জাফরানের ১০ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

জাফরানের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? জাফরান ব্যবহারের নিয়ম কি আপনার জানা আছে? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
জাফরানের-১০-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমেই আপনি জানতে পারবেন জাফরানের নানান উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে। তাহলে চলুন আজকের আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ জাফরানের ১০ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

জাফরানের উপকারিতা

জাফরান যা সাধারণত 'Saffron' নামে পরিচিত এক প্রকার মসলা। রান্নায় জাফরান ব্যবহার করলে এটি শুধু খাবারের স্বাদ এবং গন্ধই বৃদ্ধি করে না বরং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও জাফরান খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। আলোচনার শুরুতেই জেনে নিন এর উপকারিতা কি কি হতে পারে--
  • মানসিক বিষন্নতা কমায়ঃ আপনার মানসিক বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা কমাতে কাজ করে জাফরান। কারণ, এতে ক্রোসিন এবং কারিকিন নামক যে উপাদান রয়েছে তা আপনার মস্তিষ্কে সেরোটোনির উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা কিনা বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ জাফরানে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রোসিন এবং পিকোক্রোসসলিন। যা আপনার শরীরের কোষগুলিকে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয়।
  • জাফরান চোখ ভালো রাখেঃ আপনার চোখের যে কোন সমস্যায় খেতে পারেন জাফরান। কারণ, জাফরান লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক উপাদান রয়েছে যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শুধু তাই নয়, বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধেও সক্ষম এই জাফরান।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ রূপচর্চাতেও জাফরানের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকেই। রূপচর্চায় নিয়মিত জাফরান ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এর অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতেও কাজ করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ বদ হজমের সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে জাফরান। এটি হজম শক্তি উন্নত করে এবং সেই সাথে পেট ব্যথা, পেটের গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও ভালো কাজ করে।
  • হার্টের সুস্থতায়ঃ জাফরানের এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য এবং পটাশিয়াম আপনার হার্ট ভালো রাখে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • স্মৃতিশক্তি বর্ধক রূপেঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে জাফরান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ জাফরানে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আপনার ইমিউন সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
  • শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রোধেঃ জাফরানের এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আপনার শ্বাসযন্ত্রের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ এবং প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে উপকারী।
জাফরানের-উপকারিতা
  • অনিদ্রা দূর করেঃ নিয়মিত জাফরান ব্যবহারে এটি আপনার অনিদ্রা রোগ দূর করতে পারে।
  • পিএমএস লক্ষণ গুলিতে সহায়তা করেঃ পিএমএস বলতে মূলত প্রাক মাসিক সিনড্রোম বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ মহিলাদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে মানসিক শারীরিক এবং সংবেদনশীল যে লক্ষণ গুলো দেখা যায় সেটিই হলো পিএমএস। আর জাফরান এই পিএমএস এর লক্ষণ গুলি মোকাবেলায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • ক্যান্সার মোকাবেলায়ঃ জাফরান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ। টেস্ট টিউব স্টাডিতে দেখা গেছে, জাফরান এবং এতে থাকা অন্যান্য যৌগগুলি কোলন ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করে। এতে করে আপনি ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং অন্যান্য ক্যান্সার থেকে রেহাই পেতে পারেন।
ফ্লু থেকে রক্ষা করেঃ জাফরান ব্যবহারে এটি আপনাকে ঠান্ডা লাগা, জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি ফ্লু থেকে রক্ষা করতে পারে।

