থানকুনি পাতার ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি কি ইচ্ছুক? যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা কতটা জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
আজকে আমাদের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জেনে নিতে পারবেন থানকুনি পাতার নানা গুনের কথা এবং যৌবন ধরে রাখতে এই পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ থানকুনি পাতার ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
- থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
- থানকুনি পাতার কিছু অপকারিতা
- থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম
- যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা
- থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়?
- থানকুনি পাতা বিভিন্ন রেসিপি
- থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য
- থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান
- থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়
- থানকুনি পাতা যাদের ব্যবহার করা উচিত নয়
- থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কে না জানে বলুন! সেই প্রাচীনকাল থেকে পেটের অসুখ থেকে শুরু করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, এমনকি সৌন্দর্যচর্চাতেও যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে থানকুনি পাতা। অতীতে থানকুনি পাতার বেশ কদর থাকলেও বর্তমানে অনেকেই আছেন যারা থানকুনি পাতাটিই চেনেন না। যারা থানকুনি পাতা চেনেন না বা এর উপকারিতা সম্পর্কেও জানেন না, চলুন আপনাকে থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো জানিয়ে দিই --আরো পড়ুনঃ তেলাকুচা পাতার ১০টি কার্যকরী উপকারিতা
- ত্বকের আদ্রতা দূর করেঃ অল্প বয়সেই আপনার ত্বকে কি বয়সের ছাপ পড়ে গেছে? তাহলে চিন্তা কিসের? এর সমাধান রয়েছে আপনার হাতের নাগালেই। আপনি আজ থেকে ব্যবহার শুরু করুন থানকুনি পাতা। কারণ, থানকুনি পাতায় রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ফ্যাটি এসিড, এমাইনো এসিড এবং ফটোকেমিক্যাল সহ প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান যা আপনার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে। ফলে নিয়মিত থানকুনি পাতা ব্যবহারে আপনার ত্বক থাকবে কমল এবং ত্বকে বয়সের ছাপও পড়বে না।
- শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতেঃ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক সময় আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে নানারকম শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। অনেকে আবার থ্রম্বোসিস এর মত সমস্যায় ভুগতে থাকেন। আপনার এই সকল সমস্যা দূর করতে পারে একমাত্র থানকুনি পাতা। কারণ, থানকুনি পাতা খেলে রক্ত বিশুদ্ধ থাকে এবং সেই সাথে আপনার শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। যার ফলস্বরূপ শারীরিক বিভিন্ন জটিলতাও দূর হয়।
- ত্বকের ক্ষত সারাতেঃ ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত যেমন- আঘাত জনিত ক্ষত বা কোথাও কেটে গেলে তৎক্ষণিকভাবে রক্তপাত বন্ধ করতে আপনি থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, থানকুনি পাতা কেটে যাওয়া ক্ষতস্থানে লাগালে তাতে রক্তপাত বন্ধ হয়, ব্যথার উপশম হয় এবং ক্ষতও খুব দ্রুত সরে যায়।
- শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতেঃ অনেকেই আছেন যাদের শরীর জ্বালাপোড়া করে এবং প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি বোধ করেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আজ থেকেই ব্যবহার শুরু করুন থানকুনি পাতার। কারণ, থানকুনি পাতায় রয়েছে মেডিকাসসাইড যা আপনার ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ভেতর থেকে ত্বককে ঠান্ডা এবং প্রশান্ত করে তোলে। এতে আপনার ত্বকের জ্বালাপোড়া যেমন দূর হবে তেমনি ত্বক ফুটে উঠবে সতেজ ভাবে।
