চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনি জানতে চাচ্ছেন? ছারপোকা কামড়ালে কি হয় জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
চিরতরে-ছারপোকা-দূর-করার-উপায়-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
কারণ, আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি ছারপোকা দূর করার বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় এবং ছারপোকা তাড়ানোর কীটনাশক সম্পর্কে জেনে যাবেন। আপনি যদি ছারপোকা চিরতরের জন্য দূর করতে চান, তাহলে আর দেরি না করে এক্ষুনি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ চিরতরে ছারপোকা দূর করার  উপায়

ছারপোকা কি?

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানার আগে আপনি প্রথমেই জানা প্রয়োজন ছারপোকা আসলে কি? ছারপোকা একটি ছোট রক্ত পিপাসু পতঙ্গ যা মানুষের ঘরে বসবাস করে এবং সাধারণত রাতের বেলা সক্রিয় থাকে।ছারপোকা সাধারণত বিছানার ছারপোকা বা "Bed Bugs"নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম "Cimex Lectularius". এটা দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪-৫ মিমি এবং এর রং বাদামী বা লাল বর্ণের হয়।
 
ছারপোকা সাধারণত বিছানা, কার্পেট,আসবাবপত্রের ফাটল বা অন্যান্য সুরক্ষিত স্থানগুলিতেও বাস করে,যেখানে তারা মানুষের ত্বকে কামড়ে রক্ত শোষণ করতে পারে। ছারপোকার জীবনচক্রে চারটি ভাগ থাকে এবং এরা অতি দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। একটি মহিলা ছারপোকা একেবারে ২০০-৫০০ টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। এরা গাঢ় এবং অন্ধকার জায়গায় থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে যা তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত স্থান।

