লবঙ্গের ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
লবঙ্গের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? লবঙ্গ কি দিয়ে খেলে কি হয় জানেন কি? না জেনে থাকলে আপনি কি সঠিক জায়গায় এসেছেন এবং আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
কারণ আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা,লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম,খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা,লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে কি হয় এবং পুরুষের লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন,আর দেরি না করে আজকের আর্টিকেলটি পড়ে নিন।পোস্ট সূচিপত্রঃ লবঙ্গের ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
- লবঙ্গ খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
- অতিরিক্ত লবঙ্গ খাওয়ার কিছু অপকারিতা
- লবঙ্গ পরিচিত
- লবঙ্গের কিছু ঔষধি গুনাগুন
- লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম
- লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে কি হয়?
- রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
- লবঙ্গ কখন খাওয়া উচিত
- পুরুষের লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
- প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত
- গোলমরিচ লবঙ্গ একসাথে খেলে কি হয়?
- খেজুর ও লবঙ্গ একসাথে খেলে কি হয়?
- খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
- লবঙ্গের পানি আসলে কি?
- চুলে লবঙ্গ পানি ব্যবহারের উপকারিতা
- লবঙ্গের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
- লবঙ্গ ব্যবহারের সতর্কতা
- লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
লবঙ্গ খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
লবঙ্গের উপকারিতা আমাদের কম বেশি সকলেরই জানা। লবঙ্গ একটি সুগন্ধি মসলা যা প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা এবং রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রথমেই চলুন,লবঙ্গ ক্ষেতে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন তা জেনে নিন-
আরো পড়ুনঃ রসুনের অজানা ২০টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ও অপকারিতা
- দাঁত ভালো রাখেঃ আপনি কি দাঁতের মাড়ি ব্যথায় ভুগছেন? তাহলে লবঙ্গ খেতে পারেন। কারণ লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে ইউজেনল নামক একটি উপাদান দাঁতের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। ইউজেনল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক গুন সম্পন্ন উপাদান। শুধু তাই নয়, লবঙ্গ দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন এবং তাদের অন্যান্য সমস্যা গুলির চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়।
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত লবঙ্গ খেলে এটি আপনার হজম ক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটের গ্যাস,অম্বল কমাতে সাহায্য করে। লবঙ্গ আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা,বদহজম,ডায়রিয়া ইত্যাদি কমাতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- ব্যথা কমাতেঃ একটু বয়স হলে আমাদের শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয়, মাংসপেশিতে ব্যথা হয়।আবার অনেকেই গেটের ব্যথায় ভুগতে থাকেন। এই ব্যথা দূর করতে চাইলে আপনি আজ থেকে লবঙ্গ খাওয়া শুরু করুন। কারণ লবঙ্গের এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা যেমন মাংসপেশীর ব্যথা, পিঠে বা হাড়ের ব্যথা,হাঁটুর ব্যথা,গেটের ব্যথা,মাইগ্রেন ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
- শ্বাসযন্ত্রের সুরক্ষায়ঃ লবঙ্গ আপনার শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন,কাশি এবং ঠান্ডার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি আপনার শ্বাসনালী পরিষ্কার করতেও বেশ সহায়ক।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লবঙ্গ অত্যন্ত উপকারী। কারণ লবঙ্গ আপনার রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও এটি ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ নিয়মিত লবঙ্গ খাওয়ার মাধ্যমে আপনি মরণব্যাধি ক্যান্সারের হাত থেকেও রক্ষা পেতে পারেন। লবঙ্গের এন্টি অক্সিডেন্ট গুন যা আপনার শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধ কমাতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- পেটের আলসার কমাতেঃ নিয়মিত লবঙ্গ সেবনে এটি আপনার পেটের আলসার উপশমে সহায়ক এবং পেটের শিরা গুলিকে শক্তিশালী করে তোলে।
- ডিটক্সিফিকেশনঃ আপনি নিয়মিত নিয়ম করে লবঙ্গ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং আপনার শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবেঃ লবঙ্গ সাধারণত প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে বিশেষ করে দাঁতের ব্যথা এবং মাথাব্যথার ক্ষেত্রে।
