কাঠ বাদামের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
কাঠ বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? যদি না থাকেন তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন।
কারন, আজকে আমাদের আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন কাঠ বাদামের উপকারিতা এবং সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কাঠ বাদামের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
- কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারি দিক
- কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিক
- কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম
- সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
- কাঠবাদাম খেলে কি ওজন বাড়ে
- কাঠ বাদাম কখন খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
- কাজুবাদাম ও কাঠ বাদাম একসাথে খাওয়ার নিয়ম
- কাঠ বাদাম ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- প্রতিদিন কয়টা কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত
- কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ
- ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামের দাম কত ২০২৪
- কাঠ বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারি দিক
কাঠ বাদামের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা, কিন্তু কাঠ বাদাম খেতে আমরা কমবেশি সকলেই ভালবাসি। আপনি কি জানেন কাঠ বাদাম খাবার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। চলুন শুরুতেই আপনাকে জানিয়ে দিই কাঠবাদাম খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পাবেন--- পুষ্টি ঘাটতি দূর করেঃ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদানের ভরপুর কাঠবাদাম। এতে রয়েছে প্রোটিন,স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার,ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই এবং বিশেষ কিছু খনিজ উপাদান যেমন-পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম। এই উপাদান গুলি আপনার শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ কাঠ বাদামে বিদ্যমান মনোআনসেচুুরেটেড ফ্যাট এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই বাদামে থাকা পলিফেনন এবং ফ্লাভোনয়েডস আপনার রক্তচাপ কমায় এবং হৃদপিন্ডের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে কাঠ বাদামঃ আপনি কি আপনার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত? তাহলে আজ থেকেই কাঠবাদাম খাওয়া শুরু করুন। কেননা কাঠ বাদাম খেলে এর উচ্চ ফাইবার এবং প্রোটিন দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে খাবারের প্রতি ক্ষুধা কমে এবং স্বাভাবিকভাবে আপনার ওজন কমতে থাকে।
- পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে এর ফাইবার আপনার পাচন তন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং আপনার পাঁচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঠবাদাম ভীষণই উপকারী। কারণ এর ফাইবার এবং প্রোটিনের সংমিশ্রণ আপনার রক্তের শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
- চোখ ভালো রাখেঃ যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন বা চোখে ঝাপসা দেখেন তাদের জন্য কাঠ বাদাম হতে পারে একটি উপাদেয় খাদ্য উপাদান। কারণ কাঠ বাদামে থাকা লুটেইন এবং জিয়াক্সনথিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফলে নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে এটি আপনার চোখের রেটিনার সুরক্ষা প্রদান করে এবং চোখের রোগ যেমন ম্যাকুলার ডিজেনারেশন কমাতে কাজ করে।
- এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যঃ কাঠ বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনলস আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপাদাহ কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপনার কি বদহজম বা পেট ফাঁপার সমস্যা রয়েছে? চিন্তার কিছু নেই! এই সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে কাঠবাদাম। কারণ কাঠ বাদামের উচ্চ ফাইবার কনটেন্ট আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে এবং পাচন তন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
- মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন বীজ হয় যা আপনার মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতা ধরে রাখে। হলে নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
