ফিটকিরির কার্যকরী ১৫ উপকারিতা ও ৬ অপকারিতা জানুন
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? ফিটকিরি খেলে কি হয় জানেন কি? না জেনে থাকলে এক্ষুনি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ফিটকিরির কার্যকরী ১৫ উপকারিতা ও ৬ অপকারিতা
- ফিটকিরি ব্যবহারের উপকারিতা
- ফিটকিরির কিছু ক্ষতিকর দিক
- ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
- ফিটকিরি খেলে কি হয়
- মুখে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
- ফিটকিরি মুখে দেওয়ার উপকারিতা
- ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর
- পানিতে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
- ফিটকিরি দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
- ফিটকিরির দাম কত
- এক লিটার পানিতে কতটুকু ফিটকিরি দিতে হয়
- ফিটকিরি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার
- লেখকের বক্তব্য
ফিটকিরি ব্যবহারের উপকারিতা
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। ফিটকিরি এই নামটির সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত।এটি একটি প্রাকৃতিক খনিজ যার নানা ধরনের ব্যবহার রয়েছে। আজকে আলোচনা শুরুতেই চলুন ফিটকিরির বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই-
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করেঃ ফিটকিরি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক।ফলে আপনার শরীরের ক্ষতস্থানে ফিটকিরি ব্যবহার করলে এটি ক্ষতস্থান থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
- ত্বক পরিষ্কার রাখেঃ আপনার ত্বক কি অতিরিক্ত তৈলাক্ত? তাহলে আজ থেকেই আপনার ত্বকে ফিটকিরির ব্যবহার শুরু করুন। কারণ ফিটকিরি ব্যবহারে এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করতে পারে এবং ত্বকের পোর গুলোকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।শুধু তাই নয়,এটি ব্রণ ও পিম্পল কমাতেও কাজ করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে।
- ফিটকিরি হজমে সহায়কঃ হজমের ক্ষেত্রেও ফিটকিরি খুব ভালো কাজ করে।এটি আপনার পাকস্থলীর অস্বস্তি, গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যাও দূর করতে পারে।
- ক্ষতস্থান নিরাময়েঃ আপনার শরীরে যে কোন ক্ষতস্থানে বা আঘাত জনত স্থানে ফিটকির ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ক্ষতস্থানে ফিটকির ব্যবহার করলে এটি আপনার ক্ষতস্থানের প্রধান কমাতে এবং ত্বকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সুতরাং ক্ষতস্থান নিরাময় ফিটকিরি বেশ কার্যকরী।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ অনেকেরই নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়।নিঃশ্বাসের এই দুর্গন্ধের কারণে আপনাকে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আজ থেকেই ফিটকিরির ব্যবহার শুরু করুন। কেননা ফিটকিরি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ভালো কাজ করে। কেননা এটি একটি প্রাকৃতিক ডিউডোরেন্ট হিসেবে কাজ করে।
- দাঁতের যত্নে ফিটকিরিঃ দাঁতের যত্নেও ফিটকিরি বেশ উপকারী।নিয়মিত ফিটকিরির ব্যবহারে এটি আপনার দাঁতের জমে থাকা দীর্ঘ দিনের প্ল্যাক দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ফিটকিরি আপনার মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে এবং দাঁতকে গোড়া থেকে মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলে। ফলে প্রতিদিন ব্রাশ করার সময় আপনি ফিটকিরি ব্যবহার করতেই পারেন।
- পানি পরিশোধনেঃ পানি পরিশোধনে ভূমিকা অনন্য।পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করলে একটি এটি পানিতে থাকা জীবাণু ও ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে সাহায্য করে ফলে পানি আরো পরিষ্কার ও স্বচ্ছ হয়।
- চুলের যত্নে ফিটকিরিঃ আপনি আপনার চুলের যত্নেও ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ফিটকিরি ব্যবহার করলে এটি আপনার চুলকে গোড়া থেকে শক্তিশালী ও মজবুত করে তোলে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে কাজ করে। শুধু তাই নয়,আপনার চুলের পাতলা ভাব কমাতেও সাহায্য করে।
