হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? প্রতিদিন হাঁসের ডিম খেলে কি হয় জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিতে হবে। 
হাঁসের-ডিমের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
কারণ, এই আর্টিকেল থেকে আপনি জেনে যাবেন হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ খুঁটিনাটি সকল তথ্য। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের মত আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ হাসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

হাঁসের ডিমের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। হাঁসের ডিম উচ্চ পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া হাঁসের ডিম ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম এবং অমেগা৩ এসিডের একটি দুর্দান্ত উৎস।
তবে,হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অন্যান্য ডিমের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। যা অনেক সময় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। হাঁসের ডিমের শক্ত শেল ও আকারে বড় হওয়ার কারণে অনেকে খেতেও চান না। আর তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বজায় রাখতে হলে সীমিত পরিমাণে হাঁসের ডিম খাওয়া ভালো।

সিদ্ধ হাঁসের ডিমের উপকারিতা

সিদ্ধ হাঁসের ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। সিদ্ধ হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে আপনি নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান পেতে পারেন। আজকে আলোচনার শুরুতেই আপনাকে জানিয়ে দিব সিদ্ধ হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন হাঁসের ডিম সিদ্ধ খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন- 
সিদ্ধ-হাঁসের-ডিমের-উপকারিতা
  • প্রোটিনের উৎসঃ সিদ্ধ হাসের ডিম উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে যা আপনার মাংসপেশী গঠনে কাজ করে। তাছাড়া প্রোটিন আপনার শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান।
  • ভিটামিন বি ১২ এর উৎসঃ সিদ্ধ হাঁসের ডিমে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি১২ যা খেলে আপনার স্নায়ুতন্ত্র ভালো থাকে এবং এটি আপনার শরীরে রক্ত কোষ গঠনে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় এই ভিটামিন বি আর ও আপনার হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমাতে কাজ করে।
  • হজম সহজ করেঃ নিয়মিত হাঁসের ডিম খেলে ডিমে থাকা সাদা অংশের পেপটাইড গুলো আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় খনিজ ক্যালসিয়াম শোষণ করে হজম ক্ষমতাকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়।
  • উচ্চমানের অ্যামিনো অ্যাসিডঃ সিদ্ধ হাঁসের ডিমে প্রয়োজনীয় সকল অ্যামিনো এসিড ফাঁকে যা আপনার শরীরের কোষ পুনর্গঠনে কাজ করে।
  • প্রয়োজনীয় ফ্যাটঃ সিদ্ধ হাঁসের ডিমের প্রয়োজনীয় কিছু ফ্যাট থাকে যা আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষের কার্যক্ষমতা ধরে রাখে। তবে সিদ্ধ হাঁসের ডিম সীমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। যাতে করে আপনার শরীরে ক্যালরি না বাড়ে।
  • হাড় মজবুত করেঃ আপনি আপনার শরীরের জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে এবং হাড় মজবুত শক্তিশালী করতে চাইলে আজ থেকেই হাঁসের ডিম খাওয়া শুরু করুন। কারণ, সিদ্ধ হাসের ডিমে রয়েছে ভিটামিন ডি। আর এই ভিটামিন টা আপনার দাঁতকে গোড়া থেকে মজবুত করে এবং হাড় শক্তিশালী করে।
  • অ্যানিমিয়া দূর করেঃ যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তারা হাঁসের ডিম খেয়ে রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারেন। কারণ, এই ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা আপনার রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে কাজ করে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ হাঁসের ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে যা আপনার দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। ফলে সিদ্ধ হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে আপনি রাতকানা থেকেও রেহাই পেত পারেন।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতেঃ সিদ্ধ হাঁসের ডিমে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি এবং প্রোটিন থাকার কারণে এটি দীর্ঘ সময় আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে থাকে। এতে করে আপনার শরীরের শক্তি ও বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।
  • শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ হাঁসের ডিমে রিবোফ্লাবিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস থেকে আপনার শরীরকে সুরক্ষা দিতে পারে।
  • হাঁসের ডিমের এই উপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক

হাঁসের ডিমের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এবার চলুন অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খেলে আপনার শরীরে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে রাখুন- 
  • কোলেস্টেরল বৃদ্ধিঃ হাসির ডিমের কুসুমে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকে। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে হাঁসের ডিম খেলে আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন।
  • ওজন বৃদ্ধিঃ যারা ওজন কমাতে চান তাদের হাসির ডিম না খাওয়াই ভালো। কেননা হাঁসের ডিমের উচ্চ ক্যালরি এবং চর্বির কারণে অতিরিক্ত খেলে এতে আপনার ওজন কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়ে যেতে পারে।
  • এলার্জিক প্রতিক্রিয়াঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে হাসির ডিম খেলে এতে আপনার শরীরের এলার্জির বিভিন্ন উপসর্গ যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাঃ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে ঘাসের ডিম খেলে আপনার পেট ব্যথা বমি বমি ভাব এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যা হতে পারে।
  • সালমোনেলা সংক্রমণঃ হাসির ডিম আপনি যদি সঠিকভাবে রান্না না করে খান সেক্ষেত্রে আপনার সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে। আর তাই হাসির ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত।
  • মেটাবলিজমের সমস্যাঃ সৃষ্টি হাসির ডিমে যেহেতু উচ্চমাত্রার ক্যালরি থাকে, ফলে প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার ক্যালরি গ্রহণের সীমা বেড়ে যেতে পারে। এতে করে আপনার মেটাবলিজমের সমস্যা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
  • ত্বক ও চোখের সমস্যাঃ আপনি যদি হাঁসের ডিম অত্যধিক পরিমাণে খান সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি এর অতিরিক্ততা ঘটতে পারে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কারণ ভিটামিন এ এর অতিরিক্ততা চোখ ও ত্বকের নানান সমস্যা সৃষ্টি করে।
হাঁসের ডিমের এই অপকারিতা এড়াতে আপনি নিয়ম করে পরিণত পরিমাণে হাঁসের ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন। শুধু হাসির ডিম নয়, হাঁসের ডিমের সাথে আপনার খাদ্যাভাসে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারও যুক্ত করুন। এতে আপনার পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা ঘটবে না।

হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনাকে আমরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। এবার জানাবো হাসের ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। হাঁসের ডিম খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। তো চলুন এবার জেনে নিন হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম--
  • সেদ্ধ হাঁসের ডিমঃ হাঁসের ডিম খাওয়ার সব থেকে সহজ এবং স্বাস্থ্যকর উপায় হল ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া। এর জন্য আপনি একটি হাঁসের ডিম ফুটন্ত গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট ভালো করে সিদ্ধ করে নিন। এরপর খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারেন। আপনি চাইলে এর সাথে সামান্য বিট নুন যোগ করেও খেতে পারেন।
  • ডিম ভাজিঃ অনেকেই আছেন যারা হাঁসের ডিম পেলে ভেজে খেতে পছন্দ করেন। এর জন্য আপনি হাড়ের ডিম একটি বাটিতে ভালো করে ফাটিয়ে নিয়ে এতে নুন, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচ মরিচ, টমেটো কুচি ইত্যাদি যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার ডিমের এই মিশ্রণটি প্যানে গরম হয়ে থাকা তেলের উপর ছেড়ে দিন। হাসের এই ভাজা ডিম খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
  • ডিম পোচঃ আপনি চাইলে হাঁসের ডিম শুধু পোচ করেও খেতে পারেন। ডিম পোচের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন ডিমের সাদা অংশ শক্ত হলেও এর কুসুম নরমই থাকবে।
  • ডিম কিমা বা ডিম স্যুটঃ হাঁসের ডিম আপনি কিমা বা স্যুট বানিয়েও খেতে পারেন। ডিমের কিংবা প্রস্তুত করতে আপনি ডিম সিদ্ধ করে তা কিমা করে রান্নায় যোগ করতে পারেন।
হাঁসের ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
  • হাসির ডিম কেনার সময় আপনি পরিষ্কার এবং সতেজ ডিম কিনুন। খেয়াল রাখবেন ডিমের খোসায় কোন ফাটল বা দাগ যেন না থাকে। কারণ এইসব ডিমে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থাকতে পারে।
  • হাঁসের ডিম খুব ভালো করে রান্না করে বা সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। যাতে এতে থাকা রোগ জীবাণু একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়।
  • হাসির ডিম সংরক্ষণ করতে আপনি ফ্রিজে রাখতে পারেন এবং খাওয়ার আগে ডিম ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • আপনার শরীর যদি অতিরিক্ত এলার্জি প্রবণ হয় সেক্ষেত্রে হাঁসের ডিম না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, হাঁসের ডিম খেলে আপনার অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
উপরিউক্ত এই নিয়মগুলো মেনে হাঁসের ডিম খেলে এর থেকে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন।

প্রতিদিন হাঁসের ডিম খেলে কি হয়

রোজ রোজ হাঁসের ডিম খেলে কি হয় এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই। তাহলে জেনে রাখুন, প্রতিদিন হাঁসের ডিম খেলে আপনি এর থেকে যেমন কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন, ঠিক তেমনি কিছু শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। কারণ, হাঁসের ডিম প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজের একটি উৎকৃষ্ট উৎস যা আপনার শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের সাধারণ সুস্থতা ধরে রাখে। তবে এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকায় অতিরিক্ত খেলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
 