- ত্বকের সুরক্ষায় কাঠ বাদামঃ কাঠ বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই যা আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ভিটামিন ই আপনার ত্বককে আদ্র রাখে, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং আন্টি এজিং প্রভাব ফেলে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এখন থেকেই আপনি নিয়ম করে কাঠবাদাম খাওয়া শুরু করুন। কারণ কাঠ বাদামে রয়েছে পটাশিয়াম যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। শুধু তাই নয়,এটি আপনার হৃদ যন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,যা কিনা আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকেও সুরক্ষা দেয়।
- চুলের জন্য কাঠবাদামঃ কাঠ বাদামের প্রোটিন এবং ভিটামিন বিষাদ আপনার চুলের জন্য উপকারী। এটি আপনার চুল বৃদ্ধি করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং চুলকে করে তুলে গোড়া থেকে মজবুত ও শক্তিশালী।
- হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতেঃ কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। ফোনে কার্ড উপাদান খেলে স্বাভাবিকভাবেই এটি আপনার হাড়ের শক্তি বাড়ায় এবং অস্টিওপোরোসিস এর ঝুঁকি কমায়।
- মানসিক উদ্বেগ ও প্রেসার কমাতেঃ আপনি কি অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চিন্তায় আছেন। কোনভাবে মানসিক স্ট্রেস কমাতে পারছেন না। তাহলে কাঠ বাদাম খান। কারন কাঠ বাদামের স্বাস্থ্যকর ভ্যাট ও ভিটামিন আপনার মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
- ইমিউন সিস্টেমঃ কাঠবাদামের ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে বেশ শক্তিশালী করে তোলে এবং আপনার শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেঃ কাঠ বাদাম আপনি কি জানেন, ক্যান্সার নামক প্রাণঘাতী রোগের হাত থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে কাঠবাদাম। নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে এর ফাইট্রোনিউট্রিয়েন্টস আপনার শরীরের কোষের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। ফলে এ কাঠ বাদাম ক্যান্সার প্রতিরোধও সক্ষম।
- হরমোন নিয়ন্ত্রণ করেঃ উপাদান গুলি আপনার শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক হতে পারে এবং পি.সি.ও.এস রোগীদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।
- মেটাবলিজম বৃদ্ধি করেঃ আপনি যদি নিয়মিত কার্ড উপাদান খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে কাঠবাদামের ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে পারে।
- দাঁত ভালো রাখেঃ আপনার কি দাঁতে মাঝে মধ্যে ব্যথা হয় বা বাড়ি থেকে রক্ত পড়ে? তাহলে বলবো আপনি কাঠ বাদাম খাওয়া শুরু করুন। কারণ কাঠ বাদামে থাকা মিনারেল ফসফরাস ও ভিটামিন আপনার দাঁতকে সুরক্ষা দেয় এবং দাঁতের মাড়ির প্রদাহ কমায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়ঃ আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে কাঠ বাদাম খেতে পারেন। কাঠ বাদাম খেলে এর ফাইবার আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে এর ভিটামিন ই আপনার শরীরের প্রতিটি কোনায় থাকার কোষের কার্যক্ষমতাকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। হলে আপনার বয়স বাড়লেও শরীরের উপর এর তেমন কোনো প্রভাব পরবে না।
কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিক
কাঠ বাদামের উপকারিতার পাশাপাশি এর বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। আর খাদ্য উপাদান হিসেবে প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদানেরই উপকার অপকার দুটি দিকই থাকে। এটি কাঠ বাদামের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন জেনে নিন অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার কি কি শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে--- ওজন বৃদ্ধি করেঃ আপনি কি জানেন কাঠ বাদামে উচ্চ ক্যালোরি থাকে! যেমন ধরুন,প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে রয়েছে ৫০০ ক্যালোরি। তাহলে,আপনি নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অ্যালার্জির বিভিন্ন উপসর্গ যেমন- চুলকানি,হাঁচি, নাসিকায় অস্বস্তি ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং,এলার্জি থাকলে আপনি কাঠ বাদাম এড়িয়ে চলুন।