- ডিউডোরেন্ট হিসেবেঃ ফিটকিরি শুধু মুখের দুর্গন্ধ নয় বরং এটি আপনার শরীরের দুর্গন্ধ কমাতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। কারণ ফিটকিরি আপনার শরীরে প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে কাজ করে।
- এলার্জির উপসর্গ কমাতেঃ আপনার কি অতিরিক্ত এলার্জির সমস্যা রয়েছে? তাহলে বলব আপনি ফিটকিরি ব্যবহার করুন। কারণ ফিটকিরি এলার্জির উপসর্গ কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
- রক্তপাত কমাতেঃ আপনার শরীরে কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত শুরু হলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন এই ফিটকিরি। কারণ ফিটকিরি দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে এবং ক্ষতস্থান নিরাময়ে ম্যাজিক এর মত কাজ করে।
- মুখের ঘা সারাতেঃ অনেক সময় আমাদের মুখের ভেতরে ছোট ছোট ফুসকুড়ির মত ঘা হয়।এই ঘা নিরাময়ে আপনি ব্যবহার করতে পারেন ফিটকিরি। এর জন্য আপনি আপনার মুখের ঘা এর ক্ষতস্থানে ফিটকিরি লাগান।এতে ঘা দ্রুত শুকাবে এবং মুখের জ্বালাপোড়াও দূর হবে।তবে একটি কথা,ফিটকিরি লাগানোর পর মুখে লালা আপনি না গেলে বাইরে ফেলে দেবেন।
- উকুন নাশক হিসেবে ফিটকিরিঃ আপনার মাথায় কি উকুনের উপদ্রব খুব বেড়ে গেছে? বিভিন্ন ধরনের উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করেও উকুন দূর করতে পারছেন না। তাহলে আপনি আজ থেকে শ্যামপুর পরিবর্তে আপনার মাথায় ফিটকিরি ব্যবহার করুন। কারণ ফিটকিরি উকুন নাশক হিসেবে কাজ করে।
- মুখে বয়সের ছাপ দূর করতেঃ অনেক সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ক্লান্তির কারণে আপনার মুখে বয়সের ছাপ একেবারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মুখের এই বয়সের দূর করতে আপনি আপনার মুখে এক টুকরো ফিটকিরি ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার মুখের ত্বক সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
ফিটকিরির কিছু ক্ষতিকর দিক
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটি দিকই রয়েছে। বিশেষ করে আপনি যদি অধিক মাত্রায় ফিটকিরি ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা দিতে পারে।এবার চলুন অতিরিক্ত ফিটকির ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে রাখুন-
আরো পড়ুনঃ বীর্যমনি বা মিছরিদানা গাছের অজানা ১০ উপকারিতা
- আমরা সচরাচর পানি পরিশোধন করতে ফিটকিরি ব্যবহার করে থাকি।কিন্তু আপনি কি জানেন অতিরিক্ত ফিটকিরি ব্যবহার করলে এটি পানির পিএইচ কমিয়ে দেয় এবং পানিতে বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়াম এর মাত্রা বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত ফিটকির ব্যবহার না করে পরিমাণ মত ব্যবহার করুন।
- ফিটকিরি মিশ্রিত পানি অনেক সময় চোখে লাগলে চোখ মারাত্মক রকমের জ্বালাপোড়া করে।
- ফিটকিরি পানির বিভিন্ন ধরনের জীবাণু যেমন ধরুন- ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস করলেও এর ভাইরাস জীবানূ ধ্বংস করতে পারে না।ফলে ফিটকিরির সাহায্যে পরিশোধিত পানি পান করলে আপনি টাইফয়েড,ডায়রিয়া আমশায় ও কৃমি সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে পারেন। কিন্তু হেপাটাইটিস এ ও হেপাটাইটিস ই ভাইরাস জনিত রোগ জন্ডিস থেকে রক্ষা পাবেন না।
- অতিরিক্ত ফিটকিরি ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বকে সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।এর ফলস্বরূপ আপনার ত্বকে চুলকানি জ্বালাপোড়া হতে পারে।এমনকি ত্বক শুষ্ক হয়েও যেতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ফিটকির ব্যবহারের ফলে এটি আপনার শরীরে এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এলার্জির উপসর্গ হিসেবে আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি,রেস পড়া,লালচে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ফিটকিরি ব্যবহারের পূর্বে আপনি আপনার শরীরের ছোট্ট অংশে আগে পরীক্ষা করে নিন।
- ফিটকিরি মুখের ঘায়ে যদিও ম্যাজিকের মত কাজ করে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আপনার মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করতে পারে।
