ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? ভিটামিন ই ক্যাপসুল কখন খেতে হয় জানেন কি? না জেনে থাকলে এক্ষুনি আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ে নিন। 
ভিটামিন-ই-ক্যাপসুল-এর-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
কেননা, আজকে আমাদের  এই আর্টিকেল থেকেই জেনে যাবেন ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আপনি কখন এই ক্যাপসুল খাবেন। তাহলে চলুন আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর নাম আপনারা হয়তো অনেকেই শুনেছেন। সাধারণত শরীরে ভিটামিন ই ঘাটতি দেখা দিলে অথবা আপনি যদি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই না পান সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাবার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন ভিটামিন ই ক্যাপসুলের উপকারিতা গুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন--

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষাঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে আপনার শরীরের কাজ করে। যার ফলে এটি বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিকেন্সের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনাকে এবং আপনার শরীরের কোষ কে রক্ষা করে। সুতরাং ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে আপনি বয়স জনিত বিভিন্ন রোগ এবং ইনফ্লামেটরি পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
  • হার্ট সুস্থ রাখতেঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হার্টের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আপনার হৃদপিন্ডের পেশিগুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
  • ত্বকের সুরক্ষায়ঃ নিয়মিত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে এটি আপনার ত্বকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশি থেকেও আপনার ত্বকের রক্ষা করে। ফলে আপনার ত্বকে সহজে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে পারে না।
  • চোখ ভালো রাখেঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার চোখের রেটিনার ক্ষতি কমায় যা ড্রাই আই সিনড্রোম এবং অন্যান্য চোখের সমস্যা প্রতিরোধেও বেশ সহায়ক।
  • মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখতেঃ নিয়মিত নিয়ম করে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে,এটি আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখে এবং অ্যালজাইমার্স ডিজিজ ও অন্যান্য মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে এটি আপনার মেটাবলিজম উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে, যা কিনা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
  • পিরিয়ড সংক্রান্ত জটিলতাঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবনের ফলে এটি মহিলাদের মাসিক চক্র পিএমএস এর উপসর্গ যেমন- পেট ব্যথা, মেজাজ পরিবর্তন এবং অন্যান্য সমস্যা কমাতে পারে।
  • কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধিঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধিতে কাজ করে। তাছাড়া এটি আপনার কোষের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং নতুন কোষ গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • মাংসপেশির কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবনের ফলে এটি আপনার মাংসপেশীর ক্লান্তি কমায় এবং সেই সাথে আপনার শারীরিক দুর্বলতা হ্রাস করে।
  • এন্টি ইনফ্লামেটরি প্রভাবঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার শরীরের ইনফ্লামেশন কমাতে সহায়ক। যা আপনাকে বিভিন্ন প্রদাহ জনিত রোগের ঝুঁকি থেকে বাঁচাবে।
  •  ফ্যাটি লিভার দূর করতেঃ নিয়মিত ভিটামিন ই খেলে এটি আপনার লিভারের সেল গুলি সুরক্ষিত রাখে এবং লিভারের ফ্যাট কমাতেও সাহায্য করে। সুতরাং, যারা ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন তাদের জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল অনেকটাই উপকারী।
  • প্রাকৃতিক তেল হিসেবেঃ ভিটামিন ই ক্যাপ ভিটামিন ই আপনি আপনার ত্বক ও চুলের জন্য তেল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। এটি যেমন আপনার চুলের আদ্রতা ধরে রাখে তেমনি আপনার ত্বকে পুষ্টি জোগাতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন-ই-ক্যাপসুল-এর-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং সাধারণ ঠান্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃ আপনি কি কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন? কোনভাবেই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না! তাহলে বলব আপনি আজ থেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়া শুরু করুন।কারণ, ভিটামিন ই ক্যাপসুল কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং সেই সাথে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনাকে ক্যান্সারের হাত থেকেও বাঁচাতে পারে। কারণ, এটি কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
  • প্রজনন স্বাস্থ্যেঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল এটি পুরুষ ও মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। এটি একজন পুরুষ বা মহিলার শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং প্রজনন সম্পর্কিত সকল সমস্যার ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত ভিটামিন ই খেলে এটি আপনার চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে। শুধু তাই নয় এটা আপনার চুল পড়া কমাতে এবং চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। তবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবনের আগে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন। কারণ, সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ই সেবন করা হলে এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার কিছু অপকারিতা

