ভুট্টা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা প্রায় কম বেশি সকলেই জানেন। কিন্তু ভুট্টা খেলে কি ওজন বাড়ে? তা অনেকেই জানেন না।অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান হিসেবে ভুট্টাকে সুপারফুড নামেও আখ্যায়িত করা হয়।
ভুট্টা-খাওয়ার-১৫-টি-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
ভুট্টা শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়। এর আছে আরো নানান পুষ্টিগুণ। ভুট্টা সংক্রান্ত সকল খুঁটিনাটি তথ্য আপনি পেয়ে যাবেন আজকের এই আর্টিকেল থেকে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ভুট্টা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

ভুট্টা খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে।ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর। এতে ভিটামিন এ ভিটামিন সি ভিটামিন ই রয়েছে। আর খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, দস্তা, তামা, সেলেনিয়াম এবং সোডিয়াম। শীতকাল কিংবা বর্ষাকালে লেবুর রস এবং হালকা লবণ মরিচ
দিয়ে গরম গরম ভুট্টা পোড়া খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে এই ভুট্টা শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়। এটি আপনার শরীরকে ভালো রাখতে বেশ কার্যকরী। তাছাড়া ভুট্টা খেলে এটি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ করতে থাকে। যা আপনাকে অতিরিক্ত শক্তির যোগান দিতে পারে। শুধু তাই নয়, ভুট্টার এন্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকেও রক্ষা করতে পারে। 
 
তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ভুট্টা খেলে আপনার শরীরে নানান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। কারণ, ভুট্টার উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা অতি দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে সীমিত পরিমানে এবং সঠিক নিয়মে ভুট্টা খাওয়া উচিত।

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা

ভুট্টায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। কিন্তু মাছ-মাংসের সাধারণত যে ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায় তা ভুট্টাতে নেই। ভাতের থেকে আবার ভুট্টাতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। আজকে আলোচনা শুরুতেই আসুন জেনে নিই এই খাদ্যশস্য খাবার স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো -
  • ফাইবারের উৎসঃ ভুট্টা ভুট্টায় উচ্চ মাত্রার ফাইবার রয়েছে। যা আপনার পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারীঃ ভুট্টায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন- ভিটামিন বি-১ ভিটামিন বি-৩ ভিটামিন বি-৫ এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে। এই ভিটামিন গুলি আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং সেইসাথে স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতার জন্যও ভীষণ উপকারী।
  • শক্তির উৎসঃ ভুট্টা নিয়মিত খেলে এটি আপনার শরীরে অতিরিক্ত শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। তাছাড়া ভুট্টাতে উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে এটি আপনার শরীরে দ্রুত শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • চোখের সুস্থতায়ঃ ভুট্টা খেলে এটি আপনার শরীরে লুটেইন এবং জিক্সানথিনের মত এন্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করতে থাকে। এতে করে আপনার চোখ ভালো থাকে এবং বয়সজনিত চোখের সকল সমস্যা দূর হয়।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ আপনাদের যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ভুট্টা অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্যশস্য। নিয়মিত ভুট্টা খেলে এর ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
  • ওজন কমায় ভুট্টাঃ আপনারা যারা ওজন কমাতে চান তারা নিয়ম করে ভোটটা খেতে পারেন। কারণ, এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার বা খাদ্য আঁশ। যা আপনার ওজন কমাতে কাজ করে।
  • কোলেস্টেরল কমায়ঃ ভুট্টাতে থাকা ভাইবার আপনার LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভালো কাজ করে।
  • দাঁত ভালো রাখেঃ ভুট্টায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার দাঁত ও মাড়ির সকল প্রদাহ দূর করতে পারে।
  • হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিঃ ভুট্টা ক্যালসিয়াম ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস। আর এই উপাদানগুলো আপনার হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে হাড় মজবুত করে।
  • মস্তিষ্কের জন্য উপকারীঃ ভুট্টাতে থাকা ভিটামিন বি-৬ এবং থায়ামিন আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ভুট্টার এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এতে করে আপনার শরীর বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে খুব সহজেই রক্ষা পায়।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ যারা রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারা ভুট্টা খেতে পারেন। কারণ, এতে থাকা পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে।
  • রক্তাল্পতা দূর করেঃ যাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ভূতটা একটি উপাদেয় খাদ্যশস্য। কারণ, ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন বি-১২ রয়েছে। যা আপনার শরীরের নতুন রক্ত কোষ তৈরি করে এতে করে আপনার রক্তাল্পতা দূর হয়।
ভুট্টা-খাওয়ার-১৫-টি-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • বার্ধক্য রোধ করতেঃ নিয়মিত ভুট্টা খেলে এটি আপনার শরীরে কোলাজেল তৈরি করে। যার ফলে আপনার ত্বক নরম ও মসৃণ থাকে। এতে করে আপনার ত্বক থেকে বার্ধক্যের ছাপ দূর হয়।
  • পেটের সমস্যা দূর করেঃ ভুট্টাতে থাকা ফাইবার আপনার পেটের সকল সমস্যা যেমন- পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, বদহজম ইত্যাদি দূর করতে পারে। শুধু তাই নয় ভুট্টা খাওয়ার ফলে এটি আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এর কার্যকারিতা কে আরো বাড়িয়ে দেয়।
  • কিডনির সমস্যা দূর করেঃ কিডনির সমস্যাতে ভুট্টা খাওয়া বেশ উপকারী। তবে মধ্যবয়স্ক এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভুট্টা পরিমাণ বুঝে খাওয়া উচিত।
  • ভুট্টা গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ গর্ভাবস্থায় ভুট্টা খাওয়া শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী। কারণ, ভুট্টার ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ এবং ফলিক এসিড গর্ভকালীন সময়ে আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজন।

