জবা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

জবা পাতার উপকারিতা জানতে চান? চুলের যত্নে জবা পাতার উপকারিতা জানলে আপনি হয়তো আজ থেকেই এর ব্যবহার শুরু করে দিবেন। জবা পাতা এবং জবা ফুল উভয়ই আপনার চুলের জন্য ভীষনই উপকারী। 

জবা-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
যা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না। সম্মানিত পাঠক, আজকের আলোচনা থেকে জবা পাতা সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনি বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ জবাপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

জবা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

জবা পাতার গুণের কথা ক'জন জানেন বলুন তো! উপকারী এই জবা গাছ কেবলমাত্র আমরা বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেই ব্যবহার করি। কিন্তু না। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, জবা গাছের পাতা এবং ফুল উভয়ই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। জবা পাতা সাধারণত রক্তচাপ কমাতে, হজম শক্তি বাড়াতে আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। 

আরো পড়ুনঃ  সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

শুধু তাই নয়, জবা পাতা ব্যবহারে এটি আপনার চুল পড়া রোধ তো করেই। সেই সাথে চুলের ফলিকল মজবুত করা থেকে শুরু করে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই জবা পাতা। আবার ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্যও এই পাতার গুনের শেষ নেই। কারন, এটি রক্তে শর্করার স্তর কমায় এবং সেই সাথে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখে।

তবে অতিরিক্ত জবা পাতা ব্যবহার করলে আবার আপনার রক্তচাপ একেবারে কমে যেতে পারে এবং এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আবার পেটের অস্বস্তিও দেখা দিতে পারে। তাই বলবো অতিরিক্ত জবা পাতা ব্যবহার না করে আপনি পরিমাণ মতো ব্যবহার করুন। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।

জবা পাতার উপকারিতা

জবা পাতার অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। আজকে আলোচনার শুরুতে আসুন জেনে নিন এই পাতার গুনাগুন সম্পর্কে--

আরো পড়ুনঃ  তুলসী পাতার ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • জবা পাতা আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং এতে করে আপনার হৃদরোগের ঝুকি কমে।
  • জবা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর মেডিকেল থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
  • নিয়মিত জবা পাতা সেবন করলে এটি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে।
  • ওজন কমাতেও জবা পাতার কোন জবাব নেই। আপনি জবা পাতার সেবন করে আপনার বাড়তি ওজন খুব সহজেই ঝরিয়ে ফেলতে পারেন।
  • জবা পাতা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধির সংক্রমণ থেকে আপনি খুব সহজেই রক্ষা পেতে পারেন।
  • আপনি কি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভুগছেন? তাহলে বলব আজ থেকে জবা পাতা সেবন শুরু করুন। কেননা এই পাতার প্রাকৃতিক গুণ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে কাজ করে।
  • অল্পতেই যাদের ঠান্ডা সর্দি কাশি লেগেই থাকে বা দীর্ঘদিন যাবত যারা সর্দি কাশিতে ভুগছেন তারা জবা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ জবা পাতার সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ কমাতে ভীষণই কার্যকরী।
  • কিছু গবেষণায় দেখা গেছে জবা পাতাই যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা আপনার শরীরে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। 

জবা-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য জবা পাতা ভীষণই উপকারী। জবা পাতার রক্তে শর্করা স্তর কমাতে সাহায্য করে। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
  • জবা পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা আপনার ত্বকে ভালো রাখে।
  • আপনারা যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন জবা পাতা তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ, কিডনির সমস্যায় জবা পাতা ম্যাজিকের মত কাজ করে।
  • শুধু তাই নয়, পিত্তথলির পাথর অপসারণ ও জবা পাতা খুব ভালো কাজ করে।
  • নিয়মিত জবা পাতা ব্যবহারে এটি মা-বোনদের পিরিয়ড সাইকেল নিয়মিত করে এবং ভিডিওর জনিত ব্যথা কমায়।
  • আপনাদের যাদের পেটে বদহজমের সমস্যা রয়েছে বা খাবার হজম হতে চায় না মাত্র একটিবার জবা পাতা সেবন করুন। এতে আপনার পেটের সকল সমস্যা দূর তো হবেই। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হবে।
  • নিয়মিত জবা পাতার ব্যবহার এটি আপনার চুলের গোড়া মজবুত করে, খুশকি দূর করে এবং চুলকে উজ্জ্বল করে তোলে।
  • আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে জবা পাতার রস সেবন করুন। এটি ম্যাজিক এর মত কাজ করবে।
  • জবা পাতা আপনার মৌখিক স্বাস্থ্য অর্থাৎ দাঁত ও মাড়ি প্রদাহ দূর করতে পারে।