- মাত্র অতিরিক্ত ফিটকিরি ব্যবহার আপনার ত্বক বা শরীরের অন্যান্য অংশেও প্রভাব ফেলতে পারে এবং ক্ষতিকর করে তুলতে পারে।
- ফিটকিরির দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার আপনার কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।যদিও ফিটকিরি সাধারণভাবে শোষিত হয় না কিন্তু উচ্চ মাত্রার ব্যবহারে আপনার কিডনিজনিত সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
ফিটকিরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
ফিটকির ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন ধরুন-
- ছোট বাচ্চাদের ফিটকিরি ব্যবহার না করানোই ভালো। কেননা বাচ্চাদের ত্বক এমনিতেই সংবেদনশীল হয়। ফলে ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে।
- আপনি যদি একেবারেই প্রথম ফিটকিরি ব্যবহার করছেন এমনটা হয় সেক্ষেত্রে ফিটকিরি ব্যবহারের পূর্বে আপনার শরীরের ছোট কোন অংশে পরীক্ষা করে নিন। যদি তাতে বিরূপ কোন প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারেন তাহলে ফিটকির ব্যবহার বন্ধ করুন।
- আপনি অবশ্যই ফিটকিরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করবেন।কখনোই অতিরিক্ত ফিটকির ব্যবহার করবেন না এটি আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
ফিটকিরির বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে ইতিমধ্যেই আমরা জানিয়ে দিয়েছি। আর তাই ফিটকিরির উপকারিতা পেতে এটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। ফিটকিরির নানান রকম ব্যবহার রয়েছে। যা আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে আসুন, আপনি ফিটকিরি কিভাবে ব্যবহার করবেন সে নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন--
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতার ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
- ক্ষতস্থান নিরাময়ে ফিটকিরির ব্যবহারঃ আপনার শরীরে কোথাও কাটা ছেঁড়া বা ফোঁড়া হলে ফিটকিরি গুড়ো করে সেখানে লাগালে ত্বকের সংক্রমণ কমে যাবে এবং দ্রুত নিরাময় হবে।
- ঘামের গন্ধ দূর করতে ফিটকিরির ব্যবহারঃ ফিটকিরি একটি প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আপনার শরীরের ঘাম দুর্গন্ধ কমাতে বিশেষভাবে উপকারী। এর জন্য আপনার শরীরের যে অংশে বেশি ঘাম হয় সে অংশে কিছুটা ফিটকিরি নিয়ে ঘষতে থাকুন।এতে আপনার শরীরের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং এটি আপনার স্কিনের জন্যও নিরাপদ ও প্রাকৃতিক একটি উপাদান।
- রান্নার ক্ষেত্রে ফিটকিরিঃ রান্নার ক্ষেত্রে পানির স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে আপনি ফিটকিরি ব্যবহার করতেই পারেন। যেমন ধরুন আপনি যদি কুয়ো বা কুকুরের পানি পরিষ্কার করে সেই পানিতে রান্না করতে চান,সেক্ষেত্রে পানিতে কিছুটা ফিটকিরি গুলে রেখে দিন। তারপর ফিল্টার করে সেই পানিতে রান্না করুন।
- পানি দূষণ দূর করতে ফিটকিরিঃ বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকাতে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য আপনি ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে পানি বাহিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- কৃষি কাজে ফিটকিরির ব্যবহারঃ কৃষি কাজের ক্ষেত্রে আপনি ফিটকিরি গুড়ো করে মাটির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।এতে মাটির আদ্রতা বজায় থাকবে এবং ফসলের পোকামাকড়ও দূর হবে।
- মুখের ঘা কমাতেঃ মুখের লালচে ফুসকুড়ি বা যে কোন ঘা কমাতে আপনি ফিটকিরির গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে এই পানিতে কুলকুচি করতে পারেন।এটি আপনার মুখে ঘা এর ক্ষেত্রে এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করবে এবং আপনার মুখের ঘা দ্রুত শুকিয়ে যাবে।
- ত্বকের দাঁগ দূর করতেঃ আপনার ত্বকের দীর্ঘদিনের কালো ছোপ দাগ দূর করতে গোলাপজলের সাথে ফিটকিরি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের যে কোন দাগ নিমিষেই দূর হবে।