- মানসিক চাপ কমাতেঃ দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মে বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রাখে। আপনার এই মানসিক অবসাদ দূর করতে পারে কেবলমাত্র থানকুনি পাতার রস। কারণ, থানকুনির রস স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। ফলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ, অস্থিরতা থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন।
- আলসার দূরীকরণেঃ পেটের যেকোনো ধরনের রোগ যেমন পেট ফাঁপা, বদ হজম, গ্যাস, অম্বল এবং আমশয় থেকে শুরু করে আলসারের মতো যেকোনো রোগ নিরাময় হয় থানকুনি পাতার গুনে। তাছাড়া নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে এটি আপনাকে আপনার হজমজনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ অনেক সময় অল্প বয়সেই আমাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়ে যায়।ফলে অতীতের অনেক কথা, স্মৃতি হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারিনা। এই সমস্যা দূর করতে আপনি খেতে পারেন থানকুনি পাতার রস। কারণ, থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাস্যাক্লিক ট্রিটারপেনস নামক একটি উপাদানের মাত্রা বাড়াতে শুরু করে। এতে আপনার ব্রেনসেল দারুন ভাবে কাজ করে এবং একই সাথে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
- অনিদ্রা দূর করেঃ যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন বা রাতে ঘুম আসতেই চায়না তাদের জন্য থানকুনি পাতা একটি উপাদেয় পথ্য। এই অনিদ্রা রোগ দূর করতে আপনি খেতে পারেন থানকুনি পাতা ভেজানো জল। এই জল আপনি টানা কয়েকদিন নিয়মিত নিয়ম করে খেলে আপনার স্নায়ু যেমন শিথিল হবে, তেমনি অনিদ্রাও দূর হবে।
- ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধেঃ পরিবেশের বিভিন্ন দূষণ এবং সূর্যের রশ্মির কারণে অনেক সময় আমাদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যায়। থানকুনি পাতায় বিদ্যমান ফ্লাভনয়েড এবং সক্রিয় উপাদান মেডিক্যাসসাইড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে। যা আপনার ত্বককে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
- চুল পড়া রোধ করেঃ থানকুনি পাতায় রয়েছে এন্টিইনফ্লামেটরি উপাদান যা আপনার মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এতে যেমন আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে তেমনি অকালে চুল পড়াও প্রতিরোধ করে।
- জ্বর সর্দি নিরাময়েঃ অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আমাদের সর্দি, কাশি, জ্বর লেগেই থাকে। এই সময় আপনি সেবন করতে পারেন থানকুনি পাতার নির্যাস। কারণ, থানকুনি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনাকে সুস্থ করে তোলে।
- মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করেঃ থানকুনি পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার মূত্রনালীর বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- হজমক্রিয়া উন্নত করেঃ আপনার হজমে সমস্যা হচ্ছে? তাহলে এক চিমটি লবণ দিয়ে থানকুনি পাতা সেদ্ধ করুন এবং এটি নিয়মিত পান করতে থাকুন। থানকুনি পাতার এই পানীয়টি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করতে ভীষণ উপকারী
- লিভার সুস্থ রাখেঃ আপনি প্রতিদিন সকালে যদি একটি পাকা কলার সাথে কিছু থানকুনি পাতা খান,তাহলে আপনার পেটের স্বাস্থ্য এবং লিভার দুটোই ভালো থাকবে।
- বাতের ব্যথা দূর করেঃ যারা অর্থাইটিস বা বাতের সমস্যায় জর্জরিত তাদের জন্য মহৌষধ হলো থানকুনি পাতা। তাছাড়া চিকিৎসকরাও বাতের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন। আপনি প্রতিদিন অন্তত দুটি করে থানকুনি পাতা কাঁচা চিবিয়ে খাবার চেষ্টা করুন। এতে আপনার বাপের ব্যথা অনেকটাই লাঘব হবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে নাকি? থাকলে আজ থেকেই আপনার খাবার পাতে যোগ করুন থানকুনি পাতা। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে
- রক্ত জমাটে সাহায্য করেঃ থানকুনি পাতায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান থাকায় এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ফলে আপনি অনেক জটিল রোগ থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
