কোয়েল পাখির ডিমের অজানা সব স্বাস্থ্য উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায় জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
কারন, আজকের এই আর্টিকেল থেকেই আপনি জেনে নিতে পারবেন কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ সহ কোয়েল পাখির ডিমের দাম সম্পর্কে। তাহলে চলুন আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কোয়েল পাখির ডিমের অজানা সব স্বাস্থ্য উপকারিতা
- কোয়েল পাখির ডিমের যত উপকারিতা
- কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক
- কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
- কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে
- কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়
- কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয়
- কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনা
- শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
- কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
- কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ
- কোয়েল পাখির ডিমের দাম ২০২৪
- কোয়েল পাখি ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- লেখকের মন্তব্য
কোয়েল পাখির ডিমের যত উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। আবার আকারে ছোট বলে অনেকে এই ডিম খেতেও চান না। তবে আকারে ছোট হলেও কোয়েল পাখির ডিমের হয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণ। এবার চলুন আপনি কি প্রথমেই জানিয়ে দিচ্ছি কোয়েল পাখির ডিম খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পাবেন-আরো পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর কার্যকরী ৭টি উপায়
- পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎসঃ কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলসের উপস্থিতি যা আপনার শরীরের সুষম পুষ্টির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাছাড়া এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিংক এর পরিমাণও পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে।
- মেটাবলিজম উন্নত করেঃ নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ফলে এতে থাকা ভিটামিন বি বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন বি২ আপনার শরীরের মেটাবলিজমকে উন্নত করে এবং খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আপনি যদি নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খান তাহলে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে উপস্থিত ভিটামিন এ,ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ জনিত রোগ থেকেও আপনাকে রক্ষা করতে পারে।
- চোখের জ্যোতি বাড়াতেঃ আপনি কি কাছের জিনিস দূরে কিংবা দূরের জিনিস কাছে দেখতে পান? আপনি কি চোখে স্পষ্ট দেখতে পান না বা সবকিছু ঝাপসা দেখেন, তাহলে আজ থেকেই কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া শুরু করে দিন। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ এবং লুটেইন নামক উপাদান। যা আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং বয়সজনিত কারণেও চোখের সকল রোগের ঝুঁকি কমায়।
- শরীরের শক্তি বাড়াতেঃ নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করে। শুধু তাই নয়, কোয়েল পাখির ডিম খেলে এটি আপনার শরীরে দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস হিসেবেও কাজ করে।
- হজমে সাহায্য করেঃ আপনার কি পেটে বদহজমের সমস্যা রয়েছে? তাহলে কোয়েল পাখির ডিম খান। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমের প্রোটিন এবং ফ্যাট আপনার হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং পাচন তন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হৃদযন্ত্র ভালো রাখেঃ কোয়েল পাখির ডিমে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান যেমন- ফসফরাস এবং ভিটামিন বি১২ আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিঃ কোয়েল পাখির ডিমের কোয়েলের আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্রম এবং স্মৃতিশক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। আমরা অনেকেই একটু বয়স হলে অনেক কথাই মনে রাখতে পারি না বা স্মরণ করতে পারিনা। এই সমস্যা দূর করতে আপনি এখন থেকেই কোয়েলের ডিম খেতে থাকুন।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম বেশ উপকারী। কারণ কোয়েল পাখির ডিমের প্রোটিন এবং কম কার্বোহাইড্রেট আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সাথে রক্তের গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
- ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করেঃ নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ফলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে এবং আপনার কোষের ক্ষতি কমায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ কোয়েলের ডিম কোয়েলের ডিমে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন যা খেলে দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা থাকে। ফলে এটি আপনার অতিরিক্ত খাওয়া কমায় এবং প্রাকৃতিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়।
