মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি কি ইচ্ছুক? প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয় জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
কারণ, আজকের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জানতে পারবেন মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সেই সাথে ত্বকে মসুর ডালের উপকারিতা সম্পর্কে।। তাহলে চলুন মসুরের ডাল সম্পর্কিত আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
- মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা
- মসুর ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা
- মসুর ডালের অপকারিতা
- প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয়
- মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয়
- মসুর ডাল খেলে কি এলার্জি হয়
- মসুর ডাল খেলে কি গ্যাস হয়
- রাতে ডাল খেলে কি হয়
- মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
- চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক
- আলু ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক
- ব্রণের দাগ দূর করতে মসুর ডাল
- মসুর ডালে কি কি উপাদান আছে
- লেখকের বক্তব্য
মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা
মসুর ডাল খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। মসুর ডাল একটি পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান যা প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানে ভরপুর। অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত ডাল খান কিন্তু মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। আজকে আমদের এই পোস্ট থেকে তা জানতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
আপনাদের সুবিধার্থেই আজকের মসুর ডাল সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি লিখা হয়েছে। এই আর্টিকেল থেকে আপনি মসুর ডালের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক এবং উপকারি দিক জেনে যাবেন।সঙ্গে আরো জানতে পারবেন তকের যত্নে মসুর ডালের উপকারিতা। তাহলে চলুন এবার আপনাকে জানিয়ে দিই এই ডালের নানান উপকারি ও অপকারি দিকগুলো।
মসুর ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা
মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। মসুর ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ও সুস্বাস্থ্য খাদ্য উপাদান। যা শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় বরং সারা বিশ্বে বিভিন্নভাবে মশুর ডাল খাবার চল রয়েছে। আজকে আলোচনার শুরুতেই আপনাকে জানিয়ে দিব মসুর ডালের উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন, প্রথমে জেনে নিন মসুর ডাল খেলে আপনি কি কি উপকার পেতে পারেন-
আরো পড়ুনঃ গরুর দুধের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
- প্রোটিনের ভালো উৎসঃ মসুর ডাল মসুর ডাল প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস যা আপনার বেশি গঠন ও মেরামতে বিশেষভাবে সহায়ক। এটি বিশেষ করে শাকাহারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাদের প্রোটিনের মূল উৎস হিসেবে কাজ করে এই মসুর ডাল।
- ফাইবার সমৃদ্ধ মসুর ডালঃ মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফলে মসুর ডাল খেলে এটি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। তাছাড়া এই ডালের ফাইবার আপনার দীর্ঘ সময় পেট পরিপূর্ণ রাখতে সাহায্য করে, যা আপনার অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমাতে পারে।
- আয়রনের উৎস হিসেবে মসুর ডালঃ আপনি কি অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন? তাহলে বলব আজ থেকে মসুর ডাল খাওয়া শুরু করুন। কারণ মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা আপনার শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করতে পারে। তাছাড়া নিয়মিত মসুর ডাল খেলে এটি আপনার শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে এবং শক্তি বাড়ায়।
- ভিটামিন ও খনিজ এর উৎসঃ মসুর ডালে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। বিশেষ করে ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন বি৯, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাশিয়াম রয়েছে। ফলে মসুর ডাল খেলে এর ভিটামিন বি৬ আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, ভিটামিন বি৯ আপনার শরীরের ডিএনএ তৈরিতে সাহায্য করে এবং ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম এই খনিজ গুলো আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করেঃ নিয়মিত বসুর ডাল খাওয়ার ফলে মসুর ডালে থাকা ফাইবার পটাশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আপনার। তাছাড়া, এই ডালে থাকা পলিফেনল এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আপনার হৃদপিণ্ডের জন্য ভীষণই উপকারী।