সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ৭টি দর্শনীয় স্থান

সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ সম্পর্কে আপনি জানতে চান? সিলেট পর্যটন ম্যাপ সম্পর্কে আপনার কি কোন ধারনা আছে? যদি না থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন। 

সিলেটের-সবচেয়ে-জনপ্রিয়-৭-টি-দর্শনীয়-স্থান
কারণ, আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের পর্যটন ম্যাপ সম্পর্কে।  তাহলে চলুন দেরি না করে এক্ষুনি আর্টিকেলটি পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সিলেটের দর্শনীয় স্থান

সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ

সিলেট বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জেলা যার পাহাড়ে রূপ বিস্ময়কর জলপ্রপাত এবং বিস্তীর্ণ চা বাগান পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এখানে চা বাগানগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে মালানি ছাড়া চা বাগান যেখানে সবুজ চায়ের গাছের মধ্য দিয়ে হাটা এক অপরূপ অভিজ্ঞতা।তাছাড়া সিলেটের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে সুবিধি জলপ্রপাত, যা তার কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ এবং সজীব প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। 

আরো পড়ুনঃ  চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে কি হয়?

এছাড়াও সিলেটের দারুন আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল জাফলং যেখানে সীমান্ত নদী এবং পাহাড়ি ভুমির মিলনে তৈরি হয়েছে এক অসাধারণ দৃশ্য, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করতে বাধ্য। বিখ্যাত স্থানগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এখানকার বিরল প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতও দারুন ও জনপ্রিয়।

 সিলেটের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহনকারী হযরত শাহজালাল এবং হযরত শাহপরান দরগাও স্থানীয় এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের কাছে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে।সিলেটের এই বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য একে পর্যটকদের জন্য দিনকে দিন বিশেষ আকর্ষণীয় গড়ে তুলেছে। আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের এই সকল দর্শনীয় স্থানগুলো।

সিলেটের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান রাতারগুল

সিলেটের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রাতারগুল একটি। এটি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাতারগুল গ্রামে অবস্থিত। যা বাংলাদেশের একমাত্র জলাভূমি বন হিসেবেও পরিচিত। সিলেট শহর থেকে প্রায় 26 কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এই এলাকা যেখানে বিশাল জলাভূমি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং জীববৈচিত্র্য একত্রিত হয়েছে।

বিশেষ করে বর্ষাকালে এখানে পানি জমে গেলে অভূতপূর্ব অপরূপ দৃশ্যে তৈরি হয় এবং সেই সাথে জলাভূমির মধ্যে গাছের প্রতিচ্ছবি এবং শান্ত জলরাশি প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরো প্রাকৃতিকভাবে প্রকাশ করতে থাকে। রাতারগুলের এই জলাভূমিতে রয়েছে গুল্ম,বনজ এবং জলজ উদ্ভিদের বিস্তৃতি যা আপনার জন্য এক অনন্য প্রাকৃতিক বাসস্থান তৈরি করেছে। 

এই বোন মূলত প্রাকৃতিক বোন হলেও বাংলাদেশ বন বিভাগ কর্তৃক পরবর্তীতে বেদ কদম হিজল মুড়তা সহ নানা জাতের জল সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া,জলমগ্ন এই বনে আরো রয়েছে হিজল,করচ,বরুণ, পিঠালি অর্জুন ছাতিম গুটিজাম এবং বটগাছ। জলে নিমনাঙ্গ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বনের গাছপালা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখ পাখালির ডাক শুনতে প্রচুর পর্যটক আসেন।

বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পর্যটকরা এখানে ভিড় করতে থাকেন। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকরা নৌকা ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে থাকেন যা তাদের পানির উপর ভাসমান গাছপালা এবং বিরল প্রজাতির পাক পাখালি ও অন্যান্য প্রাণী দেখার সুযোগ করে দেয়। এই বনে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি ঘাট যার প্রথমটি মোটর খাট, দ্বিতীয়টি মাঝোর ঘাট, এবং তৃতীয়টি শেষের ঘাট।