জবা পাতার অপকারিতা

জবা পাতার আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে দীর্ঘমেয়াদি জবা পাতা সেবন করলে আপনার শরীরে জবা পাতার এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন-

আরো পড়ুনঃ কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

  • আপনাদের যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জবা পাতার সেবন না করাটাই ভালো। কারণ, জবা পাতার সাধারণত রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। ফলে নিম্ন রক্তচাপের রোগীরা জবা পাতার ব্যবহার করলে আপনার রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে।
  • আপনার শরীর অতিরিক্ত এলার্জি প্রবণ হলে জবা পাতার খুব সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করুন। কারণ, জবা পাতা এবং জবা পাতার রস অনেক সময় এলার্জির সৃষ্টি করে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য জবা পাতা সেবন ঝুকির কারণ হতে পারে। কারণ, গর্ভকালীন সময়ে জবা বাতাস সেবন করলে এটি আপনার জরায়ুতে সংকোচনের সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
  • আপনারা যারা ইনসুলিন বা ডায়াবেটিসের ঔষধ গ্রহণ করছেন তাদের জন্য জমা পাতা ব্যবহারে সচেতন হওয়া উচিত। যেহেতু এটি রক্তে শর্করার স্তর কমিয়ে দিতে পারে।
  • কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত জবা কথা সে বলে এটি আপনার কিডনির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণে জবা পাতার রস এবং করলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। এতে করে পেটে গ্যাস পেট ব্যথা ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন।
  • জবা পাতার রস কিন্তু বেশ ঠান্ডা। ফলে অতিরিক্ত জবা পাতার রস সেবনে আপনার ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে জবা পাতার রস খেলে আপনার বমি বমি ভাব এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যা ব্যাখ্যা দিতে পারে।

চুলের জন্য জবা পাতার উপকারিতা

চুলের যত্নে জবা ফুলের পাতার উপকারিতাও কম নয়। আপনি চাইলে নিজেও জবা পাতার এই হেয়ার প্যাক বাড়িতে তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। জবা ফুলের পাশাপাশি এর পাতাও আপনার চুলের হাল ফেরাতে যথেষ্টই উপকারী। এবারে আসুন চুলে জবা পাতা ব্যবহার করলে এর থেকে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--

  • চুলে জবা পাতা ব্যবহারে এটি আপনার চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। দারুন জবা পাতায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আপনার চুলের ফলিকল শক্তিশালী করে তোলে।
  • নিয়মিত চুলে জবা পাতার ব্যবহারে এটি আপনার চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে এবং সেই সাথে চুলের রুক্ষ শুষ্ক ভাব দূর করে।
  • জবা পাতা আপনার চুলে অনেকটা প্রাকৃতিক কন্ডিশনের হিসেবে কাজ করে। কেন জানেন? কারণ, এটি আপনার চুলের সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং শুষ্কতা দূর করে।
  • আসছে শীতকাল। এই শীতে অনেকেই মাথার খুশকির সমস্যা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। তাহলে বলব চুলের খুশকি দূর করতে আপনি জবা পাতা ব্যবহার করুন। জবা কথা আপনার মাথার ত্বক শীতল রাখে এবং খুশকি কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • নিয়মিত জবা পাতার হেয়ার প্যাক ব্যবহারে এটি আপনার চুলের স্বাভাবিক রঙ ধরে রাখে এবং চুলকে অকালপক্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।
  • জবা পাতার হেয়ার প্যাক আপনার মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়ায়। ফলে চুলের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।
  • মাথার অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ে আপনি কি একটু বেশিই চিন্তিত! তাহলে আজ থেকে জবা পাতার হেয়ার প্যাক ব্যবহার শুরু করুন। কেননা এই পাতা আপনার চুলের ভঙ্গরতা কমাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
  • আপনার মাথার ত্বকে এলার্জি বা চুলকানি থাকলে ব্যবহার করতে পারেন জবা পাতা। কারণ জবা পাতার হেয়ার ব্যবহার ব্যবহারের এটি আপনার মাথার ত্বকে শীতল ভাব এনে দেয় এবং এলার্জির প্রকোপ কমে।