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ মসুর ডাল আপনার শরীরের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলতে মসুর ডাল বেশ কার্যকরী। কারণ মসুর ডালে কম ক্যালরি এবং উচু ফাইবার থাকার কারণে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর তাই আপনি ওজন কমাতে ভাতের পরিবর্তে বেশি করে ডাল খান।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ মসুর ডালে গ্লাইসেমিক কিনতে কম থাকে যার ফলে এটি হঠাৎ করেই আপনার রক্তে শর্করার স্তর বাড়িয়ে দেয় না। সুতরাং যারা ডাইবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য মসুর ডাল অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এটি আপনার রক্তের শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ মসুর ডালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা আপনার শরীরের কোষকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে। যার ফলস্বরূপ এটি আপনার বয়সজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
- গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ মসুর ডাল মসুর ডালে একসাথে আয়রন ও ফলে দুটি উপাদান পাওয়া যায়। আর এই দুটি উপাদানই গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের জন্য অতি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে গর্ভকালীন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এই মসুরের ডাল।
- রক্তের কোলেস্টেরল কমায়ঃ মসুর ডালে রয়েছে উচ্চ মাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার, যা আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভালো কাজ করে। ফলে নিয়মিত মসুর ডাল খেলে এটি আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আপনার ধমনীকে পরিষ্কার রাখে।
- বার্ধক্যের ছাপ কমাতে মসুর ডালঃ আপনার চেহারা থেকে বার্ধক্যের ছাপ কমাতে আজ থেকেই মসুর ডাল খাওয়া শুরু করুন। কারণ, মসুর ডালে রয়েছে অ্যান্টি এজিং উপাদান যা আপনার বয়স ধরে রাখতে কাজ করে।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ মসুর ডাল আপনার চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদদের মতে, মসুর ডাল খেলে চোখের যাবতীয় সমস্যা দূর হয় এবং সেইসাথে দৃষ্টিশক্তিও বাড়ে।
- ত্বকের যত্নে মসুর ডালঃ মসুর ডাল আপনার ত্বকও ভালো রাখে। নিয়মিত মসুর ডাল খেলে এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ভেতর থেকে ফুটিয়ে তোলে। তাছাড়া মসুর ডালের বিভিন্ন ফেসপ্যাক রয়েছে যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- দাঁত ভালো রাখেঃ মসুর ডাল দাঁতের জন্য উপকারী। রোজ মসুর ডাল খাওয়ার ফলে এটি আপনার দাঁতকে গোড়া থেকে মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলে। ফলে দাঁতের ক্ষয় কম হয় এবং সহজে দাগ পড়েও না।
- হাড় মজবুত করেঃ হাড়ের জোর বাড়াতে এবং শরীরে বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে আপনি মসুর ডাল খেতে পারেন। বিশেষ করে যাদের আর্থাইটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই ডাল বেশ উপকারী।
মসুর ডালের অপকারিতা
মসুর ডালের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। যেমন-
আরো পড়ুনঃ লাল শাকের কার্যকরী ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
- অতিরিক্ত পরিমাণে মসুর ডাল খেলে আপনার পেটে গ্যাস এবং ফোলা ভাব হতে পারে। কারণ এই ডালের উচ্চফাইবার অনেকের পেটে হজমের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
- মসুর ডালে যেহেতু পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তাই অনেক বেশি প্রোটিন খাওয়া আপনার কিডনি ও লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে প্রোটিন যুক্ত খাবার খান সেক্ষেত্রে আপনার কিডনিজনিত সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে। আর অতিরিক্ত পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণ করলে আপনার শরীরে ভিটামিন বি১২ এর অভাব হতে পারে, যা আপনার স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত পরিমাণে মসুর ডাল খেলে আপনার অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এলার্জির লক্ষণ হিসেবে শরীরে লালচে, দাগ চুলকানি ইত্যাদি হতে পারে।
মসুর ডালের উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটি দিকই রয়েছে। সুতরাং মসুর ডালের ক্ষতিকর দিক এড়াতে আপনি মাত্রাতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে মসুর ডাল খান।
প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয়
আপনারা অনেকেই জানতে চান প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয়। প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হতে পারে তা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি জেনে যাবেন। প্রতিদিন মসুর ডাল খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ, মসুর ডালে যে প্রোটিন রয়েছে তা আপনার শরীরের পেশী গঠনে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে।
এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যে আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাছাড়া মসুর ডালে আয়রন ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ফলে প্রতিদিন ওষুধ ডাল খেলে এটি আপনাকে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া থেকেও দূরে রাখতে পারে।
আবার যারা ওজন কমাতে চান তারা এই কম ক্যালরি ও কম চর্বিযুক্ত মসুরের ডাল প্রতিদিন নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে খেতে পারেন। কারণ নিয়মিত মসুর ডাল খেলে এটি আপনার ওজন কমাতে কাজ করবে। প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয় আশা করছি এর উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন।
মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয়
মসুর ডালে যেহেতু কম ক্যালরি এবং কম ফ্যাট থাকে সেহেতু মসুর ডাল খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বললেই চলে। বরং মসুর ডাল প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং খাবারের প্রতি অতিরিক্ত চাহিদা কমায়। এতে করে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়।
মনে রাখবেন, ওজন বৃদ্ধির জন্য মূলত দায়ী অধিক ক্যালোরি গ্রহণ এবং অনিয়মিত জীবনযাপন।শুধু মাত্র মসুর ডাল খেলেই যে মোটা হবেন বা ওজন বাড়বে এই ধারণা একেবারেই ভুল। তবে আপনি যদি মসুর ডালকেই প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন এবং আপনার সামগ্রিক খাদ্যাভাসে ভারসাম্য না রাখেন সে ক্ষেত্রে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
আর তাই আপনি মসুর ডালকে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস হিসেবে আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন এবং সেই সাথে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করুন।আর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন এতে করে মসুর ডাল খেলেও আপনার মোটা হওয়ার কোন ঝুঁকি থাকবে না। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
মসুর ডাল খেলে কি এলার্জি হয়
মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি।মসুর ডালের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কারণ মসুর ডাল খেলে অনেকেরই এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। আর এলার্জির উপসর্গ হিসেবে আপনার পেটে ব্যথা, পেটে গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া,ত্বকে চুলকানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
এমনকি মসুর ডাল অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনার এনাফিলাক্সিস এর মত গুরুতর এলার্জিক প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে, যদিও এটি খুবই বিরল। আপনি যদি মসুর ডাল খাওয়ার পরে এলার্জির প্রতীকটা বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
মসুর ডাল খেলে কি গ্যাস হয়
মসুর ডালে ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের শর্করা যেমন- রাফিনোজ এবং স্ট্যাচিওজ থাকে।এই উপাদানগুলো অনেক সময় আপনার পেটের হজম ক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। এই শর্করাগুলি আপনার অন্ত্রের প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙ্গে গেলে অনেক সময় গ্যাস উৎপন্ন হয়।এতে করে আপনার পেটে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। দতাছাড়া মসুর ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং শর্করা থাকায় অনেকের পেটে তা হজম হতে চায় না।
যার ফলস্বরূপ মসুর ডাল খেলে অনেকেই গ্যাসের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এর জন্য মসুর ডাল রান্নার আগে খুব ভালো করে ধুয়ে নেবেন এবং সেদ্ধ করার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে সেদ্ধ করবেন। সম্মানিত পাঠক, সঠিক নিয়মে মসুর ডাল রান্না এবং এই ডাল খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার মাধ্যমে আপনি গ্যাসের তীব্রতা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবেন।
রাতে ডাল খেলে কি হয়
রাতে মসুর ডাল খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন রাতে মসুর ডাল খেলে আপনি কি কি উপকার ও অপকার পাবেন সে সম্পর্কে জানুন-
- রাতে মসুর ডাল খেলে মসুর ডালের প্রোটিন,ফাইবার ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সারা রাত ভর সরবরাহ করতে থাকে। যা আপনার সামগ্রিক সুস্থতার জন্য জরুরী।
- রাতে অতিরিক্ত পরিমাণে মসুর ডাল খেলে অনেকের ক্ষেত্রে একটি পেট ফাঁপা, বদ হজম এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।কারণ মসুর ডালে রয়েছে ফাইবার এবং শর্করা যা আপনার অন্ত্রে গ্যাস উৎপন্ন করতে সক্ষম।