ভুট্টা খাওয়ার অপকারিতা

ভুট্টা খাওয়ার যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত ভুট্টা খেলে এটি আবার আপনার শরীরে নানা ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন-
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত ভুট্টা খাওয়া সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, ভুট্টার উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ভোটটা ফেলে আপনার পেটে গ্যাস অম্বল হতে পারে। এমনকি ডায়রিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ভুট্টা খাওয়া উচিত নয়। কারণ ভুট্টার উচ্চ কার্বোহাইড্রেট আপনার ওজন আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি ভুট্টা উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবারের সাথে খান।
  • ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করার সময় এতে অতিরিক্ত লবণ, তেল যোগ করা হলে এটি আপনার জন্য উপকারী নাও হতে পারে।
  • মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ভুট্টা খেলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যার ফলে আপনার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ভুট্টাতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। আর অধিক ফাইবার গ্রহণ অনেক সময় আপনার স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। এতে করে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ভুট্টাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মাত্রাতিরিক্ত খেলে অনেক সময় আপনার মাথা ব্যথার কারণও হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ভুট্টা খেলে অনেক সময় ভুট্টাতে থাকা গ্লুটেন আপনার ত্বকে এনার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, ভুট্টার এই অপকারিতা এড়াতে আপনি আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে নিয়ম করে পরিমাণ মতো ভুট্টা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে ভুট্টার উপকারিতাই বেশি পাবেন।

ভুট্টা খেলে কি ওজন বাড়ে

ভুট্টা খেলে ওজন বাড়ে কিনা অনেকেই জানতে চান। দেখুন ভুট্টা খেলে আপনার ওজন কিছুটা বাড়তে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি ভুট্টা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের সাথে খান। ভুট্টায় সাধারণত প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে যার শরীরে শক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
 
 ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে ভুট্টা খেলে আপনার শরীরে ক্যালোরির মাত্রাও বেড়ে যায়। আর এই অতিরিক্ত ক্যালোরি আপনার শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমতে থাকে। যা কিনা আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি পরিমিত পরিমাণে নিয়ম মেনে ভুট্টা খান সেক্ষেত্রে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা খুব একটা থাকে না। 
 
বরং পরিমাণ বুঝে ভুট্টা খেলে এর ফাইবার আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ভরা রাখে। এতে করে অন্য খাবারের প্রতি আপনার চাহিদা কমে এবং ওজন প্রাকৃতিকভাবে কমতে থাকে। সম্মানিত পাঠক, ভুট্টা খেলে আপনার ওজন বাড়বে নাকি কমবে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