- হার্ট সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত লবঙ্গ খাওয়ার ফলে আপনার এটি রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। আপনার বিদ্যুতের ঝুটি বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
- এনার্জি বৃদ্ধিঃ আপনি আপনার শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে লবঙ্গ খেতেই পারেন। কারণ লবঙ্গ শরীরের এনার্জি পাড়ায় এবং শরীর থেকে ক্লান্তি ভাব দূর করে।
- লবঙ্গ ত্বক ভালো রাখেঃ লবঙ্গের এন্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আপনার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ এবং পিম্পল কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় লবঙ্গ আপনার ত্বকের লাবণ্য এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতেও কাজ করে।
- জ্বর কমাতেঃ লবঙ্গ লবঙ্গ জ্বর কমাতে সহায়ক এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বেশ কার্যকরী।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ যারা কোলেস্টেরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত নিয়ম করে লবঙ্গ খান। কারণ লবঙ্গ আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের স্তর কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- মেটাবলিজম বৃদ্ধিঃ আপনি কি আপনার ওজন নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। কোনভাবেই ওজন কমাতে পারছেন না। তাহলে বলব আপনি আজ থেকে লবঙ্গের ব্যবহার শুরু করুন। কেননা লবঙ্গ আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে পারে,যা কিনা ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক।
- হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখেঃ লবঙ্গে রয়েছে ফেনোলিক কম্পাউন্ড ইউজিনল এবং ইউজিনাল ডেরিভাটিভস যা আপনার শরীরে প্রবেশ করার পর বোন ডেনসিটির উন্নতি ঘটে।
- লবঙ্গ চুল ভালো রাখেঃ পানি দূষণের কারণে চুল পড়া বর্তমানে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চুল পড়া বন্ধ করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন লবঙ্গের পানি এবং লবঙ্গের তেল। কারণ লবঙ্গের তেল এবং লবঙ্গ পানি আপনার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া কমাতে সহায়ক।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত লবঙ্গ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ বালাই থেকে আপনার শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।
- বমি ভাব দূর করেঃ অনেক সময় দীর্ঘ ভ্রমণের কারণে অনেকেরই বমনের সমস্যা হয়। যাত্রাপথে আপনার এই বমি বমি ভাব দূর করতে পারে লবঙ্গ। বন্ধু ভাব দূর করতে আপনি মুখে একটি লবঙ্গ নিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার বমি বমি ভাব দূর হবে এবং মুখে সুগন্ধি তৈরি হবে।
- ভাইরাল ফিভার এর প্রকোপ কমাতেঃ লবঙ্গ থাকা ভিটামিন কে এবং ভিটামিন ই আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে আপনার শরীরে উপস্থিত সকল ভাইরাস মারা যায়। ফলে আপনার ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ কমতে খুব একটা সময় লাগে না।
- নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করেঃ অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন ধরনের পেস্ট ব্যবহার করেও কোনোভাবেই তাদের নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে পারেন না। আর এই নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের কারণে আপনাকে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। নিঃশ্বাসের এই দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি মুখে রাখুন একটি লবঙ্গ। এতে দেখবেন আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ গায়েব হয়ে গেছে।
- মানসিক স্ট্রেস কমাতেঃ আপনি কি প্রচন্ড রকমের মানসিক স্ট্রেস এবং উৎকন্ঠায় রয়েছেন? তাহলে এক্ষুনি একটু লবঙ্গ চুষে খেয়ে ফেলুন। এটা আপনার মানসিক স্ট্রেস ও উৎকণ্ঠা অনেকটাই লাঘব হবে।
- লবঙ্গ তৃষ্ণা দূর করেঃ তৃষ্ণার কারণে বারবার পানি পানের বিড়ম্বনা এড়াতে আপনি সকাল বিকাল লবঙ্গ খেতে পারেন এতে আপনার বারবার পিপাসা জনিত সমস্যা দূর হবে।
অতিরিক্ত লবঙ্গ খাওয়ার কিছু অপকারিতা
লবঙ্গের উপকারিতা জানানোর পর এবার আপনাদের জানাবো লবঙ্গের কিছু অপকারিতা সম্পর্কে। অতিরিক্ত পরিমাণে লবঙ্গ খাওয়ার ফলে আপনার কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। যেমন-
আরো পড়ুনঃ তালমাখনা খাওয়ার ৬টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