- ত্বকের বলি রেখা দূর করতেঃ আপনার ত্বকের বলিরেখা দূর করতে একটু একটু ফিটকিরি পানিতে ভিজিয়ে সেটি আপনার মুখে ভালো করে ঘষতে থাকুন। এরপর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে আপনার ত্বকের বলিরেখা দূর হবে।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ অনেক সময় দাঁতের ফাঁকে ব্যাকটেরিয়া জমে থাকার কারণে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এই দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি এক গ্লাস পানি ফুটিয়ে নিন।এবার এই ফুটন্ত পানিতে এক চিমটি লবণ ও ফিটকিরির গুঁড়া মিশিয়ে মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে রেখে দিন। ঠান্ডা হলে এবার এই পানিতে আপনি কুলকুচি করুন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি আপনি এই পানিতে কুলকুচি করেন তাহলে আপনার মুখের দুর্গন্ধ কয়েকদিনের মধ্যে চলে যাবে।
- জুতোর দুর্গন্ধ দূর করতেঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় একটি জিনিস তা হল জুতো। প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে জুতো ঘেমে তা থেকে মারাত্মক রকমের দুর্গন্ধ ছড়ায়। এক্ষেত্রে জুতোর দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি জুতোতে কিছুটা ফিটকিরি গুড়ো করে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এটা আপনার জুতোর দুর্গন্ধ দূর হবে।
- পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি একমত পানিতে এক চা চামচ ফিটকিরি পাউডার ভালো করে মিশিয়ে নিন। ।এবার এই পানিতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখুন। এতে আপনার পায়ের দুর্গন্ধ নিমিষেই দূর হবে।
- ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ অনেক সময় ফ্রিজের দুর্গন্ধ হয় এবং সেই দুর্গন্ধ খাবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে খাবার খাওয়ার জন্য অনুপযোগী হয়ে ওঠে। ফ্রিজের এই দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি একটি বাটিতে ফিটকিরি গুঁড়ো করে রেখে দিতে পারেন। আপনার ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর হবে।
- রান্নাঘর পরিষ্কার করতেঃ রান্নাঘরের ট্রেন সিটে ভাব দূর করতে এবং ঝকঝকে করতে আপনি ফিটকিরি ব্যবহার করতেই পারেন।এর জন্য গরম পানিতে ফিটকির একটি বড় টুকরা মিশিয়ে নিন।এই পানি দিয়ে আপনার রান্নাঘর পরিষ্কার করুন। এতে আপনার রান্নাঘর ঝকঝকে এবং জীবাণুমুক্ত থাকবে।
জানিয়ে দিলাম ফিটকিরির ব্যবহার সম্পর্কে।আশা করছি ফিটকিরির এই ব্যবহারগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাজে আসবে।
ফিটকিরি খেলে কি হয়
ফিটকিরি খেলে কি হয় এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই! আবার অনেকেই জানেন না ফিটকিরি খাওয়া যায় কিনা? আসলে ফিটকিরি খেলে এর রাসায়নিক গঠন ও প্রকারভেদ অনুযায়ী এটি আপনার শরীরের উপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, ফিটকিরির প্রধান উপাদান হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম সালফেট।
যা কিনা আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফিটকিরি খাওয়ার ফলে প্রথমত এটি আপনার পাকস্থলীর শ্লেষ্মা ঝিল্লী ও অন্ত্রের মিউকোসা দ্বারা দ্রুত শোষিত হতে পারে।ফলে আপনার পেটের অস্বস্তি যেমন ধরুন গ্যাস এসিডিটি বা হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার উচ্চমাত্রায় ফিটকিরি খেলে এটি আপনার পাকস্থলীর প্রদাহ এবং কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কারণ দীর্ঘদিন অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারের ফলে এটি আপনার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোতে জমা হতে থাকে এবং টক্সিন প্রভাব ফেলতে পারে।শুধু তাই নয়,এটি আপনার পাকস্থলি এসিডিটির মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে।এছাড়া ত্বকে ফিটকিরির অতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার ত্বকে এলার্জির প্রতিক্রিয়া যেমন-
ত্বকের চুলকানি, ত্বকের রেশ, জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব, ত্বক চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠা ইত্যাদি হতে পারে। তাই ফিটকিরি খাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে আপনি অবশ্যই এই সমস্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিয়ম মেনে খাবেন। ফিটকিরি খেলে কি হতে পারে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