সিলেটের-সবচেয়ে-জনপ্রিয়-৭-টি-দর্শনীয়-স্থান
এই তিনটি ঘাটের মধ্যে মাঝের ঘাটের মাধ্যমেই প্রবেশ করাটা সব থেকে নিরাপদ এবং উত্তম। কারণ, মাঝের এই ঘাটতি আপনি খুব সহজে অল্প সময়ে বনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। এই ঘাটের মাঝিরা আবার পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের জন্য লাইক জ্যাকেটও সরবরাহ করে থাকে। এবার চলুন আপনি সিলেট শহর থেকে রাতারগুল কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন,কি খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
দূরত্বঃ সিলেট শহর থেকে প্রায় 15 কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর ইউনিয়নে উত্তর পূর্বে গোয়াইঘাট উপজেলায় অবস্থিত এই রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট
যাতায়াত ব্যবস্থা
সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে।
  • রেলওয়ে স্টেশনঃ সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাতারগুল এর দূরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। এতে আপনার খরচ পড়বে ৩৫০০-৪০০০ টাকা সময় লাগবে প্রায় ১-১.৩০ মিনিট।
  • গাড়ি বা ট্যাক্সিঃ সিলেট শহর থেকে আপনি গাড়ি বা ট্যাক্সি যোগে সরাসরি রাতারগুল পৌঁছাতে পারেন। রাতারগুল যাওয়ার এটিই সবচেয়ে আরামদায়ক এবং দ্রুততম উপায়। রাস্তার জ্যামের উপর নির্ভর করে এতে প্রায় ৪০-৬০ মিনিট সময় লাগতে পারে।
  • বাস যোগেঃ সিলেট শহর থেকে আপনি মৌলভীবাজার বা কুলাউড়া অভিমুখে বাসে উঠতে পারেন এবং সেখান থেকে রাতার গুলের জন্য স্থানীয় পরিবহন বা অটোরিকশা ব্যবহার করতে পারেন। বাসযোগে রাতারগুল যেতে আপনার প্রায় ১-১.৫ সময় লাগতে পারে।
  • সিএনজি /অটো রিক্সাঃ সিলেট শহরের যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি অটোরিকশা বা ভ্যানে করেও রতারগুল যাওয়া সম্ভব। তবে এটা একটু ব্যয়বহুল হতে পারে।
আবাসিক ব্যবস্থা
রাতারগুলার আশেপাশে আপনার থাকার বেশ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন-
  • রিসোর্ট /হোটেলঃ মৌলভীবাজার বা কুলাউড়া শহরে বেশ কিছু রিসোর্ট বা হোটেল রয়েছে ভ্রমণের জন্য ভালো বেস ক্যাম্প হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেমন মৌলভীবাজার শহরে "পানির পিঁপড়ে" বা "রেটেল রিসোর্ট"বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া থাকার জন্য আপনি গ্রীন সিলেট ট্যুরস এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
  • লোকাল গেস্ট হাউসঃ আপনি চাইলে রাতারগুলের আশেপাশে স্থানীয় বিভিন্ন গেস্ট হাউস বা ছিমছাম হোমস্টে থাকতে পারেন। এতে আপনার খরচ তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম হবে।
  • ক্যাম্পিংঃ আপনি যদি প্রকৃতির সঙ্গে আরো কাছাকাছি থাকতে চান,তাহলে রাতারগুল এর কাছাকাছি ক্যাম্পিং করারও বিকল্প রয়েছে।তবে সে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্যাম্পিং করার পূর্বে আপনাকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
আপনি ইচ্ছে করলেই ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের এই জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানটি। আরেকটি কথা, বর্ষাকালে রাতারগুল ভ্রমণের আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে তবেই যাবেন। কারণ বর্ষাকালে রাতারগুলের জলাভূমি বেশি জলমগ্ন থাকে।

সিলেটের পর্যটন পার্ক

সিলেটের কিছু দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে পর্যটন পার্ক। সিলেট শহর এবং তার আশেপাশে বেশ কিছু চমৎকার পর্যটন পার্ক রয়েছে যা ভ্রমণকারীদের জন্যই বলুন আর পরিবার বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য বলুন এটি একটি উপযুক্ত জায়গা। আপনি চাইলে সিলেটের অন্যান্য স্থান ভ্রমণের সাথে সাথে এই পার্ক গুলোও ঘুরে আসতে পারেন। এবার চলুন সিলেটের সকল পর্যটন পার্ক সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানিয়ে দিচ্ছি--

