বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে বিস্তারিত জেনে নিন

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে জানতে চান? বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আপনি কি ইচ্ছুক? তাহলে বলব আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
বৃষ্টির-পানি
কারণ, আজকের আর্টিকেল থেকেই আপনি জেনে যাবেন বৃষ্টির পানির ভিটামিন এবং এর উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে। চলুন বৃষ্টির পানি সম্পর্কিত আজকের আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে বিস্তারিত জেনে নিন

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন নেই এ কথা বললে মোটেও ভুল হবে না। কারণ, সত্যিকার অর্থেই বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে না। বৃষ্টির পানি মূলত মেঘ থেকে কনডেনসেশনের মাধ্যমে জমা হয় যা পানির ক্ষুদ্র অনু, বায়ুমণ্ডলীয় বিভিন্ন গ্যাস এবং ক্ষুদ্র করার সংমিশ্রণ। বৃষ্টির পানি যখন মেঘ থেকে নিচে পতিত হয় তখন এটি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন- ধুলা, পলল এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র অনু দ্বারা প্রভাবিত হয়। 
বৃষ্টির-পানিতে-কোন-ভিটামিন-থাকে
যদিও বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে তবুও একটি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বৃষ্টির পানি যদি দূষিত পরিবেশে পতিত হয়, তবে তা বিভিন্ন রাসায়নিক ও জীবাণু দ্বারা দূষিত হতে পারে। যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সুতরাং প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন এর অস্তিত্ব থাকে না। 
 
