গরুর দুধের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয় জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।

গরুর-দুধ
কারণ, আজকের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জানতে পারবেন গরুর দুধের উপকারি  ও অপকারি দিকগুলো। সাথে আরও জানতে পারবেন অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গরুর দুধের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক।নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের বিভিন্ন দিককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন আপনাকে জানিয়ে দেই গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-

আরো পড়ুনঃ  মধু খাওয়ার কার্যকরী ২০ উপকারিতা ও ৬ অপকারিতা

  • পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস হিসেবেঃ গরুর দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ভিটামিন এ,ভিটামিন বি১২,ভিটামিন বি,ক্যালসিয়াম ফসফরাস,পটাশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। যা আপনার শরীরের নানা প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে।
  • হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ গরুর দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি।আর এই ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি আপনার হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাছাড়া নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে আপনার অস্টিওপোরোসিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে যায়।
  • পেশি গঠনে গরুর দুধঃ গরুর দুধের প্রোটিন আপনার পেশি মেরামত এবং শক্তিশালী করে তোলে। ফলে দুধ খেলে এটি আপনার শরীরের পেশী সুস্থ রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত শক্তির যোগান দিতে পারে।
  • হজমে সাহায্য করেঃ দুধে রয়েছে ল্যাকটোজ নামক উপাদান যা আপনার পেটের হজম ক্রিয়া সহজ করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনার কি রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে? তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে দুধ খেতে পারেন।কেননা গরুর দুধের পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভাবে কাজ করে।তাছাড়া এটি সোডিয়ামের প্রভাব কমিয়ে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়ার ফলে গরুর দুধের ভিটামিন সি,ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপনি কি মাঝেমধ্যে আপনার শরীরে ক্লান্তি ভাব অনুভব করেন? এই ক্লান্তি ভাব দূর করতে আপনি আজ থেকেই গরুর দুধ খাওয়া শুরু করুন। কারণ, গরুর দুধে থাকা প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট আপনার শরীরে অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করে এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করতে পারে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা খেলে আপনার অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কমাতে সাহায্য করে।ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে।তাছাড়া গরুর দুধের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম আপনার ওজন প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গরুর দুধঃ কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গরুর দুধের প্রোটিন এবং পুষ্প উপাদানগুলি আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। যা কিনা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতায়ঃ নিয়মিত গরুর দুধ খেলে দুধের ভিটামিন বি১২ আপনার স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম বজায় রাখে এবং সেই সাথে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে গরুর দুধঃ বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে গরুর দুধ ক্যান্সার প্রতিরোধ সক্ষম। হলে নিয়মিত দুধ খাওয়ার মাধ্যমে আপনি প্রাণঘাতিক ক্যান্সার রোগ থেকেও রেহাই পেতে পারেন।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গরুর দুধঃ আপনি আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে নিয়ম করে গরুর দুধ খেতে পারেন।কেননা, গরুর দুধে চর্বির পরিমাণ কম থাকায় এটি আপনার মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। 

গরুর-দুধ
  • হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ প্রতিদিন দুধ খেলে এটি আপনার হার্ট ভালো রাখে। কারণ কম চর্বি যুক্ত দুধ খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাই এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে।সুতরাং আপনি যদি হার্ট ভালো রাখতে চান তাহলে আজ থেকেই দুধ খাওয়া শুরু করুন।
  • পেটের সমস্যা ও এসিডিটি দূর করতেঃ পেটের সমস্যা ও এলসিডি দূর করতে দুধের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কারণ দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি আপনার পেটের সমস্যা ও এসিডিটি করতে পারে। কিন্তু এর জন্য আপনাকে নো ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে হবে।
  • ভালো ঘুমের জন্যঃ অনেকেই আছেন যারা নিদ্রাহীনতায় ভুগতে থাকেন।এই অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ পান করুন।এতে দেখবেন আপনার ঘুম ভালো হবে।
  • গরুর দুধ দাঁত ভালো রাখেঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দাঁতের ও ক্ষয় হতে শুরু করে। শুধু তাই নয় অনেকের আবার ছোট থেকেই দাঁত ক্ষয় হতে থাকে। দাঁতের এই ক্ষয় রোধ করতে আপনি গরুর দুধ খান।কারণ,গরুর দুধে যে ক্যালসিয়াম রয়েছে তা আপনার শরীরের হাড়ের পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • ত্বক ভালো রাখতেঃ আপনার ত্বকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে চাইলে এখন থেকেই আপনি দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাছাড়া নিয়মিত ত্বকে দুধ ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমাতে কাজ করে।
  • চুল ভালো রাখেঃ শুধু ত্বক নয় নিয়মিত দুধ খাওয়ার ফলে এটি আপনার চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। তাছাড়া চুলের যত্নে দুধের নানা ধরনের প্যাক রয়েছে।যা আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • পাকস্থলী পরিষ্কার রাখেঃ দুধ খেলে যেহেতু হজম শক্তি বাড়ে ঠিক সে কারণেই পাকস্থলীও সুস্থ থাকে। তাছাড়া দুধ পানিও খাবার হওয়ার কারণে এটি আপনার পাকস্থলী পরিষ্কার করতেও ভালো কাজ করে।
সম্মানিত পাঠক, গরুর দুধ খাওয়ার এতসব উপকারিতা গুলো জানার পর আপনি নিশ্চয়ই অবাক অবাক হয়েছেন!!তাই বলবোআপনি শিশু বা ৬০ বছর বয়সি যেই হোন না কেন নিয়মিত দুধ পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।