- পাচনতন্ত্রের সমস্যাঃ মাত্রাতিরিক্ত কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে এটি আপনার পাঁচনতন্ত্রে গ্যাস,বমি বমি ভাব,পেটের ব্যথা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া কাঠবাদামের উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট আপনার পাচনতন্ত্রকে সংবেদনশীল করতে পারে।
- রক্তচাপের সমস্যাঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কাঠ বাদাম খাওয়া খুব একটা সুখকর নয়। কারণ কাঠ বাদামের বেশিরভাগ প্রকারের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ থাকে। যা খেলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ আরো বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং,আপনাদের যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা লবণযুক্ত কাঠবাদাম পরিহার করে চলুন।
- কিডনি ও লিভারের সমস্যাঃ কাঠ বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে উচ্চ পটাশিয়াম। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে এর পটাশিয়াম আপনার কিডনি ও লিভারের সমস্যা আরও জটিল করে তুলতে পারে।
- অতিরিক্ত ভিটামিন ও খনিজের গ্রহণঃ কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।যেমন ধরুন,অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খেলে এর ভিটামিন ই বা ক্যালসিয়াম আপনার শরীরে প্রবেশ করবে এবং সেটি আপনার হজমসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- শরীর ফুলে যাওয়াঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে আপনার শরীর অনেক সময় ফুলে যেতে পারে। কারণ, কাঠ বাদামের উচ্চ সোডিয়াম কন্টেন্ট যা আপনার শরীরে অতিরিক্ত জল ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণঃ কাঠ বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন। আর অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে আপনার শরীরের পুষ্টির ভারসাম্যতা নষ্ট হতে পারে। শুধু তাই নয়, অধিক পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণের কারণে আপনার কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ মাত্রাতিরিক্ত কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাস অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- সুতরাং বুঝতেই পারছেন কাঠ বাদামের উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে এটি খেতে হবে। তবেই এর উপকারিতা পরিপূর্ণরূপে পাবেন।
- কাঠ বাদাম স্বাস্থ্যকর হলেও এটি খাওয়ার সময় আপনার অবশ্যই পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। প্রতিদিন ধরুন আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ৩০-৪০ গ্রাম কাঠ বাদাম খাওয়াটা উপকারী।
- আপনার যদি বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে বিশেষ ধরনের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করছেন সে ক্ষেত্রে কার্য বাদাম খাওয়ার আগে একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়।
কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাঠ বাদামের উপকারিতা পেতে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে কাঠবাদাম খেতে হবে। এই কাঠ বাদাম খাওয়ারও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। এবার চলুন আপনি কোন উপায়ে কিভাবে কাঠবাদাম খাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন--আরো পড়ুনঃ আমলকির ২০টি অলৌকিক উপকারিতা ও অপকারিতা
- প্রাকৃতিক স্ন্যাকস হিসেবেঃ আপনি গোটা টাটকা একমুঠো কাঠবাদাম শুধু খোসা ছাড়িয়ে অফিসে, চলার পথে, বাড়ি ফেরার পথে খেতেই পারেন।
- ভেজানো কাঠবাদামঃ আপনি শুকনো কাঠবাদাম না খেয়ে জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখেও খেতে পারেন।কাঠবাদাম জলে ভিজিয়ে রাখে এটি আরো মিষ্টি হয় এবং সহজে হজমযোগ্য হয়। এর জন্য আপনি রাতভর কাঠবাদাম জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সকালে উঠে খান।
- সেদ্ধ কাঠ বাদামঃ ভেজানো কাঠবাদামের পাশাপাশি আপনি কাঠ বাদাম সেদ্ধ করেও খেতে পারেন। অনেকেই আছেন যারা সেদ্ধ কাঠবাদাম খেতে পছন্দ করেন।
- সকালের নাস্তায়ঃ সকালে নাস্তা টেবিলে আপনি এক মুঠো কাঠ বাদাম খেতে পারেন। কারণ সকালে কাঠ বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- সালাদের সাথেঃ আপনি বিভিন্ন ধরনের সালাদ যেমন ধরুন- গ্রীন সালাদ,ফলের সালাদ বা কাবাব সালাদ ইত্যাদির সাথে কাঠবাদাম গুড়ো করে মিশিয়ে খেতে পারেন। সালাদের সাথে কাঠ বাদাম করলে এটি সালাদের স্বাদকে আরো দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়।