মুখে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ফিটকিরি ভক্ষণ করলে কি হয় তা আপনি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। এর উপকারিতা পেতে এটি আপনি আপনার মুখেও ব্যবহার করতে পারেন।তবে মুখে ফিটকিরি ব্যবহার করতে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে। এবার চলুন আপনি কিভাবে মুখে ফিটকিরি ব্যবহার করবেন সেই উপায় সম্পর্কে জেনে নিন--
- মুখের ফোড়া বা ক্ষত সারাতেঃ অনেক সময় মুখে ফোড়া হওয়ার ফলে সেটি ফেটে ক্ষতস্থানের সৃষ্টি হয়। ফোরাড় আর এই ক্ষতস্থান সারাতে আপনি এক চা চামচ ফিটকিরির সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।এবার এই পেস্টটি আপনার ক্ষতস্থানে লাগিয়ে ১০-১৫ পর্যন্ত রেখে দিন এবং ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে আপনার মুখের ফোড়ার ক্ষত অতি দ্রুত সেরে যাবে।
- মুখের ভেতরের ঘা ও জ্বালাপোড়া কমাতেঃ মুখের ভেতরের ঘায়ের জ্বালাপোড়া কমাতে আপনি ১ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়ো ১ কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে নিন এবং এই পানি দিয়ে আপনি সারাদিনে ২-৩ বার কূলকচি করুন। এতে আপনার মুখের ঘা এর জ্বালাপোড়া কমবে এবং ঘা দ্রুত সেরে উঠবে।
- মুখের তেলটে ভাব কমাতেঃ ফিটকিরির ব্যবহার আপনার মুখের ত্বক কি অতিরিক্ত তৈলাক্ত প্রবণ? তাহলে আজ থেকেই আপনি ফিটকিরির ব্যবহার শুরু করুন।এর জন্য ১ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়ো পরিমাণ মতো পানির সাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং আপনার মুখের তেলতেলে ভাব আক্রান্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহারে দেখবেন আপনার মুখের তৈলাক্ত ভাব অনেকটাই কমে গেছে।
- আপনার মুখের স্কিন টোন মসৃণ করতেঃ আপনার ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে এক চা চামচ ফিটকিরির গুড়োর সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট করুন।এবার এই পেস্ট আপনার মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে এবং মুখের স্কিন টোন আরো উজ্জ্বল হবে।
- ব্রণ দূর করতেঃ মুখের ব্রণ এবং ব্রনের দাগ দূর করতে ফিটকিরি বিশেষভাবে কার্যকরী একটি উপাদান। এর জন্য এক চা চামচ ফিটকিরি পানির সাথে মিশিয়ে এই পেস্ট আপনার মুখের ব্রণের স্থানে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এবার ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেল।ফিটকিরির এই পেস্ট নিয়মিত ব্যবহারে আপনার মুখের ব্রণ এবং ব্রণের কালো দাগ দুটোই দূর হবে।
- ক্লিনজার হিসেবেঃ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ফিটকিরি। আবার কাজ থেকে বাড়ি ফিরেও ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার মুখ ত্বকে জমে থাকা ময়না দূর হবে। এর জন্য ফিটকিরি পানিতে ভিজে আপনার মুখে ভালো করে ঘষুন। কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করার পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ফিটকিরির এই ব্যবহারগুলো আপনার মুখের ত্বকে নিয়মিত ব্যবহারের চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার ত্বক উজ্জ্বল মসৃণ হয়ে উঠবে।
ফিটকিরি মুখে দেওয়ার উপকারিতা
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মুখে ফিটকিরি ব্যবহারের অনেক গুলো উপকারিতা রয়েছে। যা জানলে আপনি হয়তো আজ থেকেই আপনার মুখে ফিটকিরি ব্যবহার করতে শুরু করে দিবেন। তো চলুন মুখে ফিটকিরি দেওয়ার উপকারিতা কি কি হতে পারে তা জেনে নিন-
- আপনার মুখে ব্রনের জন্য ফিটকিরি একটি প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। নিয়মিত ফিটকিরি ব্যবহারে আপনার মুখে ব্রণ ও পিম্পল খুব সহজে দূর হয়। কারণ, ফিটকিরির অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন ব্রণ ও পিম্পল রোধে বিশেষভাবে উপকারী।
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফিটকিরি বিশেষভাবে উপকারী।মুখে ফিটকিরি ব্যবহারের ফলে এটি আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেয় এবং আপনার ত্বকে মসৃণ তেলতে মুক্ত রাখে।