- অতিরিক্ত পরিমাণে লবঙ্গ খেলে আপনার পেটে ব্যথা গ্যাস অথবা অস্বস্তি হতে পারে। তাছাড়া লবঙ্গের মধ্যে থাকা ইথারেল তেল আপনার পেটে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ লবঙ্গ খেতে থাকলে লবঙ্গে তীব্র স্বাদ এবং এর তেল আপনার গলা জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে এটি আপনার কিডনির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে,যা কিনা কিডনি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- লবঙ্গের অতি ব্যবহার আপনার লিভারের অপুর চাপ ফেলতে পারে।কারণ,এর মধ্যে কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা আপনার লিভারের জন্য ক্ষতিকারক।
- লবঙ্গের উচ্চমাত্রা আপনার রক্তচাপকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে,যা কিনা হাইপারটেনশন বা অন্যান্য রক্তচাপ সম্পর্কিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে লবঙ্গ খেলে এটি আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।এমনকি গর্ভপাতের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে এটি আপনার রক্তের কুয়াগুলেশন কমিয়ে দিতে পারে, যা অতিরিক্ত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- কিছু কিছু মানুষের লবঙ্গের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে ফলে চুলকানি ফুলে যাওয়া অন্যান্য এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- লবঙ্গ ইনসুলিন এর কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে আপনি খান।
- অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে আপনার মুখের টিস্যুতে প্রদাহ হতে পারে এবং এটি দাঁতের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ঠিক এই সমস্ত কারণে লবঙ্গ বা অন্য যেকোনো মসলা খাওয়ার সময় সঠিক মাত্রায় খাওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত খাওয়া একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।
লবঙ্গ পরিচিতি
লবঙ্গ একটি সুগন্ধি মসলা যা সাধারণত রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।এর বৈজ্ঞানিক নাম "Syzygium" aromaticum এবং ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় "Clove"। লবঙ্গ গাছ একটি চিরসবুজ বৃক্ষ যা সাধারণত ৮-১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই গাছের মূলত ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে তা লবঙ্গ হিসেবে ব্যবহারিত হয়। ইউজেনোল নামক যৌগের কারণে গাছটি সাধারণত মিষ্টি গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
লবঙ্গ গাছের পাতা সবুজ,লম্বা ও তীক্ষ্ণ প্রান্তযুক্ত এবং ফুলগুলো ছোট ও সাদা বর্ণের হয়। সাধারণত ভারত,ইন্দোনেশিয়া এবং মৌরিশাসের মত উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এই গাছের প্রচুর চাষ হয়। লবঙ্গ রান্নার পাশাপাশি সেই প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি গুণের জন্য বিভিন্ন বেদনা নাশক এবং জীবাণু নাশক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে
লবঙ্গের কিছু ঔষধি গুনাগুন
লবঙ্গ বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুনের জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত যা প্রাচীনকাল থেকে নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এবার চলুন লবঙ্গের কি কি ঔষধি গুনাগুন রয়েছে তা জেনে নিন-
আরো পড়ুনঃ সূর্যমুখী বীজের ২০টি কার্যকরী উপকারিতা
- প্রথমেই বলি, সর্দি,কাশি ও ঠান্ডা প্রতিরোধে লবঙ্গকে মহৌষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আপনি লবঙ্গ চিবিয়ে এর রস খেলে অথবা মুখে রেখে চুষলে আপনার ঠান্ডা লাগা,এজমা, গলা ফুলে ওঠা,শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি প্রতিরোধে ভালো ফল পাবেন।
- সাইনোসাইটিস রোগীদের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় লবঙ্গ। কারণ লবঙ্গে বিশেষ একটি উপাদান ইগুয়েনাল সাইনাসের কষ্ট দূর করে।
- ব্রনের চিকিৎসায় লবঙ্গের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। লবঙ্গের পেস্ট ব্রনের ওপর ব্যবহার করলে ব্রনের দাগ দূর হয়।
- অনেকেই আছেন যারা খাবার খেতে রুচি পান না। খাবারের প্রতি অরুচি দেখা দিলে আপনি লবঙ্গ গুঁড়ো করে সকালে খালি পেটে এবং দুপুরে খাবারের পরে খান।এতে আপনার খাবারের প্রতি ফিরে আসবে।
- লবঙ্গের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ আপনাকে কলেরা এবং যকৃত সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।
- ঠান্ডাই আপনার শরীরের কোন অংশ হঠাৎ করে ফুলে উঠলে আপনি লবঙ্গ খেতে পারেন এতে শরীরের ফোলা ভাব দূর হবে।
- লবঙ্গের চা আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে ভালো কাজ করে।এটি পাকস্থলীর কার্যক্রমকে উন্নত করে এবং স্বাভাবিক মলত্যাগের সহায়তা করে।
লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম
লবঙ্গের উপকারিতা পেতে আপনাকে সঠিক নিয়মে এবং সঠিক মাত্রায় লবঙ্গ খেতে হবে। লবঙ্গ খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে যা হয়তো অনেকেই জানেন না। সম্মানিত পাঠক এবার চলুন আপনি কিভাবে কোন উপায়ে লবঙ্গ খেতে পারবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন --
- লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়াঃ আপনি লবঙ্গ পুরো চিবিয়ে খেতে পারবেন। এতে করে লবঙ্গের সকল উপকারী উপাদান যেমন- ইউজেনল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরে ভেতরে প্রবাহিত হয়।
- লবঙ্গ চা তৈরি করেঃ আপনি এক কাপ পানিতে ২-৩ টি লবঙ্গ ফেলে দিন এবং ৫-১০ মিনিট ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এবার এর সাথে স্বাদমতো চিনি বা মধু যোগ করে খেতে পারেন।এই লবঙ্গটা আপনার পাকস্থলী সমস্যা এবং সহায়তা করে।
- লবঙ্গ পাউডার হিসেবেঃ লবঙ্গের শুকনো কুয়া গুঁড়ো করে এটিকে আপনি লবঙ্গ পাউডার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। এই লবঙ্গ পাউডার আপনি খাবারের সাথে অথবা পানির সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
- ফলের সাথে মিশিয়েঃ বিভিন্ন ফ্রুট সালাদের সাথে মিশে আপনি লবঙ্গ খেতে পারেন এতে লবঙ্গের গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে এবং খাবারের স্বাদও বাড়ে।
- গরম পানির সাথেঃ আপনি শুধু গরম পানির সাথে লবঙ্গ ফুটিয়েও খেতে পারেন।
- অন্যান্য খাবারের সাথেঃ লবঙ্গ আপনি অন্যান্য খাবার যেমন সালাদ,তরকারি, বা স্মুদির সাথে ব্যবহার করেও খেতে পারেন।
- লবঙ্গ তেল হিসেবেঃ লবঙ্গ তেল আপনি বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন।যেমন- চুলের যত্নে দাঁতের ব্যথায় এবং আপনার ত্বক পরিস্কার করতে।
- লবঙ্গ পানির ব্যবহারঃ লবঙ্গ পানি সাধারণত চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়। লবঙ্গ পানির ব্যবহারে এটি আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়, চুলের গোড়া মজবুত ও শক্তিশালী হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে কি হয়?
লবঙ্গের উপকারিতা পেতে আপনি লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।কারণ,লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে তা আপনার শরীরে বিভিন্ন উপকারে আসে। যেমন ধরুন আপনি যদি লবঙ্গ চিবিয়ে খান তাহলে লবঙ্গের ইউজেনল উপাদানটি আপনার শরীরে সরাসরি প্রবাহিত হতে পারে। আর এই ইউজেনল প্রাকৃতিক ভাবে আপনার শরীরে ব্যথা নাশক,জীবানু নাশক এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী প্রদান করে।
চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে লবঙ্গের এন্টিঅক্সিডেন্ট সহজেই আপনার হজমতন্ত্রের প্রবাহিত হয় যা শরীরের ফ্রি রেডিকেলস প্রতিহত করে এবং আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। শুধু তাই নয়,লবঙ্গ নিয়মিত চিবিয়ে খেলে এটি আপনার দাঁতের ব্যথা,মাথা ব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক ব্যথায় উপশম দেয়।
এছাড়া লবঙ্গ জীবাণু আপনার শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ঠান্ডা,কাশি ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। তবে,অতিরিক্ত লবঙ্গ খাওয়ার ফলে আপনার পেটের অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাই সঠিক পরিমাণে নিয়ম মেনে লবঙ্গ চিবিয়ে খান। লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে কি হয় আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
রাতে লবঙ্গ খাওয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে,যা আপনি রাতে লবঙ্গ খাওয়ার মাধ্যমে পেতে পারেন। যেমন-
- রাতে লবঙ্গ খেলে এটি আপনার উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ কমায়,ফলে রাতের ঘুম ভালো হয়। কারণ লবঙ্গ তে রয়েছে ইউজেনল নামক একটি উপাদান যা আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে,যা ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
- রাতে লবঙ্গ খেলে এটি আপনার শরীরের হজম প্রক্রিয়াকে সহজেতর গড়ে তোলে এবং পরদিন সকালে হজমের সমস্যা কম হয়। তাছাড়া,এটি আপনার পাকস্থলীর গ্যাস ব্লটিং এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সাহায্য করে।
- আপনি যদি রাতে লবঙ্গ খান তাহলে লবঙ্গের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক গুণ রাতের বেলায় আপনার যেকোনো ধরনের শারীরিক ব্যাথা,পেট ব্যথা,মাথা ব্যথা ইত্যাদির উপশম করে।
- লবঙ্গ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি ডেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে। বিশেষ করে, রাতে লবঙ্গ খেলে এটি আপনার শরীরকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে।
- লবঙ্গের এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং জীবাণুনাশক গুণ আপনার শ্বাসযন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি ঠান্ডা,কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়তা করে যা রাতে খেলে আপনাকে প্রশান্তি দেয়।
- আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন রাতে এক দুইটি করে লবঙ্গ খান। এতে যেমন আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে তেমনি রাতের বেলা আপনাকে ফুরফুরে,সতেজ রাখবে।