গরুর দুধ খাওয়ার কিছু অপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।আর খাদ্য উপাদান হিসেবে এটি থাকবেই। এবার চলুন, গরুর দুধ খাওয়ার ফলে আপনার কি কি শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জানুন--

আরো পড়ুনঃ  কাঠ বাদামের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • আপনাদের যাদের কিডনিতে পাথর আছে তাদের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আর তাই কিডনি রোগীদের জন্য কম দুধ খাওয়া এবং রাতে দুধ না খাওয়াটাই ভালো।
  • আপনার আগত কিছুদিনের মধ্যে কোন সার্জারি হবে বা হয়েছে এমনটা হলে কিছুদিন গরুর দুধ খাওয়া বন্ধ রাখুন। যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন ঠিক তখন দুধ খেতে পারবেন।
  • আপনাদের যাদের পাকস্থলীর আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা রয়েছে তাদের দুধ না খাওয়াটাই উচিত। কারণ গরুর দুধ খেলে এতে আপনার পেট ব্যথা বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আপনার কি এলার্জির সমস্যা রয়েছে? তাহলে গরুর দুধ এড়িয়ে চলুন। কারণ দুধ খেলে এলার্জির প্রবণতা আরো বেড়ে যেতে পারে।তাছাড়া অনেক চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদরাও এলার্জি রোগীদের দুধ খেতে বারণ করেন।
  • আপনার শরীরে যদি ল্যাকটোজ এনজাইম এর অভাব থাকে সেক্ষেত্রে দুধ খেলে আপনার বদহজম বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গরুর দুধে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা অধিক পরিমাণে খেলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।আর তাই অতিরিক্ত দুধ না খেয়ে পরিমিত পরিমানে খান।
  • গরুর দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরি। অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ খেলে আপনার শরীরে ক্যালরির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। আর ক্যালোরি বাড়লে আপনার ওজনও বেড়ে যাবে। সুতরাং যারা ওজন কমাতে চান তারা অতিরিক্ত গরুর দুধ অবশ্যই খাবেন না।
  • অনেক সময় গরুর দুধের প্রোটিন এবং ফ্যাট আপনার ডায়েটে অতিরিক্ত মাত্রায় যুক্ত হলে সেটি সঠিক এনার্জি ব্যালেন্স ধরে রাখতে পারেনা। ফলে আপনার শরীরে এনার্জির অভাব দেখা দিতে পারে।
  • কিছু গরুর দুধে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকতে পারে যা আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • গরুর দুধের উচ্চ ক্যালরি এবং চর্বি আপনার মেটাবলিক সিনড্রোম এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।যার ফলে আপনার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • অনেকেই কাঁচা গরুর দুধ খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এ কাঁচা দুধে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকে অনেক বেশি থাকে। তাই কাঁচা দুধ খাওয়া পরিহার করুন।

গরুর দুধ খাওয়ার এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো আপনার শরীরে তখনই দেখা দেবে,যখন আপনি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে প্রতিদিন গরুর দুধ পান করবেন। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন।

দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় এবং আপনি কখন দুধ খাবেন এটি মূলত নির্ভর করবে আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ওপর। তবে নিয়ম মেনে সময় মত দুধ খেলে এটি আপনার শরীরের জন্য উপকারিতাযই বয়ে আনবে। এবার চলুন আপনি দুধ কখন কোন সময়ে খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-

আরো পড়ুনঃ  সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • সকালে খেতে পারেনঃ গরুর দুধ খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকালবেলা।কারণ সকালে খালি পেটেদুধ খেলে এটি সারা দিনের জন্য আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে থাকে এবং দিনের শুরুতে এটি একটি আপনার শরীরের জন্য ভালো পুষ্টির উৎস হতে পারে।
  • দুপুরে খেতে পারেনঃ দুপুরে দুধ খাওয়াটাও বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। দুপুরে গরুর দুধ খেলে এটি আপনার শরীরে প্রোটিন সরবরাহ করতে থাকে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত রাখে। তাছাড়া খাবারের সাথে দুধ খেলে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয় এবং পেটের অস্বস্তি দূর হয়।
  • রাতের বেলাঃ রাতে খাবারের পর গরুর দুধ খেলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ গরুর দুধে ট্রিপটোফ্যান ও ক্যালসিয়াম রয়েছে যা আপনার অনিদ্রা রোগ দূর করতে পারে।সুতরাং রাতে দুধ খেলে আপনার সারাদিনের ক্লান্তি তো কমবেই,সেই সাথে ঘুমও ভালো হবে।
  • ব্যায়ামের পরেঃ আপনি যদি নিয়মিত জিন বা শরীরচর্চা করে থাকেন তাহলে ডিমের পরে এক গ্লাস ফ্রেশ গরুর দুধ খেয়ে নিতে পারেন। কারণ ব্যায়ামের পরে দুধ খেলে এটি আপনার পেশি পুনর্গঠনে কাজ করে এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে থাকে।

গরম দুধের উপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। ঠান্ডা দুধের চেয়ে গরম দুধ খাওয়ার বেশ কিছু বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। অনেকেই আছেন যারা গরম দুধের চেয়ে ঠান্ডা দুধ খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু গরম দুধের উপকারিতা জানলে আপনি আজ থেকেই গরম দুধ খাওয়া শুরু করবেন। এবার চলুন গরম দুধ খেলে কি কি উপকারিতা পাবেন তা জানুন--

  • প্রথমেই বলি, গরম দুধ খেলে গরম দুধের তাপ আপনার শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং এটি আপনার ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
  • গরম দুধে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড ফাঁকে যা আপনার শরীরে সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। এতে করে আপনার অনিদ্রা রোগ দূর হতে পারে।
  • নিয়মিত গরম দুধ পান করলে এটি আপনার পেটের গ্যাস এবং পেটের অস্বস্তি কমাতে কাজ করে। বিশেষ করে খাওয়ার পরে আপনি যদি গরম দুধ খান সেক্ষেত্রে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজেতর করবে।
  • শীতের সময় বিশেষ করে ঠান্ডা আবহাওয়াতে গরম দুধ খেলে এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে আপনার শরীর উষ্ণ থাকে।
  • নিয়মিত গরম দুধ খেলে গরম দুধের তাপ আপনার বেশি গুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
  • গরম দুধ খেলে অনেক সময় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আপনার মন স্থির শান্ত হতে পারে।এতে করে আপনার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ ও কমতে পারে।
  • গরম দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি,ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • আপনি কি ঠান্ডা জনিত সর্দি কাশির সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আর দেরি না করে এক্ষুনি এক গ্লাস গরম গরুর দুধ খেয়ে ফেলুন।কারণ,গরুর গরম দুধ কাশি এবং সর্দি উপশমে বেশ সহায়ক।তাছাড়া এটি শ্বাসতন্ত্র কে শিথিল করে এবং মিউকাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

গরম দুধ খাওয়ার কিছু টিপস

  • দুধ গরম করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন এটি অতিরিক্ত তাপমাত্রায় জ্বাল না করা হয়। কারণ অধিক তাপে দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে।
  • আপনি গরম দুধের সাথে দারুচিনি মধু অথবা সামান্য চিনি মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে গরম দুধ খেতে আরও সুস্বাদু হবে।

রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

গরুর দুধের বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন।রাতে গরুর দুধ খাওয়ার বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যা হয়তো অনেকেই জানেন না। তো চলুন রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি হতে পারে জেনে নিন-