- ডিটক্সিফিকেশনঃ গাজর কিংবা পাতি লেবুর রস ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে এটা আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু থানকুনি পাতাও যে খুব ভালো ডিটক্সিফিকেশন করে আপনি কি তা জানেন? আপনি প্রতিদিন থানকুনি পাতার নির্যাস এর সাথে এক চামচ মধু মিশে খান। এতে আপনার শরীরের সকল টক্সিন অপসারিত হবে এবং আপনার শরীর থাকবে ফুরফুরে এবং সতেজ।
- পেটের ব্যথা দূর করেঃ পেটের ব্যাথা দূর করতে আপনি প্রতিদিন থানকুনি পাতা বেটে গরম ভাতের সাথে খাবেন। এটা আপনার পেটের ব্যথা দূর হবে।
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণঃ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে এই থানকুনি পাতা। নিয়মিত থানকুনি পাতা সেবনের ফলে আপনারা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মত ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ আপনি কোনভাবেই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না, দিন দিন ওজন বেড়েই চলেছে। তাহলে আজ থেকে খাওয়া শুরু করুন থানকুনি পাতা। কারণ, থানকুনি পাতা আপনার হজম ক্রিয়াকে যেমন উন্নত করে তেমনি শরীরে মেদ জমতেও বাধা প্রদান করে। তাছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি নিয়মিত হাটাহাটি করুন এবং নিয়ম করে থানকুনি পাতা খান।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ নিয়মিত থানকুনি পাতার সেবনের ফলে এটি আপনার শরীরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে এই থানকুনি পাতা।
থানকুনি পাতার কিছু অপকারিতা
থানকুনি পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। আর উপকারিতা রয়েছে এমন প্রতিটি জিনিসেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকবেই। তো থানকুনি পাতার অপকারিতা গুলো কি কি চলুন জেনে নিই --আরো পড়ুন: চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করুন ৬টি উপায়ে
- প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় থানকুনি পাতা সেবন করলে আপনার মাথা ঘোরাসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যদিও পেট খারাপের মহা ঔষধ হিসেবে থানকুনি পাতা পরিচিত, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত খেলে পেট ভালো হওয়ার পরিবর্তে উল্টো বিপরীত হতে পারে।
- থানকুনি পাতা পেটের ব্যাথা দূর করে এ কথা ঠিক,কিন্তু আপনি মাত্রাতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে আপনার পেটের ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই খাওয়ার সময় অবশ্যই পরিণত পরিমাণে খাবেন।
- অনেকের এলার্জি সমস্যা থাকে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা থানকুনি পাতা সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ, থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে অনেক সময় এলার্জি বা খোশ পাঁচড়াও হতে পারে।
- অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে আপনার রক্তচাপ কমে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটতে পারে। যা নিম্ন রক্তচাপে রোগীদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
- অতিরিক্ত পরিমাণে থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে অনেক সময় আপনার বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ে থানকুনি পাতা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এতে গর্ভপাত ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ট্রপিকাল ক্রিম হিসেবে ব্যবহারের ফলে অনেক সময় থানকুনি পাতা আপনার ত্বকে জালা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যবহার করার আগে আপনি অবশ্যই প্যাচ পরীক্ষা করে নেবেন।
থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনাকে আমরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। শুধু থানকুনি পাতা খেলে চলবে না বরং আপনাকে নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমান থানকুনি পাতা খেতে হবে। এই থানকুনি পাতা খাওয়ারও বেশ কয়েকটি কার্যকরী নিয়ম রয়েছে। এবার চলুন যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার নানাবিধ উপকারিতা পেতে থানকুনি পাতা কোন নিয়মে কিভাবে খাবেন তা জেনে নিন----- প্রথমেই বলি, আপনি যদি একেবারে নতুন অবস্থায় থানকুনি পাতার ব্যবহার শুরু করেন সেক্ষেত্রে থানকুনি পাতা অল্প পরিমাণে খাওয়া শুরু করবেন এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াবনে। এতে আপনার শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
