লেবু দিয়ে ওজন কমানোর কার্যকরী ৭টি উপায়
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন? সকালে খালি পেটে লেবু গরম পানি খাওয়ার নিয়ম জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
কারণ, আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে লেবু দিয়ে ওজন কমানো যায় এবং সকালে উষ্ণ লেবুজল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে এক্ষুনি আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
- লেবু দিয়ে ওজন কমানোর কার্যকরী কিছু উপায়
- ওজন কমাতে লেবু জল খাওয়ার নিয়ম
- সকালে খালি পেটে লেবু গরম পানি খাওয়ার নিয়ম
- ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা
- ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- গরম পানিতে লেবু খাওয়ার অপকারিতা
- প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমানোর উপায়
- ওজন কমাতে খাবারের ডায়েট চার্ট
- ওজন কমাতে লেবু খাওয়ার সঠিক সময়
- প্রতিদিন কি পরিমান লেবু পানি খাওয়া উচিত
- ওজন কমাতে লেবু পানির উপকারিতা
- ওজন কমাতে লেবু ধনেপাতার পানীয়
- লেবু পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আমার মন্তব্য
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর কার্যকরী কিছু উপায়
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে ভাবছেন? শরীরের বাড়তি ওজন কি আপনার দুশ্চিন্তা দিনকে দিন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে? তাহলে আর চিন্তা নয়! কারণ, এর সমাধান রয়েছে আপনার হাতের নাগালের মধ্যেই। কি অবাক হলেন তো!! হ্যাঁ সম্মানিত পাঠক, আপনার ঘরের কোণে পড়ে থাকা এক টুকরো লেবু দিয়েই আপনি আপনার ওজন কমাতে পারবেন। লেবু এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। এবার চলুন লেবু কিভাবে ওজন কমায় সে সম্পর্কে জেনে নিন--
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করুন ৬টি উপায়ে
- লেবু এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। কেননা লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক এসিড আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।
- এটি আপনার শরীরের পানি ধারণ ক্ষমতা কমায়, ফলে অতিরিক্ত পানি এবং টক্সিন বের হয়ে যাওয়ায় পেট ফোলা কমে এবং শরীরের অস্বস্তিও দূর হয়।
- নিয়মিত নিয়ম করে লেবু খেলে লেবুর রস আপনার শরীরের হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। কারন এটি পেটে এসিড উৎপাদন বাড়ায় যা খাবার দ্রুত হজম করতে বেশ সহায়ক।
- তাছাড়া লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি আপনার শরীরের অন্তর্নিহিত চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
- সকালে লেবুর সাথে গরম পানি খেলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় যা দিনের বেলায় অধিক ক্যালরি ঝরানোর কাজ করে।
- লেবুর রসে রয়েছে পেকটিন নামক উপাদান যা আপনার অতিরিক্ত ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। এই পেকটিন আপনার শরীরে জলীয় ও সহজপাত্র ফাইবার হিসেবে কাজ করে যা ক্ষুধার অনুভূতি কমায় ফলে আপনি কম পরিমাণে খাবার খাওয়ার প্রবণতা অনুভব করবেন। এতে করে আপনার ওজন স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে।
- আর ঠিক এইভাবেই লেবু আপনার শরীরের চর্বি কমানোর পাশাপাশি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং টক্সিন দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ওজন কমাতে লেবু জল খাওয়ার নিয়ম
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর কার্যকরী একটি উপায় হল লেবু জল খাওয়া। লেবু দিয়ে ওজন কমাতে হলে আপনাকে নিয়ম মেনে লেবু জল খেতে হবে। নিয়ম মেনে লেবু জল না খেলে সেটি আপনার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী নাও হতে পারে। আর তাই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে লেবু খাওয়াটা ভীষণ জরুরি। এবার চলুন আপনি কিভাবে লেবুর জল খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