- রাতে লবঙ্গ খেলে এটি শরীরের রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে, যা কিনা আপনার সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে পারে।
লবঙ্গ কখন খাওয়া উচিত
লবঙ্গের উপকারিতা পেতে আপনাকে সঠিক সময়ে লবঙ্গ খেতে হবে। এবার চলুন আপনি লবঙ্গ কোন সময় কখন খাবেন সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-
- সকাল বেলাঃ লবঙ্গ খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল সকাল বেলা খালি পেটে। কারণ সকালে লবঙ্গ খাওয়ার ফলে সারাদিনের জন্য আপনার হজম প্রক্রিয়া সুগম হয় এবং গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা ও কম হয়।
- দুপুর বেলাঃ যদি সকালে কোন কারনে লবঙ্গ খেতে না পারেন,সেক্ষেত্রে আপনি দুপুরে খাওয়ার পরেও লবঙ্গ খেতে পারেন। দুপুরে খাওয়ার পর লবঙ্গ খেলে এটি আপনার খাবারের হজমে সহায়তা করে।
- রাতের বেলাঃ আপনি চাইলে রাতেও লবঙ্গ খেতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে লবঙ্গ খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।যেমন ধরুন,রাতে লবঙ্গ খেলে এটি আপনার মানসিক চাপ কমায়, মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে, সারা রাতের জন্য হজম ক্রিয়া উন্নত হয় এবং ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক হয়।
- খাবারের পরেঃ যেকোনো খাবার খাওয়ার পরে আপনি লবঙ্গ খেতে পারেন। কারণ খাওয়ার পর লবঙ্গ খেলে এতে আপনার পেটের অস্বস্তি দূর হবে এবং পাকস্থলীর এসিডিটিও কমাতে সাহায্য করবে।
- শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হলেঃ আপনার শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হলে বা সর্দি-কাশির প্রকোপ বেড়ে গেলে আপনি সকাল বিকালে লবঙ্গ চা খেতে পারেন।
উপরে উক্ত এই সময় গুলো ছাড়াও আপনি সারাদিনের যেকোনো সময় লবঙ্গ খেতে পারেন। কারণ, প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য দিনে যেকোনো সময় লবঙ্গ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
পুরুষের লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
পুরুষের জন্য লবঙ্গ খাওয়ার বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
- পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যঃ লবঙ্গ প্রাকৃতিকভাবে পুরুষের যৌন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।কারণ,এটি টেস্টেস্টেরন হরমোনের স্তর বাড়াতে সাহায্য করে ,যা যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও সক্ষম।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত লবঙ্গ খেলে এটি পাকস্থলির হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে।তাছাড়া, এটি পাকস্থলীর গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সহায়তা করে। আর ভালো হজম শক্তি যে কোন পুরুষের স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো।
- শক্তি ও সতেজতা বৃদ্ধিঃ লবঙ্গের এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ যা আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে পারে। শুধু তাই নয়,নিয়মিত লবঙ্গ খেলে এটি পুরুষের শারীরিক ও মানসিক সতেজতা বজায় রাখে।
- ব্যথার উপশমঃ নিয়মিত লবঙ্গ খেলে একজন পুরুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা যেমন মাথাব্যথা,মাসল পেইন ইত্যাদি উপশম হতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিয়মিত লবঙ্গ খাওয়ার ফলে এটি শুধু পুরুষ নয় বরং নারী পুরুষ উভয়ের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ লবঙ্গ তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সক্ষম।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেঃ হৃদ রোগের ঝুকি কমাতে আপনি নিয়মিত লবঙ্গ খেতেই পারেন। নিয়মিত সঠিক পরিমাণে লবঙ্গ খাওয়ার মাধ্যমে একজন পুরুষ তার হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত
লবঙ্গের এতসব উপকারিতা জানার পরে,আপনার মনে এখন প্রশ্ন আসতেই পারে প্রতিদিন কয়টি বা কি পরিমাণ লবঙ্গ খাওয়া উচিত। তাহলে জেনে রাখুন,একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১-২ টি লবঙ্গ খাওয়াই যথেষ্ট। তাছাড়া প্রতিদিন লবঙ্গ খাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য এবং প্রয়োজনীয়তার উপর। প্রতিদিন লবঙ্গ খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান এবং
নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল প্রবেশ করে যা আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত লবঙ্গ খাওয়া থেকেও বিরত থাকা উচিত।কারণ, অতিরিক্ত মাত্রায় লবঙ্গ খেলে এর ইউজেনল উপাদান আপনার কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করতে পারে।আবার, যাদের অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রাইটিস,এলার্জি বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও প্রতিদিন ১-২ টি লবঙ্গ খাওয়াই উত্তম। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন
গোলমরিচ লবঙ্গ একসাথে খেলে কি হয়?