- থানকুনি পাতা খাওয়ার সাধারণ ডোজ হলো প্রতিদিন ২-৩গ্রাম। তবে আপনার স্বাস্থ্য, বয়স এবং চিকিৎসার অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই ডোজ পরিবর্তিত হতে পারে।
- থানকুনি পাতা খাওয়ার উপযুক্ত সময় সকাল বেলা খালি পেটে। কারণ, খালি পেটে থানকুনি পাতা খেলে থানকুনি পাতার উপাদান গুলি আপনার শরীরে ভালোভাবে শোষিত হবে।
- থানকুনি পাতা খাওয়ার সবথেকে সহজ নিয়ম হল কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া এর জন্য আপনি কয়েকটি থানকুনি পাতা সংগ্রহ করে পরিষ্কার জলে ভালো করে ধুয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। শুধু কাঁচা পাতা খেতে অসুবিধে হলে আপনি এর সাথে সামান্য মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে নিয়েও খেতে পারেন।
- আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতা বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এর নির্যাস বের করে ১-২ চা চামচ খাবেন। এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন খেলে আপনার হজম শক্তি বাড়বে এবং পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে।
- আপনি থানকুনি পাতা কুচি কুচি করে কেটে এক গ্লাস জলের সাথে মিশিয়েও খেয়ে নিতে পারেন।
- আপনি ইচ্ছা করলে কাচা দুধের সাথে মিশেও থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। আপনাদের যাদের গ্যাস অম্বলের সমস্যা রয়েছে তারা ঔষধের পরিবর্তে কাঁচা দুধের সাথে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেয়ে দেখুন। ভালো ফল পাবেন।
- আবার, মধুর সাথে থানকুনি পাতার রস মিশিয়েও আপনি খেতে পারেন। মধুর সাথে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে এটি আপনার রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- আপনি একটানা কয়েকদিন যদি চিনির সাথে মিশিয়ে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার খুসখুসে কাশি একেবারেই গায়েব হয়ে যাবে।
- প্রতিদিন সকালবেলা ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে এটি আপনার লিভারের জন্য উপকারী হবে।
- ১ চা চামচ থানকুনি পাতার রস এবং ১ চা চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে এটি আপনার জ্বর প্রতিরোধ করবে।
- আপনি প্রতিদিন সকালে ৫-৭ টি থানকুনি পাতা একটানা ৭ দিন কাঁচা চিবিয়ে খেলে আপনার পেটের আমাশয় দূর হবে। তাছাড়া থানকুনি পাতার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে দুই চামচ করে দিনে দুবার খেলেও আমাশয় রোগের উপশম হয়।
- আবার শরীরের ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে আপনি থানকুনি পাতা বেটে ঘি এর সাথে জ্বাল করুন। ঠান্ডা হলে তা ক্ষত স্থানে লাগান। এভাবে কিছুদিন লাগালে আপনার ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যাবে।
- থানকুনি পাতা জলে ফুটিয়ে আপনি চা বানিয়েও খেতে পারেন। থানকুনি পাতার চা খেলে এটি আপনার মানসিক অবসাদ কমাবে এবং শরীরকে সতেজ ফুরফুরে রাখবে।
- আপনি থানকুনি পাতা বেটে সেটি গরম ভাতের সাথে ভর্তা হিসেবেও খেতে পারেন যা আপনার খাবারের স্বাদ পুষ্টি দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিবে। শুধু তাই নয়, আপনি সালাদের সাথে মিশিয়েও থানকুনি পাতা খেতে পারেন।
- আপনারা যারা কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেতে অভ্যস্ত নন, চাইলে থানকুনি পাতা গুঁড়ো করেও খেতে পারেন। এর জন্য কয়েকটি থানকুনি পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন এবং ব্লেন্ডারের গুঁড়ো করে নিন। এই গুড়ো আপনি দুধ পানি কিংবা অন্য যেকোন তরল পদার্থের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- থানকুনি পাতা সেবনের ক্ষেত্রে আপনি আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, তা হলো একটানা সর্বোচ্চ ২-৬ সপ্তাহের জন্য থানকুনি পাতা আপনি খাবেন। এর বেশি একটানা কখনোই খাবেন না। আবার যদি আপনি খাওয়া শুরু করতে চান সে ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের বিরতি নিয়ে তবেই খাবেন
যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি ভেষজের উপকারিতা অনবদ্য। অনেক সময় অল্প বয়সে আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে আপনাকে একমাত্র পরিত্রান দিতে পারে থানকুনি পাতা। কেননা বয়সের ছাপ দূর করে যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতা অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। নিয়মিত থানকুনি পাতা সেবনের ফলে এটি আপনার ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায় ফলে ত্বক টানটান এবং মসৃণ থাকে।তাছাড়া এটি আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।আর এই রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং সেই সাথে ত্বকের আদ্রতাকেও ধরে রাখতে সাহায্য করে। আবার আপনার ত্বকের নানা ধরনের রোদে পোড়া দাগ, বলিরেখা, কালচে দাগ, ব্রনের দাগ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি নিরাময়ে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকর। নিয়ম মেনে সঠিক মাত্রায় থানকুনি পাতা সেবনের ফলে এটি নারী পুরুষ উভয়ের যৌন স্বাস্থ্যেরও উন্নতি উন্নতি ঘটায়।
তাছাড়া, থানকুনি পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আপনার ত্বককে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। হলে আপনার ত্বকে সহজে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না। আর এভাবেই নিয়মিত থানকুনি পাতা ব্যবহারে এটি যেমন আপনার ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যকে প্রাণবন্ত রাখে তেমনি যৌবন ধরে রাখতেও সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা
থানকুনি পাতার বহুরূপী স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা গর্ভকালীন সময়েও কম নয়। গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে যা মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রুণের সুস্বাস্থ্যের এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন সেগুলো জেনে নিন--- ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের সুস্থতা বাড়াতেঃ গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খেলে মা এবং গর্ভস্থ শিশুর ডাইজেস্টিক সিস্টেমের কাজে সাহায্য করে। তাছাড়া থানকুনি পাতা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফলিক এসিডের একটি ভালো উৎস হতে পারে যা গর্ভাবস্থায় খুবই প্রয়োজন।
- ফলিক অ্যাসিডঃ ফলিক এসিডের একটি সাধারণ উৎস হল থানকুনি পাতা যা আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলিক এসিডের ঘাটতি পূরণে গর্ভাবস্থায় আপনি থানকুনি পাতা খেতেই পারেন।
- দাঁত ও হাড় গঠনেঃ থানকুনি পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর এই ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থার সময় মা এবং শিশুর হাড় এবং দাঁতের উন্নতিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ থানকুনি পাতা ফলিক এসিড এবং ভিটামিন এ এর একটি ভালো উৎস হতে পারে যা গর্ভকালীন সময়ে আপনাকে আপনার ত্বকের সুস্থতা প্রদান করবে।
গর্ভকালীন সময়ে মা-বোনদের খাবারের দিকে এমনিতে একটু বেশি খেয়াল রাখতে হয় অন্য সময়ের থেকে। সে হিসেবে একটি সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে থানকুনি পাতা যোগ করতে পারেন। তবে অনেক সময় গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বলেও মনে করা হয়। সুতরাং গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খেতে চাইলে আপনি একজন গাইনি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।
থানকুনি পাতার বড়া রেসিপিঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
থানকুনি পাতার বড়া তৈরি করতে প্রথমেই আপনি থানকুনি পাতা পরিষ্কার জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। কারণ থানকুনি পাতা সাধারণত পরিত্যক্ত জায়গায় জন্মে থাকে, ফলে এতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকতে পারে। এবার থানকুনি পাতা কুচি কুচি করে কেটে তাতে এক এক করে পেঁয়াজ, রসুন বেসন, লবণ, হলুদ একসাথে মিশিয়ে আলতো করে মাখিয়ে নিন।
থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়?