  • সিলেট কেন্দ্রীয় পার্কঃ সিলেট কেন্দ্রীয় পার্ক অবস্থিত সিলেট শহরের চৌহাট্টা এলাকায়। এটি শহরের একেবারেই কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। কেন্দ্র পার্কে রয়েছে বিশাল সবুজ এলাকা,সুদৃশ্য হাঁটার পথ এবং শিশুদের জন্য উন্মুক্ত সুবিশাল খেলার মাঠ।
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পার্কঃ পেপারটি সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই অবস্থিত। এই পার্কটি মূলত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। এখানেও রয়েছে প্রশস্ত সবুজ এলাকায় সুগন্ধি ফুলের বাগান এবং হাঁটার জন্য উপযুক্ত পথ। শিক্ষার্থীদের বিশ্রাম এবং একত্রিত হওয়ার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। শিক্ষার্থীদের বাইরে ভ্রমণ পিপাসু হিসেবে আপনি চাইলেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পার্কটি ঘুরে আসতে পারেন।
  • শাহপরান পার্কঃ শাহপরান পার্ক অবস্থিত শাহপরান মাজারের ঠিক পাশেই। এই পার্কটি খুব একটা বড় তা নয়,কিন্তু ছোট আকারের এই পার্কটি অত্যন্ত সুসজ্জিত। বিশেষ করে যারা শাহ পরানের মাজার পরিদর্শন করতে আসেন সেই সব দর্শনার্থীদের জন্য এই পার্টি তৈরি করা হয়েছে।
  • সিলেট চিড়িয়াখানা পার্কঃ সিলেট শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত সিলেট চিড়িয়াখানা পার্ক। সিলেট চিড়িয়াখানা পার্কে বিভিন্ন প্রজাতি পশু পখি এবং গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এখানে শিশুদের জন্য নানা ধরনের বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আর তাছাড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছেই।
  • মাধবকুণ্ড ইকোপার্কঃ মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এর কাছে তৈরি করা হয়েছে এই মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডের একেবারে পাশে অবস্থিত।পার্কটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পিকনিকের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।তাছাড়া এই পার্কের জলপ্রপাতের অপরুপ দৃশ্য এবং সবুজ মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
  • জাফলং পার্কঃ জাফলং এর নদীর পাশেই অবস্থিত এই পার্ক। জাফলং পার্ক নদীর পাশে বিস্তৃত যেখানে থেকে আপনি নদীর জলপ্রপাত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ খুব সহজেই উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া এখানে নৌকা ভ্রমন পাথর সংগ্রহ এবং নদীর পাশে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগেরও সুযোগ রয়েছে।
  • লালাখাল পার্কঃ লালাখাল একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে নীল রঙের নদী এবং চারপাশের পাহাড়ি দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে। নদীর নীল জল এবং সবুজ পাহাড়ের পরিবেশ এই পার্কের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
  • হানিমুন পার্কঃ সিলেট শহরের কাছাকাছি আরেকটি পার্ক রয়েছে যার নাম হানিমুন পার্ক। হানিমুন পার্ক একটি ছোট শান্ত পরিবেশ বিশিষ্ট সবুজের আচ্ছাদিত একটি পার্ক। সাধারণত ছোটখাটো পরিবারের পারিবারিক ভ্রমণের জন্য আদর্শ পার্ক হলো এই হানিমুন পার্ক।
যোগাযোগ ও সুবিধা
  • যাতায়াতঃ সিলেট শহর থেকে পার্কগুলোতে পৌঁছানোর জন্য আপনি ট্যাক্সি, অটোরিকশা, সিএনজি কিংবা স্থানীয় বাসে করেও যেতে পারেন। শহরের প্রধান সড়ক এবং বাস রুট ধরে সহজেই যাতায়াত করা যায়।
  • খাবারঃ এই পার্ক গুলোর আশে পাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট ক্যাফে এবং খাবারের দোকান সিলেটি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানের খাবারও সরবরাহ করে থাকে।
  • অন্যান্য সুবিধাঃ এই পার্কগুলোর কাছে বিভিন্ন দোকান এবং বাজার রয়েছে যেখান থেকে আপনি দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনের সামগ্রী কিংবা হস্তশিল্পের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে পারেন।

সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম সিলেটে পর্যটন পার্ক গুলো সম্পর্কে। এবার আপনি কোলাহুলমুক্ত যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে রেখে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান এবং পার্ক গুলো থেকে।

সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় স্থান জাফলং

আপনি আপনার পরবর্তী ভ্রমণের দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন সিলেটের জাফলং কে।সিলেটের জাফলং একটি অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা,যা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় এবং মেঘালয়ের সন্নিকটে অবস্থিত। এই অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ হল কালনি নদীর স্রোত এবং মেঘালয়ের পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য যা কিনা প্রকৃতি প্রেমিকদের মুগ্ধ করে। তাছাড়া জাফলং এর শান্ত নদী, পাথর উত্তোলনের দৃশ্য এবং পাহাড়ি গ্রামগুলির ভেতর দিয়ে বিরাজ করে শান্ত পরিবেশ।

তাছাড়া, সম্প্রতিকালে সিলেটে ঘুরে দেখার মত আরো নতুন কিছু দর্শনীয় স্থান উন্মোচিত হয়েছে যার মধ্যে একটি হলো সংগ্রামপুঞ্জি বা সেনগ্রামপুঞ্জি ঝর্না বা মায়াবী ঝর্ণা। সিলেটের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র 15-20 মিনিট হেঁটেই আপনি এই সংগ্রামপুঞ্জিতে যেতে পারেন এবং এর নৈসরিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আবার, আপনি নৌকা ভ্রমণ করেও নদীর প্রশান্তি উপভোগ করতে পারেন। 

শুধু তাই নয় আপনি এখানের স্থানীয় বাজারে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রিক জিনিসপত্র কেনার সুযোগও পাবেন। সম্মানিত পাঠক, এবারে চলুন জাফলং যে আপনি কোথায় থাকবেন, ক কিভাবে যাবেন, কি খাবেন সে সম্পর্কে জানুন-
দূরত্ব
সিলেট শহর থেকে জাফলং এর দূরত্ব প্রায় ৬৫-৭০ কিলোমিটার। যা প্রায় ১.৫ থেকে ২ ঘন্টার পথ।
যাতায়াত ব্যবস্থা

  • গাড়ি/ট্যাক্সিঃ সিলেট শহর থেকে জাফলং পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ এবং আরামদায়ক উপায় হল প্রাইভেট গাড়ি বা ট্যাক্সি। গাড়ি বা ট্যাক্সি যুগে সড়কপথে জাফলং যেতে আপনার প্রায় ১.৫-২ ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে।
  • বাসঃ সিলেট শহর থেকে কুলাউড়া অভিমুখে আপনি বাসে চড়ে সেখানে পৌঁছে তারপর স্থানীয় যানবাহন যেমন- অটোরিকশা নিয়ে জাফলং পৌঁছাতে পারেন। বাসযোগে জাফলং পৌঁছাতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টার মতো।
  • সিএনজি অটোরিক্সাঃ তাছাড়া আপনি শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে সিএনজি অটো রিক্সা নিয়েও জাফলং যেতে পারেন। এটি অত্যন্ত সহজ একটি উপায়।