ছারপোকা দূর করার কার্যকরী কিছু পদ্ধতি

ছারপোকা দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে যা আপনি আপনার বাড়িতে ব্যবহার করতে পারেন। ছারপোকা রক্ত যেসব প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম এবং এটি উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট একটি পতঙ্গ। আর এই পোকা একবার যদি আপনার ঘরে প্রবেশ করে তাহলে দূর করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এবার চলুন ছারপোকা দূর করার কিছু কিছু উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন--
আরো পড়ুনঃ বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
  • বেকিং সোডা ও চিনিঃ আপনি বেকিং সোডা ও তিনি একসাথে মিশিয়ে ছারপোকার ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন কারণ তিনি ছারপোকা কে আকৃষ্ট করে এবং বেকিং সোডা ছারপোকার পেটের মধ্যে প্রবাহিত হয় যা তাদের মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
  • লবণের ব্যবহারঃ আপনার বাড়িতে যে স্থানে বেশি ছারপোকা রয়েছে সে স্থানে লবণ ছড়িয়ে রাখুন। কারণ লবণ ছারপোকার শরীর শুকিয়ে দেয় এবং এই কীট মারতে সাহায্য করে।
  • গরম পানির ব্যবহারঃ আপনি আপনার ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার, সোফার কভার এবং অন্যান্য কাপড় গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এই গরম পানি ছারপোকা এবং ছারপোকার ডিম মারতে সাহায্য করে। তাছাড়া গরম পানিতে কাপড় ধোয়া এমনিতেই ভালো।
  • লেবুর রসঃ ছারপোকা তাড়াতে আপনি লেবুর রস একটি স্প্রে বোতলে ভরে আক্রান্ত স্থানে স্প্রে করুন। এতে ছারপোকা দূর হবে।
  • মেথি পাউডারঃ আপনি কিছু মেথি পাউডার নিয়ে ছারপোকার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন। কারণ মেথি পাউডার ছারপোকার প্রয়োগে কিছু সময়ের মধ্যে ছারপোকা মারা যায়।
  • কেমিকাল পেস্ট কন্ট্রোলঃ কিছু কেমিক্যাল পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে যার ছারপোকা দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরে ফেলতে সক্ষম। আপনি যদি ছারপোকা একেবারেই তাড়াত, না পারেন সেক্ষেত্রে প্রফেশনাল পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের সাহায্য নিতে পারেন।
  • ভিনেটার স্প্রেঃ ১/৪ কাপ হোয়াইট ওয়াইন ভিনেগার এবং ১/৪ কাপ জল মিশে একটি মিশ্রণ তৈরি করে এই মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এই মিশ্রণটি এবার ছারপোকা আক্রান্ত স্থানে স্প্রে করুন। এ পদ্ধতি ব্যবহার করেও অতি অল্প সময়ের মধ্যে আপনি ছারপোকা খুব সহজেই দূর করতে পারেন।
  • লাভেন্ডার অয়েল স্প্রেঃ ভিনিগার স্প্রে ছাড়াও ছারপোকা তাড়াতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে। আপনার ঘরে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে ২-৩ দিন টানা ব্যবহার করলে ছারপোকা এমনিতেই ঘর ছেড়ে পালাবে।
  • কাপড় রোদে দিনঃ আপনার বাড়ির কাপড় চোপড় পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি এগুলি নিয়মিত রোদে দিন। বিশেষ করে লেপ তোষক কম্বল এগুলো রোদে দেওয়া ভীষণ জরুরী। কারণ, রোদ পেলে ছারপোকা মারা যায়।
চিরতরে-ছারপোকা-দূর-করার-উপায়-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • দেয়াল থেকে বিছানার দূরত্বঃ ছারপোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনার বিছানা একেবারে দেয়াল ঘেঁষে না করে দেয়াল থেকে খানিকটা দূরে করুন।
  • নিম পাতার ব্যবহারঃ ছারপোকা তাড়াতে নিমপাতা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে ।আপনার বাড়িতে যে স্থানে ছারপোকার উপদ্রব সবথেকে বেশি,সেই স্থানে আপনি নিম পাতা কুচি করে ছিটিয়ে রাখতে পারেন।
  • ছারপোকা দূর করতে শসাঃ ছারপোকা তাড়াতে আপনি খোসা সহ একটি শসা কেটে ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই ব্লেন্ড করার শশার মধ্যে তিন টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। এবার এই মিশ্রণটি একটি ব্রাশের সাহায্যে ছারপোকা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিন। দেখবেন, ৫ মিনিটের মধ্যে ছারপোকা গায়েব হয়ে গেছে।
  • স্যাভলন এর ব্যবহারঃ ছারপোকা তাড়াতে আরেকটি কার্যকরী উপাদান হল স্যাভলন। আপনি ২৫০গ্রাম পানিতে চার চা চামচ পরিমাণ স্যাভলন বা ডেটল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে ছারপোকা আক্রান্ত স্থান যেমন খাট,সোফা,বালিশ,তোষক রান্না ঘরের তাঁক ইত্যাদি স্থানে স্প্রে করুন। এভাবে টানা এক সপ্তাহ ব্যবহার করার পর দেখবেন ছারপোকা একেবারেই নেই।
  • বোরিক এসিডের ব্যবহারঃ ছারপোকা দূর করতে ভালো কাজ করে।আপনি বোরিক অ্যাসিড ছারপোকার উপর ছিটিয়ে দিন। এটি ছারপোকার স্নায়ুতন্ত্রে কাজ করে এবং খুব অল্প সময়ে মেরে ফেলতে পারে।
  • বাসা পরিষ্কার রাখুনঃ ছারপোকা থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে আপনার বাসা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষ করে আপনার বাড়ির আসবাবপত্র, কার্পেট, সোফার ফাঁক, বিছানার চাদরের নিচে এবং অন্যান্য জায়গায় ধুলা ময়লা জমতে না দেওয়া।
  • ন্যাপথলিনের ব্যবহারঃ ছারপোকা তাড়াতে সবথেকে বেশি কার্যকরী হল ন্যাপথালিন। এই পোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে আপনি মাসে অন্তত দুবার ন্যাপথলিন গুড়ো করে আপনার ঘরের বিছানা সহ যে সকল স্থানের ছারপোকা রয়েছে সে সকল স্থানে ছিটিয়ে দিন। এতে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনার ঘরে ছারপোকার উৎপাত অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
  • কেরোসিনের প্রলেপঃ আসবাবপত্র থেকে ছারপোকা তাড়াতে আপনি নিয়মিত কেরোসিন এর প্রলেপ দিন। ছারপোকা সহজে পালিয়ে যাবে।
  • ঘর পরিষ্কার করুনঃ আপনি যদি ছারপোকা থেকে রেহাই পেতে চান তাহলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে হলেও আপনার ঘর ভালো করে পরিষ্কার করুন। খুব বেশি হলে আপনার ঘরের ছারপোকার প্রান্ত স্থানে কাপড় গুলো গরম পানিতে সিদ্ধ করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। মনে রাখবেন, ছারপোকা ১১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মারা যায়।
সম্মানিত পাঠক, ছারপোকা দূর করার অনেকগুলো উপায় সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিলাম। এ পদ্ধতি গুলোর মধ্যে আপনার কাছে যেটি সহজ মনে হবে এবং হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে সেটিই ব্যবহার করতে পারেন।

বাসায় ছারপোকা কেন হয়?