লেবুর মসলা পানিঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে সাধারণত আপনি চা কিংবা কফি খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু আপনি জানেন কি এই চা বা কফিতে থাকা ক্যাফেনিন আপনার শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি করে? তাই চা বা কফি না খেয়ে আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে খেতে পারেন লেবু এবং আদার রস মিশ্রিত পানীয়। নিয়মিত লেবু আদা পানীয় খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
ওয়াটার ফাস্টিংঃ আপনি যদি অতি অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুততম ওজন কমাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার জন্য একটি জনপ্রিয় ডায়েট হতে পারে ওয়াটার ফাস্টিং। ওয়াটার ফাস্টিং এর মানে হল আপনাকে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া ছাড়া অন্য যে কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এই যেমন ধরুন, ওয়াটার ফাস্টিং এ আপনি পানির সাথে বিভিন্ন ফলের জুস বা শরবত খেতে পারেন এবং সেই সাথে খেতে পারেন লেবুর শরবত। এভাবে টানা কিছুদিন খেতে থাকলে আপনার ওজন স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে।
লেবুর ডিটক্স ওয়াটারঃ ডিটক্স ওয়াটার এমন একটি পানীয় যেখানে ঠান্ডা পানিতে বিভিন্ন উপকারী ফলমূল, সবজি টুকরো টুকরো করে কেটে অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রেখে এটি তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখি, লেবু এবং শসার ডিটক্স ওয়াটার আপনার শরীরের দূষিত পদার্থ অপসারণ করে মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
এর জন্য আপনি ১ লিটার ঠান্ডা পানিতে একটি লেবু, একটি মাঝারি আকারের শসা স্লাইস করে কেটে, সাথে একটুখানি আদা, কিছু পুদিনা পাতা এবং পিংক সল্ট দিয়ে ২-৩ ঘন্টা পর্যন্ত রেখে তৈরি করে ফেলুন লেবুর ডিটক্স ওয়াটার। কিছু দিন নিয়ম করে এই ডিটক্স ওয়াটার খাওয়র ফলে এটি আপনার শরীরের ফ্যাট সেলগুলো নিষ্কাশন করবে, খাবার হজমে সাহায্য করবে এবং সেইসাথে ওজনও কমাবে।
পুদিনা পাতা দিয়ে লেবু জলঃ আপনি সাধারণ লেবু জল পুদিনা পাতা দিয়েও খেতে পারেন। লেবু জলে পুদিনা পাতা যোগ করার ফলে এর স্বাদ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি এটি আপনার বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করবে। লেবু জলে পুদিনা পাতা মিশিয়ে খেলে এটি আপনার ওজন ঝরানোর কাজকে বিশেষ ভাবে ত্বরান্বিত করে।
আদা দিয়ে লেবুর রসঃ আপনি আপনার রোগা হওয়ার ডায়েটে রাখতে পারেন আদা লেবুর পানীয়। এর জন্য এক চা চামচ লেবুর রসে আদা কুচি দিয়ে খেতে পারেন বা আদার রস লেবু জলের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
লেবু ও সালাদের ব্যবহারঃ আপনি সালাতে লেবুর রস ব্যবহার করে খেতে পারেন। তাছাড়া সালাদের সাথে লেবুর রস যোগ করলে সালাদের স্বাদ বৃদ্ধি করে এবং আপনাকে অধিক ক্যালরি গ্রহন থেকে বিরত রাখে।
লেবুর পেশেন্ট ডায়েটঃ লেবুর রসের সাথে অন্যান্য খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, ইত্যাদি খেলে এটি আপনার শরীরের চর্বি কমানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। তাছাড়া লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে।
সকালে খালি পেটে লেবু গরম পানি খাওয়ার নিয়ম
সকালে খালি পেটে লেবু গরম পানি কোন নিয়মে খেতে হয় তা অনেকেই জানতে চান। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আপনি চা বা কফি না খেয়ে পান করুন এক গ্লাস গরম লেবু জল। কারণ, খালি পেটে লেবু পানি খেলে এটি আপনার ক্ষুধা ভাবকে কমাবে। ফলে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমবে এবং আপনার শরীরে ক্যালরিও কম প্রবেশ করবে। আর ঠিক এ কারণেই সকালে খালি পেটে লেবু খেলে ওজন প্রাকৃতিকভাবে অনেকটাই কমে আসে। এবার চলুন সকালে লেবু গরম পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন--
যেভাবে খাবেন লেবু পানি
- লেবু পানি পান করার ক্ষেত্রে আপনি প্রথমে এক গ্লাস পানি খুব বেশি গরম না করে হালকা গরম করুন। এক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা উচিত।
