সুপারফুড পালং শাকের ১০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি কি ইচ্ছুক? গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি অবগত আছেন? যদি না থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
পালং-শাক
কারণ, আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সহ পালং শাক সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর সময় নষ্ট না করে আজকের মত আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সুচিপত্রঃ সুপারফুড পালং শাকের ১০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা

পালং শাকের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পালং শাকের এইসব উপকারিতার কথা জানলে আপনি হয়তো আজ থেকেই পালং শাক খাওয়া শুরু করবেন।সম্মানিত পাঠক,চলুন প্রথমেই আপনাকে জানিয়ে দেই পালং শাক খেলে আপনি কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন-- 
  • ভিটামিন কে এর উৎস হিসেবেঃ পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে যা আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং রক্তের স্বাভাবিক কোয়াগুলেশন নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এই ভিটামিন কে আপনার হাড়ের শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি হাড়ের ক্ষয় কমাতেও সাহায্য করে।
  • অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তিঃ আয়রনের একটি দুর্দান্ত উৎস হলো পালং শাক। নিয়মিত পালং শা খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্তর ঠিক রাখে। যার ফলে আপনি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • ভিটামিন এ এর সমৃদ্ধ উৎস হিসেবেঃ পালং শাক ভিটামিন এ এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ যা আপনার চোখের স্বাস্থ্য এবং দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে। ফলের চোখ ভালো রাখতে এবং রাতকানা রোগ থেকে রেহাই পেতেআপনি নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ঃ নিয়মিত পালংশাক হওয়ার ফলে এর ভিটামিন সি আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস থেকে আপনার শরীর রক্ষা পায় এবং আপনার ত্বকও ভালো থাকে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহঃ পালং শাকে রয়েছে লুটেইন,জিয়াক্সনথিন, এবং বিটা ক্যারোটিনের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের কোষকে ফ্রি রেডিকেল মুক্ত রাখে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • মিনারেল সমৃদ্ধ পালং শাকঃ আপনি কি আপনার হাড়ের জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন? কোনভাবেই এই ব্যথা দূর করতে পারছেন না। তাহলে বলব আপনি আজ থেকেই নিয়মিত পালং শাক খাওয়া শুরু করুন। কেননা পালং শাকে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলস থাকে যা আপনার হারের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেঃ পালং শাক নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার ফলে পালং শাকে বিদ্যমান পটাশিয়াম আপনার হৃদরোগের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ পালং শাকের উচ্চ ফাইবার আপনার পেটের হজম ক্রিয়াকে খুব সহজেই ত্বরান্বিত করতে পারে। ফলে পালং শাক খাওয়ার মাধ্যমে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদ হজম থেকে রেহাই পেতে পারেন।
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণঃ পালংশাকের পটাশিয়াম আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সাথে কার্ডিওভাসকুলার এর স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের এমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে আপনার শরীর রক্ষা পায়।
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে পালং শাকঃ পালংশাকে কিছু ন্যাচারাল কেমিক্যাল রয়েছে যা আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এতে করে আপনার স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • ওজন কমাতে পালং শাকঃ যারা ওজন কমাতে চান প্রাকৃতিকভাবে তাদের জন্য পালং শাক হতে পারে একটি উপাদেয় সবজি। কারণ পালং শাকে রয়েছে কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবার কনটেন্ট যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যাজমা ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করেঃ যাদের অ্যাজমা কিংবা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা রয়েছে তারা এর প্রতিকার হিসেবে খেতে পারেন পালং শাক। কারণ পালং শাকের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শ্বাস যন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে এবং অ্যাজমার উপসর্গ কমাতে কাজ করে।
  • শরীরের এনার্জি বাড়ায়ঃ নিয়মিত পালং শাক খেলে এর ভিটামিন এবং মিনারেল আপনার শরীরকে অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করে। 
পালং-শাক
  • ডায়াবেটিসে পালং শাকঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পালং শাক অত্যন্ত উপকারী।কারণ,পালং শাকের কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেঃ ক্যান্সার থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে পালং শাক। নিয়মিত পালংশাক হওয়ার ফলে এর ক্যারোটিন এবং ক্লোরোফিল উপাদান আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে যায়।
  • ক্ষতস্থান নিরাময়ঃ আপনার শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থান, পোড়া ঘা,ব্রণ কিংবা কোথাও ব্যথা পেয়ে কালচে হয়ে গেলে সেই আক্রান্ত স্থানের টাটকা পালং শাকের পাতার রসের প্রলেপ লাগালে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
সম্মানিত পাঠক,পালং শাকের এতসব উপকারিতা জানার পর আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য উপাদান হিসেবে যোগ করে নিতে পারেন পালং শাক।