আবাসিক ব্যবস্থা

  • রিসোর্ট ও হোটেলঃ জাফলং এর কাছাকাছি মৌলভীবাজার বা কুলাউড়া শহরে বেশ কিছু নামিদামি রিসোর্ট বা হোটেল রয়েছে। যেমন ধরুন "সালবাটি রিসোর্ট"। আপনি চাইলে এই রিসোর্টকে আবাসিক স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
  • লোকাল গেস্ট হাউসঃ আপনি যদি নামিদামি রিসোর্টে না থাকতে চান সেক্ষেত্রে জাফলং এর আশেপাশে একটু খোঁজ করলেই অনেক স্থানীয় গেস্টহাউস পেয়ে যাবেন। এটি আপনার জন্য অনেকটাই সাশ্রয়ী হবে।
  • ক্যাম্পিংঃ আপনার যদি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মিশে ক্যাম্পিং করার ইচ্ছে থাকে সেটিও করতে পারবেন।কারণ জাপানের আশেপাশে বেশ কিছু ক্যাম্পিং সাইটও পাওয়া যায়।

খাবার

  • স্থানীয় খাবারঃ আপনি জাফলং এসে সিলেটি বিভিন্ন খাবার যেমন- বিরিয়ানি, কাঁঠাল ভর্তা, মাছের তরকারি খেতে পারেন।বিশেষ করে এখানের চা ভীষণ জনপ্রিয় যা খেতে কখনোই মিস করবেন না। তাছাড়া আপনি জাফলং এর স্থানীয় খাবার হিসেবে তাজা মাছ এবং গ্রামীণ পদ্ধতিতে রান্না করা বিভিন্ন খাবারের আস্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।
  • রেস্টুরেন্ট ও খাবার হোটেলঃ যার সঙ্গে আশেপাশে বেশ কিছু স্থানীয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। আবার আপনি মৌলভীবাজার শহরেও বেশ কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট পাবেন।
  • পাহাড়ি খাদ্যঃ আপনি চাইলে এখানে পাহাড়ি এলাকার বিশেষ কিছু খাবার যেমন- মাছের ঝোল, পেঁপে ভর্তা এবং লেবু চাও খেতে পারেন।

জাফলং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পাহাড়ি দৃশ্য এবং মনোরম শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ একজন ভ্রমণ পিপাসুর জন্য আদর্শ স্থান হতে পারে। যেখানে আপনি প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে পারেন এবং আধুনিক জীবনের সব থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে পারেন।

সিলেটের আরেক দর্শনীয় স্থান লালাখান

সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আরেকটি হল লালাখান। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে জৈন্তাপুর নামক উপজেলায় এই স্বচ্ছ নীল পানির নদী লালা খান অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি হলো এই লালাখান। আপনি যদি প্রকৃতিকে একান্তই নিজের করে অনুভব করতে চান সে ক্ষেত্রে বলবো ভ্রমণের জন্য এই স্থানটি বেশ উপযোগী। 

পুরো লালাখান জুড়ে রয়েছে পাহাড়, ঘন সবুজ বন, নদী, চা বাগান এবং নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার। এই স্থানটি তার crystal clear নীল পানির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত যা পাহাড়ি নদী হিসেবে লালা খানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এই নদীর সচ্ছতা এতটাই মনমুগ্ধকর যে পানির তলদেশ পর্যন্ত খুব সহজেই দেখা যায়। 

তাছাড়া এখানের পাহাড়ি পাথর,বন্যপ্রাণী এবং স্থানীয় খাসিয়া জনগণের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রা এই লালা খানের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরো দ্বিগুন পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছে। লালাখানে যেয়ে আপনি নদীতে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন। এতে করে সেখানে নদীর দুইপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশের সৌন্দর্য খুব সহজেই উপভোগ করতে পারেন।

পানি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এখানকার মানুষের সহজ-সরল জীবন যাপন আপনাকে দেবে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এবারে সিলেট শহর থেকে আপনি লালা খান কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--
দূরত্বঃ সিলেট শহর থেকে লালাখালের দূরত্ব প্রায় 30 কিলোমিটার যা সাধারণত ১-১.৫ ঘন্টার পথ।
যাতায়েত ব্যবস্থা  

  • গাড়ি/ট্যাক্সিঃ সিলেট শহর থেকে লালাখালে পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ এবং আরামদায়ক উপায় হল প্রাইভেট গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া করা। সড়কপথে এই যাত্রায় আপনার প্রায় ১-১.৫ ঘন্টার মত সময় লাগবে এবং এতে আপনি সরাসরি লালাখাল পৌঁছাতে পারবেন।
  • বাসঃ আপনি চাইলে বাসযোগেও লালাখাল যেতে পারেন। এর জন্য আপনাকে সিলেট শহর থেকে কুলাউড়া বা মৌলভীবাজার অভিমুখে বাসে চড়ে সেখানে পৌঁছানোর পরে স্থানীয় অটোরিকশা বা সিএনজি করে লালাখাল যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে বলে রাখি বাস যাত্রায় আপনার প্রায় ১.৫ ঘণ্টার মত সময় লাগতে পারে এবং তারপর স্থানীয় যানবাহন ব্যবহার করে আপনাকে লালাখালে পৌঁছাতে হবে।
  • সিএনজি অটো রিক্সাঃ সিলেট শহরেযেকোনো স্থান থেকে খুব সহজে অটো রিক্সা বা সিএনজি ভাড়া করে সরাসরি লালা খান পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব।