- এবার একটি লেবু মাঝখানে কেটে চিপে এর রস বের করুন। একটি অর্ধেক লেবুর রস ই এক গ্লাস পানির জন্য যথেষ্ট। এবার লেবুর রস গরম পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- আপনি সকালে নাস্তা করার ঠিক ৩০ মিনিট আগে এই লেবু গরম পানি পান করবেন। এতে করে আপনার হজম ক্রিয়া উন্নত হবে।
- আপনি চাইলে লেবু পানির সাথে সামান্য মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। মধু মিশিয়ে খেলে ক্ষুধা লাগার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসে। খুব গরম পানিতে মধু মেশালে মধুর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবেন।
আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবু গরম পানি খাওয়ার এই নিয়মটি বজায় রাখুন। এতে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ওজন অনেকটাই আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা
ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতাও কিন্তু কম নয়। লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে আপনি ভরা পেটেও খেতে পারেন লেবু পানি। ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন--
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ ভরা পেটে লেবু পানি খেলে এটি আপনার পাকস্থলীর মূত্রত্যাগ প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং সেই সাথে আপনার পাচনতন্ত্রকেও সচল রাখে।
- ডিটক্সিফিকেশনঃ খাওয়ার পর লেবু পানি খেলে এটি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় এটি আপনার লিভারও সুস্থ রাখে।
- ওজন কমাতেঃ লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক এসিড আপনার শরীরের মেটাবলিজম পাড়ায় যা অতিরিক্ত চর্বি ঝরতে সাহায্য করে।ফলে ভরা পেটে লেবু পানি খেলে এটি আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে নিয়মিত ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ার ফলে এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।
- শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেঃ খাওয়ার পর লেবু পানি খেতে এটি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এটি আপনার শরীরের জল শোষণ বৃদ্ধি করে, যা শরীরের সঠিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।
- প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্টঃ ভরা পেটে লেবু পানি খেলে এটি আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে,যা বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিক্যালস এর ক্ষতি থেকে আপনার দেহের সেলগুলিকে রক্ষা করে এবং আপনার ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে বাধা প্রদান করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেঃ লেবু পানি নিয়মিত খাওয়ার ফলে এটি আপনার কোলেস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কারণ লেবুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
আপনারা অনেকেই জানতে চান লেবু ঠান্ডা পানি দিয়ে নাকি গরম পানিতে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তাহলে জেনে রাখুন, লেবু দিয়ে ওজন কমাতে আপনি ঠান্ডা এবং কুসুম গরম পানি এই দুই উপায়ে খেতে পারেন। তাতে উপকার পাবেন। ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
- ঠান্ডা পানিতে লেবু মিশে পান করলে তো আপনার শরীরকে হাইড্রেটের রাখতে সাহায্য করে। কারণ, ঠান্ডা পানির স্বাভাবিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায় হোক এবং শরীরের জল শোষণ বাড়ায়।
- লেবু পানি ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- আপনি যদি ঠান্ডা পানিতে লেবু পানি খান তাহলে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করবে এবং সেই সাথে পাচনতন্ত্রের ক্ষমতাকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিবে।
- যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তারা ঠান্ডা পানিতে লেবু পানি খেয়ে দেখবেন তাতে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