জাফরানের অপকারিতা সমূহ

জাফরানের যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারিতা দিকও রয়েছে। যদিও জাফরান অত্যন্ত মূল্যবান এবং সুস্বাদু একটি মসলা কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার শরীরে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ঘটতে পারে। যেমন ধরুন--
  • অতিরিক্ত পরিমাণে জাফরান গ্রহণ করলে এতে আপনার বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সাধারণত ৫ গ্রামের বেশি জাফরান ব্যবহারে এই বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
  • মাত্রাতিরিক্ত জাফরান ব্যবহার করলে এটি আপনার মাথা ব্যথা বমি বমি ভাব এমনকি পেট ব্যাথারও কারণ হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া উপকারী। কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে এর অধিক ব্যবহার আপনার গর্ভ পাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • অনেকের আবার অতিরিক্ত জাফরান ব্যবহারে এলার্জির সমস্যাও দিতে পারে। এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব ইত্যাদি হতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জাফলং ব্যবহারের ফলে এটি মহিলাদের সেক্সুয়াল হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে।
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য জাফরান উপকারী। কারণ এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু অত্যধিক ব্যবহারে আপনার রক্তচাপ অতিরিক্ত ভাবে আরো কমে যেতে পারে। ফলে নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের জাফরান ব্যবহার না করাটাই ভালো।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণে জাফরান খেলে এতে আপনার রক্তের রং কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। এটি তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। কিন্তু আপনার জন্য বিষয়টি উদ্বেগ জনক হতে পারে।
সুতরাং স্বাভাবিকভাবে জাফরান একটি উপকারী মসলা হলেও ব্যবহারের আগে এটি পরিমিত পরিমাণে এবং নিয়ম মেনে ব্যবহার করা উচিত। তাতে অপকারের সম্ভাবনা কম থাকে।

জাফরান ব্যবহারের নিয়ম

জাফরান থেকে উপকারিতা পেতে আপনাকে এটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। জাফরান ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে জাফরান ব্যবহার করলে এর স্বাদ গন্ধ এবং পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন থাকে। তো চলুন এবার জাফরান ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন-
  • প্রথমেই বলি, জাফরান অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর স্বাদ ও রং খুবই তীব্র হয়। তাই এটি খুব কম পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।
  • আপনার প্রতিদিনের রান্নায় ১-২ গ্রাম জাফরান ব্যবহার করাই যথেষ্ট হবে। এর অধিক পরিমাণ ব্যবহার করলে খাবারের গন্ধ এবং স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
  • জাফরান ব্যবহার করার আগে আপনি অবশ্যই এটি গরম জল বা দুধে ভিজিয়ে রাখবেন। এর জন্য একটি ছোট পাত্রে ২-৩ টেবিল চামচ গরম জল বা দুধ নিয়ে এবং তাতে ১-২ গ্রাম জাফরান ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এই মিশ্রণটি আপনি খাবারের সাথে ব্যবহার করতে পারেন।
  • যখন খাবারের সাথে মিশানোর সময় অতি সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারন, এটি দ্রুত খাবারের গন্ধ এবং স্বাদ উভয় পরিবর্তন করে দিতে পারে।
  • ভেজানো জাপানের মিশ্রণ আপনি রান্নার একেবারে শেষ পর্যায়ে খাবারের সাথে যোগ করুন। যাতে এটি খাবারের সাথে খুব ভালোভাবে মিশে যায়।
  • জাফরান সাধারণত বিশেষ কিছু খাবারে যেমন ধরুন মিষ্টান্ন জাতীয়, বিরিয়ানি, স্যুপ, আইসক্রিম, লাড্ডু ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। তাই যে কোন খাবারে জাফরান ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • আপনি আপনার রূপচর্চাতে জাফরান মেশানো দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বক আরো উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
জাফরান সংরক্ষণের উপায়
  • জাফরান সংরক্ষণের জন্য রোদ ও আদ্রতা থেকে দূরে রাখুন এবং শুকনো ও অন্ধকার স্থানে।
  • আপনি একটি কাছের বোতলে জাফরান সংরক্ষণ করুন যাতে এর গন্ধ এবং স্বাদ অটুট থাকে।
উপরিউক্ত এই নিয়মগুলো মেনে আপনি জাফরান ব্যবহার করলে রান্নার খাবারের স্বাদ ও খাবারের গুণগতমান আরো দ্বিগুণ পরিমাণ বেড়ে যাবে।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি হয়