আবাসিক ব্যবস্থাঃ লালাখালির কাছাকাছি মৌলভীবাজার শহরে বেশ কিছু হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে যেমন "হোটেল সিলেট গার্ডেন" বা মৌলভীবাজার রিসোর্ট। তাছাড়া সিলেট শহরেও বিভিন্ন ধরনের হোটেল ও রিসোর্ট পাওয়া যায়, যেখানে আপনি থাকতে পারেন।
লোকাল গেস্ট হাউসঃ আপনি চাইলে নানা খালের বিভিন্ন স্থানীয় গেস্ট হাউজেও থাকতে পারেন।এটি আপনার জন্য অনেকটাই সাশ্রয়ী হবে। এগুলো বেশিরভাগই গ্রামীন পরিবেশে থাকে এবং এতে করে আপনি গ্রামীণ পরিবেশের আস্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।
খাবার
স্থানীয় খাবারঃ আপনি লালাখাল গেলে অবশ্যই লালা খান এবং এর আশপাশের এলাকার স্থানীয় সিলেটি যে খাবার রয়েছে যেমন ভুনা খিচুড়ি মাছের ঝোল চচ্চড়ি এবং বিরিয়ানি এই খাবারগুলোর সাত নিতে চেষ্টা করবেন। তাছাড়া, মৌলভীবাজার শহরেও বেশ কিছু ভালো ভালো রেস্টুরেন্টে এই খাবারগুলি আপনি পেয়ে যাবেন।
পাহাড়ি খাবারঃ পাহাড়ি খাবার হিসেবে তাজা মাছ পেঁপে ভর্তা লেবু চা ইত্যাদি খেতে পারেন। একটি কথা মনে রাখবেন, এখানকার খাদ্য পণ্য গুলোর মধ্যে কিন্তু একেবারেই স্থানীয় এবং অর্গানিক উপাদান ব্যবহৃত হয়।
রেস্টুরেন্ট মৌলভীবাজার শহরে বেশ কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে আপনি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন খাবার খেতে পারবেন। যেমন- ধরুন "গ্র্যান্ড সিলেট রেস্টুরেন্ট" বা "মৌলভীবাজার কিচেন" ।

সিলেটের মালনিছড়া চা বাগান

সিলেটের মালনিছড়া চা বাগান হতে পারে আপনার পরবর্তী সিলেট ভ্রমনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মদ্ধে একটি। মালনি ছড়া চা বাগান, সিলেটের একটি বিখ্যাত চা বাগান যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক থেকে বেশ পরিচিত। সিলেট শহর থেকে প্রায় 35 কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার অন্তর্গত এই চা বাগানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই 1950 সালে। 

মালনিছড়া চা বাগানের বিস্তৃত প্রান্তরে বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মনোরম চা বাগানের সুসজ্জিত সারী যা একটি সবুজ সমাহার সৃষ্টি করতে পারে। শুধু সবুজ আর সবুজ, মাঝে-মাঝে টিলা বেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ। কোথাও কোন যান্ত্রিক দূষণ নেই, নেই কোন পরিবেশ দূষণও।এখানের পাহাড়ি ভুমি এবং সুদূর প্রান্তের চা বাগান, বাগান থেকে চা পাতা সংগ্রহের প্রক্রিয়া এবং

চা তৈরি করার ঐতিহ্যবাহী কৌশল দেখার মাধ্যমে ভ্রমণ পিপাসুরা তাদের তৃষ্ণা মেটাতে পারেন।তাছাড়া চা বাগানের মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় আপনি এখানের শীতল আবহাওয়া প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা এবং পাহাড়ি হাওয়ার প্রশান্তি উপভোগ করতে পারবেন। এবারে জেনে নিন আপনি সিলেট শহর থেকে মালনিছড়া কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন এবং কি খাবেন সে সম্পর্কে-
দূরত্বঃ সিলেট শহর থেকে মাল নিছড়া চাপা কেন দূরত্ব প্রায় 35 কিলোমিটার যাত্রায় ১ থেকে ১.৫ ঘন্টার পথ।
যাতায়াত ব্যবস্থা

  • গাড়ি/ট্যাক্সিঃ সিলেট শহর থেকে আপনি মানলিছড়া খুব সহজেই যেতে পারেন,যদি একটি প্রাইভেট গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন। গাড়ি বা ট্যাক্সি যোগে মালনিছড়া পৌঁছতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টার মত।
  • বাসঃ আবার সিলেট শহর থেকে মালনিছড়া আপনি বাসে করেও যেতে পারেন। বাসে আপনার সময় লাগবে প্রায় ১.৫ ঘন্টার মত। তবে বাসে করে আপনি সরাসরি মালনিছড়া যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজার অভিমুখে বাসে চড়ে সেখানে পৌঁছার পর, স্থানীয় বিভিন্ন যানবাহন যেমন সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করে আপনাকে মানলিছড়া ছাড়া যেতে হবে।
  • সিএনজি অটো রিক্সাঃ আপনি চাইলে শহরের যে কোন স্থান থেকে সরাসরি সিএনজি অটো রিক্সা করে মালনিছাড়া পৌঁছাতে পারেন।