তবে বৃষ্টির পানিতে হালকা অ্যালকাইন ও অনুজীব থাকে যা বিপাকের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ভিটামিন বি ১২ তৈরি করতে পারে। আর তাছাড়া ভিটামিন সাধারণত বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণিজ খাদ্য উপাদান থেকেই পাওয়া যায়। বৃষ্টির কোন ভিটামিন থাকে কি থাকে না আশা করছি এ বিষয়ে আপনি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে তা ইতিমধ্যে আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি। বৃষ্টির পানি নানান উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। বৃষ্টির পানি আপনার বিভিন্ন উপকারে আসতে পারে বিশেষ করে এটি যখন পরিচ্ছন্ন এবং দূষণমুক্ত হয়। তো চলুন এবারের বৃষ্টির পানির উপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে কিছু তথ্য জানিয়ে দিই-
  • পাকস্থলীর সমস্যা দূর করতেঃ পাকিস্তানের সমস্যা দূর করতে আপনি প্রতিদিন ২-৩ চামচ সংরক্ষণ করে রাখা পরিশোধিত বৃষ্টির পানি খেতে পারেন। আপনার পাকস্থলী জনিত সকল সমস্যা দূর হবে
  • হজম শক্তি বাড়াতেঃ বৃষ্টির পানিতে অ্যালকালাইল নামক উপাদান থাকে। ফলে নিয়মিত পরিশোধিত বৃষ্টির পানি খেলে এটি আপনার এসিডিটি কমায় এবং হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ বৃষ্টির পানি অ্যালকালাইন উপাদান আপনার শরীরের পিএইচ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রুখে দিতে পারে। এতে করে আপনি মরণ ব্যাধি ক্যান্সার থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
  • শারীরিকভাবে চনমনে করেঃ বৃষ্টির সময় চারপাশের পরিবেশে যে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে তাকে পেট্রিকোর বলা হয়। এই পেট্রিকোর আপনাকে আরো শারীরিকভাবে জন্মনে করে তুলতে পারে।
  • কানের সমস্যা দূর করেঃ বৃষ্টির পানির আরেকটি কার্যকরী উপকারিতা হলো এটি কানের সমস্যা দূর করে। কানের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন এবং ব্যথা দূর করতে বৃষ্টির পানি ভীষণ উপকারী।
  • জল সরবরাহের উৎস হিসেবেঃ বৃষ্টির পানি অনেক সময় বিভিন্ন খরা প্রবণ এলাকার জন্য জল সরবরাহের উৎস হিসেবে কাজ করে। কারণ, বৃষ্টির পানি মাটির অভ্যন্তরে শোষিত হয়ে ভূগর্ভস্থ জলেশ্বর পুনঃভরাতে সাহায্য করে। এতে করে পরবর্তীতে পানিরূপ বা নলকূপের মাধ্যমে খুব সহজে পানির নাগাল পাওয়া যায়।
  • ফসলি জমি ও উদ্ভিদের জন্য উপকারীঃ বৃষ্টির পানি আবাদি জমি ও উদ্ভিদের জন্য প্রাকৃতিকভাবে খুবই সহায়ক। কারণ বৃষ্টির পানিতে কোন রাসায়নিক পদার্থ বা অতিরিক্ত মিনারেল না থাকার কারণে এটি ফসলি জমির মাটির গুনাগুন ঠিক রাখে। তাছাড়া বৃষ্টির পানি প্লাবিত কৃষি জমির জন্য সেচের প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • কম খরচে পানি সংগ্রহ করাঃ বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেটি সংরক্ষণের মাধ্যমে ব্যবহার করলে পানির খরচ অনেকটাই কমানো যায়। এটি বিশেষ করে বৃষ্টি মৌসুমী অঞ্চলে একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। যেখানে পানি সংগ্রহ করা অত্যন্ত সহজ এবং এর খরচও কম।
  • বিকল্প পানির উৎস হিসেবেঃ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটের সময়ে যখন পানির উৎস বন্ধ হয়ে যায় বা দূষিত হয়ে যায়, তখন বিকল্প পানি হিসেবে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা যেতেই পারে।
  • পরিবেশের তাপমাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখেঃ বৃষ্টির পানি গাছ পালার ওপর পড়লে তা মাটি ও বায়ুর তাপমাত্রা কমাতে কাজ করে। মাটি শীতল থাকে এবং পরিবেশের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • বায়ু পরিষ্কার করেঃ বৃষ্টির পানি বায়ু থেকে ধুলা, দূষণকারী কণিকা এবং অন্যান্য অনুজীব অনুযায়ী পরিশোধন করতে বিশেষ ভাবে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় বৃষ্টির পানি বায়ুর গুণগত মন উন্নত করে।
  • মাটি ও কৃষিতে উপকারীঃ বৃষ্টির পানি মাটির আদ্রতা বজায় রাখে, মাটির অম্লতা হ্রাস করে। যা কৃষি কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য বৃষ্টির পানির কোন বিকল্প নেই।
  • পানির বিশুদ্ধতাঃ বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে শুদ্ধ হয় কারণ এটি আকাশ থেকে পতিত হওয়ার সময় নানা ধরনের জীবাণু মুক্ত থাকে। যদি এটি দূষিত পরিবেশে পতিত না হয় সে ক্ষেত্রে।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতেঃ বৃষ্টির পানি জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। কারন, এটি পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
বৃষ্টির পানির অপকারিতা
বৃষ্টির পানির উপকারিতার পাশাপাশি এর আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। এবার চলুন বৃষ্টির পানির অপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন-
  • বন্যার ঝুঁকিঃ অতিরিক্ত বৃষ্টি কারণে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
  • মাটির ক্ষয়ঃ অনেক সময় প্রবল বৃষ্টির কারণে মাটির ক্ষয় হতে থাকে। এতে করে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
  • পানির গুণগত মান নষ্ট করেঃ অনেক সময় বৃষ্টির পানি বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, তেল, এবং বজ্র ইত্যাদির সাথে মিশে জলাশয়ের প্রভাবিত হয়। এতে করে জলাশয়ের পানির গুণগত মান নষ্ট হয়।
  • প্রাকৃতিক বিপর্যয়ঃ ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক সময় ভূমিধস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। যাতে জীবনহানি ও সম্পদের ক্ষতি হতে পারে।
  • মাটির অম্লতা বৃদ্ধিতেঃ বৃষ্টির পানি অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের এসিডিটিক উপাদান নিয়ে পতিত হয়। যা মাটির অম্লতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • স্বাস্থ্যঝুঁকিঃ বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ বা সঠিকভাবে পরিশোধিত করে না খেলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
এই ছিল বৃষ্টির পানি উপকারিতা ও অপকারিতা। তবে বৃষ্টির পানি ব্যবহারের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে এই অপকারিতা গুলো আরো তীব্র হতে পারে।

বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন না থাকলেও এতে কিছু এসিড থাকতে পারে। এই এসিড গুলোর মধ্যে সবথেকে পরিচিত হল সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক এসিড যা বায়ুমণ্ডলের দূষণের ফলে তৈরি হয়। যখন সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ুমন্ডলে মুক্তি পায় তখন এই এসিড গুলো জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড এবং নাইট্রিক এসিড তৈরি করে। এই এসিড গুলোই অনেক সময় বৃষ্টির পানির সাথে মিশে এসিড রেইন এর সৃষ্টি করে।
আর এই এসিড বৃষ্টির কারণে পরিবেশে নানা ধরনের সমস্যা যেমন- মাটির অম্লতা বৃদ্ধি, জলাশয়ের এসিডিফিকেশন, বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনার ক্ষতি সাধিত হয়। সাধারণত বৃষ্টির পানির পিএইচ এর মান ৫.৬ হয়। কিন্তু অনেক সময় এসিড রেইন এর কারণে এই মান কিছুটা কমেও যেতে পারে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়

বৃষ্টির পানিতে আদৌ কোন ভিটামিন থাকে কি থাকে না, তা ইতিমধ্যেই আপনি আমাদের আলোচনা থেকে জেনেছেন। সে হিসেবে বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার মনে হলেও সরাসরি খাওয়ার জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়। কারণ বৃষ্টির পানি বাতাসের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের দূষণ ধুলাবালি রাসায়নিক পদার্থ এবং ব্যাকটেরিয়া শোষণ করতে পারে।
 
আবার আপনি কোথাও জমে থাকা বৃষ্টির পানি যদি খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করে থাকেন তাতেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ পশুর মল জীবাণু ইত্যাদি থাকতে পারে। ফলে বৃষ্টির পানি খাওয়ার আগে এটি যথাযথভাবে ফিল্টার করা এবং জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে বৃষ্টির পানি নিয়মিতভাবে সংগ্রহ করে খাওয়া হয়।
 
সেক্ষেত্রে উচ্চমানের পরিশোধন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরিশোধিত করার পরে তবেই খাওয়া হয়। সুতরাং সাধারণভাবে বৃষ্টির পানি খাওয়ার আগে সব সময় এটি বিশুদ্ধ করে নেওয়া উচিত। যাতে করে এই পানি আপনার কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে না পারে। আর পরিশোধন করে খেলে বৃষ্টির পানিরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।

বৃষ্টির পানি খেলে কি হয়

বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই জানতে চান বৃষ্টির পানি খেলে কি হয়? বৃষ্টির পানি খেলে এটি আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আর এই সমস্যাগুলি দেখা দেবে তখনই যখন আপনি ফিল্টার বা পরিশোধন না করেই বৃষ্টির পানি খাবেন। বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ মনে হলেও এটি বাতাসের মাধ্যমে ধুলাবালি, বিভিন্ন ধরনের দূষণ, রাসায়নিক পদার্থ এবং বিভিন্ন জীবাণুর সংস্পর্শে আসে।
 
এই কারণে অহেতুক বৃষ্টির পানি খাওয়ার ফলে আপনার পেটের সংক্রমণ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী জনিত রোগ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও বৃষ্টির পানি যদি জমি থাকা অবস্থায় দূষিত হয়ে থাকে বা একাধিক উৎস থেকে সংক্রমিত হয় এর ফলেও বিষক্রিয়া বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই বলবো বৃষ্টির পানি খাওয়ার আগে তা যথাযথভাবে পরিশোধন করে তবেই খাবেন যাতে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ও নিরাপদ হয়।