- ইয়োগার্টের সাথে মিশিয়েঃ কাঠ বাদাম ইয়োগার্ট এর সাথে মিশিয়ে খেলে সুস্বাদু পুষ্টিকর হয়ে ওঠে। এর জন্য আপনি কাটা কাঠ বাদাম বা ভেজানো কাঠবাদাম ইয়োগার্টের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন এবং ফল বা মধুর সাথে পরিবেশন করুন।
- বিভিন্ন বেকড পণ্যের সাথে মিশিয়েঃ কাঠবাদাম বিভিন্ন ধরনের বেকড পণ্য যেমন- কেক,কুকি, মাফিন বা ব্রেডের সাথে ব্যবহার করেও খেতে পারেন।
- স্মুথি ও শেকের সাথেঃ আপনি চাইলে কাঠবাদাম স্মোদি ও শেকে যোগ করেও খেতে পারেন।
- দুধের সাথে মিশিয়েঃ আপনারা যারা শুধু কাজ বাদাম খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না তারা উষ্ণ গরম দুধের সাথে কাঠ বাদামের গুড়ো মিশিয়েও খেতে পারেন।
- রাতে না খাওয়াঃ কাঠবাদাম রাতে না খাওয়াটাই ভালো। আপনি চেষ্টা করবেন, কাঠ বাদাম রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে পর দিন সকালে ভেজানো বাদাম এবং ভেজানো জল খেতে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- খোসা ছাড়িয়ে খানঃ কাজুবাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই জলে ৬-৭ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে এর ওপরের পাতলা খোসা ছাড়িয়ে তবেই খাবেন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ কাঠবাদাম খাওয়ার পর আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। যাতে করে, এটি আপনার হজমে সহায়ক হয় এবং শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- অন্যান্য সময়ে খাওয়াঃ আপনি কাঠ বাদাম সকালে খেতে না পারলে দুপুরের খাবারের সাথে খেতে পারেন। এতে আপনার অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ হবে।আবার,আপনি রাতের খাবারেও কাঠ বাদাম খেতে পারেন।তবে রাতে কাঠ বাদাম খেলে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি খাবেন না বিশেষ করে আপনি যদি ঘুমের আগে খান সেক্ষেত্রে।
সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।কাঠবাদাম খাওয়ার উপযুক্ত সময় মূলত সকাল বেলা। সকালবেলা খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনি বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন। যেমন-- কাঠ বাদামে রয়েছে প্রোটিন ও ফাইবার,যা সকালে খালি পেটে খেলে আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে আপনার সকাল শুরু করার সময় এটি আপনার অতিরিক্ত খাওয়া কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
- সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খেলে এটি আপনার পাচনতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে। কারণ কাঠ বাদামের ফাইবার আপনার পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ করে।
- আপনি যদি নিয়মিত সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খান তাহলে এটি আপনার রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। কারণ কাঠ বাদামের কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আপনার রক্তের শর্করা স্তর দ্রুত বাড়িয়ে দেয় না ফলে দিনভর স্থিতিশীল রক্ত শর্করা স্তর বজায় থাকে।
- কাঠ বাদামি রয়েছে পলি আনস্যাচুরেটেড এবং মন আনসেচুরেটেড ফ্যাট যা আপনার হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। আর খালি পেটে এই চর্বি গ্রহণ করার ফলে আপনার হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- নিয়ম করে নিয়মিত সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খেলে এটি আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এতে থাকা অমেগা তিন ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই আপনার মস্তিষ্কের এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কাজ করে।
- খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়া আপনার শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন আপনার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে ভেতর থেকে আপনার শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
- সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খেলে এটি সারাদিনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও শক্তি সরবরাহ করতে থাকে। আর এই শক্তি ও পুষ্টিগুণ আপনার দৈনন্দিন কাজের জন্য অতীব জরুরি।
কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। আপনি কি জানেন কাঠ বাদাম ভিজে খাওয়ার উপকারিতা কি হতে পারে? হয়তো জানেন না!কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এবারে চলুন কাঠ বাদাম ভিজে খেলে আপনি কি উপকার পাবেন সে সম্পর্কে জানুন--- পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বাড়াতেঃ কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রেখে খেলে এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গুলি যেমন- ভিটামিন, খনিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্টস খুব সহজেই আপনার শরীরের শোষিত হতে পারে।