- অ্যানিমিয়া দূর করেঃ আপনি কি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগছেন? তাহলে বলব, আপনি নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খান। কেননা, কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে উচ্চ মাত্রার আয়রন যা আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। ফলে কোয়েল পাখির ডিম আপনাকে রক্তস্বল্পতা থেকেও পরিত্রান দিতে পারে।
- শরীরের প্রদাহ কমাতেঃ কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ওভোমিউকয়েড নামক এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন, যা কিনা এন্টি অ্যালার্জিক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং আপনার শরীরের সকল ধরনের প্রদাহ ও এলার্জির প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে।
- ক্ষতিকর টক্সিন অপসারণঃ নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, এটি আপনার রক্ত থেকেও ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে আপনার শরীর ভেতর থেকে সুরক্ষিত থাকে।
- প্রোস্টেট ক্যান্সার রোধ করেঃ কোয়েল পাখির ডিম এমন সব খনিজ উপাদান রয়েছে যা আপনাকে প্রোস্টেট ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করতে পারে।
- শিশুদের বিকাশে কোয়েল ডিমঃ আপনার শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টি অপরিহার্য। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমের প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত কোয়েল পাখি ডিম খেলে এটি আপনার লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখে। তাছাড়া অনেক সময় পিত্তথলিতে যে পাথর হয়,এই পাথর গলাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কোয়েল পাখি ডিম।
- ত্বক কোমল রাখেঃ আপনি কি জানেন কোলাজেন নামক একটি প্রোটিন আপনার ত্বক কোমল রাখে এবং ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর কোয়েল পাখির ডিমের সাদা অংশে রয়েছে লাইসিন ৮ নামক এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা কিনা আপনার ত্বকে কোলাজেন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করেঃ আমরা সকলেই জানি ভিটামিন এ অভাবে রাতকানা রোগ হয়। আর এই "ভিটামিন এ" এর ভালো উৎস হল কোয়েল পাখির ডিম। ফলে কোয়েল পাখির ডিম আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি, রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে।
- চুলের বৃদ্ধিতেঃ শুধু তক নয় বরং আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও ভীষণই উপকারী কোয়েল পাখির ডিম। এর প্রোটিন এবং ভিটামিন বি৭ অর্থাৎ বায়োটিন আপনার চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তবে এই দিন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাওয়াটা নিরাপদ। শুধু কোয়েল পাখির ডিম নয় বরং যে কোনো খাবার অতিরিক্ত খেলে আপনার যেকোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে, তেমনি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। এবার চলুন,কোয়েল পাখির ডিমের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন --আরো পড়ুনঃ আমলকির ২০টি অলৌকিক উপকারিতা ও অপকারিতা
- এলার্জিঃ কিছু মানুষের ডিমের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে। সে হিসেবে কোয়েল পাখির ডিম কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে আপনি যদি ডিমের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হন বা অ্যালার্জি থাকে সে ক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিম খাবেন না।
- ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনঃ কোয়েল পাখির ডিমের মধ্যে সামান্য ব্যাকটেরিয়া যেমন- সালমোনিলা থাকতে পারে। যদিও কোয়েল পাখির ডিমে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে সঠিকভাবে রান্না না করলে বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ডিম রাখা হলে তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- কোলেস্টেরলের ঝুঁকিঃ আপনার যদি উচ্চ কোলেস্টেরল মাত্রা থাকে সেক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিম না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে কোলেস্টরলের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যাঃ যাদের ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের কোয়েল পাখির ডিম এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে। আর এই ফ্যাট ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের রোগীদের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