দৈনিক হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে আপনার পুষ্টি চাহিদা পূরণ হলেও, অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। শুধু তাই নয়, আপনাদের যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তাদের কিডনি জনিত সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে এই হাঁসের ডিম। আর তাই হাসির ডিম প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে আপনি এটিকে একটি সুষম খাদ্য তালিকার অংশ হিসেবে বিবেচনা করুন।

হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে

প্রতিদিন হাঁসের ডিম খেলে কি হয় ইতিমধ্যে আমাদের আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছেন। এবার আপনাকে জানাবো হাসির ডিমে এলার্জি আছে নাকি নেই। অনেকেই মনে করেন হাঁসের ডিম খেলেই শুধু এলার্জি হয়। একথা কিছুটা সত্য কিন্তু পুরোপুরি নয়। কারণ, হাঁসের ডিমে এলার্জির মাত্রায় খুবই কম থাকে। তবে হাঁসের ডিমের প্রোটিন বিশেষ করে এলবুমিন এবং লাইসোসিম আপনার শরীরে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনি অত্যধিক পরিমাণে হাসির ডিম খান সেক্ষেত্রে। 
 
এনার্জি লক্ষণ হিসেবে আপনার ত্বকের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি, ফুসকুড়ি, টক লালচে ফুলে ওঠা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। আপনি যদি প্রথম হাঁসের ডিম খেয়ে থাকেন তাহলে অল্প পরিমাণে খেয়ে আগে দেখুন, যে আপনার শরীরে এলার্জিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে কিনা। যদি এলার্জির লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে হাঁসের ডিম বা অন্য যে কোনো ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

ছেলেদের হাঁসের ডিম খেলে কি হয়

ছেলেদের হাঁসের ডিম খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এবার চলুন ছেলেদের হাঁসের ডিম খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আপনাকে জানাবো--
  • হাঁসের ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা ছেলেদের পেশী গঠনে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা ফিটনেস বা শক্তি প্রশিক্ষণ করেন তাদের জন্য হাসের ডিম একটি ভাল পুষ্টির উৎস।
  • এই ডিমে থাকা ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি, সেলিনিয়াম এবং জিংক আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং সঠিক হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।
  • হাঁসের ডিম উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকে যার ফলে প্রতিদিন এই ডিম খেলে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • যে সব পুরুষ স্বাস্থ্য সচেতন তারা অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খেলে শরীরে ক্যালরি ও চর্বির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যা আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • হাসির ডিমে কিছু স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোটিন রয়েছে যা আপনার পেটের হজমে সাহায্য করে। এতে করে হাঁসের ডিম খেলে পেট ফাঁপা, বদহজম ইত্যাদি সমস্যা থেকে আপনি পরিত্রান পেতে পারেন।
  • কারো কারো আবার হাসের ডিমে এলার্জিও থাকতে পারে। আর তাই অতিরিক্ত পরিমাণে হাঁসের ডিম না খেয়ে আপনি নিয়ম মতো পরিমিত পরিমাণে খান।

হাঁসের ডিম কাঁচা খেলে কি হয়

প্রতিদিন হাঁসের ডিম খেলে কি হয় জানানোর পর এবার আপনাকে জানাবো ঘাসের কাচা ডিম খেলে কি হয়। হাঁসের কাঁচা ডিম খাওয়ার ফলে আপনার কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। কারণ, হাঁসের কাঁচা ডিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার থাকতে পারে। আর এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে আপনার পেটের ব্যথা বমি বমি ভাব ডায়রিয়া এমনকি শরীরে জ্বরও হতে পারে।
 
এছাড়াও কাঁচা ডিমের এভিডিন নামক একটি প্রোটিন আপনার শরীরে বিটা ক্যারোটিন এবং বিটা ভিটামিনের শোষণের বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলে আপনার দীর্ঘমেয়াদি হজমের সমস্যা এবং পুষ্টি শোষণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও কাঁচা ডিম খাওয়ার ফলে দ্রুত পেশী বৃদ্ধি বা স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায় বলে কিছু মতামত রয়েছে, তবুও এই ঝুঁকিগুলো আপনার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বলবো হাঁসের কাঁচা ডিম না খেয়ে আপনি ভালোভাবে রান্না করে খান।

হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে

হাঁসের ডিমের এতসব উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই জানতে চান হাসির ডিম খেলে প্রেসার বাড়ে নাকি কমে। আবার অনেকেই আছেন যারা প্রেসার বাড়ার ভয়ে হাসির ডিম খেতেই চান না। আসলে হাঁসের ডিমে উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে আপনার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। 
 