- নিয়মিত নিয়ম করে ফিটকিরি ব্যবহারে এটি আপনার মুখের ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা ধরে রাখে এবং সেই সাথে ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
- আপনি বাইরে থেকে ঘুরে আসার পর রোদে পোড়া অংশে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার হাইপারপ্রিগমেন্টেশনের কালচে দাগ তুলতেও সাহায্য করে।
- নিয়মিত ফিটকিরি ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বকের গভীরে মেলানিন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে।যার ফলে আপনার ত্বকের গাড়ো দাগ বা বর্ণ বৈষম্য খুব সহজেই দূর হয়। শুধু তাই নয় ফিটকিরির এই ব্যবহারে আপনার ত্বকের টোনও উন্নত হয়।
- আপনার মুখের ভেতর এবং বাহ্যিক যেকোনো ধরনের ক্ষত বা ঘা সারাতে ফিটকিরি এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ফিটকিরির এই অ্যান্টিসেপটিক গুন আপনার মুখের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকরী।
- মুখে ফিটকিরি ব্যবহার করলে এটি আপনার মুখের শিরা ও ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে আপনার ত্বকে একটা স্নিগ্ধ ভাব আনয়ন করে।
- নিয়মিত ফিটকিরি ব্যবহারে ফিটকিরির মৃদু স্ক্রাবিং আপনার মুখের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। ফলে আপনার ত্বক আরো সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
- নিয়মিত ফিটকিরি মুখে ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- ফিটকিরি একটি ব্যাকটেরিয়াস্ট্যাটিক উপাদান। নিয়মিত ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা প্রদান করে এবং ভেতর থেকে ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকে ফিটকিরির ব্যবহার বহু কাল ধরে চলে আসছে। আর তাই আপনিও আপনার ত্বককে উজ্জ্বল মসৃণ করতে এবং ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনতে আজ থেকেই শুরু করুন ফিটকিরির ব্যবহার।
ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর
চুলের জন্যও ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। আপনারা অনেকেই চুলের যত্নে ফিটকিরি ব্যবহার করতে চান।কিন্তু চুলের জন্য ফিটকিরি উপকারী নাকি ক্ষতিকর তা অনেকেই জানেন না।ফলে ব্যবহার করতেও পারেন না। সুতরাং,যারা চুলে ফিটকিরি ব্যবহার করবেন কি,করবেন না এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেনতারা জেনে রাখুন ফিটকিরি আপনার চুলের জন্য সাধারণভাবে ক্ষতিকর কোন কিছু নয়।
তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।মনে রাখবেন, ফিটকিরি একটি প্রাকৃতিক এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আপনার চুলের সুরক্ষায় বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে।এটি আপনার চুলের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ কমাতে এবং অম্ল ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখতেও কাজ করে।
তবে আপনি যদি ফিটকিরি চুলে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারেন বা অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে এটি আপনার চুলের শুষ্কতা ও ভঙ্গুরতার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ঠিক সে কারণে, অতিরিক্ত পরিমাণে ফিটকিরি ব্যবহার করলে এটি আপনার চুলের প্রাকৃতিক আদ্রতা শুষে নিতে পারে।
যার ফলে আপনার চুল শুষ্ক হয়ে ঝলসে যেতে পারে।তাছাড়া আপনার স্ক্যাল্পে এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ফিটকিরি ব্যবহারে এটি আপনার চুলের আরো ক্ষতি করতে পারে। তাই চুলে ফিটকির ব্যবহারের পর আপনি চুল খুব ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন এবং প্রয়োজনে ময়েশ্চারাইজিং ব্যবহার করবেন। চুলের জন্য ফিটকির উপকারী না ক্ষতিকর আশা করছি এর উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন।
পানিতে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই পানিতে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? ফিটকিরি ব্যবহার করে বিশুদ্ধ পানি পেতে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করতে হবে। এবার চলুন পানিতে ফিটকিরি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন-