- ঠান্ডা পানিতে লেবু খেলে এটি আপনার মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করতে পারে।
- এছাড়াও ঠান্ডা লেবু পানির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বকের ক্লান্তি কমাতে এবং ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না।
এক কথায় বলা যেতে পারে, আপনি যদি নিয়মিত ঠান্ডা পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করতে পারেন তাহলে এটি আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে পরিণত হবে এবং আপনার শরীর সারাদিনের জন্য সতেজ ও চনমনে থাকবে।
রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
রাতেও গরম পানিতে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপ্নি হয়তো আজ থেকেই খাওয়া শুরু করে দেবেন। খেতে পারেন। নিয়মিত নিয়ম করে রাতে কুসুম গরম পানিতে লেবু পানি খেলে আপনার ওজন প্রাকৃতিকভাবেই কমে আসবে। তাছাড়া রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার একাধিক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন, রাতে গরম পানিতে লেবু খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন-
- প্রথমেই বলি, রাতে গরম পানিতে লেবু খেলে এটি সারারাত আপনাকে সুস্থ এবং শান্ত রাখতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত রাতে গরম পানিতে লেবু পানি খেলে এটি আপনার শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে এবং সেইসাথে লিভারকে পরিষ্কার করে ।
- নিয়মিত রাতে নিয়ম করে গরম পানিতে লেবু পানি খেলে এটি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতেও সাহায্য করে।
- শুধু তাই নয়, রাতে গরম পানিতে লেবু পানি খেলে এটি আপনার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করার পাশাপাশি পাচনতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
- আপনি কি অনিদ্রা রোগে ভুগছেন? তাহলে রাতে গরম পানিতে লেবু পানি খেয়েই দেখুন না! এতে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে, পেশী শিথিল হবে এবং মানসিক চাপ অনেকটাই কম হবে। আর মানসিক চাপ কম হওয়ার কারণে এটি আপনার ঘুমের পক্ষে বেশ সহায়ক হবে।
- এছাড়াও রাতে লেবু পানি পান এটি আপনার সক্রিয় করে এবং রাতের খাবারের পর অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরাতে সহায়ক হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, আশা করছি বুঝতে পেরেছেন রাতে গরম পানিতে লেবু পানি খাওয়া আপনার জন্য এবং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ কার্যকরী একটি উপায় হতে পারে। যা কিনা আপনাকে সারারাত সুস্থ-শান্ত এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
গরম পানিতে লেবু খাওয়ার অপকারিতা
সম্মানিত পাঠক, আপনারা ইতিমধ্যেই রাতে গরম পানিতে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কিন্তু গরম পানিতে লেবু খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। চলুন তাহলে গরম পানিতে লেবু খেলে কি কি অপকার হতে পারে বা আপনার শরীরে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--
- পেটের অম্লতা বৃদ্ধিঃ গরম পানিতে লেবু পানি খাওয়া আপনার পাকস্থলীর এসিডিটির মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে আপনার যদি আগে থেকেই এসিডেটেড সমস্যা থাকে। ফলে আপনার পেট ব্যথা গ্যাস এবং বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- দাঁতের এনামেল ক্ষতিঃ লেবুর রসের এসিড আপনার দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে। গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে এটি আপনার দাঁতের এনামেলার তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে।ফলে দাঁতের সেনসিভিটি বেড়ে যেতে পারে।