বৃষ্টির পানি কি বিশুদ্ধ

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে তা তো জেনেছেন। এবার আপনাকে জানাবো বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ হয় কিনা। অনেকেই মনে করেন বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ বৃষ্টির পানি প্রাথমিকভাবে বিশুদ্ধ মনে হলেও এটি মোটেও বিশুদ্ধ নয়। শুধু তাই নয় বৃষ্টির পানি পরিশোধন ছাড়া সরাসরি খাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
 
কারণ, বৃষ্টির পানি আকাশ থেকে মাটিতে পতিত হওয়ার সময় বাতাসের মধ্যে থাকা ধূলিকণা, অম্ল এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ বয়ে নিয়ে আসে। যা বিশুদ্ধ নয় এবং সরাসরি খাওয়ার অনুপযোগী। যদিও বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা পরিমাণে শুদ্ধ থাকে তবে পানীয় হিসেবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই ফিল্টার এবং জীবাণুমুক্ত করে তবেই ব্যবহার করবেন।

বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর আসে কেন

বৃষ্টির পানির নানা ধরনের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। এই পানি অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকের মধ্যে মধ্যে একটি হল বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর আসে। বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বর আসার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকে। যেমন-
  • প্রথমতঃ ঠাণ্ডা বা আদ্র অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির পানিতে ভিজলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে। এতে করে আপনার ঠান্ডা লাগা বা জ্বরের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • দ্বিতীয়তঃ বৃষ্টির পানিতে দীর্ঘক্ষণ ভিজলে অনেক সময় আপনার শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই কমে যেতে পারে। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ফেলে এবং ইনফেকশন, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • তৃতীয়তঃ বৃষ্টির পানি মাটির সাথে মিশে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ধারণ করতে পারে যা আপনার ত্বক ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে নানা ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  • চতুর্থতঃ আপনাদের যাদের ত্বকে ঘামাচি সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ প্রচন্ড গরমে ঘামাচি হয় তারা বৃষ্টির পানিতে গোসল করতে পারেন। কারণ বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে ঘামাচি দূর হয় এবং ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাবও কমে যায়।
  • পঞ্চমতঃ বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে এটি আপনার শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর মত কাজ করে। ফলে এটি আপনার ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
  • আর তাই বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে আপনি দ্রুত স্নান করে ফেলুন বা শরীর শুকিয়ে ফেলুন।

বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা

বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? চলুন তাহলে বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--
বৃষ্টির-পানিতে-গোসলের-উপকারিতা
  • প্রচন্ড গরমে বৃষ্টির পানিতে স্নান করলে এটি আপনাকে শীতল অনুভূতি দেবে। কারণ বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। ফলে শরীরও ঠান্ডা হয়।
  • বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে কিছু খনিজ পদার্থ আয়রন ধারণ করে যা আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহে যদি গোসল করেন সে ক্ষেত্রে এতে থাকা খনিজ পদার্থ আপনার ত্বককে মোলায়েম ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
  • আপনার চর্ম রোগের সমস্যা দূর করতে আপনি বৃষ্টির পানিতে গোসল করতে পারেন। বিশেষ করে আপনার শরীরের চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর করতে বৃষ্টির পানি বেশ কার্যকর। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে শরীরের খসখসে ভাবও দূর হয়।
  • বৃষ্টির পানিতে কিছু অ্যালকাইন ও অনুজীব থাকে। জাবি পাকের মাধ্যমে আপনার শরীরে ভিটামিন বি ১২ তৈরি করে। ফলে বৃষ্টিতে গোসল করলে আপনার শরীরে ভিটামিন বি এর অভাব দূর হয়।
  • বৃষ্টির পানিতে ভিজলে আপনার চুলের গোড়া মজবুত হয়। শুধু তাই নয় বৃষ্টির পানি তুলে ব্যবহারের ফলে চুলের রুক্ষতা কমে এবং খুশকি ও দূর হয়। কারণ, বৃষ্টির পানিতে যে প্রাকৃতিক অ্যালকাইন রয়েছে তা মাথার ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এবং ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
  • আপনি আপনার মানসিক স্ট্রেস দূর করতে চাইলে বৃষ্টি পানিতে গোসল করতে পারেন। কারণ বৃষ্টির পানিতে গোসলের ফলে আপনার শরীরে অ্যান্ডরফিন ও সেরাটোনিন হরমোন ক্ষরণ হয়। এতে করে মানসিক অবসাদ দূর হয়।
  • বৃষ্টির পানিতে গোসলের ফলে এটি আপনার ত্বক থেকে বিভিন্ন ধরনের দূষিত উপাদান পরিষ্কার করে ফেলতে পারে।
  • শুধু তাই নয়, আপনি যদি পরিশোধিত বৃষ্টির পানিতে গোসল করেন সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের দূষণ ময়না পরিষ্কার তো হবেই, সেই সাথে এটি আপনার ত্বকের পোরসও খুলে দেবে ।
  • আবার অনেক সময় বৃষ্টির পানিতে গোসল অনেকের জন্য মনমুগ্ধকর এবং মানসিক প্রশান্তির কারণ হতে পারে। কারণ বৃষ্টির সাথে প্রকৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখে।
বৃষ্টির পানিতে গোসলের ক্ষেত্রে সতর্কতা
  • বৃষ্টির পানিতে গোসল করার সময় আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন
  • আপনি কখনোই ১০-১৫ মিনিটের বেশি বৃষ্টির পানিতে ভিজে গোসল করবেন না। এতে আপনার ঠান্ডা লেগে জ্বর আসতে পারে।
  • বৃষ্টির পানিতে গোসলের পর আপনি হালকা কুসুম গরম পানিতে ভালো করে গোসল করে নিন। এতে আপনার জ্বর সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
তবে একটি কথা, বৃষ্টির পানিতে গোসলের আগে আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন যে এই পানি সঠিকভাবে পরিশোধিত কিংবা পরিষ্কার কিনা। যেসব স্থানের পরিবেশ দূষিত সেই খানের বৃষ্টির পানিতে স্নান করা বা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