- পেটের সমস্যাঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ফলে আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- বদহজম, পেটে গ্যাস এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর ডিমঃ আপনি যে খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন সেই খামারগুলি যদি স্বাস্থ্যকর না হয়, তাহলে তা ডিমের গুণমানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- এনজাইমের অভাবঃ কোয়েল পাখির ডিমে যে এনজাইম রয়েছে তা কিছু কিছু মানুষের শরীরে সঠিক মাত্রায় কাজ নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি কোয়েল পাখির ডিমের সর্বাধিক উপকারিতা পেতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়ম নিয়ম মেনে খেতে হবে এই ডিম। কারণ ভুল নিয়মে ডিম খেলে আপনার শরীরের নানান ক্ষতি হতে পারে। এবার চলুন কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন--- প্রথমেই বলি, কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার আগে আপনাকে এই ডিম সংগ্রহ করতে হবে সঠিক সময়ে অর্থাৎ ডিম দেওয়ার পরপরই। কারণ, ডিম যত সতেজ থাকবে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ততই উপকারী হবে।
- আপনি ডিম সংগ্রহের পর ডিমের সেলের উপর যদি কোন ময়লা থাকে তবে সেটি নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। খুব বেশি চাপ দেবেন না তাতে ডিমের সেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- ডিম যদি অতিরিক্ত ময়লা হয় সেক্ষেত্রে হালকা ঠান্ডা পানিতে ডিম ধুয়ে নেবেন তবে খুব বেশি পানি ব্যবহার করবেন না। কারণ এতে ডিমের প্রাকৃতিক গুনাগুন নষ্ট হতে পারে।
- কোয়েল পাখির ডিম যেহেতু আকারে ছোট সেহেতু এই টিম সিদ্ধ করে খাওয়াটাই সবথেকে উত্তম। সুতরাং আপনি কোয়েল পাখির ডিম সেদ্ধ করে বা হাফ বয়েল করে খেতে পারেন।
- আপনি চাইলে কোয়েল পাখির ডিম বিভিন্ন ধরনের সবজির সাথে রান্না করেও খেতে পারেন।
- কোয়েল পাখির ডিম ওমলেট করেও খাওয়া যায়। কিন্তু এই ডিম আকারে ছোট বলে ওমলেট করে খেলে আপনি খুব একটা মজা পাবেন না।
- তাছাড়া কোয়েল পাখির ডিম অমলেট থেকে সিদ্ধ করে খাওয়াটাই বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ অমলেট করে খেলে এতে ডিমের অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
- আপনি কোয়েল পাখির ডিম কেনার সময় ভালো করে দেখে নিন যে ডিমে কোন ছিদ্র আছে কিনা বা ডিম ফাটা কিনা। কারণ ফাটা বা ছিদ্রযুক্ত ডিম খাওয়ার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়।
কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে
আপনারা অনেকেই জানতে চান কোয়েল পাখির ডিমের এলার্জি আছে কিনা। তাহলে জেনে রাখুন, কোয়েল পাখির ডিমে নানাবিধ উপকারিতা থাকলেও এতে কিছুটা এলার্জিক প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে তবে এটি খুবই কম। কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জির প্রধান কারণ হলো এই ডিমের প্রোটিন। যা আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম দ্বারা অপরিচিত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।যাদের কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জি রয়েছে তাদের বিভিন্ন ধরনের এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন, চুলকানি, স্কিন ইরিটেশন, ত্বকে রাশ পড়া ইত্যাদি। আবার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা যেমন- পেট ব্যথা,বমি বমি ভাব এমনকি ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার আনাফাইলাক্সিক্স এর মত মরণঘাতী প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে,
যার জন্য জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন। সুতরাং, কেউ যদি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার পর এনার্জির লক্ষণ বুঝতে পারেন সেক্ষেত্রে এই ডিম না খাওয়াটাই ভালো। আর খেলেও একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাওয়া উচিত। সুতরাং, কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও আপনাকে নিয়ম মেনে খেতে হবে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়
আপনারা অনেকেই জানতে চান কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়। তাহলে শুনুন, কোয়েল পাখির ডিম স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর হলেও প্রতিদিন কতগুলো খাওয়া উচিত তা মূলত নির্ভর করবে আপনার ডায়েট এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ২-৩ কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। কোয়েল পাখির ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গুলোর পরিমাণ বেশি থাকে।কিন্তু কোয়েল পাখির ডিম আকারে ছোট হওয়ায় নিয়মিতভাবে ২-৩ টি ডিম খাওয়াই যথেষ্ট। কেননা অতিরিক্ত ডিম খেলে আপনার কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য জনিত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে,যাদের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে যেমন ধরুন, কোলেস্টেরনের সমস্যা,এলার্জির সমস্যা তাদের এই ডিম খাওয়া সীমিত রাখা উচিত। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন, প্রতিদিন কয়টি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া উচিত।
আকার ও রং
কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয়