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। এবার আপনাকে জানাব ছারপোকা হওয়ার কারন সম্পরকে। আপনার বাসায় ছারপোকা হওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যা ছারপোকা সংক্রমণের পেছনে দায়ী। এবার চলুন আপনার বাসায় ছারপোকা কি কারনে হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
  • প্রথমেই বলি, আপনি যদি আপনার ঘরের বিভিন্ন পোনা বিছানা কার্পেট ও আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার না রাখেন তবে সেখানে ছারপোকার জন্ম নিতে পারে। কারণ, অপরিষ্কার ও অগোছালো স্থানে ছারপোকা আশ্রয় গ্রহণ করে এবং দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে পারে
  • আপনার বাড়ির ব্যবহৃত আসবাবপত্র যেমন- সোফা, বিছানা কার্পেট ইত্যাদি ভালো করে পরিষ্কার না করলে তাতে ছারপোকা থাকতে পারে। তাছাড়া নতুন আসবাবপত্রের মাধ্যমেও ছারপোকা আপনার বাসায় প্রবেশ করতে পারে।
  • অনেক সময় আমরা ট্রেন বাস বা বিমান ইত্যাদিতে ভ্রমণ করি। এই ভ্রমণ করার সময় ছারপোকা আপনার ব্যাগ পোশাক বা অন্যান্য জিনিসের মাধ্যমে আপনার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
  • ছারপোকা সাধারণত অন্ধকার, গাড় স্থান পছন্দ করে। যেমন- বিছানার ফাটল,কার্পেটের নিচে,আসবাবপত্রের কোনায় লুকিয়ে থাকে। এসব জায়গায় ছারপোকা সহজে লুকাতে পারে এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • আপনার ঘরের দেয়ালে মেঝেতে বা আসবাবপত্রে থাকা ছোট ছোট ফাটল বা গর্তে ছারপোকা প্রবেশ করতে পারে এবং সেখানেও তাদের আশ্রয় নিতে পারে।
  • খেয়াল রাখবেন,আপনার বাড়িতে যখন কোন সংস্কার বা নির্মাণ কাজ চলাকালে নতুন ফাটল বা গর্ত সৃষ্টি হতে পারে, যা ছারপোকা প্রবেশের জন্য একটি পথ তৈরি করতে পারে।
  • আপনার বাড়ির পরিবেশ যদি অতিরিক্ত আদ্র হয় সেক্ষেত্রে ছারপোকা জন্ম নিতে পারে। কারণ, খাদ্য পরিবেশের ছারপোকার দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওসব প্রাণী বিশ্বের সাথে কুকুর বা বিড়াল ছারপোকা তাদের পশমে নিয়ে আসতে পারে এবং আপনার বাড়িতে ছড়িয়ে দিতে পারে।
উপরিউক্ত এই সকল কারণে আপনার ঘরে ছারপোকা আশ্রয় নেয় এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। ছোট এই ছারপোকা যা আপনার জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে এবং পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ছারপোকা কামড়ালে কি হয়?

ছারপোকা কামড়ালে কি  হতে পারে জানেন কি? ছারপোকা কামড়ালে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। ছারপোকা কামড়ালে সাধারণত যে লক্ষণ গুলো দেখা যায় তা বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আবার এর কামড়ের স্থান ও কামড়ের সংখ্যা অনুযায়ী লক্ষণগুলো আলাদাও হতে পারে। এবার চলুন ছারপোকা কামড়ালে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে রাখুন--
  • চুলকানিঃ ছারপোকা কামড়ানোর পরে আপনার ত্বকে চুলকানি অনুভূত হবে। কারণ, এটি তাদের লালা থেকে এলার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে।
  • লালদাগঃ ছারপোকা আপনার শরীরের যে স্থানে কামড়াবে সেই স্থানে লালচে দাগ দেখা দেবে। এই দাগ সাধারণত ছোট এবং গোলাকার হয় যা ছারপোকার কামড়ের চিহ্ন হিসেবে পরিচিত।
  • ফুলে ওঠাঃ ছারপোকা কামড়ানোর ফলে কামরানোর স্থানে ফুলে উঠতে দেখা যায়। এর কারণ হলো ছারপোকা কামড়ানোর সময় আপনার ত্বকে কিছু পরিমাণ বিষাক্ত পদার্থ ছাড়ে যা প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  • প্রদাহ সৃষ্টিঃ অনেক সময় ছারপোকা কামড়ানোর ফলে কামড়ানোর জায়গায় প্রদাহ হতে পারে। যা আপনার ত্বকের লালচে হয়ে ফুলে ওঠার সাথে সাথে প্রতারের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  • ফুসকুড়িঃ অনেক সময় কামড়ানোর স্থানগুলোতে ছোট ছোট পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি বা পুঁজ ভর্তি দাঁগ দেখা দিতে পারে। এটিও আপনার ত্বকের সংক্রমণ বা প্রদানের একটি অন্যতম কারণ হতে পারে।
  • এলার্জিক প্রতিক্রিয়াঃ কিছু কিছু মানুষের ত্বকে ছারপোকা কামড়ালে এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়,যা প্রচন্ড রকমের চুলকানি, লালচে দাগ এবং ফুলে ওঠার সাথে সাথে অন্যান্য এলার্জিক লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
উপরিউক্ত এই লক্ষণগুলো আপনার শরীরে দেখা দিলে তবেই বুঝবেন এটি ছারপোকার কামড়। ছারপোকার কামড়ের লক্ষণগুলো একেক জনের ত্বকের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে একেক রকম হতে পারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছারপোকার এই কামড় গুরুতর আকার ধারণ করে তখন আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

