গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না জানুন

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না, জানলে আপনিও আজ থেকে সেসব সবজি আর খাবেন না। গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি? জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ে নিন। 

গর্ভাবস্থায়-সবজি
কারণ, আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমেই আপনি জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া বারণ এবং করলা খেতে পারবেন কিনা। সাথে আরো জানবেন কি কি মাছ এবং কি কি ফল খাওয়া যাবে না।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় যেসব সবজি খাওয়া যাবেনা

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তা হয়তো অনেকেরই অজানা। যদিও সাধারণভাবে সবজি স্বাস্থ্যকর, কিন্তু কিছু কিছু সবজির মধ্যে প্যাথোজেন বা বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আর তাই একজন গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য গর্ভাবস্থায় যে সকল সবজি এড়িয়ে চলা উচিত সে সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানিয়ে দিচ্ছি-

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা

  • বেগুনঃ বেগুন ছোট বড় কমবেশি সকলের কাছে খুব প্রিয় একটি সবজি। আর মাছের তরকারি রান্না করলে তো বেগুন ছাড়া অসম্পূর্ণই থেকে যায়! কিন্তু আপনি জানেন কি, যাদের শরীরে অ্যালার্জির প্রবণতা রয়েছে তাদের জন্য বেগুন প্রত্যক্ষ শত্রু হিসেবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় বেগুন খেলে ঋতুস্রাব হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোহরমোন যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • সজনে ডাঁটাঃ সজনে ডাটা এবং পাতা উভয়ে গর্ভাবস্থায় খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ,  সজনে পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। অপরদিকে সজনে ডাটাতে রয়েছে "আলফা সিটেস্টেরল" নামক এক ধরনের উপাদান যা কিনা একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতের ঘটাতে পারে। আর তাই আপনি যতটা সম্ভব গর্ভাবস্থায় সজনে ডাটা এবং সজনে পাতা এড়িয়ে চলবেন।
  • অ্যালোভেরাঃ আমরা অনেকেই সৌন্দর্য চর্চায় এবং পেট পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত এলোভেরার জুস পান করে থাকে। তবে গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে অ্যালোভেরা খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এলোভেরার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
  • শিম ও শস্যজাতীয় খাদ্যঃ গর্ভাবস্থায় আপনি রান্না না করা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য অঙ্কুরিত বীজ এবং শিম যতটা সম্ভব না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা এই সকল বীজ এবং খাদ্যশস্য আপনার গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • কাঁচা পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে অত্যন্ত পুষ্টিকর হলেও গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া মোটেও উচিত নয়। কারণ কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ল্যাটিক্স উপাদান। আর এই ল্যাটিক্স গর্ভাবস্থায় আপনার জরায়ুর শক্তিশালী পেশী ও গ্রন্থি সংকোচন করতে পারে। আর ঠিক এই কারণেই বিশেষজ্ঞরা গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেতে নিরুৎসাহিত করেন। তবে পাকা পেঁপে খেলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ, পাকা পেঁপে ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • করলাঃ করলা সাধারণ অবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর একটি খাদ্য উপাদান। কিন্তু এই করলায় রয়েছে গ্লাইকোলাইসিস, সেপোনিন, মারোডিসিন নামক উপাদান যা কিনা একজন গর্ভবতী মায়ের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি ক্ষতি হতে পারে গর্ভজাত সন্তানেরও।
  • কাঁচা মুলাঃ গর্ভাবস্থায় আপনি কাঁচা মুলা এবং সালাদ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এতে লিসটেরিয়া, সালমোনিলা, এবং ও ই. কোলির মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া উপাদান থাকতে পারে। যা আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায়-সবজি

  • না ধোয়া ফল ও সবজিঃ স্প্রাউট, লেটুস এবং বাঁধাকপির মত না ধোয়া কাঁচা ও শাকসবজি আপনি গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলবেন। কারণ, না ধোয়া ফলমূল এবং এই সবজির খোসা গুলোতে নানা ধরনের হার্বিসাইডই থাকেনা, ফলে সেগুলো টক্সোপ্লাজমা গণ্ডি এবং লিস্টেরিয়ার মতো মারাত্মক প্যাথোজেনের আবাসস্থলে পরিণত হয়।
  • সালাদঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা সালাদ বা অপরিশোধিত শক্তি যেমন কাঁচা গাজর কাঁচা শসা ইত্যাদি ভালোভাবে না ধরে খেলে আপনার ব্যাকটেরিয়া ও প্যাথোজেনের সংক্রমণ হতে পারে। ফলে, আপনার গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • স্পিনাচঃ স্পিনাচে উচ্চমাত্রার অক্সালেট থাকে যা ক্যালসিয়াম শোষণের বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং আপনার কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং গর্ভকালীন সময়ে স্পিনাচ না খাওয়াটাই উত্তম।