- পানির স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতেঃ আপনি ১ চা চামচ ফিটকিরি গুড়ো ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে নিন। মেশানোর পর প্রায় ৩০-১ ঘন্টা পর্যন্ত পানিতে রেখে দিন যাতে পানিতে ফিটকিরি ভালোভাবে দ্রবীভূত হতে পারে।এরপর পানি একটি পরিষ্কার কাপড়ের সাহায্যে ফিল্টার করে ব্যবহার করুন।
- পানি শোধনে ফিটকিরির ব্যবহারঃ পানির অশুদ্ধতা দূর করতে ১-২ চা চামচ ফিটকিরির গুড়ো ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে নিন এবং ৩০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন।এতে করে ফিটকিরি পানির সমস্ত অশুদ্ধতা শোষণ করে নেবে এবং পানীয় শোধিত হবে।
- চুলের পরিচর্যায়ঃ আপনি আপনার চুলের পরিচর্যায় ২ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়ো মিশিয়ে নিন এবং পানি ঠান্ডা হতে রেখে দিন। পানি ঠান্ডা হওয়ার পর এটি আপনার স্ক্যাল্পে ভালোভাবে মেসেজ করুন এবং ৫-১০ মিনিট পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার স্ক্যাল্পের তৈলাক্ত ভাব দূর হবে এবং চুলও পরিষ্কার থাকবে।
- মুখের ঘা দূর করতেঃ আপনার মুখের ঘা দূর করতে ১ কাপ হালকা কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ ফিটকির গুঁড়া মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার এই পানি দিয়ে গার্গল করতে থাকুন।এতে আপনার মুখের ঘা দূর হবে।
- পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ আপনি পাঁচ লিটার গরম পানিতে ২ চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়ো মিশিয়ে তাতে পা ডুবিয়ে রাখুন ১৫ ২০ মিনিট পর্যন্ত। এটা আপনার পায়ের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং পায়ের ত্বক সতেজ থাকবে।
- কৃষি কাজেঃ কৃষি কাজে ফিটকিরি ব্যবহারের জন্য ৫ লিটার পানিতে আপনি ২-৩ চা চামচ ফিটকিরি মিশিয়ে এই পানি মাটিতে সার হিসেবে প্রয়োগ করুন অথবা পোকা দমনের জন্য ফসলে স্প্রে করুন।
পানির সাথে ফিটকিরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
- পানিতে ফিটকিরি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করবেন। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণ করলে এটি আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
- ফিটকিরি ব্যবহারের পর সমস্ত সরঞ্জাম পরিষ্কার করে রাখুন যাতে ফিটকির কোনো অবশিষ্টাংশ না থাকে।
- ফিটকিরি ব্যবহার করার পূর্বে আপনার ত্বকের ছোট একটি অংশে একটু পরীক্ষা করে নিন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে কিনা। তেমন হলে ফিটকিরি ব্যবহার বন্ধ করুন।
সম্মানিত পাঠক,আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজে-কর্মে পানির সাথে ফিটকিরি উপরিউক্ত উপায়ে ব্যবহার করতেই পারেন।তবে তো অবশ্যই নিয়ম মেনে এবং পরিমান মত ব্যবহার করবেন।
ফিটকিরি দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
আপনি কি আপনার মুখে ব্রণ নিয়ে ভীষণই চিন্তিত? আজ থেকে আর চিন্তা নয়। কারণ এর সমাধান রয়েছে আপনার হাতের নাগালেই।আপনার মুখের এই পিম্পল বা ব্রণ দূর করতে পারে ফিটকিরি।এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন ফিটকিরি মুখে কিভাবে ব্যবহার করা যায়!! চলুন তাহলে পিম্পল দূর করতে আপনি ফিটকিরি কিভাবে ব্যবহার করবেন সে উপায় জানিয়ে দিচ্ছি-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- ফিটকিরির গুঁড়ো- ১ চা চামচ
- মুলতানি মাটি- ১ চামচ এবং
- ডিমের সাদা অংশ- ২ চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার
মুখের পিম্পল বা ব্রণ দূর করতে আপনি এক চা চামচ ফিটকিরির বুড়োর সাথে এক চামচ মুলতানি মাটি এবং দুই চামচ পরিমাণ ডিমের সাদা অংশ ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন।এবার এই পেস্টটি আপনার মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।ঠিক ১৫ মিনিট পরে আপনার মুখ ঠান্ডা পানিতে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