ভুট্টা খাওয়ার নিয়ম

প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদান খাওয়ার কিছু নিয়ম থাকে। তেমনি ভুট্টা খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। এবার চলুন ভুট্টা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন-
  • প্রথমেই বলি, ভুট্টা খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি পরিমাণ বুঝে খাবেন। কারণ, ভুট্টাতে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি থাকে। আর তাই অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে আপনি আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভুট্টা খাবেন।
  • ভুট্টা খাওয়ার সময় আপনি একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে সারাদিনে অল্প অল্প করে খান। অর্থাৎ সারাদিনে সময় ভাগ করে খান যেমন ধরুন- সকালে নাস্তার সাথে, দুপুরে খাবারের পর কিংবা সন্ধার স্ন্যাকস এর সাথে।
  • আপনি যতটা পারবেন ভুট্টার চিপস, পপকর্ন বা এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত করা ভুট্টা কম খাবেন। কারণ, এগুলোতে অতিরিক্ত লবণ চিনি থাকে যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
  • আপনি ভুট্টা খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ, ভুট্টাতে যে ফাইবার থাকে পানি পান করলে তা হজমে সহজ হয়। এতে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং পাঁচন শক্তি উন্নত করবে।
  • আপনি ভুট্টা বিভিন্ন উপায়ে যেমন ধরুন- ভুট্টা দানা ভেজে, ভুট্টা পুড়িয়ে, ভুট্টার আটা, ভুট্টার ছাতু খাবার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার ভুট্টা খাওয়ার বৈচিত্র্যতা বাড়বে এবং সেই সাথে আপনার শরীরে পুষ্টির জন্য বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করবে।
  • আপনি চাইলে তন্দুরি ভুট্টা বানিয়েও খেতে পারেন। এর জন্য একটি বাটিতে ফাটানো টক দই লঙ্কাগুঁড়ো গরম মসলা গুঁড়ো জিরেগুঁড়ো কষুরি মেথি সামান্য আদা রসুন বাটা পরিমাণমতো নুন সরষের তেল এবং চাট মসলা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে এতে ভুট্টা যোগ করুন। এবার এই মিশ্রণটিকে ভুট্টার গায়ে ভালোভাবে মাখিয়ে ওভেনে বা তন্দুরে খুব ভালো করে বেকিং করুন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আপনার তন্দুরি ভুট্টা।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত নিয়ম মেনে ভুট্টা খেলে আপনি ভুট্টার সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন এতটুকু বলতে পারি।

ভুট্টা খেলে কি গ্যাস হয়

ভুট্টা খেলে কি ওজন বাড়ে তা ইতিমধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। ভুট্টা খেলে আপনার গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে পান। কারণ অতিরিক্ত ভুট্টা খেলে এতে থাকা উচ্চ মাত্রার ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট আপনার স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ফলে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। 
 
আবার ভুট্টায় "ফার্মেন্টেবল ফাইবার" থাকে যা আপনার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ব্যাকটেরিয়া ফরমেন্টেশনের কারণে গ্যাস তৈরি করতে পারে। এছাড়াও একসাথে অত্যধিক ভুট্টা খাওয়ার ফলে ভুট্টার কিছু শর্করা যেমন রাফিনোজ এবং স্টার্চ আপনার অন্ত্রে গ্যাস উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে। তাই বলবো আপনাদের যাদের পেটের সমস্যা যেমন- 
 
পেট ফাঁপা, গ্যাস, বদহজম ইত্যাদি রয়েছে তারা অতিরিক্ত ভুট্টা খাওয়া পরিহার করে চলুন। আরেকটি কথা, ভুট্টা খাওয়ার পর আপনি অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এতে করে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম হবে। ভুট্টা খেলে গ্যাস হয় কিনা আশা করছি এর উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন।