ছারপোকা কামড়ালে কি করতে হয়

 ছারপোকা কামড়ালে কি করতে হয় বা করণীয় কি জানা ভীষণই জরুরি। সাধারণত ছারপোকা কামড়ালে লক্ষণগুলো এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে চলে যায়। তবে কামড়ের পর যদি সংক্রমণ বা মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সম্মানিত পাঠক, ছারপোকা কামড়ালে এর পরবর্তী করনীয় কি হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে রাখুন--
  • প্রথমে পরিষ্কার করুনঃ প্রথমেই কামড়ানোর স্থানটি সাবান এবং জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার ত্বকের সংক্রমণযোগে অনেকটাই কমে যাবে এবং কামড়ানো স্থানে লেগে থাকা ছারপোকার লালা পরিষ্কার হবে।
  • নরম টিস্যু ব্যবহারঃ কামড়ানোর স্থানটি মুছতে একটি সফট টিস্যু বা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করুন।
  • ঠান্ডা জল ব্যবহার করুন কামরানোর স্থানটি আপনি যদি ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিতে পারেন বা বরফের প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন।এতে করে আপনার ত্বকে চুলকানি এবং ফুলে ওঠা প্রবণতা অনেকটাই কম হবে।
  • চুলকানি কমাতে ক্রিম ব্যবহার করুনঃ ছারপোকা কামড়ানোর পরে যদি প্রচন্ড রকমের চুলকানির সৃষ্টি হয়, তাহলে আপনি এন্টি ইনফ্লামেটরি বা এন্টি হিস্টামাইন ক্রিম যেমন- হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম কামড়ানোর স্থানে লাগাতে পারেন।এতে আপনার চুলকানি ও প্রদাহ কমে আসবে।
  • এলার্জি প্রতিরোধক ঔষধঃ অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রে ছারপোকা কামড়ালে চুলকানি ও প্রদাহ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে আপনি অ্যান্টি হিষ্টামাইন ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন।
  • চুলকানি এড়িয়ে চলুনঃ কামড়ানোর স্থানে আপনি অহেতুক চুলকাবেন না, যতটা পারবেন কম চুলকানোর চেষ্টা করবেন । কারণ অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে এটি সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
  • বাড়ির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুনঃ আপনার বাড়ি ছারপোকা মুক্ত রাখতে নিয়মিত পোশাক, বিছানা, কার্পেট এবং অন্যান্য আসবাবপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রয়োজনে ছারপোকা মোকাবেলার জন্য আপনি কীটনাশক ব্যবহার করুন।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুনঃ ছারপোকা কামড়ানোর ফলে যদি আপনার গুরুতর প্রদাহ, পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে আপনি দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করলে আপনি ছারপোকা কামড়ের পর এর প্রদাহ/যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তবে আবারো বলছি যদি লক্ষণগুলো খুবই গুরুতর হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

ছারপোকার উপকারিতা

ছারপোকা যদিও সাধারণভাবে মানুষের জন্য খুবই বিরক্তি কর, তবুও এর গুটিকতক উপকারিতা রয়েছে। তবে এই উপকারিতা গুলো এদের ক্ষতিকর প্রভাবের থেকে একেবারেই নগণ্য। ছারপোকার উপকারিতা আপনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন? হ্যাঁ সম্মানিত পাঠক, কিছু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ছারপোকার সম্ভাব্য উপকারিতা গুলো জেনে নিন--
  • জীববৈচিত্র্যের গবেষণাঃ ছারপোকার জীবনচক্র,আচরণ এবং প্রাকৃতিক শত্রুদের সম্পর্কে গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ।
  • প্যাথোজেন গবেষনাঃ ছারপোকা থেকে পাওয়া কিছু উপাদান বা এনজাইম রোগবাহি ব্যাকটেরিয়া প্যাথোজেন গবেষণায় সাহায্য করতে পারে।
  • খাদ্য চেইনে অংশগ্রহণঃ ছারপোকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাদ্যজেনের অংশ হতে পারে। এরা অন্যান্য ছোট পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গের খাদ্য হিসেবে কাজ করে।এতে করে প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • ইকোসিস্টেমের অংশঃ ছারপোকা সাধারণত পরিবেশের অংশ হিসেবে জীববৈচিত্র বজায় রাখতে সহায়ক তারা অন্য কীটপতঙ্গের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ইকোসিস্টেম এর ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • শিক্ষার উপকরণ হিসেবেঃ ছারপোকা ছারপোকা শিক্ষার উপকরণ হিসেবে কাজ করে।কারণ এই ছারপোকা জীববিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিদ্যা ক্লাসে জীবনের বিভিন্ন দিক বোঝানোর জন্য একটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।
  • পরিবেশগত স্যানিটেশনঃ ছারপোকার উপস্থিতি কিছু সময়ের জন্য হলেও পরিবেশের সমস্যা গুলি চিহ্নিত করতে পারে। কারণ বাড়িতে,ঘরে বা অন্যান্য যেকোনো জায়গায় ছারপোকার উপস্থিতি দূষণ এবং অপর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে সাহায্য করে।
যাদের বাড়িতে ছারপোকার সমস্যা রয়েছে তারা ছারপোকার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ছারপোকার এই সমস্ত উপকারিতা গুলো মানুষের জন্য নিতান্তই নগণ্য। মূলত ছারপোকার এই উপকারিতা গুলো বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরিবেশগত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কাজে আসে।