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারি দিকও রয়েছে। তবে উপকারীর তুলনায় এর অপকারী দিকগুলো একেবারেই নগণ্য। এবার চলুন দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবনের ফলে আপনার কি কি অপকার হতে পারে সে সম্পর্কে জানুন-

  • অতিরিক্ত ডোজের ঝুঁকিঃ অতিরিক্ত ভিটামিন ই সেবন করলে আপনার শরীরের মধ্যে এটি অতিরিক্ত হওয়ার কারণে রক্তপাতের ঝুঁকিতে বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে আপনার হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • পেটের সমস্যাঃ মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাবার ফলে এটি আপনার পেটের নানান ধরনের অস্বস্তি যেমন- ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বদহজম ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্ন ঘটায়ঃ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যা কিনা আপনার প্রজনন সমস্যা ও সৃষ্টি করতে পারে।
  • রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাঃ এটি আপনার রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এবং রক্তপাতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা আন্টিকোয়াগুলেন্টস গ্রহণ করছেন।
  • এলার্জিজনিত সমস্যাঃ অধিক পরিমাণে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে এটি অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জির কারণ হতে পারে। এর ফলে আপনার ত্বকে রাশ, লালচে ভাব এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • লিভারের সমস্যাঃ আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতেই থাকেন তাহলে এটি আপনার লিভারের কার্যক্ষম তাকে কমিয়ে দিতে পারে এবং লিভার সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • মাথাব্যথাঃ অতিরিক্ত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে অনেক সময় এটি আপনার মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার কারণ হতে পারে।
  • ব্লাড প্রেসারের পরিবর্তনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার বাড়াতে পারে, যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করেন। তবে পরিমিত পরিমাণে নিয়ম মেনে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন করলে আপনার ব্লাড প্রেসার ঠিকই থাকবে।
  • অনিদ্রা রোগঃ কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন ই সেবনের ফলে এটি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে অর্থাৎ অনিদ্রা রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
  • কিডনি সমস্যাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে এটি আপনার কিডনির কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে এবং কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিঃ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই সময় ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবনের আগে অবশ্যই আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।
সম্মানিত পাঠক, আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করার আগে একজন পেশাদার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন। কেননা সঠিক ডোজ এবং ব্যবহারের নির্দেশনা মেনে চললে আপনি এর থেকে অপকারিতার চেয়ে উপকারিতাই পাবেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল কোনটা ভালো

ভিটামিন ই ক্যাপসুলের উপকারিতা পেতে আপনাকে জানতে হবে, কোন ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি আপনার জন্য ভালো। কারণ ভিটামিন ই ক্যাপসুলের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে এবং সবগুলোই যে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে তা কিন্তু নয়। ভিটামিন ই ক্যাপসুলের মূলত দুটি প্রকারভেদ রয়েছে। এর একটি হল প্রাকৃতিক ডি-অ্যালফা টোকোফেরোল এবং অন্যটি হলো সিন্থেটিক ডি-অ্যালফা টোকোফেরল। 
 
প্রাকৃতিক ডি আলফা টকোফেরোল সাধারণত "D- alpha-tocopherol"নামে লেভেল করা হয়, যা আপনার শরীরের দ্বারা খুব সহজে শোষিত হয় এবং অধিক কার্যকর হিসেবে বিবেচিত। অপরদিকে সিন্থেটিক ভিটামিন ই ক্যাপসুল যা "dl-alpha-tocopherol"নামে পরিচিত। এই সিনথেটিক ডি আলফা টোকোফেরোল, ডি অ্যালফা টকোফেরোল এর থেকে অনেকটাই কম দামে পাওয়া যায় এবং এর কার্যকারিতা কম। 
 