সুতরাং, গর্ভাবস্থায় এই সবজিগুলো খাওয়ার সময় আপনার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাছাড়া তাছাড়া গর্ভাবস্থায় খাদ্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটি খাবার আপনার শরীরে কি প্রভাব ফেলতে পারে তা বুঝে তবেই খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কি কি কারনে সবজি এড়িয়ে চলবেন

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তা আলোচনার শুরুতেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। গর্ভাবস্থায় কিছু সবজি খাওয়া থেকে আপনার বিরত থাকা প্রয়োজন বিশেষ করে আপনি যদি কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন। সেক্ষেত্রে সবজি খাবার ক্ষেত্রে আপনার বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাছাড়া চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞান গর্ভাবস্থায় কিছু কিছু সবজি খেতে নিরুৎসাহিত করেন। এবার চলুন কি কি কারণে আপনি গর্ভাবস্থায় সবজি এড়িয়ে চলবেন সে বিষয়ে জেনে নিন-

আরো পড়ুনঃ  গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • পোকামাকড় বা বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতিঃ কিছু কিছু শক্তির মধ্যে পোকামাকড় বা বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় আপনার সংক্রমণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, আপনি যদি সবজি যথাযথভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে না খান সেক্ষেত্রে লিস্টেরিয়া বা সালমোনিলা রোগের সংক্রমণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত সল্ট বা কেমিক্যালসঃ কিছু সবজি বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত করা বা কনজারভেটেড যুক্ত সবজিতে অতিরিক্ত পরিমাণে সল্ট বা কেমিক্যাল থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থায় আপনার উচ্চ রক্তচাপ সহ অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • মৌলিক পুষ্টির অভাবঃ কিছু সবজির মধ্যে মৌলিক পুষ্টি উপাদান যেমন-আইরন, ফলেটের অভাব থাকতে পারে। কিন্তু এই ফোলেট এবং আইরন আপনার গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে কাঁচা আলু এতে পুষ্টির অভাব থাকতে পারে।
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যাঃ কিছু সবজি যেমন ধরুন ব্রকলি খেলে একটি গর্ভাবস্থায় আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এই সবজিগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে ফলে আপনার পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট এর উপাদানঃ আবার কিছু সবজিতে এন্ট্রি নিউট্রিয়েন্ট উপাদান থাকে যা আপনার শরীরের পুষ্টি শোষণে বাধা দিতে পারে।
  • ডাইঅক্সিন বা অন্যান্য বিষাক্ত উপাদানঃ কিছু সবজি বিশেষ করে যদি তা আদ্র এবং দূষিত মাটিতে জন্মে থাকে, তাহলে এতে ডাই অক্সিন বা অন্যান্য বিষাক্ত প্রদান থাকতে পারে যা আপনার গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া ক্ষতিকর।
  • হরমোনাল পরিবর্তনের প্রভাবঃ গর্ভাবস্থায় আপনি যদি ব্রকলির ফুলকপি ইত্যাদি সবজি অতিরিক্ত পরিমাণে খান তাহলে এতে আপনার শরীরের হরমোনের ভারসাম্য প্রভাবিত হতে পারে। বিশেষ করে আপনার যদি থাইরয়েডের সমস্যা থেকে থাকে।
  • এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ যাদের শরীরে অতিরিক্ত এলার্জির প্রবণতা রয়েছে গর্ভাবস্থায় সবজি এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, কিছু কিছু সবজি আপনার শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজি খাওয়া যাবে না আশা করছি তা বুঝতে পেরেছেন। তবে আপনি যদি নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে সবজি খান তাহলে সেটি অবশ্যই আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য উপকারী হবে। আর তাই গর্ভাবস্থায় সবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং খাদ্য নির্বাচনের আগে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।