ছারপোকা গ্যাস ট্যাবলেট

চিরতরে ছারপোকা দূর করার  আরেকটি উপায় হল ছারপোকা গ্যাস ট্যাবলেট। ছারপোকা গ্যাস ট্যাবলেট হচ্ছে এক ধরনের কীটপতঙ্গ দমনকারী ট্যাবলেট যা মূলত চার প্রকার সহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ট্যাবলেট গুলোতে রাসায়নিক সংমিশ্রণ থাকে যা গ্যাসে রূপান্তরিত হয় এবং কীটপতঙ্গের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে কীট পতঙ্গের মৃত্যু ঘটে বা তাদের জীবন চক্র বাধাগ্রস্ত।
ছারপোকা গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহারের কিছু সাধারণ দিক
ব্যবহার পদ্ধতিঃ সাধারণত কীটপতঙ্গের উপস্থিতি যে সকল স্থানে বেশি থাকে,সেই সব স্থানে এই ছারপোকা গ্যাস ট্যাবলেট রাখা হয়। এতে করে ট্যাবলেটের মধ্যে থাকা রসায়নিক উপাদান গ্যাসে রূপান্তরিত হয় এবং কীটপতঙ্গ ট্যাবলেট এর সংস্পর্শে আসামাত্রই মারা যায়। এই ট্যাবলেট এর কার্যকারিতা কতখানি ভালো তা বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং প্রস্তুতকারকের উপর নির্ভর করে। কিছু গ্যাস ট্যাবলেট রয়েছে যেগুলি দীর্ঘমেয়াদি ছারপোকা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে,আবার কিছু ট্যাবলেট শুধুমাত্র দ্রুত ছারপোকা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা
গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহারের সময় আপনার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
  • কিছু ট্যাবলেট সোনালী গ্যাস তৈরি করতে পারে তো মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।তাই ব্যবহারের সময় অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করার পর কিছু সময়ের জন্য কক্ষটি ব্যবহার না করাটাই ভালো।
  • গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহারের পর কক্ষটিতে ভালোভাবে বায়ু চলাচল করতে দিন।
  • শিশু এবং পোষা প্রাণী থেকে গ্যাস ট্যাবলেট দূরে রাখুন এবং ব্যবহার করার পূর্বে প্যাকেজিং নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়ে নিন।

ছারপোকা মারার পাউডার

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় হতে পারে ছারপোকা মারার পাউডার। ছারপোকা মারার পাউডারহলো একটি কার্যকর কীটনাশক যা বিশেষভাবে ছারপোকা এবং অন্যান্য দমনের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এই পাউডারে কিছু সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান যেমন- ডেল্টামেথ্রিন, বেটারলেট বা পিপার নীলবুটক্সাইড রয়েছে যা ছারপোকা এবং অন্যান্য কিট পতঙ্গের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে তাদেরকে মেরে ফেলতে এবং তাদের বংশবৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
 
এই পাউডারটি সাধারণত গুড়ো আকারে থাকে। এই পাউডার ব্যবহারের জন্য আপনি সরাসরি আপনার বাড়ির বিভিন্ন ছারপোকা আক্রান্ত স্থান যেমন- বিছানা,কার্পেট,দেয়াল,দেয়ালের ফাটল ইত্যাদি স্থানে ছিটিয়ে দিন। কিছু পাউডার দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয়, তবে নিয়মিত ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।বাজারে এই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছারপোকা মারার পাউডার পাওয়া যায় যেমন- বিরসা পাউডার, ডেল্টামেথ্রিন পাউডার ইত্যাদি।
পাউডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
ছারপোকা মারার পাউডার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
  • পাউডার ব্যবহারের সময় আপনি খেয়াল রাখুন যেন আপনার আশপাশের শিশুরা এবং পোষা প্রাণী পাউডার যুক্ত স্থানে প্রবেশ না করে।
  • পাউডার ব্যবহারের পর ঘরে ভালোভাবে বায়ু চলাচল করতে দিন যাতে রাসায়নিক গ্যাসের প্রভাব কমে যায়।
  • পাউডার প্রয়োগের পর পাউডার পরিষ্কার করা অতীব জরুরী। এতে সার্থকতা ঝুঁকি কমে এবং পাউডার কার্যকারী ভাবে কাজ করে।
  • পাউডার প্রয়োগের সময় প্যাকেজিং এর নির্দেশনাবলি ভালোভাবে পড়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করুন।