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই অবগত হয়েছেন। থানকুনি পাতার উপকারিতা পেতে আপনি চেষ্টা করবেন থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেতে। কারণ, থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি এজিং প্রভাব গুলি আপনার শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়। তাছাড়া থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে আরো কিছু উপকারিতা আপনি পেতে পারেন। যেমন--- থানকুনি পাতা কাঁচা চিবিয়ে খেলে এটি আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে অসময়ে আপনার ত্বকে বার্ধক্য আসবে না।
- থানকুনি পাতার কাঁচা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আপনার শরীরের কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
- থানকুনি পাতায় রয়েছে কোলাজেন নামক একটি প্রোটিন উপাদান যা আমাদের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতার জন্য ভীষণ জরুরী। আর তাই কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে এটি আপনার শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক স্বাভাবিকভাবে মসৃণ এবং উজ্জ্বল হয়।
- কাঁচা থানকুনি পাতা খেলে এর ফাইবার আপনার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত থানকুনি পাতা কাঁচা চিবিয়ে খেলে এর এন্টি-ইনফ্লামেটরি প্রভাব গুলি আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে, কাজে মনোযোগ বাড়াতে এবং শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
থানকুনি পাতার বিভিন্ন রেসিপি
থানকুনি পাতার উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে বিভিন্ন রেসিপিতে এই পাতা ব্যবহার করতে পারেন। আস্ত গোটা থানকুনি পাতা চিবিয়ে বা থানকুনি পাতার রস খাওয়া ছাড়াও আপনি থানকুনি পাতা দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করেও খেতে পারেন। এবার চলুন থানকুনি পাতা দিয়ে কি কি রেসিপি তৈরি করা যায় দেখে নিন--থানকুনি পাতার বড়া রেসিপিঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- থানকুনি পাতা- ১০০ গ্রাম
- কুচানো পেঁয়াজ- ২টি
- কুচানো রসুন- ১টি
- কাঁচা মরিচ- ২-৩ টি
- হলুদ- ১ চা চামচ
- বেসন- ১০০ গ্রাম
- লবণ- স্বাদমতো এবং
- তেল- পরিমান মত।
থানকুনি পাতার বড়া তৈরি করতে প্রথমেই আপনি থানকুনি পাতা পরিষ্কার জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। কারণ থানকুনি পাতা সাধারণত পরিত্যক্ত জায়গায় জন্মে থাকে, ফলে এতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকতে পারে। এবার থানকুনি পাতা কুচি কুচি করে কেটে তাতে এক এক করে পেঁয়াজ, রসুন বেসন, লবণ, হলুদ একসাথে মিশিয়ে আলতো করে মাখিয়ে নিন।
এবার একটি প্যানে পরিমাণমতো তেল দিয়ে গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে থানকুনি পাতার মিশ্রণটি বড়া বা পেয়াজুর মতো ছোট ছোট আকার দিয়ে ভেজে তুলুন এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।
থানকুনি পাতার ভাজি রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
প্রথমেই থানকুনি পাতা ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। একটি প্যানে তেল দিয়ে তার গরম হলে এক এক করে রসুন, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে নাড়তে থাকুন। রসুন, কাঁচা মরিচ এবং পেঁয়াজ সামান্য বাদামী রঙের হয়ে আসলে তাতে থানকুনি পাতা কুচি এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে আরো ৫-৬ মিনিট পর্যন্ত নাড়িয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেল আপনার থানকুনি পাতার ভাজি রেসিপি। অনেকে আবার ভাজীর স্বাদ বাড়াতে এর সাথে আবার আলু বা ছোট চিংড়ি মাছ যোগ করে খান।
থানকুনি পাতার জুসঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
থানকুনি পাতার জুস তৈরি করতে আপনি প্রথমে থানকুনি পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে কি করে কেটে নিন। এরপর শীল পাটা বেটে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এর থেকে ছাকুনি দিয়ে ছেঁকে রস বের করে নিন। এবার এই রসের সাথে এক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। ব্যাস, আপনার থানকুনি পাতার জুস তৈরি। থানকুনি পাতার এই জুস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই উপকারী। তাই সুস্থ সবল থাকতে হলে আপনি নিয়মিত থানকুনি পাতার জুস করে খান।
থানকুনি পাতা ও আলুর ভর্তা:
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
থানকুনি পাতার মিহি ভর্তাঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
থানকুনি পাতা ভালো করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে এর সাথে আপনি পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, আদা কুচি এবং লবণ একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এই মিশ্রণের সাথে স্বাদমতো সরিষার তেল মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল থানকুনি পাতার মিহী ভর্তা। ব্লেন্ডার না থাকলে আপনি শীল পাটাতে বেটেও এই ভর্তা তৈরি করতে পারেন।