চুলের জন্য যেভাবে ব্যবহার করবেন জবা পাতার হেয়ার প্যাক
চুল থাকতে চুলের মূল্য আমরা অনেকেই বুঝিনা। তাছাড়া রোজকার কাজে-কর্মে প্রতিদিনই আমাদের চুলের উপর দিয়ে যায় নানা ধকল, ধুলাবালি। আর তাই প্রতিদিনই দরকার আমাদের চুলের সঠিক যত্নআত্তি। এবার চলুন চুলের যত্নে আপনি জবা পাতার হেয়ার ব্যাগ কিভাবে তৈরি করে ব্যবহার করবেন সে উপায় জেনে নিন-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

  • জবা পাতা- ১৫-১৬ টির মত এবং
  • মেথি- ২-৩ টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালী

  • জবা পাতার হেয়ার প্যাক তৈরি করতে আপনি প্রথমেই মেথি বীজগুলো আগের রাতে সারারাত ভর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • এবার জবা পাতাগুলো খুব ভালো করে পরিষ্কার পানি এবং সাথে এর কোন ডালপালা থাকলে তা কেটে ফেলে দিন।
  • এবার ব্লেন্ডারে আপনি জবা পাতা এবং মেথি একসাথে মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।
  • ব্লেন্ড করার শেষে এই মিশ্রণটিকে একটি ছাঁকনি বা পরিষ্কার কাপড়ের সাহায্য থেকে এর থেকে নির্যাসটুকু বের করে নিন।
  • ব্যাস, জবা পাতার হেয়ার প্যাক আপনার চুলের জন্য তৈরি। এবার এই হেয়ার প্যাক আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যবহারবিধি

  • জবা পাতার এই হেয়ার প্যাক আপনার চুলে ব্যবহারের আগে চুল ভালো করে পানিতে ভিজিয়ে নিন।
  • এরপর হালকা ভেজা অবস্থায় আঙ্গুল বা একটি ব্রাশের সাহায্যে আপনার চুলে জবার নির্যাস ভালো করে ম্যাসাজ করুন।
  • চুলে জবা পাতার হেয়ার প্যাক এর ম্যাসাজ শেষ হলে আপনি একটি সাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ৩০ মিনিটের মত মাথা ঢেকে রাখুন। ঠিক ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • আপনাদের যাদের চুল রুক্ষ এবং শুষ্ক তারা সপ্তাহে অন্তত ২ বার জবা পাতার এই হেয়ার প্যাকটি একবার ব্যবহার করে দেখুন। এর ফল আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।

সম্মানিত পাঠক, চুলের যত্নে আপনি হয়তো নানা ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকেন। বাজারের এসব হেয়ার প্রোডাক্ট আপনার চুলের জন্য ভালো হতেই পারে। সব প্রোডাক্টই যে খারাপ তা বলবো না। কিন্তু আমার মতে, এই সমস্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদান আপনার চুলের জন্য অধিক উপকারী হবে।

জবা পাতার রস খেলে কি হয়

জবা পাতার রস খেলে কি হয় অনেকেই জানতে চান। তাহলে জেনে নিন, জবা পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন। কারণ, জবা পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

জবা পাতার রস খাওয়া বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ভীষণই উপকারী। কারণ, এটি রক্তচাপ কমাতে ভালো কাজ করে। আবার পেটের যেকোনো সমস্যা যেমন ধরুন- বদহজম, গ্যাস, এসিডিটি ইত্যাদি কমাতে আপনি খেতে পারেন জবা পাতার রস। এছাড়াও নিয়মিত জবা পাতার রস খেলে

এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সাথে লিভার কিডনিও সুস্থ রাখে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিনের সর্দি-কাশি উপসর্গ কমাতেও জবা পাতার রস বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই জবা পাতার নির্যাস।

ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি জবা পাতার রস পেতেই পারেন। শুধু কি তাই, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জবা পাতা মহৌষধের মত কাজ করে। কারণ এটি রক্তের শর্করার স্তর অনেকটাই কমাতে পারে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের উপসনম ঘটায়। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন জবা পাতার রস খেলে কি হতে পারে।

জবা পাতার ব্যবহার

জবা পাতার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা তো রয়েছেই। এছাড়াও এর আরও কিছু ব্যবহার রয়েছে। যা হয়তো আপনি আজ প্রথম জানবেন। যেমন ধরুন-