ভুট্টা সিদ্ধ করার নিয়ম

ভুট্টা খেলে ওজন বাড়ে নাকি কমে তা আপনি ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছেন। ওজন কমাতে আপনি চাইলে ভুট্টা সিদ্ধ করেও খেতে পারেন। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সিদ্ধ ভুট্টা অত্যন্ত কার্যকরী। এবার চলুন ভুট্টা সিদ্ধ করে কিভাবে খাবেন সে নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন--
  • ভুট্টা সিদ্ধ করার জন্য প্রথমেই একটি পাকা এবং সতেজ ভুট্টা নিন। এবার ভুট্টার খোসা এবং আঁশগুলি পরিষ্কার করে ভুট্টা দানা বের করে নিন।
  • ভুট্টা দানা গুলো এবার পরিষ্কার পানিতে খুব ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • এবারে একটি প্যানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিয়ে চুলায় ফুটতে দিন। পানি ফুটে এলে তাতে ভুট্টা দানা যোগ করুন।
  • প্রায় ১০-১২ মিনিটের মতো খুব ভালো করে ফোটান। যাতে ভুট্টা দানা সিদ্ধ হয়।
  • ভুট্টা ধানের সিদ্ধ হয়ে এলে একটি চামচের সাহায্যে পানি থেকে ভুট্টা দানা আলাদা করে ফেলুন এবং দানাবলী কে কিছু সময় ঠান্ডা পানিতে রাখুন। যাতে করে ভুট্টা দানা অতিরিক্ত পরিমাণে সেদ্ধ না হয়।
  • ব্যাস এবারে সিদ্ধ ভুট্টা দানার সাথে আপনি নুন, মাখন, চাট মসলা ইত্যাদি মিশিয়ে খেতে পারেন।

সিদ্ধ ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেই আছেন যারা শুকনো ভুট্টার থেকে সিদ্ধ ভুট্টা খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। Pmm৩৩৩ সিদ্ধ ভুট্টা খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
  • সিদ্ধ ভোটা খেলে এটি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে করে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
  • সিদ্ধ করে ভুট্টা খেলে ভুট্টার ফাইবার দীর্ঘ সময় আপনার পেট পরিপূর্ণ রাখে। যা অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা কমায় এবং এতে আপনার ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • সিদ্ধ ভুট্টা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভিটামিন সি পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের একটি দুর্দান্ত উৎস। এই পুষ্টি উপাদান গুলো আপনার শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন শক্তি উৎপাদন, হজম প্রক্রিয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • নিয়ম করে সিদ্ধ ভুট্টা খেলে এর ফাইবার আপনার পাচনতন্ত্র সুরক্ষিত রাখে। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমে।
  • সিদ্ধ ভুট্টা খেলে এটি খুব দ্রুত আপনার পেটে হজম হয়ে যায়। ফলে গ্যাস অম্বলের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

ভুট্টা ভাজা খাওয়ার উপকারিতা 

অনেকেই আছেন যারা ভুট্টা আগুনে পুড়িয়ে কিংবা ভেজে খেতে পছন্দ করেন। ভুট্টা ভেজে খেলে যদি আপনার মুখে রুচি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। যারা খাবারের প্রতি রুচি পান না বা রুচি হীনতায় ভুগতে থাকেন তাদের জন্য ভাজা ভুট্টা অত্যন্ত মুখরোচক একটি খাদ্য। তাছাড়া ভাজা ভুট্টাতে যে উচ্চমানের ফাইবার থাকে টা আপনার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা দ্বিগুণ পরিবারে বাড়িয়ে দিতে পারে। 
 
শুধু তাই নয়, ভাজা ভুট্টাতে থাকা ভিটামিন বি-৩, ভিটামিন বি-৫ সহ আরো অন্যান্য মিনারেলস থাকে যা আপনার শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখে। মূলত ভাজা ভুট্টা এবং সিদ্ধ ভুট্টা দুটোতেই সমপরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে। কিন্তু ভুট্টা খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে সিদ্ধ ভুট্টা খেতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে ভুট্টা ভেজে খেতে পছন্দ করেন। পার্থক্যটা শুধুমাত্র এখানেই।