পালং শাকের অপকারিতা

পালং শাকের উপকারিতার পাশাপাশি এরা আবার বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। সুতরাং পালং শাক খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার এই অপকারিতা গুলোও জেনে রাখা দরকার। চলুন অতিরিক্ত পালং শাক খেলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--
আরো পড়ুনঃ  কলমি শাকের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
  • কিডনিতে পাথর সৃষ্টিঃ অতিরিক্ত পরিমাণে পালংশে খেলে এটি আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।কারণ,পালং শাকে উচ্চ পরিমাণে অক্সালেট থাকে যা ক্যালসিয়াম এর সাথে মিলিত হয়ে ক্যালসিয়াম অক্সালেট কনক্রিস্ট তৈরি করতে পারে। এতে করে আপনার কিডনির সমস্যা এবং তীব্র ব্যথাও হতে পারে।
  • হাড়ের শক্তি কমিয়ে দিতে পারেঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পালং শাক খেলে পালং শাকের অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সাথে একত্রিত হয়ে আপনার শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণকে বাধা প্রদান করে। এর ফলে আপনার হাড়ের শক্তি কমতে থাকে এবং হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আইরন শোষণে বাধা দানঃ অত্যধিক পরিমাণে পালং শাক খাওয়ার ফলে এর অক্সালে আপনার শরীরে আয়রন শোষণের বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ আইরন শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ এবং রক্ত সস্থ্য ঠিক রাখে।
  • পেটের সমস্যাঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে পালং শাক খেতে থাকলে এর উচ্চ ফাইবার অনেক সময় অনেকের পেটে পেট ফাঁপা গ্যাস এবং উষ্ণ কাঠিন্যের মত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
  • পুষ্টির ভারসাম্যহীনতাঃ আপনি যদি পালং শাককেই কেবলমাত্র প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন,সেক্ষেত্রে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের অভাব দেখা দিতে পারে।এতে করে শরীরে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই ক্ষতিকর।
  • অতিরিক্ত সোডিয়ামঃ বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত অনেক পালং শাকের রেসিপিতে অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। আর এই অতিরিক্ত সোডিয়াম আপনার উচ্চ রক্তচাপ,স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতিঃ অনেক সময় মাটির গুণগতমান এবং পরিবেশগত অবস্থার উপর নির্ভর করে পালংশাকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান যেমন ধরুন পেস্টিসাইড বা অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি থাকতে পারে। ফলে অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়ার ফলে এই বিষাক্ত উপাদান গুলো আপনার শরীরে জমা হতে থাকে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে।
পালং শাকের উপরিউক্ত এই অপকারিতা গুলো এড়াতে আপনি নিয়মিত নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে পালং শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন।

পালং শাক খাওয়ার নিয়ম

পালং শাকের উপকারিতা পেতে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে এই স্বাদ খেতে হবে। কেননা নিয়ম মেনে না খেলে আপনি এর থেকে অপকারিতাই বেশি পাবেন। এবার চলুন কোন নিয়মে কিভাবে পালং শাক খেতে হবে সে সম্পর্কে জেনে রাখুন--
  • প্রথমেই বলি পালং শাক খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই টাটকা সতীন এবং তাজা সবুজ পালং শাক সংগ্রহ করুন। যদি এর পাতা হলুদ বা ফ্যাকাসে রঙের হয় সেক্ষেত্রে সেই শাক খাওয়ার জন্য কিনবেন না।কারণ,এতে পুষ্টির পরিমাণ কম হতে পারে।
  • পালং শাক রান্নার সময় অবশ্যই অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রান্না করবেন না। কারণ অতিরিক্ত তাপে পালং শাকের পুষ্টি গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়।
  • পালং শাকের সাথে তেল ব্যবহার করলে খুব অল্প পরিমাণ তেল ব্যবহার করুন।কারণ,পালং শাকে বেশি তেল ব্যবহার করলে এটি আপনার স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • আপনি যদি পালং শাক ভাজি করে খেতে চান সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না কারণ পালং শাকে এমনিতেই জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে একেবারে সেদ্ধ না হলে সে ক্ষেত্রে আপনি খুব অল্প পরিমাণে পানি যোগ করতে পারেন।
  • পালং শাক রান্নার সময় খেয়াল রাখবেন এর বাড়তি পানি যেন ফেলে না দিতে হয়। শাক রান্নার সময় যে পানি বের হবে সেটি ফেলা যাবে না। কারণ এই পানির সাথে পালং শাকের পুষ্টিগ্ন বেরিয়ে যাবে।
  • আপনি চাইলে বিভিন্ন পাঁচমিশালী তৈরি তরকারির সাথে মিশিয়ে পালং শাক খেতে পারেন।
  • আবার আপনি কালাই ডালের সাথে পালং শাক রান্না করে খেতে পারেন এটি অত্যন্ত সুস্বাদু হয়।
  • আপনি চাইলে কচি পালং শাক সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • আবার পালং শাক স্মুতিতে যোগ করে অন্যান্য ফলমূল ও দইয়ের সাথে মিশিয়েও আপনি পান করতে পারেন।
উপরিউক্ত এই নিয়মগুলো মেনে পালং শাক খেলে আপনি এর থেকে সর্বাধিক পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা পেতে পারেন।