সুতরাং,এই দুই প্রকার ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর মধ্যে প্রাকৃতিক ডি অ্যালফা টোকোফেরোল ই ব্যবহারের দিক থেকে সর্বোৎকৃষ্ট। তবে, Now Foods বা Kirkland Signature এর মত ব্র্যান্ডের মিশ্র টোকোফেরোলস ক্যাপসুলে ডি আলফা ছাড়াও অন্যান্য টোকোফেরোল যেমন- ডি-বেটা, ডি-গামা ও ডি-ডেল্টা টোকোফেরল থাকে, যা ভিটামিন ই এর সামগ্রিক কার্যকারিতা বাড়ায়। 
 
আরেকটি কথা বলে রাখি, ভিটামিন ই ক্যাপসুল সবচেয়ে কোনটি ভাল, সেবনের জন্য আপনি কোন ভিটামিন এ ক্যাপসুলটি নির্বাচন করতে চান,সেটি নির্বাচন করার আগে আপনি একবার একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন। বিশেষ করে আপনি যদি কোন চিকিৎসার অধীনে থাকেন অথবা বিশেষ কোন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি।ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে উপকারিতা পেতে প্রথমেই এর ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে।সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন--
  • সঠিক ডোজ অনুসরণ করুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন করে এর উপকারিতা পেতে আপনাকে এর সঠিক ডোজ নিয়ম মেনে অনুসরণ করতে হবে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কএকজন পুরুষদের জন্য ভিটামিন ই-এর দৈনিক প্রস্তাবিত ডোজ ৪০০IU অর্থাৎ ১৫ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য ভিটামিন ই এর প্রস্তাবিত দৈনিক ডোজ ৩০IU অর্থাৎ ১১ মিলিগ্রাম। তবে আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী এই ডোজ পরিবর্তিত হতে পারে।
  • খাবারের সাথে গ্রহণ করুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন, যা আপনার শরীরের চর্বিতে দ্রবীভূত হয়। তাই এই ক্যাপসুলটি আপনি যথাসম্ভব খাবারের সাথে গ্রহণ করুন। বিশেষ করে এমন খাবারের সাথে গ্রহণ করবেন যার সাথে কিছু পরিমাণ চর্বি রয়েছে। এর ফলে এটি আপনার শরীরে ভিটামিন ই এর শোষণ বৃদ্ধি করবে
  • দিনে একবার বা প্রয়োজন অনুযায়ী দুইবার গ্রহণ করুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় করে খেতে পারেন। তবে, আপনি যদি একাধিক ক্যাপসুল গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে সকাল ও সন্ধ্যায় একটি করে গ্রহণ করতে পারেন।
  • পানির সাথে গ্রহণ করুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনি যদি পানির সাথে খান সেক্ষেত্রে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। সুতরাং, আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল অবশ্যই এক গ্লাস পানির সাথে গ্রহণ করুন। তাতে এটি আপনার শরীরের মধ্যে ভালোভাবে শোষিত হবে।
  • স্টোরেজ নির্দেশনা মেনে চলুনঃ সঠিকভাবে স্টোরেজ করতে পারলে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর কার্যকারিতাও অক্ষুন্ন থাকে। আর তাই এর কার্যকারিতা এবং গুণগত মান ঠিক রাখতে, আপনি ক্যাপসুলগুলো একটি ঠান্ডা, শুষ্ক স্থানে রাখুন এবং সরাসরি সূর্যালোক বা আদ্রতা থেকে দূরে সংরক্ষণ করে রাখুন।
  • অতিরিক্ত ডোজ গ্রহন থেকে বিরত থাকুনঃ অতিরিক্ত ভিটামিন ই ক্যাপসুল গ্রহণের ফলে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং আপনি নিয়ম মেনে প্রতিদিনের অনুমোদিত ডোজ গ্রহণ করার চেষ্টা করুন এবং অতিরিক্ত ডোজ গ্রহন থেকে বিরত থাকুন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম মূলত নির্ভর করবে আপনার বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর।উপরিউক্ত নিয়ম গুলো মেনে আপনি যদি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করেন, তাহলে এর থেকে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন আশা রাখছি।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি ফর্সা হওয়া যায়?