শুধু লবঙ্গ নয় বরং লবঙ্গ এবং গোলমরিচ একসাথে খাওয়াও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। লবঙ্গ ও গোলমরিচ একসাথে খেলে আপনি বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন। যেমন-
- গোল মরিচ এবং লবঙ্গ উভয়ে এন্টি ইনফ্লামেটরি গুনাগুণ সম্পন্ন। ফলে লবঙ্গ এবং গোলমরিচ একসাথে খেলে এটি আপনার শরীরের যে কোন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
- গোলমরি সাধারণত হজম ক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি যদি গোলমরিচ একসাথে লবঙ্গ একসাথে খান সেক্ষেত্রে এই দুটি উপাদানই আপনার পাচনতন্ত্রের বিপাকক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
- লবঙ্গ এবং গোলমরিচ উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় একসাথে খেলে এটি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিবে।
- গোলমরিচের পিপেরিন উপাদান শরীরের অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলির শোষণ ক্ষমতা উন্নত করতে পারে। গোলমরিচ এবং লবঙ্গ একসাথে খেলে এটি আপনার শরীরের পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা আরও দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে।
পরিমাণ ও ব্যবহার
- আপনি যদি গোলমরিচ এবং লবঙ্গ একসাথে খেতে চান, তাহলে ১-২ টি লবঙ্গ এবং একটি ছোট চা চামচের এক চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো খেতে পারেন।
- তাছাড়া গোলমরিচ ও লবঙ্গ আপনি চায়ের সাথে মসলা হিসেবে বিভিন্ন রেসিপির সাথে ব্যবহার করেও খেতে পারেন।
গোল মরিচ এবং লবঙ্গ একসাথে খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- আপনি গোলমরিচ এবং লবঙ্গ কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না। অর্থাৎ প্রতিদিন ১-২টি লবঙ্গ এবং এক চা চামচ গোল মরিচের গুঁড়ো এর বেশি খাবেন না।
- অতিরিক্ত পরিমাণে গোল মরিচ এবং লবঙ্গ খেলে আপনার পেটের অস্বস্তি গ্যাস্ট্রাইটিস বা অন্যান্য পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
খেজুর ও লবঙ্গ একসাথে খেলে কি হয়?