- পেটের সমস্যাঃ গরম পানিতে লেবু পানি খেলে কিছু মানুষের জন্য এটি পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বিশেষ করে যাদের পেটের প্রদাহ,আলসার কিংবা গ্যাস্ট্রাইটিসের সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া গরম পানির তাপ এবং লেবুর অ্যাসিড আপনার পেটের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- অতিসারঃ প্রয়োজনে তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে এটি আপনার আতিসারের কারণ হতে পারে। কারণ,লেবুর রস প্রাকৃতিক হিসেবে কাজ করে এবং অতিরিক্ত পানি গ্রহণের ফলে মুত্র ত্যাগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
- গলা ও খাদ্যনালির প্রদাহঃ লেবু গরম পানি খেলে এই গরম পানির তাপমাত্রা আপনার গলা এবং খাদ্যনালীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া গরম পানির সাথে লেবু মিশালে এর অ্যাসিটিক উপাদান আপনার গলা ও খাদ্যনালির ঝিল্লির জন্য উত্তেজক হতে পারে। যা আপনার গলা ও খাদ্যনালীতে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করতে পারে।
- বিষন্নতার প্রভাবঃ যাদের প্রচন্ড রকমের মানসিক সমস্যা রয়েছে তারা এই গরম লেবু পানি খেলে তাদের মানসিক বিষন্নতা বেড়ে যেতে পারে।
একটি কথা মনে রাখবেন, লেবু পানি হোক আর যে কোন খাদ্য উপাদানই হোক না কেন পরিমিত পরিমাণে পরিমাণে খাওয়াটাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। লেবু পানির এই অপকারিতা গুলো সামলাতে আপনি গরম পানিতে লেবু খাওয়ার সঠিক সময়, পরিমাণ এবং আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে তবেই খাবেন।
প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমানোর উপায়
প্রাকৃতিকভাবে শরীরের ওজন কমানোর অনেক উপায় রয়েছে। আর লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি। আপনি প্রাকৃতিকভাবে লেবু পানি খেয়ে ওজন কমাতে পারবেন এটা যেমন সত্য তেমনি প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমানোর আরো উপায় রয়েছে। এবার চলুন,আপনি প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে ওজন কমাতে পারেন সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিই --
- প্রথমতঃ লেবু পানি ছাড়া আপনি একটি সুষম ডায়েট অনুসরণ করেও ওজন কমাতে পারেন।সুষম ডায়েট বলতে ধরুন আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি শস্য-দানা এবং প্রোটিনের উৎস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিশেষ করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ওটস, সবুজ শাকসবজি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করবে এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখবে।
- দ্বিতীয়তঃ শুধুমাত্র সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে চলবে না, বরং সুষম খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম যেমন- নিয়মিত হাটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদির অভ্যাস করতে হবে।
- তৃতীয়তঃ অনেক সময় অতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ কমাতে আপনি নিয়মিত মেডিটেশন, ইয়োগা বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস গড়ে তুলুন যা আপনাকে মানসিক শান্তি দেবে এবং পরোক্ষভাবে ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।
- চতুর্থতঃ আপনি যদি ওজন কমাতে চান সেক্ষেত্রে আপনার পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ঘুমের অভাব মেটাবলিজমকে ধির করে দেয় এবং অতিরিক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়।এক্ষেত্রে বলে রাখি, প্রতি রাতে আপনি যদি ৭-৮ ঘন্টা ঘুমাতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার শরীরের সেল রেজেনারেশন ঠিক থাকবে এবং মেটাবলিজমও সুস্থ থাকবে।
সম্মানিত পাঠক, লেবু পানি খাওয়ার পাশাপাশি আপনি নিয়মিত এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন, আপনার খাদ্যাভ্যাসকে পরিবর্তন করুন। তাহলে দেখবেন প্রাকৃতিকভাবেই আপনার ওজন অনেকটাই আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ওজন কমাতে খাবারের ডায়েট চার্ট