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে ফর্সা হওয়া যায় কিনা এই প্রশ্ন আমাদের অনেকেরই। আবার অনেকেই জানতে চান ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারে ফর্সা হওয়া যাবে কিনা! তাহলে জেনে রাখুন, ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও,এটি আপনার ত্বক ফর্সা করবে এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
 
তবে হ্যাঁ,ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের কোষগুলোকে বিভিন্ন ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি আপনার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের সুরক্ষা বাড়ায় যা আপনার ত্বকে সানবার্ন সহ অন্যান্য ত্বকের সমস্যার প্রভাব কমাতে পারে।
 
কিন্তু ত্বক ফর্সা করার জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যকর উপায় হিসেবে ভিটামিন ই একেবারেই কাজ করে না। তবে আপনি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে আরো অন্যান্য উপাদান যেমন- মধু, এলোভেরা, গোলাপজল, মুলতানি মাটি ইত্যাদির সাথে সাথে ভিটামিন ই ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা ত্বকের জন্যও কম নয়। ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া সুন্দর হতে কে না চায় বলুন তো! আপনি চাইলে আপনার ত্বকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়াতে পারেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে ভিটামিন ই ক্যাপসুল তাকে কিভাবে, কোন উপায়ে ব্যবহার করা যায়। তাহলে চলুন এবার জেনে নিন ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনি আপনার ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করবেন--
পেঁপে ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • পাকা পেঁপে- ৪ টুকরো এবং
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২ টি
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ পেঁপে ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই ৪ টুকরা পাকা পেঁপে ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবারে ভিটামিন ই ক্যাপসুল দুটি খুলে এর ভেতর থেকে তেল গুলো বের করে, তা পেঁপের পেস্ট এর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ব্যাস এবার এই পেস্টটি আপনার মুখের ত্বকে ভালো করে লাগান। নিয়মিত এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহারে আপনার ত্বক ফিরে পাবে হারানো উজ্জ্বলতা।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল,আমের পাল্প এবং ওটস এর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২টি
  • আমের পাল্প- ৩ চামচ পরিমাণ এবং
  • ওটস - ২ চামচ পরিমাণ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ এই ফেসপ্যাকটি তৈরির ক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে এর তেল বের করে নিন। এবারে এই তেল তিন চামচ পরিমাণ আমের পাল্প এবং ২ চামচ পরিমাণ ওটস এর সাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। এবারে এই মিশ্রণটি আপনার মুখের ত্বকে, ঘাড়ে লাগান এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
 
শুকিয়ে এলে সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহারে আপনার ত্বক থেকে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস ইত্যাদি দূর হবে এবং সেই সাথে মৃত ত্বকের কোষগুলি থেকে মুক্তি দিবে। যার ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল মস্তি এবং প্রাণবন্ত।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল, গ্লিসারিন ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • গোলাপজল- ২ চা চামচ পরিমাণ
  • গ্লিসারিন- ১ চা চামচ পরিমাণ এবং
  • ভিটামিন ই তেল- ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ আপনি ১ চা চামচ ভিটামিন ই তেলের সাথে ২ চা চামচ গোলাপ জল এবং ১ চা চামচ গ্লিসারিন একসাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। এবার এই মিশ্রণটি আপনার মুখে নিয়মিত ভালো করে ব্যবহার করুন। নিয়মিত এই মিশ্রণটি ব্যবহারে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে লাবণ্যময়।
এলোভেরা জেল ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • ভিটামিন ই তেল- ১ চা চামচ পরিমাণ এবং
  • অ্যালোভেরা জেল- ২ চা চামচ পরিমাণ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ আপনি প্রথমেই ভিটামিন ই ক্যাপসুলটিকে ভেঙে এর ভেতর থেকে এক চা চামচ পরিমাণ তেল বের করে নিন। এবার এই তেলের সাথে ২চা চামচ এলোভেরা জেল খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি আপনার মুখের ত্বক, ঘাড়ে পাঁচ মিনিটের জন্য ম্যাসাজ করুন এবং ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দিন। পরদিন সকালে উঠে সাধারন তাপমাত্রার পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বকে উজ্জ্বল করতে এই ফেসপ্যাকটি বেশ কার্যকর।
মধু,দারুচিনি ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • মধু- ১ চা চামচ পরিমাণ
  • দারুচিনি পাউডার- ১ চা চামচ এবং
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল-২ টি।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ এক চামচ দারুচিনি পাউডারের সাথে আপনি এক চা চামচ মধু এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল উপাদান একসাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন এবং আপনার মুখে লাগান। নিয়মিত এই মিশ্রণটি ব্যবহারের ফলে একদিকে আপনার ত্বকের ব্রণ যেমন দূর হবে তেমনি অন্যদিকে আপনার ঝুলে পড়া ত্বককেও টানটান করে তুলবে।
মিল্ক পাউডার ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ফেসপ্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • দুধের গুঁড়ো- ২ চামচ পরিমাণ এবং
  • ভিটামিন ই তেল- দুই চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ আপনি ২ চামচ ভিটামিন ই তেলের সাথে দুই চামচ দুধের গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। অতঃপর এই পেস্ট আপনার মুখে লাগে কিছুক্ষণ পরে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বককে গভীর থেকে হাইড্রেটেড করবে এবং আপনার ত্বক হয়ে উঠবে লাবণ্যময়।