আবাসিক ব্যবস্থা

  • হোটেল ও রিসোর্টঃ মারলিছড়া চা বাগানের আশেপাশে শ্রীমঙ্গল শহরে বেশ কিছু নামিদামি রিসোর্ট এবং হোটেল রয়েছে যেমন- মধ্যাহ্ন রিসোর্ট,পারফেক্ট প্যালেস এবং স্নিগ্ধা রিসোর্ট। এছাড়া মৌলভীবাজার শহরে আপনি আরো ভালো কিছু হোটেলও পেয়ে যাবেন।
  • লোকাল গেস্ট হাউসঃ শ্রীমঙ্গল এবং মৌলভীবাজার শহরে বিভিন্ন স্থানীয় গেস্ট হাউস রয়েছে যেগুলি আপনার জন্য অনেকটাই সাশ্রয়ী হবে। আপনি ইচ্ছে করলে এই লোকাল গেস্ট হাউজেও থাকতে পারেন।
  • ক্যাম্পিংঃ আপনি চাইলে ক্যাম্পিং করেও থাকতে পারেন কারণ এখানে বিভিন্ন ক্যাম্পিং সাইট রয়েছে। তবে ক্যাম্পিংয়ের জন্য এখানে আপনাকে অনুমতি নিতে হবে।

খাবার

  • স্থানীয় খাবারঃ মালনিছড়া চা বাগান এবং এর আশে পাশের এলাকা থেকে স্থানীয় সিলেটি বিভিন্ন খাবার যেমন- চিড়া, ভুনা খিচুড়ি, মাছের ঝোল এবং মিষ্টি পাওয়া যায়। আপনি চাইলে শ্রীমঙ্গলের ভালো কিছু রেস্টুরেন্টেও এই খাবারগুলি খেতে পারেন।
  • চাঃ বালি ছাড়া চা বাগানে এসে আপনি চা বাগানের বিভিন্ন স্বাদের নিজস্ব চা এবং কাঁচামাল হিসেবে ও সংগ্রহ করতে পারেন। আর সেই সাথে এখানে তাজা চায়ের আস্বাদ, পানীয় তো অবশ্যই উপভোগ করবেন।
  • রেস্টুরেন্টঃ শ্রীমঙ্গল শহরে আপনি গ্রিনভিউ রেস্টুরেন্ট, মিডল অব সিলেট এবং মেডোউট এর মত বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সিলেটি এবং আন্তর্জাতিক মানের খাবার পাবেন।

ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের সোনার পাহাড় থেকে

সোনার পাহাড় সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানে অবস্থিত। এটি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। পাহাড়টি ঘন বনভূমি সূর্য গাছপালা এবং নানা ধরনের বন্যপ্রাণের আবাসস্থল হিসেবে বেশ পরিচিত। সোনার পাহাড়ের সৌন্দর্য অতুলনীয়, এটি প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি।

আপনি শুনশান পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচের সবুজ ভূমি এবং দূরবর্তী পাহাড়ের সারি দেখতে পাবেন। এখানে প্রবাহিত সোনার পাহাড়ের জলপ্রপাত বিশেষ করে বর্ষাকালে দারুন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সোনার পাহাড়ের জলপ্রপাতের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য এবং পাহারের পাদদেশে অবস্থিত পরিষ্কার ঝরনার পানি ভ্রমণ পিপাসুদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে।

আপনি সিলেট গেলে অবশ্যই এই সোনার পাহাড় ভ্রমণে যাবেন। কারণ এই অঞ্চলের শান্তিপূত পরিবেশ এবং নির্মল প্রকৃতি আপনাকে এক ধরনের আর্থিক প্রশান্তি দেবে। এই সোনার পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আপনারা যারা ভ্রমণ পিপাসে রয়েছেন, বিশেষ করে তাদের জন্য পরবর্তী গন্তব্য স্থল হতে পারে। যেখানে প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এবার চলুন আপনি সোনার পাহাড়ে কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন সেসব বিস্তারিত জেনে নিন-