- হজম সহজ করেঃ কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রাখলে এর প্রাকৃতিক এনজাইম সক্রিয় হয় যা আপনার হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। শুধু তাই নয় এই এনজাইমগুলো আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে পারে।
- ফাইটেট হ্রাস করেঃ কাঠ বাদামে ফাইটেট নামক একটি উপাদান রয়েছে,যা আপনার শরীরে খনিজ উপাদানের শোষণকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। আর কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রাখলে এই ফাইটেট এর পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। ফলে আপনার শরীরে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিংকের শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
- শরীরের শক্তি বাড়াতেঃ কাঠ বাদাম নিয়মিত ভিজিয়ে রেখে খেলে এতে থাকা প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আপনার শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে পারে।বিশেষ করে আপনি যদি সকালে ভেজানো কাঠবাদাম খান।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সক্রিয় হয়ঃ কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রাখলে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- ভিটামিন ই আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে যা আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিক্যাল এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে খেলে এর প্রোটিন ও ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট পরিপূর্ণ রাখতে পারে। এতে করে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে এবং ওজনও কমতে থাকবে।
- প্রথমে কাঠ বাদাম গুলো খুব ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন।
- এবার, আপনি রাতে ঘুমের আগে একটি বাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিতে কাঠবাদাম গুলো টানা ৮-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
- পরদিন সকালে ভিজিয়ে রাখা কাঠ বাদাম গুলো পানি থেকে বের করে আরেকবার ভালো করে ধুয়ে নিন এবং খেতে থাকুন।
কাঠবাদাম খেলে কি ওজন বাড়ে
কাঠ বাদামের আপনারা অনেকেই জানতে চান,কাঠ বাদাম খেলে ওজন বাড়ে কিনা? তাহলে জেনে রাখুন, কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার ওজন বাড়ার কিছুটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। মনে করুন,আপনি ১০০ গ্রাম কাঠ বাদাম খেলেন যা থেকে আপনি 575 ক্যালোরি আপনার শরীরে গ্রহণ করলেন,যা কিনা সারা দিনের ক্যালরির চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হতে পারে।আবার,এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অসম্পৃক্ত ফ্যাট যা আপনার শরীরের শক্তি প্রদান করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট পরিপূর্ণ রাখে।যা আপনাকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা থেকে দূরে রাখে। তবে,আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খান সেক্ষেত্রে এর অতিরিক্ত ক্যালরি আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
কারণ নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে আপনার শরীরে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই আপনার ওজনও বাড়তে থাকে। সুতরাং,কাঠবাদাম খাওয়ার সময় আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খান।এতে আপনার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা নেই। সম্মানিত পাঠক, কাঠ বাদাম খেলে ওজন বাড়ে কিনা আশা করছি আপনার উত্তর আপনি পেয়েছেন।
কাঠ বাদাম কখন খাওয়া উচিত
কাঠ বাদাম আপনি কখন খাবেন, খাওয়ার সঠিক সময় নির্ভর করবে মূলত আপনার খাদ্যাভাসের উপর।তবুও কাঠবাদাম খাবার নির্দিষ্ট কিছু সময় রয়েছে যা আপনার উপকারে আসতে পারে। এবার চলুন আপনি কাঠ বাদাম কখন কোন সময় খাবেন সে বিষয়ে জেনে নিন-- সকাল বেলাঃ কাঠ বাদাম খাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা। আপনি সকালের নাস্তার সাথে কাঠ বাদাম খেলে দিনের শুরুতেই এটি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং ফ্যাট সরবরাহ করতে থাকে।