জাফরানের উপকারিতা ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। আপনি কি জানেন গর্ভকালীন সময়েও জাফরান খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে। এবার আপনাকে জানাবো গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে এর থেকে আপনি কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন-
  • গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক চাপ উঠবে ও বিষন্নতা কমাতে জাপান বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, এতে থাকা ক্রোসিন, ক্রোসেটিন এবং সাফ্রানাল উপাদান আপনার মানসিক চাপ কমাতে পারে।
  • গর্ভকালীন সময় আপনার পেটের যেকোনো সমস্যা যেমন ধরুন গ্যাস, এসিডিটি, বদহজম ইত্যাদি দূর করতে জাফরান বেশ কার্যকরী।
  • গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে জাফরান। তাছাড়া এটি আপনার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান খুব সহজেই পৌঁছে দিতে পারে।
  • জাফরানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকায় গর্ভকালীন সময়ে এটি আপনার ত্বকের নিস্তেজতা কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • জাফরানে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন- ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি এবং মিনারেলস আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • গর্ভাবস্থায় আপনার শারীরিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করতে জাফরান খেতে পারেন। কারণ, এটি শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে।
গর্ভাবস্থায় জাফরান ব্যবহারের সতর্কতা
  • গর্ভাবস্থায় জাফরান ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন-
  • গর্ভাবস্থায় খুব সীমিত পরিমানে জাফরান ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ ১-২ গ্রামের বেশি জাফরান অবশ্যই ব্যবহার করবেন না।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে জাফরান ব্যবহারে আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই অতিরিক্ত জাফরান ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম

জাফরান ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ারও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। গর্ভাবস্থায় মূলত দুটি উপায়ে জাফরান খাওয়া হয়। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় আপনি জাফরান কিভাবে খাবেন সে উপায় সম্পর্কে জেনে নিন-
  • জাফরানের পরিমাণঃ প্রথমেই বলি গর্ভাবস্থায় আপনি জাফরান বেশি পরিমাণে কখনোই খাবেন না। প্রতিদিন ৩-৫ টি জাফরান বা .০১-.০৩ গ্রাম জাফরান আপনার জন্য যথেষ্ট।
  • জাফরান দুধঃ গর্ভাবস্থায় আপনি দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেতে পারেন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাস থেকে আপনি দুধের সাথে জাফরান খেতেই পারেন। এছাড়াও আপনি পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম এবং জাফরান এই তিনটি উপাদান একসাথে পেস্ট করে দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যা দুবেলা পান করতে পারেন।
  • জাফরান জলঃ আপনি শুধুমাত্র এক গ্লাস হালকা কুসুম জলের সাথে কয়েকটি জাফরান ভিজিয়ে রেখে সেই জল পান করতে পারেন। এতে আপনার হজম প্রক্রিয়া সহজ হবে।
  • জাফরান স্যুপঃ এছাড়াও যে কোনো ধরনের স্যুপের সাথে কয়েকটি জাফরান যোগ করে খেতে পারেন।
  • জাফরান চাঃ আপনি চাইলে চায়ের সাথেও জাফরান মিশিয়ে খেতেই পারেন। এর জন্য এক কাপ গরম চায়ে ২-৩টে জাফরান যোগ করুন এবং কিছু সময় অপেক্ষা করুন। যাতে করে জাফরানের স্বাদ ও গন্ধ চায়ের সাথে খুব ভালোভাবে মিশে যায়।
  • জাফরান দইঃ দইয়ের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে দই অনেক সুস্বাদু হয়। আপনি দয়ের সাথে ২-৩টি জাফরান মিশিয়ে রেখে দিন এবং কিছুক্ষণ পরে খেয়ে নিন।

জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়

অনেকেই জানতে চান জাফরান খেলে ত্বক ফর্সা হয় কিনা। জাফরানের উপকারিতা ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। জাফরান আপনার ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজ করে। কিন্তু জাফরান খেলে যে আপনি রাতারাতি ফর্সা হয়ে যাবেন বিষয়টি এমন নয়। জাফরানের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, 
 
ভিটামিন এবং মিনারেল আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের রং উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। তবে ত্বক ফর্সা করার জন্য শুধুমাত্র জাফরান নয়, বরং আরো অন্যান্য উপাদানের সাথে জাফরান আপনি সহায়ক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