পালং শাকে কি এলার্জি আছে

পালং শাকে এলার্জি আছে কিনা তা আপনারা অনেকেই জানতে চান। হার সম্মানিত পাঠক, কিছু মানুষের জন্য পালং শাক এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। কারণ পালং শাকে এমন কিছু উপাদান রয়েছে বিশেষ করে অক্সালিক এবং সালফেট জীবাণু প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলি অস্বস্তির কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। 
 
পালং শাকে উচ্চমাত্রার অক্সালেট থাকার কারণে এটি ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের শোষণ কমাতে পারে যা আপনার পেটে অনেক সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও পালং শাকের প্রোটিন বা অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানগুলি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার শরীরে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।এর ফলে আপনার ত্বকে চুলকানি,পেটের সমস্যা,লাল রেশ পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 
বিশেষ করে,যাদের আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা রয়েছে,তারা পালং শাক খাওয়ার পরে অস্বস্তি বা এলার্জির লক্ষণ দেখা দিলে পালং শাক খাওয়া এড়িয়ে চলুন। সাধারণভাবে পালং শাকের উপকারিতা থাকলেও যদি এতে অ্যালার্জি বা অস্বস্তি অনুভব করেন সেক্ষেত্রে আপনার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

পালং শাক খেলে কি হয়

নিয়মিত পালং শাক খেলে কি হয় জানেন কি? না জানলে চলুন আপনাকে জানিয়ে দিই নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার ফলে কি হতে পারে--
  • পালং শাক একটি স্বাস্থ্যকর সবজি যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারে ভরপুর।বিশেষ করে ভিটামিন এ,ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফলেটের একটি সমৃদ্ধ উৎস হলো পালং শাক। যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার ফলে এটি আপনার পাচনতন্ত্রেকে সহায়তা করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হয়।
  • প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে পালং শাক খেলে এটি আপনার হাড় ও রক্তের গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন সি। ফলে পালং শাক খেলে আপনার ত্বক ভালো থাকে এটি আপনার ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং সেই সাথে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
  • পালং শাকের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এটা আপনার শরীরের পুশকে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিকেল এর হাত থেকে রক্ষা করে। তাই নয় এটি আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতেও বেশ সহায়ক।
  • নিয়মিত পালংশাক হওয়ার ফলে আপনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
  • তবে অতিরিক্ত পরিমাণে পালন শেখ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিও হতে পারে।যেমন ধরুন- দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে পালং শাক খেলে এটা আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
  • আবার পালং শাকের উচ্চমাত্রার অক্সেলেট যা আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ বিঘ্নিত করতে পারে।
  • অতিরিক্ত পালং শাক খেলে এটি বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং পালং শাক খেয়ে এর উপকারিতা পেতে আপনি নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমানে খান। যা আপনার স্বাস্থ্যর জন্য উপকারি হবে

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া এটি একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রুন উভয়ের জন্যই উপকারী। গর্ভাবস্থায় পালং শাক খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় চলুন জেনে নিন-
  • পালং শাক ভিটামিন এ এর একটি সমৃদ্ধ উৎস যা গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের চোখের স্বাস্থ্য এবং তার গর্ভস্থ ভ্রূণের চোখের বিকাশেও কাজ করে।
  • পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফোলেট। আর এই ফুলের গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
  • আয়রনের একটি ভরপুর উৎস হলো পালং শাক। ফলে গর্ভাবস্থায় পালংশে খাওয়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • শাকের উচ্চ ফাইবার যে গর্ভাবস্থায় আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে। কেননা ফাইবার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • গর্ভাবস্থায় পালং শাক খেলে এর ভিটামিন সি আপনার শরীরে আয়রন শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।এর ফলে একজন গর্ভবতী মায়ের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
  • পালং শাকে ক্যালসিয়ামও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আর এই ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের হাড় এবং শিশুর হাড়ের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • গর্ভকালীন সময়ে পালং শাক খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গর্ভবতী ময়ের কোষগুলিকে ক্ষতিকর রেডিক্যালসের হাত থেকে রক্ষা করে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমায়।
  • এছাড়াও,পালং শাকের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা গুলো। গর্ভাবস্থায় এই উপকারিতা গুলো পেতে আপনি নিয়ম করে পালং শাক খেতে পারেন।