- মসুর ডাল স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী হলেও রাতে মসুর ডাল খাওয়ার ফলে, অনেকেই পেট ভারী অনুভব করেন এতে করে আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
- মসুর ডালে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। ফলে ডাল খেলে এটি আপনার পেটে ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রাতে আপনার রক্তের শর্করা স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সুতরাং রাতে ডাল খেলে আপনার রক্তে অতিরিক্ত শর্করা বৃদ্ধির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেতে পারে।
- মসুর ডাল প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। বিশেষ করে যারা ভেজিটেরিয়ান আছেন তাদের জন্য এই মসুর ডাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের শরীরের টিস্যু পুনঃনির্মাণ বিশেষভাবে সাহায্য করে।
রাতে মসুর ডাল খেলে আপনি এই উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো পেতে পারেন। তবে আপনি রাতে মসুর ডাল কি পরিমাণ খাবেন তা নির্ভর করবে একান্তই আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর।
মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
মসুর ডাল আপনার জন্য ত্বক ফর্সা করার একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় হতে পারে। মসুর ডালে এমন কিছু প্রাকৃতিক উজ্জ্বলিকরণ গুণ থাকে যা আপনার ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে কাজ করে। মসুর ডাল দিয়ে ত্বক ফর্সা করার জন্য আপনি প্রথমে ২ টেবিল চামচ মসুর ডাল সারা রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
এরপর পরদিন সকালে ভিজিয়ে রাখা মসুর ডাল থেকে পানি ঝরিয়ে ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন অথবা পাটায় বেটে একটি পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এবার এই পেস্টে ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং ১ চা চামচ দই খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই পেস্ট আপনার মুখের ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন।
মিনিট পনেরো পর হালকা কুসুম গরম পানিতে আপনার মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন এবং তাওয়াল দিয়ে মুখ শুস্ক করে মুছে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। আপনি মসুর ডালের এই প্যাকটি সপ্তাহে ২-৩ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার ত্বক হবে ফর্সা এবং সেই সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে।
চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক
চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আপনার ত্বককে করে তোলে মসৃণ ও পরিষ্কার। এবার চলুন আপনি চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক কিভাবে তৈরি করবেন এবং আপনার ত্বকে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- চালের গুঁড়ো- ২ টেবিল চামচ
- মসুর ডালের গুঁড়ো- ২ টেবিল চামচ (আপনি চাইলে মসুর ডাল বেটে পেস্ট করে নিতে পারেন)
- দই- ১ টেবিল চামচ ( আপনার ত্বক শুষ্ক হলে দই ব্যবহার করুন আর পেন্সিলে ত্বকের জন্য আপনি মধু ব্যবহার করতে পারেন)
- মধু- ১ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার
চালের গুড়ো ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক তৈরি করতে আপনি প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্র নিন। এবার এতে চালের গুঁড়ো ও মুসুর ডালের গুড়ো খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর চালের গুঁড়ো ও মসুর ডালের গুড়োর সাথে আপনি ১ চা চামচ মধু বা ২ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।এবার এ পেস্ট আপনার মুখে লাগিয়ে বিশ মিনিটের মতো অপেক্ষা করুন। প্রায় ২০ মিনিট পর আপনার ত্বক হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
এর কিছুক্ষণ পর আপনি আপনার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। ভালো ফলাফল পেতে আপনি চালের গুঁড়ো এবং মসুর ডালের এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।তবে একটি কথা, আপনার স্কিনের জন্য নতুন কোন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার আগে আপনি প্যাঁচ টেস্ট করে নিবেন। যাতে করে অ্যালার্জির সমস্যা না হয়।
আলু ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক
আলু এবং মসুর ডাল এ দুটি উপাদানই আপনার ত্বকের জন্য উপকারী।আলুতে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান আপনার ত্বকের কালো দাগ এবং পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে মসুর ডাল আপনার ত্বককে গড়ে তোলে উজ্জ্বল এবং। তাহলে চলুন আলু ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক কিভাবে আপনি তৈরি করবেন এবং ব্যবহার করবেন সে ফেসপ্যাকটি জেনে নিন--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ- আলু- মাঝারি সাইজের ১টি