যাতায়াত ব্যবস্থা
সিলেট শহর থেকে সোনার পাহাড়ে পৌঁছানোর জন্য আপনি তিনটি পথ ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-
  • সিলেট শহর থেকে বাসে যাত্রাঃ সিলেট শহর থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাসে যাওয়া যায়। সুতরাং আপনি সিলেট বাস স্ট্যান্ড থেকে গোয়াইনঘাটের উদ্দেশ্যে খুব সহজে বাস সার্ভিস পেয়ে যাবেন এবং এতে সময় লাগবে প্রায় ১-২ ঘন্টা। এরপর গোয়াইন ঘাট বাজারে নেমে সেখান থেকে স্থানীয় রিক্সা বা সিএনজি অটোরিকশা করে আপনি সরাসরি সোনার পাহাড়ে পৌঁছাতে পারবেন।
  • জীপ বা ভ্যান ব্যবহারঃ সিলেট শহর থেকে সরাসরি ভ্যান বা জিপে করেও সোনার পাহাড়ে আপনি যেতে পারেন। এই ধরনের যানবাহনে যাওয়াটাই বেশি আরামদায়ক কারণ এখানে রাস্তাগুলো কিছুটা দুর্গম হতে পারে।
  • ট্রেকিংঃ আপনারা যারা ট্র্যাকিং বা পাহাড়ি পথ চলতে ইচ্ছুক তারা সিলেট শহর থেকে নিজস্ব গাড়ি বা স্থানীয় যানবাহন ব্যবহার করে পাহাড়ি পথে ট্রেকিং করতে পারেন। এটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য সুখকর। 
খাবার
  • হোটেল ও রেস্টুরেন্টঃ পাহাড়ের আশেপাশে সোনার পাহাড়ের আশেপাশে খাবারের স্থান সীমিত হতে পারে। তাই সেখানে যাওয়ার আগে আপনি সিলেট শহর থেকে কিছু খাবার সাথে নিয়ে গেলে ভালো হয়।
থাকার ব্যবস্থা
  • স্থানীয় গেস্ট হাউস ও রিসোর্টঃ গোয়াইনহাট এলাকায় কিছু গেস্ট হাউস এবং রিসোর্ট রয়েছে যেখানে আপনি আপনার সাধ্যের মধ্যে রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

সিলেট শহরে থাকার সুযোগ আপনি যদি সোনার পাহাড়ে একদিনের জন্য ভ্রমণ করতে চান, সেক্ষেত্রে সিলেট শহরে থাকার সুযোগ থাকবে। সিলেট শহর বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্টে ভরপুর, যেখানে আপনি সুবিধামত থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান বিছানাকান্দি

সিলেটের বিছানাকান্দি,প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এক জাগ্রত উদাহরণ, যা সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। এই বিছানাকান্দির বিছানা মূলত বাংলাদেশ আর ভারত দুই মিলিয়েই। স্বাভাবিকভাবে এখানে কোন সীমানা তেমনভাবে চিহ্নিত করা নেই। 

ফোনে এই জায়গায় বেড়ানোর সময় আপনার একটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।বিছানাকান্দি প্রকৃতির অমল সৌন্দর্যে ঘেরা একটি পাহাড়ি এলাকা,যেখানে মূল আকর্ষণ হল তার শুদ্ধ ও স্বচ্ছ পাথুরে নদী,মেঘলা পাহাড় এবং সবুজ চা বাগান। এখানে পৌঁছানোর পর আপনি পাবেন বিশাল সবুজ পাহাড়ের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত একটি স্বচ্ছ নদী, 

নদীর উচ্ছল স্রোত এবং পার্শ্ববর্তী চা বাগানের স্নিগ্ধ পরিবেশে ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে তোলে। তাছাড়া নদীর পানির নিচে পাথরের ঝলক এবং চারপাশের মেঘলা আকাশের সঙ্গে যে মেলবন্ধন তা এক অদ্ভুত শৈল্পিক দৃশ্যপট তৈরি করে। এবার তো জেনে নিন সিলেট শহর থেকে আপনি বিছানাকান্দি কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন এবং কি খাবেন--

  • যেভাবে যাবেন বিছানাকান্দিঃ সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দি যেতে আপনাকে প্রথমে অটো রিক্সা করে যেতে হবে হাদারপাড়ে। আর এই হাদারপাড় যাওয়ার সবথেকে সহজ পন্থা হলো, আপনি সিলেট শহর থেকে মালনিছড়ার ওসমানী বিমানবন্দরে ঠিক পেছনের ভোলাগঞ্জের সড়ক ধরে যাবেন। সিলেট শহর থেকে হাজার পাড়ের যাওয়া আসার মোট খরচ অটোরির সাথে পড়বে ১৫০০-২০০০ টাকা এবং সময় লাগবে আনুমানিক১:৩০-২.০০ ঘন্টা।
  • আবাসিক ব্যবস্থাঃ বিছানাকান্দি এবং এর আশপাশে আপনি থাকার জন্য হয়তোবা তেমন কোন ভালো আবাসস্থল পাবেন না। এক্ষেত্রে আপনি সারাদিন সিলেটের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এসে দিনশেষ আবারও ফিরে আসবেন সিলেট শহরেই। কারণ, এ সিলেট শহরে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান সাদা পাথর

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেকটি বিশেষ মিলন স্থল যা সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এই অঞ্চলটির প্রধান আকর্ষণ হল ভোলাগঞ্জের crystal clear নদী এবং সাদা পাথরের বিস্তৃত এলাকা। ভোলাগঞ্জের এই নদীটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলের জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে এখানে প্রবাহিত হয় এবং এর স্বচ্ছ নীলরাশি চোখে পড়ার মতো।

যা খুব সহজেই একজন ভ্রমণ পিপাসুর মন কেড়ে নিতে পারে। নদীর পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাদা পাথর নদীর স্রোতে পরিষ্কার হয়ে গেছে একটি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে। এই সাদা পাথরের স্তর নদীর উজ্জ্বল স্রোতের কারণে প্রতিদিন পরিবর্তিত হয় এবং নদীর চারপাশে একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট তৈরি করে।