  • জবা পাতার তাজা গাঢ় সবুজ রং এবং গন্ধের কারণে এটি ফুলের সাজ শয্যায় বহুল ব্যবহৃত হয়।
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে, জবা থেকে প্রাপ্ত রং বিভিন্ন টেক্সটাইল এবং অন্যান্য হস্তশিল্পে প্রাকৃতিক রং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • জবা পাতা জমিতে সার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কারণ, জবা পাতা পচে গেলে এটি মাটির জন্য অর্গানিক সার হিসেবে কাজ করে এবং মাটির উর্বরতা আরও বাড়িয়ে দেয়।
  • এছাড়াও, আপনি চাইলে শুকনো জবা পাতা আপনার গৃহ শয্যায় ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার চারপাশে প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা বজায় থাকবে।
  • শুধু তাই নয়, জবা পাতা এবং জবা ফুল দুটোই পূজা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে আলংকারিক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • যে কোন খাদ্য বা পানীয়র মধ্যে যদি জবা পাতা ব্যবহার করেন তাহলে এর সুঘ্রান ও স্বাদ আরো বেড়ে যাবে।

জবা পাতার বৈশিষ্ট্য

জবা পাতার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা এবং অন্যান্য ব্যবহার এতক্ষণ জেনেছেন। এবার চলুন এই পাতার কিছু বৈশিষ্ট্য আপনাকে জানিয়ে দেবো। যেমন-

  • জবা একটি চিরহরিৎ গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ। যা চওড়ায় ২.৫-৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • জবা পাতা সাধারণত অন্যান্য ফুলের পাতা থেকে খানিকটা বড়, চকচকে এবং গাড়ো সবুজ হয়।
  • এই পাতার আকার সাধারণত ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৫-১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়ে থাকে।
  • এর পাতার কিনারা তীক্ষ্ণ এবং কারাতের মতো খাঁজ কাটা হয় যা দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
  • জবা পাতার অগ্রভাগ সাধারণত সরু এবং পিচ্ছিল পদার্থ দ্বারা যুক্ত থাকে।
  • জবা পাতা এবং ফুলের বন্ধখুবই হালকা এবং সুগন্ধযুক্ত।
  • জবা পাতায় কিছু ল্যাটিক্স থাকে যা আঘাতপ্রাপ্ত হলে বেরিয়ে আসে।

জবা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

জবা পাতার নানাবিধ উপকারিতা জানার পর এবার নিশ্চয়ই এই পাতার বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে জেনে রাখুন, জবার বৈজ্ঞানিক নাম হলো হিবিস্কাস রোসা সিনেন্সিস (Hibiscus rosa-sinensis). আর ইংরেজি নাম হলো Chinese hibiscus বা China Rose. জবা ফুল Rosids বর্গের Malvaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। জবা সাধারণত জবা, জপা, ঝুমকো জবা এবং জবা কুসুম নামেও পরিচিত।

জবা ফুলের উপকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য

জবা পাতা যেমন ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী। ঠিক তেমনি এর ফুলও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি কার্যকরী দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। কারণ জবা ফুলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক গুণাবলী থাকে।যা ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। 

জবা-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
এটি রক্তে গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণেও খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আবার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জবা ফুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের 

ডায়াবেটিসের জটিলতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। শুধু তাই নয় জবা ফুলের চা পান করলে আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অতীব জরুরী। যা আপনি জবা ফুলের চা খেয়ে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাহলে ডায়াবেটিসে জবা ফুলের উপকারিতা কতখানি আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

লেখকের মন্তব্য

জবা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আলোচনা থেকে আপনি বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। জবা মূলত একটি পর্যাপ্ত পরিমাণ গুণাগুণ সম্পন্ন ঔষধি উদ্ভিদ। যার ফুল, পাতা, মূল এবং ছাল কোন অংশই ফেলনা নয়। এই জবা পাতা পাতা যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীদের নিয়ে জবা ফুলও সমানভাবে উপকারী। জবা প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। তাছাড়া আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে জবা পাতা। 

এছাড়াও জবা পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা আপনার ত্বক ও চুলের জন্যও উপকারী। তাই বলবো যে কোন শারীরিক সমস্যায় সরাসরি ঔষধের উপর নির্ভর না হয়ে আপনি প্রাকৃতিক এই ভেষজ ব্যবহার করতে পারেন। যা সম্পূর্ণরূপে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url