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায় তা আপনি ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয় জানেন কি? কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ফলে আপনি শরীরে নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। কোয়েল পাখি ডিম পুষ্টি কোন সমৃদ্ধ হলেও এর কিছু উপকারিতার পাশাপাশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকে। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন জেনে নিন কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয়--- কোয়েল পাখির ডিমে প্রোটিন, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন- ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং খনিজ উপাদান যেমন- আইরন, জিংক, সেলিনিয়াম ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। এই উপাদান গুলি আপনার শরীরের কোষ পুনর্গঠন শক্তি উৎপাদন এবং মাংসপেশী গঠনে সাহায্য।
- কোয়েল পাখি ডিমে ক্যালরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ডিমের থেকে কম থাকে। ফলে নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার ফলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
- কোয়েল পাখির ডিমে বিদ্যমান ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং অ্যামিনো এসিড আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যা কিনা আপনার শরীরের শক্তির স্তর বজায় রাখতে সহায়ক।
- প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম আপনার এলার্জির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। যার ফলে চুলকানি, রেশ,পেটের ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- কোয়েল পাখির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। ফলে নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এটি সবার জন্য নয়,যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে কেবল প্রযোজ্য।
কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনা
কোয়েল পাখির ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা তো জানলেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, কোয়েল পাখি ডিম এবং মুরগি ডিমের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে এই দুই ডিমের আকার, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ একেবারেই ভিন্ন। এবার চলুন কোয়েল পাখি ডিম ও মুরগির ডিমের মধ্যে প্রধান পার্থক্য গুলো কি কি তা জেনে নিন --আকার ও রং
- কোয়েল পাখির ডিমঃ কোয়েল পাখির ডিম ছোট আকারের হয়ে থাকে। এই ডিমের দৈর্ঘ্য ১.৫-২.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। কোয়েল পাখির ডিম সাধারণত বাদামি বা সাদা দাগ যুক্ত হয়ে থাকে এবং এর ওজন ৯০ গ্রামের মতো হয়।
- মুরগির ডিমঃ অপরদিকে মুরগির ডিম কোয়েলের ডিমের থেকে বেশ বড়সড়ো হয়। মুরগির ডিম সাধারণত দৈর্ঘ্যে ৫-৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় এবং এর ওজন 50-70 গ্রাম। মুরগির ডিমের রং সাধারণত সাদা বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে।
- কোয়েল পাখির ডিমঃ পুষ্টি গুনের দিক থেকে কোয়েল পাখির ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি,জিংক সেলেনিয়াম,আইরন ইত্যাদি থাকে। এছাড়াও কোয়েলের ডিমে কোলেস্টরলের পরিমাণ অন্যান্য ডিমের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
- মুরগির ডিমঃ কোয়েলের ডিমের মতো মুরগির ডিমেও প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ,ভিটামিন ডি, আয়রন এবং সেলিনিয়াম থাকে। তবে মুরগির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কোয়েলের ডিমের থেকে কম থাকে।
- কোয়েল পাখির ডিমঃ কোয়েল পাখির ডিমে সাধারণত ক্যালরি পরিমান থাকে ১৪-২০ ক্যালোরি।
- মুরগির ডিমঃ এদিকে মুরগির ডিমের ক্যালোরি পরিমাণ কোয়েল পাখি থেকে অনেকটাই বেশি ৭০-৮০ ক্যালোরি।
পুষ্টির ঘনত্ব
- কোয়েলের ডিমঃ কোয়েল পাখি ডিমের পুষ্টি উপাদান ঘনত্ব অন্যান্য ডিমের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের অধিক ঘনত্ব সরবরাহ করতে পারে।
- মুরগির ডিমঃ মুরগির ডিম ও পুষ্টিকর কিন্তু কোয়েলের ডিমের থেকে এর ঘনত্ব কিছুটা কম থাকে।
- কোয়েলের ডিমের স্বাদঃ কোয়েল পাখির ডিমের স্বাদ সাধারণত মুরগির ডিমের চেয়ে একটু তীব্র ও গাঢ় হয়।
- মুরগির ডিমের স্বাদঃ মুরগির ডিমের সার তুলনামূলকভাবে কোয়েল পাখি ডিমের থেকে একটু হালকা এবং এর টেক্সচার বেশি ক্রিমি হয়।
- কোয়েল পাখির ডিমঃ কোয়েল পাখি ডিম আকারে ছোট হওয়ায় এই ডিম শুধুমাত্র সেদ্ধ খেতেই সকলে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। রান্নার ক্ষেত্রে কোয়েল পাখি ডিম খুব একটা ব্যবহৃত হয় না।
- মুরগির ডিমঃ এটিকে মুরগির ডিম সব ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা যায় যেমন ধরুন অমলেট,কেক,পেস্ট্রি,নুডুনস।
- কোয়েল পাখির ডিমঃ কোয়েল পাখি ডিম সচরাচর হাতের নাগালে পাওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। কোয়েল পাখির ডিমের দাম মুরগির ডিমের থেকে অনেকটাই কম হয়।
- মুরগির ডিমঃ এদিকে মুরগির ডিম আপনি যেকোনো সময় যেকোনো দোকান থেকে পেয়ে যেতে পারেন। কোয়েল পাখির ডিমের থেকে মুরগির ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে।
শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের যত উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা শিশুদের জন্যও কম নয়। আপনি আপনার শিশুকেও কোয়েল পাখির ডিম খাওয়াতে পারেন। কারণ, শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন শিশুদের জন্য কোয়েল পাখি ডিমের উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে সে ব্যাপারে জেনে রাখুন--- উচ্চমানের প্রোটিনঃ কোয়েল পাখির ডিমের উচ্চমানের প্রোটিন থাকে যা আপনার শিশুর মাংসপেশি এবং কোষের বিকাশে সহায়ক হতে পারে। তাছাড়া প্রোটিন শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এমনিতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
- ভিটামিন বি ১২ সরবরাহঃ কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি ১২ যা আপনার শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, ভিটামিন বি১২ আপনার শিশুর রক্তের গঠনেও ভূমিকা রাখে।
- ভিটামিন ডি এর উৎসঃ ভিটামিন ডি এর একটি দুর্দান্ত উৎস হলো কোয়েল পাখির ডিম। আর শিশুদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভিটামিন বি এর ভূমিকা অনবদ্য। তাছাড়া এই ভিটামিন ডি আপনার শিশুর শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে।
- আয়রনের উৎসঃ আইরনের একটি ভালো উৎস হল কোয়েল পাখি ডিম। কোয়েল পাখি ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন থাকে যা আপনার শিশুকে অ্যানিমিয়া থেকে রক্ষা করতে পারে এবং সেই সাথে এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে কাজ করে।
- জিংক এবং সেলেনিয়ামঃ জিংক এবং সেলিনিয়াম এই খনিজ উপাদান গুলি আপনার শিশুর ইমিউন সিস্টেমের শক্তি দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং আপনার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- শক্তি বৃদ্ধিঃ কোয়েল পাখির ডিমে যে পুষ্টি ও খনিজ উপাদান গুলো রয়েছে তা আপনার শিশুর শরীরের শক্তি স্তর বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিঃ এই ডিমের অ্যামিনো এসিড আপনার শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ কোয়েল পাখির ডিমের রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন এবং সহজপাচ্য খাদ্য উপাদান যা আপনার শিশুর হজম ক্রিয়া সহজ করতে পারে।
কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের যেমন উপকারিতা অনেক তেমনি এর মাংসও স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা জানলে আপনি আজ থেকেই এই মাংস খাওয়া শুরু করবেন। এবার চলুন কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা কি কি হতে পারে সে বিষয়ে জানুন -- কোয়েল পাখির মাংসে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকে,যা আপনার শরীরের গঠনে সাহায্য করে।তাছাড়া এই প্রোটিন আপনার ত্বক,চুল এবং নখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- কোয়েল পাখির মাংসের থাকে ভিটামিন বি ১২ যা আপনার স্নায়ুতন্ত্রের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়,এটি আপনার রক্তের সঠিক গঠন, স্নায়ু সিষ্টেমের কার্যকারিতা ঠিক রাখা এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করে।
- কোয়েল পাখি মাংসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি রয়েছে। এই ভিটামিন এ আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন ডি আপনার দাঁত ও হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- আপনি কি অ্যানিমিয়ার সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আজ থেকে কোয়েল পাখির মাংস খাওয়া শুরু করুন। কেননা কোয়েল পাখির মাংস দিয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন যা আপনার অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায দূর করতে পারে।
- কোয়েল পাখির মাংসে অন্যান্য মাংসের তুলনায় কোলেস্টেরলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ফলে এটি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- তাছাড়া যারা ওজন কমাতে চান বা ওজন নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন তারাও এই মাংস খেতে পারেন। কম চর্বিযুক্ত হওয়ার কারণে কোয়েল পাখির মাংস খেলে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
- আপনি কি দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন? এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে কোয়েল পাখির মাংস। কেননা কোয়েল পাখির মাংসে সহজপাচ্য প্রোটিন এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজতর করে তোলে।
- আপনি যদি নিয়মিত কোয়েল পাখির মাংস খান, তাহলে এই মাংসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেলসের ঘনত্ব আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে।
- কোয়েল পাখির মাংস রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।ফলে কোয়েল পাখির মাংস খেলে এটি আপনার প্রদাহ জনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ারও বেশ কিছু উপকারিত রয়েছে। গর্ভকালীন সময়ে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় কোয়েল পাখির ডিম যোগ করে এর থেকে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিম খেলে আপনার কি কি উপকার হতে পারে সে বিষয়ে জানুন-- কোয়েল পাখির ডিম রয়েছে জিংক এবং সেলেনিয়াম যা একজন গর্ভবতী মায়ের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে। এই খনিজ গুলি আপনার গর্ভকালীন সময়ে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের সঠিক শারীরিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
- গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া খুব সাধারন একটি সমস্যা। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি পেতে আপনি কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন যা আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়ক হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত সন্তানের হাড়ের গঠনে ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন এই সময়ে আপনি কোয়েল পাখির ডিম খেয়ে আপনার শরীরের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
- কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন এ এর একটি দুর্দান্ত উৎস। আর এই ভিটামিন এ একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রূণের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
- কোয়েল পাখির ডিমে ভিটামিন বি-১২ প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই ভিটামিন বি-12 গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীর এবং তার সন্তানের স্নায়ু সিস্টেমের বিকাশে সহায়ক।
- তাছাড়া কোয়েল পাখি ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, যা গর্ভবতী মায়ের কোষ পুনর্গঠন এবং গর্ভস্থ সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রোটিন আপনার অনাগত সন্তানের মাংসপেশি এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ
কোয়েল পাখির ডিমের এতসব উপকারিতা জানার পরে আপনি এবার নিশ্চয়ই পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? চলুন তাহলে, প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েল পাখির ডিমে কি পরিমাণ কষ্ট উপাদান রয়েছে তা জেনে নিন--পুষ্টি উপাদান | গুণমান |
---|---|
ক্যালরি | ১৫৫ কিলো ক্যালরি |
প্রোটিন | ১৩.১ গ্রাম |
মোট ফ্যাট | ১১.১ গ্রাম |
ভিটামিন এ | ৫০০ IU |
ভিটামিন বি১২ | ১.৮ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন ডি | ২.৯ |
জিংক | ১.৬ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ৩.৭ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ৩৪.০ |
কোলেস্টেরল | ৭৪৩ মিলিগ্রাম |
কোয়েল পাখির ডিমের দাম ২০২৪
আপনারা অনেকেই কোয়েল পাখির ডিমের দাম সম্পর্কে জানতে চান। অনেকেই আছেন যাদের কোয়েল পাখির ডিমের দাম সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকার কারণে,অনেক সময় এই ডিম ক্রয় করতেও দ্বিধা বোধ করেন। আজ আপনাকে কোয়েল পাখির ডিমের দাম সম্পর্কে জানিয়ে দিব, যাতে করে আপনি বাজার থেকে খুব সহজেই এই ডিম কিনতে পারেন। আপনি যদি শহরাঞ্চলে বসবাস করেন সেক্ষেত্রে প্রতি ডজন অর্থাৎ ১২টি কোয়েল পাখির ডিম ১৫০-২৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।বিশেষ করে ঢাকা,চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোতে এই ডিমের সরবরাহ কম থাকার কারণে এবং চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।অন্যদিকে আপনি যদি গ্রামাঞ্চলে বা গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন সেক্ষেত্রে এই ডিমের দাম কিছুটা কম হতে পারে। খানিকটা গ্রাম অঞ্চলের দিকে আপনি প্রতি ডজন কোয়েল পাখির ডিম পাবেন ১০০-১৫০ টাকায়। তবে,এই ডিমের দাম বিভিন্ন বাজার, মৌসুম এবং স্থানীয় সরবরাহের উপর নির্ভর করে কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
কোয়েল পাখি ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
কোয়েল পাখির ডিম নিঃসন্দেহে অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর একটি খাবার।কিন্তু এই ডিমে রয়েছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৮৪৪ মিলিগ্রাম যা কিনা একটি মুরগির ডিমের থেকেও অনেক বেশি। সুতরাং, আপনি যদি প্রতিদিন ২০০ গ্রাম এর বেশি কোলেস্টেরল খেতে না চান,সেক্ষেত্রে বলবো কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার আগে আপনার কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।লেখকের মন্তব্য
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই এখন অবগত হয়েছেন। কোয়েল পাখির ডিমের আকার দেখে আপনি কখনোই বোকা বনে যাবেন না! মনে রাখবেন, কোয়েল পাখির পাঁচটি ডিম সমান একটি মুরগির ডিম। বর্তমানে দেশি ও ফার্মের মুরগির ডিমের পাশাপাশি কোয়েল পাখির ডিম ব্যাপক ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এর পুষ্টিগুণের কারণে। তাছাড়া,পৃথিবীতে যত প্রকার খাদ্য উপযোগী প্রতিটি ডিম রয়েছে তন্মধ্যে কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিগুণে সর্বশ্রেষ্ঠ।শুধু তাই নয় চীনা ঔষধেও এই ডিমের ব্যবহার রয়েছে। আপনি যদি কোয়েল পাখির ডিম এখনো না খেয়ে থাকেন তাহলে আজ থেকে আপনার খাদ্য তালিকায় কোয়েল পাখির ডিম যোগ করে নিন। নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খান এবং পেতে থাকুন এর সর্বাধিক পুষ্টি উপকারিতা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url