লবঙ্গ ও খেজুর একসাথে খেলেও আপনি বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন। অনেকেই আছেন যারা লবঙ্গ এবং খেজুর একসাথে খেতে পছন্দ করেন। লবঙ্গ ও খেজুর একসাথে খেলে আপনার যা যা উপকার হতে পারে-
- শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধিঃ লবঙ্গ ওকে জোর একসাথে খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলির সমন্বয়ে ঘটতে পারে। কারণ খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন,মিনারেল এবং ফাইবার থাকে যা লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আন্টি ইনফ্লামেটরি গুণের সাথে মিশে আপনার শরীরের সামগ্রিক পুষ্টি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- হজম সহজ করেঃ লবঙ্গ ও খেজুর একসাথে খাওয়ার ফলে খেজুরের উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট এবং লবঙ্গের হজম শক্তি বাড়ানোর বৈশিষ্ট্য এই দুটি একত্রিত হয়ে আপনার হজম প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করে। যার ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ লবঙ্গের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খেজুরের ভিটামিন সি এই দুই উপাদান একসাথে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেয়।
- মিষ্টতা এবং খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিঃ খেজুরের প্রাকৃতিক মিষ্টতাএবং লবঙ্গের সুগন্ধি এই দুইয়ের সংমিশ্রনে খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ পরিমাণ বেড়ে যায়। এটি আপনার খাবার কে আরো সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর করে তোলে।
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করেঃ খেজুরি থাকা প্রাকৃতিক সুগার এবং লবঙ্গের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট একত্রে আপনার শরীরের শক্তি এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে। শুধু তাই নয়,এটি আপনার দৈনন্দিন কাজের জন্যও অতিরিক্ত শক্তি যোগাতে পারে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ খেজুর এবং লবঙ্গ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আজ থেকেই খেজুর এবং লবঙ্গ খাওয়া শুরু করুন। কারণ খেজুরের পটাশিয়াম এবং লবঙ্গের এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
উপরিউক্ত এই উপকারিতা গুলো পেতে আপনি খেজুর ও লবঙ্গ একসাথে খেতেই পারেন। তবে অবশ্যই পরিমাণমতো খাবেন,অতিরিক্ত খাবেন না।
খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
লবঙ্গ থেকে সর্বাধিক উপকারিতা পেতে আপনি প্রতিদিন খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খালি পেটে লবঙ্গ খাবার ফলে আপনি যে সব উপকারিতা পাবেন সেগুলো হল-
- খালি পেটে লবঙ্গ খেলে এটি আপনার পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ লবঙ্গে থাকা ইউজেনল আপনার হজম এনজাইনের ক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে,যা খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।
- আপনি যদি খালি পেটে লবঙ্গ খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ সকল প্রদাহ কমতে শুরু করবে। কারণ লবঙ্গের এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার ফলে এটি আপনাকে সারা দিনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি সরবরাহ করে।
- খালি পেটে লবঙ্গ খেলে এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করতে পারে। কারণ লবঙ্গে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীর থেকে সকল টক্সিন অপসারণের সাহায্য করে। তাছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ফ্রি রেডিকেলস এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও আপনাকে রক্ষা করে।
- খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়া আপনার গ্যাস্ট্রিক বা মাথা ব্যথার মত সমস্যার উপশম ঘটাতে পারে এবং সেই সাথে শরীরের অন্যান্য ব্যথাও কমাতে সাহায্য করে।
লবঙ্গের পানি আসলে কি?
লবঙ্গের পানি হল লবঙ্গ গাছের ফুলের বাডস থেকে প্রস্তুতকৃত একটি লিকুইড উপাদান। লবঙ্গের পানি তৈরি করতে কিছু গোটা লবঙ্গ বা লবঙ্গ পাউডার গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ছেকে নেওয়া হয়। লবঙ্গের পানি এন্টি ইনফ্লামেটরি,অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন সম্পূর্ণ। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে,হজমশক্তি উন্নত করতে,গ্যাস্ট্রাইটিস,পেটের ব্যথা এবং দাঁতের সমস্যা দূর করতেও এই পানি বেশ উপকারী।
শুধু তাই নয়, এই লবঙ্গ পানি আপনার মাথার ত্বক পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে আপনার চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। তাছাড়া, লবঙ্গের এই পানিতে থাকে ফেনলিক এবং ফেভনয়েড যা এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তবে,লবঙ্গের পানির অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি আপনার স্নায়ু বা পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
চুলে লবঙ্গ পানি ব্যবহারের উপকারিতা
সাধারণত বয়স জনিত কারণে,মাথার ত্বকে সংক্রমণ এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারণে আমাদের মাথার চুলের বৃদ্ধি অনেক সময় কমে আসে। এই সমস্যা থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিতে পারে লবঙ্গ পানি। কারণ লবঙ্গ পানিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান যা আপনার চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি যোগায়। এবার চলুন চুলে লবঙ্গ পানি ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন--