বৃষ্টির পানিতে কি কি উপাদান থাকে

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই বৃষ্টির পানির উপাদান সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে জেনে রাখুন,বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকতে পারে। যেমন-
  • বৃষ্টির পানিতে অল্প পরিমাণে অ্যালকাইল ও কিছু অণুজীব থাকে। যা দীপাকের ফলে ভিটামিন বি ১২ তৈরি করতে পারে।
  • বৃষ্টির পানির মূল উপাদান হলো পানির অনু। এটি বাষ্প আকারে বাতাসে উড়তে থাকে এবং পরবর্তীতে কনডেন্স হয়ে বৃষ্টির আকারে ফিরে আসে।
  • বাতাসে থাকা বিভিন্ন ধরনের গ্যাস যেমন ধরুন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃষ্টির পানিতে থাকতে পারে।
  • বৃষ্টির পানিতে সূক্ষ্ম ধূলিকণা এবং অন্যান্য অঙ্কুরিত উপাদানও থাকতে পারে। এগুলি বাতাসের সাথে মিশে থাকে এবং বৃষ্টি হলে পানির সাথে এসে মাটিতে পতিত হতে থাকে।
  • বৃষ্টির পানিতে সমুদ্রের লবণ এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের কিছু পরিমাণ যেমন- ক্লোরাইড ও সালফেট থাকতে পারে।
  • বায়ু দূষণ এবং শিল্প কারখানার বদ্বের কারণে বৃষ্টির পানিতে এসিডিক উপাদান হিসেবে সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড থাকতে পারে। আর এই এসিডের কারণে অনেক সময় এসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে।
  • কখনো কখনো বৃষ্টির পানিতে কিছু জৈবিক উপাদান যেমন ফাংগাল স্পোর, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসও থাকতে পারে।
  • এছাড়াও বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ ভারী ধাতু যেমন সিসা আর্সেনিক ইত্যাদি অস্তিত্ব থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বেশ কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। এবার চলুন বৃষ্টির পানি আপনি কিভাবে কোন উপায়ে সংরক্ষণ করতে পারবেন সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-
পানি সংগ্রহের পদ্ধতি
  • পানির ট্যাঙ্কঃ আপনি বৃষ্টির পানি সরাসরি একটি ট্যাংকে সংগ্রহ করতে পারেন। এই ট্যাংক গুলো সাধারণত বাড়ির ছাদে কিংবা মাটি নিচে স্থাপন করা হয় এবং এতে পানি সংগ্রহের জন্য একটি উপযুক্ত ফিল্টার রাখতে হয়।
  • ছাদের পানি সংগ্রহঃ আপনি আপনার বাড়ির ছাদে পাইপলাইন স্থাপন করে এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতে পারেন। এর জন্য আপনি আপনার বাড়ির ছাদের এক কোণে পানি সঞ্চয় করার জন্য চ্যানেল তৈরি করুন যা পানি ট্যাংকে প্রবাহিত করবে।
  • ক্যানভাস ব্যাগঃ বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতে আপনি কাচের সিলিন্ডার বা ক্যানভাস ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।
বৃষ্টির পানি ফিল্টার এবং পরিশোধন পদ্ধতি
  • প্রাথমিক ফিল্টারিংঃ প্রাথমিকভাবে বৃষ্টির পানির নোংরা, পাতা এবং ময়লা ঝরানোর জন্য প্রাথমিক ফিল্টার ব্যবহার করুন। এটি বৃষ্টির পানি পরিশোধনের প্রথম ধাপ।
  • স্নিগ্ধ ফিল্টারিংঃ বৃষ্টির পানি থেকে বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ এবং রাসায়নিক উপাদান দূর করার জন্য আপনি কার্বন ফিল্টার ব্যবহার করুন। তাছাড়া মাটির কণা এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত পদার্থ দূর করতে আপনি সান্ড ফিল্টার ও ব্যবহার করতে পারেন।
  • বৃষ্টির পানি শোধনঃ পদ্ধতি বৃষ্টির পানি জীবাণু মুক্ত করতে আপনি ক্লোরিন বা অন্য কোন উপযুক্ত রাসায়নিক শোধক ব্যবহার করতে পারেন।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি
  • বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য আপনি একটি ট্যাংক নির্বাচন করুন এবং খেয়াল রাখবেন ট্যাঙ্কটি যেন প্লাস্টিক, স্টেইনলেস স্টিল বা কংক্রিটের হয়। আর ট্যাংকের সাথে অবশ্যই একটি ঢাকনা ব্যবহার করুন যাতে করে এতে কোন পোকামাকড় বা ময়না প্রবেশ করতে না পারে।
  • আপনি বৃষ্টির যে ট্যাংকে সংরক্ষণ করবেন সেই ট্যাংকটি অবশ্যই একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন। যাতে করে পানির তাপমাত্রা ঠিক থাকে।
উপরিউক্ত এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে আপনি সঠিকভাবে বৃষ্টির পানি সারা বছর ধরে সংরক্ষণ করতে পারবেন।

লেখকের মন্তব্য

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি তা জানতে পেরেছেন। তাছাড়া আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বৃষ্টির পানি নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা জানলে আপনি রীতিমতো অবাক বনে যাবেন। কারণ, আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের বৃষ্টির পানিকে মধুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরো বলা হয়েছে বৃষ্টির পানিতেই লুকিয়ে আছে সব রোগ নিরাময়ের ঔষধ।
 
তাহলে বুঝতেই পারছেন বৃষ্টির পানি উপকারিতা আপনার শরীরের জন্য কতখানি হতে পারে! বৃষ্টির পানিতে ভিজতে কার না ভালো লাগে বলুন তো! অনেকেই মনে করেন বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর সর্দি হয়। এ কথাটি পুরোপুরি সত্য নয় উল্টো বৃষ্টির পানির ও অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url