ছারপোকা তাড়ানোর গাছ

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় হিসেবে কিছু প্রাকৃতিক গাছ রয়েছে যেগুলি খুব ভালো কাজ করে। আপনি চাইলে ছারপোকা দূর করতে প্রাকৃতিক এই গাছগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এখন আপনি হয়তো ভাবছেন কাজগুলো কিভাবে ব্যবহার করবেন? চিন্তা নেই, চলুন এবার আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি ছারপোকা তাড়াতে কোন গাছ কিভাবে ব্যবহার করবেন-
  • ল্যাভেন্ডারঃ ল্যাভেন্ডার গাছের তেল এবং ফুলের গন্ধ ছারপোকা সহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ দূর করতে বেশ কার্যকর। এর জন্য আপনি ল্যাভেন্ডার ফুল শুকিয়ে এটি আপনার বাড়ির ছারপোকা আক্রান্ত স্থানে অথবা আলমারিতে রাখতে পারেন। এতে করে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনার বাড়ি থেকে ছারপোকা একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে। এছাড়া আপনি ল্যাভেন্ডার তেল স্প্রে করেও ব্যবহার করতে পারেন।
  • মিন্ট গাছঃ মিন্টু গাছের তীব্র গন্ধও ছারপোকা এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ দমনে সহায়ক। এর জন্য আপনি মিন্ট পাতা মিহি গুড়ো করে আপনার বাড়ির ছারপোকা আক্রান্ত স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন। আপনি মিন্টু গাছের পাতা ব্যবহার করতে না চাইলে মিন্টো তেল স্প্রে করেও ব্যবহার করতে পারেন।
  • রোজমেরীঃ রোজমেরির সুগন্ধ ছারপোকা দমনে বেশ ভালো কাজ করে। আপনি রোজমেরী পাতার শুকিয়ে আপনার ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিতে পারেন অথবা রোজমেরি তেল স্প্রে করতে পারেন।
  • বেসিল গাছঃ বেসিল গাছের সুগন্ধ ছারপোকা এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গকে দূরে রাখে। এটি বিশেষ করে রান্না ঘরের পোকা নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর। আপনি বেসিল গাছের পাতা রান্না ঘরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন- রান্নাঘরের তাক এ রাখতে পারেন। এতে ছারপোকা সহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ দূর হবে।

ছারপোকা তাড়াতে নিমপাতা

ছারপোকা তাড়াতে নিমপাতা একটি কার্যকরী ও প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে বেশ সুপরিচিত। এই নিম গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন- পাতা, তেল এবং বীজ কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য নানান ভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই নিম গাছের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কীটপতঙ্গ দমনে বেশ কার্যকর। যেমন-
চিরতরে-ছারপোকা-দূর-করার-উপায়-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • বিষাক্ততা নিমপাতার মধ্যে রয়েছে নিমবিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ছারপোকা সহ অন্যান্য কিছু পতঙ্গের জন্য বিষাক্ত। এই উপাদানগুলো কীট পতঙ্গের স্নায়ুতন্ত্র কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাদের প্রজনন ক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করে।
  • প্রাকৃতিক কীটনাশক ছারপোকা দমনের ক্ষেত্রে নিম তেল একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি কীটপতঙ্গ মেরে ফেলতে এবং তাদের খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে আনে।
নিম পাতার ব্যবহার
ছারপোকা তাড়াতে আপনি নিমপাতা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-
  • নিমপাতাঃ নিম পাতা ব্যবহারের জন্য আপনি নিম পাতা রোদে শুকিয়ে পাউডার করে আপনার ঘরে বা আলমারিতে ছড়িয়ে রাখতে পারেন। এই পাউডার কীটপতঙ্গদের দূরে রাখতে সাহায্য করে।
  • নিম তেলঃ আপনি চাইলে নিম তেল কীটপতঙ্গের উপর স্প্রে করেও ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনি ১ লিটার পানিতে ১-২ চা চামচ নিম তেল মিশিয়ে ছারপোকা আক্রান্ত স্থানে স্প্রে করবেন। এটি কীটপতঙ্গের জীবাণু ধ্বংস করতে বেশ সহায়ক।
  • নিম পেস্টঃ আপনি চাইলে নিম পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করে সেটি ছারপোকা আক্রান্ত জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারকারীর সতর্কতা
  • যদিও নিম একটি প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ উপাদান তবুও এর অধিক ব্যবহারে কিছু মানুষের ত্বকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং ব্যবহার করার আগে ছোট এটি অংশে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
  • ছারপোকা দমনে আপনি যদি রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পন্থা অনুসরণ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিন্তে নিম গাছ প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ এবং মানবস্বাস্থ্য ও পোষা প্রাণীর জন্য কম ক্ষতিকর।