- চুল লম্বা করেঃ লম্বা চুল কে না চাই বলুন তো! আপনিও কি আপনার চুল প্রাকৃতিক উপায়ে লম্বা করতে চান। তাহলে আজ থেকে আপনি আপনার চুলে লবঙ্গ পানির ব্যবহার শুরু করুন। লবঙ্গের পানি ব্যবহার করলে এটি চুলকে লম্বা করতে সাহায্য করে।
- চুল পড়া রোধ করেঃ বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, লবঙ্গ পানিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা এন্টি হেয়ার লস হিসেবে কাজ করে। ফলে,আপনার চুল পড়া রোধ হয়।
- অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেঃ সাধারণত দুশ্চিন্তা ধূমপান বায়ুদূষণ ইত্যাদি কারণে আপনার শরীরে ফ্রি রেডিকেল তৈরি হতে পারে। এটিও আপনার চুল পড়ার একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত চুলে লবঙ্গ পানি ব্যবহার করলে,এটি আপনার অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
চুলে যেভাবে ব্যবহার করবেন লবঙ্গ পানি
চুলে লবঙ্গ পানি ব্যবহারের সময় ৩ ৪ চামচ লবঙ্গের পানির সাথে আপনি ২ টেবিল চামচ রিঠার পাউডার যোগ করুন। এবার এই দুটি উপাদান খুব ভালো করে মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনার চুল এবং স্ক্যাল্পে লাগান। চুলে লাগানোর পর অন্তত ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনি এই লবঙ্গ পানি সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বা ব্যবহার করলে আশা করছি ভালো ফলাফল পাবেন।
লবঙ্গের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
লবঙ্গ প্রচুর পুষ্টিগণের ভরপুর একটি সুগন্ধি মসলা। এবার চলুন লবঙ্গে পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দেই। প্রতি ১০০ গ্রাম লবঙ্গতে রয়েছে নিম্নলিখিত উপাদান--
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরি | ২৭৪ ক্যালরি |
প্রোটিন | ৬ গ্রাম |
মোট ফ্যাট | ১৫ গ্রাম |
সাতচুরাতেদ ফ্যাট | ১ গ্রাম |
অসম্পৃক্ত ফ্যাট | ১১ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেড | ৬৫ গ্রাম |
ফাইবার | ৩৩ গ্রাম |
শর্করা | ৪ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ১.৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ০.১৫ মাইক্রোগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৬৩২ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১১.৮ মিলিগ্রাম |
মাঙ্গানিজ | ৬০.৮ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ২৫৯ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ২০ মিলিগ্রাম |
এই পুষ্টি উৎপাদন গুলির লবঙ্গ কে একটি মূল্যবান মসকায় পরিণত করেছে। যার শুধুমাত্র মসলা হিসেবে নয় বরং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী।
লবঙ্গ ব্যবহারের সতর্কতা
লবঙ্গ খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে যাদের কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তাদের এই সতর্কতা গুলো মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। যেমন-
- গর্ভবতী মহিলাদের লবঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।কেননা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লবঙ্গ ব্যবহার আপনার প্রসবের সময় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তারা পরিমিত পরিমাণে লবঙ্গ ব্যবহার করুন কারণ লবঙ্গ আপনার ইনসুলিনের কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে এবং রক্তে শর্করার স্তর প্রভাবিত করতে পারে।
- আপনি যদি এন্টিকুয়াগুলেন্ট ঔষধ ব্যবহার করেন যেমন- ওয়ারফারিন তাহলে লবঙ্গের ব্যবহার করা উচিত। কেননা এটি আপনার ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- যাদের লিভার এবং কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের লবঙ্গ এড়িয়ে চলাটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
- আপনার অতিরিক্ত গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা থাকলে লবঙ্গে পরিমাণ কমিয়ে ব্যবহার করুন।
- শিশুদের শরীর বড়দের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল হতে পারে। অতএব,শিশুদের জন্য লবঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- যদি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আপনার কোন সার্জারি করার পরিকল্পনা থাকে সেক্ষেত্রে লবঙ্গ ব্যবহার না করাটাই ভালো। কারণ লবঙ্গ রক্তপাতের কিছু কি বাড়াতে পারে।
এই সতর্কতা গুলো মেনে লবঙ্গ ব্যবহার করলে তা আপনার জন্যই ভালো হবে।
লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি এতক্ষণে নিশ্চয়ই বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন আজকের এই আর্টিকেল থেকে। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে বোধগম্য হয়েছে। লবঙ্গ এমন একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মসলা যা শুধু মসলা হিসেবে নয় বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
শরীরের যত্নের পাশাপাশি রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিতেও লবঙ্গের জুড়ি মেলা ভার। লবঙ্গের সর্বাধিক উপকারিতা পেতে আপনি সঠিক নিয়ম মেনে এবং পরিমিত পরিমাণে আজ থেকেই লবঙ্গ খাওয়া শুরু করুন। ভালো থাকুন সুস্থ,থাকুন এবং আমাদের www.pinpoimtmax.com ওয়েবসাইট এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url