তবে হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে রক্তচাপের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ার বিষয়টি খুব একটা সুস্পষ্ট নয়। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হাঁসের ডিম না খেয়ে যদি আপনি এটি সুষম খাদ্য তালিকার অংশ হিসেবে সীমিত পরিমানে খান, তাতে প্রেসার বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আরেকটি কথা, আপনার যদি উচ্চ কোলেস্টেরল এবং হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তবেই হাঁসের ডিম খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা

হাসের ডিমের বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা আপনাকে আলোচনার শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছি। এবার আপনাকে জানাবো গর্ভাবস্থায় হাসির ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আপনি কি জানেন গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খেলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। তো চলুন গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা কি কি হতে পারে তা জেনে নিন--
গর্ভাবস্থায়-হাঁসের-ডিম-খাওয়ার-উপকারিতা
  • হাঁসের ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তাছাড়া এই প্রোটিন একজন গর্ভবতী মায়ের মাংসপেশী গঠন, পেশী মেরামত এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমেও বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে।
  • হাসির একটি ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২ থাকে। আর এই ভিটামিন আপনাকে গর্ভকালীন সময়ে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় অ্যানিমেল থেকে মুক্তি পেতে আপনি হাঁসের ডিম খেতেই পারেন।
  • হাসির ডিমে রয়েছে ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সহায়তা করে এবং দাঁত ও হাড়েকে মজবুত ও শক্তিশালী করে। এই ভিটামিনটি আপনার গর্ভস্থ শিশুর হাড়ের বিকাশেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • হাঁসের ডিমের ফুলের যে গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত উপকারী। গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খেলে এই ফলেট আপনার শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতি ও ডিএনএ সংশ্লেষণে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
  • হাসির ডিমে কিছু পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর গর্ভাবস্থায় এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সময় আয়রনের চাহিদা বাড়ে এবং আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
সুতরাং গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম সঠিকভাবে রান্না করে এবং পরিণত পরিমাণে খেলে এটি আপনার পুষ্টি বাড়াতে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে।

হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ

হাঁসের ডিমের এতসব উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই হাসের ডিমের পুষ্টিগণ সম্পর্কে জানতে চান। চলুন নিচে একটি ছকের মাধ্যমে হাঁসের ডিমে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা দেখে নিন--
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
শক্তি ১৪০ কিলোক্যালরি
প্রোটিন ১২ গ্রাম
মোট ফ্যাট ৯ গ্রাম
ভিটামিন এ ৭৬০ IU
সেলেনিয়াম ৩০ মাইক্রোগ্রাম
জিংক ১.৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১২ ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন ডি ২৫ IU
ফোলেট ৩৫ মাইক্রোগ্রাম
আয়রন ২.৯ মিলিগ্রা

হাঁসের ডিমের দাম ২০২৪

রোজ হাঁসের ডিম খেলে কি হতে পারে তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন। এবার আপনাদের জানাবো হাসের ডিমের দাম সম্পর্কে। আপনারা অনেকেই হাসের ডিমের দাম সম্পর্কে জানতে চান। মনে রাখবেন, হাঁসের ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে মুরগির ডিমের থেকে কিছুটা বেশি হয়। কারণ, মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিম আকারে খানিকটা বড়, এর খোসাও তুলনামূলকভাবে শক্ত এবং ডিমের কুসুমও মুরগির ডিমের থেকে বড় হয়।
 
 তাছাড়া হাঁসের ডিমের অনেক গুণাগুণ থাকায় বাজারে হাঁসের ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনি বাজারে প্রতি পিচ হাঁসের ডিম ১৭-২০ টাকায় এবং প্রতি হালি হাঁসের ডিম ৭০-৯০ টাকায় পেয়ে যাবেন। তবে এই ডিমের দাম স্থান ভেদে কিছুটা কম বেশি হতে পারে। ইচ্ছে করছে হাঁসের ডিমের দাম সম্পর্কে আপনি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন।

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি আশা করছি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। প্রকৃতপক্ষে হাসির ডিম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি প্রচুর পুষ্টিগুনেও ভরপুর। অনেকেই মনে করেন হাসির ডিম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। বরং অনেক পুষ্টিবিদদের মতে, মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিম বেশি উপকারী এবং দুইটি হাঁসের ডিম সমতুল্য তিনটি মুরগির ডিম। 
 
তবে মুরগি এবং হাঁসের ডিম দুটোই আলাদা নিজস্ব পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ এতটাই যে, এই ডিমকে ভিটামিন ক্যাপসুল বলেও মনে করা হয়। আর তাই আপনি যদি হাসির ডিম খেতে অভ্যস্ত না হন তাহলে বলবো আজ থেকে আপনার খাদ্য তালিকায় ডায়েটে একটি করে হাসের ডিম যোগ করে নিন। আর পেতে থাকুন হাসের ডিমের সব উপকারিতা গুলি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url