ছারপোকা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়

ছারপোকা তাড়ানোর জন্য ঘরোয়া উপায় হিসেবে বেকিং সোডা এবং চিনি একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। এই পদ্ধতিতে আপনি বেকিং সোডা এবং চিনি একত্রিত করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন এবং ছারপোকা সাধারণত যে সকল স্থানে থাকে যেমন- বিছানা, কার্পেট, আলমারির কোনা সহ আপনার বাড়ির অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে দিন।  

এভাবে কিছুদিন ব্যবহারের পরে দেখবেন ছারপোকার উপদ্রব অনেকটাই কমে গেছে। কারণ, চিনি ছারপোকাদের আকৃষ্ট করে, যখন বেকিং সোডা ছারপোকার শরীরে প্রবেশ করে গ্যাস তৈরি করে ঠিক ততক্ষণে এরা মরতে শুরু করে। ছারপোকা দমনে এই ঘরোয়া উপায়টি সম্পূর্ণ কেমিক্যাল মুক্ত, প্রাকৃতিক এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য।

ছারপোকার কিছু বৈশিষ্ট্য

ছারপোকার কিছু বৈশিষ্ট্য এবার আপনাদের সাথে তুলে ধরছি। যাতে করে আপনি খুব সহজেই ছারপোকা দেখে তা শনাক্ত করতে পারেন। যেমন-
  • ছারপোকা দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য কোন পোষক বা খাদ্য না থাকলেও কয়েক মাস পর্যন্ত টিকে থাকবে সক্ষম।
  • ছারপোকা সাধারণত মানুষের রক্ত শোষণ করে বেঁচে থাকে। এরা রাতে সক্রিয় থাকে এবং মানুষের ত্বকে কামড়ে রক্ত খায়।
  • একটি ছারপোকা সাধারণত ৪/৫ মিমি দীর্ঘ হয় এবং এর শরীরের গঠন পাটির মত পাতলা এবং গোলাকার। শরীরের রং বাদামী বা লালচে বাদামী হয়।
  • আপনি জেনে অবাক হবেন,একটি মাদি ছারপোকা প্রতি সপ্তাহে প্রায় 200-300 টি ডিম দিতে পারে। এই ডিম গুলো অল্প সময়ের মধ্যে নোংরা গদি বা বিছানা,ফার্নিচারের ফাঁক ফোকরে লুকিয়ে থাকে।
  • এরা অন্ধকার স্থানে থাকতে বিশেষ করে কাপড়ের সেলাইয়ের মধ্যে,বিছানা,গদি,ওয়ারড্রব এর ফাঁক ফোকরে, আলমারির ফাঁকে, অন্ধকারযুক্ত ফাটল স্থানে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।

ছারপোকা কতদিন না খেয়ে বাঁচতে পারে

ছারপোকা কতদিন না খেয়ে বাঁচতে পারে জানেন কি? এরা মূলত মানুষের রক্ত শোষণ করে বেঁচে থাকে। তবে ছারপোকা খাদ্য বা রক্ত ছাড়া কত দিন বাঁচতে পারে সেটি তাদের বয়স,পরিবেশে তাপমাত্রা এবং আদ্রতার উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে প্রাপ্তবয়স্ক একটি ছারপোকা খাদ্য ছাড়া ২-৩ মাস পর্যন্ত ,এমনকি ৬ মাস পর্যন্তও বেঁচে থাকতে পারে।
 
উদাহরণস্বরূপ ধরুন ,ঠান্ডা তাপমাত্রায় ছারপোকা তাদের বিপাকীয় কার্যকলাপ ধীর করতে পারে, যার ফলে তারা ৬ মাস বা তারও বেশি সময় বেঁচে থাকতে সক্ষম। আর এই দীর্ঘ সময় খাদ্য ছাড়া বেঁচে থাকার ক্ষমতা ছারপোকাদের নির্মূলের প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তোলে। কারণ, তারা তাদের লুকানো অবস্থায় থেকেই খাদ্য ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকতে পারে।