  • রাতে দুধ খাওয়ার প্রধান উপকারিতা হলো এটি আপনার ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক হবে।কারণ গরুর দুধের ট্রিপটোফ্যান অ্যামিনো এসিড যা আপনার শরীরে সেরোটিনিন এবং মেলাটোনিন উৎপাদন করতে পারে। আর ভালো ঘুমের জন্য এই দুটি উপাদান অত্যন্ত জরুরী।
  • রাতে গরুর দুধ খাওয়ার ফলে সারারাত ধরে এটি আপনার শরীরে প্রোটিন সরবরাহ করতে থাকে। যা কিনা আপনার পেশী পুনর্গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • রাতে খাবারের পর আপনি যদি নিয়মিত নিয়ম করে গরুর দুধ খান সেক্ষেত্রে আপনার হজম ক্রিয়া সহজ হবে এবং বদ হজমের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
  • রাতে দুধ খাওয়ার ফলে এটি আপনার মানসিক স্ট্রেস উদ্বেগ কমাতে পারে,যা শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
  • রাতে নিয়ম করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরুর দুধ খেলে দুধের ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।শুধু তাই নয়,রাতে দুধের ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি আপনার হাড়ের গঠন এবং মেরামতের জন্য কাজ করে।
  • কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে রাতে দুধ খেলে ওজন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ দুধের প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং রাতের বেলা দীর্ঘ সময় ধরে সাইটেশন প্রদান করতে পারে।

সম্মানিত পাঠক, প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে দুধ খেলে আপনি উপরে উক্ত উপকারিতা গুলো খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। তবে এর জন্য আপনি রোজ রাতে খাওয়ার পর পরিমিত পরিমাণে দুধ খাবেন।

অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়

গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা তো জানলেন। কিন্তু অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হতে পারে তা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।যেমন ধরুন- অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ খেলে এটি আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।যা আপনার কিডনিতে পাথর এবং ক্যালসিয়াম স্তরের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

আবার মাত্রাতিরিক্ত দুধ খাওয়ার ফলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।কারণ দুধে উচ্চমাত্রার সেচুুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। অনেকের আবার দুধ খেলে এনার্জি হয়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুধ খেলে আপনার অ্যালার্জি প্রবণতা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই নয়, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত দুধ পানের ফলে আপনার পেট ফাঁপা,গ্যাস,ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে পারে।আবার যারা ওজন কমাতে চান তাদেরও অতিরিক্ত দুধ খাওয়া একেবারে উচিত নয়।

কারণ, অতিরিক্ত দুধ খেলে আপনার শরীরে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।আর ক্যালরি বাড়ার কারণে আপনার ওজনেও বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন অতিরিক্ত দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও সুখকর নয়। শুধু দুধই নয়,যে কোন খাবার সেটি যতই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হোক না কেন পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হতে পারে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

দুধের সর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি দুধের সরেরও বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। অনেকেই আছেন যারা দুধের থেকে দুধের সর খেতেই বেশি পছন্দ করেন। এই দুধের সর দুধের প্রোটিন এবং চর্বি সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলো ধারণ করে থাকে। আপনিও কি দুধের সর খেতে পছন্দ করেন? তাহলে চলুন দুধের সর খেলে আপনি এর থেকে কি উপকারিতা এবং অপকারিতা পাবেন তা জেনে রাখুন--
দুধের সর খাওয়ার উপকারিতা

  • দুধের সরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ক্যালসিয়াম ভিটামিন বি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা আপনার শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
  • দুধের সর খেলে এর ল্যাকটিক অ্যাসিড আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হজম ক্রিয়া সহজ করে।
  • দুধের সর খাওয়ার ফলে সরের প্রোটিন আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে কাজ করে।যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হতে পারে।
  • দুধের সরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি যা আপনার পাহাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিস এর ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
  • প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস হলো গরুর দুধের স্বর। কারণ দুধের সকল প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো এই সরের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে।ফলে দুধের সর খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের পেশী গঠনে সাহায্য করে।
  • দুধের সরে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেল আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং সেইসাথে আপনার ইমিউন সিস্টেমকেও শক্তিশালী করে তোলে।