পালং শাকের জুসের উপকারিতা

পালং শাকের উপকারিতা পেতে আপনি শুধু রান্না নয় বরং জুস করেও পালং শাক খেতে পারেন। পালং শাকের জুসেরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন কিভাবে পালংশাকের জুস তৈরি করা যায়? সম্মানিত পাঠক,পালং শাকের জুস কিভাবে তৈরি করতে হয় তা আপনাকে এক্ষুনি জানিয়ে দিব।কিন্তু তার আগে পালং শাকের জুস খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
পালং-শাকের-জুসের-উপকারিতা
  • পালং শাকের জুসে ভিটামিন এ,ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফোলেটের ঘনমাত্রা থাকে যা আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।
  • পালং শাকের জুসে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • পালং শাকের জুসের উচ্চমাত্রার আয়রন থাকে যা আপনার অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সক্ষম।
  • পালং শাকের জুস খেলে এর পটাশিয়াম উপাদান আপনার হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং সেই সাথে হৃদরোগের ঝুকিও কমায়।
  • পালং জুসের ফাইবার সামগ্রী আপনার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে কাজ করে।
  • পালং শাকের জুসে থাকে ভিটামিন এ ও লুটেইন আপনার চোখের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত পালং শাকের জুস খেলে এই জুস আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ জনিত অবস্থায় বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
যেভাবে তৈরি করবেন পালং শাকের জুস
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • তাজা পালং শাক- ১ আটি পরিমাণ
  • পানি- ১ গ্লাস পরিমাণ
  • লেবুর রস - ১-২ চা চামচ
  • মধু বা চিনি- স্বাদ মত
  • আইস টুকরো- ৫-৬ টি
প্রস্তুত প্রণালী
পালং শাকের জুস তৈরি করার শুরুতেই পালং শাকের পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। এবার পালং শাকের পাতা ব্লেন্ডারি নিয়ে এতে এক করে ১ গ্লাস পানি, লেবুর রস এবং মধু বা চিনি একসাথে যোগ করে ভালো করে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল পালং শাকের জুস।এবার এতে আপনি কয়েক টুকরো বরফ যোগ করে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।

পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে

আপনারা অনেকেই পালং শাকের ভিটামিন সম্পর্কে জানতে চান,যে এতে কি কি ভিটামিন রয়েছে। তাহলে চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে কি পরিমাণ ভিটামিন থাকতে পারে তা নিচের ছকের মাধ্যমে দেখে নিন--
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
প্রোটিন ২.৯ গ্রাম
শক্তি ২৩ কিলোক্যালরি
ফ্যাট ০.৪ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৩.৬ গ্রাম
ফাইবার ২.২ গ্রাম
ভিটামিন এ ৯৯৯ IU
ভিটামিন সি ২৮.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ৪৮৫ মাইক্রোগ্রাম
আয়রন ২.৯ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়া ৯৯ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম

পালং শাকের ইংরেজি নাম কি

পালং শাকের ইংরেজি নাম হল "Spinach" এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম "Spinacia oleracea". পালং শাক একটি একবর্ষজীবি উদ্ভিদ এবং এই গাছ ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতার আকৃতি একান্তর সরল ত্রিভুজাকার বা ডিম্বাকার এবং পাতার আকার লম্বায় ২-৩০ সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় ১-১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।পালং শাক গাছেও ফুল হয় এবং এই ফুল থেকে ছোট শক্ত দানাকৃতির ফল হয়।
 
এর ফুল সাদা হলদেটে রঙের হয়ে থাকে। জনপ্রিয় একটি সবজি যা কিনা ভিটামিন এ ভিটামিন সি ভিটামিন কে এবং প্রচুর পরিমাণ আইরনের উৎস হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে পালং শাকের চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে সময়ের পরিবর্তনে এখন প্রায় সারা বছরই কমবেশি বাজারে পালং শাক দেখতে পাওয়া যায়।

পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পোস্ট থেকে আশা করছি আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। পালং শাকের পুষ্টিগুণ এতটাই যে, শাক সবজির মধ্যে পালং শাককে সুপারফুড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।এই শাক রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে এবং শরীরের রক্ত বাড়াতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে। পালং শাকের এই ছোট্ট কথাই লুকিয়ে আছে হাজার গুনাগুণ। পালং শাক একটি শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে সারা বছরই প্রায় বাজারে পাওয়া যায়। 
 
শুধু স্বাস্থ্য উপকারিতা নয় এশার নিয়মিত খেলে আপনার ত্বকের অন্তরে কোলাজের উৎপাদন বাড়বে এবং হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। তাই আজ দেরী নয়, আপনি এখন থেকে আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন সুপারফুড পালং শাক।আর পেতে থাকুন এর সব স্বাস্থ্য উপকারিতা।ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url