- মসুর ডাল- ২ টেবিল চামচ
- মুলতানি মাটি- ১ চা চামচ এবং
- গোলাপ জল- ২ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার
আলু ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক তৈরিতে আপনি দুই টেবিল চামচ মসুর ডাল সারা রাত ভর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পরদিন সকালে মসুর ডালের পানি ঝরিয়ে ব্লেন্ডারের মাধ্যমে একটি মিহি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এদিকে একটি আলু ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এর থেকে ২ চা চামচের মতো রস বের করে নিন।
এবার মসুর ডালের পেস্ট এর সাথে একে একে আলুর রস, মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জল ভালো করে একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আলু ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক। এই ফেসপ্যাকটি আপনার মুখে ত্বকের দাগের স্থানে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর মুখ ঠান্ডা পানিতে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
ধোয়ার পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন যাতে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়। আপনি সপ্তাহে অন্তত ৪ দিন আপনার মুখে আলু ও মসুর ডালের এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করুন।আরেকটি কথা, ত্বকে মসুর ডাল ও আলুর এই ফেসপ্যাক ব্যাবহারের পূর্বে ত্বক পরিস্কার করে ধুয়ে নেবেন। এতে ভালো ফল পাবেন।
ব্রণের দাগ দূর করতে মসুর ডাল
মসুর ডালের শুধুমাত্র যে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা অপকারিতা আছে তা নয় বরং এটি আপনার ত্বকের ব্রণের দাগ দূর করতেও ভালো কাজ করে। আপনার ত্বকের ব্রণের দাগ দূর করতে মসুর ডাল কে একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মসুর ডালের কিছু ফেসপ্যাক আমরা ইতিমধ্যে আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি।
ফেসপ্যাক গুলো ব্যবহারে আপনার ত্বকে ব্রনের দাগ দূর হবে ত্বক উজ্জ্বল হবে এবং সেই সাথে ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে আসবে। কারণ মসুর ডালের প্রাকৃতিক স্ক্রাবিং প্রভাব আপনার ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি আপনার ত্বকের উপর জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের ময়লা ও তেলতেলে ভাব পরিষ্কার করে ফেলে।
নিয়মিত মসুর ডালের ফেসপ্যাক ত্বকের ব্যবহারের ফলে এটি ধীরে ধীরে আপনার ত্বকের ব্রণের দাগের পিগমেন্টেশন কমিয়ে দেয় এবং ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। আপনি সপ্তাহে ২-৩ বার উপরিউক্ত ফেসপ্যাক গুলো ব্যবহারের চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার ত্বকের স্বাভাবিক রং ফিরে আসতে শুরু করবে এবং সেই সাথে ব্রনের দাগও কমতে থাকবে।
মসুর ডালে কি কি উপাদান আছে
মসুর ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা কম নয়। এতে উচ্চমানের প্রোটিন, ফাইবার, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক ইত্যাদি রয়েছে। এবার চলুন প্রতি 100 গ্রাম মসুর ডালে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকতে পারে সে সম্পর্কে নিচের ছকে দেখে নিন--
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
প্রোটিন | ৯ গ্রাম |
খাদ্য শক্তি | ১১৬ কিলোক্যালরি |
ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ২০ গ্রাম |
ফাইবার | ৮ গ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.৮৭ মাইক্রো গ্রাম |
ভিটামিন বি৯ | ১৮০ মাইক্রো গ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.৫৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ০.০০ গ্রাম |
আয়রন | ৩.৩ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩৬ মিলিগ্রাম |
জিংক | ১.৩ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩৬৯ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৯ মিলিগ্রাম |
লেখকের বক্তব্য
মসুর ডালের নানাবিধ উপকারিতা ও বেশ কিছু অপকারিতা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি, আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে বোধগম্য হয়েছে। মসুর ডাল শুধু আমাদের দেশেই নয়, গোটা পৃথিবীজুড়েই এটি একটি জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার। শুধু তাই নয়, মসুর ডালে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে বলে একে মাংসের বিকল্প হিসেবেও ধরা হয়।
প্রোটিন ছাড়াও এতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ, খাদ্য আঁশ, খাদ্য শক্তি, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, শর্করা ইত্যাদি তো রয়েছেই। আর তাই মসুর ডালের এই উপকারিতার কথা ভেবে আপনি আজ থেকেই প্রতিবেলা আপনার খাবার পাতে মসুরের ডাল খাওয়ার অভ্যাস করুন। আর পেতে থাকুন মসুর ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url