দুধের সর খাওয়ার অপকারিতা

  • দুধের সর খেলে আপনি যেমন উপকার পাবেন তেমনি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে।যেমন-
  • অতিরিক্ত পরিমাণে দুধের সর খেলে এটি আপনার ওজনকে বাড়িয়ে দিতে পারে।কারণ দুধের স্বরে উচ্চমাত্রার ক্যালরি থাকে।আর ওজন বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান হলো ক্যালরি।
  • দুধের স্বরে উচ্চমাত্রার ফ্যাট থাকতে পারে যা আপনার বিদ্যুতের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।বিশেষ করে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে দুধের সর খান।
  • আপনাদের যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা রয়েছে তাদের জন্য দুধের সর খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নাও হতে পারে।কারণ এতে আপনার পেট ফাঁপা,গ্যাস,অম্বল ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • দুধের সরে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালসিয়াম থাকে আর অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের ফলে আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টির ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় দুধের সর খেলে পেতে থাকা সোডিয়াম আপনার উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

পাতলা দুধের উপকারিতা

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয় তা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। আর পাতলা দুধ বা লো ফ্যাট যুক্ত দুধ আপনার শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী।পাতলা দুধে সাধারণত ফ্যাটের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এবার চলুন পাতলা দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-

  • কম চর্বি ও ক্যালোরি যুক্ত দুধঃ পাতলা দুধের চর্বির পরিমাণ কম থাকে।যা খেলে আপনার শরীরে ক্যালরির পরিমাণও কমতে থাকে।এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক হতে পারে।তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা পাতলা দুধ খেতে পারেন।
  • হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমাতেঃ পাতলা দুধ পাতলা দুধে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম থাকে।ফলে নিয়মিত পাতলা দুধ খেলে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
  • স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীঃ পাতলা দুধেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি ভিটামিন বি১২ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বলবৎ থাকে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • মেটাবলিজম বৃদ্ধিতেঃ পাতলা দুধ অত্যন্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি খেলে আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পাবে।
  • হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করেঃ আপনার পেটে বদহজম বা হজমের সমস্যা থাকলে ঘন দুধ না খেয়ে পাতলা দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। কেননা পাতলা দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিড এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।
  • ডায়েটের জন্য উপকারীঃ পাতলা দুধে ফ্যাট কম থাকলেও ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান এর মাত্রা অপরিবর্তিত থাকে।ফলে এটি পুষ্টির ঘনত্ব বজায় রাখে এবং আপনি আপনার স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হিসেবে পাতলা দুধ পান করতে পারেন।
  • পানি শূন্যতা দূর করতেঃ পাতলা দুধে জলীয় অংশ বেশি থাকার কারণে এটি আপনার শরীরের পানি শূন্যতা খুব সহজেই দূর করতে পারে।

সম্মানিত পাঠক,আপনি যদি আপনার শরিরের অতিরিক্ত ফ্যাট এবং ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করতে চান,তাহলে পাতলা দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে গরুর দুধের উপকারিতাই বেশি পাবেন অপকারিতার থেকে।

সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়া দিনের শুরুতে আপনার জন্য একটু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হতে পারে। তাছাড়া সকালে খালি পেটে দুধ খেলে আপনি এর থেকে বেশ কিছু উপকারিতাও পাবেন। অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে বা নাস্তার সাথে দুধ খেতে পছন্দ করেন। এবার চলুন আপনাকে জানিয়ে দিই সকালে দুধ খাওয়ার ফলে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন-

সকালে-দুধ-খাওয়ার-উপকারিতা
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতেঃ সকালে খালি পেটে দুধ খেলে দুধে থাকা প্রোটিন,কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালসিয়াম আপনার শরীরে সারা দিনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে থাকে।এতে করে এটি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মেও এনার্জি সঞ্চার করে।
  • হজম সহজ করেঃ সকালে খালি পেটে গরুর দুধ পান করলে আপনার হজম প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কারণ গরুর দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড আপনার অন্তরে স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং পেটের অস্বস্তি ভাব কমাতে পারে।
  • শরীর চাঙ্গা করেঃ সকালে দিনের শুরুতে এক গ্লাস ফ্রেশ গরম গরুর দুধ খেলে এটি আপনার শরীরকে ভেতর থেকে চাঙ্গা সতেজ এবং প্রাণবন্ত করে তোলে।
  • হাড় মজবুত করেঃ সকালে খালি পেটে গরুর দুধ খেলে এটি আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে। তাছাড়া ক্যালসিয়াম আপনার হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
  • ঘুমের জন্য ভালোঃ সকালে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস গরুর দুধ খেলে দুধের ট্রিপটোফ্যান আপনার ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে। আর দিনের শুরুতে দুধ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ সকালে নিয়মিত নিয়ম করে খালি পেটে গরুর দুধ খেলে এটি আপনার ত্বককে আরো উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে। কারণ দুধের ভিটামিন এবং মিনারেল ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার ফলে এটি আপনার হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য সহায়ক হতে পারে।কারণ দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।