আপনারা ওজন কমানোর জন্য খাবারের সঠিক ডায়েট চার্ট বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে সার্চ করে থাকেন। এতে অনেক সুন্দর সুন্দর ডায়েট চার্ট পেয়ে যান ঠিকই,কিন্তু সেগুলো ফলো করেও আপনি সঠিক ফল পাচ্ছেন না। অনেকের আবার ওজন তো কমছেই না বরং ওজন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে বা অপরিবর্তিত থাকছে।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনাকে আজ একটি সুষম ডায়েট চার্ট আপনাদের জানাবো। আশা করছি এই ডায়েট চার্ট ফলো করে আপনারা অনেকেই উপকৃত হবেন। সম্মানিত পাঠক, ১দিনের একটি বিস্তারিত ডায়েট চার্ট আপনাদের সুবিধার্থে নিচে তুলে ধরা হলো--
সকালের খাবার
- ওট মিলঃ সকালের নাস্তায় আপনি এক কাপ ওটমিল খাবেন যা অল্প পানিতে রান্না করা হয়েছে। আপনি চাইলে এর সাথে কিছু চিয়া সিড বীজ এবং ১ চা চামচ মধুও যোগ করতে পারেন।
- ফলমূলঃ ফলমূলের মধ্যে আপনি একটি আপেল বা কলা খাবেন যা আপনাকে সারাদিনের জন্য প্রাথমিক ফাইবার এবং শক্তি যোগাবে।
- বিভিন্ন পানীয়ঃ অনেকের সকালবেলা চা, কফি পান করার অভ্যাস থাকে। সে হিসেবে আপনি চিনি ছাড়া এক কাপ সবুজ চা বা ব্ল্যাক কফি খেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি চা কফির পরিবর্তে সকালে লেবু গরম পানি খেতে পারেন। এটি আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করবে।
দুপুরের খাবার
- ভাতঃ দুপুরে আপনি এক কাপ পরিমাণ ভাত সাথে এক বাটি ডাল, এক বাটি বিভিন্ন ধরনের মেশানো সবুজ শাকসবজি যেমন- গাজর, শিম, ব্রকলি ইত্যাদি খেতে পারেন।
- মাছ ও মাংসঃ ভাতের সাথে আপনি এক পিস যে কোনো মাছ খেতে পারেন। আর মাংস খেলে মুরগির মাংস ঝোল ছাড়া ২-৩ টুকরো খেতে পারবেন। আপনি সপ্তাহে দুই দিন মুরগির মাংস খাবেন।
- সালাদঃ আপনি ভাতের সাথে অবশ্যই সালাদ খেতে ভুলবেন না। শসা, টমেটো, গাজর ও অলিভ অয়েল ভিনেগার দিয়ে একটি সালাদ তৈরি করে খাবেন যা আপনার শরীরে কম ক্যালোরি সরবরাহ করবে।
- টক দই ও শশাঃ দুপুরের খাবার শেষে ভরা পেটে অবশ্যই আপনি একবাটি টক দই এবং শসা একসাথে মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
বিকেলের খাবার
- নাস্তাঃ বিকেলের নাস্তা হিসেবে আপনি একটা গ্রিন টি বা এক কাপ টক দই খেতে পারেন যা প্রোটিন এবং প্রোবায়োটিক্স এ পূর্ণ। আপনি চাইলে দইয়ের সাথে স্ট্রবেরি বা ব্লুবেরি মিশিয়ে নিতে পারেন।
- বাদামঃ বিকেলে নাস্তা হিসেবে বিভিন্ন শস্য দানা যেমন- 10-15 টি কাঠবাদাম বা আখরোট, কাজুবাদাম, চিনা বাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন। এগুলি আপনার পেট দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ভরা রাখতে সাহায্য করবে।
রাতের খাবার
আমরা অনেকেই সময় না মেনে গভীর রাত করে রাতের খাবার খেয়ে থাকি এবং খাওয়ার পরপরই ঘুমোতে যাই। আর এটি আপনার ওজন বৃদ্ধির একটি বিশেষ কারণ হতে পারে। তাই আপনি যতটা সম্ভব পারবেন রাতের খাবার ৮:৩০ এর মধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- ভাতঃ আপনি যতটা সম্ভব রাতে ভাত না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ভাত না খেয়ে আপনি ২ টি লাল আটার গমের রুটি খেতে পারেন। আর ভাত যদি একান্তই খেতে হয় সেক্ষেত্রে ১ কাপ সাদা ভাত খাবেন।
- প্রোটিনঃ প্রোটিন হিসেবে রাতে আপনি এক পিস গ্রিলড মাছ খেতে পারেন যা আপনাকে রাতে প্রোটিনের চাহিদা যোগান দেবে।
- সবজিঃ রাতে আপনি শুধুমাত্র এক কাপ সেদ্ধ বা স্টার ফ্রাই করা সবজি খাবেন। এটি আপনার শরীরে সারারাত প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলস সরবরাহ করবে।
- সুস্বাদু স্যুপঃ রাতের খাবার শেষে আপনি ১ কাপ পরিমান সবজি স্যুপ খেতে পারেন।
- পানীয়ঃ আপনি সারাদিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করবেন এটি আপনার শরীরের ডিটক্সিফিকেশন করতে সহায়তা করবে এবং অতিরিক্ত খিদে মিটাবে।
ওজন কমাতে লেবু খাওয়ার সঠিক সময়
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই অবগত হয়েছেন। কিন্তু লেবু দিয়ে ওজন কমাতে হলে আপনাকে একটি নিয়ম করে লেবু পানীয় খেতে হবে। শুধু লেবু নয় বরং যে কোনো খাদ্য উপাদানই নিয়ম করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাহলে চলুন ওজন কমাতে আপনি লেবু কোন সময় খাবেন জেনে নিন-