থানকুনি পাতার ভাজি রেসিপি
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- থানকুনি পাতা- ১০০ গ্রাম
- কুচানো রসুন- ১টি
- কুচানো কাঁচা মরিচ- ৩-৪ টির মত
- লবণ-স্বাদমতো এবং
- তেল- পরিমাণ মত।
প্রথমেই থানকুনি পাতা ভালো করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। একটি প্যানে তেল দিয়ে তার গরম হলে এক এক করে রসুন, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে নাড়তে থাকুন। রসুন, কাঁচা মরিচ এবং পেঁয়াজ সামান্য বাদামী রঙের হয়ে আসলে তাতে থানকুনি পাতা কুচি এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে আরো ৫-৬ মিনিট পর্যন্ত নাড়িয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেল আপনার থানকুনি পাতার ভাজি রেসিপি। অনেকে আবার ভাজীর স্বাদ বাড়াতে এর সাথে আবার আলু বা ছোট চিংড়ি মাছ যোগ করে খান।
থানকুনি পাতার জুসঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- থানকুনি পাতা- ১০০ গ্রাম এবং
- মধুর পরিমাণ- ১ চামচ
থানকুনি পাতার জুস তৈরি করতে আপনি প্রথমে থানকুনি পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে কি করে কেটে নিন। এরপর শীল পাটা বেটে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এর থেকে ছাকুনি দিয়ে ছেঁকে রস বের করে নিন। এবার এই রসের সাথে এক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। ব্যাস, আপনার থানকুনি পাতার জুস তৈরি। থানকুনি পাতার এই জুস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই উপকারী। তাই সুস্থ সবল থাকতে হলে আপনি নিয়মিত থানকুনি পাতার জুস করে খান।
থানকুনি পাতা ও আলুর ভর্তা:
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- থানকুনি পাতা- ১৫০-২০০ গ্রাম
- কুচানো পেঁয়াজ- ২টি
- কুচানো রসুন- ১টি
- কাঁচা মরিচ- ২-৩ টি
- সেদ্ধ আলু- ২টি
- আদা- পরিমাণ মত এবং
- সরিষার তেল- পরিমাণ মতো।
থানকুনি পাতার মিহি ভর্তাঃ
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- থানকুনি পাতা- ১৫০ গ্রাম
- পেঁয়াজ কুচি- ২টি
- রসুন কুচি- ১টি
- কাঁচামরিচ- ২-৩টি
- আদা কুচি
- লবণ- স্বাদমতো এবং
- সরিষার তেল- পরিমাণ মত।
থানকুনি পাতা ভালো করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে এর সাথে আপনি পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, আদা কুচি এবং লবণ একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এই মিশ্রণের সাথে স্বাদমতো সরিষার তেল মিশিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল থানকুনি পাতার মিহী ভর্তা। ব্লেন্ডার না থাকলে আপনি শীল পাটাতে বেটেও এই ভর্তা তৈরি করতে পারেন।
থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য
থানকুনি পাতার বহুবিধ উপকারিতা ও গুটি কতক অপকারিতা রয়েছে। থানকুনি মূলত ভেষজ ছোট বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica. থানকুনি পাতার আকৃতি গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। এর পাতা লম্বায় প্রায় ২-৫ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় ১-২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। থানকুনি পাতার রং গাড়ো সবুজ। এর পাতার কিনারা গুলো খাঁজ কাটা হয়।একটি পূর্ণবয়স্ক থানকুনি গাছ প্রায় ১০-১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে সেই প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক এবং ইউনারি চিকিৎসায় থানকুনি পাতা যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া থানকুনি পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামিনো এসিড, ফাইটোকেমিক্যাল, এন্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, অ্যালকোলয়েড এবং গ্লাইকোসাইড।
থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এখন আপনি নিশ্চয়ই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান। যৌবন ধরে রাখতেও থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। থানকুনি পাতার উপকারিতার যেন শেষ নেই।প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এই থানকুনি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম থানকুনি পাতায় যেসব পুস্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হল--পুস্টি উপাদান | উপাদানের পরিমাণ |
---|---|