জাফরান সাবান এর উপকারিতা

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য আপনি জাফরান সাবানও ব্যবহার করতে পারেন। Sss৩ জাফরান ব্যবহারের নিয়ম তো জেনেছেন। এবার চলুন জাফরান সাবান ব্যবহারের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন --
  • জাফরান সাবান ব্যবহারে এটি আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার পাশাপাশি কোমল ও নরম রাখে।
  • নিয়মিত জাপান সাবান ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে।
  • জাফরানের মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেলস আপনার ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত জাফরান সাবান ব্যবহারে এটি আপনার ত্বকের বলি রেখা এবং অন্যান্য বার্ধক্য জনিত ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • জাফরান সাবান ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অনুজীবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
  • জাফরান সাবান ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ত্বকের টোন উন্নত করে। এই সাবান ত্বকে ফর্সা ভাব আনার পাশাপাশি তক থেকে বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ ছোপ, ট্যান পড়া ইত্যাদি দূর করে।
  • নিয়মিত জাফরান সাবান ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের নিস্তেজতা দূর হয় এবং ত্বক আরো মসৃণ হয়ে ওঠে।

জাফরান সাবান আসল নকল চেনার উপায়

জাফরানের নানাবিধ উপকারিতা জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই জাফরান সাবান আসন নাকি নকল কিভাবে চিনবেন সে সম্পর্কে জানতে চান। সম্মানিত পাঠক, আসল জাফরান সাবান চেনার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। যেমন ধরুন-
  • প্রথমতঃ আসল জাফরান সাবানের গন্ধ প্রাকৃতিক জাফরানের মত অত্যন্ত সুগন্ধি ও মিষ্টি হবে ।
  • দ্বিতীয়তঃ আসল জাফরান সাবানের রং সোনালী বা হলুদাভ হতে পারে। কিন্তু নকল সাবানের রং এর থেকে কিছুটা আলাদা হবে।
  • তৃতীয়তঃ সাবান পানিতে ব্যবহার করে দেখুন। আসল জাফরান সাবান পানিতে দিলে এর রং আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু নকল জাফরান সাবানের রং পানির সাথে বেরিয়ে আসবে না।
  • চতুর্থতঃ জাফরান দামী হওয়ায় আসল জাফরান সাবানের দাম নকল সাবানের তুলনায় অনেকটা বেশি হবে। আপনি যদি একেবারে সস্তায় জাফরান সাবান পেয়ে যান তাহলে বুঝবেন সেটি নকল।
  • পঞ্চমতঃ জাফরান সাবান কেনার সময় এর লেভেল এবং ব্র্যান্ড অবশ্যই যাচাই বাছাই করে নিন। কারণ জাফরান সাবান সাধারণত ব্র্যান্ডেড এবং প্রমাণিত প্যাকেজিং এ আসে। তাই সাবান কেনার সময় আপনি লেভেল ও সঠিক ব্র্যান্ড চিহ্নিত করুন।
উপরের এই উপায় গুলি অনুসরণ করে আপনি আসল জাফরান সাবান খুব সহজেই চিনে নিতে পারেন।

জাফরান দুধের উপকারিতা

জাফরানের উপকারিতা পেতে আপনি দুধের সাথে মিশিয়েও জাফরান খেতে পারেন। দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে আপনার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা মিলবে। যেমন-
জাফরান-দুধের-উপকারিতা
  • জাফরান দুধ পান করলে এটি আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে এবং অনিদ্রা দূর করে ঘুম ভালো করে। জাফরানে থাকা সাফ্রান উপাদান আপনার মানসিক উদ্বেগ কমাতে এবং মনকে শান্ত রাখতেও খুব ভালো কাজ করে।
  • নিয়মিত জাফরান দুধ পান করলে এটি আপনার হজমে সাহায্য করে এবং পেটের সকল সমস্যা দূর করে।
  • জাফরান দুধের উপকারিতা ত্বকের ক্ষেত্রেও কম নয়। যখনই থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং সেই সাথে ত্বকের বলিলেখা ও ডার্ক স্পটও ফটো কমাতে সাহায্য করে।
  • যেকোনো ধরনের ঠান্ডা লাগায় সর্দি কাশি ইত্যাদি দূর করতে জাফরান দুধ বেশ উপকারী। তাছাড়া নিয়মিত জাফরান করলে এটি আপনার শ্বাসযন্ত্রের সকল সমস্যা দূর করে।
  • জাফরান দুধ রক্ত আপনার সঞ্চালন প্রক্রিয়া কে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয়।
  • জাফরান দুধ পিরিয়ডের সময় মহিলাদের পেটের ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে কাজ করে।
সম্মানিত পাঠক, জাফরানের উপকারিতা পেতে আপনি প্রতিদিন একবার জাফরান দুধ খেতে পারেন। এতে কোন ক্ষতি নেই।