গর্ভকালীন সময়ে কোন কোন সবজি খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না তা ইতিমধ্যেই আপনি জানতে পেরেছেন। উক্ত সবজি গুলো ছাড়াও আরো কিছু সবজি রয়েছে যেগুলি গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এবার চলুন, গর্ভাবস্থায় আপনি কোন কোন সবজি খেতে পারবেন এবং কেন খাবেন তা জেনে নিন-

  • পালং শাকঃ পালং শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফলেট,আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে। যা গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • গাজরঃ গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) যা গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার ভ্রুনের চোখ এবং ত্বক ভালো রাখে।
  • টমেটোঃ গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়া বেশ উপকারী। কারণ, এতে রয়েছে ফোলেট এবং আয়রন যা আপনার রক্তাল্পতা দূর করে এবং ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সাহায্য করে।
  • বিটরুটঃ আপনি গর্ভাবস্থায় বিট রুটও খেতে পারেন। এই বিটরুটে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলেট এবং আয়রন যা কিনা আপনার রক্তাল্পতা রোধে কাজ করবে।
  • কপিঃ কপিতে রয়েছে ভিটামিন কে,ভিটামিন সি এবং ফাইবার যা আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। শুধু তাই নয়, কপির ফাইবার আপনার হজমের সাহায্য করে। তবে, ফাইবার যুক্ত হওয়ায় গর্ভাবস্থায় এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়াটাই ভালো।
  • শসাঃ গর্ভাবস্থায় শশা খেলে এর জলীয় উপাদান আপনার শরীরের জলশূন্যতা বা পানি শূন্যতা কমাতে কাজ করে।
  • মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলুতে ভিটামিন এ এবং ফাইবার থাকার কারণে এটি আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের চোখ ভালো রাখে।
  • জুকিনিঃ জুকিনিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন b6 এবং ফাইবার যা গর্ভাবস্থায় আপনার হজমের জন্য সহায়ক এবং সেই সাথে আপনার ইমিউন সিস্টেমের জন্যও ভালো।
  • সবুজ বিনসঃ সবুজ বিনসে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং ফোলেট যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের জন্য এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে কাজ করে।
  • শিমলা মরিচঃ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পূর্ন শিমলা মরিচ গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • চিচিঙ্গাঃ চিচিঙ্গাতে রয়েছে ভিটামিন সি,জলীয় উপাদান এবং ফাইবার। গর্ভাবস্থায় আপনি চিটিং না খেতে পারেন কারণ এর ফাইবার আপনার হজমে সাহায্য করবে এবং ভিটামিন সি, যদিও উপাদান আপনার শরীরের পানি শূন্যতা কমাবে।
  • পটলঃ পটল ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি সবজি। যা গর্ভাবস্থায় আপনার হজমের সমস্যা দূর করতে পারে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিশোধনে সহায়ক হতে পারে।
  • চাল কুমড়োঃ গর্ভাবস্থায় চাল কুমড়ো আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ফাইবার যা আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ ব্রণের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • পেঁয়াজ পাতাঃ পেঁয়াজ পাতাই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মিনারেলস। যা গর্ভাবস্থায় আপনার হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • লাউঃ লাউ এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান, ভিটামিন সি ও ফাইবার যা কিনা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের জল শূন্যতা কমাতে পারে।
  • কচু শাকঃ কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর এই ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • ওলঃ ওল ভিটামিন সি,পটাশিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় গর্ভাবস্থায় এটি আপনার শরীরের হজম ক্রিয়া এবং শারীরিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • শালগমঃ শালগমে রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি এবং ফোলেট। গর্ভাবস্থায় শালগম খেলে এটি আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য এবং সিস্টেমকে ঠিক রাখে।

সম্মানিত পাঠক/পাঠিকা, এই সবজিগুলো গর্ভাবস্থায় আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের পরিপূর্ণ বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, সবজি খাওয়ার সময় তাদের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে ভালো করে ধুয়ে এবং সঠিক ভাবে রান্না করে তবেই খাবেন।