মোটকথা পাহাড়ি বন মেঘলা আকাশ এবং নদীর স্রোতের শান্ত পরিবেশ ভোলাগঞ্জ এবং সাদা পাথরকে প্রকৃতি প্রেমিকদের জন্য এক অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে। এখানে এসে আপনি নদীতে নৌকা ভ্রমণ করতে পারবেন, বিভিন্ন ধরনের পাথর সংগ্রহ করতে পারবেন এবং স্নিগ্ধ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

আপনার পরবর্তী ভ্রমণের স্থান যদি ভোলাগঞ্জ থাকে সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই বর্ষামৌসুম শুরুর পর অর্থাৎ অক্টোবর মাস পর্যন্ত যেকোনো সময় যাবেন। কারণ, ভোলাগঞ্জ যাওয়ার এটি উত্তম সময়। বরাবরের মতো সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার উপায় দূরত্ব এবং খাবার আবাসস্থল এবং এখানের খাবার সম্পর্কে জেনে নিন--

  • যাতায়াত ব্যবস্থাঃ সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। এখান থেকে আপনার ভোলাগঞ্জ যেতে সময় লাগবে প্রায় ১-১.৩০ ঘন্টা।
  • থাকার ব্যবস্থাঃ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের কাছে মৌলভীবাজার এবং শ্রীমঙ্গল শহরে কিছু ভালো হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়া সিলেট শহরেও থাকার জন্য আপনি ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।
  • খাবারঃ স্থানীয় খাবার ভোলাগঞ্জ এবং এর আশেপাশে এলাকার স্থানীয় সিলেটি জনপ্রিয় বিভিন্ন খাবার যেমন- ভুনা খিচুড়ি যা মসলা মাছ এবং ভাতের সংমিশ্রণে তৈরি, চচ্চড়ি যা কিনা বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং মসলা দিয়ে তৈরি, চিড়া এবং পান্তা ভাত। আপনি ভোলাগঞ্জ আসলে অবশ্যই এই খাবারগুলো খেয়ে এর স্বাদ গ্রহণ করবেন।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সিলেট পর্যটন ম্যাপ

সিলেটের পর্যটন ম্যাপ  ভ্রমন পিপাসুদের জন্য একটি অপরিহার্য নির্দেশিকা যা সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিস্তৃতি চিত্র প্রদান করে থাকে। প্রকৃতি কন্যা সিলেটের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমনপিপাসুদের কথা মাথায় রেখে জেলা প্রশাসন সিলেটের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ এই সিলেটের এই বিশেষ পর্যটন ম্যাপ। 

সিলেটের-সবচেয়ে-জনপ্রিয়-৭-টি-দর্শনীয়-স্থান
সিলেটের এই পর্যটন ম্যাপের মাধমে আপনি খুব সহজেই সিলেটের সকল উল্লেখযোগ্য স্থান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাছাড়া এই ম্যাপ সিলেট সার্কিট হাউস থেকে সকল দর্শনের স্থানের দূরত্ব নির্দেশের ফলে দেশ-বিদেশ সকল দর্শনার্থীকে ট্যুর প্ল্যান করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ম্যাপে যে কিউআর কোড প্রদর্শিত হয়, সেটি স্ক্যান করে আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন

সিলেট জেলার উল্লেখযোগ্য হোটেল রেস্টুরেন্ট সিএনজি,বাস,রেন্ট কার ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা। এই পর্যটন ম্যাপের মাধ্যমে একজন পর্যটক হিসেবে আপনি সব ধরনের তথ্য তো পাবেনই। সেই সাথে হটলাইন নম্বরে যোগাযোগের মাধ্যমে আপনারা ভ্রমণ সংক্রান্ত সকল সুযোগ সুবিধা জেনে নিতে পারেন এবং কোন অভিযোগ থাকলে জেলা প্রশাসককে অবহিত করতেও পারবেন।

লেখকের মন্তব্য

সিলেটের জনপ্রিয় কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আশা করছি আপনি পূর্ণাঙ্গভাবে জানতে পেরেছেন আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে। ভ্রমণ মূলত একটি নতুন স্থান, সংস্কৃতি এবং অভিজ্ঞতার সন্ধানে বের হওয়া,যা আপনার জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এটি কেবলমাত্র ভৌগোলিক পরিবর্তন নয় বরং আপনার মানসিক এবং আত্মিক পরিবর্তনেরও পথ হতে পারে।

এই ভ্রমণ একদিকে যেমন আপনার মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে তেমনি অন্যদিকে নতুন স্থান এবং নতুন মানুষদের সাথে পরিচিতির মাধ্যমে আপনার মধ্যে আনন্দ ও সন্তুষ্টির অনুভূতি এনে দিতে পারে। আপনারা যারা ভ্রমণ পিপাসু রয়েছেন,তারা পরবর্তী ভ্রমণের স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন সিলেটের এই সকল দর্শনীয় স্থানসমূহ। আপনার ভ্রমণ জীবন হোক নিরাপদ।ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url