মাঙ্গানিজ | ০.৭৬ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.১৬ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.৮ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৪৩ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৫৬ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৬০ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩৪৪ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৫.৬ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৭১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ১ | ০.১৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ২ | ০.১৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি ৩ | ০.৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন C | ৪৮ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৬৫৪০ IU |
ফাইবার | ৩.৫ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৫ গ্রাম |
প্রোটিন | ২.৬ গ্রাম |
ক্যালরি | ৩৮ কিলো ক্যালরি |
থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা তো জানলেন। এবার চলুন এই পাতা কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে বলব। বাংলাদেশ, ভারত, সিংহল, উত্তর, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া, নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান এবং এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারণত গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে, বনে জঙ্গলে, বাড়ির আঙিনাতে,অথবা জলধারের প্রচুর পরিমাণে থানকুনি পাতা জন্মে থাকে। এই থানকুনি পাতার বিশেষ কোন যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না কারণ এটি প্রকৃতির নিয়মে নিজ থেকেই জন্ম নেয় এবং খুব সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। তবে যারা শহর অঞ্চলে বসবাস করেন তাদের কাছে থানকুনি পাতা খুঁজে পাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য।
কারণ, শহর অঞ্চলে থানকুনি পাতা খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে।তবে বর্তমানে থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং এর চাহিদা ও গুনাগুনের কথা ভেবে অনেকেই থানকুনি পাতার চাষাবাদ শুরু করেছেন। ফলে আপনি বাজারে কিংবা বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর গুলো থেকে খুব সহজেই থানকুনি পাতা সংগ্রহ করতে পারেন।
থানকুনি পাতা যাদের ব্যবহার করা উচিত নয়
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে একথা ঠিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই পাতা ব্যাবহারে কিছু জনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-- থানকুনি পাতা অনেক সময় আপনার রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আর তাই এন্টিকোয়ুলান্ট ঔষধ সেবনকারীদের থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- আপনার বয়স যদি ১৮ কম হয় তাহলে জটিল রোগের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা ব্যবহার করবেন না।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মা-বোনদের থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত। কারণ থানকুনি পাতার গর্ভবতী মা এবং স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য উপকারী কিনা তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
- যারা হেপাটাইটিস বা লিভার রোগে ভুগছেন তারা থানকুনি পাতা খাবেন না। খেলে আপনার শারীরিক জটিলতা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- সদ্য অপারেশন করিয়েছেন বা অপারেশন করাবেন এমন রোগীদের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগ থেকে থানকুনি পাতা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
- পূর্বে কখনো আপনার ত্বকে যদি ক্যান্সার হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি থানকুনি পাতার ক্রিম ব্যবহার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ
- যাদের চিকিৎসা চলমান এবং নিয়মিত ঔষধ সেবনে আছেন তারা থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ এই সময় থানকুনি পাতা খেলে এটি আপনার ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে।
- যারা উপরোক্ত সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়েন যাতে তারা থানকুনি পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবে খাবেন নতুবা খাবেন না।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছেন। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে বোধগম্য হয়েছে। আমাদের প্রকৃতিতে অনেক ভেষজ উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যেগুলি নানান ভাবে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তার মধ্যে থানকুনি পাতা একটি।প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে থানকুনি পাতার ব্যবহার চলে আসছে। থানকুনি পাতার এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি এবং আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই ভেষজ উদ্ভিদ। তাই আপনাকে বলব সুস্থ থাকার জন্য আপনি শুধুমাত্র ঔষধ এবং চিকিৎসার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক উপায় বেছে নিতে। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url