সম্মানিত পাঠক, ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে তৈরি কার্যকরী কিছু ফেসপ্যাক আপনাদের জানিয়ে দিলাম। আপনি আপনার সুবিধা মত যেকোনো একটি ফেসপ্যাক আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। আশা করছি ভালো ফল পাবেন।

চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর নানাবিধ  উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই অবগত হয়েছেন। ভিটামিন ই শুধুমাত্র আপনার ত্বক ই না বরং আপনার চুলের জন্য উপকারী। কেননা এই ভিটামিনের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার চুলকে ঝলমলের সতেজ এবং উজ্জ্বল করে তোলে।আমরা ইতিমধ্যেই ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই কিভাবে ব্যবহার করবেন তা জানিয়ে দিয়েছি। এবার চলুন জেনে নিন চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিভাবে ব্যবহার করবেন--
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এবং অলিভ অয়েলের ব্যবহার
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২ টি এবং
  • অলিভ অয়েল- ২ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ আপনি প্রথমে ই ভিটামিন ই ক্যাপসুল দুটি থেকে তেল বের করে নিন। এবার এর সাথে আপনি আপনার সাধ্যমত ২ চা চামচ অলিভ অয়েল তেল অথবা নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে আপনার চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। লাগানোর প্রায় ১ ঘন্টা পর আপনার চুল ভালো করে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহারে দেখবেন আপনার চুলের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে এসেছে।
ভিটামিন ই, কলা এবং মধুর হেয়ার প্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • পাকা কলা- ১ টি
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল - ৩ টি এবং
  • মধু- ১ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ এই হেয়ার প্যাকটি তৈরির ক্ষেত্রে আপনি একটি পাকা কলা ভালো করে চটকে নিন। এবার এই কলার সাথে এক টেবিল চামচ মধু এবং ৩টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল ভালো করে মিশিয়ে আপনার চুলে লাগান। প্রায় এক ঘন্টা পর আপনার চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহারে আপনার চুলের আগা ফাটা দূর হবে।
টক দই ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর প্যাক
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • টক দই- ২ টেবিল চামচ এবং
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ৩-৪ টি।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারঃ আপনি ২ টেবিল চামচ টক দই এর সাথে কয়েকটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোরা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন প্রায় ৪০ মিনিট। ৪০ মিনিট পর আপনার চুল মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে করে ধুয়ে ফেলুন।

উপরিউক্ত হেয়ার প্যাক গুলো ছাড়াও শুধু ভিটামিন ই ক্যাপসুল ছিদ্র করেও সরাসরি আপনার মাথায় ঘষে ঘষে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার মাথার ত্বক,চুল উভয় সুস্থ থাকবে এবং সেই সাথে আপনার চুল পড়া রোধ হবে, নতুন চুল গজাবে, চুলের আগা ফাটা দূর হবে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উৎস কোনগুলো