গর্ভাবস্থায় ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়েও আপনি নিশ্চিন্তে ভুট্টা খেতে পারেন। কারন, এই সময় ভুট্টা খাওয়া আপনার এবং আপনার অনুভূতি সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গর্ভাবস্থায় ভুট্টা খাওয়ার ফলে যা হতে পারে--
ভুট্টা-খাওয়ার-১৫-টি-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে ভুট্টা। কারণ ভুট্টার ফাইবার গর্ভকালীন সময়ে আপনার অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে কাজ করে।
  • ভুট্টাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ থায়ামিন নিয়াসিন এবং ফোলেট। আর এই পুষ্টি উপাদান গুলো আপনার গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া ফোলেট আপনার গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে এবং জন্ম গত ত্রুটি কমাতে ভালো কাজ করে।
  • ভুট্টায় থাকা কার্বোহাইড্রেট গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে অতিরিক্ত শক্তির সঞ্চয় করে। এতে করে আপনার প্রেগনেন্সি কালিন শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।
  • গর্ভাবস্থায় ভুট্টা খেলে ভুট্টার ম্যাগনেসিয়াম দস্তা এবং আইরন আপনার গর্ভকালীন সময়ে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কাজ করে।
  • এছাড়াও ভুট্টাতে অমেগা৩, অমেগা৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

ভুট্টার ছাতুর উপকারিতা

ভুট্টা খেলে কি ওজন বাড়ে সে সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। আপনি কি জানেন ভুট্টা দিয়ে ছাতু তৈরি করেও খাওয়া যায়। ভুট্টার এই ছাতু অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত। এবার চলুন ভুট্টার ছাতুর কিছু গুণের কথা জেনে নিন -
  • ভুট্টার ছাতু সাধারণত ফাইবার সমৃদ্ধ হয়। যা খেলে এটি আপনার হজমে সাহায্য করবে।
  • ভুট্টার ছাতু খেলে এটি দীর্ঘ সময় আপনার পেট পরিপূর্ণ রাখে এবং দিনভর আপনাকে সতেজ রাখে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া হালকা খাবারের পাশাপাশি আপনি ভুট্টার ছাতু খেতে পারেন।
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য ভুট্টার ছাতু অত্যন্ত উপকারী। কারণ ভুট্টার ছাতুতে কম ক্যালোরি এবং পুত্র ফাইবার থাকে যা অতি দ্রুত আপনি কি খাওয়ার তৃপ্তি দেয়। এতে করে আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। ফলে ওজনও প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • ভুট্টার ছাতুতে রয়েছে ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করে। সুতরাং শরীরের জয়েন্টের ব্যথা হাড়ের ব্যথা দূর করতে আপনি ভুট্টার ছাতু খেতেই পারেন।
  • ভুট্টার ছাতুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে করে আপনি বিভিন্ন ধরনের ফ্লু, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে খুব সহজেই সুরক্ষা পাবেন।
  • ভুট্টার দুটি পাতা ভিটামিন এবং মিনারেলস আপনার ত্বকের জন্যও ভীষণই উপকারী।

ভুট্টার পুষ্টি উপাদান

ভুট্টা খাওয়ার এতসব উপকারিতা জানের পর এবার আপনি নিশ্চয়ই ভুট্টার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে চান। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন প্রতি 100 গ্রাম ভুট্টায় কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন-
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
খাদ্য শক্তি ৮৯ কিলোক্যালরি
ফ্যাট ১.২ গ্রাম
প্রোটিন ৩.২ গ্রাম
পানি ৭৫ শতাংশ
কার্বোহাইড্রেট ১৯.০ গ্রাম
শর্করা ৬.০ গ্রাম
ফাইবার ২.৭ গ্রাম
ভিটামিন বি-১ ০.১৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিব বি-২ ০.০৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৩ ১.৭৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৬ ০.০৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ০.০৩ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২৮০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৩৫ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ১৬৭ মিলিগ্রাম
ফোলেট ৪২ মাইক্রো গ্রাম

 লেখক এর বক্তব্য

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। সম্মানিত পাঠক, আমাদের শারীরিক সুস্থতা ও ফিটনেস ঠিক রাখতে জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন পড়ে। আর এসব পুষ্টির চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও অন্যান্য খাবার খাওয়ার। এক্ষেত্রে বলবো আপনি নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করে ভুট্টা খান।
 
কারণ, ভুট্টা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাদ্যশস্য। শুধু তাই নয়, ভুট্টা বিশ্বের জনপ্রিয় সব খাদ্যশস্য গুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এখন প্রায় সারা বছর জুড়েই বাজারে ভুট্টা পাওয়া যায়।আর তাই দেরি না করে আপনি আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকার ডায়েটে যোগ করে ফেলুন উপকারী এই খাদ্যশস্যটি। ভালো থাকুন সুস্থ, থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে। আর্টিকেলটা এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url