গর্ভাবস্থায় সবজি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কোন সবজি আপনার  খাওয়া যাবে না তা তো জানলেন। এবার যেসব সবজি গর্ভাবস্থায় খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য উপকারী তা জানিয়ে দেব। গর্ভাবস্থায় সবজি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি উপকারিতা আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি--

  • প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহঃ গর্ভাবস্থায় সবজি খেলে এটি একজন গর্ভবতী মায়ের এবং তার সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে।
  • ফাইবারের উৎস হিসেবেঃ প্রায় প্রত্যেকটি সবজিতে কমবেশি প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্য আশ থাকে। একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম ক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • শরীরে পানির সমতাঃ গর্ভাবস্থায় অনেকে আছেন যারা পানি শূন্যতায় ভুগতে থাকেন। এই পানি শূন্যতা দূর করতে গর্ভাবস্থায় আপনি নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ সবজি খান। কারণ বেশিরভাগ সবজিতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ, যা আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ কিছু কিছু সবজি রয়েছে যেমন পালং শাক, বিটরুট এবং শসা এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম থাকে, যা কিনা গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতেঃ গর্ভাবস্থায় সবজি খেলে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ সবজি সাধারণত কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত হয়ে থাকে, যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • সুগার নিয়ন্ত্রণঃ কিছু সবজি যেমন মিষ্টি আলু এবং পালং শাক একজন গর্ভবতী মায়ের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • গর্ভস্থ ভ্রুনের বিকাশঃ আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য গর্ভাবস্থায় সবজি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, প্রতিটি সবজিতেই কমবেশি ফোলেট, আয়রন এবং অন্যান্য ভিটামিন উপাদান রয়েছে। যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়ক হতে পারে।
  • এনজাইমঃ এর কার্যকারিতা সবজিতে থাকা এনজাইম আপনার পাচনতন্ত্রের কার্যকারীতা উন্নত করে, যা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের পুষ্টি শোষণকে সহজতর করে।
  • এলার্জি ভাব কমাতেঃ আপনার যদি মাত্রাতিরিক্ত অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া থেকে থাকে তাহলে আপনি টমেটো এবং ব্রকলি খেতে পারেন। কারণ, টমেটো এবং ব্রকলি এগুলিতে প্রাকৃতিক এন্টিহিস্টামিন থাকার ফলে গর্ভাবস্থায় আপনার এলার্জি হ্রাস করতে পারে।
  • মেটাবলিজম বৃদ্ধিতেঃ সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যা আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। আর এই মেটাবলিজম গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় সবজি খেলে সবজিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন গর্ভাবস্থায় নিয়ম মেনে পরিমিত মাত্রায় সবজি খেলে এই সময় নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা খুব সহজেই আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন। আর এসব উপকারিতার কারণেই গর্ভাবস্থায় নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা

গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজি খাওয়া যাবে না জানার পর, এবার আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা। সম্মানিত পাঠক/পাঠিকা, এবারে চলুন গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবেনা তা আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--