- ব্যায়াম করার আগে বা পরেঃ কাঠবাদাম শক্তির একটি দুর্দান্ত উৎস এবং এতে থাকা প্রোটিন ও ফ্যাট ব্যায়ামের সময় আপনার শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে। সুতরাং, ব্যায়ামের আগে কাঠ বাদাম খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
- দুপুরে খাবারের সাথেঃ দুপুরে খাবারের সাথে বা খাবার পর আপনি এক মুঠো কাঠ বাদাম চিবিয়ে খেতেই পারেন। এটি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।
- রাতের খাবারের সাথেঃ আপনি চাইলে দুপুরে না খেয়ে রাতের খাবারের সাথে খাবার হিসেবে বা সালাদের সাথেও কাঠ বাদাম যোগ করে খেতে পারেন। এতে করে আপনার খাবারের পুষ্টিমানও বাড়বে।
- বিকেলের নাস্তার সাথেঃ আপনি বিকেলে বা সন্ধ্যার নাস্তার সাথেও কাঠবাদাম খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে অতিরিক্ত ক্যালোরি ছাড়াই পুষ্টি এবং শক্তি একযোগে সরবরাহ করবে।
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় কাঠবাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম অনুসরণ করা উচিত।যাতে করে তা একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রূণ উভয়ের জন্যই উপকারী ও নিরাপদ হয়। এবার আপনাকে জানাবো গর্ভাবস্থায় আপনি কাঠ বাদাম কোন নিয়মে খাবেন--- প্রথমেই বলি গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি সীমিত পরিমানে খাবেন।যেমন ধরুন,প্রতিদিন ৬-৮ টি কাঠ বাদাম খেলেন। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। আর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার শরীরে ক্যালরি,ফ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে,যা আপনার ওজন বৃদ্ধি সহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় আপনি সর্বদা কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।কারণ,রাতে বাদাম ভিজিয়ে রেখে খেলে এটি আপনার হজমের পক্ষে সহায়ক হবে এবং আপনার শরীরে বাদামের পুষ্টি উপাদান ভালোভাবে শোষিত হবে।
- বাজার থেকে কেনার কাঠ বাদামে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি বা লবণের মিশ্রণ থাকে যা গর্ভাবস্থায় আপনার জন্য কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তবে প্রাকৃতিকভাবে বা অল্প পরিমাণে লবণ ও অতি নিযুক্ত লবণ খাওয়াটা ভালো।
- গর্ভাবস্থায় আপনি শুধু কাঠবাদাম নয় বরং আরো বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন আখরোটত,পেস্তা বাদাম,চিনা বাদাম সবগুলো একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে আপনি এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণ ভিটামিন,মিনারেল এবং স্বাস্থ্যকর ভ্যাট গুলো সঠিক পরিমাণে পাবে।
- গর্ভকালীন সময়ে আপনি সকালের নাস্তায় অথবা মধ্যাহ্নভোজের সময় কাঠ বাদাম খেতে পারেন।এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।তাছাড়া বিভিন্ন নাস্তার সাথেও কাঠবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
- গর্ভাবস্থায় আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খাবেন না এতে আপনার শরীরে এলার্জির প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ে আপনি অতিরিক্ত চিনি বা লবণযুক্ত কাঠ বাদাম একেবারেই এড়িয়ে চলুন।কারণ,গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত চিনি ও লবণ আপনার শরীরের ত্বরণের ভারসাম্যহীনতা এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্য তালিকায় নতুন কোন খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।
কাজুবাদাম ও কাঠ বাদাম একসাথে খাওয়ার নিয়ম
কাজুবাদাম ও কাঠবাদাম একসাথে খাওয়ার কিছু কার্যকরী এবং সহজ উপায় রয়েছে। এই বাদামগুলো একসাথে মিশিয়ে খাওয়ার ফলে পুষ্টিকল বৃদ্ধি পায় এবং এটি আরো সুস্বাদু হতে পারে। সম্মানিত পাঠক আপনি কাজু এবং কাজ বাদাম একসাথে কিভাবে খাবেন চলুন সেই সম্পর্কে কিছু কিছু নিয়ম জেনে নিন--- মিশ্রিত স্নাক্স হিসেবেঃ আপনি কাজুবাদাম ও কাঠবাদাম একসাথে মিশিয়ে স্নেক হিসেবে খেতে পারেন। এর জন্য আপনি এই দুই ধরনের বাদাম একসাথে সম পরিমাণে মিশিয়ে একটি ছোট প্যাকেটে করে রাখুন এবং দিনে একবার কি দুবার স্ন্যাকস হিসেবে খান।
- রোস্ট করে খাওয়াঃ আপনি কাজুবাদাম ও কাজ বাদাম রোস্ট করেও খেতে পারেন।এর জন্য একটি প্যানে খুব সামান্য পরিমাণ তেলে বাদাম গুলো রোস্ট করতে পারেন বা ওভেনে ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৮-১০ মিনিট রোস্ট করে নিতে পারেন। রোস্ট করার ফলে বাদাম গুলোর স্বাদ আরো বেড়ে যাবে এবং আপনি খেয়েও অনেক মজা পাবেন।