আপনি সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন এই প্যাকটি নিয়ম করে আপনার মুখে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। কিছুদিন ব্যবহার এর পর দেখবেন আপনার মুখ থেকে পিম্পল বা ব্রণ, ব্রনের কালো দাগ, ত্বকের বলিরেখা, ত্বকের কালো দাগ ছোপ একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে। আশা করি ফিটকিরির এতসব বহুমুখি উপকারিতা ও অপকারিতা আপনার কাজে আসবে।
ফিটকিরির দাম কত
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি হয়তো ফিটকিরির দাম সম্পর্কে জানতে চান। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জেনে যাবেন ফিটকির দাম।ফিটকিরি অন্যান্য উপাদানের থেকে দামে অনেকটাই সস্তা সহজলভ্য এবং ভালো জীবাণু নাশক হিসেবে করে।সাধারণভাবে আপনি ১০০ গ্রাম ফিটকিরির একটি প্যাকেট পেয়ে যাবেন ২০-৫০ টাকায়।
কারণ বিশেষ ব্র্যান্ড বা নির্দিষ্ট গুণমানের ফিটকিরি আরো চড়া দামে বিক্রি হতে পারে।আপনি আপনার হাতের নাগালে যে কোন সুপারমার্কেট,স্থানীয় বাজার অথবা বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন স্টোর থেকেও ফিটকিরি কিনতে পারেন। আশা করছি,ফিটকিরির দাম সম্পর্কে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন।
এক লিটার পানিতে কতটুকু ফিটকিরি দিতে হয়
১ লিটার পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম ফিটকিরিই যথেষ্ট।পানি পরিশোধন করার ক্ষেত্রে ফিটকিরি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান।এটি পানিতে উপস্থিত সাসপেন্ডেড কণাগুলিকে জমাট বাঁধার মাধ্যমে পানি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।পানিতে ব্যবহারের পূর্বে আপনি ফিটকিরিকে পানি বা অন্যান্য তরলের দ্রবীভূত করে প্রথমে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।এরপর ফিটকিরি পানিতে যোগ করার পর কিছু সময় অপেক্ষা করুন।
যাতে করে এটি জীবাণুযুক্ত কণাগুলোর সাথে রিয়েক্ট করে এবং পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরপর জমাট বাধা কণাগুলি নিচে পড়ে যাবে এবং উপরে পরিষ্কার স্বচ্ছ পানি আপনি সংগ্রহ করতে পারেন।তবে,একটি কথা মনে রাখবেন অতিরিক্ত ফিটকিরি ব্যবহারে পানির গুণগত মান নষ্ট হতে পারে। আর তাই অধিক মাত্রায় ফিটকির ব্যবহার না করে যথাযথ পরিমাণে ফিটকিরি ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
ফিটকিরি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার
ফিটকিরির উপকারিতা ও অপকারিতা তো জানলেন। এবার, আপনি ফিটকিরি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে চাইলে প্রথমেই ফিটকিরি গুঁড়ো করে একটি পাউডার তৈরি করে ফেলুন। এই পাউডার আবার বাজারে কিনতেও পাওয়া যায়।এবার এই পাউডার আপনার ব্রাশের সাথে লাগিয়ে যথারীতি দাঁতের সামনে পেছনে ভালো করে ব্রাশ করুন।কিছুক্ষণ ব্রাশ করার পর মুখ ভালোভাবে পানিতে ধরে ফেলুন যাতে ফিটকিরির কোনো অবশিষ্টাংশ আপনার মুখের ভেতরে না থাকে।
প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১-২ বা ফিটকিরি দিয়ে এভাবে ব্রাশ করার চেষ্টা করুন।এতে আপনার দাঁতের হলদে ভাব দূর হবে এবং দাঁতও ভালো থাকবে।তবে একটি কথা,আপনি দাঁতে অতিরিক্ত ফিটকিরি ব্যবহার করবেন না এতে করে আপনার দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।আর দাঁত পরিষ্কার রাখতে ফিটকিরির পাশাপাশি সাধারণ দাঁতের পেস্ট অবশ্যই ব্যবহার করবেন। ফিটকিরি দিয়ে কিভাবে দাঁত পরিষ্কার করবেন আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
লেখকের বক্তব্য
ফিটকিরির নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি বিস্তারিত ভাবে আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পেরেছেন। ফিটকিরির এই ব্যবহার শুধু মাত্র আজকেরই নয়,সেই প্রাচীনকাল থেকেই। এই সাদা ফিটকিরির নানান ঔষধি গুনও রয়েছে। শুধু তাই নয়,আপনার ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে শরীরের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে ফিটকিরি ভীষণই উপকারী। এই ফিটকিরি ব্যবহারে আপনার অনেক রোগই নিরাময় হতে পারে।
বিশেষ করে মাথা দাঁত ও ইনফেকশনের সমস্যায় আপনি ব্যবহার করতে পারেন ঔষধি গুনে ভরপুর এই ফিটকিরি।দামে কম এবং সহজলভ্য এই জিনিসটি আজই সংগ্রহ করে আপনার বাড়িতে রাখুন। এতে আপনারই উপকার হবে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url