  • পাকা পেঁপেঃ গর্ভাবস্থায় পাকা পেঁপে নিরাপদ হলেও অপরিপক্ক, আধা পাকা বা কাঁচা পেঁপে তাম্বুলীন নামক এক উপাদান ধারণ করে।যা আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • আনারসঃ গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়াটা খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, যা আমরা কম বেশি সকলেই জানি। কারণ, আনারসে ব্রোমেলাইন নামক এনজাইম থাকে। যা গর্ভাবস্থায় আপনার প্রেগনেন্সি হরমোনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। খুব বেশি পরিমাণ আনারস খেলে এটি আপনার মাংসপেশির সংকোচনের পাশাপাশি গর্ভপাতও ঘটাতে পারে।
  • পাকা কুমড়াঃ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পাকা কুমড়া গর্ভাবস্থায় গ্যাস এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়।
  • বেরি জাতীয় ফলঃ বেরি জাতীয় বিভিন্ন ফল যেমন- ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি,রেসবেরি এই ফলগুলি সাধারণভাবে নিরাপদ হলেও অনেক সময় অপরিষ্কার থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে বেশি আদ্র থাকার কারণে এতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত শসাঃ গর্ভাবস্থায় শশা যদিও নিরাপদ, কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আপনার পেটে গ্যাস অম্বলের সৃষ্টি করবে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • লিচুঃ আপনি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খেলে আপনার রক্তে শর্করার স্তর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
  • নাশপাতিঃ এই ফলটি যদিও সাধারণভাবে নিরাপদ কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গর্ভাবস্থায় আপনার পেটে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
  • শরিফা ফলঃ গর্ভাবস্থায় শরিফা ফল বেশি পরিমাণে খেলে এটি আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • খেজুরঃ খেজুরের উচ্চ শর্করার স্তর গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তের শর্করা স্তর বাড়াতে পারে, যা কিনা প্রি-ডায়াবেটিস বা গ্যাস্ট্রেশনাল ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে ।
  • আঙ্গুরঃ গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে শেষ ট্রাইমিস্টার এ চিকিৎসকরা আঙ্গুর খেতে নিরুৎসাহিত করেন। কারণ, এটি আপনার শরীরকে উষ্ণ করে তুলতে পারে। তবে পরিমিত পরিমাণে আঙ্গুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
  • তরমুজঃ তরমুজ যদিও উপকারী একটি ফল, তবে গর্ভাবস্থায় তরমুজ খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, গর্ভাবস্থায় অধিক পরিমাণে তরমুজ খেলে এটি আপনার শরীরের উৎপন্ন টক্সিন বের করে হাইড্রেট করে। এর ফলে আপনার গর্ভস্থ শিশুর ওপর বিভিন্ন বিষের প্রভাব পড়তে পারে।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন ফল খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে আপনাকে নিয়মিত কিছু ফল খেতে হবে, যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্য উপকারী হবে। এবার জেনে নিন গর্ভাবস্থায় আপনি কোন কোন ফল খাবেন এবং কেন খাবেন--

  • আপেলঃ আপেলে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম যা গর্ভাবস্থায় আপনার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
  • কলাঃ কলাতে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ থাকে যা গর্ভাবস্থায় আপনার পেশির সংকোচন এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এই ভিটামিন বি৬ আপনার মর্নিং সিকনেস কমাতেও বেশ সহায়ক।
  • স্ট্রবেরিঃ উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভকালীন সময়ে আপনার ইমিউন সিস্টেম কে শক্তিশালী করে তোলে এবং লিউকোসাইট তৈরিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তবে এই বেরি জাতীয় ফল কম খাওয়া টাই উত্তম।
  • কমলাঃ কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। গর্ভাবস্থায় আপনার শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে নিয়মিত নিয়ম করে কমলা খেতেই পারেন।
  • পেয়ারাঃ পেয়ারাতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি,ফাইবার এবং ফোলেট। গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে এটি আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং হজমে সাহায্য করে।
  • আমঃ আম ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা গর্ভাবস্থায় আপনার শিশুর অঙ্গ বিকাশে সাহায্য করে।
  • বেদানাঃ এর নাম বেদানা হলেও এর দানাতে কিন্তু রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ! বেদানাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং ফলেট থাকে যা গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
  • জলপাইঃ জলপাইয়ের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অন্যান্য ভিটামিন গর্ভাবস্থায় আপনার পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারে। তবে জলপাই পরিমাণে কম খাওয়াটাই ভালো।
  • কিউইঃ কিউইয়ে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ফাইবার যা গর্ভাবস্থায় আপনার ইউনিয়ন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • তরমুজঃ আগেই বলেছি তরমুজ গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো। কারণ, এটি আপনার শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা

  • গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার আগে আপনি কোন কোন ফল খাবেন সে বিষয়ে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।
  • ফল খাওয়ার আগে খুব ভালোভাবে পানিতে পরিষ্কার ধুয়ে খাবেন যাতে করে ফলে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু দূর হয়ে যায়।
  • প্যাকেজিং করা ফল খাওয়ার আগে দেখে নিন সেগুলি সঠিকভাবে সংরক্ষিত ছিল কিনা।
  • প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে ফল খান। অতিরিক্ত পরিমাণে ফল খাবেন না।
  • সব সময় পরিপক্ক বা পাকা ফল খাওয়ার চেষ্টা করবেন।কাঁচা বা অপরিপক্ফক ল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি?

গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে আপনারা অনেকেই জানতে চান। আবার অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন,গর্ভাবস্থায় লেবু খাবেন কি খাবেন না এ নিয়ে। তাহলে আজ জেনে রাখুন, গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া আপনার শরীরের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। কারণ, লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তাছাড়া লেবুর ভিটামিন সি আপনার ইমিউন সিস্টেম কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। শুধু তাই নয়,এটি আপনার শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় শিশুর সঠিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া লেবু গর্ভাবস্থায় আপনার হজম ক্রিয়াকে অনেকটাই সহজ করে দেয়।

এর ফলে গর্ভাবস্থায় আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমজনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন। তবে লেবুর উচ্চ এসিডিটিক প্রকৃতি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার গ্যাস্ট্রাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু না খেয়ে আপনি পরিমিত পরিমাণ লেবু খাওয়ার চেষ্টা করুন। গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি যাবে না আশা করছি এ বিষয়ে আপনার কনফিউশন দূর হয়েছে।

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় যেমন কিছু সবজি খাওয়া যাবে না, তেমনি কিছু মাছ খাওয়া থেকে আপনার বিরত থাকা উচিত। কারণ, এগুলোতে ভারী ধাতু, প্যারাসাইট এবং অন্য কোন উপাদান থাকতে পারে যা একজন গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, কোন মাছ খাওয়া যাবে না তাইতো! চলুন তাহলে জেনে নিন গর্ভাবস্থায় আপনি কোন কোন মাছ এড়িয়ে চলবেন--

  • শার্ক মাছঃ শার্ক মাছের মধ্যে উচ্চমাত্রায় মেরকুরি থাকে, যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সিস্টেমের বিকাশ বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
  • রুই মাছঃ রুই মাছের মধ্যে মেরকুরী উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে গর্ভাবস্থায় রুই মাছ কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • তেলাপিয়া মাছঃ তেলাপিয়া মাছ গর্ভাবস্থায় একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আপনি যতটা পারুন গর্ভকালীন সময়ে তেলাপিয়া মাছ এড়িয়ে চলুন। 

গর্ভাবস্থায়-সবজি

  • চিংড়ি মাছঃ চিংড়ি মাছে উচ্চ পরিমাণে তেল থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থায় আপনার পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
  • পাঙ্গাস মাছঃ পাঙ্গাস মাছে কিছু কিছু এন্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় আপনার জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়।
  • চিড়ে মাছঃ চিড়ে মাছ বা ক্যাটফিস এ চিংড়ি মাছের মত মধ্যে ভারী ধাতু এবং অন্যান্য দূষক উপাদান থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় খেলে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • টেংরা মাছঃ টেংরা মাছ সাধারণত শরীরের জন্য উপকারী হলেও,নদীর জলের সঞ্চিত টেংরা মাছের মধ্যে প্যাথোজেন থাকতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
  • পিরানহা মাছঃ যদিও এটি সাধারণত দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয় পাওয়া যায় না বললেই চলে, তবে এই মাছের মধ্যে কেমিক্যাল বা প্যাথোজেন রয়েছে যা গর্ভাবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন ধরুন-

  • মাছ অবশ্যই পুরোপুরি রান্না করে তবেই খাবেন এবং মাছ রান্নার সময় এর তাপমাত্রা ৬৫°C/১৫০°F এ রান্না করা উচিত।
  • সর্বদা নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত জায়গা থেকে তাজা মাছ কিনুন। মাছ খাওয়ার আগে আপনি নিশ্চিত হন যে, মাছের গুনাগুন ঠিক আছে কিনা।
  • গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা বৈচিত্র আনুন অর্থাৎ এক ধরনের মাছ আপনি বেশি পরিমাণে খাবেন না। ধরুন, একটি সপ্তাহে ২-৩ বার বিভিন্ন ধরনের মাছ খেলেন এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি?