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এর উৎস সম্পর্কে জানতে চান। ভিটামিন ই ক্যাপসুল মূলত ভিটামিন ই এর বিভিন্ন উৎস থেকে প্রস্তুত করা হয়, যা সাধারণত প্রাকৃতিক এবং সিন্থেটিক উভয়ই হতে পারে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস হতে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। এবার জেনে নিন ভিটামিন ই এর উৎস কোনগুলো হতে পারে--
ভিটামিন-ই-ক্যাপসুল-এর-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
বাদাম ও বীজ এর ক্ষেত্রে
  • মেন্ডেলস
  • আখরোট
  • সানফ্লাওয়ার সিডস এবং
  • চিয়া সিডস।
তেলের উৎস হিসেবে ভিটামিন ই
  • সূর্যমুখী তেল
  • পাম্প তেল
  • অলিভ অয়েল এবং
  • আবাদি তেল।
সবজির উৎস হিসেবে ভিটামিন ই
  • ব্রকলি
  • মিষ্টি আলু
  • পিপার
  • কেল এবং
  • স্পিনাচ।
মাছ ও মাংসের উৎস হিসেবে ভিটামিন ই 
  • টুনা মাছ
  • গরুর কলিজা
  • মুরগীর কলিজা
  • ভেড়ার মাংস
ফলমূলের উৎস
  • অ্যাভোকাডো
  • কিউই
  • আম
  • ব্ল্যাকবেরি।
ফার্টিফাইড খাদ্যদ্রব্যের উৎস
  • ফার্টিফাইড জুস
  • ফার্টিফাইড দুধ
  • ফার্টিফাইড মার্জারিন ও মাখন
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম ভিটামিন ই এর উৎস সমূহ।এই খাদ্যগুলোই ভিটামিন ই এর ভালো উৎস এবং আপনার দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন ই পেতে সহায়ক হতে পারে। যদি আপনি খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই না পান, সেক্ষেত্রেই কেবলমাত্র ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল কখন খেতে হয়

ভিটামিন ই ক্যাপসুল কোন সময় খেতে হয় আপনারা অনেকেই জানতে চান ? খাওয়ার আগে, নাকি খাওয়ার পরে। তাহলে জেনে রাখুন, ভিটামিন ই ক্যাপসুল সাধারণত খাবারের সাথে গ্রহণ করা সবচেয়ে ভালো।কারণ এটি চর্বি দ্রুবনীয় ভিটামিন হওয়ার কারণে খাবারের সাথে উচ্চ চর্বি উপস্থিত থাকলে সবচেয়ে বেশি কার্যকরভাবে শোষিত হয়। 
 
সাধারণভাবে সকালে বা দুপুরের খাবারের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় আপনার শরীর খাবার হজম করার জন্য সক্রিয় থাকে এবং এটি ভিটামিন ই এর শোষণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার সময় আপনি পুরোপুরি পানি দিয়ে ভালো করে গিলে খাবেন।
 
ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনি দিনে একবার কি দুইবারও খেতে পারেন।তবে,আপনি যদি নিয়মিতভাবে একই সময়ে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন করেন সেক্ষেত্রে আরও বেশি ভালো ফলাফল পাবেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন এবং এই নিয়ম অনুযায়ী  আপনি ই ক্যাপসুল খাওয়ার চেষ্টা  করুন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা পেতে এবং  অপকারিতা এড়াতে নিয়ম মেনে এই ক্যাপসুল খেতে হবে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০IU সাধারণত প্রতিদিন একবার খাবারের সাথে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, ভিটামিন ই চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন,যা খাবারের সাথে খুব ভালোভাবে শোষিত হয়। সে হিসেবে আপনি দুপুরের খাবারের সাথে অথবা সন্ধ্যায় হালকা নাস্তার পর ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ খেতে পারেন। 
 
আর আপনি যদি ক্যাপসুলটি গিলে খেতে চান সেক্ষেত্রে পানিতে পুরোপুরি গিলে খাবেন।আরেকটি কথা মনে রাখবেন,এই ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ আপনি নিয়মিতভাবে একই সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন এতে আপনার শারীরিক কার্যকারিতা বজায় থাকবে। আর অতিরিক্ত ডোজ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন,কারণ অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন ই আপনার শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল কতদিন খেতে হয়

ভিটামিন ই ক্যাপসুল কতদিন খেতে হবে তা মূলত নির্ভর করবে আপনার বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর। সাধারণত এটি প্রতিদিন গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করা হয, তবে এর সঠিক সময়কাল নির্ধারণ করতে আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত। ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটানা ৩ মাসের বেশি খাওয়া উচিত নয়। তবে কিছুদিন বিরতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া শুরু করতে পারেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি মোটা হয়?