বাড়ি ছারপোকা মুক্ত রাখার উপায়

বাড়ি ছারপোকা মুক্ত রাখতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে,যে পদক্ষেপ গুলি কার্যকর ভাবে আপনার বাড়ির কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন আপনি আপনার বাড়িকে ছারপোকা মুক্ত রাখতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সে বিষয়ে জেনে নিন--
  • প্রথমতঃ আপনি আপনার বাড়ির বিছানা,গদি/তোষক সহ অন্যান্য ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। কাপড় চোপড় গরম পানিতে ধোঁয়া এবং স্টিমিং করার মাধ্যমেও আপনি ছারপোকা এবং তাদের ডিম মেরে ফেলতে পারেন।
  • দ্বিতীয়তঃ আপনার ঘরের স্থান যেমন- বিছানার কোন, সোফার তল, আলমারির ফাঁক ফোকর পরিষ্কার রাখবেন এবং খেয়াল রাখবেন এগুলোতে যেন ধুলা না জমে।
  • তৃতীয়তঃ আপনি নিয়মিত ভ্যাকুয়ামিং করে এবং বিশেষ ছারপোকা প্রতিরোধক কীটনাশক যেমন- ল্যাভেন্ডার পাউডার বা ডায়েটোমেসিয়াস আর্থ ব্যবহার করে আপনার বাড়ির এই জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখবেন।
  • চতুর্থতঃ ছারপোকা দমনে আপনার ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনি ডিহিওমিডিফায়ার ব্যবহার করে আপনার ঘরের আদ্রতা কমানো এবং সঠিক বায়ুচলাচল নিশ্চিত করতে পারেন যা কিনা ছারপোকা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
উপরিউক্ত এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার বাড়িকে খুব সহজেই ছারপোকা মুক্ত রাখতে পারেন।

ছারপোকা নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

ছারপোকা সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যেই কিছু ভ্রান্ত ধারণা বা বিশ্বাস রয়েছে। এখনো অনেকেই সেগুলি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন। যেমন-
  • অনেকেই মনে করেন ছারপোকা শুধুমাত্র নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন ঘরে জন্মে থাকে। এটি একেবারেই ভুল ধারণা, কারণ ছারপোকা যে কোন ঘরেই থাকতে পারে যেখানে তারা খাবারের উৎস পাবে। আর এদের খাবারের প্রধান আকর্ষণ হল মানুষ এবং প্রাণীদের রক্ত।
  • অনেকের ধারণা ছারপোকা শুধুমাত্র বিছানা,গদি বা তোষকে থাকে। এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা, কারণ ছারপোকা সোফা, কার্পেট,আলমারি এবং অন্যান্য ফাঁকা স্থানে লুকিয়ে থাকতে পারে।
  • অনেকেই বিশ্বাস করেন ছারপোকা খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়। কিন্তু ছারপোকা খাদ্য ছাড়াও দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এবং এদের ডিমগুলোও দীর্ঘসময় বেঁচে থাকে।
  • কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন ছারপোকা সরাসরি কামড় দিলেও কোন রোগের সংক্রমণ হয় না। কিন্তু না,তাদের কামড়ের ফলে চুলকানি,ত্বকের প্রদাহ এবং প্রচন্ড রকমের এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এদের কামড়ের কারণে ত্বকে ইনফেকশনও দেখা দিতে পারে।

ছারপোকা দূর করার সময় সতর্কতা

ছারপোকা দূর করার সময় আপনার কিছু বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন-
  • ছারপোকা দমনে আপনি যদি শক্তিশালী কীটনাশক বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে আপনার ঘরের বাচ্চা, পোষা প্রাণী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
  • কেমিক্যাল ব্যবহারের পর ঘর থেকে বাইরে অবস্থান করা এবং কয়েক ঘন্টা পর ঘরে ফিরে আসাটা ভালো।
  • ছারপোকা দূর করার সময় আপনি আপনার ত্বক চোখ এবং শ্বাসতন্ত্রের সাথে কীটনাশকের সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন।
  • বিশেষ করে কেমিক্যাল স্প্রে বা পাউডার ব্যবহারের সময় গ্লাভস,মাক্স এবং সুরক্ষামূলক চশমা পরিধান করুন। কিছু কীটনাশক ও প্রাকৃতিক উপাদান আপনার ত্বক ও চোখে ক্ষতি করতে পারে।
  • ঘরে কেমিক্যাল প্রয়োগের পর ভালোভাবে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন এবং কেমিক্যাল শুকানোর পর ঘরে ফিরে আসুন।
  • কেমিক্যাল প্রয়োগের পর ঘরের সমস্ত স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেবেন।
  • আপনার বাড়ির ছারপোকার সমস্যা যদি গুরুতর হয় কিংবা নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না এমন পরিস্থিতি হলে আপনি একজন পেশাদার কীটনাশকের সেবা গ্রহণ করুন।

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে আমার মন্তব্য

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে বিস্তারিতভাবে আমাদের আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছেন। মূলত ছারপোকা দমনে একটি সঠিক এবং সুসংগঠিত পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ছারপোকার অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতে পারেন। মনে রাখবেন,ছারপোকা
 
থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হলেও এটি কিন্তু সম্ভব, যদি আপনি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। সুতরাং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার বাড়ির ছারপোকার সমস্যা চিরতরের জন্য দূর করুন। সেই সাথে ছারপোকার ক্ষতি থেকে আপনার পরিবারকে রক্ষা করুন। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url