- প্রথমতঃ ওজন কমাতে সকালবেলা লেবু পানির ব্যবহার সব থেকে কার্যকরী উপায় হতে পারে। এর জন্য আপনি ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানি বা সাধারণ তাপমাত্রার ঠান্ডা পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। সকালে লেবু পানি পান করলে এটি সারাদিনের জন্য আপনাকে শক্তি যোগাবে এবং খিদে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে, যা আপনাকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখবে।
- দ্বিতীয়তঃ দুপুরে খাবার আগে বা পরে আপনি লেবু পানি খেতে পারেন। আবার সালাদ বা রান্না করে খাবারের সাথে লেবুর রস মিশিয়েও আপনি খেতে পারেন।
- তৃতীয়তঃ রাতের খাবার শেষে আপনি লেবু পানি পান করতে পারেন। তবে একটি কথা মনে রাখবেন, রাতে খাবারের পরে খুব বেশি পরিমাণ লেবু পানি খাওয়া একেবারে উচিত নয়। কারণ, এটি আপনার অম্বল বা গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- চতুর্থতঃ আপনি যদি লেবুর ডিটক্স খেতে চান সেক্ষেত্রে লেবুর ডিটাক্স খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো খাওয়ার আগে বা খালি পেটে। আপনি সারাদিনে এক লিটারের মতো ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারেন। এই ডিটক্স ওয়াটার একবার তৈরি করে আপনি সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খেতে পারবেন এবং খাওয়ার পর এর সাথে পানি মিশিয়ে নিয়েও খেতে পারবেন।
প্রতিদিন কি পরিমান লেবু পানি খাওয়া উচিত
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনাকে পরিমাণ মতো লেবু পানি খেতে হবে। লেবু দিয়ে ওজন কমবে এর মানে এই নয় যে,আপনি আপনার ইচ্ছামত যত খুশি তত খাবেন আর ওজন কমবে। লেবু দিয়ে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন ১-২ গ্লাস লেবু পানি পান করতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে আপনি সাধারণত ১-২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে
এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধি করবে। আবার, দুপুর বা রাতে খাওয়ার সাথে বা পরে এক গ্লাস পরিমান লেবু পানি খেতে পারেন। তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ এতে আপনার এসিডিটির সমস্যা হতে পারে, দাঁতের এনামেল ক্ষতি হতে পারে। আবার আপনি যদি লেবুর ডিটক্স খেতে চান সেক্ষেত্রে সারাদিনে এক লিটার পরিমাণ লেবুর ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারবেন।
ওজন কমাতে লেবু পানির উপকারিতা
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় তো জানলেন। কিন্তু ওজন কমাতে লেবু পানির অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে তা কি জানেন? আপনি কিছুদিন নিয়ম করে এই লেবু পানি খেয়েই দেখুন না, আপনার শরীরে কি কি পরিবর্তন আসছে তা নিজেই টের পাবেন। এবার চলুন ওজন কমাতে লেবু পানির উপকারিতা কি কি সেগুলো জেনে নিন-
মেটাবলিজম বৃদ্ধিঃ লেবু পানিতে থাকি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ যা আপনার মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে। তাছাড়া এটি আপনার শরীরের ক্যালরি বার্নের হার বাড়ায় যা ওজন কমাতে সহায়তা করে।
টক্সিন পরিস্কারঃ নিয়মিত লেবু পানি খাওয়ার ফলে লেবু পানির ডিটক্সিকরন প্রভাব আপনার শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখে। অর্থাৎ আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন টক্সিন অপসারণ করে ফেলে। এতে আপনার পেটের সমস্যা কমতে থাকে এবং শারীরিক সুস্থতা ও বজায় থাকে।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণেঃ লেবুতে রয়েছে ফাইবার এবং ভিটামিন সি যা আপনার খাবারের প্রতি খিদে কমাতে সাহায্য করে। এতে করে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং ওজনও কমতে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ লেবু পানি লেবুর পেকটিন ফাইবার আপনার খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত করলে, এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। কারন এটি পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই ওজন আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রভাবঃ লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের ফ্রী রেডিক্যালস এর ক্ষতি কমায়। সাথে এটি আপনার ত্বককেও উজ্জ্বল করে তোলে।