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার ব্যাপারে আপনার সতর্কতা মেনে চলা উচিত। কারণ, এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। করলার মধ্যে বেশকিছু স্বাস্থ্যকর গুন থাকা সত্ত্বেও, গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার আগে একজন গর্ভবতী মায়ের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, করলার মধ্যে নির্দিষ্ট একটি রাসায়নিক উপাদান কারপিন রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় আপনার হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে।

শুধু তাই নয়, এই কার্পিন উপাদান আপনার গর্ভাশয়ের পেশীগুলিকে সংকুচিত করে ফেলতে পারে।ফলে আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া করলার তীব্র তিক্ত স্বাদ আপনার হজম প্রণালীতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। যদিও গর্ভাবস্থায় খুব সীমিত পরিমাণে করোলা খাওয়াটা নিরাপদ মনে করা হয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া থেকে বিরত থাকাটাই উত্তম। সুতরাং গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার আগে সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেন।

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না জানেন কি? করলা ছাড়াও গর্ভাবস্থায় কিছু খাদ্যপন্য খাওয়া থেকে আপনার বিরত থাকা উচিত। কারণ, এগুলি একজন গর্ভবতী মায়ের এবং তার গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এইসব খাদ্য পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তো চলুন গর্ভাবস্থায় কোন খাদ্য উপাদান খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন সেগুলি জেনে নিন-

  • প্রথমতঃ অর্ধ সিদ্ধ মাংস সেটি মুরগি হোক অথবা গরু,খাসি যাই হোক না কেন গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবেনা। খেলে আপনাকে পরিপূর্ণভাবে রান্না করে তবেই খেতে হবে। তা না হলে এটি আপনার শরীরে প্যাথোজেনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে যা লিষ্টেরিয়া, সালমোনেলা বা অন্যান্য ক্ষতিকর রোগের কারণ হতে পারে।
  • দ্বিতীয়তঃ কিছু মাছ বিশেষ করে শার্ক, মাকরেল, পাঙ্গাস তেলাপিয়া, পিরানহা এই ধরনের মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ, এই সমস্ত মাছ উচ্চমাত্রার মেকুরি ধারণ করতে পারে যা আপনার শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সিস্টেমের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • তৃতীয়তঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল খাওয়া মোটেও উচিত নয়, এতে আপনার স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। দই, চিজ,পনির এবং দুগ্ধ জাতীয় পণ্য যা পাস্তুরাইজড না হলে অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়াও কিছু পাকা ফলমূলে রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে যা আপনার গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় টক খাওয়া যাবে কি?

গর্ভাবস্থায় যদিও টক খাওয়া নিরাপদ তবুও কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। বিভিন্ন টক জাতীয় খাবার যেমন- লেবু, আমড়া বা টক দই আপনার শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় টক খেলে এটি ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে এবং গর্ভাবস্থায় আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে টক জাতীয় খাবার খেলে আপনার এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আর ঠিক এই কারণেই গর্ভাবস্থায় টক খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। শুধু টক খাবার বলে নয় বরং যে কোনো খাবার গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সবচেয়ে ভালো হয় টক খাবার খাওয়ার আগে যদি আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেন। কেননা একজন চিকিৎসক আপনার শরীরের জন্য কোন ধরনের টক খাবার নিরাপদ সে সম্পর্কে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কি পরিমাণ সবজি খাওয়া উচিত?

গর্ভাবস্থায়  প্রতিদিন কি পরিমাণ সবজি খাওয়া উচিত তা জানা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য জরুরী।  করলা ছাড়াও গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ কাপ সবজি খাওয়া উচিত। আপনি যদি আপনার গর্ভকালীন সময়ে প্রতিদিন নিয়ম করে ২-৩ কাপ সবজি খান সেক্ষেত্রে এটি আপনার শরীরে পরিপূর্ণরূপে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে। যা আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশে বিশেষ প্রয়োজন। 

আপনি চেষ্টা করবেন সব সময় বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি খেতে যেমন- পালং শাক, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। এইসব খাবার যেমন গর্ভাবস্থায় আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে, তেমনি কনস্টিপেশন কমায়। শুধু তাই নয়, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে সবজি খেলে গর্ভাবস্থায় এটি আপনার হজম ক্রিয়াকেও সহজ করে তোলে।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে আমার মতামত

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না এ বিষয়ে প্রত্যেকটি গর্ভবতী মায়েরই সচেতন থাকা উচিত। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রুনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। গর্ভকালীন সময় অন্য যেকোনো সময় থেকে খুব বেশি স্পর্শকাতর হয়। ফলে, এই সময় আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবর্তন যেমন জরুরী, 

ঠিক তেমনি খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনাটাও জরুরী। সর্বোপরি, গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য গ্রহণ করা জরুরী। যাতে করে মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করা যায়। এই রকম আরো তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url