- বাদামের মিশ্রণ তৈরি করেঃ একসাথে মিশিয়ে একটি পুষ্টিকর মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। বাদামের এই মিশ্রণটি আপনি সকালের ব্রেকফাস্টে, দুপুরে খাবারের পরে কিংবা বিকেল বা সন্ধ্যায় স্ন্যাকস হিসেবে কফির সাথে খেতে পারেন।
- সালাদ বা স্যুপের সাথে যোগ করেঃ আপনি চাইলে সালাদ বা স্যুপের সাথে কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। এর জন্য কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম কুচি কুচি করে সালাত বা স্তূপের উপর ছড়িয়ে দিন।এতে আপনার সালাদ বা স্যুপের স্বাদ আরো দ্বিগুণ পরিমাণ বেড়ে যাবে। সালাদ বা স্যুপের সাথে বাদাম যোগ করার আগে বাদামগুলো আপনি হালকা রোস্ট করে নিতে পারেন
- বাদামের পেস্ট তৈরি করেঃ আপনি কাঠ বাদাম ও কাজুবাদাম একসাথে পেস্ট তৈরি করেও খেতে পারেন। পেস্ট তৈরি করতে আপনি কাজুবাদাম ও কার্ড বাদাম গুলো একসাথে ব্লেন্ডারের ভালো করে ব্লেন্ড করে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এবার এই পেস্ট আপনি রুটির সাথে,ব্রেডের সাথে দই বা কাস্টার্ডের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
কাঠ বাদাম ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
কাঠবাদাম ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে তা কি জানেন? কাঠবাদাম ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি আজ থেকেi কাঠবাদাম কিসমিস খাওয়া শুরু করবেন। এবার চলুন কার্ড একসাথে খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন সে বিষয়ে জেনে রাখুন--- উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্নঃ কাঠবাদাম ও কিসমিস উভয়ই অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। কাঠবাদাম প্রোটিন,ফাইবার,ভিটামিন ই এবং খনিজ সমৃদ্ধ। অন্যদিকে কিসমিসে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে আয়রন,পটাশিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে কাঠবাদাম ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার মাধ্যমে আপনি এই পুষ্টি উপাদান গুলো পরিপূর্ণরূপে পেতে পারেন।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেঃ কাঠ বাদাম আপনার হৃদরোগের ছবি কমাতে সহায়ক।কারণ এতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট যা কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। অপরদিকে কিসমিসও আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক। সুতরাং, কিসমিস ও কাঠ বাদাম একসাথে খেলে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- হজম শক্তি বাড়ানোঃ কাঠ পরিমাণে ফাইবার যা আপনার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে কিসমিসও আপনার হজমের সহায়ক এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিকঠাক বজায় রাখে। এই দুই উপাদান একসাথে খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার হজমের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন।
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কাঠবাদাম ও কিসমিস উভয়ই শক্তির একটি দুর্দান্ত উৎস। কাজ কদমের প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা আপনাকে শক্তি প্রদান করে এবং কিসমিসে থাকা প্রাকৃতিক সুগারও আপনাকে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে। ফলে একসাথে খেলে এটি আপনাকে দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারে।
- রক্ত স্তর নিয়ন্ত্রণে কাজ করেঃ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আপনার রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং কাঠ বাদাম আপনার রক্তের উত্তর ঠিক রাখে। ফলে কাঠ বাদাম ও কিসমিসএকসাথে খাওয়ার মাধ্যমে এটি আপনার রক্তের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে।
প্রতিদিন কয়টা কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত
কাঠ বাদামের উপকারিতা পেতে আপনাকে পরিমিত পরিমানে কাঠ বাদাম খেতে হবে।আপনার অনেকেই জানতে চান প্রতিদিন কয়টা করে কাঠ বাদাম খাওয়া যেতে পারে। দেখুন প্রতিদিন আপনি কতটা কাঠ বাদাম খাবেন সেটি নির্ভর করবে আপনার স্বাস্থ্যে এবং খাদ্যাভাসের উপর। তবে,সাধারণভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম অর্থাৎ ১০-১৫ টি কাঠ বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।আপনি যদি প্রতিদিন ১০-১৫ টি কাজ বাদাম খেতে পারেন তাহলে এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট,প্রোটিন,ফাইবার,ভিটামিন ই এবং খনিজ পদার্থগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবেন। এতে করে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে হজম ক্ষমতা বাড়বে। আরেকটি কথা মনে রাখবেন,অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠ বাদাম খেলে আপনার শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে যা আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।আর তাই অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে প্রতিদিন ১০-১৫ টি কাঠবাদাম খাওয়াটাই আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। প্রতিদিন কয়টা কাজ বাদাম খাবেন আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ
প্রচুর পুষ্টি গুনে ভরপুর সুস্বাদু একটি খাদ্য উপাদান। কাঠ বাদামের এতসব উপকারিতা জানার পরে এখন আপনি নিশ্চয়ই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে চলুন প্রতি 100 গ্রাম কাঠ বাদামে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা জেনে নিন--পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শক্তি | ৫৭৯ ক্যালরি |
প্রোটিন | ২১.২ গ্রাম |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৩.৭ গ্রাম |
মনো স্যাচুরেটেড | ৩১.৫ গ্রাম |
পলি আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১২.০ গ্রাম |
ফাইবার | ১২.৫ গ্রাম |
সুগার | ৪.২ গ্রাম |
ভিটামিন ই | ২৫.৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ১.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৩ | ৩.৪ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ৬০ মাইক্রো গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৬৯ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৩.৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ২৭০ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৭৩৩ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ৩.১ মিলিগ্রা |
১০০ গ্রাম কাঠ বাদামের দাম কত ২০২৪
আপনারা অনেকে কাঠ বাদামের দাম সম্পর্কে জানতে চান। অনেকেই জানতে চান ১কেজি কাঠ বাদামের দাম,আবার অনেকেই আছেন যারা ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামের দাম সম্পর্কে জানতে চান। আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের কাঠ বাদামের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিব। কাঠ বাদাম কেনার আগে আপনার জেনে রাখা দরকার,বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাঠবাদাম পাওয়া যায় এবং একেক ধরনের কাঠ বাদামের দাম একেক রকম হয়ে থাকে।বর্তমান বাজার হিসেবে আপনি প্রতি কেজি কাঠবাদাম পেয়ে যাবেন ৭০০-৮৫০ টাকার মধ্যে।আবার প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠ বাদাম আপনি পাবেন ৯০-১১০ টাকার মধ্যে।কাঠ বাদামের গুনাগুন ও পুষ্টি উপাদান বেশি থাকার কারণে এর চাহিদা ব্যাপক। ফলে আগের তুলনায় এর দামও কিছুটা বেড়েছে। বেশ কিছুদিন আগেও ১০০ গ্রাম কাঠ বাদাম পাওয়া যেত ৭০-৮০ টাকার মধ্যে। কাঠ বাদাম দিয়ে শুধু যে খাবার তৈরি করা হয় তা কিন্তু নয়,
কাঠবাদাম দিয়ে এর তেলও তৈরি হয় তা কি জানেন!! বর্তমান বাজারে আপনি সাধারণ কাঠ বাদামের ৫০-১০০ মি.লি তেল পাবেন ২৬০-৫২০ টাকায়। আর ভালো কোয়ালিটির কাঠবাদামের তেল ১২০ মি.লি পাবেন ৬৮০-৮০০ টাকায়।তবে,এই দাম স্থান ভেদে কিছুটা কমবেশি হতে পারে। আশা করছি, কাজ বাদামের দাম সম্পর্কে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন।
কাঠ বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
কাঠ বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি নিশ্চয়ই বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। বাদাম,বিশেষ করে কাঠ বাদাম এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট,প্রোটিন ফাইবার,ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ একটি সুপারফুড। যা খাওয়ার মাধ্যমে আপনি একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন।স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে এই কাঠ বাদামের জুড়ি মেলা ভার। কাঠ বাদামের এতসব উপকারিতা জানার পর আপনি আজ থেকেই কাঠ বাদাম খাওয়া শুরু করুন।তাছাড়া সুস্থ থাকার জন্য আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে কাঠবাদাম সহ আরো অন্যান্য বিজ জাতীয় খাদ্য উপাদান যোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এখনো কাঠ বাদাম না খেয়ে থাকেন তাহলে আজ থেকেই নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়া শুরু করুন। ভালোথাকুন,সুস্থ থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url