পানির ভারসাম্য বজায় রাখতেঃ লেবু পানি লেবু পানির মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আপনার শরীরের পানি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে এটি আপনার শরীরে সঠিক হাইড্রেশন নিশ্চিত করে।
ওজন কমাতে লেবু পানির এই উপকারিতা গুলো পেতে আপনি তো অবশ্যই সঠিক নিয়মে পরিণত পরিমাণ লেবু পানি খেতে হবে। তবেই আপনি এর উপকারিতা পাবেন।
ওজন কমাতে লেবু ধনেপাতার পানীয়
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর আরেকটি কার্যকরী উপায় হল লেবু ধনে পাতার পানীয়। আমাদের শরীরে ফ্যাট বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেকেরই ওজনও বৃদ্ধি পায়। এই ফ্যাট মানবদেহের বিশেষ করে লিভার কিডনি হৃদপিণ্ডে মারাত্মক ক্ষতি করে। ফ্যাট দূর করার জন্য আমাদের মেনে চলতে হয় বিভিন্ন বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়।সেটি হোক খাবারের ক্ষেত্রে কিংবা দৈনন্দিন জীবন যাপনে। সুতরাং এই ফ্যাট দূর করতে আপনি খেতে পারেন লেবু ধনেপাতার পানি ওঠে। এবার চলুন, লেবু ধনেপাতার পানীয় আপনি কিভাবে তৈরি করবেন তা জেনে নিন--
লেবু ধনেপাতার পানীয়প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- লেবু- ১ টি
- ধনেপাতা- ৬০ গ্রাম এবং
- পানি- ১ গ্লাস পরিমাণ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ লেবু ধনেপাতার পানীয়টি তৈরি করতে আপনি প্রথমে এক গ্লাস পরিষ্কার সাধারণ তাপমাত্রায় ঠান্ডা পানি নিন। এবার ধনেপাতা গুলোকে কুচি কুচি করে কেটে নিন এবং লেবু স্লাইস করে কেটে নিন। এ পর্যায়ে পানির সাথে লেবুর রস এবং ধনেপাতা কুচি ভালো করে মিশিয়ে নিন। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার লেবু ধনেপাতার পানীয়।
এখন আপনি এটি খেতে পারেন। নিয়মিত এই লেবু ধনেপাতার পানীয় পান করলে মাত্র ৭ দিনে আপনার ওজন ৫ কেজি কমে যাবে। কি বিশ্বাস করতে পারছেন না তাইতো? তাহলে আপনি আজ এখন থেকেই লেবুত হলে পাতার পানীয় খাওয়া শুরু করুন এবং কিছুদিনের মধ্যে এর ফলাফল টের পাবেন হাতেনাতেই।
লেবু পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- লেবু পানিতে অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি আপনার দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে তাই লেবু পানি পান করার পর অবশ্যই ভালোভাবে কুলি করে আপনার মুখ পরিষ্কার করে নেবেন।
- লেবু পানি খাওয়ার ফলে অনেকের অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে লেবু পানি খাওয়া বাদ দিন।
- যাদের কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা লেবু পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এই লেবু পানি আপনার কিডনির সমস্যাটা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। আর খেতে চাইলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আমার মন্তব্য
সবশেষে লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে একটি কথাই বলবো, আপনি প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানির সাথে লেবুর রস পান করুন। এতে করে লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সাহায্য করবে। তবে একটি কথা মনে রাখবেন, লেবু একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান হলেও শুধুমাত্র লেবু পানি দিয়ে কখনোই ওজন কমানোই সম্ভব নয়।
কারণ ওজন কমাতে লেবু পানির পাশাপাশি আপনাকে সুষম খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে এই লেবু পানি, সুষম খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এই তিন উপায়য়ের মাধ্যমে আপনি আপনার ওজন অতি অল্প সময়ের মধ্যে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবেন। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই আপনি লেবু পানি খাওয়া শুরু করুন এবং আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নিন লেবু। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url