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি মোটা হয় এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেখুন, ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে সরাসরি মোটা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ, এটি ওজন বৃদ্ধির সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কোনভাবেই সম্পর্কিত নয়। আপনারা ইতিমধ্যেই জানেন যে, ভিটামিন ই একটি চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিস্টেমের একটি অংশ হিসেবে কাজ করে,
 
কিন্তু এটি নিজে ক্যালোরি প্রদান করে না। অপরদিকে মোটা হওয়ার মূল কারণ হলো অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব,যা ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর সাথে মোটেও সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারে আপনার সরাসরি ওজন বৃদ্ধির যেমন আশঙ্কা নেই তেমনি মোটা হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।

ভিটামিন ই ক্যাপ আসলে কি?

ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি খাদ্য সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন ই এর বিভিন্ন ফল ধারণ করে থাকে এবং শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে যা কিনা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য, চুল, ত্বক উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
 
ভিটামিন ই ক্যাপসুল চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন হওয়ার ফলে খাবারের সাথে গ্রহণ করলে এটি ভালোভাবে শোষিত হয়। এর সঠিক ডোজ এবং ব্যবহারের সময়কাল নির্ধারণের জন্য আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন-ই গ্রহণের কারণে শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর দাম কত ২০২৪

অনেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর দাম সম্পর্কে জানতে চান। বর্তমান ২০২৪ সাল অনুযায়ী ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর দাম হলো
৩০০-৪০০IU ক্যাপসুলের প্যাকেজ- প্রায় ২০০-৫০০ টাকা এবং
১০০০ IU ক্যাপসুলের প্যাকেজ- প্রায় ৫০০-১০০০ টাকা।
সে হিসেবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০IU এর প্রতি পিসের দাম প্রায় ২০-৪০ টাকা হতে পারে এবং ১০০০IU এর প্রতি পিসের  দাম প্রায় ৩০-৭০ টাকা হতে পারে। তবে এই দাম বিভিন্ন ফার্মেসি অনলাইন স্টোর ব্র্যান্ড মান এবং প্যাকেজিং অনুসারে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। আশা করছি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর দাম সম্পর্কে আপনারা পূর্ণাঙ্গ একটি ধারণা পেয়েছেন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা

  • যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ পূর্বক তবেই ব্যবহার করবেন।
  • যারা লিভার রোগে ভুগছেন তাদের ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন না করাটাই ভালো। কেননা এতে আপনার লিভারের কার্যকারিতা আরো কমে যেতে পারে।
  • যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন তারা ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়া শুরুর পূর্বে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন। কেননা ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনার ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।
  • আপনি কখনোই ভিটামিন ই ক্যাপসুলের অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণ করবেন না। কারণ অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি আপনার শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • আপনার অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন- রক্তপাতের সমস্যা, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি থাকলে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন থেকে নিজেকে বিরত রাখুন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।
  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল সর্বদা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। আপনি এটি শীতল,শুষ্ক স্থানে রাখুন এবং সরাসরি সূর্যালোক থেকে বা উচ্চ তাপমাত্রা থেকে দূরে রাখুন। ক্যাপসুল এর মেয়াদ যেন উত্তীর্ণ না হয় সেজন্য নিয়মিত পর্যালোচনা করুন।
  • সুতরাং ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার শুরু করার পূর্বে আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সেই পরামর্শ অনুযায়ী এর সঠিক ডোজ গ্রহণ করুন।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। এটি ব্যবহারের উপকারিতা হল এটি মানবদেহে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রী রেডিকেলসের হাত থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারে আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
 
অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন ই গ্রহণ করলে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন মাথাব্যথা ক্লান্তি রক্তপাতের সমস্যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেবন করার পূর্বে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তবেই সেবন করবেন। যাতে এর উপকারিতা গুলো পূর্ণাঙ্গরূপে পান। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url