জাফরান কফির উপকারিতা

জাফরান কফি এক বিশেষ ধরনের পানীয়, যা জাফরান ও কফির সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। জাফরান কফি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। জাফরান কফি খাওয়ার ফলে আপনি এর থেকে যে উপকারিতা গুলো পেতে পারেন তা হল--
  • জাফরান আপনার মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে কাজ করে। হলে আপনি মানসিক উদ্ভিদ চাপ অনেকটাই কমে যায়। অপরদিকে কফি আপনার মস্তিষ্ককে আরো সতেজ করে তোলে।
  • জাফরান কফি খেলে এটি আপনার পেটের আসিডিটি এবং হজমজনিত অস্বস্তি কমাতে ভালো কাজ করে।
  • জাফরান এবং কফি দুটোই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় আপনার শরীরকে ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে এবং কোষের ক্ষতি কমাতে কাজ করে।
  • জাফরান ও কফির মধ্যে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাংগাল গুণ আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, এটি বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী রোগ ও সংক্রমণ থেকেও আপনার শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।
  • কফি সাধারণত শরীরে অতিরিক্ত এনার্জির সঞ্চার করে এবং জাফরান এনার্জি লেভেল বজায় রাখে। ফলে দিনের শুরুতে জাফরান কফি আপনার জন্য হতে পারে একটি কার্যকরী স্বাস্থ্যকর পানীয়।

জাফরান এর দাম বাংলাদেশে ২০২৪

বাংলাদেশে জাফরানের চাহিদা সময়ের সাথে সাথে বেশ বেশ বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এর আমদানি অনেকটাই কম। যার ফলে জাফরানের দামও অন্যান্য মসলার থেকে খুব চড়া। যেহেতু জাফরান চাষ বেশ সময় সাপেক্ষ একটি ব্যাপার এবং এক কেজি ফুল ফুল থেকে কেবলমাত্র ৭০-৭৫ গ্রাম জাফরান পাওয়া যায় তাই এর দামটাও অনেক বেশি।
 
বাংলাদেশে প্রতি এক গ্রাম জাফরানের দাম পড়ে ২৫০-৩০০ টাকা। সে হিসেবে একশ গ্রামে কাম করে ২৫০০০-৩০০০০ টাকা। জাফরান সাধারণত খাবারে খুব সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া এর দাম আকাশ ছোঁয়া হওয়ার কারণে এটি গ্রাম হিসেবেই বেশি বিক্রি হয়। তবে স্থানভেদে জাফরানের দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে।

জাফরানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য

জাফরানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল থেকে আশা করছি আপনি বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। সাথে আরো জেনেছেন জাফরান ব্যবহারের নানান নিয়ম সম্পর্কে। জাফরান বিশ্বের সব থেকে ব্যয়বহুল মসলাগুলোর মধ্যে একটি। সেই প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় জাফরানের নির্যাস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আপনার ঋতুস্রাবের সমস্যা বলুন, পেটের সমস্যা বলুন আর আলসারের সমস্যাই বলুন না কেন প্রত্যেকটি সমস্যা সমাধানে জাফরান বেশ কার্যকরী।
 
 তাছাড়া যে কোনো খাবারের সাথে জাফরান ব্যবহার করলে সেই খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়। তবে, জাফরানের দাম এতটাই বেশি যে সবার পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তাই বলবো আপনি আপনার নিত্য দিনের খাবারে খুব অল্প পরিমাণে জাফরান ব্যবহারের চেষ্টা করুন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url