত সরিষার পেলে হালকা হলুদ রং দেখা যায়।
উপরিউক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই খাঁটি সরিষার তেল চিনে নিতে পারবেন আশা রাখছি।

সরিষার তেলের দাম কত ২০২৪

অনেকেই সরিষার তেলের দাম সম্পর্কে জানতে চান। বাজারে সচরাচর দুই ধরনের সরিষার তেল অর্থাৎ খোলা সরিষার তেল এবং বোতলজাত করা সরিষার তেল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে জানিয়ে দিন খোলা সরিষার তেলের দাম তুলনামূলকভাবে কম বোতলজাত করা সরিষার তেলের দামের থেকে।বাজারে বিভিন্ন মুদিখানার দোকানে আপনি সরিষার তেল পেয়ে যাবেন। বর্তমানে বোতলজাত করা এক কেজি সরিষার তেলের দাম পরে ২৫০-২৮০ টাকা। 
 
কোন কোন জায়গায় এই তেল আবার ২৬০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা সরিষার তেল আপনি পেয়ে যাবেন প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা দরে। এই দাম স্থান ভেদে কিছুটা কম বেশি হতে পারে। আরেকটি কথা, সরিষার তেল কেনার সময় আপনি অবশ্যই যাচাই বাছাই করে ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তেল ক্রয় করবেন। যা আপনার শাস্তির জন্য উপকারী হবে।

সরিষার তেল ব্যবহারে সতর্কতা

সরিষার তেল ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সরিষার তেল ব্যবহারের আগে আপনি অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন আপনার ব্যবহৃত তেলটি খাঁটি নাকি নকল। কারণ নকল বা ভেজাল যুক্ত সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে আপনার উপকারের পরিবর্তে অপকার হতে পারে। তাছাড়া আজকের পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমাদের কে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরিষার তেল কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
 
কিন্তু একবার ভাবুন তো, সরিষার তেল আসল না হয়ে যদি ভেজাল যুক্ত হয় তাহলে সেটি কি আমাদের জন্য কোন উপকার আদৌ বয়ে আনবে? মোটেও না। অনেক সময় দোকানের খোলা সরিষার তেলে নানা ধরনের ভেজাল মিশ্রিত থাকে এবং এই তেল ব্যবহারের ফলে আপনার রোগব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। আর তাই সরিষার তেল কেনার সময় আপনি অবশ্যই সচেতন হবেন।

সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া

সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন। শুধু রান্নার ক্ষেত্রেই নয় বরং প্রাচীনকাল থেকেই যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই সরিষার তেল। তাছাড়া শীতকালে তো সরিষার তেল মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। যদিও সরিষা তেলের স্বাস্থ্যগত গুনাগুন অনেক তা সত্ত্বেও কোন তেল ই অধিক পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত নয়।
 
কারণ, নিয়মিত এবং সঠিক পরিমাণে সর্ষের তেল ব্যবহারে আপনি এর থেকে উপকারিতা বেশি পাবেন।আপনি যদি সরষে তেল এখনো ব্যবহার না করে থাকেন তাহলে আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন ঘানি ভাঙ্গা খাঁটি সরিষার তেল। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের বোধগম্য হয়েছে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url