দুধ খেলে কি ওজন বাড়ে

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পাশাপাশি গরুর দুধ খেলে ওজন বাড়ে কিনা সেটিও আপনাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। আবার ওজন বাড়ার আশঙ্কায় অনেকে দুধ খেতেই চান না। তবে দুধ খেলেই যে ওজন বাড়বে এই ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ আপনি যদি নিয়ম করে প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে দুধ খান সেক্ষেত্রে ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তবে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ দীর্ঘদিন ধরে খেতেই থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ওজন বাড়তেও পারে। কারণ দুধে এমনিতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন চর্বি এবং ক্যালরি রয়েছে। যা খেলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ হতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি দুধের সাথে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি মিশিয়ে খান তাহলে ক্যালরি এবং চর্বির পরিমাণ এতে আরো বেড়ে যায়।

আর ক্যালোরি বাড়লে এটি আপনার ওজনও বাড়িয়ে দেবে। যদিও দুধের পুষ্টিগুণ যেমন- ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন আপনার শরীরের জন্য উপকারী,কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালরি,ফ্যাট বা প্রোটিন আপনার শরীরে সঞ্চিত হয়ে শরীরের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।সুতরাং,বুঝতেই পারছেন শুধু দুধ খেলে যে ওজন বাড়বে বিষয়টা এমন নয়। তাই দুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি নিয়ম মেনে পরিমিত মাত্রায় খান এবং ঘন দুধ পরিহার করে কম ফ্যাট যুক্ত পাতলা দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন।

গরুর দুধের পুষ্টি উপাদান

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  এবার আপনাকে জানিয়ে দিব গরুর দুধে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতি 100 মিলিলিটার দুধে রয়েছে নিম্নলিখিত পুষ্টিগুণ--

পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
প্রোটিন ৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১২০ গ্রাম
ভিটামিন ডি ৪০ IU
ভিটামিন বি১২ ০.৪ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন এ ৩৫০ IU
ফসফরাস ১০০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম
লাক্তজ ৫ গ্রাম
ফ্যাট ৩.২৫ গ্রাম
পানি ৮৭%

প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত

গরুর দুধের উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনাকে পরিমিত পরিমাণে দুধ খেতে হবে। আপনি প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ দুধ খাবেন তা অনেকটাই নির্ভর করবে আপনার বয়স,স্বাস্থ্য,ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণুতা এবং দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের উপর।তবে, সাধারণভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১-২ কাপ অর্থাৎ ২৪০-৪৮০ মিলিলিটার পরিমাণ দুধ খেতে পারেন। 

প্রতিদিন এই পরিমাণ দুধ খাওয়া একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত।আপনি যদি প্রতিদিন এই পরিমাণে দুধ পান করেন সেক্ষেত্রে এটি আপনার শরীরের ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সহায়ক হবে।শুধু তাই নয়,এটি আপনার শরীরে প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও সরবরাহ করবে। আপনি প্রতিদিন কি পরিমান দুধ খাবেন আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

লেখকের মন্তব্য

গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি আজকের এই আর্টিকেল থেকে নিশ্চয়ই বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।গরুর দুধ একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং আদর্শ খাবার পানীয়।এই দুধে রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া দুধকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি ও প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস হিসেবেও ধরা হয়। অনেকেই আছেন যারা দুধ খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকে পছন্দ করেন না।

যারা গরুর দুধ খেতে পছন্দ করেন না,আশা করবো আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের দুধ খাওয়ার ইচ্ছা অনেকটাই বেড়ে যাবে।তাছাড়া নিজেকে সুস্থ,সুন্দর,প্রাণবন্ত এবং সতেজ রাখতে আপনি আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে যোগ করে নিন গরুর দুধ। নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় গরুর দুধ খান এবং পেতে থাকুন দুধের সব উপকারিতা। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url